প্রথম
পাতা
শহরের তথ্য
বিনোদন
খবর
আইন/প্রশাসন
বিজ্ঞান/প্রযুক্তি
শিল্প/সাহিত্য
সমাজ/সংস্কৃতি
স্বাস্থ্য
নারী
পরিবেশ
অবসর
|
পুরনো
দিনের পত্রিকা ও বই থেকে নির্বাচিত প্রবন্ধ
(সূচী)
কস্তূরিকা
( লেখকের নাম জানা নেই )
সুগন্ধ-দ্রব্যের
মধ্যে কস্তূরিকা এতদ্দেশে বহুকালাবধি প্রসিদ্ধ আছে| কবিরা ইহার
সৌরভে সর্ব্বদাই মুগ্ধ এবং ইহার প্রশংসায় গদ্গদচিত্ত হইয়া থাকেন|
পারস্যদেশে উৎকৃষ্টতার প্রতিরূপ বলিয়া ইহার সহিত অন্যান্য সকল
বস্তুর তুলনা হয়| রমণীর কৃষ্ণকেশ কস্তূরিকার সদৃশ, তাহার হাস্য
মৃগনাভির ন্যায় বিকাশ হইবা মাত্র সর্ব্বত্র আমোদিত করে, এবং
তাহার ঘ্রাণ মদগন্ধে পরিপূরিত| সমাদৃত পত্রের প্রাপ্তি অঙ্গীকার
করিতে হইলে পারস্যেরা লেখেন "ভবৎ শ্রীহস্ত নিঃসৃত লিপিমালার
মদার গন্ধেপরিমোদিত হইয়াছি|" চাটুকারের বাক্যে কোন ধনাঢ্য
হাস্য করিলেন, ইহার তুলনায় তাঁহারা লেখেন "কবির বাক্যরূপ
ছুরিকায় তাঁহার কস্তূরিকাণ্ডভেদ করিয়া সভা পরিপূর্ণ করিলেক|"
তথা সভায় কেহ বক্তৃতা করিলে, "কস্তুরী বর্ষণ করিয়াছেন"
বলিয়া থাকেন| যদিচ ভারতবর্ষীয় কাব্যে কস্তূরীর তাদৃশ প্রয়োগ
নাই, তত্রাপিম ইহার উল্লেখের অভাব দৃষ্ট হয় না| অপর ইহার নামসংখ্যাতেই
ইহার বিখ্যাতির বিশেষ প্রমাণ প্রাপ্ত হওয়া যায়| শ্রীযুক্ত রাজা
রাধাকান্ত দেবকৃত শব্দকল্পদ্রুমে ইহার বিংশত্যধিক নাম নিরূপিত
আছে, তদ্ভিন্ন অপর নামও অপ্রসিদ্ধ নহে|
ইহার এরূপ খ্যাতিও আশ্চর্য্যজনক নহে; যেহেতু ইহার গন্ধ প্রকৃত
যোজনগন্ধাই বলিলে বলা যায়| ইহার এক-তিল পরিমিত পদার্থ কোন গৃহে
নিক্ষেপ করিলে বহুবর্ষ তথায় তাহার গন্ধ থাকে| কথিত আছে যে তিন
সহস্র ভাগ নির্গন্ধ পদার্থের সহিত ইহার এক ভাগ মিশ্রিত করিলে
ঐ সমস্ত দ্রব্য সুবাসিত হয়| এই প্রযুক্ত কস্তূরী-সংগ্রহকারকেরা
কস্তূরীকে প্রায় প্রকৃত অবস্থায় রাখে না; সচরাচর অন্য পদার্থের
সহিত তাহা মিশ্রিত করিয়া বিক্রয় করে| ঐ অন্য পদার্থের মধ্যে
রক্ত বিশেষ প্রসিদ্ধ, যেহেতু শুষ্ক রক্তের সহিত কস্তূরীকার বিশেষ
সৌসাদৃশ্য আছে|
কস্তূরীর জন্মস্থান আশিআর মধ্যখণ্ড| তিব্বত হইতে সিবিরিয়ার দক্ষিণ
