প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

পুরনো দিনের পত্রিকা ও বই থেকে নির্বাচিত প্রবন্ধ (সূচী)

আমার বিবাহ

[ লেখক পরিচিতি : হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের তৃতীয় পুত্র ও রবীন্দ্রনাথের সেজদা । মা সারদা দেবী । হেমেন্দ্রনাথের জন্ম ১৮৪৪ খৃষ্টাব্দের ২০শে জানুয়ারী । চিকিৎসা শাস্ত্র নিয়ে মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করেছেন । তিনি ছিলেন প্রকৃত বিদ্যানুরাগী । বাড়ীর মেয়েদের তিনি পড়াশোনায় উৎসাহ দিতেন । স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তার কাছে বাংলা শিখতেন । দেবেন্দ্রনাথের বন্ধু হরদেব চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা নীপময়ীকে তিনি বিয়ে করেন এবং আট কন্যা এবং তিন পুত্রকে নিয়ে ছিল তার সংসার । কুলীন ব্রাহ্মণের সঙ্গে ব্রাহ্ম পরিবারের বিয়েতে যথেষ্টই সোরগোল পড়েছিল । হেমেন্দ্রনাথ 'আমার বিবাহ' নামক বর্তমান রচনায় সে সব লিখে গেছেন । হেমেন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন তার স্ত্রী সর্ব বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠুক । স্ত্রীকে গান শেখাবার জন্য তিনি মহর্ষির অনুমতি চাইলে, ইতঃস্তত করেও দেবেন্দ্রনাথ তাতে রাজী হন । প্রচলিত প্রথার বাইরে গিয়ে হেমেন্দ্রনাথ গায়ক বিষ্ণু চক্রবর্তীর কাছে নীপময়ীর গান শেখার ব্যবস্থা করে দেন । হেমেন্দ্র-কন্যা প্রতিভা পিতার উৎসাহে সত্যিই প্রতিভাময়ী হয়ে উঠেছিলেন ।

শুধু সঙ্গীত , অভিনয় বা সাহিত্যানুরাগ নয় বিজ্ঞান চর্চায় হেমেন্দ্রনাথের ছিল প্রবল আগ্রহ । তার পৌত্র ( ঋতেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র ) সুভগেন্দ্রনাথ ঠাকুর ( সুভো ঠাকুর ) লিখেছেন : “মহর্ষির পুত্রদের মধ্যে তিনিই ছিলেন নাকি সর্বাধিক সুপুরুষ , পুরুষোচিত সৌন্দর্যের অবধারিত অধিকারী । দৈহিক শক্তি , স্বাস্থ্য ও সামর্থের অতিশয় সক্ষম দৃষ্টান্ত । মেদহীন শালপ্রাংসু ন্যূনধিক ছ’ফুট ৬ ইঞ্চি লম্বা ছিল নাকি তাঁর দেহ । সেই সঙ্গে মানানসই সুপ্রশস্ত বক্ষের ছাতি । আর অঙ্গে উদয়কালীন অরুণাভার মতোই দীপ্তবর্ণের আভাস । একমাত্র মস্তকের ভ্রমরকৃষ্ণ কেশগুলি ব্যতীত ইয়োরোপের সুইডেন অথবা নরওয়ের ন্যায় নার্ডিক দেশের নাগরিক বলে তাঁকে ভুল করা মোটেই মুশকিল ছিল না ।” ‘তত্ত্ববোধিনী’ , ‘পুণ্য’ প্রভৃতি পত্রিকায় বিজ্ঞান বিষয়ে তার অনেক রচনা প্রকাশিত হয়েছে । তার রচিত 'প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের স্থূলধর্ম' পুস্তিকার ভূমিকা লিখেছিলেন রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী । অবশ্য বইটি প্রকাশিত হয় তার মৃত্যুর পর । চিকিৎসক হিসাবেও তার আত্মবিশ্বাসের পরিচয় পাওয়া যায় যখন তার মা সারদা দেবীর চিকিৎসাও তিনি নিজেই করেন । প্রথম জীবনে তিনি নিয়মিত ব্যায়াম চর্চা করতেন এবং যথেষ্ট সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন কিন্তু দুঃখের বিষয় পরে তিনি বাত ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন । দীর্ঘ জীবন তিনি পান নি । ১৮৮৪ সালের ১২ই জানুয়ারী মাত্র ৪০ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয় । তার বিজ্ঞান বিষয়ক রচনাগুলি একসঙ্গে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করতে তার পুত্র ক্ষিতীন্দ্রনাথ উদ্যোগী হয়েছিলেন । বর্তমান রচনাটি সাধুভাষায় লিখিত । সমাস ও সন্ধির সক্রিয়তা ভাষার সাবলীলতায় বাধা সৃষ্টি করেছে । সে কালে সকলেই যে এই ভাষা ব্যবহার করতেন তা নয় ; বর্তমান ধারাবাহিকেরই সমসাময়িক অনেক রচনার ভাষা অনেক প্রাঞ্জল । ] .. দীপক সেনগুপ্ত।


সপ্তদশশত পঞ্চাশীতি শকীয় অগ্রহায়ণের দশম দিবসে ও বুধবাসরে বেলা অষ্ট ঘটিকার সময় আমার গায়ে হলুদ হয় !

