প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

পুরনো দিনের পত্রিকা ও বই থেকে নির্বাচিত প্রবন্ধ (সূচী)

কণ্ঠরোধ


দ্বিতীয় অংশ


যথাকালে ধাত্রী ডাক্তার কুঠিওয়ালার হাসপাতালে উপস্থিত হইল। হাসপাতাল ডাক্তারের গৃহের সন্নিকটেই অবস্থিত ছিল। একজন পরিচারিকা ধাত্রীকে দেখিয়া বলিল, " আমি আপনার প্রতীক্ষা করিতেছি; সাহেব রোগী দেখিতে বাহিরে গিয়াছেন, আপনি ইচ্ছা করিলে তাঁহার অনুপস্থিতিতেই রোগীকে দেখিতে পারেন, ডাক্তার আপনাকে একথা বলিতে বলিয়া গিয়াছেন।" ধাত্রী সম্মতি প্রদান করিলে দাসী তাহাকে লইয়া একটি কক্ষের সম্মুখে উপস্থিত হইল; দ্বারে আঘাত করিতেই ভিতর হইতে একজন লোক বলিল, " আপনি কে? ভিতরে আসিতে পারেন।" ধাত্রী গৃহে প্রবেশ করিল। একটা টেবিলের উপর আলো জ্বলিতেছিল। গৃহমধ্যস্থ ব্যক্তি অগ্রসর হইয়া কোমল স্বরে বলিলেন, " আপনি ধাত্রী বুঝি, আপনারই উপর আমার পরিচর্য্যার ভার পড়িয়াছে।?" ধাত্রী বলিল, " হ্যাঁ, আমার যাহা সাধ্য তাহা আমি আপনার জন্য করিতে প্রস্তুত আছি।" রোগী বলিলেন, " আপনি ঐ চেয়ার খানায় বসুন। ডাক্তার বলিয়াছেন, আমার মস্তিষ্কে অস্ত্র করিবার আবশ্যক হইবে, কি ভাবে অস্ত্র করিতে হইবে, সে সম্বন্ধে আপনাকে কিছু বলিয়াছেন কি?" ধাত্রী বলিল, " তিনি বলিয়াছেন, অস্ত্রটা খুব সাধারণ রকমের নহে।"

