প্রথম
পাতা
শহরের তথ্য
বিনোদন
খবর
আইন/প্রশাসন
বিজ্ঞান/প্রযুক্তি
শিল্প/সাহিত্য
সমাজ/সংস্কৃতি
স্বাস্থ্য
নারী
পরিবেশ
অবসর
|
পুরনো
দিনের পত্রিকা ও বই থেকে নির্বাচিত প্রবন্ধ
(সূচী)
হিরণ্ময়ী দেবী
[
লেখক পরিচিতি : মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের একাদশ সন্তান
স্বর্ণকুমারী দেবীর দ্বিতীয় কন্যা সরলা দেবীর জন্ম
১৮৭২ খৃষ্টাব্দের ৯ই সেপ্টেম্বর। বাবা বাঙ্গলার কংগ্রেস
সেক্রেটারি জানকিনাথ ঘোষাল। সরলা দেবীর শিক্ষারম্ভ
বেথুন স্কুলে। বেথুন কলেজ থেকেই তিনি এফ.এ এবং পরে
সেখান থেকেই ১৮৯০ সালে ইংরাজিতে অনার্স নিয়ে বি. এ
পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের মধ্যে সর্বোচ্চ
নম্বর পেয়ে তিনি 'পদ্বাবতী স্বর্ণপদক' লাভ করেন; তিনিই
এই মেডেলের প্রথম প্রাপক। তিনি ফরাসি এবং পার্শি ভাষা
নিয়েও পড়াশোনা করেছিলেন এবং পরে সংস্কৃত নিয়ে এম.এ
পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হলেও শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা
দেওয়া হয় নি। স্কুলে তার সহপাঠিনী ছিলেন কবি কামিনী
রায় ( পূর্বে কামিনী সেন ) এবং লেডি অবলা বসু। বিভিন্ন
বিষয়ে জ্ঞান লাভের বাসনায় তিনি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা
করতে মনস্থ করেন। স্কুলে বিজ্ঞান কিছুটা পড়েছিলেন
কিন্তু সেকালে মেয়েদের বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ ছিল
না। অবশেষে তিনি মহেন্দ্রলাল সরকারের প্রতিষ্ঠিত কাল্টিভেশন
অফ সায়েন্স অ্যাসোসিয়েসনে তার দুই দাদার সঙ্গে ( জ্যোৎস্নানাথ
ও সুধীন্দ্রনাথ ) বিজ্ঞানের ক্লাসে বসে থাকতেন। তবে
বিজ্ঞান শেষ পর্যন্ত তাকে টেনে রাখতে পারে নি।
সঙ্গীতে তার ছিল সহজাত প্রতিভা। রবীন্দ্রনাথের কযেকটি
গানের স্বরলিপিও তিনি তৈরী করেছেন। পাশ্চাত্য রীতির
অনুসরণ করে 'সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে' গানটিকে পিয়ানোতে
বাজানোর অনুকূল করে তোলেন। হাফেজের একটি কবিতায় সুর
সংযোগ করে মহর্ষিকে শোনানোয় তিনি অত্যন্ত খুশি হয়ে
সরলা দেবীকে এক হাজার টাকার হীরে বসান নেকলেস উপহার
দেন। নানা জায়গা থেকে তিনি গানের সুর সংগ্রহ করতেন।
তার সুরে কথা বসিয়ে রবীন্দ্রনাথ 'আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে'
, 'চিরবন্ধু চিরনির্ভর' , 'এ কি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ'
ইত্যাদি গানগুলি রচনা করেন। রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে
'বন্দেমাতরম' গানের সুর তিনিই প্রথমে দিয়েছিলেন। শোনা
যায় 'সপ্ত কোটির' বদলে 'ত্রিংশ কোটি' বসিয়ে গানটিকে
তিনি সর্ব ভারতীয় রূপ দেবার চেষ্টা করেন। তার বিখ্যাত
দেশাত্মবোধক গান 'নমো হিন্দুস্থান' ১৯০১ সালে অনুষ্ঠিত
কংগ্রেস অধিবেশনে গাওয়া হয়। গানটি তিন চার দশক আগে
রেডিওতে বাজান হত ; আধুনিক গান নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার
ঢেউএ এ ধরণের গান এখন অনেকাংশে বিস্মৃতির অন্তরালে
চলে গেছে। সরলা দেবী কিছুকাল মহীশূরে মহারাণী স্কুলে
শিক্ষকতা করেন , এমন কি মহারাণীর সেক্রেটারির কাজও
করেছেন।
১৯০৪ সালে তিনি 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' নামে একটি স্বদেশী
দোকান খোলেন। মূলতঃ হাতে বোনা পোষাকের ব্যবহার জনপ্রিয়
করতেই তার এই প্রয়াস। স্বদেশী জিনিস যোগাড় করে বম্বে
কংগ্রেসে পাঠানোর উদ্যমকে স্বীকৃতি দিয়ে তকে একটি
স্বর্ণপদক প্রদান করা হয। সেকালের প্রচলিত রীতি ভেঙে
সরলা দেবী প্রায় তেত্রিশ বছর বয়স অবধি অবিবাহিত ছিলেন।
এক সময়ে মা স্বর্ণকুমারী চেয়েছিলেন মেয়ে আজীবন অবিবাহিত
থেকে দেশের কাজ করুক। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি ১৯০৫ (?)