বাহির ও অন্তঃপুর বন্ধুজন ও বান্ধবীয় মহিলাগণে পূরিত হইলে মাতা আমাকে অবরোধে আহ্বান করিয়া পাঠাইলেন এবং তথায় নির্দ্দিষ্ট আসনোপরি উপবেশন করাইয়া চতুর্দিকের হুলাহুলি ও বাদ্যধ্বনির মধ্যে আমার গাত্রে হরিদ্রাতৈল অর্পণ করিয়া স্নাত হইয়া আসিতে আদেশ করিলেন । আমি আদেশানুসারে গাত্রোত্থান করিয়া স্নানশালায় স্নান সমাপনের পর পবিত্র বারাণসী-ক্ষৌমবস্ত্র পরিধানপূর্বক মাতার ক্রোড়সমীপে তাঁহার স্নেহ ও আনন্দ দৃষ্টে বিগলিত হইয়া উপবিষ্ট হইলে মাতা কত স্নেহে ও কি আনন্দেই আমার কণ্ঠদেশ মুক্তামালা ও হীরকহারে , অঙ্গুলী ও মণিবন্ধ অঙ্গুরী ও বলয়ে ভূষিত করিয়া শিরোদেশে ও চন্দনচর্চিত ললাট মূলে চুম্বন করিতে লাগিলেন , অনন্তর আশীর্বাদমাল্য লইয়া ,'বৎস ঈশ্বর তোমার চিরমঙ্গল করুন' এই বলিয়া আমার কণ্ঠে দিলে , আমি সজল নয়নে তাঁহার চরণে আনত হইয়া রহিলাম । অনান্তর মাতা মদীয় ভগিনী ও ভ্রাতৃবদ্ধ অন্যান্য পুরন্ধ্রীবর্গে পরিবেষ্টিত হইয়া হুলাহুলির সহিত অবরোধের উপাসনা মন্দিরে আমাকে লইয়া গেলেন । পিতা সেখানে বেদীতে আসীন ছিলেন , তিনি ঝটিতি উঠিয়া আসিয়া আমার সম্মুখবর্তী হইলে আমি তাঁহার ক্রোড়ের সম্মুখে ভক্তিভরে ও অবনতশিরে দণ্ডায়মান হইয়া অশ্রুজল পরিত্যাগ করিতে লাগিলাম , পিতা তাঁহার হৃদয় দেশে আমাকে আকর্ষণ করিয়া মস্তকে হস্ত বুলাইয়া গদগদ বচনে বলিলেন , -

'হেমেন্দ্র তুমি অদ্য নতুন সোপানে উত্থিত হইতেছ , জীবনের নূতন রাজ্যে আরোহন করিতেছ , সাবধান পূর্বক পদ নিক্ষেপ করিবে , সম্মুখে রাশি রাশি বিপদ সম্পদ উপস্থিত হইবে , সকল বহন করিবে , ঈশ্বরেরই শরণাপন্ন হইবে , সকল বিপদ সম্পদ লঘু হইবে । তুমি যেমন আপনার উুনতির চেষ্টা করিবে সেইরূপ তোমার সহধর্মিণীরও উন্নতি সাধনে যত্নশীল হইবে - একহৃদয়ে ধর্মের পথে অগ্রসর হইবে । ঈশ্বর তোমার মঙ্গলবিধান করুন । তাঁহাকে এই উপাসনামস্দিরে স্মরণ করিয়া ভক্তিভরে প্রণাম কর ।'

আমি আদেশানুসারে ভক্তিসমাবেশিত চিত্তে পরমপিতার চরণে প্রণত হইয়া তৎপরে পিতার চরণে অবনত হইলাম । পিতা মস্তক হর্ষজড়পানি পরামৃশণ করিয়া 'ঈশ্বর সর্বতোভাবে তোমার মঙ্গল সম্পাদন করুন' এই বলিয়া অব্যর্থ আশীর্বাদ করিলেন । তৎপরে মাতার চরণে দণ্ডবৎ হইয়া উত্থিত হইলে তিনি শিরদেশ চুম্বন করিয়া 'বৎস পরমেশ্বর তোমার কল্যাণ করুন' আশীর্বাদ করিলেন । অনন্তর ক্রমান্বয়ে গুরুজনদিগের নিকট অবনত হইলে সকলেরই নিকট হইতে কল্যাণসূচক নানাবিধ আশীর্বাদ প্রাপ্ত হইয়া পিতা মাতা ও বন্ধু বান্ধবে একত্র হইয়া অবিবাহিত ভোজন সমাপ্ত করিলাম ।

