প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

পুরনো দিনের পত্রিকা ও বই থেকে নির্বাচিত প্রবন্ধ (সূচী)

জয়লক্ষ্মী

দীনেশরঞ্জন দাশ

         [ লেখক পরিচিতি : দীনেশরঞ্জন দাশের জন্ম চট্টগ্রামে ১৮৮৮ খ্রীষ্টাব্দের ২৯শে জুলাই| আদি নিবাস ছিল বিক্রমপুর পরগণায় (ঢাকা) কুমোরপুর গ্রামে| 'সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান' গ্রন্থে অবশ্য জন্মস্থান হিসাবে কুঁয়রপুর-ফরিদপুরের উল্লেখ রয়েছে| পিতা ছিলেন কৈলাশচন্দ্র দাশ বাহাদুর এবং মাতা ইচ্ছাময়ী দেবী| পিতা নববিধান ব্রাহ্ম সমাজের উচ্চপদে অধিষ্ঠিত কর্মচারী ছিলেন| কৈলাশচন্দ্রের ছিল চার পুত্র ও তিন কন্যা; মনোরঞ্জন, বিভুরঞ্জন, দীনেশরঞ্জন, প্রিয়রঞ্জন এবং চারুবালা, তনুবালা ও নিরুবালা (বা নিরুপমা)| চট্টগ্রামে কৈলাশচন্দ্রের বাসগৃহের নাম ছিল 'আশা কুটীর'| কৈলাশচন্দ্র, ইচ্ছাময়ী ও অন্যান্য ভক্তেরা এখানে নিত্য উপাসনায় বসতেন| দীনেশরঞ্জনের অতি অল্প বয়সেই তার পিতা পরলোক গমন করেন| ধর্মপ্রাণা, দৃঢ়চেতা মাতার কাছেই ছেলেমেয়েরা মানুষ হয়| ইচ্ছাময়ীর শিক্ষাগত যোগ্যতা জানা না থাকলেও তিনি অল্প বয়স থেকেই কবিতা লিখতেন| 'আশা কুসুম' নামে তার একটি কাব্য গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছিল| দীনেশরঞ্জন চট্টগ্রাম স্কুল থেকে এনট্রেন্স পাশ করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন, কিন্তু স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় পড়াশোনা বেশিদূর এগোয় নি| পরে আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন কিন্তু সেখানেও পাঠক্রম শেষ করেন নি| কার্টুন ও ছবি খুব ভাল আঁকতে পারতেন|

           পিতার মৃত্যুর পরে পরিবারের সবাই কলকাতায় চলে আসেন| দীনেশরঞ্জন ছিলেন চঞ্চল প্রকৃতির মানুষ| কোন একটি জায়গায় বেশিদিন কাজ করা ছিল তার স্বভাব বিরুদ্ধ| তার প্রথম কর্মক্ষেত্র ক্লাইড ফ্যান কোম্পানি; পরে যোগ দেন ১১/১ এসপ্ল্যানেড ইস্টে অবস্থিত সারদারঞ্জন রায়ের ক্রীড়া সরঞ্জাম বিক্রির দোকানে সেলসম্যান হিসাবে| সারদারঞ্জন ছিলেন মেট্রোপলিটন কলেজের ক্রীড়া শিক্ষক| সে কাজও বেশিদিন ভাল লাগেনি| পরে চলে আসেন লিণ্ডসে ষ্ট্রীটের একটা ওষুধের দোকানে| এখানে ভদ্র ও নম্র ব্যবহারের জন্য ক্রেতাদের সঙ্গে তার মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল| কিন্তু এখানেও মন টেকেনি দীনেশরঞ্জনের| সাহিত্য রচনা ও ছবি আঁকার দিকেই তার আগ্রহ ছিল বেশি| এই ইচ্ছা ফলবতী হবার মত অনুকূল পরিবেশের অভাবেই হয়ত তার মন সদা চঞ্চল ছিল|

          দীনেশরঞ্জনের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না| এই অবস্থাতেই নতুন লেখকদের নিয়ে ১৩৩০ বঙ্গাব্দে বন্ধু গোকুলচন্দ্র নাগের সঙ্গে সম্মিলিত ভাবে প্রকাশ করেন 'কল্লোল' নামে একটি সাময়িক পত্রিকা| প্রচলিত প্রথার বাইরে গিয়ে একটি নতুন ধারার সৃষ্টি করে এই পত্রিকাটি| সাহিত্যিক মহলে ঝড় তোলা এই সাময়িক পত্রটিকে সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে অনেকে একটি নতুন যুগের প্রবর্তক বলে মনে করেন| অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত তার বিখ্যাত ‘কল্লোল যুগ’ নামক গ্রন্থে এই সময়টির উল্লেখ করেছেন|

