প্রথম
পাতা
শহরের তথ্য
বিনোদন
খবর
আইন/প্রশাসন
বিজ্ঞান/প্রযুক্তি
শিল্প/সাহিত্য
সমাজ/সংস্কৃতি
স্বাস্থ্য
নারী
পরিবেশ
অবসর
|
পুরনো
দিনের পত্রিকা ও বই থেকে নির্বাচিত প্রবন্ধ
(সূচী)
প্রিন্স
প্রমথ
চৌধুরী
[
লেখক পরিচিতি : ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দের ৭ই অগাস্ট যশোহরে (অধুনা
বাংলাদেশ) জন্ম । বাবা দুর্গাদাস চৌধুরী ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট;
মা মগ্নময়ী । পৈতৃক নিবাস পাবনা জেলার হরিপুর গ্রাম । প্রমথ
কৃষ্ণনগর কলেজে পড়াশোনা করেছেন; প্রবেশিকা (এন্ট্রান্স)
পাশ করেছেন কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে এবং এফ.এ. সেন্ট জেভিয়ার্স
থেকে । ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে দর্শন শাস্ত্র নিয়ে প্রথম শ্রেণীতে
বি.এ এবং ১৮৯০-এ ইংরাজীতে এম.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ।
১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে বিলেতে আইন পড়তে যান এবং ১৮৯৭-এ বার.এট.ল.
হয়ে ব্যারিস্টার হিসাবে হাইকোর্টে যোগদান করেন । ব্যারিস্টারি
বেশী দিন করেন নি; কিছুদিন আইন কলেজে অধ্যাপনাও করেছেন ।
কিছুকাল ঠাকুর এস্টেটে ও দক্ষিণেশ্বর দেবোত্তর এস্টেটের
ম্যানেজারও ছিলেন । ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের
কন্যা ইন্দিরা দেবীর সঙ্গে বিয়ে হয় । ইন্দিরা ও প্রমথর বিয়ে
প্রসঙ্গে একটি কৌতূহলোদ্দীপক ঘটনার উল্লেখ করা যেতে পারে
। সম্ভবতঃ সেটা ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দ । সরস্বতী পূজার দিন রবীন্দ্রনাথ
তার ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরাকে নিয়ে এলবার্ট হল-এ এসেছেন
বক্তৃতা দিতে । প্রেসিডেন্সি কলেজের মাঠে প্রমথর সঙ্গে দেখা
বন্ধু নারায়ণ চন্দ্র শীলের । নারায়ণের ইচ্ছা প্রমথকে নিয়ে
রবীন্দ্রনাথের বক্তৃতা শুনতে যায়; কিন্তু প্রমথর ইচ্ছা নেই
। নারায়ণ তাকে বলে, "বক্তৃতা না শোন, রবীন্দ্রনাথের
ভ্রাতুষ্পুত্রীকে দেখে আসি চল, শুনেছি সে অসামান্য সুন্দরী
।" প্রমথ রেগে গিয়ে একটি গাছের তলায় শুয়ে পড়ে বলে,
"পরের বাড়ীর খুকী দেখার আমার কোন ইচ্ছা নেই ।"
ঘটনাচক্রে সেই ইন্দিরার সঙ্গেই বিয়ে হয়েছিল প্রমথর । দু'জনেই
খুব ভাল ফরাসী ভাষা জানতেন । প্রাক-বিবাহোত্তর কালে পরিচয়ের
সূত্র ধরে চিঠিপত্রে সম্বোধন করে লেখা হত Mon ami ।
সাহিত্য ও সঙ্গীতের প্রতি প্রমথর বিশেষ অনুরাগ ছিল । ১৯১৪
খ্রিস্টাব্দে তিনি ঐসবুজপত্র' নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ
করেন এবং দীর্ঘদিন পত্রিকাটির সম্পাদক হিসাবে কাজ করেছেন
। পরে ত্রৈমাসিক 'বিশ্বভারতী পত্রিকা' ও মাসিক 'অলকা' পত্রিকাও
সম্পাদনা করেছেন । তার বিশেষ অবদান হল বাংলা ভাষায় চলিত
ভাষার ব্যবহার প্রচলন করা । মূলতঃ প্রবন্ধকার হিসাবে খ্যাত