পরদিবস একাদশ অগ্রহায়ণের বৃহস্পতিবারে রাত্রি প্রায় নয় ঘটিকার সময় বিবাহ কর্ম আরম্ভ হয :-

প্রাতঃকাল পবিত্রভাবে চলিয়া গেল । বৈকালে বিবাহস্থলে গমন করিবার পূর্বে মাতা আমার দেহকে সুমার্জিত ললাটস্থল চন্দনে চর্চিত এবং স্নেহের সহিত সেই সেইরূপে ভূষিত করিয়া হুলাহুলির মধ্যে দিয়া স্ত্রীজনাকীর্ণ উপাসনা মন্দিরে আমাকে লইয়া গেলেন । পিতা দণ্ডায়মান হইয়া আমাকে বলিলেন , -

'বৎস ! শুভ বিবাহস্থলে যাত্রার পূর্বে সেই মঙ্গলময়ী গৃহদেবতার চরণে প্রণিপাত কর। তিনি মাতার ন্যায় তোমার মঙ্গল বিধান করুন । আমি ঈশ্বরের চরণে অবনত হইয়া ক্রমে সকল গুরুজনকেই প্রণাম করিলাম । মাতাকে 'মা আমি তোমার সেবিকা আনিতে যাই' এই বাক্যটি বিশেষভাবে বলিয়া তাঁহার চরণধূলি মস্তকে গ্রহণ করিলাম । পরে মুকুট শিরে আনন্দ হুলাহুলি ও বিবিধ বাদ্যধ্বনির মধ্যে ভ্রাতৃগণ শোভিত চতুরস্রযানে আরোহণ করিয়া পিতা সুহৃদ সখা সহচর অনুচর অনুযাত্রে ভাগীরথীতীরে উপস্থিত হইয়া সেখান হইতে লৌহবত্মীয় বাষ্পীয় পোতে আরোহণ করিয়া গঙ্গানদীর শ্যমল পারে উপনীত হইলাম এবং আলোকময় পথের মধ্য দিয়া মনুষ্যবাহ্য চতুরস্রযানে ধীরে ধীরে গমন করিতে লাগিলে মহাড়ম্বরে বরযাত্র কন্যাযাত্রের সহিত সম্মিলিত হইয়া বিবিধ প্রকার সুমধুর বাদ্যের তালে তালে আমার অগ্র পশ্চাৎ ধীরে ধীরে যাইতে লাগিলেন । এই প্রকারে মাহাধূমধামে নিষ্কোষিত অসি শান্তিরক্ষক ও নগরপালদিগের ব্যূহরচনার অভ্যন্তরস্থ বিবাহস্থলে অবতরণ করিলাম । সেখানে দীপান্বিত সভামণ্ডপে কিশলয় পুষ্পমালা-সুসজ্জিত অনুযাত্রবর্গ মহিলাগণের হুলাহুলি ও আতর গোলাপের ছড়াছড়ি মধ্যে আসন পরিগ্রহ করিলে এবং বৈভালিকগণ উচ্চরবে ঠাকুর বংশ কীর্তন করিলে ব্রাহ্মধর্মের যথাপদ্ধত্যানুসারে ঈশ্বরকে স্মরণ পূর্বক মঙ্গলবাচন , অর্চনা , বরণ অন্তঃ পুরবরণ , উপাসনা ও সম্প্রদান ও কন্যাগ্রহণ এবং দক্ষিণান্ত তাবৎ কার্য্য ঈশ্বর কৃপায় নির্বিঘ্নে সম্পাদিত হইয়া গেল ।
ইহাদিগের মধ্যে যেগুলি বিবাহ পুস্তকে প্রকাশিত হইয়াছে সেগুলি এখানে পরিত্যক্ত হইয়া লিখিত হইল , অন্তঃবরণ নিম্নলিখিত রূপে সম্পন্ন হইয়াছিল ।