" তাহা আমি বুঝিয়াছি, ইহাতে আমার জীবনের আশঙ্কা আছে তাহাও জানি; কিন্তু অন্য উপায় নাই, যদি আমি ইহাতেই প্রাণত্যাগ করি - আমার অকর্ম্মণ্য জীবনের অবসান হইবে; কিন্তু যদি আরোগ্যলাভ করি, এই আশাতেই এমন বিপজ্জনক অস্ত্রচিকিৎসাতেও সম্মত হইয়াছি। আমার সত্যিই বাঁচিতে বড় ইচ্ছা; এ পৃথিবী বড় সুন্দর, আমার জীবনের সকল আকাঙ্খা এখনও অতৃপ্ত রহিয়াছে।"
ধাত্রী রোগীর মুখের দিকে চাহিল; মুখখানি সুন্দর, দেহ সুগঠিত, কেবল চক্ষে কিছু অস্বাভাবিক তীব্রতা। যুবককে দেখিয়াই ধাত্রীর মনে হইল, এ মুখ নিতান্ত অপরিচিত নহে। কিন্তু পরিচিত হইবারও ত কোন সম্ভাবনা নাই, কোথায় সে এ মুখ দেখিয়াছে? ধাত্রী অনেকক্ষণ ধরিয়া চেষ্টা করিল - কিন্তু স্মরণ করিতে পারিল না। অনেকক্ষণ পরে ধাত্রী জিজ্ঞাসা করিল, " আপনার মত রোগী আমি ইতিপূর্ব্বে আরও দেখিয়াছি, রোগ কঠিন বটে, কিন্তু দুশ্চিকিৎস্য নহে। আপনি বোধ করি সময় সময় অজ্ঞান হইয়া পড়েন, কখন কখন কি মস্তকে গুরুতর বেদনা অনুভব করেন?" "হ্যাঁ|" " কখন কি আপনার মস্তকে কোনরকম আঘাত লাগিয়াছিল?" " কিছুদিন পূর্ব্বে আমি মস্তকে গুরুতর আঘাত পাইয়াছিলাম। ডাক্তার কুঠিওয়ালার বিশ্বাস সে আঘাতে আমার মস্তিষ্কের কোন বিশেষ স্থানের মাংসপেশী সঙ্কুচিত হইয়া গিয়াছে, সেই জন্য আমি সময় সময় অজ্ঞান হইয়া পড়ি; যদি শীঘ্র কোন প্রতিকার করা না যায়, তাহা হইলে আমার মস্তিষ্ক ক্রমে অভিভূত হইয়া পড়িবে, তাহার ফলে আমি নিশ্চয়ই উন্মাদ হইয়া উঠিব। উন্মত্ততা অপেক্ষা মনুষ্যের শোচনীয় ব্যাধি আর কিছুই নাই। আমি পূর্ব্বেই ডাক্তার কুঠিওয়ালার খ্যাতির কথা শুনিয়াছিলাম, তাই দেশে ফিরিয়া সর্ব্ব প্রথমেই তাঁহার আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছি।" " আপনি কি এখানে বেশী দিন আসিয়াছেন?" " এক সপ্তাহ।" " কোথা হইতে আসিয়াছেন?" " সে সকল কথা আর এক সময় বলিব, আমার এই জীবনের উপর অনেক বিপদ চলিয়া গিয়াছে। আমি বাঁচিয়া যে দেশে ফিরিয়াছি ইহাই আশ্চর্য্য।"
হঠাৎ যুবক থামিলেন, তাহার পর গম্ভীরভবে বলিলেন, " আমি আর বেশী কিছু বলিব না, বেশী কথা বলিলে, আমার মস্তিষ্ক উত্তেজিত হইলে, এখনই ফিট্ হইতে পারে। আপনি একটা কাজ করিলে বড়ই উপকৃত হই, পাশের ঘরে আমার বাক্স আছে, তাহার ভিতর গরম কাপড় আছে, - আপনি যদি কিছু লইয়া আসেন,- একটু ঠাণ্ডা বোধ হইতেছে; ঐ টেবিলের উপর চাবি আছে।"
ধাত্রী যথানির্দ্দিষ্ট কক্ষে প্রবেশপূর্ব্বক চাবি দিয়া যুবকের তোরঙ্গ খুলিল, কতকগুলি কাপড় তুলিতেই পোর্টমেন্টের নীচের দিকে চামড়ার একটা ছোট ' রাইটিং-কেশ ' দেখা গেল। ধাত্রী সেটা তুলিয়া অন্যান্য কাপড় সাজাইয়া রাখিবে, এমন সময়, তাহার হাত হইতে সেই ' রাইটিং-কেশ 'টা হঠাৎ মেঝের উপর পড়িয়া গেল। এই ঘটনায় ধাত্রী কিছু অপ্রতিভ হইয়া, কাগজপত্রগুলি যথাস্থানে ন্যস্ত করিতে গিয়া দেখিল, অন্যান্য কাগজপত্রের সঙ্গে মেঝের উপর একখানি ফটোগ্রাফ্ পড়িয়া আছে। ফটোখানি কাহার - তাহা দেখিবার কৌতূহল - রমণী দমন করিতে পারিল না। তাহা হাতে তুলিয়া লইয়া আলোকের নিকট আসিয়া দাঁড়াইল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চাহিয়া দেখিয়াই - সে বজ্রাহতের ন্যায় স্তম্ভিত হইয়া পড়িল ! - অনেকক্ষণ পরে সে আত্মসম্বরণ করিয়া পুনর্ব্বার ফটোখানি পরীক্ষা করিল, চক্ষুকে অবিশ্বাস করিতে পারিল না। এ ফটো - রতনবাইএর।

