প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

পুরনো দিনের পত্রিকা ও বই থেকে নির্বাচিত প্রবন্ধ (সূচী)

জেল-ফেরৎ

নারায়ণ ভট্টাচার্য্য

[ লেখক পরিচিতি : নারায়ণচন্দ্র ভট্টাচার্য ১৮৬৮ খ্রীষ্টাব্দে হুগলি জেলার খানাকুলস্থ কৃষ্ণনগরের পোলগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম পীতাম্বর ভট্টাচার্য্য। কাব্য, ব্যাকরণ, স্মৃতি ও বেদান্ত পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি সরকার থেকে তিনবার বৃত্তি লাভ করেন। 'স্বদেশী' মাসিক পত্রিকার (১৩১৩ - ১৩১৫) সম্পাদক ও পরিচালক ছিলেন। 'বিদ্যাভূষণ' উপাধি ও যোগেন্দ্র রিসার্চ পুরস্কারও লাভ করেছেন নারায়ণচন্দ্র। তত্‍‌কালীন বহু পত্রিকাতে তিনি রচনা প্রকাশ করেছেন। তার রচিত উপন্যাস : 'কুলপুরোহিত' ; 'পরাধীন' ; 'মতিভ্রম' ; 'পরাজয়' ; 'মানরক্ষা' ; 'ডিক্রিজারী' ; 'ভবঘুরে' ; 'বিয়েবাড়ি' ; 'নিষ্কর্মা' ; 'স্বামীর ঘর' ; 'গরীবের মেয়ে' ; 'বন্ধুর মেয়ে' ; 'অপরাধী' ; 'নিষ্পত্তি' ; 'নাস্তিক' ; 'প্রেমিকা' ; 'প্রবঞ্চক' ; 'সুরমা' ; 'গিনির মালা' ; 'ঘরজামাই' ; 'একঘরে' ; 'কালোবউ' ; 'রাঁধুনী বামুন' ; 'পূজা' ; 'বন্ধন মোচন' ; 'রাঙা কাপড়ের মূল্য' ; 'সঙ্গীহারা' ; 'স্নেহের জয়' ; 'বারবেলা' ; 'প্রায়শ্চিত্ত' 'মনের বোঝা' ; 'মেয়ের বাপ' ; 'বিধবা' ; 'হিসাব নিকাশ' ; 'পরের ছেলে' ; 'পতিতা' ; 'নিরাশ প্রণয়' ; 'পরাজয়' ; প্রতিদান' ; 'গঙ্গারাম' ; 'গ্রহের ফের' ; 'সতীন পো' ; 'পূজার আমোদ' ; 'অনুরাগ' ; 'অপবাদ' ; 'অভিমান' ; 'মায়ার অধিকার' ; 'ব্রহ্মশাপ' ; 'মণির বর' ; 'দাদা মহাশয়' ; 'জেল ফেরত্‍‌' ; 'ঠাকুরের জন্য' ; 'সুখের মিলন' ; 'বৈরাগী' ; 'ত্যাজ্যপুত্র' ; 'আকালের মা' ; 'উত্তরাধিকারী' ; 'নববোধন' ; 'দুর্বাসা ঠাকুর' ; 'গুরু মহাশয়' ; 'কথাকুঞ্জ' ; 'কণ্ঠিবদল' ; 'মাণিকের মা' ; 'হিন্দু স্ত্রী-ধনাধিকার'। তিনি জৈন পুরোহিত হেমচন্দ্রের 'অভিধান চিন্তামণি' বঙ্গানুবাদ সহ প্রকাশ করেছেন। ১৯২৭ খ্রীষ্টাব্দে নারায়ণচন্দ্রের মৃত্যু ঘটে। ] দীপক সেনগুপ্ত ।


[১]

