বন্দিপুর
– মধুমালাই ন্যাশনাল পার্ক
মাইসোর দেখার
পর আমাদের পরবর্তী গন্তব্য স্থল ছিল ঊটি। মাইসোর
থেকে ঊটি যাবার ভাল রাস্তা আছে এন এইচ ২১২ / এন
এইচ ৬৭। এই রাস্তাটা দুটো জঙ্গল - বন্দিপুর ও
মধুমালাই ন্যাশনাল পার্কের ভিতর দিয়ে গেছে। যদিও
দুটি জঙ্গলই গায়ে গায়ে লাগা একই জঙ্গলের মত কিন্তু
বন্দিপুর কর্ণাটক প্রদেশ এবং মধুমালাই তামিলনাড়ু
প্রদেশের মধ্যে পরে।
আমরা ভোরে মাইসোর থেকে রওনা হয়ে ৯০ কিঃ মিঃ দূরে
বন্দিজহীা ৯ টা নাগাদ পৌঁছে গেলাম। বন্দিপুর জঙ্গলটি
আদতে তৈরি হয় শিকারের উদ্দেশে। মাইসোরের মহারাজা
১৯৩১ সালে এটি তৈরি করেন এবং নাম দেন ভেনুগোপাল
উয়াইল্ড লাইফ পার্ক। তখন এটা খুব ছোট ছিল – মাত্র
৯০ স্কোঃ কিঃ মিঃ। সরকার ১৯৭৩ সালে আরও ৮০০ স্কোঃ
কিঃ মিঃ যোগ করে এখানে ব্যাঘ্র প্রকল্প চালু করেন।
বন্দিপুর জঙ্গলের দক্ষিণ দিকে আছে মধুমালাই ন্যাশনাল
পার্ক। ১৯৪০ সালে ৩২১ স্কোঃ কিঃ মিঃ জায়গা জুড়ে
এই ন্যাশনাল পার্কটির পত্তন হয়। কইম্বাতোর থেকে
১৫০ কিঃ মিঃ দূরে এই পার্কটিও ব্যাঘ্র প্রকল্পের
মধ্যে পরে।
ব্যাঘ্র প্রকল্প যখন আছে তখন বাঘ অবশ্যই এখানে
আছে। বন্দিপুরে আছে ৭৫ টি আর মধুমালাইতে আছে ৪৮
টি বাঘ। কিন্তু একটি বাঘও আমাদের চক্ষে পড়েনি
কারণ বাঘেরা একটু গভীর জঙ্গলের দিকে থাকে – বড়
রাস্তার ধারে কাছে আসেনা। বাঘ ছাড়াও এখানে আছে
চিতা বাঘ, বন বিড়াল, শ্লথ বিয়ার, হাতি, চিতল হরিণ,
কৃষ্ণসার হরিণ, শুয়োর, ভারতীয় বাইসন, ইত্যাদি
জন্তু। এছাড়া আছে বড় কাঠ বিড়ালী, লাল উড়ন্ত কাঠ
বিড়ালী, উড়ন্ত টিকটিকি, আজগর ইত্যাদি। আর নানান
রকম বাঁদর তো আছেই।

নং
১ - চিতল হরিণ রাস্তার খুব কাছেই ঘাস খাচ্ছে।

নং
২ – শিং ওয়ালা হরিণ রাস্তার ধারে বসে নির্বিকার
চিত্তে বিশ্রাম নিচ্ছে।
আমাদের
ভাগ্যে এত সব জন্তুর দর্শন ছিলনা। তবে কিছু কিছু
জন্তুর দেখা আমরা পেয়েছিলাম। চিতল হরিণ গুলো রাস্তার
গাড়ী চলাচল ধর্তব্যের মধ্যে না এনে কেও রাস্তার
ধারে ঘাস খাচ্ছিল কেউ বা নির্বিকার চিত্তে বিশ্রাম
নিচ্ছিল। (ছবি নং ১,২)। হঠাৎ দেখা গেল অনেক দূরে
একটি বুনো শূয়র রাস্তার দিক থেকে ছুটে জঙ্গলের
দিকে পালিয়ে গেল। (ছবি নং ৩)।

নং
৩ - অনেক দূরে একটি বুনো শূয়র রাস্তার দিক থেকে
জঙ্গলের পথ ধরে ছুটে যাচ্ছে।
একটু পরেই
দেখা গেল আর একটি বুনো শূয়র ভয় না পেয়ে রাস্তার
পাশেই ধীরে ধীরে নিজের গন্তব্যের দিকে হেটে যাচ্ছে।
(ছবি নং ৪)।

নং
৪ - একটি নির্ভয় বুনো শূয়র রাস্তার পাশেই ধীরে
ধীরে নিজের গন্তব্যের দিকে হেটে যাচ্ছে।
জন্তু
জানোয়ার ছাড়াও এই জঙ্গলের একটি নিজস্ব সৌন্দর্য
আছে। রাস্তার ধারে জঙ্গল পাতলা হলেও ভিতরের দিকে
জঙ্গল বেশ গভীর। (ছবি নং ৫,৬)।

নং
৫ - সুন্দর গভীর জঙ্গল। এরই ভিতরে কি কোথাও বিরাপ্পনের
আস্তানা ছিল?