সালে পাঞ্জাবের বিপ্লবী নেতা রামভজ দত্ত চৌধুরীকে
বিয়ে করেন। স্বামী রামভজ অত্যন্ত তেজস্বী ছিলেন এবং
'হিন্দুস্থান' নামে একটি উর্দু পত্রিকা প্রকাশ করতেন।
নানা জ্বালাময়ী রচনা প্রকাশ করে তিনি শাসকদের রোষে
পড়ে গ্রেপ্তার বরণ করেন। তবে এ নিয়ে দ্বিমত আছে ;
অনেকের মতে তিনি শেষ অবধি গ্রেপ্তার এড়াতে পেরেছিলেন।
সরলা দেবী এই সময়ে পত্রিকাটি প্রকাশনার দায়িত্ব গ্রহণ
করেন এবং এর ইংরাজি অনুবাদও প্রকাশ করেন। ১৯২৩ খৃষ্টাব্দের
৬ই আগষ্ট মুসৌরীতে স্বামী রামভজের মৃত্যুতে সরলা সম্পূর্ণ
বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এবং পাঞ্জাব থেকে ফিরে এসে ঐভারতী
সম্পাদনা ও অন্যান্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা
করেন। ১৯৩০ সালে তিনি কলকাতায় 'ভারত স্ত্রী শিক্ষা
সদন' নামে মেয়েদের একটি স্কুল খোলেন। কিছুদিন তিনি
দিদি হিরণ্ময়ী দেবীর সঙ্গে 'ভারতী' পত্রিকা সম্পাদনাও
করেছেন। তার একমাত্র পুত্র দীপক দত্তর বিয়ে হয় মহাত্মা
গান্ধির এক নাতনি রাধার সঙ্গে। প্রথমে বিপ্লবী চিন্তা
দ্বারা চালিত হলেও পরে তিনি মহাত্মা গান্ধির অহিংসা
নীতি ও অসহযোগ আন্দোলনের দ্বারা আকৃষ্ট হন। ভারতী
সম্পাদনার সূত্রে তিনি স্বামী বিবেকানদ ও ভগিনী নিবেদিতার
সংস্পর্শে আসেন। স্বামীজী সরলার গুণের অত্যন্ত প্রশংসা
করতেন এবং বলতেন তিনি 'নারীকুলের রত্ন'। নিবেদিতা
তাকে বিদেশে গিয়ে প্রাচ্যের আধ্যাত্মিক চিন্তাধারা
প্রচার করতে বলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা আর হয়ে
ওঠে নি। সরলার মূলমন্ত্র ছিল দেশপ্রেম। সমস্ত জীবন
তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন এবং অল্প বয়সের অনেক ছেলেমেয়েকে
দেশাত্মবোধে অনুপ্রাণিত করেছেন। সাহিত্য রচনাতেও তিনি
যথেষ্ট প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। মাত্র বার বছর বয়সে
একটা কবিতা লিখে ‘সখা’ পত্রিকা থেকে একটি পুরস্কার
পেযেছিলেন। পরে ‘সখা’ , ‘বালক’ , ‘ভারতী’ প্রভৃতি
পত্রিকায় তার অনেক লেখা প্রকাশিত হযেছে। শেষ জীবনে
রচিত ঐজীবনের ঝরাপাতা একটি অত্যন্ত সুখপাঠ্য গ্রন্থ।
১৯৪৫ খৃষ্টাব্দের ১৮ই আগষ্ট ৭২ বছর বয়সে অসাধারণ তেজস্বী
দেশপ্রেমিক ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই মহিলা লোকান্তরিত