       দুইবারের জেল-ফেরৎ চরণ মালিক লোক-সমাজ কর্ত্তৃক পরিত্যক্ত হইয়া যখন গ্রামের নিত্যানন্দ বাবাজীর আখড়ায় যাতায়াত করিতেছিল, এবং হরিনামের উপর নির্ভর করিয়া কলঙ্কিত জীবনটাকে সফল করিবার চেষ্টা করিতেছিল, তখন সহসা গরবী আসিয়া গোল বাধাইয়া দিল|
       চারি বৎসর আগে গরবীর জন্যই চরণ জেলে যাইতে কুণ্ঠিত হয় নাই| তিন বৎসর অজন্মা, দেশে হাহাকার উঠিয়াছিল| দুই দিন চরণের ঘরে হাঁড়ি চড়ে নাই, স্ত্রী গরবী ক্ষুধায় অবসন্ন হইয়া ভূমিশয্যা গ্রহণ করিয়াছিল, এক বছরের ছেলে সোনা এক ফোঁটা ফেনের জন্য কাঁদিয়া লুটোপুটি খাইতেছিল| আর, চরণ ক্ষুৎপিপাসাক্লান্ত অবসন্ন দেহকে কোনক্রমে টানিয়া লইয়া আধসের চাউলের জন্য মহাজনের দ্বারা মাথা কুটিতেছিল| মহাজনের কিন্তু দয়া হইল না; তিন তিন বৎসরের হিসাব টানিয়া চরণকে বুঝাইয়া দিলেন, এই তিন বৎসরে সে যে সাড়ে পাঁচ গণ্ডা টাকা দেনা করিয়াছে, তাহা সুদে আসলে পৌনে আট গণ্ডা টাকায় দাঁড়াইয়াছে| চরণের ভিটাটার দাম জোর কুড়ি টাকা হইতে পারে; বাকী পৌনে তিন গণ্ডা টাকা মহাজনের লোকসান| এইরূপ স্থলে মহাজন লোকসানের উপর আর লোকসান করিতে পারে না|
     একটা গভীর নিরাশা ও মর্ম্মদাহ লইয়া চরণ রিক্ত-হস্তে ফিরিয়া আসিল| রাত্রির অন্ধকারের সঙ্গে সঙ্গে তাহার বুকের ভিতর একটা ব্যর্থ ক্রোধের আগুন জ্বলিয়া উঠিতে লাগিল| সে আগুনে তাহার পাপপুণ্য বোধ, হিতাহিতজ্ঞান পুড়িয়া ছাই হইয়া গেল| তারপর গভীর নিশীথে পল্লী যখন নিস্তব্ধতার মধ্যে ডুবিয়া গেল, তখন শুধু চরণের ভগ্ন কুটীরমধ্য হইতে সোনার আকুল চীৎকার উত্থিত হইয়া রজনীর সে গভীর স্তব্ধতা ভঙ্গ করিতে লাগিল| গরবী আকুল-দৃষ্টিতে ক্ষুধার তীব্র তাড়না নীরবে স্বামীকে জানাইয়া দিতে লাগিল| চরণ আর পারিল না; সে পাগলের মত ছুটিয়া বাহির হইল|
       তারপর চরণ কিরূপে যে প্রাচীর উল্লঙ্ঘন করিয়া , নকুড় দত্তের বাড়ীতে ঢুকিয়া, কি উপায়ে ভাঁড়ার ঘরের চাবি ভাঙ্গিয়া চাউলের হাঁড়ী খুঁজিয়া বাহির করিল, এবং এক হাঁড়ী চাউল ও কয়েকটা ঘটীবাটি লইয়া প্রত্যাবৃত্ত হইল, তাহা সে নিজেই বুঝিতে পারিল না| যেন কোথা হইতে একটা অজ্ঞাত শক্তি আসিয়া তাহার ইন্দ্রিয়-সমূহকে মোহাচ্ছন্ন করিয়া এই নিতান্ত অনভ্যস্ত কার্য্যটা খুব সহজভাবেই সম্পন্ন করাইয়া দিল| কিন্তু যেমন নিঃশব্দে গিয়াছিল, তেমন নিঃশব্দে প্রত্যাবৃত্ত হইতে পারিল না, প্রাচীরে উঠিবার সময় অপহৃত ঘটীবাটিগুলা হইতে শব্দ উত্থিত হইল| সে শব্দে বাড়ীর লোক জাগিয়া উঠিল, এবং চীৎকার করিতে করিতে চোরের পশ্চাৎ ধাবমান হইল|
       চোর ধরা দিল না, কিন্তু তাহার বাড়ী পর্য্যন্ত লোকে ধাওয়া করিল| চরণ ঊর্দ্ধশ্বাসে ছুটিয়া ঘরে আসিল, এবং অপহৃত জিনিষগুলো ঘরের ভিতর ফেলিয়া পাকা বাঁশের লাঠি লইয়া বাহির হইল| লাঠীর বহর দেখিয়া অনুসরণকারীরা পলায়ন করিল|