আমি অন্তঃপুরে নীত হইলে শ্বশ্রু ঠাকুরানী পরিবারস্থ স্ত্রীজন সহকারে অগ্রসর হইয়া আমাকে আসনোপরি দণ্ডায়মান করিলে ও বধূকে আমার চতুর্দিকে সাতবার প্রদক্ষিণ করাইয়া আমার দক্ষিণ-পার্শ্বে আনয়ন করিলেন । অনন্তর মালা বদল হইলে অর্থাৎ আমার গলের মাল্য আমাকর্তৃক বধূগলে ও বধূর গলের মালা আমার গলে অর্পিত হইলে , তিনি আমার বামভাগে আনীত হইলেন । অনন্তর শ্বশ্রুঠাকুরাণীর নিকটে উভয়ে অবনত হইয়া আশীর্বাদ প্রাপ্ত হইলে সভাতলে প্রেরিত হইলাম । তখন সমস্বরীরব-মিশ্রিত সঙ্গীত পুরঃসর উপাসনা আরম্ভ হইল । সঙ্গীতের অগ্রে কলিকাতা ব্রাহ্মসমাজের আচার্য্য বেদী হইতে এই উদ্বোধন বলিলেন - "সেই সর্ব্বব্যাপী সর্বমঙ্গলস্বরূপ এই সমুদয় জগৎ শাসন করিতেছে তিনি আমাদের প্রয়োজন জানিয়া বিবিধ কাম্যবস্তু বিধান করিতেছেন । তিনি এই শুভ বিবাহস্থলে বিরাজ করিতেছেন । আমরা মিলিত হইয়া শুভ বিবাহের অগ্রে প্রীতিপূর্বক হৃদয় মধ্যে নিষ্কলঙ্ক জ্যোতির্ময় মঙ্গল স্বরূপ পরমেশ্বরের উপাসনায় প্রবৃত্ত হই ।

অনন্তর দক্ষিণান্ত কন্যাসম্প্রদান সাঙ্গ হইলে আমাকে অন্তঃপুরে বাসর ঘরে লইয়া গেল । ব্রাহ্মধর্মের পদ্ধতি অনুসারে বিবাহবাসর ব্রাহ্মস্ত্রী ব্যতীত অব্রাহ্ম মহিলারা প্রায় কেহই ছিলেন না । সুতরাং অব্রাহ্মিক পরিহাস সহ্য করিতে হইবে না দেখিয়া আমার মন আরও প্রসন্নতা লাভ করিল । তাঁহারা দুই রজত থালে দুইজনার জন্য মিষ্টান্ন সামগ্রী ও বাটাতে পানমশলা প্রস্তুত করিয়া আমাদের সম্মুখে রাখিলেন । এবং সেই সকল কিছু কিছু করিয়া আমাকর্তৃক বধূমুখে ও তাঁহা কর্তৃক আমার মুখে উত্তোলন করিয়া দিলেন । অনন্তর নানান প্রকার কথাবার্তা হইতে লাগিল , পাছে কেহ আমার সহিত অসঙ্গত পরিহাস করেন এইজন্য আমি পড়াশুনা এবং স্ত্রী শিক্ষা বিষয়ক কথা উপস্থিত করিলাম এবং আমাদিগের ঘরের মহিলাদিগের মধ্যে অনেকে সংস্কৃতজ্ঞ ও ইংরাজি পড়িতে পারেন বলিয়া তাঁহাদিগকে আচম্বিত করিয়া দিলাম । এই প্রকার নানান কথায় দুই এক ঘন্টা অতিবাহিত হইলে শ্বশুর মহাশয় অনুযাত্রদিগের ভোজন বিধান সমাপন করিয়া , দেখি যে আমারি ঘরে আসিলেন । অসম্ভাবিত রূপে তাঁহাকে পাইয়া আমি অতিশয় সন্তুষ্ট হইলাম , তিনি আনন্দাশ্রুর সহিত আমার মুখে মিষ্টান্ন তুলিয়া দিলেন এবং নানা প্রকার আশীর্বাদ করিলেন । আমি প্রণিপাত করিলাম । ব্রাহ্মধর্মের রীত্যনুসারে বিবাহ দেওয়াতে তাঁহার অনেক ত্যাগ স্বীকার করিতে হইয়াছে ;- তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র লোকভয়ে ভীত হইয়া স্বীয় জনকজননী ও ভ্রাতাভগিনী দিগকে পরিত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রী ও বাড়ির সকলের বিশেষ স্নেহভাজন আপনার শিশু সমভিব্যাহারে স্থানান্তরিত এবং ভিন্ন হইয়াছেন , গ্রামের সকল লোকেও তাঁহাকে একঘরী করিয়াছে । কিন্তু এ প্রকার হওয়াতেও শ্বশুর মহাশয়ের উৎসাহের কিছুই খর্বতা দৃষ্ট হইল না । তিনি তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্রের বিষয় বলিলেন যে , তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র পাগল , পাগল না হইলে কি ব্রাহ্ম হইয়া ব্রাহ্মধর্মের বিরোধী হইতে পারে । আমাকে বলিলেন যে , 'অদ্য তোমাকে পাইয়া আমার চির মনস্কাম পূর্ণ হইল । যদিও জ্যেষ্ঠ পুত্র ও একমাত্র পৌত্রের জন্য তার পরশ্ব হইতে নিরন্তর ক্রন্দন করিতেছি , কিন্তু আজ আহ্লাদ আমাতে ধরে না ; যেমন জ্যেষ্ঠ পুত্রকে হারাইয়াছি তেমনি বাবা আজ তোমাকে পাইয়াছি । এখন কেবল এই প্রার্থনা করি যে , ঈশ্বর তোমাদের নিত্য নিত্য দুইজনার উন্নতি করিতে থাকুন ।' অনন্তর অনেকক্ষণ পর্য্ন্ত ব্রাহ্মধর্মের উন্নতির কথা হইতে লাগিল - তিনি উৎসাহ পূর্বক বলিলেন যে , অনুষ্ঠানকারী ব্রাহ্ম ব্যতীত তো ব্রাহ্মই নয় এবং বলিলেন এ বিবাহ দ্বারা কি ব্রাহ্মধর্মের কম উন্নতি হইবে' ও নিজ রচিত দুটি একটি গীত ও গান করিলেন , যথা -

