প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

পুরনো দিনের পত্রিকা ও বই থেকে নির্বাচিত প্রবন্ধ (সূচী)

আমার দেখা লোক
যোগেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়

[লেখক পরিচিতি : লেখকের সম্বন্ধে খুব বেশি কিছু জানা যায় নি। ১৮৬৭ খৃষ্টাব্দে হুগলী জেলার চন্দননগরে জন্ম। পিতার নাম ইন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়। ১৮৮৭ খৃষ্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং হুগলী কলেজে পড়াশোনা করেন। কেরাণীর চাকরী ছেড়ে ‘হিতবাদী’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসাবে যোগদান করেন। ‘বঙ্গবন্ধু’ পত্রিকারও সম্পাদক ছিলেন। ‘হিতবাদী’ , ‘সাহিত্য’ ইত্যাদি বহু পত্র পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন। জীবনে বহু খ্যাতনামা লোকের সংস্পর্শে যে তিনি এসেছেন সেটা বর্তমান লেখাটি পড়লেই বোঝা যাবে। তার প্রকাশিত কযেকটি গ্রন্থ : বৃদ্ধের বচন (১৯১৮) , আগন্তুক ( গল্প-১৯০৬) , শ্রীমন্ত সদাগর , অমিয় উৎস , জামাই-জাঙ্গাল , সওদাগর। ১৯৬০ খৃষ্টাব্দে তার মৃত্যু হয়।........ দীপক সেনগুপ্ত ]

চতুর্থ অংশ

সেকালের একজন সুপ্রসিদ্ধ সাহিত্যিককেও আমি বাল্যকালে দেখিয়াছি। তাঁহার নাম বাবু রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়।

রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়

কিন্তু তাঁহাকে আমার শৈশবে দেখিয়াছি , সেই জন্য তাঁহার আকৃতি আমার বেশ সুস্পষ্ট মনে নাই। আমার পিতা যখন কটক নর্ম্মাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন , তখন রাজকৃষ্ণ বাবু কটকে আইনের অধ্যাপক ছিলেন। তখন কটকে 'কলেজ' ছিল না। এখন যাহা 'র্যাভেন্সা কলেজ' নামে পরিচিত , তখন তাহার নাম ছিল 'কটক হাইস্কুল'। ঐ হাই-স্কুলে এল.এ ( এখনকার ইণ্টারমিডিয়েট ) পর্যন্ত পড়ান হইত। বোধ হয় হাই-স্কুলেই আইন পড়াইবার ব্যবস্থা ছিল। আমরা যখন কটকে ছিলাম , তখন রাভেন্সা সাহেব উড়িষ্যা-বিভাগের কমিশনার ছিলেন। পরে তাঁহার নামানুসারে হাই-স্কুলকে র্যা ভেন্সা কলেজ করা হয়। শুনিয়াছি , পরে রাজকৃষ্ণ বাবু বেঙ্গল গভর্নমেন্টের হেড ট্রান্সলেটার হইয়াছিলেন। রাজকৃষ্ণবাবু কবি ও সুরসিক ছিলেন। নর্ম্মাল স্কুলের তদানীন্তন সুপারিন্টেন্ডেন্ট বাবু দ্বারকানাথ চক্রবর্তীকে তিনি একবার নিমন্ত্রণ করিবার সময় নিমন্ত্রন-পত্রে লিখিয়াছিলেন

" সবিনয় নিবেদন , আপনি সামান্য নন
লোকে বলে সুপারি তিনটে । "

শুনিয়াছিলাম যে , কটকে রাজকৃষ্ণবাবুর পত্নীর সহিত যখন দ্বারকা বাবুর পত্নীর প্রথম পরিচয় হয় , তখন নাকি দ্বারকাবাবুর স্ত্রী স্বামীর পরিচয় প্রদান কালে বলিয়াছিলেন যে , তাঁহার স্বামী নর্ম্মাল স্কুলের সুপুরিটিন্টেন্ট। দ্বারকাবাবুর জ্যেষ্ঠ পুত্র মোহিনীমোহন চক্রবর্তী পরে ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট হইয়াছিলেন। মোহিনীবাবু অনেকগুলি ভাষা জানিতেন। প্রৌঢ়ত্বে উপনীত হইয়াই তিনি লোকান্তরে প্রস্থান করেন। সেকালে আর এক জন কবি বাবু রাজকৃষ্ণ রায়।