হলেও প্রমথ গল্প এবং কবিতাও রচনা করেছেন । তার রচিত গ্রন্থ
: 'তেল নুন লকড়ি' ( প্রবন্ধ, ১৯০৬ ) ; 'সনেট পঞ্চাশৎ' (
কবিতা, ১৯১৩ ) ; 'চার-ইয়ারি কথা' ( গল্প, ১৯১৬ ) ; 'বীরবলের
হালখাতা' ( প্রবন্ধ, ১৯১৭ ) ; 'নানা কথা' ( প্রবন্ধ, ১৯১৯
) ; 'পদচারণ' ( কবিতা, ১৯১৯ ) ; 'আহুতি' ( গল্প, ১৯১৯ )
; 'আমাদের শিক্ষা' ( প্রবন্ধ, ১৯২০ ) ; 'দু-ইয়ারকি' ( প্রবন্ধ,
১৯২০ ) ; 'বীরবলের টিপ্পনী' ( প্রবন্ধ, ১৯২১ ) ; 'রায়তের
কথা' ( প্রবন্ধ, ১৯২৬ ) ; ঐপ্রমথ চৌধুরীর গ্রন্থাবলী' (
১৯৩০ ) ; 'নানাচর্চা' ( প্রবন্ধ, ১৯৩২ ) ; 'নীল লোহিত' (
গল্প, ১৯৩২ ) ; 'নীল লোহিতের আদি প্রেম' ( গল্প, ১৯৩৪ )
; 'ঘরে বাইরে' ( প্রবন্ধ, ১৯৩৪ ) ; 'ঘোষালের ত্রিকথা' (
গল্প, ১৯৩৭ ) ; 'অশুকথা সপ্তক' ( গল্প, ১৯৩৯ ) ; 'প্রাচীন
হিন্দুস্থান' ( প্রবন্ধ, ১৯৩৯ ) ; 'গল্প সংগ্রহ' ( ১৯৪১
) ; 'আত্মকথা' ( ১৯৪৬ ) ; The Story of Bengalee Literature'
(১৯১৭ ) ; 'Tales of Four Friends' ( ইন্দিরা দেবী সহ, ১৯৪৪
) ইত্যাদি । স্যাটায়ার বা বিদ্রূপাত্মক প্রবন্ধ রচনাতেও
তিনি যথেষ্ট কৃতিত্ব দেখিয়েছেন । 'বীরবল' ছদ্মনামেও তিনি
লিখতেন । ১৯৩৮-৩৮-এ তিনি 'বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে'র সহ-সভাপতিও
ছিলেন । ১৯৪১-এ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'জগত্তারিণী
পদক' লাভ করেন । এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমন্ত্রিত হয়ে ১৯৪৪-এ
তিনি বাংলা সাহিত্য সম্বন্ধে 'গিরিশ ঘোষ' বক্তৃতা প্রদান
করেন । ১৯৪৬ খ্রীস্টাব্দের ২রা সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়
। দীপক সেনগুপ্ত
]
আপনি আমাকে আপনার কাগজের
জন্য একটি ছোট গল্প লিখতে অনুরোধ করেছেন, কিন্তু কি করে আপনার
অনুরোধ রক্ষা করব তা এতদিন ভেবে পাচ্ছিলুম না। আজ ক'দিন ধরে
বহু চেষ্টা করেও মাথা থেকে ছোট কি বড় কোন রকম গল্প বার করতে
পারলুম না। তারপর হঠাৎ মনে পড়ে গেল যে, পৃথিবীতে নানারকম ছোট
খাট ঘটনা ত নিত্যই ঘটে। আর সেই সব ঘটনার ভিতরও ত যথেষ্ট বৈচিত্র
আছে। সুতরাং আমার চোখের সুমুকে যা সব ঘটেছে, তারি মধ্যে একটির
বর্ণনা করলেই সম্ভবত সেটি গল্পের মত শোনাবে।
আমি যখন বিলিতে ছিলুম,
তখন সে দেশে একটি হিন্দুস্থানী যুবকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়।
সেই পরিচয় দু'দিনেই বন্ধুত্বে পরিণত হয়। আমরা দুজনেই ভারতবর্ষের
লোক, দুজনেই বিলাত-প্রবাসী, দুজনেরই বয়েস এক; এই সূত্রেই আমাদের
পরস্পরের সখ্য জন্মায়। কেননা একটি বিষয় ছাড়া অপর কোনও বিষয়ে
আমাদের উভয়ের মধ্যে কোনরূপ সাদৃশ্য ছিল না, না বিদ্যায় না
বুদ্ধিতে না চরিত্রে-না শিক্ষায়, না চেহারায় না অবস্থায়।-
বন্ধুটি ছিলেন
পশ্চিমের কোনও রাজবংশের সন্তান। তাঁর উপাধি ছিল Prince-কিন্তু
তাঁর আর্থিক অবস্থা তাঁর পদের অনুরূপ না হওয়ায় তিনি বিলেতে
