পুরনো
দিনের পত্রিকা ও বই থেকে নির্বাচিত প্রবন্ধ
(সূচী)
কৌতুক
কণা
( লেখকের নাম নেই)
[
‘বিবিধার্থ সঙ্গ্রহ’ একটি অতি উচ্চ শ্রেণীর পত্রিকা ছিল এতে কোন
সন্দেহ নেই কিন্তু পত্রিকায় প্রকাশিত রচনার সঙ্গে কোন লেখকের নাম
মুদ্রিত হত না| বর্তমান লেখাটি পত্রিকার প্রথম সংখ্যাতেই প্রকাশিত
হয়েছে| মূল বানানের কোন পরিবর্তন করা হয় নি| ] দীপক সেনগুপ্ত|
ভৌত বিচারণ
রাজদ্বারে
এক হস্তি দেখিয়া কোন এক ন্যায়বিশারদ বিস্ময়াপন্ন হইয়া তাঁহার সমভিব্যাহারী
বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করিলেন, "সখে, এ কি আশ্চর্য্য বস্তু"?
তাঁহার সমভিব্যাহারী বৃহৎকার কৃষ্ণবর্ণ জীব ও তাহার শ্বেত দন্ত
দেখিয়া কহিলেন "বন্ধো! এটা অন্ধকার, মূলা ভক্ষণ করিতেছে"|
প্রথম ব্যক্তি আপনার ন্যায়বুৎপত্তিপ্রসাদে হস্তির কর্ণদ্বয় দেখিয়া
অনায়াসে তর্ক করিলেক; "যদি তাহাই হইবে, তবে কুলা সঞ্চালন
কেন করিতেছে?" তৎসহচর স্বীয় মীমাংসায় দোষারোপ দেখিয়া কহিলেক,
"এ একটা মেঘ, এবং তাহাতে বকপঁক্তি উড়িতেছে"| ন্যায়বিশারদ
কহিলেন; "সখে, তাহাও নহে, কারণ মেঘের চারিটা স্তম্ভ নাই"|
সহবাসক্রমে সমভিব্যাহারী স্বীয় সখার ন্যায়বুৎপত্তির ঘ্রাণ পাইয়াছিল,
অতএব প্রমাণ প্রয়োগ পূর্ব্বক কহিল, "তবে এটা কোন বান্ধব,
কারণ শাস্ত্রে কহিয়াছে, 'রাজদ্বারে শ্মশানে চ যস্তিষ্ঠতি স বান্ধবঃ'|
প্রথম ব্যক্তি প্রখর-চতুরতার বলে হস্তি শুণ্ড দেখিয়া বিতণ্ডা করিল,
"যদি তাহাই হইবে, তবে লগুড় লাড়িবার প্রয়োজন কি"? "তবে
এটা কোন বস্তুর ছায়া"| সখা শিরশ্চালন পূর্ব্বক প্রত্যুত্তর
দিল, "উহুঁ, তাহাও নহে, যেহেতু ছায়ার গর্জ্জন সম্ভবে না"|
দ্বিতীয় ব্যক্তি ইহাতে বিশেষ বিবেচনা করিয়া মীমাংসা করিল, "যে
তবে এটা কিছুই নহে"| এবং এই মীমাংসায় উভয়ে সন্তুষ্ট হইয়া
স্বস্থানে প্রস্থান করিল|
পৈত্রিক
দৃষ্টান্তের আলোক|
জনেক
নগরবাসী এক নাবিককে জিজ্ঞাসা করিল; "তোমার পিতার কিরূপে মৃত্যু
হইয়াছিল"? নাবিক কহিল; "তিনি জল মগ্ন হইয়া প্রাণত্যাগ
করেন"| নগরবাসী জিজ্ঞাসিল; "তোমার পিতামহের কিরূপে কাল
হয়"| সে প্রত্যুত্তর দিল; "তিনি ও জল মগ্ন হন"|
নাগর পুনঃ প্রশ্ন করিল; "তোমার প্রপিতামহ কি প্রকারে পরলোক
প্রাপ্ত হন"? সে উত্তর দিল; "তিনি ও জলে ডুবিয়া মরেন"|
নাগর কহিল; "যাহার তিন পুরুষ জলে ডুবিয়া মরিয়াছে সে কি বিবেচনায়
পুনঃ সমুদ্র যাত্রা করে; আমি হইলে আর কদাপি সমুদ্রে গমন করিতাম
না"| ইহাতে নাবিক প্রশ্ন করিল; "তোমার বাপ কি রূপে মরেন"|
নাগর কহিল; "কেন? তিনি পীড়াগ্রস্ত হইয়া শয্যায় শয়ন করত পরলোক
প্রাপ্ত হন"| নাবিক জিজ্ঞাসিল; "তোমার ঠাকুর দাদা ও
তাঁহার বাপ কেমন করে মরেন"? সে সক্রোধে কহিল; "কেন?
