এত অল্প বয়সের এক বালিকার লেখনীতে এ ধরণের লেখা বিস্ময়ের উদ্রেক
করে।
তার রচিত গ্রন্থ : কবিতা - ‘আধ আধ ভাষিণী’
(১৮৭০); ‘বনলতা’ (১৮৮০) ও ‘নীহারিকা’ প্রথম ভাগ (১৮৮৪) দ্বিতীয়
ভাগ (১৮৮৯)। গদ্য – ‘অশোক’ (উপন্যাস,সিপাহী বিদ্রোহের কাহিনী
অবলম্বনে,১৮৯০); ‘আর্য্যাবর্ত্ত’ (উত্তর ভারত ভ্রমণ কাহিনী,১৮৮৯);
‘যুবরাজ প্রিন্স অফ ওয়েলসের ভারতবর্ষে শুভাগমন’ (১৮৭৫); ‘পূর্ব্বকথা’
(সামাজিক ও পারিবারিক চিত্র,১৯১৭); ‘তারা চরিত’ (জীবনী,১৯১৭)।
‘মানসী ও মর্ম্মবাণী’,‘ভারতবর্ষ’,‘মাতৃমন্দির’ প্রভৃতি পত্রিকায়
তার লেখা নিয়মিত বেরোত।
১৩৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে নভেম্বর
প্রসন্নময়ীর মৃত্যু হয়।]
বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
দীপক সেনগুপ্ত ।
যে সময়ের কথা বলিতে যাইতেছি, সে প্রায় একশত বৎসরেরও
পূর্ব্বের কাহিনী। তখনকার আচার ব্যবহার রীতি নীতি এক্ষণকার অপেক্ষা
স্বতন্ত্র। সে সময় এ দেশের অবস্থা বড় সুখের ছিল, দীন দুঃখী স্নিগ্ধ
তৈলাক্ত দেহে দুই বেলায় উদর পূরিয়া আহারান্তে নিজ নিজ কর্ত্তব্য
কার্য্য করিত। টাকায় তখন দশ সের তৈল, চারি পাঁচ সের গব্য ঘৃত ও
দেড় কি দুই মণ চাউল। ক্ষেত্রে অজস্র শস্য জন্মিত গৃহপালিত গাভিগণ
স্বচ্ছন্দ ভাবে দুগ্ধ দান করিত। বাগানের তরকারী ফল, পুকুরের মৎস
ও গ্রামের জমীদার মহাশয়েরা দানে মুক্ত হস্ত। পুত্রের অন্নপ্রাশন, উপনয়ন, কন্যার
বিবাহ ও পিতৃ মাতৃ শ্রাদ্ধাদি ক্রিয়া করিতে কেমন গ্রামের ও তাহার
নিকটবর্ত্তী পল্লীসমূহের ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণীদিগকে নিমন্ত্রণ
করিয়া পরিতোষপূর্ব্বক ভোজন করাইতেন, তেমনি গ্রামের গরীব লোক ও
দাস দাসীবর্গের পরিবারগনকে খাওয়ান হইত। এক এক ভূস্বামীর গৃহে
নিত্য একশত ব্যক্তি আহার করিত। তাহার উপর অতিথি অভ্যাগতের সেবা
ছিল। কর্ত্তাদিগের দাবা পাশা খেলার সঙ্গীরাও রাত্রে আহার করিয়া
যাইত, তাহাদের চির নিমন্ত্রণ। বৈঠকখানার আঙ্গিনার একপার্শ্বে দিব্য
বড় একখানি ঘর থাকিত তাহাতে একজন বিজ্ঞ ভৃত্য ভাণ্ডার রক্ষা করিত। সেই
ঘর "গোলাঘর" ও ভৃত্য "গোলাদার" নামে কথিত
হইত। সে অতি প্রতূষে উঠিয়া - নিত্যকর্ম্ম "সিধা" মাপিতে
বসিত, তাহার হাতের ও সুখের বিরাম বিশ্রাম থাকিত না, ক্রমাগত লোক