ধার পর্য্যন্ত, এবং তাতার হইতে বৈকাল-হ্রদের তীর পর্য্যন্ত,
সমস্ত স্থানে ইহা প্রাপ্ত হওয়া যায়| ঐ স্থানে এক প্রকার ক্ষুদ্র
হরিণ আছে, তাহা সামান্য ছাগ হইতে বৃহৎ নহে, কিন্তু দেখিতে অতীব
সুন্দর| ইহার পাদ অতি সূক্ষ্ম, মস্তক সুচারু এবং নয়ন চমৎকার
উজ্জ্বল| বর্ণবিষয়ে এই কস্তুরীমৃগ অন্য মৃগ হইতে পৃথক নহে, কিন্তু
অত্যন্ত শীতল পর্ব্বতোপরি আবাস হওয়া প্রযুক্ত ইহার কেশ চিক্কণ
না হইয়া অতি স্থূল ও কলমের পালখের ন্যায় কর্কশ বোধ হয়| অপর,
প্রায় হরিণজাতি মাত্রের উপর মাড়ির পুরোভাগে দন্ত হয় না, কিন্তু
কস্তূরী মৃগের উপর মাড়ি হইতে দুই গজদন্ত নিঃসৃত হয়, তাহা পৌনে
দুই বুরুল দীর্ঘ হইয়া থাকে| এই হরিণের ঊর্দ্ধপরিমাণ দুই পাদ
এবং দৈর্ঘ্য আড়াই পাদ| বিশ্বস্রষ্টা ইহার মাংস অতি সুখাদ্য অথচ
ইহাকে নিরস্ত্র করিয়াছেন, এই প্রযুক্ত ইহার শত্রু অধিক; এবং
তাহাদিগহইতে পলাইবার নিমিত্তে ইহার পাদচতুষ্টয় কেবলমাত্র অবলম্বন|
পরন্তু ঐ পাদ তাহার রক্ষণে অপটু নহে; তাহার সাহায্যে কস্তূরীমৃগ
যৎপরোনাস্তি বেগে ধাবমান হইতে পারে, এবং এক এক উল্লম্ফনে ৪০
হস্ত স্থান উৎক্রমণ করিতে পারে| এই অশ্রুতপূর্ব্ব উল্লম্ফনের
বাক্যে আশু বিশ্বাস হওয়া কঠিন, পরন্তু কর্ণেল মার্কহাম প্রভৃতি
অতি বিখ্যাত ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা প্রত্যক্ষ করিয়া ইহার সাক্ষ্য
দিয়াছেন| এই জাতীয় পুংহরিণের নাভিদেশে একটি কোষ আছে; তাহাতেই
কস্তূরী উৎপন্ন হয়| ঐ কোষ অপ্রশস্ত এবং তাহাতে এক তোলকের অধিক
কস্তূরী থাকিতে পারে না| অপর এই জাতীয় সকল হরিণেও এক পরিমাণে
কস্তূরী উৎপন্ন হয় না; কালভেদে তথা হরিণের বয়ঃক্রম এবং অবস্থাভেদে
কস্তূরীর পরিমাণের ভেদ হইয়া থাকে| সদ্যোবস্থায় এই কস্তূরী এতাদৃশ
উগ্রগন্ধ যে শিকারীরা মৃগ কাটিয়া কস্তূরী-কোষ লইবার সময় আপন
আপন নাসিকা স্থূলবস্ত্রপিন্ডে আচ্ছিত করে; তথাপি ঐ গন্ধ সহ্য
করিতে পারে না; কেহ কেহ তাহা দ্বারা বিহ্বল হইয়া পড়ে, এবং অনেকের
নাসিকা হইতে প্রচুর শোণিত নির্গত হয| ঐ শোণিত ক্ষরণে কাহার কাহার