আমার পিতামহ ও প্রপিতামহ আদি সকলেই ভদ্রলোকের ন্যায় শয্যায় শয়ন
করত স্বচ্ছন্দে স্বর্গপ্রাপ্ত হন"| নাবিক কহিল; "ভাই,
যাহার সাত পুরুষ শয্যায় মরিয়াছে সে কি ভরসায় ফের শেজে শোয়; আমি
হৈলে বিছানার কাছেও যাইতাম না"|
তবে আমি
ঘুমচছি
কেহ
আপন সখাকে প্রাতঃকালে নিদ্রিত দেখিয়া কহিলেন; "বন্ধো, তুমি
কি নিদ্রিত আছ"? শয্যাস্থ ব্যক্তি কহিলেন "কেন"?
সখা প্রার্থনা করিলেন; "আমার একটা টাকার প্রয়োজন হইয়াছে,
যদি তুমি জাগ্রৎ থাক তবে উঠিয়া তাহা আমায় কর্জ্জ দিলে ভাল হয়"|
সে কহিল; "তবে আমি ঘুমচছি"|
এক চোক ভাল
কি দুই চোক ভাল?
জনেক
একচক্ষুর্হীন আপন অবশিষ্ট নয়নের প্রশংসায় কহিতেছিল যে আমি ঐ নয়নদ্বারা
অনেক দ্বিনেত্রব্যক্তি হইতেও অধিক দেখিতে পাই| তৎসভাস্থ কোন দ্বিনেত্রবলগর্বিত
এতদবাক্যে অমর্ষান্বিত হইয়া কহিলেন, "যদি তুমি এই কথা সপ্রমাণ
করিতে পার তবে আমি তোমাকে শত মুদ্রা দিব"| অন্ধ ঐ পণে স্বীকৃত
হইয়া কহিলেক; "আমার মুখের উপর তুমি কি দেখিতেছ"| দ্বিনেত্রবলগর্বিত
ব্যঙ্গ্য করত কহিল; তোমার এক চক্ষু"| অন্ধ কহিলেক; "ভালই,
তবে আমি অধিক দেখিয়াছি, কারণ তোমার দুই নয়ন আমার দৃষ্টি গোচর হইয়াছে,
অতএব পণের একশত টাকা আমাকে দেও"|
এক হাজার
টাকার পা|
এক
দিবস কয়েক জন আহ্লাদানুরত নায়ক কোন খঞ্জকে তাহার বক্র পদের নিমিত্তে
উপহাস করাতে সে তাহার সরল পদ বাদিদিগের সম্মুখে বক্র ভাবে রাখিয়া
কহিলেক; "তোমরা কি মিছে ব্যঙ্গ্য করিতেছ, আমি সহস্র মুদ্রা
পণ রাখিয়া কহিতে পারি যে এই সভায় এ পদ হইতেও বক্র পদ আছে"|
সভাস্থ সকলে ঐ ব্যক্তির পদ ও বাক্যের ভঙ্গি প্রতি বিবেচনা না করিয়া
কহিল "যে আমরা এই পণ গ্রাহ্য করিলাম, এই সভায় ঐ পদ হইতেও
বক্র পদ যদ্যপি তুমি দেখাইতে পার তবে তোমার জিত"| খঞ্জ হাস্য
বদনে আপন ভগ্ন পদ বাড়াইয়া কহিলেন "তবে এই দেখ এক বাঁকা পা,
এবং তাহার দর্শনী হাজার টাকা দেও"|
( ‘বিবিধার্থ সঙ্গ্রহ’ মাসিক পত্রিকা, কার্ত্তিক ১৭৭৩
শকাব্দ )|
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।