সংখ্যা গণনা করিয়া দ্রব্যাদি যোগাইত। গৃহদেবতার ভোগের সহিত বিধবাগণের, গৃহস্বামীর
অন্তঃপুরের আত্মীয় স্বজনের "সিধা" ভিতরে পাঠান হইত। তাহার
পর যে সকল অতিথি বাড়ীতে রন্ধন করিয়া খাইবে তাহাদের যোগ্যরূপ
অযাচিতে সকল দ্রব্য প্রচুর পরিমাণে দেওয়া হইত। মুসলমান কর্ম্মচারী
গোমস্তা পাইক সর্দ্দার কৃষাণ ও প্রজাগণ (যাহারা জমীদারের কাছারীতে
কার্য্য গতিকে আসিত) হিন্দুর অন্নপাক প্রদান করিতে হইত। ইতিমধ্যে
মুষ্ঠিভিক্ষা, অন্দরের দৈনিক দানের চাউল ইত্যাদিও দিতে হইত। বেলা
আড়াই প্রহর পর্য্যন্ত গোলাদার অবসর মাত্র পাইত না। ইহা ব্যাতীত
কোন কিছু কম পড়িলে গৃহিনী-প্রেরিতা প্রাচীনা দাসীর ভৎর্সনা নীরবে
সহ্য করিয়া কার্য্য সমাধা করিত। মাসিক ভাণ্ডারের ব্যায়ের হিসাব
তাহার হস্তে, সে ব্যক্তি প্রতি মাসের শেষে সন্তোষ জনক হিসাব নায়েব
মহাশয়ের নিকট দাখিল করিয়া পুনর্ব্বার দ্রব্যাদি আনয়ন করিতে পারিত।
বৃহৎ পরিবারে দাস দাসীর অভাব ছিল না। পাকশালার পরিচর্য্যায় পাঁচ
ছয় জন চাকরাণী ও দুই তিন জন চাকর কার্য্যে নিযুক্ত থাকিত; কেহ
মৎস, কেহ তরকারী কুটিয়া সকলকে বিতরণ করিত। দুগ্ধ জ্বালের জন্য
পৃথক একখনি ঘরে কেবলমাত্র দুগ্ধ জ্বাল, দধি ও ঘৃত প্রভৃতি তৈয়ার
হইত। সেই দধি, দুগ্ধ, গৃহস্বামীর পরিবার হইতে কৃষকগণ পর্য্যন্ত
স্বচ্ছন্দভাবে পাইত, তাহাতে গৃহকর্ত্রী দ্বিরুক্তি করিতেন না। পূজারী
ব্রাহ্মণ ও কর্ত্তার সহিত সমান ভাগে উপাদেয় দ্রব্যাদি খাইতে
পাইত। সে সময়ে, কেন, অদ্যাপিও হিন্দুধর্ম্মাবলম্বী পল্লীগ্রামে
পাচক ব্রাহ্মণগণ বাবুদের খাদ্যের সকল অংশই পাইয়া থাকে।
গৃহিণীমার দৈনিক কার্য্য ছিল দেব পূজা, অতিথি সেবা, পুত্র, কন্যা, পুত্রবধু, ভাগিনেয়
জামাতা, নাতী, নাতিনী এবং আত্মীয় কুটুম্বগণের ও দাস দাসীর আহারাদি
দেখা। প্রভাতে গাত্রোত্থান করিয়া স্নানান্তে বংশানুক্রমিক বিগ্রহ
"শ্যামরায়" "মঠের শিব" এবং "মঙ্গলচণ্ডীর"
মব্দির প্রক্ষালন করিয় স্বহস্তে তাহাদের পূজার আয়োজন করিতেন
এবং নিজের ইষ্টমন্ত্র জপ, পূজা ধ্যান ধারণান্তে অন্দর মহলে আসিয়া
কাহার কি প্রয়োজন এবং দৈনিক আহারের ব্যবস্থা করিতেন। গৃহিণীর
জ্যেষ্ঠ কন্যা বা - (বিধবা) পুত্রবধু সকলের জলযোগের আয়োজন করিতেন, সে
ভার তাহাদের হস্তে। সবাই স্নাত হইয়া, পূজান্তে সধবাগণ ললাটে রক্তচন্দনের