রাজকৃষ্ণ রায়

আমাদের যৌবন কালে খুব বিখ্যাত ছিলেন। তিনি বহু পুস্তক প্রণয়ন করিয়াছিলেন। তাঁহার "প্রহ্লাদ চরিত্র" "প্রভাস" "লয়লা মজনু" প্রভৃতি নাটক ও গীতিনাট্য এক সময় বেঙ্গল থিয়েটার , ষ্টার থিয়েটার প্রভৃতি থিয়েটারে অভিনীত হইত। রাজকৃষ্ণ রায় স্বয়ং মেছোবাজার ষ্ট্রীটে "বীনা থিয়েটার' নামে একটি থিয়েটার করিয়াছিলেন। সেই থিয়েটারে কোন অভিনেত্রী ছিল না , পুরুষেরাই স্ত্রীলোকের ভূমিকা গ্রহণ করিতেন। চন্দননগরে দুর্গাচরণ রক্ষিত মহাশয়ের জ্যেষ্ঠ পুত্রের বিবাহের সময় তাঁহার বাটীতে বীনা থিয়েটারে "প্রল্হাদ-চরিত্রের" অভিনয় হইয়াছিল - তাহাতে রাজকৃষ্ণবাবু হিরণ্যকশিপু সাজিয়াছিলেন। রাজকৃষ্ণবাবুকে সেই সময় দেখিয়াছিলাম ।

"হিতবাদীর" সম্পাদক পণ্ডিত কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ

মহাশয়ের সময়েই আমি " হিতবাদী "র সম্পাদকীয় বিভাগে প্রবেশ করি। আমার নিয়োগের বোধ হয় আড়াই বৎসর পরে তাঁহার মৃত্যু হয়। হিতবাদীর সেবায় নিযুক্ত থাকিবার সময় , আমি বহুবার , তাঁহার মৃত্যু তারিখে , তাঁহার সম্বন্ধে প্রবন্ধ লিখিয়াছি। সুতরাং এখন আর সেই সকল কথার পুনরাবৃত্তি করিয়া প্রবন্ধের কলেবর বৃদ্ধি করিব না। তাঁহার সম্বন্ধে আমি এক কথায় এই বলিতে পারি যে তাঁহাকে দেখিলে ভস্মাচ্ছাদিত অগ্নি বলিয়া মনে হইত। তাঁহার মত তেজস্বী পুরুষ আমি অল্পই দেখিয়াছি। তাঁহার সম্বন্ধে লিখিতে গেলে আমাকে একখানি স্বতন্ত্র পুস্তক লিখিতে হয়। তাঁহার সম্বন্ধে একটা কথা বলিলেই বোধ হয় যথেষ্ট হইবে যে , ইংলণ্ডের সুবিখ্যাত নৌ-সেনাপতি নেলসনের ন্যায় কাব্য বিশারদ মহাশয়ও was as brave as a a lion and as tame as a lamb . ‘হিতবাদী’ তে তাঁহার দক্ষিণ-হস্তস্বরূপ পণ্ডিত সখারাম গণেশ দেউস্কর মহাশয়ের সহিত আমার প্রথম আলাপ হয় চন্দননগরে আমার বাল্যবন্ধু ও প্রতেবেশী বাবু চারুচন্দ্র রায় মহাশয়ের বাটীতে ।