       চরণ স্ত্রীকে তুলিয়া ভাত রাঁধাইল, এবং ছেলেকে ভাতের মাড় খাওয়াইয়া দুই দিনের পর স্ত্রী পুরুষ পেট ভরিয়া ভাত খাইল| যখন শেষ হইল, তখন পূর্ব্বদিক ফরসা হইয়া আসিয়াছে|
       কিন্তু প্রভাতে সূর্য্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে যখন পুলিশ আসিয়া চরণকে গ্রেপ্তার করিল, তখন কৃতকার্য্যের পরিণাম-চিন্তায় কাতর হইয়া পড়িল| তারপর তাহাকে চালান দিবার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ যখন অপহৃত চাউল ও ঘটীবাটিগুলা পর্য্যন্ত লইয়া চলিল, তখন চরণ পাগলের মত চীৎকার করিয়া দারোগাকে বলিল, "দোহাই হুজুর, যেগুলোর তরে আমি জেলে যাচ্চি, সেগুলো রেখে যাও, ও অভাগী তবু খেয়ে দশটা দিন বাঁচবে|"
       উত্তরে দারোগাবাবু এমন একটা অশ্রাব্য উত্তর দিলেন যে, তাহা শুনিয়া চরণের মনে হইল, হাতের হাতকড়ার আঘাতে দারোগার মাথাটা ফাটাইয়া দেয়, কি নিজের মাথায় মারিয়া নিজে মরে| কিন্তু সঙ্কল্প কার্য্যে পরিণত হইবার পূর্ব্বেই কনষ্টেবল রুলের গুঁতা মারিয়া তাহাকে টানিয়া লইয়া চলিল| যাইবার সময় সে গরবীকে একটুও আশ্বাস দিয়া যাইতে পারিল না|
       মাস দুই পরে সংবাদ আসিল, চুরি-অপরাধে চরণের দেড় বৎসর জেলের হুকুম হইয়াছে| শুনিয়া গরবী কাঁদিয়া উঠানের ধূলায় লুটোপুটি খাইতে লাগিল|
দেড় বৎসর পরে চরণ ঘরে ফিরিল| কিন্তু গরবী বা সোনা কাহাকেও দেখিতে পাইল না, শুধু ভগ্নপ্রায় কুটীরখানা স্তব্ধভাবে দাঁড়াইয়া ছিল| অনুসন্ধানে চরণ জানিতে পারিল, তাহার জেলে যাইবার মাস কয়েক পরে গরবী কেশেপুকুরের ছিদাম মাজীকে সাঙ্গা করিয়া তহার ঘর-ঘরকন্না করিতেছে| শুনিয়া চরণ অবসন্নভাবে উঠানের উপর বসিয়া পড়িল| সে জানিত না যে, তাহার জেলের সংবাদ-শ্রবণে গরবী একদিন ঠিক এই জায়গায়ই ধূলার উপর লুটাইয়া পড়িয়া আর্ত্ত চীৎকারে গগন বিদীর্ণ করিয়াছিল|
       পরদিন চরণ কেশেপুকুর অভিমুখে যাত্রা করিল, এবং ছিদাম মাজীর বাড়ীর সম্মুখে উপস্থিত হইয়া দেখিল, বাহিরে একটি বছর তিনেকের ছেলে খেলা করিতেছে| সোনাকে চিনিতে চরণের বিলম্ব হইল না; সে পাগলের মত ছুটিয়া গিয়া সোনাকে বুকের উপর তুলিয়া লইল| সোনা কিন্তু তাহাকে চিনিল না, সহসা একজন অপরিচিত কর্ত্তৃক অভ্যর্থিত হইয়া সে ভয়ে কাঁদিয়া উঠিল| ছেলের কান্না শুনিয়া গরবী বাহিরে আসিল| কিন্তু চরণকে দেখিয়া, লোকে সহসা সম্মুখে সাপ বাঘ দেখিলে যেমন আতঙ্কে শিহরিয়া ছুটিয়া পলায়, তেমনই ভাবে ছুটিয়া পলাইল| চরণ স্বীয়-গম্ভীর-কণ্ঠে ডাকিল, "গরবী, গরবী!"
       গরবী কিন্তু উত্তর দিল না, ফিরিয়াও চাহিল না| চরণ কিয়ৎক্ষণ অচল প্রস্তরের মত দাঁড়াইয়া রহিল, তারপরে আস্তে আস্তে সোনাকে বুক হইতে নামাইয়া দিয়া, যে পথে আসিয়ছিল, সেই পথে ফিরিয়া চলিল|