ব্রাহ্মধর্মের ডঙ্কা বাজিল
মন প্রফুল্ল পুলকিত হইল ।
ধর্ম সত্য জ্যোতি ; জাতিকুল আহুতি ,
            আগেতে গ্রহণ করিল
তাই অহংত্যাগে ধর্মের অনুরাগে
            ব্রাহ্ম ব্রহ্মদর্শন পাইল ।
অভিমান মনে , আমার আমি জ্ঞানে ;
            ধন জাতিকুল ছিল ;
সব বিনাশিতে , ভ্রাতৃভাব চিতে
            উদয় হইতে লাগিল ।
হলে ঐক্যভাব , হইবেক লাভ ,
            জ্ঞান আনন্দ সুখমঙ্গল ।
অতএব ব্রহ্ম , আজি সব কর্ম ,
            ব্রহ্ম ধুমপানে মাতিল ।।

এই প্রকার কথাবার্তা হইতে হইতেই মধুর শর্বরী প্রায় অবসান হইয়া আসিল । আমরা সকলেই সেই একঘরে নিদ্রা গেলাম । এবং ঘণ্টাকাল নিদ্রিত থাকিয়াই ঊষার আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই পুনরায় নবীভূত হইয়া উত্থিত হইলাম ।

দ্বাদশ অগ্রহায়ণ শুক্রবার প্রাতে শ্বশুর্বাটী হইতে গৃহে পৌঁছিলে উদীচ্য কর্ম আরম্ভ হয় - বিবাহের রাত্রিতে পুরুষদিগের কর্তৃক নিবারিত হইয়া নিতান্ত ইচ্ছুক হইলেও প্রতিবেশিনীগণ প্রায় কেহই সাহস করিয়া আসিতে পারেন নাই , কিন্তু পরদিবস প্রাতঃকালে প্রিয় প্রাতবাসীর নূতন প্রকার জামাতা দেখিতে তাঁহাদের কৌতূহল এত বর্দ্ধিত হইল , যে অনেকেই আমাদিগকে দর্শন করিতে তাড়াতাড়ি আগত হইলেন । কিন্তু বোধকরি নূতনবিধ জামাতা দেখিবার বিষয় তাঁহাদিগকে নিরাশ হইতে হইয়াছিল । তাঁহারা নানান প্রকার কথায় আমাদের প্রতি মনের উচ্ছ্বসিত সন্তোষ প্রকাশ করিতে লাগিলেন । কেহ আমাদিগকে রথাঙ্গ মিথুনের সহিত তুলনা করিলেন , আমাকে কেহবা হেমের সহিত উপমা দিলেন , কেহবা যেন ইংরাজের পুত্র এই বলিয়া নির্দেশ করিলেন এবং বধূ বরের মধ্যে অধিক সুন্দর কে এই বিচার হইয়া মীমাংসা হইল যে , উভয়েই পরস্পরের অনুরূপ । আমি এই সময়ে ইঁহাদের দৃষ্টি ও দৃষ্টান্ত প্রয়োগের স্থল হইয়া অপ্রস্তুত চৌরের ন্যায় এক একবার মাত্র বিহসন করিতে লাগিলাম । শ্বশ্রুঠাকুরাণী নানা দিক হইতে জামাতার প্রশংসা শুনিয়া সর্বাপেক্ষা অধিক সন্তুষ্ট হইলেন । অনন্তর সকলের নিকট হইতে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হইয়া বধূবরে একত্রে শ্বশুর শ্বশ্রুর নিকটে বিদায় কালের প্রণাম করিতে গেলাম । শ্বশুর সজল নয়নে আশীর্বাদ করিলেন । 'পথের বিঘ্ন সকল বিনাশ হউক । ঈশ্বর তোমাদের শান্তি করুন মঙ্গল করুন ।' শ্বশ্রুঠাকুরাণী কেবল রোদনই করিতে লাগিলেন । বধূও তাঁহার মাতার অঙ্গ ধরিয়া রোদন করিতে লাগিলেন , আমিও সেই সকল দেখিয়া আর্দ্র হইলাম । অবশেষে পরিবারস্থ নারীরা ঈষৎ বলের সহিত বধূকে মাতা হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া যানাভিমুখী আনয়ন করিতে লাগিলে তিনি নিবাদ নীয়মান একায়ন মৃগীর ন্যায় মাতৃমুখ হইয়া ক্রন্দন করিতে করিতেই যানে আরোহিত হইলেন । এই প্রকারে প্রহৃষ্ট মনে অথচ নাতিপ্রহৃষ্ট মনে লোকজন শুদ্ধ সপত্নিক আমি পরিযান কর্তৃক নেত্রনেয় হইয়া তৎজ্ঞান্যকার্য্য যথা তথা গবাক্ষের অন্তরাল হইতে সমগুণ যোগপ্রীতা পুরন্ধ্রীজনার শ্রোত্রপেয় কথা শুনিতে শুনিতে গৃহে প্রত্যাগত হইলাম ।