পণ্ডিত সখারাম গণেশ দেউস্কর

একদিন চারুবাবুর কনিষ্ঠ সহোদর আমার বাটীতে আসিয়া আমাকে বলিল , "আমাদের বাটীতে সখারামবাবু এসেছেন , দাদা বাড়িতে নাই , তিনি একলা বসে আছেন। আপনি আমাদের বাড়িতে আসুন । " সখারামবাবুর সঙ্গে আমার চাক্ষুষ আলাপ-পরিচয় ছিল না। "সাহিত্য" কাগজে তিনও লিখিতেন , আমিও লিখিতাম পরস্পরের পরিচয় ঐ পর্যন্ত ছিল। আমি তাঁহার নাম জানিতাম , তিনিও আমার নাম জানিতেন। চারুবাবুর বৈঠকখানাতে প্রবেশ করিবামাত্র সখারামবাবু আমাকে নমস্কার করিয়া সহাস্যে বলিলেন , "আমি বর্গী। চারুবাবু পলাইয়া থাকিলেও নিস্তার পাইবেন না। আমি তাঁহার আতিথ্যের উপর অত্যাচার না করিয়া উঠিব না । " সখারামবাবুর সহিত সেই আমার প্রথম বাক্যালাপ। আমি তখন কলিকাতায় একটা আপিসে কেরাণীগিরি করিতাম। তাহার পর যখন কেরাণীগিরি ছাড়িয়া "হিতবাদী"তে যাই , তখন তাঁহার সহিত আমার ঘনিষ্ঠতা হয়। এই ঘনিষ্ঠতা পরে বন্ধুত্বে পরিণত হইয়াছিল। সখারামবাবু আমার প্রায় সমবয়স্ক ছিলেন। যাঁহার সহিত এক টেবিলে বসিয়া ছয়-সাত বৎসর প্রত্যহ কাজ করিয়াছি , তাঁহার সম্বন্ধে দুই-চারি কথা বলিয়া বক্তব্য শেষ করা অসম্ভব। তাঁহার স্বদেশানুরাগ তাঁহার "দেশের কথাতে"ই প্রকাশ। "দেশের কথা'র ন্যায় পুস্তক বাংলা ভাষায় আর নাই। সকলেই অবগত আছেন যে , গভর্নমেন্টে আদেশে ঐ পুস্তক বাজেয়াপ্ত হইয়াছে। "দেশের কথা" ব্যতীত তাঁহার আরও কয়েকখানি পুস্তক আছে , তন্মধ্যে "ঝান্সির রাজকুমার" নামক পুস্তকখানিও বোধ হয় গভর্নমেন্ট কর্ত্তৃক নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত হইয়াছে। সখারামবাবু গম্ভীর প্রকৃতি , রাশভারী লোক ছিলেন , কিন্তু হাস্য-কৌতূকে যোগ দিয়া প্রাণ খুলিয়া হাসিতে পারিতেন। বন্ধু-বান্ধবের সহিত রসিকতা করিতে তিনি অপটু ছিলেন না। আমাদের নিকট মধ্যে মধ্যে এমন দুই-একটা সংস্কৃত কবিতা বলিতেন যাহা ভারতচন্দ্র-যুগেই ভদ্রসমাজে শোভন , বর্ত্তমান যুগে একেবারে অচল। একদিন আমি চারুবাবুর অনুরোধে তাঁহার পত্নীকে সঙ্গে করিয়া কলিকাতায় আনিয়া বাহির-সিমলায় তাঁহার শ্বশুর-মহাশয়ের বাড়িতে পৌছিয়া দিয়া আপিসে যাই , সুতরাং আমার সেদিন আপিসে যাইতে একটু বেলা হইল। বেলা হইবার কারণ শুনিয়া সখারামবাবু বলিলেন , "আপনার কিছুমাত্র বুদ্ধি নাই। আমি হইলে চারুবাবুর স্ত্রীকে লইয়া একেবারে শিয়ালদহের কুলিডিপোতে লইয়া যাইতাম। কিছু নগদ বিদায়ও পাইতাম আর বন্ধুর প্রতি কর্ত্তব্যপালনও হইত। এমন সুযোগ ছাড়িতে আছে ?" এইরূপ কথা সখারামবাবু অনেক সময়েই বলিতেন। সখারামবাবু অনেক বার আমাদের বাড়িতে গিয়াছিলেন এবং আহারও করিয়াছিলেন। তাঁহার আহার সম্বন্ধে একটু বৈশিষ্ট্য ছিল। সে বৈশিষ্ট্য