পুরনো
দিনের পত্রিকা ও বই থেকে নির্বাচিত প্রবন্ধ
(সূচী)
আমাদের
কথা
প্রফুল্লময়ী
দেবী
চতুর্থ ও শেষ অংশ
সে যাহা করিতে চাহিত আমি
কখনই তাহাতে বাধা দিই নাই , তাহার শরীর মন যাহাতে প্রফুল্ল থাকে
তাহারই চেষ্টা করিতাম । বিলাত হইতে ফিরিয়া আসিবার পর তাহার শরীর
সুস্থ হইলে সেলাই পড়াশুনার মধ্যে সে তাহার দিনগুলি কাটাইতে লাগিল
, সংসারের কাজকর্ম্ম দেখাশুনা সে তেমনভাবে করিতে পারিত না ,
আমিও তাহাকে কখনও করিতে দিই নাই । বলুর স্ত্রী বলিয়া , পাছে
তাহার কোন বিষয়ে কষ্ট হয় সেইজন্য সর্ব্বদা তাহাতে আমার মন পড়িয়া
থাকিত । বলু মারা যাওয়াতে এবং স্বামী উন্মাদ হওয়ার জন্য আমরা
আমাদের বিষয় হইতে বঞ্চিত হইলাম । যতদিন আমরা বাঁচিয়া থাকিব ততদিন
আমরা এই বাড়ীর একটা অংশ ভোগ করিবার অধিকার এবং মাসহারা পাইবার
ব্যবস্থা হইল । এই বন্দোবস্তের ভিতরেই আমরা জীবনযাত্রা নির্ব্বাহ
করিতে লাগিলাম , কিন্তু দিন দিন সকল জিনিসই অত্যন্ত দুর্ম্মূল্য
হবার দরুণ সেই সামান্য অর্থে সংসার নির্ব্বাহ করা কঠিন হইলে
আমাদের বাড়ীর অংশ ত্যাগ করিয়া অন্যত্র বাড়ী ভাড়া করিয়া থাকিতে
বাধ্য হইলাম । প্রথম শিবপুরে বাড়ীভাড়া করিয়া আমার বোন্ঝি সুষমার
সঙ্গে কিছুকাল বাস করি , সেখানে বাড়ীটিতে নানা অসুবিধার জন্য
পুনরায় ব্যাটারিতলায় ( বর্তমানে শিবপুরের ব্যাতাইতলা ? ) বাড়ীভাড়া
করিয়াছিলাম। বাড়ীটি বেশ বড় ছিল কিন্তু অনেকদিন পর্যন্ত মেরামত
না হওয়ায় অতিশয় জীর্ণ অবস্থায় পড়িয়া ছিল । বাড়িটি লইয়া বেশ কিছু
অর্থব্যয় করিয়া উহার জীর্ণতার আবরণ আমাদের ঘুচাইতে হইয়াছিল ।
সেই বাড়ীতে কিছুদিন থাকার পর সাহানার শরীর হঠাৎ বড়ই অসুস্থ হয়
এবং সেই জন্য মাথায় নানারকম পীড়া হইতে আরম্ভ হইলে সে আবার জোড়াসাঁকো
বাড়ীতে চলিয়া আসে । আমি তখন সেখানে একলা , কেবলমাত্র একটি ঝি
সহায় । আমার আর এক ভাইপো , হরিপ্রসন্ন আমার কাছে থাকিত , সারাদিন
তাকে তাহার কার্য্যের জন্য বাহিরে থাকিতে হইত । রাত্রি যখন দশটা
, সাড়ে দশটা তখন সে বাড়ী ফিরিত । বাড়ীটি মুসলমানপাড়ার ভিতরে
ছিল , নানা রকম বিপদের ভিতর বাস করা সত্ত্বেও এই নির্জ্জন পুরী
আমার মনে কেমন একটা শান্তি আনিয়া দিল , নিজের জীবনের প্রত্যেক
মুহূর্ত্ত ও অবস্থাগুলিকে তখন মিলাইয়া দেখিবার একটা সুযোগ পাইলাম
। কত অবস্থার পরিবর্ত্তনের মধ্য দিয়া এক একটি মনুষ্যজীবন গঠিত
হইতেছে , আবার কত প্রকারে সংসারের তাড়নায় মুহূর্ত্তের মধ্যে