হন। দীপক সেনগুপ্ত ]
এ বৎসর যে কযেকটি মানবলীলার অবসান হইয়াছে তাহার মধ্যে হিরণ্ময়ী
দেবীর জীবন 'ভারতী'র সহিত ঘণিষ্ঠভাবে জড়িয়ে ছিল। ত্রিশাধিক
বৎসর পূর্বে তিনি মাতৃদেবীর সহায্যার্থে তাঁহার অন্তরালে
থাকিয়া 'ভারতী'র সেবা আরম্ভ করিয়াছিলেন। মৌলিক প্রবন্ধ তিনি
লিখিতেন না, কিন্তু প্রয়োজনীয় সাময়িক তথ্যের ইংরাজি হইতে
অনুবাদ করিয়া বাঙ্গলা পাঠকের সহজগ্রাহ্য করা তাঁহার কাজ
ছিল। পাস্তুরের ইন্ষ্টিটিউট প্রভৃতি বৈজ্ঞানিক বিষয়ের অবতারণা
বাঙ্গলা পত্রে তিনিই প্রথমে করিয়াছিলেন। সাহিত্য-বিষয়ক অনুবাদমূলক
নানা প্রবন্ধও তিনি সে সময় লিখিয়াছিলেন। তাঁহার মৌলিক কাজ
ছিল তাঁর স্বলিখিত সনেট। তাঁর কবিতাগুলির মধ্যে সরল মাধুর্য্য
ছিল, যেমন কারো কারো গানের গলা মিষ্টি ও করুণ অথচ সে বড়
গাইয়ে নয় - তাঁহার কবিতা সেইরূপ ছিল।
কিছুকাল পরে ভগ্নস্বাস্থ্য জননীর স্কন্ধ হইতে 'ভারতী'র গুরুভার
তুলিয়া লইয়া তিনি প্রকাশ্যে তার ভারবাহক হওয়ার প্রয়োজন বোধ
করিলেন। তখন ছোট ভগ্নীর নাম সংযুক্ত করিয়া ভারতীর সম্পাদন
কার্য্য প্রকৃতপক্ষে তিনিই করিতে লাগিলেন। আজ যে ভারতী পঞ্চাশ
বৎসরে পদক্ষেপ করিতে চলিয়াছে এ আয়ুষ্মত্তার প্রধান কারণ
হিরণ্ময়ী দেবী। সে সময তিনি সুচারুরূপে ভারতী সম্পাদন না
করিলে বাঙ্গলার সাহিত্যজগতে 'ভারতী'র নাম আজ পর্য্যন্ত প্রবাহিত
থাকিত না। সে সময় রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী প্রমুখ ভারতী-সেবক-মণ্ডলী
তিনি নিজে অমায়িকতাগুণে গঠন করিয়া তুলিয়াছিলেন। ।
কিন্তু তিনি 'ভারতী'র একান্ত ঘরের লোক ছিলেন বলিয়া যে এই
ঘরই হিরণ্ময়ী দেবীকে আত্মসাৎ করিয়াছিল, বাহিরের মানবসমাজে
তিনি তাঁহার প্রীতি ও কীর্ত্তির চিহ্ণ রাখিয়া যান নাই, তাহা
নহে। ছেলেবেলা হইতে জনসেবার আগ্রহ ও আয়োজন তাঁর ছিল। এ সব
বিষয়ে দিদিই তাঁহার ছোটবোনের পথদর্শী ছিলেন। আমাদের কাশিয়াবাগান
গৃহে পল্লীর গৃহস্থ মেয়েদের জড় করিয়া তিনি একটি অবৈতনিক
বালিকা বিদ্যালয় খোলেন। তিনি প্রধানা শিক্ষয়িত্রী, আমি হইলাম
তাঁর সহকারিণী। তখন তাঁহার বয়স পনেরো, আমার বয়স এগারো। আমরা
নিজেরা তখন দিনেরবেলা বেথুন স্কুলে পড়ি, সকালে সন্ধ্যায়
বাড়িতে গৃহশিক্ষক পণ্ডিত ওস্তাদ ও মেমের কাছে ইস্কুলের পড়া
