প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

শ্রীরঙ্গপত্তনম -‘দরিয়া-দৌলত-বাগ’

টিপু সুলতানের রাজত্ব কালে শ্রীরঙ্গপত্তনম বা শ্রীরঙ্গপত্তন ছিল মহীশুরের রাজধানী। মাইসোর বা মহীশুর থেকে পর্যটকরা অনেকেই এখানে আসেন কারণ মাইসোর থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১৪ কিঃ মিঃ। শ্রীরঙ্গপত্তনে আছে টিপু সুলতানের গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ এবং ‘দরিয়া-দৌলত-বাগ’। টিপু সুলতান ১৭৮৪ সালে এটি তৈরি করান। টিপু সুলতানের পতনের পর ইংরেজরা ১৭৯৯ সালে রাজধানী আবার মহীশুরে নিয়ে যান।

নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে এই প্রাসাদটির সঙ্গে জলের সম্পর্ক আছে। এই প্রাসাদটি কাবেরি নদীর দ্বীপে একটি সুন্দর বাগানের মধ্যে কাবেরি নদীর সুরক্ষার ভিতর এই প্রাসাদ সম্পদটি তৈরি করান হয় । তাই এর নাম দরিয়া (জল)-দৌলত (সম্পদ)-বাগ (বাগান)’।

টিপু সুলতান এখানে থাকতেন না। এটি ব্যবহার হত অতিথিশালা ও মন্ত্রণা কক্ষ হিসাবে। তিনি এখানে বিশিষ্ট ব্যক্তি বা অন্য রাজ্যের দ্যূত বা প্রতিনিধিদের সঙ্গে এখানে দেখা করতেন এবং আলোচনা করতেন। টিপু সুলতান থাকতেন এরই পাশে আরও সুরক্ষিত প্রাসাদে।

ছবি নং ১ - দরিয়া-দৌলত-বাগের প্রবেশ পথ – বিশেষ কারু কার্য না থাকলেও সুন্দর ভাবে রাখা হয়েছে।

চত্বরে ঢোকার মুখেই আছে সুন্দর প্রবেশ পথ। (ছবি নং ১) এই প্রবেশ পথ থেকেই দেখা যায় চোখ জুড়ন সবুজ বাগান (ছবি নং ২) এবং নানান ছোট বড় গাছের সাঁর (ছবি নং ৩ ও ৪)।

ছবি নং ২ - প্রবেশ পথের পাশে গম্বুজের পিছনে সুন্দর সাজান গোছান বাগান।

ছবি নং ৩ - সুন্দর লম্বা অরকেরিয়া ধরনের গাছ। এত লম্বা যে এক দিকে বেকে গেছে।

ছবি নং ৪ - বিশাল প্রাচীন গাছ। গাছের গুঁড়ির পরিধি ১০ থেকে ১২ মিঃ।

ছবি নং ৫ - চত্বরের প্যানারমিক দৃশ্য। দূরে দেখা যাচ্ছে প্রাসাদ।

বাগানের অপর দিকে আছে প্রাসাদ (ছবি নং ৫)। প্রবেশ পথ থেকে প্রাসাদে পৌছতে অনেকটা রাস্তা পায়ে হেঁটে যেতে হয়। এই হাঁটার অনুভূতিই আলাদা। নিজেকে ইতিহাসের সঙ্গী বলে মনে হয়। আর মনে পরে বীর যোদ্ধা টিপু সুলতানের সাহসিক রকেট যুদ্ধ যা ইংরেজদের বার বার থামতে বাধ্য করেছে।

ছবি নং ৬ - কাছের থেকে দেখা প্রাসাদ।

প্রাসাদের কাছে পৌঁছে দেখা গেল আয়তকার প্রাসাদটি (ছবি নং ৬) উঁচু ভিতের উপর মূলত কাঠ দিয়ে তৈরি। চার দিকে ঘোরান বারান্দা এবং কাঠের থাম প্রাসাদটিকে ঘিরে রেখেছে। এর মুল আকর্ষণ দেওয়ালে আঁকা চিত্র – ফ্রেস্কো। বাইরের দেওয়ালের ছবি গুলো বেশির ভাগই যুদ্ধ ক্ষেত্রের দৃশ্য আর কিছু পোরট্রেট। ভিতরের দেওয়াল ও ক্যানভাসে মোরা কাঠের ছাদে আছে সবুজ লতা পাতা ও ফুলের সুন্দর ছবি। (ছবি তোলা বারণ তাই এইসব কোন ছবিই দেখান গেল না)। কিছু অতি উৎসাহী ত ছবি তুলতে গিয়ে ধমকই খেলেন।

