[ লেখক পরিচিতি : অম্বুজাসুন্দরীর জন্ম ১৮৭০ খ্রীষ্টাব্দে
পাবনার (বাংলাদেশ ) ভাঙ্গাবাড়ীতে| পিতা উকিল গোবিন্দরাম সেন|
স্বামী ছিলেন টাঙ্গাইল নিবাসী সাবজজ কৈলাসগোবিন্দ দাসগুপ্ত|
কিশোর বয়স থেকেই কবিতা রচনা করতেন অম্বুজাসুন্দরী| কান্তকবি
রজনীকান্ত সেন ছিলেন জ্ঞাতি ভাই| অম্বুজাসুন্দরীর কবিতা রচনায়
কান্ত কবির প্রেরণা ছিল উল্লেখযোগ্য; এ বিষয়ে অবশ্য স্বামীও
তাকে যথেষ্ট উৎসাহ জুগিয়েছেন|
ম্বুজাসুন্দরীর অধিকাংশ কবিতার বিষয়বস্তু তার নিজের সুখ-দুঃখ,
আনন্দ, সন্তান-স্নেহ, স্বামী-প্রীতিকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছে|
এ সবের মধ্যেই তিনি মাঝে মাঝে খুঁজে পেয়েছেন প্রকৃতির অসীমে
আপনাকে বিলীন করে দেবার আহ্বান এবং ভূমানন্দের স্পর্শ| 'বামাবোধিনী',
'সাহিত্য', 'আরতি' প্রভৃতি পত্রিকায় তার বহু রচনা নিয়মিত প্রকাশিত
হয়েছে| তার রচিত গল্প 'কুন্তলীন' পুরস্কারও পেয়েছে| শেষ বয়সে
কবি আধ্যাত্মিক জীবন যাপন করেছেন|
অম্বুজাসুন্দরীর 'বঙ্গ-কূল-নারী' কবিতাটিতে ফুটে ওঠা বধূর
সহজ সরল ভাবটি সত্যিই মনোরম ও হৃদয়াকর্ষক| কবিতাটির কয়েকটি
পংক্তি :
"বড় ভালবাসি আমি বঙ্গ-কূল-নারী
ধীরতা নম্রতা মাখা ঘোমটায়
মুখ ঢাকা
রয়েছে উনন-ধারে
চিরকাল ধরি,
বড় ভালবাসি আমি বঙ্গ-কূল-নারী|
নয়নে কজ্জল-দাগ অধরে
তাম্বুল-রাগ,
ললাটে
সিন্দুর-বিন্দু লক্ষ্মীর আসন,
সহাস্য সুন্দর মুখ,
সুন্দর সরল বুক,
উজ্জ্বল তারার
মত আনত আনন|
.............. ................
.............
আঁখিভরা সুশীতল বরষা-গঙ্গার
জল,
সফেন তরঙ্গে
সদা হয় উদ্বেলিত,
উচ্চ হিয়া উচ্চ মন, উচ্চ
কাজ অনুক্ষণ,
তবুও ক্ষুদ্রের
ন্যায় পর-পদানত|........"
বে অম্বুজাসুন্দরীর বিষয় নির্বাচনের স্বাভাবিকতা এবং ভাবের
প্রকাশভঙ্গীতে সারল্য থাকলেও তার কবিতা কতটা কাব্যরসসিক্ত
হয়ে উঠেছে, সেটা সমালোচকদের বিচার্য| রচিত গ্রন্থ : 'কবিতালহরী'
(১৮৯২); 'অশ্রুমালা' (১৮৯৪); 'প্রীতি ও পূজা' (১৩০৪); 'ভাব
ও ভক্তি' (১৩১৩); 'প্রেম ও পুণ্য' (১৩১৭); 'খোকা' (১৯০৯);
'প্রভাতী' (১৯৩৫)| গদ্যগ্রন্থ : 'দুটি কথা' (১৩১৩); 'গল্প'
(১৩১৩)| অন্যান্য : 'শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ লীলামৃত' (১৯৩১); 'শ্রীশ্রীরামকীর্তিসুধা';
'শ্রীশ্রীকৃষ্ণের শতনাম' ইত্যাদি| ১৯৪৬ খ্রীষ্টাব্দের ১লা
জানুয়ারি অম্বুজাসুন্দরী পরলোক গমন করেন|]
দীপক সেনগুপ্ত|