          যক্ষারোগে গোকুলচন্দ্রের অকালমৃত্যু ঘটলে পত্রিকা প্রকাশের যাবতীয় ভার দীনেশরঞ্জনের উপর এসে পড়ে| 'কল্লোলে'র মালিকানা থেকে যে সামান্য আয় হত তা দিয়ে গ্রাসাচ্ছাদন করাই শক্ত ছিল| কিন্তু উৎসাহের অন্ত ছিল না| এর মধ্যেই দীনেশরঞ্জন পটুয়াটোলা লেনে 'কল্লোল পাবলিশিং হাউস' খুলে বসেন| বিভিন্ন লেখকের বেশ কিছু বই ছপানো হয় এই সংস্থা থেকে| বইয়ের প্রচ্ছদ সজ্জা এবং কার্টুন আঁকা দু ধরণের কাজেই দীনেশরঞ্জন ছিলেন যথেষ্ট পারদর্শী| তার অঙ্কিত কার্টুনের পাশে D.R শব্দটি লেখা থাকতো| 'কল্লোলে'র মালিকানা থেকে আয় হত সামান্যই| মেজদা বিভুরঞ্জন এক সময়ে কিছু অর্থ সাহায্য করলেও শেষের দিকে পত্রিকা চালাতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন দীনেশরঞ্জন| অর্থোপার্জনের জন্য তিনি চলচ্চিত্রের দিকে ঝুঁকে পড়েন| চিত্র বিশেষজ্ঞ ধীরেন্দ্রনাথের অধীনে কাজের সূত্রে ফটোগ্রাফি বিষয়েও তিনি অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন| চলচ্চিত্র সম্বন্ধে তার চিন্তা ও ধারণা তিনি ব্যক্ত করেছেন ১৩৩৬ বঙ্গাব্দের 'কল্লোলে' আষাঢ়, শ্রাবণ, অগ্রহায়ণ ও পৌষ সংখ্যায় প্রকাশিত 'চলচ্চিত্র' নামক প্রবন্ধে|

          'কল্লোল' পত্রিকার প্রকাশ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বুদ্ধদেব বসু যথেষ্টই দুঃখিত হয়েছিলেন| সেটাই স্বাভাবিক কারণ বুদ্ধদেব বসুর মত অনেক সাহিত্যিককে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করেছে 'কল্লোল'| বুদ্ধদেব বসু লিখেছেন -"যদি 'কল্লোল' আজ পর্যন্ত চলে আসতো এবং সাম্প্রতিক নবীন লেখকদের গ্রহণ করতো তা হলে সেটি হত বাংলা দেশের একটি প্রধান - এবং সাহিত্যের দিক থেকে প্রধানতম - মাসিকপত্র, আর দীনেশরঞ্জনের নাম সম্পাদক হিসাবে হয়ত রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের পরেই উল্লেখিত হতে পারতো| এ কথা মনে না-করে পারিনা যে এ-গৌরব দীনেশরঞ্জন ইচ্ছে করেই হারালেন - বাংলা সিনেমা বাংলা সাহিত্যের প্রথম ক্ষতি করলো| 'কল্লোলে'র অপমৃত্যুর জন্য অন্তত আংশিকরূপে দায়ী হয়ে|" কিন্তু দীনেশরঞ্জন চলচ্চিত্রে যোগদান করেছিলেন সম্ভবতঃ অর্থকষ্ট থেকে মুক্তি পেতেই| 'কল্লোল' চালাতে গিয়ে ঋণের জালে জড়িয়ে না পড়লে তিনি 'কল্লোল' বন্ধ করে দিতেন না|

         যাই হোক দীনেশরঞ্জন আমৃত্যু চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন| অভিনয়ও তিনি খারাপ করতেন না| কেশবচন্দ্র সেনের বাসভবন 'কমল কুটীরে' কেশবেরই রচিত 'নব বৃন্দাবন' নাটকে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেছেন| ১৯৩৪ খ্রীষ্টাব্দে তিনি নিউ থিয়েটার্সের অন্যতম ডিরেক্টর হিসাবে পরিচালক মণ্ডলীতে যোগদান করেন| সিনারিও লেখক ও পরিচালক হিসাবেও তিনি কাজ করেছেন| 'আলোছায়া' তার পরিচালিত একটি চলচ্চিত্র| ১৯৪০ খ্রীষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত হেমচন্দ্র চন্দ্র পরিচালিত 'প্রতিশ্রুতি' ছায়াছবিতে অভিনয়ের কাজ শেষ করে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন| ডিউডোনাল আলসারে আক্রান্ত হয়ে মাসখানেক রোগ ভোগের পর তার ভাই, বোন ও ভাতৃবধূদের বহু চেষ্টা সত্বেও, বড়দিদি চারুবালা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলিপুরস্থিত বাসভবনে ১৯৪১ খ্রীষ্টাব্দের ১২ই মে সোমবার বেলা ৩টা ৩৫ মিনিটে দীনেশরঞ্জন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন|