       ফিরিয়া আসিয়া চরণ কিন্তু আগে যে ভাবে জীবন কাটাইতেছিল, ঠিক সে ভাবে জীবন কাটাইতে পারিল না| একে তো তাহার সংসারটা উলট-পালট হইয়া গিয়াছিল, তাহার উপর আবার অপবাদগ্রস্ত জেল-ফেরৎ| চরণকে কেহই আর প্রীতির চক্ষে দেখিতে পারিল না| সকলেরই দৃষ্টি হইতে যেন ঘৃণা ও তিরস্কারের তীব্রতা আসিয়া শেলের মত তাহাকে বিদ্ধ করিতে লাগিল| চরণ মাথা নীচু করিয়া কোনরূপে দিন কাটাইতে লাগিল|
     একবার ক্ষুধার তাড়নায় যে কাজ করিয়াছে, স্ত্রী-পুত্রকে অনশনের হস্ত হইতে রক্ষা করিবার জন্য যে কলঙ্কের কালি গায়ে মাখিয়াছে, সে কালিমা এ জীবনে ধৌত হইবে না| কিন্তু হে অন্তর্য্যামী দেবতা, তুমি জান, স্নেহ-মমতার শাসন কি ভয়ঙ্কর! যাহাদের জন্য জীবন দিতে পারা যায়, তাহাদের জন্য কলঙ্কের ভার মাথায় লওয়া, সে কত সহজ| কিন্তু দেড় বৎসরের কঠোর প্রায়শ্চিত্তেও কি সে পাপের প্রায়শ্চিত্ত হইল না?
      জীবনটা একটা ভুল করিলেই যে সমগ্র জীবনটা ব্যর্থ হইয়া যাইবে, এমন কোন কথা নাই| চরণ অতীত জীবন বিস্মৃত হইয়া নূতন জীবন-গঠনে প্রবৃত্ত হইল| কিন্তু সমাজ তাহা হইতে দিল না, প্রতিপদে খোঁচা দিয়া তাহার বর্ত্তমানটাকে অতীতের ভিতর ঠেলিয়া দিতে লাগিল| চৌকীদার আসিয়া রাত্রিতে জাগাইত, থানার এলাকার মধ্যে চুরী হইলেই পুলিশ আসিয়া চরণের ভাঙ্গা কুঁড়ের ভিতর চোরাই মালের সন্ধান করিত| এমনই সন্ধান করিতে করিতে পুলিশ আবার একদিন তাহাকে টানিয়া লইয়া গেল| হরিশচকের বলাই নন্দীর বাড়ীর চুরীর অপরাধে মাজিষ্ট্রেট তাহাকে এক বৎসরের জন্য জেলে পাঠাইয়া দিলেন|
     এবার জেল হইতে ফিরিয়া চরণ আর গ্রামের ভিতর বাস করিতে পারিল না; গ্রামপ্রান্তে মাঠের ধারে-যেখানে বিস্তৃত প্রান্তরটা আপনার বিশাল শূন্যতা লইয়া গ্রামখানাকে জড়াইয়া ধরিবার চেষ্টা করিতেছিল, সেইখানে ক্ষুদ্র কুটীর বাঁধিয়া বাস করিতে লাগিল|
     কিন্তু মানুষ সমাজের বাহিরে একা থাকিতে পারে না| লোকসমাজ কর্ত্তৃক পরিত্যক্ত হইয়া চরণ বন্ধনবিহীন বৈষ্ণব সমাজের দ্বারস্থ হইল, এবং নিত্যানন্দ বাবাজীর আড্ডায় যাতায়াত করিয়া বাবাজীর নিকট কাঁদাকাটা করিতে লাগিল| তাহার অভিপ্রায় শুনিয়া বাবাজী রাগিয়া বলিলেন, "মর্ বেটা, একে জাতে চাঁড়াল, তার উপর জেল-ফেরতা, আমি তোকে মন্ত্র দেব?
     চরণ কাঁদিয়া বলিল, "মন্তর না দাও, আমার উদ্ধারের উপায় ব'লে দাও বাবাজি|"
     বাবাজী বলিলেন, "উপায় আর কি, নিরুপায়ের উপায় হরি, হরিকে ডাক্|"
বাবাজীর উপদেশ শিরোধার্য্য করিয়া চরণ হরিনামে জপে প্রবৃত্ত হইল, এবং আপনার হৃদয়ের সকল জ্বালা-যন্ত্রণা হরির চরণে অর্পণ করিয়া মনটাকে স্থির করিবার চেষ্টা করিতে লাগিল| কিন্তু তাহার পূর্ব্বেই গরবী ছেলের হাত ধরিয়া তাহার কুটীরদ্বারে আসিয়া আশ্রয় ভিক্ষা করিল|