চূর্ণ-বিচূর্ণ হইয়া যাইতেছে , তাহাই ভাবিতে লাগিলাম । আমরা সংসারের
নানা কোলাহলের মধ্যে সেই দিনগুলি চিন্তা করিবার সুযোগ খুঁজিয়া
পাই না বলিয়াই মনের বিক্ষিপ্ততা আসিয়া থাকে , এইজন্যই মহাপুরুষেরা
নির্জ্জনতার মধ্যে আপনাকে জানিবার পথ অন্বেষণ করিয়া থাকেন ।
ঈশ্বরের দয়ায় আমার সেই সুবিধা জীবনে একটিবার মাত্র ঘটিয়াছিল
। সাহানা ওখান হইতে চলিয়া আসার পর পুনরায় তাহার অনুরোধে আবার
সেই চিরপরিচিত জোড়াসাঁকো বাড়ীতে আসিলাম । সে আমাকে ছাড়িয়া বেশীদিন
কোথাও একলা থাকিতে পারিত না , খুব ছোটবেলায় বাপ-মা ছাড়িয়া আমার
কাছে আসিয়াছিল বলিয়া রাগ , অভিমান , দুঃখ আব্দার সবই সে আমার
উপর করিত । বাপ , মা , স্বামী সবই সে অল্পবয়সে হারাইয়াছিল ,
কাজেই সব আব্দার , অভাব পূর্ণ করিতে আমিই তাহার একমাত্র সহায়
ছিলাম ।
শরীর অনেকদিন হইতেই তাহার
অসুস্থ হইয়া পড়িয়াছিল , কাসি মাঝে মাঝে হইত এবং তাহারই দরুণ
হাঁফ হইতে শুরু হইল । এই সবের জন্য প্রায়ই তাহাকে বায়ুপরিবর্ত্তনের
জন্য বিদেশে যাইতে হইত । মৃত্যুর কয়েকমাস পূর্ব্বে ইচ্ছা হইল
সে একবার কাশ্মীর ভ্রমণ করিয়া আসিবে । সেই সময় আমার ছোট ননদ
বনকুমারীর পুত্র সরোজ ও তাহার স্ত্রী কাশ্মীর যাইতেছিলেন । সাহানা
তাঁহাদের সঙ্গে যাওয়া স্থির করিল । আমার এক ভাইপোর পুত্র সুশীল
, সে সাহানার শরীর অসুস্থ হওয়া অবধি তাহার সেবা করিত এবং সর্ব্বদা
নিকটে থাকিত , ইহাকে সে আপনার পুত্রের ন্যায় ভালবাসিত , এবং
যাহা কিছু তাহার অর্থ ছিল সবই মৃত্যুর পর তাহাকে উইলে দান করিয়া
যায় । সুশীলকেও সে সঙ্গে লইয়া গেল । কিন্তু কাশ্মীর হইতে ফিরিবার
পথে রাওলপিণ্ডির নিকট আসিয়া তাহার বুকের ব্যাথা খুবই বাড়িয়া
গেল । বাড়ী ফেরা তার পক্ষে খুবই কঠিন হইয়া দাঁড়াইল । এমন কি
একদিন নাড়ী ছাড়িয়া গিয়া প্রাণ বাহির হইবার উপক্রম হইল । সেখনকার
একজন পঞ্জাবী ডাক্তার তাহার চিকিৎসা করিতে থাকেন । অনেক সেবা-যত্নের
পর সুস্থ হইলে , তাহাকে বাড়ী ফিরাইয়া আনা হয় । সেই কাশ্মীর-যাত্রাই
তাহার মরণ-পথের দ্বার উন্মুক্ত করিয়া দিল , বাড়ী আসিয়া ক্রমশঃই
বুকের ব্যাথা বাড়িতে লাগিল , চিকিৎসাতে কোনও ফল আর হইল না ।
ফাল্গুন মাসে ঐ রোগই বৃদ্ধি পাইল । ২৭শে ফাল্গুন বেলা একটার
সময় তাহার সকল জ্বালা জুড়াইয়া সে চিরশান্তি লাভ করিল ।
দুঃখের ভিতরেও শান্তি পাইবার