         দীনেশরঞ্জন ছিলেন আজীবন অকৃতদার| তার বিয়ে না করার কারণ হিসাবে যেটি শোনা যায় সেটি হল, দীনেশরঞ্জন প্রথম বয়সে একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের বাড়িতে যাতায়াত করতেন এবং সেখানে একটি অল্প বয়সের মেয়েকে দেখে তার প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন| মেয়েটি তখন ফ্রক পড়তো| কিন্তু দীনেশরঞ্জনের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না এবং সুপ্রতিষ্ঠিত নয় বলে, মেয়েটির অভিভাভকেরা দীনেশরঞ্জনের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে দিতে আপত্তি করেন| মেয়েটিকে পড়াশোনা করতে বিলাতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়| পরে দীনেশরঞ্জনেরই এক বন্ধুর সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে হয়| শোনা যায় এই ঘটনার পরে দীনেশরঞ্জন অবিবাহিত থাকতে মনস্থ করেন |

         দীনেশঞ্জনের কিছু গ্রন্থ ও বিবিধ রচনা এখানে উল্লেখ করা হল : ‘আতঙ্ক’ (রূপক নাট্য, ১৩২৭) ; ‘মাটির নেশা’ (গল্প সংগ্রহ, ১৩৩২) ; ‘ভুঁই-চাপা’ (গল্প সংগ্রহ, ১৩৩২) ; ‘কাজের মানুষ’ (ব্যঙ্গ রচনা)| ‘দীপক’ ও ‘রাতের বাসা’ নামক তার দুটি উপন্যাস গ্রন্থায়িত হয় নি| এ দুটি ধারাবাহিকরূপে প্রকাশিত হয়েছিল ‘কল্লোলে’| ১৩৩৪-এর বৈশাখ সংখ্যা থেকে ১৩৩৫-এর চৈত্র সংখ্যা পর্যন্ত (কার্তিক ১৩৩৪ বাদ দিয়ে) বেরিয়েছিল ‘দীপক’ এবং ১৩৩৬-এর জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা থেকে পৌষ পর্যন্ত (আশ্বিন বাদে) ধারাবাহিকভাবে বেরিয়েছিল ‘রাতের বাসা’| ১৩৩৬-এর পৌষ মাসে ‘কল্লোলে’র প্রকাশ আকস্মিক ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ‘রাতের বাসা’ উপন্যাসটি অসম্পূর্ণ রয়ে যায়| এ ছাড়া ‘ভারতী’, ‘বঙ্গবাণী’, ‘চিত্রপল্লী’, ‘নাগরিক’ প্রভৃতি পত্রিকাতেও তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে|]

  দীপক সেনগুপ্ত

       বিহারীবাবুকে তাঁর চেনাশোনা লোকেরা সাধুলোক বলে জানত্| তাদেরই মধ্যে অনেকে আবার তাঁকে বোকা বলে ঠাট্টা করত| সারাটী জীবন তিনি পাটনাতেই কাটিয়েছিলেন| তাঁর বাল্যবন্ধু বিকাশবাবু বল্তেন-বিহারীর ক'টা খুব গুণ আছে| মুখে যা' বলে কাজেও তাই করে| আর মুখে যা' বলে তাও সে যে-ভাবে চিন্তা করে সেই ভাবের কথাগুলিই বলে| এ আমি অনেকবার পরীক্ষা করে দেখ্বার সুযোগ পেয়েছি|

         তাই যেমন হয়-বিহারীবাবুর দারিদ্র্য কোনও দিনই ঘুচ্ল না| ঐ ভাবের সঙ্গে আর সংসারের অভাবের সঙ্গে কোনও দিনই সন্ধি করতে পারলেন না| অর্থাভাব জীবনসঙ্গী হয়ে রইল| বিহারীবাবুর স্ত্রীর নাম জয়লক্ষ্মী| দুটী মেয়ে ও তিনটী ছেলে| বড় মেয়েটী বেশ বড় হয়েই যক্ষ্মা হয়ে মারা যান্| দ্বিতীয়টীর নাম হেমলতা| বড় ছেলেটীর নাম চৈতন্য, দ্বিতীয় গৌর, তৃতীয়টী গোরা| হেমলতা ছেলেদের সকলের বড়-কাজেই তাদের দিদি|