[২]

       "আমার কি হবে সোনার বাপ?"
চরণ অধোমুখে নিরুত্তর| গরবী পুনরায় জিজ্ঞাসা করিল, "আমার যে আর দাঁড়াবার ঠাঁই নাই?"
       মুখ তুলিয়া চরণ বলিল, "আমার ঘরে থাক্বি?"
       গরবী বলিল, "যদি তুমি রাখ|"
       চরণ বসিয়া ভাবিতে লাগিল| তাহার মুখের উপর সকাতর দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া গরবী বলিল, "মনে কর, তোমার ছেলেটাও তো আছে| আমার যদি নেহাৎ-"
       বাধা দিয়া চরণ বলিল, "তা হ'লেও দোষ-ঘাট যা কিছু আমিই করেছি, ছেলেটার কোন দোষ নাই|"
       বিষাদগম্ভীরস্বরে চরণ বলিল, "দোষ তোরও নাই গরবী, দোষ যদি কিছু থাকে, সে আমার কপালের|"
       গরবী নীরবে বসিয়া মাটীতে আঙ্গুল ঘষিতে লাগিল| চরণ বলিল, "তোর কিন্তু ছিদামের ঘর ছেড়ে আসা ঠিক হয় নি|"
       মুখ তুলিয়া ঈষৎ রুক্ষকণ্ঠে গরবী বলিল, "প'ড়ে প'ড়ে তার মার খাব?"
       "ঘর কত্তে গেলে অমন হয়ে থাকে|"
       "কিন্তু সেখানে আমার কিসের ঘর?"
       "তবে গিয়েছিলি কেন?"
       "পেটের জ্বালায়|"
       "পেটের জ্বালা কি এত বড়?"
       "যার জ্বালায় চুরী পর্য্যন্ত করা যায়, সেটা খুব ছোট কি?"
       এই কঠোর সত্য উত্তর শুনিয়া চরণ ভ্রূকুটী করিল| গরবী ঈষৎ রাগতভাবে বলিল, "তা আমি যা করেছি, করেছি, কিন্তু ছেলে তো তোমার|" মৃদু হাসিয়া চরণ বলিল, "এ সংসারে কে কার গরবী? একমাত্র হরিনামই সার|" পরিহাসের স্বরে গরবী বলিল, "জেলে গেলে দেখ্ছি মানুষ বৈরাগী হয়|"
       চরণ একটা দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিল| গরবী ছেলের হাত ধরিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল| চরণ জিজ্ঞাসা করিল, "কোথায় যাস?"
       অভিমানক্ষুব্ধকণ্ঠে গরবী বলিল, "চুলোয়|"
       গরবী চলিল, চরণ ডাকিল, "ফিরে আয় গরবী!"
       গরবী ফিরিয়া দাঁড়াইল, এবং চরণের মুখের উপর তীব্র কটাক্ষনিক্ষেপ করিয়া বলিল, "কেন?"
       চরণ বলিল, "এইখানেই থাক্|"
       তীব্রস্বরে গরবী বলিল, "তাতে যদি তোর জপতপের ব্যাঘাত হয়?"
       চরণ চুপ করিয়া রহিল| গরবী ফিরিয়া চলিল| যখন সে কুটীরের সীমানা ছাড়াইয়া মাঠে নামিবার উপক্রম করিতেছে, তখন সহসা চরণ ছুটিয়া আসিয়া তাহার সম্মুখে দাঁড়াইল এবং উৎসুককণ্ঠে বলিল, "যা হয়, হবে গরবী, তুই ফিরে আয়|"
       গরবী কিন্তু ফিরিয়া চাহিল না; সে চরণের মুখের উপর ক্রুদ্ধ কটাক্ষ নিক্ষেপ করিয়া পাশ কাটাইয়া চলিয়া গেল| চরণ হতবুদ্ধির ন্যায় তাহার দিকে চাহিয়া দাঁড়াইয়া রহিল| অদূরে ক্ষেতে কাজ করিতে করিতে জনৈক কৃষক গাহিতেছিল; -
"মোন তোমারে বারে বারে আর কত বুঝাব|
       বুঝেও তো বুঝো না তুমি এ কি অসম্ভবো|"
       চরণ একটা দীর্ঘ-নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া কুটীরে ফিরিয়া আসিল|
       ফিরিয়া আসিল বটে, কিন্তু চরণ সে দিন কিছুতেই মন দিতে পারিল না| নামগান করিতে গেল, কিন্তু মুখ দিয়া নাম বাহির হইল না| সন্ধ্যা হইল, কুটিরে আলো জ্বলিল না| অন্ধকার মাঠের উপর করিয়া বসিয়া রহিল| ক্রমে গ্রাম, প্রান্তর সব স্তব্ধ হইয়া আসিল, অন্ধকার মাঠের উপর দিয়া নৈশবায়ু শন্ শন্ শব্দে বহিয়া যাইতে লাগিল| চরণ বসিয়া শুধু শুনিতে লাগিল, যেন প্রান্তরের অপর পর হইতে গরবী আকুলকণ্ঠে চীৎকার করিয়া বলিতেছে "আমার যে আর দাঁড়াইবার ঠাঁই নাই|" খানিক পরে চরণ কুটীরে ঢুকিয়া শুইয়া পড়িল| সে দিন আর তাহার খাওয়া হইল না|
       পরদিন সকালে উঠিয়াই চরণ কেশেপুকুরে উপস্থিত হইল| কিন্তু সেখানে গরবী নাই সোনাও নাই| চরণ বিষণ্ণচিত্তে ফিরিয়া আসিল|
       তিন দিন এ গ্রামে সে গ্রামে অনুসন্ধান করিয়া চরণ যখন গরবীর কোন উদ্দেশ পাইল না, তখন সে প্রত্যাবৃত্ত হইয়া পুনরায় নিত্যানন্দ বাবাজীর আখড়ায় যাতায়াত করিতে লাগিল|