তাঁর নামের পূর্ব্বে ঐ Prince উপসর্গটি ব্যবহার করতেন না।
কিন্তু অপরের কাছে তাঁর বংশ মর্য্যাদা গোপন করলেও তিনি নিজের
কাছে সে সত্যটি এক মুহূর্ত্তও গোপন করতে পারতেন না। বরং
পৈতৃক সম্পত্তির অভাবে পৈতৃক তাঁর নামটিই তাঁর কাছে, পৃথিবীর
মধ্যে সবচেয়ে বড় জিনিস হয়ে উঠেছিল। তাঁর চাল চলন কথা-বার্ত্তা
আশা আকাঙ্ক্ষা সবই খুব উঁচু পর্দ্দায় বাঁধা ছিল। তাঁর ব্যবহারের
একটি নমুনা দিচ্ছি-তার থেকেই আপনারা তাঁর সমগ্র চরিত্র বুঝতে
পার্বেন।-
তিনি পোষাকে দেদার টাকা
খরচ করতেন এবং এ বিষয়ে অতিব্যয় করবার জন্য তাঁকে অপরাপর বিষয়ে
অতিশয় মিতব্যয়ী হতে হত এমন কি তাঁর আহার একরকম উপবাসের সামিলই
ছিল। ইংলণ্ডের রাজপুত্র যে দোকানে পোষাক তৈরী করান তিনিও সেই
দোকানে পোষাক তৈরী করাতেন, সমান ব্যয় করে, কিন্তু তিনি জীবন
ধারণ করতেন রুটি মাখন ও কলা খেয়ে!-
বিলেতে আমরা পাঁচজন
দেশী ছোকরা একত্র হলেই নানা বিষয়ে আলোচনা করি। ধর্ম্ম, সমাজ,
দর্শন, বিজ্ঞান, কাব্য, কলা, রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ে আমাদের
তর্কের আর অন্ত ছিল না। এ সব আলোচনায় Prince কখনো যোগদান কর্তেন
না। আমাদের বাকবিতণ্ডায় যোগ দেওয়া দূরে থাক্ আমাদের বকাবকি
তিনি কাণে তুলতেন কি না, সে বিষয়েও সন্দেহ আছে। ও সব কথা শুন্লে
তিনি এমনি চুপ হয়ে যেতেন, যে মনে হত, তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন।
অপর পক্ষে তিনি যখন মুখ খুলতেন তখন আবার আমরা সব চুপ হয়ে যেতুম।
তার কারন যে একটি মাত্র বিষয়ে তাঁর সম্যক অভিজ্ঞতা ছিল, সে
বিষয়ে আমরা সকলে ছিলুম সমান অনভিজ্ঞ। ভদ্রভাষায় সে বিষয়টির
নাম হচ্ছে Love.
আমরা কবিতা পড়ে নভেল পড়ে Love এর মাহাত্ম্য হৃদয়ঙ্গম করতে
শিখি, সে love-এর সন্ধান তিনি বড় একটা রাখতেন না। যেমন চুম্বক
ও লৌহের ভিতর তেমনি স্ত্রীপুরুষের ভিতর যে নৈসর্গিক টান আছে,
সেই আকর্ষণী শক্তিরই বিচিত্র লীলা তাঁর আদ্যোপান্ত মুখস্থ
ছিল। এ বিষয়ে পাণ্ডিত্য তিনি বই পড়ে লাভ করেন নি, শিখেছিলেন
হাতে কলমে। এ শিক্ষা লাভ কর্বার তাঁর সুযোগও যথেষ্ট ছিল। যে
রাজপুরীতে তিনি আশৈশব লালিত পালিত ও বর্দ্ধিত হয়েছিলেন সেখানে
মানব জীবনের মুখ্যকর্ম্ম ছিল প্রণয় চর্চ্চা। Prince-এর গল্প
আমরা যে পাঁচজনে হাঁ করে শুনতুম, যেমন ছোট্ ছেলে রূপকথা শোনে,
তার কারণ তখন আমরা সবাই ছিলুম তরুণের দল। স্ত্রীজাতি সম্বন্ধে
আমাদের সকলেরই মনে যথেষ্ট কৌতূহল ছিল, আর রমণী প্রসঙ্গ আমাদের
সকলেরি অন্তরের এমন একটি তারে ঘা দিত, যার উপর দর্শন বিজ্ঞানের
বিশেষ কোনও প্রভাব নেই। সে কথা যাক্, এ হেন শিক্ষা-দীক্ষা
নিয়ে Prince যে বিলেতে মাসে একবার করে Love-এ পড়তেন সে কথা
বলাই বাহুল্য। তাতে অবশ্য তাঁর মানসিক কিম্বা সাংসারিক কোনও
ক্ষতি হয় নি। তিনি পদে পদে যেমন বিপদে পড়তেন আবার তেমনি হাত