জন্য যাহার মুখ তাকাইয়া এতদিন কাটাইয়াছিলাম , সেও আমাকে এই বৃদ্ধ
বয়সে ছাড়িয়া চলিয়া গেল । পাষাণের ন্যায় বুক বাঁধিয়া এককোণে পড়িয়া
আছি । এই দুঃখিনীর একমাত্র সম্বল , শুধু সেই দয়াময় ।
দুঃখশোকে সেই অনুতাপের
মধ্য দিয়া সেই পরব্রহ্মের লাভ ঘটিয়া থাকে । মানুষ যখন দুঃখসাগরের
ভিতরে পড়িয়া কূলকিনারা খুঁজিয়া পায় না , শান্তির পথ খুঁজিবার
জন্য চারিদিকে অস্থিরভাবে ছোটাছুটি করে , তখন তিনি তাঁর পরশকাঠিখানি
ছোঁয়াইয়া তাহাকে বিপদের সম্মুখ হইতে উদ্ধার করিয়া দেন । সংসারে
নানা বিঘ্ন বাধা ঘুচাইয়া কাহাকে কোন পথের পথিক করিয়া , আলোকের
সন্ধান দেখাইয়া দেন কেহ তাহা বলিতে পারে না । মহাত্মা বাল্মিকীর
দস্যুবৃত্তির ভিতর তাঁহার পরম ধনের সন্ধান লাভ ঘটিয়াছিল , অনুতাপের
তীব্র জ্বালায় যখন তাঁহার দেহমন জর্জ্জরিত , সেই জ্বালা জুড়াইবার
জন্য যখন সত্যিই ভগবানের দর্শনের জন্য প্রাণ ব্যাকুল হইয়া উঠিয়াছিল
, তখন সেই হৃদয়ভেদী ক্রন্দন বিশ্ববিধাতার আসন টলাইতে সক্ষম হইয়াছিল
। বিধাতা স্বয়ং আসিয়া তাঁহার জীবনকে পবিত্র করিয়া মলিনতার আবরণ
ঘুচাইয়া দিলেন ।
সুখ ঐশ্বর্য্যের প্রলোভনের
মাঝখানে গৌতমের জ্ঞানের পিপাসা জাগিয়াছিল , জ্বরা মৃত্যু শোকের
অতীত যিনি সেই বস্তুকে পাইবার জন্য তাঁহার অতি প্রিয় , পিতামাতা
পুত্র পরিবার সকলকে ত্যাগ করিতে কুণ্ঠিত হন নাই । সংসারে দুঃখরূপ
পাষাণ আমাদের হৃদয়ে ভার-স্বরূপ হইয়া রহিয়াছে , সেই ভার নামাইয়া
মানুষ যখন মুক্তি পায় তখনই তাহার মোক্ষলাভ । ভগবান বুদ্ধের সেই
সৌভাগ্যের দিন একদিন আসিয়াছিল । এই মহাপুরুষদিগের জীবনের পরিচয়ের
ভিতর , ইহাই যুগে যুগে ইতিহাসে লক্ষিত হইয়া আসিতেছে । এই জ্ঞানলাভের
সুযোগ পাই যে , দুঃখ-শোক , সুখ-ঐশ্বর্য্য , প্রলোভন যাহা কিছু
আমাদের দেহ মনের উপর তাহাদের প্রভাব বিস্তার করিতেছে , সকলকে
জয় করিবার একটিমাত্র উপায় সেই সর্ব্বদুঃখহারী যিনি আমাদিগের
মধ্যে নিয়ত বিরাজমান তাঁহারই করুণার আশ্রয়লাভ । মৃত্যুর জন্যই
জন্ম , এবং জন্মের জন্যই মৃত্যু ইহাই যুগে যুগে ইতিহাসে লক্ষিত
হইয়া আসিতেছে । ইহারই কারণে শোক দুঃখ অনুতাপ যাহা কিছু সবেরই
উৎপত্তি । জহুরী যেমন কষ্টিপাথরে ঘষিয়া সোনা রূপার খাঁটি রূপটি
চিনিয়া লয় , সেইরূপ আমাদের মনকে দুঃখরূপ কষ্টিপাথরে আঘাতের দ্বারা
অলক্ষ্যে বিধাতাপুরুষ অহরহ যাচাই করিয়া লইতেছেন । আমরা শোকে
এতই অভিভূত হইয়া যাই , ভাল মন্দ বিবেচনা করিবার জ্ঞান শক্তিকে