অতি কষ্টে জিনিসপত্র গুছাইয়া পোর্টমেণ্টের ভিতর বদ্ধ করিয়া রাখিয়া ধাত্রী অত্যন্ত বিচলিতচিত্তে প্রায় টলিতে টলিতে রোগীর কক্ষে প্রবেশ করিল। রোগীকে গরম কাপড় দিয়া অনেকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিল, মনের মধ্যে এমন একটা আকস্মিক উত্তেজনা উপস্থিত হইয়াছিল যে, সে সহসা কি বলিবে ভাবিয়া পাইল না; কি বলিতে কি বলিয়া ফেলিবে, ভাবিয়া কথা কহিতে সাহসও করিল না। অনেকক্ষণ পরে মন অপেক্ষাকৃত সংযত হইলে সে ধীরে ধীরে বলিল, " আপনার পোর্টমেণ্টের ভিতর জিনিসপত্র যে ভাবে গোছান ছিল, ঠিক তেমনই করিয়া রাখিয়াছি। এতক্ষণ পর্য্যন্ত আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি নাই; যদি অপরাধ গ্রহণ না করেন, ত আপনার নামটি জানিতে চাই।" যুবক বলিলেন, " ইহাতে আর অপরাধ কি? এ হতভাগ্যের নাম মাণিকজী মুকাঞ্জি।"
ধাত্রী আর কোন কথা জিজ্ঞাসা করিতে সাহসী হইল না, কিন্তু তাহার বুকের মধ্যে ঢিপ্ ঢিপ্ করিয়া শব্দ হইতে লাগিল; দেহের সমস্ত রক্ত তাহার হৃৎপিণ্ডের ভিতর সবেগে প্রবেশ করিতে লাগিল। সে একটা ওজর করিয়া সেখান হইতে উঠিয়া কক্ষান্তরে চলিয়া গেল।
ভিন্ন কক্ষে গিয়া ধাত্রী ভাবিতে লাগিল, " এখন আমার কর্ত্তব্য কি ! রাত্রি দশটার অধিক হয় নাই, এখনও রতনবাইএর সহিত সাক্ষাৎ হইতে পারে।" এই মুহূর্ত্তে রতনবাইএর নিকট উপস্থিত হইয়া এই গুরুতর সংবাদ তাঁহাকে প্রদান করা উচিত মনে করিয়া ধাত্রী উঠিল; ঘর হইতে বাহির হইয়া সে বারান্দায় আসিয়া দাঁড়াইয়াছে , এমন সময় ডাক্তার কুঠিওয়ালার দীর্ঘ মূর্তি তাহার নয়নপথে পতিত হইল। ডাক্তার রোগী দেখিয়া ফিরিতেছিলেন।
ডাক্তার ধাত্রীকে দেখিয়াই জিজ্ঞাসা করিলেন, " আমি তোমার কথাই ভাবিতেছিলাম, তুমি আসিয়াছ। রোগীর সঙ্গে আলাপ করিয়াছ কি? "
" হ্যাঁ, এতক্ষণ আমি রোগী মাণিকজীর কাছেই ছিলাম। তাঁহার যাহা কিছু দরকার, সকল কাজ শেষ করিয়া আসিলাম, আজ রাত্রে আর তাঁহাকে বিরক্ত করিবার কোন আবশ্যক দেখি না। আমি -"
ডাক্তার বাধা দিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, " তুমি এখন যাইতেছ কোথা?"
আমি একবার রতনবাইএর সঙ্গে দেখা করিব, তাঁহাকে বিশেষ কোন প্রয়োজনীয় সংবাদ দেওয়ার আবশ্যক মনে করিতেছি। ধাত্রী বিশেষ ধীরভাবেই কথাগুলি বলিল; কিন্তু তাহার কণ্ঠস্বরে তাহার মানসিক চাঞ্চল্য প্রকাশ হইয়া পড়িল, বিশেষ চেষ্টা করিয়াও সে তার মনের ভাব গোপন করিতে পারিল না।
ডাক্তার পূর্ণ দৃষ্টিতে ধাত্রীর দিকে চাহিয়া বলিলেন, " না, আজ রাত্রে আমি তোমাকে ছাড়িয়া দিতে পারি না, কাল খুব সকালে আমি অস্ত্র করিব, তখন তোমার সাহায্যের বিশেষ দরকার; এখন যদি তুমি যাও, ত সকালে আসিতে পারিবে না। তোমার সঙ্গে এই রোগী সম্বন্ধে আমার অনেক কথা আছে; তুমি আমার 'কনসাল্টিং রুমে' গিয়া অপেক্ষা কর, আমি দু' মিনিটের মধ্যে আসিতেছি। "
ধাত্রীকে আর কোন কথা বলিবার অবসর না দিয়া ডাক্তার একটি কক্ষে প্রবেশ করিলেন। ধাত্রী মন্ত্রমুগ্ধার ন্যায় ডাক্তারের কনস্লটিং রুমে প্রবেশ করিল। দুই মিনিটের পরে ডাক্তার সেই কক্ষে আসিয়া ভিতর হইতে দরজা বন্ধ করিয়া দিলেন। ডাক্তার একখানি চেয়ার টানিয়া ধাত্রীর সম্মুখে উপবেশন করিলেন; তাঁহার মূর্ত্তি স্থির, অত্যন্ত গম্ভীর। ধাত্রী তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া অত্যন্ত অসচ্ছন্দতা অনুভব করিতে লাগিল। ব্যাঘ্রকবল নিপতিতা হরিণীর যেমন অবস্থা হয়, ধাত্রীরও তখন সেই অবস্থা।