পশ্চিম দেওয়ালে আছে ১৭৮০ সালে কাঞ্ছিপুরমে ইংরেজদের বিরুদ্ধে হায়দর আলী ও টিপু সুলতানের জেতা যুদ্ধ ক্ষেত্রের দৃশ্য। বা দিকের দেওয়ালে আছে হায়দর আলী ও টিপু সুলতানের যুদ্ধ যাত্রার ছবি। ডান দিকের দেওয়ালে আছে টিপু সুলতানের সেনা বাহিনী ঘেরা বিব্রত কঃ বেইলির বসে থাকার ছবি। পূর্ব দিকের দেওয়ালে আছে টিপু সুলতানের দরবারের নানান ছবি। ভিতরে নানান ঘরে আছে সংগ্রহশালা। সংগ্রহশালায় যেমন আছে অনেক শিল্পকর্ম তেমনই আছে নানান যুদ্ধাস্ত্র। এছাড়া আছে টিপু সুলতানের পোশাক আশক। পোশাক আশক থেকে বোঝা যায় যে টিপু সুলতান খুব বেটে ছিলেন। তার বিখ্যাত টুপি আর তরবারিও সংগ্রহশালায় আছে। সামনের দিকে প্রবেশ পথের পাশে সাজান আছে অনেক কামানের গোলা এবং কয়েকটি কামান দিয়ে। (ছবি নং ৭)। কম বয়সী ও বাচ্চাদের দেখা গেল ছবির থেকে কামান আর কামানের গোলার দিকেই আগ্রহ বেশী।

ছবি ন৭ - প্রবেশ পথের পাশে সাজান আছে কামানের গোলা এবং কয়েকটি কামান। কম বয়সী ছেলেদের আগ্রহ কামান আর কামানের গোলার দিকেই বেশী।

টিপু সুলতান ইংরেজদের বিরুদ্ধে তিনটি যুদ্ধে (Anglo-Mysore War I, II, III) জিতেছিলেন। কিন্তু ইংরেজরা চতুর্থ যুদ্ধে আট ঘাট বেধে এবং চাতুরী করে শ্রীরঙ্গপত্তন আক্রমণ করে। জল পথ ছাড়া এখানে ঢোকা যায়না। এখানে অনেক জল পথ (Water Gate) আছে কিন্তু বিশেষ জল পথেই এখানে ঢোকা যায়। তাই ঘুষ দিয়ে তারা গুপ্ত জল পথের (Water Gate) (ছবি নং ৮) খবর তারা জোগাড় করে এবং সেখান দিয়ে ঢুকে পরে।

ছবি নং ৮ - গুপ্ত জল পথ। এখান দিয়েই ইংরেজরা চাতুরী করে ঢুকেছিল।

ভয়ঙ্কর চতুর্থ যুদ্ধে টিপু সুলতান, ১৭৯৯ সালের ৪ ঠা মে, যুদ্ধক্ষেত্রে মারা যান। যুদ্ধ শেষে টিপু সুলতানের মৃত দেহ যুদ্ধক্ষেত্রের এক পাশে আবিষ্কার করা হয়। ওনাকে শনাক্ত করাও বেশ মুশকিল হয় কারণ টুপি ছারা টিপু সুলতানকে একদম অন্য রকম দেখতে লাগত। যেখানে টিপু সুলতানের মৃত দেহ আবিষ্কার করা হয় সেখানে একটা ছোট স্বারক তৈরি করা হয় (ছবি নং ৯ - ইনসেট দেখুন) এবং সেখানে লেখা হয় “এখানে টিপু সুলতানের মৃত দেহ পাওয়া যায়” এই যুদ্ধের সময় বা পরে টিপু সুলতানের প্রাসাদ ধ্বংস হয়ে যায়। এখন সেখানে প্রাসাদের চিহ্ন দেখা যায়না – অনেক জঙ্গল গজিয়েছে। (ছবি নং ১০)।

ছবি নং ৯ - ভয়ঙ্কর যুদ্ধের পর এখানেই টিপু সুলতানের মৃত দেহ পাওয়া যায়। ইনসেট লক্ষ্য করুন।

ছবি নং ১০ – এখানেই ছিল টিপু সুলতানের প্রাসাদ। এখন সেখানে প্রাসাদের চিহ্ন দেখা যায়না – অনেক জঙ্গল গজিয়েছে।

কোন বিশেষ কারণে এই চত্বরের মন্দির – রঙ্গানাথাস্বামি মন্দির ধ্বংস করা হয়নি। এখনও অটুট আছে। পরের বার এই মন্দিরের ছবি এবং আলোচনা পাঠাবার ইচ্ছে রইল।

বিমল কুমার বসাক

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।