হাত ফাঁড়া কাটিয়ে উঠতে পারতেন। ফলে তাঁর নিত্য নূতন প্রণয়
কাহিনী শোন্বার জন্য আমরা সদাসর্ব্বদাই প্রস্তুত থাক্তুম।
আমি পূর্ব্বেই বলেছি
যে Prince-এর পদমর্য্যাদার অনুরূপ তাঁর সম্পত্তি ছিল না। যত
দিন যেতে লাগল, তত তাঁর আর্থিক অবস্থা হীন হয়ে পড়্তে লাগ্ল।
শেষটা তাঁর মনে হল যে, তিনি যদি কোনও ক্রোরপতিকন্যা বিবাহ
করতেপারেন, তাহলে তিনি ধর্ম্মের অবিরোধে অর্থ ও কামের অপর্য্যাপ্ত
ফলভোগী হতে পারবেন। বিলাতে অনেক নিঃস্ব লোক, আমেরিকার millionaire
কলু, কসাইদের কন্যা বিবাহ করেন, অর্থাৎ লোভে ও উপাধির জোরে।
যদি Lord উপাধির মূল্যস্বরূপ, আমেরিকানরা অর্দ্ধেক রাজত্ব
ও রাজকন্যা দান করতে প্রস্তুত হয় তাহলে তারা Prince উপাধির
দাম যে আরও বেশি দেবে সে বিষয়ে বন্ধুদের মনে কোনই সন্দেহ ছিল
না।
এ চিন্তা তাঁর মনে উদয় হবা মাত্র, লণ্ডনের একটি বড় হোটেলে
গিয়ে বাস করতে আরম্ভ কর্লেন যেখানে আমেরিকার millionaire-রা
এসে বাস করে।
সাত দিন যেতে না যেতে তিনি সেখানে একটি millionaire-এর কন্যার
সঙ্গে দস্তুর মত love-এ পড়ে গেলেন। তারপর তিনি কি উপায়ে সেই
মহিলাটির কাছে নিজের মনোভাব ব্যক্ত করবেন তা স্থির কর্তে
না পারে আমার কাছে মন্ত্রণা নিতে এলেন। তাঁর ধারণা ছিল যে
আমি যেমন সহৃদয় লোক তেমনি সদ্বিবেচক। তিনি আমাকে এক দিন স্পষ্টই
বলেছিলেন যে তিনি যদি কখনো রাজা হন, তাহ'লে তিনি আমাকে তার
মন্ত্রী করবেন। কেন না রাজকার্য্যের ভার আমি হাতে নিলে, তিনি
নিশ্চিন্ত মনে অন্দর মহলে বাস করতে পারবেন । এ ক্ষেত্রে তাঁর
মুস্কিল হয়েছিল এই যে তিনি মেয়েটির কখনো একলা দেখা পেতেন না,
তার মা কন্যারত্নটিকে যক্ষের ধনের মত আগ্লে নিয়ে বেড়াত।
কথায় কথায় জানতে পেলুম যে মেয়েটি প্রতি সকালে ঘোড়ায় চড়ে Hyde
Park-এ বেড়াতে যায় এবং এই এক মাত্র সময় যখন তার মাতা তার রক্ষক
থাকেন না।
আমি বল্লুম এই ত তোমার সুযোগ। তুমিও একদিন তাই করো না। ঘোড়সোয়ার
অবস্থায় বীর পুরুষের মত প্র্ণয় নিবেদন করলে কোনও মহিলা তা
প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন না, বিশেষত Hyde Park-এ এবং বসন্তকালে
ফুলে ফুলে লতায় লতায় প্রকৃতি যখন সুসজ্জিত হয়ে ওঠে সে দৃশ্যে
মানুষের মন স্বঃতই প্রণয়াকাঙ্ক্ষী হয়ে ওঠে। এ বিষয়ে ভারতবর্ষে
ও ইউরোপে কোনও প্রভেদ নাই। মানুষের স্বভাব মূলতঃ এক। আমার
এ প্রস্তাব শুনে Prince একেবারে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠে আমার
প্রতি কথার অসম্ভব রকম তারিফ করতে করতে আশায় বুক বেঁধে ঘর
থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এই ঘটনার সাত দিন পরে এক রবিবার ঘুম থেকে উঠে, আমি ঘরে বসে
কাগজ পড়্ছি, এমন সময় একটি Boy messenger এসে আমার হাতে একখানি
চিঠি দিলে। খুলে দেখি সেখানি Prince-এর লেখা। তাতে শুধু একটি
ছত্র লেখা ছিল। -"I am dying".