ও সীমন্তে সিন্দুর ফোটা পরিয়া গৃহকার্য্যে লক্ষ্মীপ্রতিমাবৎ
শোভা পাইতেন; আর, বিধবাগণের শ্বেত চন্দন চর্চ্চিত ভালে, সংযমিত
জীবন, শুভ্র বস্ত্র পরিহিতা ব্রত-নিয়মে কৃশাঙ্গী যেন সৌন্দর্য্যময়ী
মহাশ্বেতার ন্যায় ব্রহ্মচারিণী সদা দয়া মমতায় দ্রবীভূত হইয়া, বিষাদহাস্যে
বৈধব্যভার বহন করিয়া, রোগীর সেবায় ও গৃহ কার্য্য পালনে জীবন উৎসর্গ
করিয়া সবাইকে সাহায্য করিতেন। ছোট ছোট বধূরা রন্ধন কার্য্যে ব্যাপৃতা
- পাচক ব্রাহ্মণদিগের হস্তে আহার করা তখন নিয়ম ছিল না। কর্ত্তার
মধ্যম কি কনিষ্ঠা ভ্রাতৃজায়ারা সেই সকলের পর্য্যবেক্ষণে ব্যস্ত
থাকিতেন। গৃহের বৃদ্ধা পিতৃস্বসা ও বড় ভগ্নীরা উপনয়ন বিবাহ "বার
মাসে তের পার্ব্বণ" প্রভৃতি ভারি ভারি ব্যাপারে লোক লৌকিকতা
রক্ষা, দানাদির ব্যবস্থায় নিযুক্ত রহিতেন। কর্ত্তা গৃহিণী তাহাদের
মতানুসারেই সকল কার্য্য নির্ব্বাহ করিতেন। আবার অন্তঃপুরের বিচার
কর্ত্রী তাহারাই; যদি কেহ কখন কলহ বিবাদ করিয়া গৃহশান্তি ভঙ্গ
করিত, তাহারা বিচারাসনে বসিয়া পুনঃশান্তি স্থাপনান্তে তাহাদিগকে
কঠোর ভৎর্সনার শাসনে ও সৎপরামর্শ দানে ঠাণ্ডা করিয়া দিতেন|
এখনকার মত আমলা ও মামলায় জমীদারের সর্ব্বস্বান্ত হইত না; ভূস্বামী
স্বয়ং জজ ম্যাজিষ্ট্রেট ছিলেন। প্রজার বিচার গ্রামের দলাদলি ও
জ্ঞাতি বিরোধ ইত্যাদির মীমাংসা তিনি দশ পাঁচজন বিজ্ঞ আত্মীয়
সহ মিলিয়া করিতেন। এক কপর্দ্দক ও পয়সা ব্যায় ছিল ন, সকলেই তাহাতে
খুশি হইয়া তাঁহার আজ্ঞা মানিয়া লইতেন। কর্ত্তার জ্যেষ্ঠ পুত্র
বা ভ্রাতুষ্পুত্র ছোট ভ্রাতা ভাগিনেয় ভগ্নীপতি এবং জামাতা জমীদারীর
কার্য্য চালাইতেন। কোন প্রকার অত্যাচার কিম্বা অযথা শাসন ছিল
না। রাজা প্রজা আত্মীয়তা সূত্রে আবদ্ধ থাকিয়া সুখে দুঃখে পূর্ণতর
সহানুভূতিতে জীবন কাটাইয়া দিত।
এই গ্রীষ্ম প্রধান দেশের পক্ষে মধ্যাহ্ণে কোন গুরুতর কার্য্য
করা সম্ভব না, সেই জন্য প্রাতঃসন্ধ্যায় লেখাপড়া ও জমীদারীর কার্য্য
করিবার নিয়ম ছিল। বেলা আড়াই প্রহর অতীত হইলে আহারান্তে দিবা নিদ্রার
জন্য সকলেই শয়নাগারে যাইতেন। পূর্ব্বে কর্ত্তারা স্বজন সহ পরিবেষ্টিত
হইয়া, তৎপরে গৃহিণীরা ও সর্ব্বশেষে বধূগণ আহার করিতেন। দাস দাসীরা
পর্য্যন্ত বধূগণের অগ্রে খাইত, তাহাতে কেহই অপমানিত ও ক্রুদ্ধ
হইতেন না। তাহাদের জীবনে সংযম শিক্ষা প্রতিদিনই হইত। সেকালে প্রভু