তখন হারাইয়া ফেলি । সেই দারুণ দুঃখের ভিতরেও যদি আমাদের মনের
স্থিরতা , সহিষ্ণুতা আনিয়া দেয় , তবে ইহার ভিতরেও তাঁহার মঙ্গল
ইচ্ছা ও অসীম স্নেহের পরিচয় পাইতে পারিব । অগ্নির জ্বলন্ত শিখাগুলিকে
যেমন বারিধারায় মুহূর্তের মধ্যে শীতল করিয়া নির্ব্বাপিত করে
, তেমনি শোকের বহ্ণি যখন হৃদয়ের চারিপাশে জ্বলন্ত শিখা বিস্তার
করিয়া দগ্ধ করিতে থাকে তখন সেই করুণারূপ বারিধারা অজস্রধারায়
ঝরিতে থাকিয়া সব জ্বালা দূর করিয়া দেয় ।
দেহমন যখন শোকে নিতান্তই
অভিভূত , কিছুতেই মনে শান্তিলাভ করিতেছে না , তখন ভগবানের দর্শনের
জন্য আমার মন ব্যাকুল হইয়া উঠিল , সেই ব্যাকুলতার আবেগে দিবারাত্রি
যখন তাঁহার চিন্তায় নিমগ্ন থাকিতাম , তখনই ধ্যানের মধ্যে বলুর
মুখখানি দেখিতে পাইতাম । একদিন বলু , একদিন তিনি , এই দুইয়ের
যোগে আমার যোগসাধন সমাপন হইত ।
রবি বলুকে খুবই ভালবাসিতেন
। আমার এই অবস্থার ভিতর এই সময় তিনি একদিন গীতা হইতে একটি উপযোগী
সুন্দর শ্লোক পড়িয়া শুনাইয়াছিলেন । সেই শ্লোকটি কি এখন আমার
ঠিক মনে নাই , তবে তাহার কথাগুলি আমার প্রাণে আসিয়া বাজিয়াছিল
। উহা শুনিয়া একই আত্মা সর্ব্বভূতে বিরাজমান , বলুর ভিতর যে
আত্মা , সেই আত্মা সব মানুষের মধ্যে রহিয়াছেন , এই কথাটিই তখন
আমার বারংবার স্মরণ হইতে লাগিল । সেই জ্ঞান যখন উদয় হইল তখন
বলুর স্বরূপ সকলের ভিতর দেখিবার আকাঙ্খা ও কর্ম্মের দ্বারা সেবাই
আমার পরম লক্ষ্য হইল । কর্ম্মের ভিতরে সাহস বল ভরসা আনিয়া দিতে
লাগিল , ভাঙা মনকে জোড়া দিয়া তাঁহারই কার্য্য সাধন করিবার পথ
খুঁজিয়া পাইলাম । চরাচরবেষ্টিত সমস্ত পদার্থ ও তাহাদের কার্য্যসকল
সবই অনিত্য , কিছুই চিরদিন থাকিবে না , নিত্য সেই যাঁর পরিবর্ত্তন
নাই , চিরদিনই সমানভাবে জন্মমৃত্যুর অতীতরূপে বর্ত্তমান । শোককে
অতিবিভীষিকার ন্যায় মনে করি বলিয়া উহার উপকারিতা উপলব্ধি অনুভব
করিতে আমরা অক্ষম , কিন্তু দুঃখ শোক যদি জগতে না থাকিত , কেবল
সুখের তরঙ্গে ভাসিয়া বেড়াইতাম তবে বোধ হয় তেমন ভাবে অমৃতের সন্ধান
পাইবার প্রবল ইচ্ছা জাগিয়া উঠিত না বা মনের ভ্রম দূর হইত না
। যে পরশমণির পরশ লাভের জন্য মানুষ পথের ভিখারী হইয়া শূন্যমনে
অন্ধের ন্যায় চরাচরকে শূন্য দেখিতে থাকে , জীবনের কোনও এক সময়
সেই শুভ মুহূর্ত আসে যখন সে তাহাকে পাইয়া নিজেকে ধন্য মনে করে
। বিশ্ব নিজেই এক অপরূপ রূপে তাহার নিকট প্রকাশিত হন । তাঁহারই