তাঁহার ব্যক্তিগত নহে , সমাজগত। সখারামবাবু নিরামিষভোজী মারাঠা ব্রাহ্মণ , আমি মৎস্য-মাংসভোজী বাঙালী ব্রাহ্মণ , সুতরাং তিনি আমাদের বাটীতে যে আমিষ "হেঁশেলে"র ব্যঞ্জনাদি খাইবেন না , তাহা জানিতাম ; অন্নভোজনও করিবেন না , সুতরাং লুচির ব্যবস্থা করিলাম। সখারামবাবু বলিলেন , "আপনাদের বাঙ্গলায় চাউল যতক্ষণ সিদ্ধ না হয় , ততক্সণ উহা 'সকড়ি' বলিয়া গণ্য হয় না , কিন্তু আমাদের সমাজে চাউল বা ময়দায় জল লাগিলেই উহা 'সকড়ি' হয়। সশ্রেণী ব্যতীত অন্য শ্রেণীর বাটীতে আমরা 'সকড়ি' খাই না। সুতরাং আপনারা যেরূপ জল দিয়া ময়দা মাখিয়া লুচি ভাজেন , সেরূপ না করিয়া যদি দুধ দিয়া ময়দা মাখিয়া লুচি ভাজেন , তাহা খাইতে আমাত আপত্তি নাই। মারাঠা দেশে ময়রার দোকানে লুচি পুরী প্রভৃতি দুধে মাখা ময়দায় প্রস্তুত হয় । " আমি সখারামবাবুর কথায় দুধে ময়দা মাখিয়াই লুচি ভাজিবার ব্যবস্থা করিয়াছিলাম। তিনি যতবার আমাদের বাটীতে গিয়াছেন , ততবারই দুধে ময়দা মাখিয়া লুচি হইত। মারাঠা ব্রাহ্মণগণ নিরামিষাশী , কিন্তু পেঁয়াজ খাইতে তাঁহাদের আপত্তি নাই। সখারামবাবু আমাদের বাটীতে পেঁয়াজের তরকারি খাইতেন একবার আমার এক পুত্রের উপনয়নের পর , আপিসে বন্ধুদের জন্য "আনন্দ-নাড়ু" লইয়া গিয়াছিলাম। সখারামবাবু প্রথমে খাইতে আপত্তি করিয়াছিলেন। কিন্তু পরে যখন শুনিলেন যে , উহাতে চাউলের গুঁড়া , নারিকেল , তিল ও গুড় ছাড়া আর ক্লিছু নাই , চাউলের গুঁড়াতে জল দেওয়া হয় না , গুঁড় দিয়াই মাখা হয় , তখন বিনা আপত্তিতে ভোজন করিলেন। তিনি একদিন আমাদিগকে তাঁহার বাটীতে নিমন্ত্রণ করিয়াছিলেন। আমি তাঁহাকে অনুরোধ করিয়াছিলাম , যেন সম্পূর্ণ মারাঠা প্রণালীতে আমাদিগকে খাওয়ান হয়। ভোজনের সময ভোজনগৃহে গিয়া দেখিলাম , আমাদের প্রত্যেকের বসিবার জন্য একখানি করিয়া কাঠের "পিঁড়া" পাতা হইয়াছে। পিঁড়ার সম্মুখে কলাপাতা। আমরা চওড়া কলাপাতা চিরিয়া দুই ভাগ করিয়া ছোট ছোট করিয়া কাটিয়া লই , এবং পাতার ডগায় দিকটা অখণ্ড ত্রিভুজাকার থাকে , সখারামবাবুর বাটীতে দেখিলাম আমাদের প্রত্যেকের পাতাই সেইরূপ ত্রিভুজাকৃতি , কাহারও পাতা চেরা ও চৌকা নহে। ত্রিভুজাকৃতি পাতাতে খাইবার সময় আমরা সাধারণতঃ উহার সূক্ষ্ম কোণটা আমাদের বামদিকে রাখি , সেই দিকে অন্ন বা লুচি থাকে , আর দক্ষিণদিকে ব্যঞ্জনাদি থাকে। মারাঠা-প্রথা দেখিলাম যে , ত্রিভুজ পাতার base টা অর্থাৎ ত্রিভুজের যে বাহুটা মারা দক্ষিণ দিকে রাখি , সেই দিকটা আমাদের আসনের দিকে আর তাহার বিপরীত কোণ - অর্থাৎ যে-কোণে পাতার শেষ সেই কোণটা পিঁড়া হইতে দূরে আছে। পাতার তিন দিকে ঘরের মেঝেতে "আলিপনা" দেওয়া। তারপর ভোজ্যের