ভৃত্যে গুরু শিষ্য রাজা প্রজা এবং পিতা পুত্র সম্বন্ধ ছিল। বিজাতি
সভ্যতার অনুকরণে আজিকালিকার দাস দাসিগণ ক্রীতদাসের ন্যায় সতত
ব্যবহৃত। কর্ত্তা গৃহিণী এমন কি তাহাদের পঞ্চম বর্ষীয় পুত্র-কন্যারাও
গালি অপমানে সর্ব্বদা তাহাদিগকে উৎপীড়িত করিতে পশ্চাৎপদ নহে। এই
সব কারণে পরিচারকবর্গও যথেচ্ছাচারী, প্রভুর সর্ব্বস্ব আত্মসাৎ
করিতে পারিলে কৃতার্থ মনে করে।
সেকালের মেয়েদের মধ্যেও লেখাপড়া শিক্ষার নিয়ম ছিল। দিবাবসানে
গৃহিণীরা একত্র হইলে কোনও প্রবীণা রামায়ণ ও মহাভারত অধ্যয়ন করিয়া
শুনাইতেন। বধূগণ তাহা শুনিতে শুনিতে সিকা, চুলের দড়ি গাঁথা, সাঁচ
কাটা, পৈতা কাটা প্রভৃতি শিল্প কাজে রত থাকিতেন। কখন কখন পরচর্চ্চা
হাস্য পরিহাসেও সময় অতিবাহিত হইত। বধূরা শ্বাশুড়ী বড়ননদিনী, গুরুজনদিগের
সঙ্গে সাক্ষাৎসম্বন্ধে কথাবার্ত্তা কহিতেন না, আকার প্রকারে ও
দাসীর সাহায্যে কাজ উদ্ধার করিতে হইত।
এক্ষণকার ন্যয় সেকালে লেখাপড়া নারীগণের প্রধান কর্ত্তব্য মধ্যে
পরিগণিত ছিল না, গৃহকার্য্য সন্তান পালন, দেব সেবা এবং পরিবারবর্গের
পরিচর্য্যা করাই অতীব সম্মানের বিষয় বলিয়া সকলে মনে করিতেন ও
তাহাই রীতিমত মাতা মাতামহীর নিকট শিক্ষা হইত। তথাপি ভদ্র কন্যাগণ
গৃহ প্রতিষ্ঠিত (চণ্ডীমণ্ডপের) বিদ্যালয়ে, গ্রাম্য বালকের সহিত
পিতামহদেবের কিম্বা জ্যেষ্ঠ-তাতের কাছে অধ্যয়ন করিত।
দশম বা একাদশ বর্ষীয়া বালিকা যৎকালে বিবাহিত হইয়া শ্বশুরালয়ে
গমন করিত, তখন তাহাদের বোর্ডিংস্কুলে যাইবার মত জীবনের সব প্রধান
প্রধান কর্ত্তব্য শিক্ষা সংযম ও নিয়মাদি পালন করিয়া পরে প্রকৃত
রমণীয় গুণে ভূষিতা হইতেন। শাস্ত্রে বলে "যে গৃহে নারীর সম্মান
আছে, সেই গৃহ প্রকৃত গৃহ নামের যোগ্য|"
পূর্ব্বে বিবাহাদি নিকট সম্পর্কীয় লোকের সঙ্গে হইত না। রাজসাহী
পাবনা জেলার কন্যাগণ ঢাকা ময়মনসিংহ মুক্তাগাছা সুবর্ণগ্রাম বিক্রমপুরে
এবং সে অঞ্চলের কুমারীগণ পাবনা রাজসাহীতে পরিণীতা হইয়া আসিতেন। এইরূপ
কুটুম্বিতা সূত্রে আবদ্ধা হইয়া আপৎ বিপদে পরস্পর পরস্পরের সহায়তা
করিতেন। অতি দূরতর বংশ পরম্পরায় উদ্বাহ প্রথা প্রচলিত থাকায় তখনকার
সন্তানাদি বলবান সুস্থকায় এবং দীর্ঘজীবী হইত।
পূর্ব্বে দূরদেশ হইতে কন্যা ও বধূদিগকে গৃহে আনয়ন করিবার সময়