         বিহারীবাবু প্রথম জীবনে স্কুলমাষ্টারী করতেন| অনেকদিন নির্ভাবনায়ই কেটে গিয়েছিল| কিন্তু একদিন তাঁর মনে হোল হয়ত অকারণে স্কুলের ছেলেদের তিনি শাস্তি দেন, তাই হঠাৎ চাকরীতে ইস্তাফা দিয়ে এসে জয়লক্ষ্মীকে বল্লেন-এখন থেকে একবেলা রান্না হবে| আমি মাষ্টারী ছেড়ে দিয়ে এসেছি| জয়লক্ষ্মী হেসে বল্লেন-তার জন্য একবেলা রান্না হবে কেন? দুবেলাই খাবার জুটবে|

         তারপর ঘরের বারান্দায় ভাঙ্গা মোড়ার উপর বসে কয়েকদিন কেটে গেল| বিহারীবাবু বাড়ীর বাইরে গেলেন না| তখন শীতকাল - উত্তুরে হাওয়া-মাথার উপর থেকে পুরোণশাড়ীর এক টুক্রা কাপড় কানপটীর মতন বেঁধে বিহারীবাবু একদিন সেই মোড়ার উপর বসে আছেন| খানিকটা রোদ্ বিহারীর পায়ের উপর পড়েছে-যাবার পথে যেন বিহারীর শীতক্লিষ্ট পাদুখানি দেখে তার দয়া হয়েছিল|

         চাপরাশ-আঁটা ডাকপিয়ন্ এসে একখানি পোস্টকার্ড বিহারীর দিকে হাত বাড়িয়ে ধরল| বিহারী কোঁচার ভিতর থেকে হাত দুখানি বের না করে বল্লেন-ঐখানে রেখে যাও|

         ডাকপিয়নের অনেক কাজ| কার জন্য কি খবর নিয়ে যাচ্চে সে তার খোঁজ রাখে না-শুধু খবর পৌঁছে দেওয়া নিয়েই তার কাজ| কত লোক যে তাকে কত ভালবাসে-কত আশায় যে তার প্রতীক্ষ্মায় বসে থাকে তাও সে জানেনা| এক এক বাড়ীতে ছোট ছেলেমেয়েরা যখন উৎসুক হয়ে হাতবাড়িয়ে তার হাত থেকে বাড়ীর চিঠি কেড়ে নেয় তখনই দু-একবার তার মুখে হাসি দেখা যায়| তা নইলে তার নিয়মিত আসা যাওয়ার মধ্যে সে যে মানুষ তার কিছুই পরিচয় পাওয়া যায় না| আট বা দশ টাকা মাসে পেয়ে তার বুঝি পরের মুখের দিকে তাকাবার অবসর নাই| বেচারী সে!

         বিহারী কিছুক্ষণ চিঠিটির দিকে চুপ করে তাকিয়ে থেকে হেমলতাকে ডেকে বল্লেন-একটা চিঠি এসেছে-পড়ে দিয়ে যাওত মা|

        চিঠি পড়া হয়ে গেলে হেমলতাকে বল্লেন-তোমার মাকে ডেকে দাও| জয়লক্ষ্মী এসে দাঁড়াতে পোষ্টকার্ডটার দিকে ইঙ্গিত করে দেখিয়ে বল্লেন-পড়ে দেখ|

       পড়া হয়ে গেলে জয়লক্ষ্মী বল্লেন-তাতে কি হয়েছে? প্রীতিদের ত অনেকদিন আগেই আসার কথা ছিল| এখানকার স্কুলে যে সে পড়বে - কি, চুপ্ করে রইলে যে?

       বিহারী মুখ না তুলেই উত্তর করলেন - তা পড়ুক|

      বুধবারে চিঠি এল-শুক্রবার সকালবেলা চন্দ্রকান্ত বাবু তাঁর মেয়ে প্রীতিকে নিয়ে বিহারীর বাড়ীতে এসে হাজির হলেন| জয়লক্ষ্মী ও হেমলতা এগিয়ে এসে প্রীতিকে ভিতরের ঘরে নিয়ে গেলেন| প্রীতির বাপ চন্দ্রকান্তকে কেরোসিন কাঠের তালিমারা হৃতগৌরব একখানি বেতের চেয়ার দেখিয়ে বিহারী বল্লেন-বসো, তারপর?

      চন্দ্রকান্ত গলা থেকে শীলের গলাবন্দটা খুল্তে খুল্তে বল্লেন-আমি ভেবেছিলাম চৈতন্যরা কেউ বোধ হয় ষ্টেশনে যাবে| ওরা সব কেমন আছে? ভেতরে পড়ছে বুঝি?