প্রাণ বিয়োগ পর্য্যন্ত হইযাছে| কিয়ৎকাল শুষ্ক হইলে কস্তূরীর
তাদৃশ উগ্রতা থাকে না| শুষ্ক কস্তূরী ধুম্রাক্ত কৃষ্ণবর্ণ, এবং
ঈষৎ দানাবিশিষ্ট; ভেল হইলে ঐ দানার অনেক লাঘব হয়| ইহার আস্বাদ
তিক্ত, এবং উত্তপ্ত জলে ইহার ৯০ ভাগ পদার্থ গলিয়া যায়| সুরা-নির্য্যাসে
ইহার অর্দ্ধেক মাত্র গলে, অপর অর্দ্ধাংশ অগলিত থাকে| পরন্তু
ইথর নামক নির্য্যাস এবং অমিশ্রিত শিরকা তথা অণ্ডের কুসুমে ইহার
সমস্ত গলিয়া যায়|
বাণিজ্যার্থে কস্তূরী চীন, টঙ্কুইন, বঙ্গ এবং রুশিয়া দেশ হইতে
আনীত হয়| তন্মধ্যে চীনদেশীয় কস্তূরী সর্ব্বোৎকৃষ্ট, তদপেক্ষায়
টঙ্কুইন-দেশীয় পদার্থ নিকৃষ্ট| বঙ্গদেশীয় পদার্থ তদপেক্ষায় নিকৃষ্ট
এবং রুশীয় কস্তূরী সর্ব্বাপেক্ষা অধম| বৈদ্যক গ্রন্থকারেরা বঙ্গদেশীয়
কস্তূরীর তিন জাতি নিরূপিত করেন; কামরূপোদ্ভবা, নেপালজা, এবং
কাশ্মীরসম্ভূতা| তন্মধ্যে কামরূপোদ্ভবা শ্রেষ্ঠা, নেপালজা মধ্যমা
এবং কাশ্মীরজা অধমা|
সম্প্রতি অম্বরের তৈল এবং শোরার দ্রাবকে এক প্রকার কৃত্রিম কস্তূরী
বিলাতে প্রস্তুত হইতেছে, তাহা দৃশ্যে ও গন্ধে প্রকৃত কস্তূরী
অপেক্ষা কোন মতে ভিন্ন নহে| প্রকৃত কস্তূরী ঔষধার্থেই অধিক ব্যবহৃত
হইয়া থাকে, এবং আতর প্রস্তুত করণেও ইহার প্রচুর ব্যবহার আছে;
তদর্থে কেবল ইংলণ্ডে প্রতিবর্ষে পাঁচ ছয় সহস্র তোলক কস্তূরী
প্রেরিত হয়|
( বিঃ দ্রঃ : প্রবন্ধকার কস্তূরীর আরো কয়েকটি নাম জানিয়েছেন,
যথা - কস্তুরিকা, কস্তুরিকান্ডজ, মৃগনাভি, মৃগমদ, মৃগনাভিজ,
মৃগনাভিজা, মৃগান্ডজা, মৃগ, মৃগী, নাভি, মদনী, বেধমুখ্যা, মার্জারী,
সুভগা, বহুগন্ধদা, সহস্রবেধী, শ্যামা, কামান্ধা, মৃগাঙ্গজা,
কুরঙ্গনাভী, শ্যামলা, মোদিনী, অন্ডজা, লাক্ষী, নাড়ী, মদ, দর্প,
মদাহ্বা, মদার, গন্ধধূলী, গন্ধকেলিকা, যোজনগন্ধা, যোজনগন্ধিকা,
গন্ধশেখর, বাতামোদ, মার্গ, ললিতা )|
( ‘রহস্য সন্দর্ভ’
, মাঘ , সম্বৎ ১৯২০ [ জানুয়ারি, ১৮৬২ ] )।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।
Copyright
© 2014 Abasar.net. All rights reserved.
|
অবসর-এ প্রকাশিত
পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।
|