প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

পুরনো দিনের পত্রিকা ও বই থেকে নির্বাচিত প্রবন্ধ (সূচী)

তুমি মোরে করেছ কামনা
প্রিয়ম্বদা দেবী বি-এ


         [ লেখক পরিচিতি : প্রিয়ম্বদা দেবী ১৮৭১ (১৮৭২?) খ্রীষ্টাব্দে মাতামহ দুর্গাদাস চৌধুরীর কর্মক্ষেত্র পাবনার গুনাইগাছায় জন্মগ্রহণ করেন| মাতা ছিলেন সুলেখিকা প্রসন্নময়ী দেবী| পিতা কৃষ্ণকুমার বাগচী বিয়ের দু'বছরের মধ্যেই উন্মাদ রোগগ্রস্ত হন| ছোটবেলা মায়ের সঙ্গে মাতুলালয়েই কেটেছে প্রিয়ম্বদার| প্রমথ চৌধুরী, আশুতোষ চৌধুরী ছিলেন তার মাতুল| মাতামহ দুর্গাদাস চৌধুরী ছিলেন কৃষ্ণনগরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট| সেখানকার বালিকা বিদ্যালয় থেকে দশ বছর বয়সে বৃত্তি পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ১৮৮২ সালে বেথুন কলেজে প্রবেশ করেন| ১৮৮৮ সালে সসম্মানে বৃত্তি সহ প্রবেশিকা পরীক্ষায় সফল হবার পর ১৮৯০ সালে এফ.এ এবং ১৮৯২ সালে বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন| সংস্কৃতে বিশেষ বুৎপত্তির জন্য তিনি রৌপ্যপদক লাভ করেন|

               ১৮৯২ সালে মধ্যপ্রদেশের রায়পুরের আইনজীবী তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রিয়ম্বদার বিযে হয়| ১৮৯৪-এ পুত্র তারাকুমারের জন্ম| কিন্তু জীবনে তিনি সুখের মুখ দেখেন নি| বিয়ের তিন বছর পর ১৮৯৫ সালে ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বামী লোকান্তরিত হন। পুত্র তারাদাসকে পড়তে পাঠিয়েছিলেন কাশীর সেন্ট্রাল স্কুলে; সেখানে ১৯০৬ সালে মাত্র বারো বছর বয়সে কলেরায় সেও ইহলোক পরিত্যাগ করে। ছেলের মৃত্যুর সময় পাশে ছিলেন না প্রিয়ম্বদা। শোকদীর্ণ অন্তরে পুত্রের স্মরণে তিনি রচনা করেন তার গ্রন্থ ‘তারা’। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি 'রেণু' কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি লিখতে শুরু করেন| তার বহু কবিতায় বিষাদের ছায়া স্পষ্ট|

              শোকদীর্ণ জীবনের মুহূর্তগুলি ভুলে থাকতে প্রিয়ম্বদা জনহিতকার কাজে নিজেকে যুক্ত রাখতে চেষ্টা করেন| ১৯১৫ সালে তিনি ব্রাহ্মবালিকা বিদ্যালয়ে অবৈতনিকভাবে শিক্ষাদান শুরু করেন| ঠাকুরবাড়ীর মেয়েদের সঙ্গে তার ঘণিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। কৃষ্ণভামিনী দাসের মৃত্যুর পর তিনি সরলা দেবী প্রতিষ্ঠিত 'ভারত-স্ত্রী-মহামণ্ডলে'র কর্মধ্যক্ষা নিযুক্তা হন এবং সরলা দেবী পাঞ্জাব থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন| এরপর তিনি 'হিরন্ময়ী বিধবা আশ্রমে'র সম্পাদিকা পদে বৃত হন|