পত্রপাঠ আমি একটী গাড়ী ভাড়া করে তাঁর হোটেলে গিয়ে উপস্থিত
হলুম। তাঁর ঘরে ঢুকে দেখি Prince বিছানায় শুয়ে রয়েছেন, কম্বল
মুড়ি দিয়ে! প্রথমে তাঁকে দেখে আমি চিন্তে পারিনি। কারণ তাঁর
মুখ এত ফুলেছিল যে তাঁর কাণ পর্য্যন্ত সব একাকার হয়ে গিয়েছিল।
বিশেষ করে আমার চোখে পড়্ল যে Prince-এর তিলফুলের মত, নাসিকা
তাল ফলের মত গোলাকার হয়েছে!
ব্যাপার কি জিজ্ঞাসা করাতে তিনি কটুভাষায় নিজের ভাগ্যের নিন্দে
করতে লাগ্লেন। তার সমস্ত দুঃখের কান্নার ভিতর থেকে আমি এই
সার সংগ্রহ করলুম যে তিনি আমার পরামর্শ মত অশ্বারোহী হয়ে
Hyde park-এ কন্যারত্ন আহরণ কর্তে গিয়েছিলেন। এর জন্য তাঁর
পঁচিশ টাকা এক দিনে খরচ হয়ে গিযেছে; ঘোড়ার ভাড়া দিতে ও ঘোড়ায়
চড়বার পোশাক তৈরি করাতে।
তিনি যে একজন পয়লা নম্বরের ঘোড়সোয়ার তাঁর প্রণয়পাত্রীকে তাই
দেখাতে তিনি একটি খুব তেজী ঘোড়া ভাড়া করেছিলেন। এতেই তাঁর
সর্ব্বনাশ ঘটেছে।
ঘোড়াটি রাস্তায় খুব ভালমানুষের মত চলেছিল, কিন্তু Hyde park-এ
প্রবেশ করেই সে হঠাৎ ধনুকের মত বেঁকে চার পা তুলে লাফাতে সুরু
কর্লে! Prince অনেক কষ্টে তাকে কোন রকমে তার প্রণয়পাত্রীর
ঘোড়ার পাশে নিয়ে গেলেন এবং তাঁকে I love you এই কথাকটি বলবার
অভিপ্রায়ে, যেমন I lo-পর্য্যন্ত বলেছেন অমনি তাঁর ঘোড়া হঠাৎ
এমনি জোরে মাথা তুল্লে যে সেই অশ্বমস্তকের আঘাতে তাঁর মুখ
দিয়ে আর কথা নির্গত না হয়ে, তাঁর নাসিকা দৈয়ে রক্তস্রাব হতে
লাগ্ল। এই দৃশ্য দেখে সেই আমেরিকান মহিলা, খিলখিল করে হেসে
ঘোড়া ছুটিয়ে চলে গেলেন। আর তিনি হোটেলে ফিরে শয্যাশায়ী হলেন।
সত্য কথা বলতে গেলে স্বীকার করতে হয় যে তাঁর মুখের চেহারা
দেখে ও তাঁর নাকী কথা শুনে আমারও বেজায় হাসি পেয়েছিল এবং অতিকষ্টে
সে হাসি আমি চাপি। তাঁর কান্নাকাটির উত্তরে কি বলব ভেবে না
পেয়ে আমি শেষটা বল্লুম যে man proposes God disposes-
তার উত্তরে তিনি বল্লেন তা যদি হ'ত ত বলবার কোন কথা ছিল না,
কিন্তু আমি যে propose না কর্তেই ঘোড়া বেটা সব dispose করে
দিলে!
এ কথার পর আমি তাঁকে আশ্বস্ত করবার বৃথা চেষ্টা না করে তাঁর
কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলুম এই ভরসায় যে তাঁর নাকের জখমের
সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর হৃদয়ের জখমও সেরে যাবে। মাস খানেক বাদে
দেখা যাবে যে Prince আবার love-এর একটি নূতন পালা আরম্ভ করেছেন।
আসলে ঘটলও তাই-শুধু পূর্ব্ব প্রেমের নিদর্শনস্বরূপ তাঁর নাকের
উপর একটা বিশ্রী দাগ থেকে গেল।
(
'কল্লোল' পত্রিকা. বৈশাখ, ১৩৩১ )
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
Copyright
© 2014 Abasar.net. All rights reserved.
|
অবসর-এ প্রকাশিত
পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।
|