নং
৬ – সামনে মাঠের মত কিন্তু পিছনে গভীর জঙ্গল।
এখানে আছে নানা রকম দামী গাছ ও দুষ্প্রাপ্য গুল্ম।
এর মধ্যে আছে দারুচিনি, জুডো, অর্জুন, কদম, ক্যসেরিয়া,
ভারতীয় কিনো ইত্যাদি। নানান ফলের গাছও যেমন তেঁতুল,
পেয়ারা, গুসবেরি, ইন্ডিগোবেরি, আম এখানে আছে।
তা ছাড়া আছে জংলি ধান, আদা, গোল মরিচের গাছ। শোনা
যায় ল্যান্টানা ও পার্থেনিয়ামের দাপটে অনেক দামী
ও দুষ্প্রাপ্য গুল্ম বিলুপ্ত হতে বসেছে।
এখানে
দুরকম বাঁশঝাড় আছে – ছোট বাঁশ ও বড় বাঁশ। হরিণরা
বাঁশ পাতা খেতে ভাল বাসে এবং বাঁশঝাড়ের ছায়াতে
বিশ্রাম নেয়। (ছবি নং ৭)।

নং
৭ - হরিণরা বাঁশঝাড়ের ছায়াতে বিশ্রাম নিচ্ছে ও
বাঁশ পাতা খাচ্ছে।
হাতিরাও এই বাঁশ খেতে খুব ভাল বাসে। আমরা অনেক
দূরে গাছের আড়ালে গভীর জঙ্গলে হাতিকে অন্য গাছও
খেতে দেখেছি। (ছবি নং ৮ – অনেক দূরে বলে টেলিফটো
লেন্স দিয়ে তুলেও এত ছোট দেখাচ্ছে)।

নং
৮ - গাছের আড়ালে গভীর জঙ্গলে হাতি দেখা যাচ্ছে
লাল দাগের ভিতরে। অনেক দূরে বলে টেলিফটো লেন্স
দিয়ে তুললেও এত ছোট দেখাচ্ছে।
তা ছাড়া একটু দূরে আরও একটা হাতি দেখলাম যার কানের
বাইরের ধারে ও মাথার নীচের দিকে সাদা ছোপ ছিল।
(ছবি নং ৯)।

নং
৯ - কিছু দূরে আরও একটা হাতি - লাল দাগের ভিতরে।
বেশ কাছে থেকেও একটা হাতি দেখলাম – রাস্তার বেশ
কাছেই একটা ছোট ঘরের কাছে দাড়িয়ে ছিল। (ছবি নং
১০)। আমরা ভেবে ছিলাম বুনো হাতি, কিন্তু জানা
গেল এটা কুনকি (পোষা) হাতি – অন্য হাতিদের ট্রেনিং
দেয়।

নং
১০ – পোষা কুনকি হাতি। অন্য হাতিদের ট্রেনিং দেওয়ার
জন্যে।
এই
জঙ্গল চন্দন গাছের জন্যে বিখ্যাত। কুখ্যাত চন্দনদস্যু
বিরাপ্পন এই জঙ্গলের গভীরে সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে আস্তানা
গেড়ে ছিল। বিরাপ্পন এই জঙ্গলের চন্দন কাঠ কেটে
পাচার করে দিত। এর ফলে সরকারের অনেক আর্থিক ক্ষতি
হত- এই সব কথা সকলেরই জানা। রাস্তার ধারে কাছে
একটাও চন্দন গাছ চোখে পড়ল না। আগের দিন আমি মাইসোরের
একটি সরকারি আবাসে দুটো চন্দন গাছের চারা দেখে
ছবি তুলে ছিলাম। চন্দন গাছের চারা গুলি খুব ছোট,
৩- ৪ বছরের, ছিল - কিন্তু চন্দন গাছ ১৫ – ১৬ বছরের
না হলে কাঠে কোন সুগন্ধ হয়না। যাই হোক দুধের স্বাদ
ঘোলে মেটাবার মত সেই চারা গাছের ছবিই এখানে দেখাচ্ছি।
(ছবি নং ১১)।

নং
১১ – চন্দন গাছের চারা।
বিমল
কুমার বসাক
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।