      বিহারী উত্তর করলেন-না, রান্নাঘরে উনুনের কাছে বসে আছে| স্কুল থেকে নাম কাটিয়ে দিয়েছি|

      চন্দ্রকান্ত একটু বিস্মিত হয়েই বল্লেন-কেন? বিহারী একটা হাতের উপর অন্য হাতটী মুঠো করে রেখে নাড়তে নাড়তে বল্লেন-কেন মানে-আমার এখন চাকরী বাকরী নাই| আমি হেড্মাষ্টারকে বলেছিলাম-আপনি যদি এ মাসটা চালিয়ে দেন তাহলে আমি আস্ছে মাসে ওদের দুমাসেরই মাইনে একসঙ্গে দিয়ে যাব| তা' ওঁর ইচ্ছা থাক্লেই বা কি করবেন্! ওঁরও ত উপরে হেড্মাষ্টার আছেন-তাঁর সইবে কেন? স্কুল করে ত আর দাতব্য করতে বসেন নি| টাকা ছিল-বাবা মারা যাবার পরে বাবার নামে নূতন জমীদারী খুলে দিয়েছেন-তিনি বল্লেন-নাম কাটিয়ে দাও|
চাকরী নাই কেন তোমার? তুমিত সেই স্কুলেই মাষ্টার ছিলে গো?

       ছিলাম-এখন নাই| ভাল লাগ্লনা-ছেড়ে দিয়েছি|

       তাহলে-এখন-
-এখনও যেমন তখনও তেমন| কবে কি হবে তা' ভেবে লাভ কি| ঐ 'বে'-'বো'-'বা'র প্রতি আমার কোনও আসক্তি নাই| চোখের সাম্নেরটাই সব চাইতে বড় সত্যি|

       -হেমলতা একখানি কাঁচের পিরীচের উপর একটি লোহার পেয়ালায় চা নিয়ে এসে চন্দ্রকান্তের কাছে ধরল|
চন্দ্রকান্ত বল্লেন-আমরা যে সকালবেলা ট্রেনেই চা' রুটি সব খেয়ে এসেছি| চল বিহারী একটু বাজারের দিকে যাওয়া যাক্|

       বিহারী বল্লেন-এবার একটু রোদ উঠেছে, ওদের পড়াতে হবে| সকালবেলাটা আগুনের কাছে থাকে| ঘরের ভিতর বড় অন্ধকার আর ঠাণ্ডা| তুমিই একলা যাও-রাস্তা ঘাট ত সবই চেন|

       চন্দকান্ত চা খেয়ে বাজারে গেলেন|

       বিহারী হেঁকে বল্লেন-এবার তোমরা সব পড়বে এস|

       হেমলতা ও ছেলেরা বই নিয়ে এল| বিহারী গৌরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন- চৈতন্য কোথায়?
জয়লক্ষ্মী ভিতর থেকে এসে বল্লেন-ওকে ভোরে উঠেই বাজারে পাঠায়েছি| একখানা থালা দিয়ে দিয়েছি-যদি কিছু আন্তে পারে|

        বিহারী একবার চোকদুটী বড় করে জয়লক্ষ্মীর দিকে তাকালেন|

        জয়লক্ষ্মী বল্লেন-না, বাঁধা দিতে পাঠাইনি| বিক্রী করতে পাঠিয়েছি| ওখানা একেবারে নতুন ছিল| তোমার বিয়ের সময়কার|

        বিহারী ছেলে মেয়েদের পড়িয়ে উঠে স্নান করে নিলেন|

         চন্দ্রকান্ত বাজার করে এসে বল্লেন-কিহে, স্নান করে ফেলেছ? কোথাও বেরুবে নাকি?
       জুতোর ভিতরে একখানা খবরের কাগজ মুড়ে পুরতে পুরতে বিহারী বল্লেন-হ্যাঁ, একটু আগেই বেরুতে হবে ভাই| একটা কাজের চেষ্টায় যাব|
       চন্দ্রকান্ত হেসে বল্লেন-তা যাও-যাও| সন্ধ্যের সময় গল্প হবে না হয়|
       শুক্র শনি দুদিনই বিহারী সকাল সকাল খেয়ে বেরিয়ে যান্-সন্ধ্যের সময় বাড়ী ফিরে জয়লক্ষ্মীর হাতে দুএকটী করে টাকা দেন্|
       রবিবার সকালবেলা চন্দ্রকান্ত বল্লেন-আজ প্রীতিকে স্কুলের বোর্ডিংএ রেখে আস্ব| কাল থেকে একেবারে পড়া আরম্ভ করবে, কি বল?
       বিহারী বল্লেন-তা বেশ|
       আহারাদির পর প্রীতিকে নিয়ে চন্দ্রকান্ত স্কুলে চলে গেলেন| বিকেলের দিকে জয়লক্ষ্মী বিহারীকে জিজ্ঞেস করলেন-এ ক'দিন টাকা পেলে কোথায়?
       বিহারী বল্লেন-একটাকা চার আনা করে হাজার-হ্যাণ্ডবিল্ বিলি করে|
       জয়লক্ষ্মী মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বল্লেন-হ্যাণ্ডবিল্? কিসের?