কথা। খিচুড়ি বা পোলাওর মত একটা পদার্থ - সেইটাই ভাত বা লুচির মত প্রধান ভোজ্য - সখারামবাবু বলিলেন , "উহার নাম , "ডালতাঁদুড়" , উহা ডাল ও তণ্ডুল শব্দের অপভ্রংশ , নুঝিলাম আমরা যাহাকে খিচুড়ি বলি। ব্যঞ্জনাদি সমস্তই আমাদের অপরিচিত। সাগুদানার মিঠাই ও ছোট ছোট জিলাপী , জিলাপীটা সাগুদানার কি এরারুটের তাহা মনে নাই - ইহাই আমরা ভোজন করিলাম। সমস্তই সখারামবাবুর পত্নী স্বহস্তে রন্ধন করিয়াছিলেন। মারাঠা দেশে স্ত্রীলোকের অবরোধ-প্রথা নাই , কিন্তু সখারামবাবুর স্ত্রী কখনও আমাদের সম্মুখে বাহির হইতেন না , তবে তাঁহাকে আমি দু-এক বার দেখিয়াছি। সখারামবাবু কাশীতে বিবাহ করিয়াছিলেন। তাঁহার স্ত্রী অনেক সময় একাকিনী কলিকাতা হইতে কাশীতে যাইতেন বা কাশী হইতে আসিতেন। সখারামবাবু হাওড়া ষ্টেশনে তুলিয়া দিয়া শ্বশুরবাড়িতে টেলিগ্রাম করিতেন , সেখানে কেহ ষ্টেশনে আসিয়া , তাঁহার স্ত্রীকে লইয়া যাইতেন , কাশী হইতে আসিবার সময়ও এইরূপ ব্যবস্থা হইত। ট্রেনে একাকিনী যাতায়াত করিবার সময় তাঁহার পত্নী একখানা বড় ছোরা কোমরে বাঁধিয়া রাখিতেন। সখারামবাবু মহামতি রাণাডে ও লোকমান্য তিলকের একান্ত ভক্ত ছিলেন। সুরাটের কংগ্রেস দক্ষযজ্ঞে পরিণত হইলে সুরেন্দ্রবাবু প্রমুখ মধ্যপন্থীরা বলেন যে লোকমান্য তিলকের অনুচরদের গুণ্ডামির জন্যই কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশন পণ্ড হইয়াছে , সুতরাং তিলককে নিন্দা করিয়া সংবাদপত্রে আন্দোলন করিতে হইবে। কবিরাজ দেবেন্দ্রনাথ সেন ও উপেন্দ্রনাথ সেন সুরেন্দ্রবাবুর মতাবলম্বী ছিলেন। তাঁহার "হিতবাদী"তে তিলকের নিন্দাসূচক প্রবন্ধ লিখিবার জন্য সখারামবাবুকে আদেশ করিলে সখারামবাবু হিতবাদীর সংস্রব ত্যাগ করেন। হিতবাদী ত্যাগের পর , তদানীন্তন ন্যাশনাল কলেজ বা জাতীয় বিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও ইতিহাসের অধ্যাপকের কার্য্য গ্রহণ করেন। সেই সময় তাঁহার একমাত্র পুত্র - পঞ্চমবর্ষীয় শিশু বাঙ্গাজী কলেরা রোগে আক্রান্ত হইয়া মারা যায়। পুত্রবিয়োগের বোধ হয় দুই বৎসর কি আড়াই বৎসরের মধ্যেই সখারামবাবুর পত্নীবিয়োগ হয়। শেষজীবনে সখারামবাবু বড়ই কষ্টে পড়িয়াছিলেন। পুত্রশোক ও পত্নীশোক , নিজের দীর্ঘকালব্যাপী পীড়া , অর্থকষ্ট প্রভৃতি তাঁহাকে একেবারে চূর্ণ করিয়া দিয়াছিল। তাঁহার শেষজীবনের কথা মনে হইলে বড়ই কষ্ট হয়।

( সম্পূর্ণ রচনাটি ১৩৪২ বঙ্গাব্দের ‘প্রবাসী’র জ্যৈষ্ঠ , শ্রাবণ ও ভাদ্র সংখ্যায় প্রকাশিত )|

( ক্রমশঃ )

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।

সেকালের জনপ্রিয় লেখক ও তাঁদের লেখা

পুরনো দিনের পত্রিকা ও বই থেকে নির্বাচিত প্রবন্ধ