ছাড়া, সংস্কৃত, গান, সেতার ও পিয়ানো শিখি, আর ইস্কুল হইতে
ফিরিয়াই অপরাহ্ণে সাড়ে চারটা হইতে সাড়ে ছয়টা পর্য্যন্ত দুইঘণ্টা
রীতিমত ইস্কুল চালাই। বাঙ্গলা, ইংরাজি, অঙ্ক, ও সেলাই এই
চারটি বিষয়ই শেখান হইত। প্রায় গুটি কুড়িক মেয়ে আসিত, কেহ
কুমারী, কেহবা বালবিধবা। চাঁদনির সিঁড়ির উপর ধাপে ধাপে বসিত।
জায়গাটি ছিল শহরের কোলাহল হইতে বহুদূরে। খিড়কি দুয়ার দিয়া
পাড়ার বৌ-ঝিরা মল ঝুমঝুম করিয়া পুকুরে জল তুলিতে নিত্য আনাগোনা
করিত। তাই বোধ হয় হিরণ্ময়ীর মনে তাদের জড় করিয়া পড়ানোর কল্পনা
উদয় হয়। জোড়াসাঁকোর আত্মীয়দের প্রতিদিন সমাগম হইত। আমরা
তাঁহাদের কারো কারো দ্বারা মেয়েদের পরীক্ষা গ্রহণ করাইতাম,
প্রাইজ দেওয়ার সমারম্ভেরও ত্রুটি হয় নাই। দিদির বিবাহের
পর আমি একলা কিছুকাল সে স্কুল চালাইয়াছিলাম। যখন আমার এন্ট্রান্স
পরীক্ষার সময় ঘনীভূত হইল তখন স্কুল বন্ধ করিতে হইল।
বিবাহের পর হিরণ্ময়ীর মাতৃপিতৃভক্তি ও পারিবারিক প্রীতি
বিশেষভাবে প্রকট হইল। সকল বিষয়ে মায়ের সহকারিণী হইলেন। থিওসফির
তখন খুব প্রচার, আমাদের বাড়িতে মহিলা-থিওসফিক্যাল সভা বসিত।
নানা পরিবারের মেয়েদের আনাগোনা ও মাতৃদেবীর সহিত সখিত্ব
স্থাপিত হইল। মাদাম ব্লাভাটস্কি ও কর্ণেল অলকট সর্বদা যাতায়াত
করিতেন, মহিলাদের উপদেশ দিতেন। মাদাম ব্লাভাটস্কির দলভঙ্গের
পর থিয়সফির প্রতি শ্রদ্ধার যখন মান্দ্য পড়িয়া গেল 'সখিসমিতি'
নাম দিয়া মাতৃদেবী একটি মহিলাসমিতি স্থাপন করিলেন। থিয়সফিতে
দীক্ষিত হওয়ার সূত্রে যাঁহাদের সহিত পরিচয় আরম্ভ হইয়াছিল
তাঁহাদের লইয়াই ইহা প্রথমে আরম্ভ হইল। নামকরণ রবীন্দ্রনাথ-কৃত।
অন্তঃপুর স্ত্রীশিক্ষার জন্য বিপন্ন বিধবা ও কুমারী মেয়েদের
বৃত্তি দিয়া শিক্ষয়িত্রী প্রস্তুত করা, অন্তঃপুরে শিক্ষয়িত্রী
পাঠান, শিল্পমেলা মহিলাদের দ্বারা অভিনয় করান প্রভৃতির আয়োজনে
সখিসমিতি বিখ্যাত হইয়া উঠিল। হিরণ্ময়ী এ সব কার্য্যে মাতার
দক্ষিণ হস্ত ছিলেন।
উপর্য্যুপরি অনেকগুলি সন্তান বিয়োগে হিরণ্ময়ীর সন্তানবাৎসল্য-বুভুক্ষিত
হৃদয় সখিসমিতির আশ্রিত কোন কোন অনাথ বা দুরবস্থাপন্ন বালিকাদের
নিজের কাছে রাখিয়া পালনের জন্য উন্মুখ হইল। বরাহনগরের শশিপদ
বন্দ্যোপাধ্য্যায়ের প্রতিষ্ঠিত বিধবাশ্রমের সহিত এি উপলক্ষ্যে