[৩]

     কালে সবই সহিয়া যায়| চরণেরও সহিয়া গেল| বছরখানেকের চেষ্টায় সে গরবীকে ভুলিল, সোনাকে ভুলিল; শুধু প্রাণের ভিতর হরিনামটি জাগাইয়া রাখিল| আর একটা কথা জাগিয়া রহিল, সেটা জেলের কথা| চরণ ভুলিতে চেষ্টা করিলেও পুলিশে তাহাকে সেটা ভুলিতে দিল না| মাঝে মাঝে খানাতল্লাসী করিতে অসিয়া, তাহাকে মারিয়া, ঘরের জিনিষপত্র তছনচ্ করিয়া তাহাকে শুধু উত্যক্ত করিল না, সে যে জেলফেরৎ, এ কথাটা স্পষ্টভাবে তাহার মনের ভিতর জাগাইয়া রাখিল| সে স্মৃতির দংশনে চরণ যখন আকুল হইয়া পড়িত, তখন সে নির্জ্জন কুটীরদ্বারে বসিয়া আপন মনে গাহিত-
               "শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু দয়া কর মোরে,
               তোমা বিনে কে দয়ালু জগৎসংসারে|
               পতিতপাবন হেতু তব অবতার,
               মো সম পতিত প্রভু না পাইবে আর|
               হা হা প্রভু নিত্যানন্দ প্রেমানন্দ-সুখী|
               কৃপাবলোকন কর আমি বড় দুঃখী|"
       আখড়ায় যাতায়াত করিয়া চরণ কতকগুলি পদ শিখিয়াছিল| মনটা নিতান্ত আকুল হইলে সেই পদ গাহিয়া অশান্ত চিত্তকে শান্ত করিত| লোকে তাহার সে প্রার্থনা শুনিয়া 'বক ধার্মিক' বলিয়া উপহাস করিত, এবং তাহার এই ভণ্ডামীর অন্তরালে যে কতকগুলা দুষ্কর্ম্মের তীব্র বাসনা লুক্কায়িত রহিয়াছে, অন্ধকারে ইঙ্গিতে এমন কথাও প্রকাশ করিতে ছাড়িত না| সে কথাগুলা বুকে শেলের মত বিঁধিলেও চরণ ইহা হইতে অব্যাহতিলাভের কোন উপায়ই দেখিতে পাইত না; শুধু অন্তর্যামী দেবতার চরণে আপনার নিদারুণ ব্যাথা জানাইয়া চুপ করিয়া থাকিত|
       এইরূপ যখন কতক যন্ত্রণায়, কতক শান্তিতে দিন কাটাইতেছিল, তখন বাবাজী শিষ্যবর্গ সমভিব্যাহারে বৃন্দাবনযাত্রার সঙ্কল্প করিলেন| শুনিয়া চরণও তাঁহার অনুগামী হইতে ইচ্ছুক হইল| বাবাজীর ইহাতে আপত্তি ছিল না| গ্রামের অনেক লোকই যাইবে, তাহার সহিত চরণ গেলে ক্ষতি কি? চরণের আনন্দের সীমা নাই| সে ঔৎসুক্য সহকারে গাহিতে লাগিল-
                 "হরি হরি কবে হব বৃন্দাবনবাসী|
                 নিরখিব নয়নে যুগল রূপরাশি||"
       লোকে শুনিয়া খুব একচোট হাসিয়া লইল| তার পর চরণকে দেখিলেই তাহারা জিজ্ঞাসা করিত, "কি হে চরণ, এখানে আর সুবিধা হলো না না কি?"
       চরণ সবিনয়ে উত্তর করিত, "মহাপাপী আমি, উদ্ধারের উপায় করা তো চাই|"
       গোপাল চক্রবর্ত্তীর বৈঠকখানায় কথাটা উঠিলে বুড়া চক্রবর্ত্তী ঘাড় নাড়িয়া মন্তব্য প্রকাশ করিলেন,-"ওহে, আমরা বুড়ো হয়ে মর্তে যাচ্চি, আমাদের উদ্ধারের ভাবনা হ'লো না, আর যত ভাবনা হ'লো ঐ যমের মত পালোয়ান বেটা চাঁড়ালের| ওর উদ্দেশ্যটা কি জান, বেটা কোথাও দাঁও মার্বার চেষ্টায় আছে, আর সাধুর দলে ঢুকে গেলে পুলিশেরও সন্দেহ হবে না| থাম না, বেটার বৃন্দাবন যাওয়া বের ক'রে দিচ্চি|
       বাস্তবিক গ্রামে এত বাহ্মণ, কায়স্থ, ভাল ভাল লোক থাকিতে এক বেটা জেল-ফেরৎ চাঁড়াল বৃন্দাবনে যাইবে, ইহা অনেকেরই নিকট নিতান্ত বিসদৃশ বোধ হইয়াছিল|