ক্ষণকাল নিস্তব্ধ থাকিয়া ডাক্তার ধাত্রীকে অচঞ্চল স্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন, " এখন তোমার কি বলিবার আছে, বল। তুমি বলিতেছিলে তুমি রতনবাইএর নিকট যাইতেছিল, তাঁহাকে কোন প্রয়োজনীয় সংবাদ দেওয়ার আবশ্যক আছে; এমন কি প্রয়োজনীয় সংবাদ, আমি জানিতে চাই।"
ধত্রী বলিল, " আমি এখানে আসিয়া একটা আশ্চর্য্য রহস্যভেদ করিয়াছি।"
ডাক্তার ধাত্রীর দিকে স্থির দৃষ্টিতে চাহিয়া বলিলেন, " ধাত্রী বিদ্যায় তোমার বিশেষ দক্ষতা আছে তাহা জানি, কিন্তু তুমি যে এত অল্পেই বিচলিত হইয়া ওঠ, পূর্ব্বে তাহা জানিতাম না, তোমার যে ব্যবসায়, অত্যন্ত সংযম ও ধৈর্য্যের একান্ত আবশ্যক। তুমি আমার এই হাসপাতালে এমন কি অদ্ভুত রহস্য আবিষ্কার করিয়াছ যে জন্য তুমি এত বিচলিত হইতে পার? আমি দেখিতেছি কথা বলিতে তোমার কথা বাধিয়া যাইতেছে, তুমি ঠক্ ঠক্ করিয়া কাঁপিতেছ, - তোমার এ ভাব পরিত্যাগ না করিলে কঠিন অস্ত্রচিকিৎসায় কাল যে তুমি আমার সাহায্য করিতে পারিবে, তাহার কোন সম্ভাবনা দেখি না।"
ধাত্রী বিচলিত স্বরে বলিল, " আমার চাঞ্চল্য দেখিয়া আপনি বিস্মিত হইবেন না, আমি আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করিতে চাই।"
ডাক্তার বলিলেন, " অনায়াসে জিজ্ঞাসা করিতে পার।"
" আপনি কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই রতনবাইকে বিবাহ করিবেন স্থির করিয়াছেন?"
" একথা তুমি বেশ ভাল রকমই জান, তবে আর তাহা নূতন করিয়া জিজ্ঞাসা করিবার কারণ কি? তোমার বুদ্ধি লোপ হইল নাকি?" - ডাক্তারের স্বরে গুপ্ত বিদ্রূপের আভাস ছিল।
ধাত্রী সেদিকে লক্ষ্য না করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, " আমার আরও কিছু বক্তব্য আছে, আপনি রতনবাইএর নিকট একটি গুরুতর অঙ্গীকারে আবদ্ধ আছেন, তাহাও বোধ করি আপনার স্মরণ থাকিতে পারে।"