               কাব্য রচনায় তিনি রবীন্দ্রনাথের সহযোগিতা লাভ করেছিলেন| ভাস রচিত 'বাসবদত্তা'র অনুবাদ তার উল্লেখযোগ্য কীর্তি| তার বড় গল্প 'রেণুকা' রচিত হয়েছে জাপানের গেইসা রমণীদের নিয়ে| তার রচিত গ্রন্থ : 'রেণু' (১৯০০); 'তারা' (১৯০৭); ''পত্রলেখা' (১৯১১); 'অনাথ' (১৯১৫); 'কথা ও উপকথা' (১৯১৫); 'পঞ্চুলাল' (১৯২৩); 'ঝিলে জঙ্গলে শিকার' (ছোটদের জন্য, অনুবাদ ১৯২৪); 'অংশু' (১৯২৭); 'চম্পা ও পাটল' (১৯৩৯); 'ভক্তবাণী' (৩য় ভাগ)|
           প্রিয়ম্বদার কবিতাগুলিত তার ব্যক্তি জীবনের সুখ দুঃখের ছায়া পড়েছে| যেমন -
                     "তুমি আজ বহুদূরে দুর্লভ দর্শন!
                     তবু তুমি একমাত্র উপাস্য আমার,
                     এই স্নেহ এই প্রীতি ধেয়ান ধারণ
                     এই গীতিগুলি মোর সেই উপহার|"
                     'প্রেম' কবিতাটিতে বিষাদের সুর ধ্বণিত হয়েছে -
                     ওরে প্রেম ওরে সংগোপন
                     অগাধ সাগর জলে কোথায় আছিস ফলে
                     শুক্তি মাঝে মুক্তার মতন
                     দরিদ্রের আশাতীত ধন!

                                শুভলগ্নে দুর্লভ নিমেষে,
                     দূরতম স্বর্গ ছাড়ি স্বাতির অমৃত বারি
                     অশ্রুর সমুদ্রে পড়ে এসে
                     অতুলন সৌন্দর্য্যের বেশে!

                                বিশ্বমাঝে ত্রিদিবের সার -
                      প্রাণপন সাধনায় যে তোরে খুঁজিয়া পায়
                      অতলের তল মিলে যার -
                      মর্ত্ত্য জন্ম সার্থক তাহার|"

          ছোটদের জন্য প্রিয়ম্বদা অনেক লিখেছেন। ‘মুকুল’, ‘সন্দেশ’, ‘মৌচাক’, ‘শিশুসাথী’ পত্রিকায় তার বহু লেখা প্রকাশিত হয়েছে। কার্লো কলোদির উপন্যাস ‘পিনোক্কিয়ো’ অবলম্বনে লেখা ‘পঞ্চুলাল’ উপন্যাসটি যথেষ্ট সমাদৃত হয়েছিল; এটি ‘সন্দেশ’-এ প্রকাশিত হয়েছিল, ছবি এঁকেছিলেন সত্যজিৎ রায়। ব্যক্তিগত শোক তার লেখায় ঘুরেফিরে এসেছে। ‘সন্দেশে’-এ লেখে তার ‘দুর্দিন’ কবিতার শেষ কয় পংক্তি –
                               “পড়ায় লাগে না মন
                      খেলা গেল ঘুচে,
                      স্কুলেতে চলেছি তবু
                      চক্ষু দুটি মুছে”।

           ১৩৪১ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে (১৯৩৫ খ্রীঃ) প্রিয়ম্বদা দেবীর মৃত্যু হয়|]
                                                                       দীপক সেনগুপ্ত|

                তুমি মোরে করেছ কামনা,                                            তবু মোর টলমল তরী,
                   আমি আনমনা                                                তব আশা ধনে ভরি
           দেখি নাই চেয়ে - তুমি যে না পেয়ে;                                      দিলাম খুলিয়া,
           চলে গেছ কতখানি দূরে;                                              আঁধারে ভুলিয়া,
           আজি তব বাঁশরীর সুরে                                               এ যদি গো যেতে নাহি পারে
           পড়ে গেল মনে, আজি কেমনে                                        তোমার সুদূর পারে,
           তোমারে ফিরাব বল আর?                                           তবু মোর যা ছিল দিবার,
           চারিধারে আঁধারের এসেছে জোয়ার!                                সব দিয়ে একেবারে বাঁচিনু এবার!

 ( ‘ভারতবর্ষ’ মাসিক পত্রিকা, ফাল্গুন ১৩৩১ )|

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।