        আমাদেরই স্কুলের একজন মাষ্টার জগতবাবু বাড়ীতে বসে আরেকটা কারবার চালান| জগতশুদ্ধ বুঝি তাই| তিনি একটা মাথার তেল বের করেছেন| খুব নাকি ভাল তেল| টাক্ সেরে যায়-মাথায় চুল বাড়ে| তারই তেলের হ্যাণ্ডবিল্ বিলি করেছি এ দুদিন| সহর ছেয়ে দিয়েছি এ দুদিনে| আজ রবিবার-পথে লোকজন থাক্বে না বলে আজ আর বেরুইনি| বেশ কাজ, কোন ছল চাতুরী মিথ্যের সম্পর্ক নাই|

         জয়লক্ষ্মী কিছু না বলে ঘরের ভিতর চলে গেলেন| সন্ধ্যের সময় চন্দ্রকান্ত বাবু এসে বল্লেন-রাত্রের ট্রেণেই যাচ্চি হে আমি| প্রীতিটাকে মাঝে মাঝে এনো তোমার কাছে| শনি রবিবারে ওদের ছুটী| তোমার বাড়ীতে পাঠাবার কথা বলে এসেছি|

         জয়লক্ষ্মী ঘরের ভিতর থেকে বেরুতে বেরুতে বল্লেন-বেশ করেছেন-নিশ্চয় আস্বে| আপনার খাবার তৈয়েরী হয়েছে-এই বেলা বসুন একটু আস্তে ধীরে খাবেন|

         দুই বন্ধুতে গল্প স্বল্পের পর চন্দ্রকান্ত ষ্টেশনের দিকে বিদায় হলেন|

        সোমবার সকালে আহারাদি সেরে বিহারী আবার বিজ্ঞাপন বিলি করতে বেরুলেন| কাজটা তাঁর খুব পছন্দ হয়েছিল| বেশ সোজাসুজি কাজ| কোনও গোল নেই| একেবারে হাতে হাতে কাগজ দেওয়া তাতেও গোল নেই-আর গুণে যতগুলি বিলি হয়েছে তার দাম হাতে হাতে পাওয়া| পথে দাঁড়িয়ে বিলি করতে করতে প্রায় বেলা পড়ে এসেছে-স্কুল কাচারী ছুটী হয়েছে| পাট্না সিটির দিকে ট্রাম চলেছে| সবাই ব্যস্ত| বাড়ীর দিকে চলেছে| বিহারীর পাশে একটী বৃদ্ধ ভদ্রলোক ট্রামের জন্য অপেক্ষা করছিলেন| হাতে একখানি বড় রুমালে ক'টি ফুলকপি বাঁধা পুটুলি| তার ভিতর দিয়ে মাছের একটা ল্যাজও দেখা যাচ্চিল| অনেকক্ষণ থেকে বাবুটী বিহারীকে লক্ষ্য করছিলেন| বিহারীও দু'একবার তা বুঝ্তে পেরেছেন| ভদ্রলোকটী এগিয়ে এসে বিহারীকে বল্লেন-দেখি মশাই, কিসের বিজ্ঞাপন?

         পড়ে বল্লেন-একি আপনার তৈরী তেল?

         না, আমরাই একজন বন্ধু প্রস্তুত করেছেন|
       বিজ্ঞাপনে যা' লেখা আছে-সব সত্যি? সত্যি টাক্ সেরে যায়?
       টাক্ সারে কিনা জানিনা| তবে তিনি শিক্ষিত লোক-তিনি কি আর মিথ্যাকথা ব'লে পয়সা রোজগার করবেন|
ট্রাম এসে পড়েছিল| লোকসাগরে কোথায় তিনি মিলিয়ে গেলেন! কিন্তু তাঁর কথাগুলি বিহারীর পাশে তখনও দাঁড়িয়ে রইল| যা লেখা আছে তা কি সব সত্যি!