[৪]

        যাত্রার দিন যতই নিকটবর্ত্তী হইতে লাগিল, চরণের ততই উৎসাহ বাড়িতে লাগিল| একবৎসরে খাইয়া পরিয়া সে বাইশ টাকা সংগ্রহ করিয়াছিল| একদিন সে বসিয়া টাকাগুলি গুণিতেছিল, আর গরবীর কথা মনে করিয়া দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিতেছিল, এমন সময়ে গোপাল চক্রবর্ত্তী আসিয়া ডাকিলেন, "চরণ ঘরে আছিস্?"
চরণ তাড়াতাড়ি বাহিরে আসিয়া উত্তর দিল, "বাবাঠাকুর যে?"
চক্রবর্তী বলিলেন, "আজ আমার মজুর দিতে পার্বি?"
       চরণ ঘাড় নাড়িয়া বলিল, "আজ তো হবে না বাবাঠকুর, আজ যে রায়েদের ধান কাটতে যাচ্চি|"
       চক্রবর্ত্তী ঈষৎ চিন্তিতভাবে বলিলেন, "তাই তো|"
       চরণ বলিল, "কাল হলে চলবে না, বাবাঠাকুর?"
       একটু ভাবিয়া চক্রবর্ত্তী বলিলেন, "কাজেই| তুই আমার কাছে একটা মজুরের দাম পাবি| নোট ভাঙ্গাতে পারি না; তোর টাকা আছে?"
       দরজার সাম্নে ঘরের ভিতর টাকাগুলা তখনও চক্চক্ করিতেছিল, এবং চক্রবর্ত্তীর তীক্ষ্ণদৃষ্টিটা তাহার উপর নিপতিত হইয়াছিল| চরণের নগদ টাকা ছিল, বলিল, "তা পারি বাবাঠাকুর|"
       "তবে দে তো বাবা, বাঁচলাম, বাজারে ছুট্তে হ'লো না|"
       বলিয়া চক্রবর্ত্তী ছোট হাতকাটা জামার বুকের পকেটের ভিতর হইতে একখানা দশ টাকার নোট বাহির করিয়া চরণের হাতে দিলেন এবং চরণ টাকা-দশটি আনিয়া দিলে তাহা বাজাইয়া লইয়া পকেটে রাখিলেন| তারপর চরণের মুখের দিকে চাহিয়া বলিলেন, "খুচরা তো নাই; তোর পাওনাটা-"
       চরণ বলিল, "তা দেবেন এখন|"
       চক্রবর্ত্তী প্রস্থানোদ্যত হইয়া ফিরিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, "হারে চরণ, তুই নাকি বৃন্দাবনে যাচ্চিস?"
       চরণ মৃদু হাসিয়া হাতে হাত ঘষিতে ঘষিতে উত্তর করিল, "সে কথা পাপ মুখে কেমন করে বলতে পারি বাবাঠাকুর|"
       চক্রবর্ত্তী গম্ভীরভাবে মস্তক-সঞ্চালন করিয়া বলিলেন, "তা হলে যাচ্চিস্?"
চরণ বলিল, "তিনি যদি নিয়ে যান|"
       চক্রবর্ত্তী আর কিছু না বলিয়া প্রস্থান করিলেন| চরণ ঘরে ঢুকিয়া টাকা ও নোট নেকড়ায় বাঁধিয়া চাউলের হাঁড়ীতে রাখিল|

[৫]