ডাক্তার কিঞ্চিৎ বিরক্ত হইয়া বলিলেন, " ইহা তোমার অনধিকার চর্চ্চা।"
" দুর্ভাগ্যক্রমে আমি সেরূপ মনে করি না। রতনবাইএর প্রণয়ী মৃত, এই বিশ্বাসেই তিনি আপনার হস্তে আত্মসমর্পণ করিতে সম্মত হইয়াছেন।"
ডাক্তার অবজ্ঞাভরে বলিলেন, " তুমি বহু পুরাতন কথার আলোচনা আরম্ভ করিয়াছ দেখিতেছি। রতনবাইএর বাল্যপ্রণয়ীর নাম কি তাহাও আমার জানিবার অবসর হয় নাই। তুমি কি মনে কর বালকবালিকার প্রেমের স্বপ্নে আমি আমার জীবনের একটি প্রধান উদ্দেশ্য হইতে বিচলিত হইব? স্ত্রীলোক জাতটাই নিতান্ত অসার। অবশ্য আমি একথা স্বীকার করি যে, আমি তর্কের অনুরোধে রতনবাইকে বলিয়াছিলাম, যদি মৃত ব্যক্তিকে আবার জীবিত অবস্থায় ফিরিয়া আসিতে দেখা যায়, তাহা হইলে না হয় আমি তাঁহাকে বিবাহ করিবার অভিপ্রায় ত্যাগ করিব।"
" আপনি রতনবাইকে কোন দিন তাঁহার প্রণয়ীর নাম জিজ্ঞাসা করেন নাই?"
" না। আমি তাহার কোন দরকার বোধ করি নাই। সে কথাটা আমি আলোচনার অযোগ্য বলিয়াই মনে করিয়াছিলাম। আমার সহিত আগে রতনবাইএর বিবাহ হইয়া যাক্, তখন তুমি শুনিবে, রতনবাই দুইচারি মাসের মধ্যেই তাঁহার প্রণয়ীকে বিস্মৃত হইয়াছে। নব যুবতীদের প্রেম একটা ব্যামো মাত্র, স্বপ্নের বিকার, বিবাহের পর তাহা সারিয়া যায়।"
ধাত্রী আপনাকে সম্পূর্ণ সংযত করিয়া লইয়া সোজা হইয়া বসিল, সে তাহার ক্ষণিক জড়তা পরিত্যাগ করিল, তাহার পর সুস্পষ্টস্বরে তেজের সহিত বলিল, " ডাক্তার কুঠিওয়ালা, স্ত্রীলোক সম্বন্ধে আপনার ধারণা অতি হীন দেখিতেছি। রমণী একবার যাহাকে হৃদয় সপর্পণ করে, জীবনে তাহাকে বিস্মৃত হইতে পারে না; দেহের রোগ নির্ণয়ে আপনার এত অভিজ্ঞতা, আর মনের রোগ সম্বন্ধে আপনি এতদূর অজ্ঞ। যাহা হউক, আমি আপনার মনে কষ্ট দিতে বাধ্য হইতেছি, অপরাধ মার্জ্জনা করিবেন; রতনবাইএর প্রণয়ী এখনও জীবিত আছেন, মৃত্যুকবল হইতে তিনি স্বদেশে প্রত্যাবর্ত্তন করিয়া আপনার হাসপাতালেই আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছেন, তাঁহার নাম মাণিকজী মুকাঞ্জি। "
দীনেন্দ্রকুমার রায়

( ক্রমশঃ )

( সম্পূর্ণ রচনাটি প্রবাসী’র ১৩১০ বঙ্গাব্দের পৌষ সংখ্যায় প্রকাশিত ) ।

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।