         তারপর বিহারী যখন সন্ধ্যাবেলা বাড়ী ফিরে এলেন তখন জয়লক্ষ্মী রান্নাঘরে একঘর ধোঁয়া করে তার মধ্যে মিলিয়ে গিয়েছেন| ছাতাটা দরজার উপর ঝুলিয়ে রেখেই বিহারী রান্নাঘরের দিকে ছুটে গেলেন| হেমলতা বাবার পেছনে পেছনে গিয়ে দেখে বাবা মায়ের হাত ধরে হিড়হিড় করে শোবার ঘরের দিকে টেনে নিয়ে আস্ছেন| ছেলেরা তেলের প্রদীপের আলোর চক্রটী থেকে অন্ধকারের দিকে সরে গিয়ে বস্ল|

         বিহারী খাটের উপর বসে পড়ে বল্লেন-বসো, উনোন ধরাতে হবেনা-কিছু আন্তে পারিনি|
       জয়লক্ষ্মী হেমলতার দিকে ফিরে বললেন-যাওত মা, আরেকটু হাওয়া করলেই কয়লাগুলো ধরে উঠ্বে| আর দেখ, বিকেলে যে আক্ কখানা কেটে রেখেছি তা' একখানি রেকাবীতে করে নিয়ে এস|
       বিহারী ডেকে বল্লেন-চৈতন্য, একগ্লাস খাবার জল নিয়ে এসত বাবা|
       জয়লক্ষ্মী বিহারীর হাত থেকে ছেঁড়া শালখানা নিয়ে বল্লেন-আগে মুখে চোখে জল দিয়ে নাও তারপর জল খেও| চৈতন্য, আগে দেখত বারান্দায় ঘটীতে জল আছে কি না| গামছানা মোড়ার উপর রেখে এস|

         বিহারীর দ্বিতীয় পুত্র গৌরের বারমাসই প্রায় সর্দ্দি লেগে থাক্ত| কারণে অকারণে সে হাঁচ্তে আরম্ভ করে দিত| সময় লগ্ন না দেখে অহেতুকী এরকম হাঁচীতে বাড়ীর সবাই বড় তার উপর বিরক্ত হয়ে উঠ্ত| এই হাঁচিটি ছাড়া, সে যে বেঁচে আছে তা' অনেক সময়ই টের পাওয়া যেতনা| সে যখন বিছানায় শুয়ে থাক্ত, তা' দেখে অনেক সময়ই মনে হোত কেউ যেন তাড়াতাড়িতে বিছানার উপর কাপড় ছেড়ে রেখে গিয়েছে| নিত্য আহারের শাক্ পাতার চাইতেও সে দিন দিন লঘু হয়ে উঠ্ছিল আর তেম্নি লম্বা হয়ে চলেছিল| বিহারীকে নিয়ে জয়লক্ষ্মী যখন এরূপ ব্যস্ত ঠিক্ সেই সময়টীতে গৌর সেই অন্ধকার কোন্টী থেকে পর পর হেঁচে যেতে আরম্ভ করল| হাঁচি শুনে বিহারী সেই অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে ডেকে বল্লেন-জেগে আছ গোরা? ছোটছেলে গোরার একটা মস্ত বড় বাহাদুরী ছিল| তার জন্য তার বাপমায়ের কখনও কাপড় জামা কিন্তে হোত না| সে বছরের পর বছর ছোট হয়েই চলেছিল| চৈতন্য বড়-তার মেজাজও একটু বড় রকমের ছিল| আর খেয়ে না খেয়ে কি রকম করে যে সে মোটা হচ্ছিল তা' বাড়ীর কেউ ঠিক্ করে উঠ্তে পারত না| প্রতিদিন সকালবেলা উঠেই যেন দেখা যেত তার জামা কাপড় আগের দিনের চাইতে ছোট হয়ে গিয়েছে| সম্ভবমত সে কাপড় গৌরের ব্যবহারের জন্য দেওয়া হোত| কিন্তু মাসাধিকের বেশী গৌর সে কাপড় জামা ব্যবহার করতে পারত না| এরূপ দ্বিবিধ ভাইয়ের অব্যবহার্য্য জামাকাপড় গোরার গায়ে এসেই পড়ত| সেগুলি তার গায়ে বড় হওয়া ভিন্ন কোনও কালেই ছোট হোত না|

          ঐ নিত্য অভাবের উৎসবের মধ্যে বিহারীর গৃহে এদের নিয়ে বেশ আনন্দের হাসি উঠ্ত| বিহারী জয়লক্ষ্মীও খুব প্রাণভরে হাস্তেন| এও তাই হোল| বিহারীর প্রশ্নের উত্তরে গোরা যখন সেই কোন্টী থেকে একটি অনুচ্চ নিশ্বাসের মত 'না' বল্ল তখন বিহারীর আর জয়লক্ষ্মী দুজনেই হেসে উঠ্লেন| বেগতিক দেখে গৌর পালাবে মনে করে যেমন চৌকী থেকে নাম্তে যাবে অম্নি হেঁচচ্ছ-করে তেলের প্রদীপটীর উপর হেঁচে ফেল্লে| জলমেশান তেলের প্রদীপটী নিভে গেল| চৈতন্য জল আন্তে অন্ধকারে চৌকাটে পা লেগে ঘটিশুদ্ধ পড়ে গেল| এবার ঘরময় হাসি উঠল| সেই হাসির তরঙ্গের মধ্যে বেজে উঠ্ল-খন্ খন্ খন্-আর একটী শব্দ-মাগো| সেই সঙ্গে ঘরটী একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে গেল|