         ইহার দুই দিন পরে একদিন চক্রবর্ত্তী পথে চরণকে দেখিয়া আক্ষেপ সহকারে বলিলেন, "হাঁ রে বাবা চরণ, সে দিন সন্ধ্যার পর কেশেপুকুর হতে ফিরবার সময় তোর ঘরের সামনে বললে হয়, এক বেটা আমার কুড়িটা টাকা কেড়ে নিলে| তোকে এত চেঁচিয়ে ডাক্লাম, একটা সাড়াও দিলি না বাবা!"
       বিস্ময়ের সহিত চরণ বলিল, "কৈ বাবাঠাকুর, আমি কিছু শুনতে পাইনি|"
অনুযোগের সুরে চক্রবর্ত্তী বলিলেন, "আর বাবা, কাজের সময় শুনতে পাবি কেন? হরি হে মধুসূদন, তোমারই ইচ্ছা|"
       বলিয়া তিনি চরণের মুখের উপর কুটিল-কটাক্ষ নিক্ষেপপূর্ব্বক চলিয়া গেলেন| চরণ বিস্মিতভাবে ঘরে ফিরিল|
       পরদিন প্রভাতে পুলিশ আসিয়া যখন চরণকে রাহাজানীর অপরাধে গ্রেপ্তার করিল, তখন চরণ তাহাতে একটুও বিস্মিত হইল না| কেন না, ইহা তাহার নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হইয়া দঁড়াইয়াছে| পুলিশের সহিত গ্রামের কয়েকজন প্রবীণ ভদ্রলোক ছিলেন, চক্রবর্ত্তী তাঁহাদের অন্যতম| খানাতল্লাসীর পূর্ব্বে চক্রবর্ত্তী দারোগাকে বলিলেন, "দেখুন দারোগাবাবু, দশটি টাকা, আর একটি একখানি দশ টাকার নোট| নোটের পীঠে আমি নিজের হাতে শ্রীশ্রীদুর্গা লিখেছিলাম|"
       সামান্য অনুসন্ধানেই চাউলের হাঁড়ীর ভিতর হইতে শ্রীশ্রীদুর্গা স্বাক্ষরিত নোট এবং টাকা বাহির হইল| তবে দুইটা টাকা বেশী মাত্র| দারোগা বলিলেন, "এ কোন চুরীর বামাল নিশ্চয়|"
     বামাল বাহির হইতে দেখিয়া চক্রবর্ত্তী যেন অতিমাত্র বিস্মিত হইলেন, এমনই ভাব প্রকাশ করিয়া বলিলেন, "অ্যাঁ, চরণের এই কাজ! হাঁ রে বাবা চরণ, আমি বুড়ো বামুন-"
     চরণ উত্তরে চক্রবর্ত্তীর মুখের উপর স্নিগ্ধদৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া মৃদু হাস্য করিল মাত্র|
     দারোগা বামাল সহ আসামীকে চালান দিলেন| রাস্তা দিয়া যাইবার সময় গ্রামের লোকে কত টিটকারী দিতে লাগিল| গোবিন্দ মুখুজ্যে বলিলেন, "কোথায় যাচ্চিস্ চরণ, বৃন্দাবন নাকি?"
     চরণ হতকড়ি-শুদ্ধ হাত কপালে ছোঁয়াইয়া বলিল, "পেন্নাম, তিনি যেখানে নিয়ে যাচ্ছেন, সেইখানেই যাচ্চি দা'ঠাকুর|"
     চক্রবর্ত্তী বলিলেন, "উঃ, বেটা কি বদমায়েস! চোর, ডাকাত, বেটার ফাঁসী হওয়া উচিত| ইঃ, বেটা আবার হরিনাম করে| চোরের আবার হরিনাম!"
বলিয়া চক্রবর্ত্তী লাঠী ঠক্-ঠক্ করিতে স্বগৃহাভিমুখে প্রস্থান করিলেন| আখড়ার সম্মুখ দিয়া যাইবার সময় শুনিলেন, বাবার জনৈক শিষ্য পাষণ্ডদলনের বঙ্গানুবাদ পাঠ করিতেছে-
               "মুচি হয়ে শুচি হয় যদি হরি ভজে|
               বাহ্মণ হয়ে চণ্ডাল হয় যদি হরি ত্যজে||"
      দিন দুই পরে চক্রবর্ত্তী একদিন সন্ধ্যার পূর্ব্বে মাঠ হইতে ফিরিবার সময় দেখিলেন, একজন মেয়েমানুষ একটা ছেলের হাত ধরিয়া চরণের কুটীরসম্মুখে দাঁড়াইয়া ডাকিতেছে-"সোনার বাপ, সোনার বাপ!"
     চক্রবর্ত্তী বলিয়া উঠিলেন, "বৃন্দাবন গেছে গো, শ্রীবৃন্দাবনে গেছে| অধম পাতকী আমরা এই আমড়াগঞ্জে প'ড়ে আছি|"
     তাঁহার সঙ্গের কৃষকেরা হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল| গরবী ধূলার উপর বসিয়া পড়িল|

( 'নারায়ণ' পত্রিকা, অগ্রহায়ণ, ১৩২৫ )|

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।