এই সময় হইতে উদীচ্য কর্ম আরম্ভ হইল ।

মাতা অন্তঃপুরের নিম্নে আসিয়া যান হইতে পুত্রবধূকে সচুম্বন ক্রোড়ে করিয়া আনন্দের হুলাহুলি ও প্রশংসাবাদের মধ্যে তাঁহার মুখ সস্নেহ নিরীক্ষণ করিতে করিতে উপরে লইয়া গেলেন । আমি অগ্রে অগ্রে যাইতে লাগিলাম । অনন্তর মাতা আমাদিগকে দুই আসনোপরি পার্শ্বাপার্শ্বিরূপে দণ্ডায়মান করাইয়া মধুমুখ করাইয়া দিলেন । অনন্তর প্রণিপাত পরে সেখান হইতে উপাসনা গৃহে লইয়া গেলে , কলিকাতা জোড়াসাঁকোস্থিত ব্রাহ্মসমাজের আচার্য্য নিম্নলিখিত রূপে আশীর্বাদ করিলেন -

'যে মঙ্গলময় পরমেশ্বর এই শুভ কার্য্য সুসম্পন্ন করিলেন , শ্রদ্ধাপ্রতি কৃতজ্ঞতার সহিত তোমরা তাঁহার পবিত্রচরণে প্রণিপাত কর , তিনি তোমাদিগের মঙ্গল বিধান করুন ।'

আমরা উভয়ে ঈশ্বরের সম্মুখে নতি হইলাম । তৎপরে সপত্নীক হইয়া এক সুসজ্জিত গৃহে উপবিষ্ট হইলে সকলে দর্শনী দিয়া আমাদিগকে আশীর্বাদ করিতে লাগিলেন । অনন্তর স্নান সমাপন করিয়া বন্ধু বান্ধবে মিলিয়া ভোজনে প্রবৃত্ত হইলাম ।

তাহার পরদিবস তেরই অগ্রহায়ণ শনিবার ১০ ঘটিকার সময় আমার পত্নীর ধর্মদীক্ষা ও সহধর্মিণী করণ হইল । আমরা দুইজনায় উপাসনা মন্দিরের মধ্যস্থলে বেদীর সম্মুখীন হইয়া একৈবাসনোপরি উপবিষ্ট হইলে , উপাসনা গৃহরক্ষিতা আমার ভগিনী জ্যেষ্ঠা এক সেমি উত্তরীয় বস্ত্রে আমাদের দুই জনার দেহ আবৃত্ত করিলে উপাসনা আরম্ভ হইল । উপাসনা সাঙ্গ হইলে নিম্নলিখিত ব্রাহ্মধর্মবীক্ষে বিশ্বাস স্থাপন পূর্বক ও নিম্নলিখিত প্রতিজ্ঞানুসারে বধূ ব্রাহ্মিকা হইলেন , পিতা ধর্মদীক্ষা প্রদান করিলেন , যথা -

'বৎস নীপময়ী । সৃষ্টি স্থিতি প্রলয়কর্তা ঐহিক পারত্রিক মঙ্গলদাতা , সর্ববৎ সর্বব্যাপী , মঙ্গলস্বরূপ , নিরবয়ব , একমাত্র , অদ্বিতীয়া পরব্রঘোর প্রতি প্রীতিদ্বারা এবং তাঁহার প্রিয় কার্য্য সাধন দ্বারা তাঁহার উপাসনাতে নিযুক্ত থাকিবে । পরব্রহ্মা জ্ঞান করিয়া সৃষ্ট কোন বস্তুর আরাধনা করিবে না । রোগ বা বিপদ দ্বারা অক্ষম না হইলে প্রতিদিবস শ্রদ্ধা ও প্রীতিপূর্বক পরব্রহ্মে আত্মা সমাধান করিবে । কায়মনোবাক্যে সংসারধর্ম প্রতিপালন করিবে । পাপচিন্তা পাপ-আলাপ ও পাপ-অনুষ্ঠান হইতে নিরস্ত থাকিবে । যদি মোহবশতঃ কখন কোন পাপ আচরণ কর , তবে তন্নিমিত্তে অকৃত্রিম অনুশোচনাপূর্বক তাহা হইতে বিরত থাকিবে । পতিব্রতা হইয়া পতির হিতকার্য্যে নিযুক্ত থাকিবে ।