প্রেরণায় , যতটুকু সাধনা তিনি আমার এই ক্ষুদ্র শক্তির দ্বারা
করাইয়া লইয়াছেন , সেই আলোকে আমি আমার বলুকে সকলের ভিতর দেখিবার
সুযোগ লাভ করিয়াছি । মনে হয় , সে আঙ্গিনায় , সেই পূর্ব্বের মত
হাসিয়া খেলিয়া বেড়ায় , পূর্ব্বাকাশে ভোরের আলোতে তাহারই মুখখানি
জ্বল্ জ্বল্ করে, সূর্য্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে সেও যেন ঘুমের
অচেতনে আমার কোলে ঢলিয়া পড়ে । আমার বলুকে আমি হারাইয়াও হারাই
নাই , বরং তাহাকে আরও নিকটে পাইয়াছি বলিয়া মনে হয় , এক সে আমার
বহু হইয়া অহরহ আমার সম্মুখে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে , আজ সে অনন্তরূপে
অনন্ত বাহু মেলিয়া আমার বুকে ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছে ।
জননী ! মাতৃগর্ভ হইতে যখন
নিঃসহায় অবস্থায আমারা ভূমিষ্ঠ হই, তখন তুমিই সেই অসহায় , জীবকে
তোমারই কোলে স্থান দিয়া জন্ম মৃত্যু পর্যন্ত তাহার সহিত নানা
সংগ্রামের মধ্যে , তাহাকে মাতার ন্যায় বক্ষে ধারণ করিয়া থাক
, কিছুতেই পরিত্যাগ কর না । আমার যে দুঃখ সুখ সবই তোমার চরণে
হইয়াছে , জন্মে শুভমুহূর্ত্তে প্রথম যেদিন তোমায় স্নিগ্ধ আলোকে
চোখ মেলিয়া চাহিয়াছিলাম , সেই শিশুকাল হইতে বার্দ্ধক্যের সীমানায়
আজ পর্যন্ত জীবনের প্রতিক্ষণে প্রতি ঘটনায় , তুমিই আমার মাতৃরূপে
সঙ্গিনী হইয়াছিলে এবং এখনও হইয়া আছ । পুত্রশোকে যখন কাতর , সেই
সময় ধৈর্য্যের সীমা ছাড়াইয়া যখন কাতর প্রার্থনায় বলিয়াছিলাম
, "সবই নিলে যখন , তখন তুমি আমাকেও নাও ।" অর্দ্ধচেতনায়
সেই অসহ্য বেদনার শুষ্ককণ্ঠের বাণীর ভিতর আমার মনে আনন্দময় রূপে
ক্ষণিকের তরে কি যে এক অপূর্ব্ব আনন্দ জাগাইয়া দিয়াছিল , তাহা
কথায় ব্যক্ত করিতে পারা যায় না - তাহা তুমিই জান । যারা দুঃখশোকে
অহর্নিশি কাতর হইয়া তোমারই কোলে অশ্রুজল বারংবার ফেলিতেছে ,
তুমি তোমার অসীম ধৈর্য্যগুণে তাহাদিগের প্রাণে এই মহাশক্তি আনিয়া
দিয়া অশ্রু মুছাইয়া দাও , যাহাতে তাহারা মনে বল পাইয়া সংসার-সমুদ্রের
মাঝখানে তরঙ্গের বাধাগুলি কাটাইয়া চলিয়া যাইতে পারে । সেই শক্তি
দাও যাহার গুণে বিপদও আমাদের নিকট তুচ্ছ হইয়া শান্তম্ শিবম্
রূপে প্রতীয়মান হয় ।
( শেষ )
(সম্পূর্ণ
রচনাটি ১৩৩৭ বঙ্গাব্দের 'প্রবাসী'-র বৈশাখ সংখ্যায় প্রকাশিত)
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)