           জয়লক্ষ্মী বালিশের তলা থেকে দেশলাই বের করে প্রদীপ ধরালেন| আর সেই আলোর শিখার কম্পনের সঙ্গে ঘরময় হাসির রোল্ উঠ্ল| হাঁটু ধরে খোঁড়াতে খোঁড়াতে চৈতন্য ঘটী করে জল আন্তে চল্ল| হেমলতা তার সবুজ রঙ্গের কাঁচের চুড়ীর ভাঙ্গা টুকুরাটী খুলে ফেলে আক্ক'খানি কুড়াতে বসে গেল| গৌর বাইরে ছুটে গিয়ে একনাক সর্দ্দি ঝেড়ে এসে হাঁফাতে হাঁফাতে বল্ল-বাঁ-বাঁ-ফেঁচ্চো|

         আবার সবাই হেঁচে উঠ্ল| জয়লক্ষ্মী এবার একটু জোর করে গম্ভীর হয়ে বল্লেন-আর হেসে কাজ নেই-যাওত মা-অনেক রাত হয়ে যাবে নয়ত| চাল আর ডাল, ক'টা একসঙ্গেই চড়িয়ে দাওগে| আর দেখ দুটো বেগুণ আছে-আচ্ছা থাক্-ওটা নাব্লে আমিই পুড়িয়ে দেব অখন্| ছোট ছেলে গোরা কাপড়ের ভিতর থেকে মুখটি বের করে এক গাল হেসে জিজ্ঞেস করল-হঁযা মা-খিচুড়ী?

         খাওয়া দাওয়ার পর ছেলে মেয়েরা ঘুমিয়ে পড়লে জয়লক্ষ্মী বল্লেন-কালও কি সকালে বেরুবে?
       -জয়লক্ষ্মীর চোখ ছল ছল করে উঠল-অন্ধকারে বিহারী তা' দেখ্তে পেলেন্ না|
       আর্দ্রস্বরে তিনিও উত্তর করলেন-না খুব তাড়া নেই| তাদের বলে এসেছি, আমি আর বিজ্ঞাপন বিলি করবনা| কি জানি, তেলের যে সব গুণ লিখেছে তা' যদি সব সত্যি না হয়!
       জয়লক্ষ্মী বল্লেন-তার আর কি হয়েছে-বেশ করেছ| এখন প্রায় এক সপ্তাহ চালিয়ে নিতে পারব| এ ক'দিনের টাকা থেকে তিন চারটে টাকা এখনও আছে| বাজারের খরচত এ কয়দিন চন্দ্রকান্তবাবুই করেছেন কিনা|
       বিহারী হেসে বল্লেন-তাই বল| আমি ভেবেছিলাম, আজ ছেলেগুলো না খেয়েই থাকবে| ভারী বাহাদুর!
       বাহাদুর না? আচ্ছা বেশ, কালই আমি সব টাকাগুলি খরচ করে বাজার করাব?
       না, না, তুমি বাহাদুর না! তুমি আমার অদৃষ্টের উপরেও বাহাদুরী খেলচ!
       সেই নিস্তব্ধ বিপুল অন্ধকারে জয়লক্ষ্মীর একটী দীর্ঘনিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে বিহারী বলে উঠ্লেন-দয়াল, দয়াল!

 

 (‘বঙ্গবাণী’ ১৩২৯ বঙ্গাব্দ, পৌষ সংখ্যা )

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।

 

 

louis vuitton outlet louis vuitton outlet coach outlet online jordan 6 sport blue sport blue 6s new jordans 2014 foamposites black suede legend blue 11s black infrared 6s black infrared 6s lebron 11 louis vuitton outlet jordan 3 sport blue louis vuitton outlet cheap louis vuitton louis vuitton outlet black infrared 6s cheap jordans black infrared 6s sport blue 6s legend blue 11s black infrared 6s jordan 11 legend blue coach outlet online louis vuitton outlet legend blue 11s jordan 11 legend blue foamposites black suede legend blue 11s jordan 3 sport blue louis vuitton outlet lebron 11 jordan 6 sport blue cheap jordan shoes jordan 3 sport blue louis vuitton outlet coach outlet online louis vuitton outlet jordan 3 sport blue sport blue 3s