জল ও স্থল পথে দস্যু ভয় প্রযুক্ত পাইক সর্দ্দার এবং লাঠিয়াল
পাঠাইবার রীতি ছিল এবং শুনিতে পাওয়া যায়, কখন দস্যু কর্ত্তৃক
আক্রান্ত হইয়া প্রভুর পদমর্য্যাদা রক্ষার্থে ভৃত্যগণ প্রাণপাত
করিতেও কুণ্ঠিত হইত না। অনেক জমীদার সে কালে ডাকাত বা ডাকাতের
সর্দ্দার ছিলেন এবং লুকাইয়া লুকাইয়া দস্যুবৃত্তির সাহায্য করিয়া
ধন ভাণ্ডার পূর্ণ করিতেন।
সে কালে যেমন একান্নবর্ত্তী পারিবারিক নিয়ম ছিল, তেমনি সাংসারিক
কার্য্যাদি সমস্ত বিষয় সুব্যবস্থা থাকায়, জমীদারগণের বিষয় সম্পত্তি
অকালে লোপ পাইত না। ভ্রাতৃ বিরোধ গৃহ বিচ্ছেদ এবং শ্বাশুড়ী বধূতে
ঝগড়া বিবাদ তখনও যে ছিল না এমন নহে, তথাপি পুত্রগণের পিতৃ মাতৃ
ভক্তি গুরুজনের প্রতি আস্থা অচল থাকায় শ্বাশুড়ীগণই গৃহের সর্ব্বময়ী
কর্ত্রী ছিলেন ও বধূরা তাঁহার সম্মান রাখিয়া চলিতেন। আধুনিক কুলবধূর
ন্যায় অগ্রে ভোজন, সৌখীন বিহার ও পাখার বাতাসে শয়ন করিয়া স্বামীরত্নের
কর্ণকূহের শ্বাশুড়ীর নিন্দাবাদে পরিপূর্ণ করিবার অবসর তাঁহারা
পাইতেন না;রাত্রে লুকাইয়া কদাচিৎ কোন কথা বলিলে কর্ত্তার ভয়ে
পুত্র সে কথা জীর্ণ করিয়া ফেলিতেন। উপর্জ্জিত অর্থ পত্নীর হস্তে
দেওয়া নিতান্ত লজ্জার ও অসারতার বিষয় ছিল, পিতা মাতাই পুত্রধনের
অধিকারী, তাহারা বধূগণের প্রয়োজন বুঝিয়া সবই দিতেন ও বাকী অর্থ
সরকারে জমা করিয়া সন্তানের ধন বৃদ্ধি করিতেন।
কালসহকারে জাতীয় জীবন নির্জ্জীব হইয়া পড়িয়াছে দেশের ধন ধান্য
লুপ্তপ্রায়, দুর্ভিক্ষ মহামারীতে সমগ্র ভারত জর্জ্জরিত, সৌভাগ্য
লক্ষ্মীর অন্তর্দ্ধানে মনুষ্য প্রকৃতিরও পরিবর্ত্তন হইয়া গিয়াছে। দরিদ্র
হইলে মনুষ্যজাতি নিতান্ত স্বার্থপর হইয়া উঠে, সামাজিক সুপ্রথা
তিরোহিত হয় এবং যাহা নাই তাহা দেখাইবার নিমিত্ত বাহ্য দৃশ্য
বজায় রাখিতে সর্ব্বস্বান্ত হইয়া অন্তঃসার শূন্য হইয়া থাকে, তাহাতেই
- দেব সেবা অন্যদান গুরুজনের প্রতি ভক্তি প্রভৃতি ক্রমে ক্রমে
চলিয়া যায়, তখন লোক আপন আপন লইয়া ব্যস্ত হইয়া পড়ে সুতরাং সেকালের
সহিত একালের মিল হইবার সম্ভাবনা নাই। সময়ের পরিবর্ত্তনে সমুদয়
ভিন্নরূপ ধারন করিয়াছে, যাহা ছিল তাহা আর নাই, সেদিনের লুপ্ত স্মৃতিমাত্র
বহন করিয়া অদ্য আমরাও সেকালের অতীতের শ্রুত কাহিনী সমাপ্ত করিতেছি।
('অন্তঃপুর' পত্রিকা,জ্যৈষ্ঠ
১৩০৮)