পরে আমি আদিষ্ট হইলাম -

'সৌম হেমেন্দ্র নাথ । যাহাতে তোমার পত্নী এই ব্রহ্মধর্মব্রত পালনে সমর্থ হন তুমি তদ্বিষয়ে সাহায্য করিবে তোমার সহধর্মিণীর জ্ঞানধর্ম সুখ শান্তি সম্পাদনে নিযুক্ত থাকিবে ....কায়মনোবাক্যে হিতৈষী বন্ধুর ন্যায় ব্রাহ্মধর্মকে রক্ষা করিবে । ধর্ম এক হতো হান্ত ধর্মোরক্ষতি রক্ষিতঃ তস্মাদ্ধর্মোন হন্তব্যো মানে ধর্মো হতোহবধীৎ । ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ হরি ওঁ' অনন্তর নিম্নলিখিত প্রার্থনা করিলেন -

'হে পরমাত্মন ! তুমি আমাদের গৃহদেবতা ; তোমারই এই পরিবার , তুমি এই পরিবারের প্রত্যেকের অন্তরে পবিত্র মঙ্গল ভাব প্রেরণ কর , ইহাদিগকে ধর্মপথে আকর্ষণ কর । ইহলোকে পরলোকে এ পরিবারের একমাত্র তুমি নেতা । তোমার সঙ্গে আমাদের চিরকালের যোগ । সেই যোগ যেন আমরা সম্যক বুঝিতে পারি । পৃথিবীর অস্থায়ী সুখ দুঃখে যেন মুগ্ধ না হই । কিন্তু তুমি তোমার সহিত সহবাসানন্দ হৃদয়ের নিভৃত নিলয়ে প্রকাশ কর । এখানে সূর্য্যচন্দ্রনক্ষত্র যেরূপ প্রত্যাবর্তন করিতেছে সেরূপ সুখ দুঃখের পরিবর্তন হইতেছে , তুমি একমাত্র অপরিবর্তন কারুণ্যভাবে এই পরিবারের শিরোদেশে নিয়ত বিরাজ করিতেছ । জন্মের পূর্বাবধি আমাদের উপর তোমার দৃষ্টি ছিল , এখনো তোমার দৃষ্টি , অনন্তকাল পর্য্যন্ত তোমার দৃষ্টি থাকিবে । তোমা ছাড়া হইলে আমাদের কি লাভ । যাহা কিছু সুখ ভোগ করি , তার জন্য যদি কৃতজ্ঞতা তোমাতে অর্পণ না করি তাহা অধর্মরূপে পরিণত হয় । তোমার সহিত আমাদের নিত্যকালের যোগ । আমাদের কাহারো হইতে তুমি দূরে থাকিও না , সকলকেই তোমার দিকে লইয়া চল , যাহাতে তোমার সহিত একত্রে থাকিয়া নিত্য সুখ ভোগ করিবার সকলেই অধিকারী হন ।'

পরদিবস চোদ্দই অগ্রহায়ণ রবিবারে আমার পাকস্পর্শ হইল :- অবরোধের উপাসনা মন্দিরে সকলে উপবিষ্ট হইলে পিতা উদ্বোধন করিলেন -

'সেই পরমেশ্বর সর্বব্যাপী ; তিনি সকল আকাশে ব্যাপ্ত রহিয়াছেন । তিনি পবিত্র উন্নত প্রেমদৃষ্টি এখানে বিকীরণ করিতেছেন । তিনি প্রত্যেকের হৃদয়স্থলে উপবিষ্ট আছেন । সাধুভাবে পবিত্র যাঁহার হৃদয় সেই হৃদয়েই তাঁহার আবির্ভাব । তাঁহার জ্ঞানজ্যোতি আমাদের অন্তশ্চক্ষুর সম্মুখে দীপ্তি পাইতেছে , তাঁহার মঙ্গল ইচ্ছা প্রত্যেক শুভ কার্য্যে ব্যক্ত হইতেছে । তিনি আমাদের সহায় , তাঁহার উপাসনার জন্য আমরা মিলিত হইয়াছি। প্রীতি-পূর্বক তাঁহার উপাসনাতে প্রবৃত্ত হই ।'