তাঁহার পরিচয় হয়। তাহার পর মাতৃপ্রতিষ্ঠিত ম্রিয়মান সখিসমিতি
সঞ্জীবিত রাখার চেষ্টায় নাম ও আকারের নানা পরিবর্তনের মধ্য
দিয়া উহা বর্তমান বিধবাশিল্পাশ্রমে অনতিপূর্বে তিনি অন্তঃপুর
মহিলাদের শিক্ষার জন্য একটি কলাভবন খুলিয়া ছিলেন। মূল সখিসমিতি
ও কলাভবনের সংমিশ্রণজাত এই বিধবাশিল্পাশ্রম, হিরণ্ময়ী দেবীর
নিজস্ব কীর্তি। এইটিকে খাড়া করিতে তিনি দেহপাত করিয়াছেন
বলিলে অত্যুক্তি হয় না। এই শিল্পাশ্রমটি তাঁর যে অক্লান্ত
উদ্যম, বিপুল অধ্যবসায় ও বুকভরা প্রীতি দিয়া গঠিত হইয়াছে
তার পরিচয় এই আশ্রমের আরম্ভ হইতে যে-কোন নরনারী ইহার সংস্রবে
আসিযাছে সেই পাইয়াছে। এখন একটি কমিটির সহায়তায় এই আশ্রমটি
পরিচালিত হইতেছে। কমিটির প্রেসিডেন্ট পূজনীয়া শ্রীমতী স্বর্ণকুমারী
দেবী। ভাইস প্রেসিডেন্ট মৌরভঞ্জের মহারাণী সেক্রেটরী পদস্থা
হিরণ্ময়ী দেবীর কন্যা। দেশমাতা ও শারীর মাতা এই দুইয়ের মধ্যে
হিরণ্ময়ীর হৃদয় বিভক্ত ছিল - দুইয়েরই সেবায় আত্মোৎসর্গ করিয়াছিলেন।
তাঁহার দেশসেবার অনুপ্রেরণা মাতৃভক্তি হইতেই আসিয়াছিল, মাতার
কীর্তি অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য সখিসমিতিকে কালোপযোগী রূপান্তর
দেওয়ার প্রচেষ্টায় বিধবাশ্রমের জন্ম। কার্য্যকরী শক্তিও
ব্যবস্থাশক্তিতে তিনি বিশেষ সম্পন্না ছিলেন। ব্যবস্থাকালীন
বাধা অতিক্রম করিতে তাঁহাকে অনেক সময় কঠোর হইতে হইয়াছে -
তাহা কার্য্যকুশলতার অপরিহার্য্য অঙ্গ। ব্যবস্থাশক্তি গুণে
এবং সংগীতরসগ্রাহিতায় সঙ্গীত পারদর্শিনী না হইলেও অনেক সময়
অন্যের অভাবে তিনি স্বয়ংই কোনো সমিতির উৎসব উপলক্ষ্যে বা
কংগ্রেসের জন্য সঙ্গীতমণ্ডলী গঠনে নেতৃত্ব করিয়াছেন।
হৃদয় রস তাঁহার ভিতরে অপরিমিত মাত্রায় ছিল। মাতা পিতা, ভাই
বোন, স্বামী পুত্র কন্যা আত্মীয় সুহৃদ বন্ধু বান্ধব সকলের
প্রতি উদ্বেল সহায়তায় সর্বদা ভরপুর। তাঁর স্নেহশীল প্রকৃতি
মুগ্ধ, আমরা বিচলিত হৃদয়ে তাঁর উদ্দেশে এই স্মৃতি পুষ্পাঞ্জলি
নিবেদন করিতেছি।
সরলা
দেবী
(
১৩৩২ বঙ্গাব্দের 'ভারতী' পত্রিকার ফাল্গুন সংখ্যায়
প্রকাশিত । )
Copyright
© 2014 Abasar.net. All rights reserved.
|
অবসর-এ প্রকাশিত
পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।
|