তৎপরে উপাসনা সঙ্গে এই প্রার্থনা করিলেন -

'হে পরমাত্মন ! তুমি আমাদের সহায় সম্পত্তি । তোমার প্রীতিদৃষ্টির উপরেই সংসার ধর্ম প্রতিপালন করিতে সমর্থ হইতেছি । তোমারই এই পরিবার , একা তুমিই ইহার মঙ্গল সাধন করিতেছ । তোমার আশ্রয়ে থাকিয়া আমাদের সকলই মঙ্গল হইতেছে । যদিও সকলে শত্রু । কিন্তু তুমি বিঘ্নবিনাশন । তোমার কৃপাবলে এ পরিবারের অভ্যুদয় মার্গ নিয়তই পরিস্কৃত হইতেছে । আমরা ধনমানের গর্ব করি না , আমাদের পরম সৌভাগ্য যে তোমারি আমরা সেবক দাস । তোমার করুণ দৃষ্টি । তোমার কৃপাদৃষ্টি আমাদের প্রত্যেকের উপর । আবার যখন সংসার হইতে অবসৃত হইব তখন যেন তোমারি নিকট উপনীত হই । হে পরমাত্মন্ । তোমার নিকট আর কি প্রার্থনা করিব ? যাহাতে দম্পতির উন্নতি হয় । যাহাতে ইহাঁরা একত্রে সদ্ভাবে সংসারধর্ম নিয়ত রক্ষা করেন এবং তোমার উপদেশ হৃদয়ে ধারণ করিয়া নিয়ত তোমার পদে অবনত থাকেন , এ প্রকার কৃপা কর । এই দম্পতিকে পরিবারের দৃষ্টান্ত ও উপদেশ স্থল কর এবং এখানকার মোহপাশ ছেদ করিয়া তোমার নিকটবর্তী কর । হে পরমাত্মন্ । তুমি এই দম্পতির সাধুমনোরথ পূর্ণ করিলে এখনো ইহাঁদের নিয়ত মঙ্গল বিধান করিতে যাক , এই আমার প্রার্থনা ।'

উপাসনা সাঙ্গ হইলে পর মাতা বধূকে রন্ধনশালায় লইয়া গিয়া অন্ন ব্যঞ্জনাদি স্পৃষ্ট করাইয়া লইলেন । অনন্তর আপনার উপবেশনাগারে আমাদিগের দুইজনাকে দুই আসনোপরি বসাইয়া একটি রজতথাল অন্নবস্ত্রে পূর্ণ করিয়া আমার সম্মুখে রাখিলেন । বধূহস্ত প্রসারিত হইতে আদিষ্ট হইলে , আমি সেই থাল লইয়া 'আজীবন তোমার ভরণ পোষণ করিব' এই বলিয়া তাঁহার হস্তে দিলাম । অনন্তর বাহিরে আসিয়া সকলে সৌহার্দ্যরসে মিলিত হইয়া মহাসমারোহপূর্বক ঈশ্বরমণ্ডপে বধূভক্ত ভোজনে প্রবৃত্ত হইলাম ।

তাহার পরশ্ব দিবস ষোলই অগ্রহায়ণ মঙ্গলবার প্রাতঃকালে আমাদের যুগ্মে শ্বশুরবাটী গমন হইল । আমরা দুইজনে দুই মনুষ্যবাহ্য যানদ্বারা লোক সমভিব্যাহারে শ্বশুরালয়ে গমন করিয়া শ্বশুর শ্বশ্রূ সমীপে দর্শনীর সহিত প্রীত হইয়া আশীর্বাদ লাভ করিলাম । পরে সেইখানে ভোজনাদি সমাপ্ত হইলে তাঁহাদিগের ও পরস্ত্রীজনের আশীর্যুক্ত হইয়া রুদিত বধূর সহিত সন্ধ্যার প্রাক্কালে পুনরায় গৃহে প্রত্যাগত হইলাম । সেখানে দাসীজন বেষ্টিত ভগিনী জ্যেষ্ঠা কর্তৃক দর্শিত মার্গ হইয়া মাতার চরণে বধূবরে একত্রে প্রণিপাত করিলে , মাতা আমাদিগকে যথোচিত আশীর্বাদ করিয়া উপাসনা মন্দিরে লইয়া গেলেন এবং বলিলেন - 'বৎস তোমরা ঈশ্বরকে স্মরণ করিয়া এখানে দণ্ডব্য হও ।' আমরা আদেশানুসারে ভক্তিভরে সেখানে দণ্ডবৎ হইলাম । এই প্রকারে বিবাহ এবং উদীচ্য কর্ম সম্পন্ন হইয়া গেল ।

হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর

 


( ১৮৩৭ খৃষ্টাব্দের ঐতত্ত্ববোধিনী পত্রিকা঑র ঊনবিংশ কল্প প্রথম ভাগে প্রকাশিত) ।

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।