প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

পুরনো দিনের পত্রিকা ও বই থেকে নির্বাচিত প্রবন্ধ (সূচী)

মধু মক্ষিকাদংশন
রাজকৃষ্ণ রায়

[ লেখক পরিচিতি : রাজকৃষ্ণের জন্ম তিলি পরিবারে ১৮৪৯ খ্রীষ্টাব্দের ২১শে অক্টোবর। নিবাস বর্ধমানের রামচন্দ্রপুর গ্রামে। পড়াশোনা কলকাতার ডাফ ইনস্টিটিউশনে। আট বছর বয়সে তিনি পিতৃহীন হন এবং চাকরির প্রয়োজনে ১৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দে নিউ বেঙ্গল প্রেসে যোগদান করেন। পরে ১৮৭৬-এ অ্যালবার্ট প্রেসের ম্যানেজার হন। এই প্রেস থেকেই ১২৮৫ বঙ্গাব্দের বৈশাখে "নানাবিষয়িণী কবিতাপ্রসবিনী" 'বীণা' মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনিই ছিলেন পত্রিকা সম্পাদক। এই পত্রিকাতে তার কবিতা ও নাটক নিয়মিত প্রকাশিত হত। ১৮৮১ খ্রীষ্টাব্দে তিনি "বীণাযন্ত্র" প্রেস স্থাপন করেন। কিন্তু এই প্রেস লাভজনক হয় নি। প্রেস বিক্রী করে তিনি ১৮৮৮ খ্রীষ্টাব্দে ঠনঠনিয়ায় "বীণা-রঙ্গভূমি" প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে ঐ বছরই রচিত তার 'চন্দ্রহাস' এবং অন্যান্য নাটকের অভিনয় হতে থাকে। ছোটবেলা থেকেই তিনি কবিতা ও নাটক রচনা শুরু করেন। ঋণগ্রস্ত হয়ে "বীণা-রঙ্গভূমি" হস্তান্তরিত হয় (১২৯৭ বঙ্গাব্দ) এবং তিনি স্টার থিয়েটারে বেতনভোগী নাট্যকার হিসাবে যোগদান করেন। তার রচনার সংখ্যা বিপুল। লেখার মাধ্যমে তিনি দেশপ্রেম জাগ্রত করে গণচেতনাকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। অলস ও ভিরু জাতিকে লেখা ও নাটকের দ্বারা অনুপ্রাণিত করতে চেষ্টা করে গেছেন। 'ভূতলে বাঙালী অধম জাতি', 'শারদীয় জ্বালাখণ্ড' প্রভৃতি কবিতা এই উদ্দেশ্যেই রচিত। রাজকৃষ্ণের কিছু রচনা বিষয়বস্তু ও প্রকাশনার বছর হিসাবে ভাগ করে দেখা যাক।
কাব্যগ্রন্থ : 'গিরিসন্দর্শন' (১৮৭০) ; 'আগমনী' (১৮৭১) ; 'বঙ্গভূষণ' (চতুর্দশপদী, ১৮৭৪) ; 'মহন্তবিলাপ' (১৮৭৪) ; 'কবিতাকৌমুদী ২য় ভাগ (১৮৭৫) ; 'ভারতে যুবরাজ' (১৮৭৫) ; 'স্তবমালা' ( ১৮৭৬) ; 'অবসর সরোজিনী' (১৮৭৬-৭৮) ; 'ভারত ভাগ্য' (১৮৭৭) ; 'নিশীথ চিন্তা' (১৮৭৮) ; 'নিভৃত নিবাস' (১৮৭৮) ; 'ভারত গান' (১৮৭৯) ; 'দেবসঙ্গীত' (১৮৭৯) ; 'ভারত সান্ত্বনা' (১৮৭৯) ; 'কেশব বিয়োগ' (কেশব সেনের মৃত্যু উপলক্ষ্যে রচিত - ১৮৮৪) ; 'গেঁজেল গদা' (কাহিনী কাব্য, ১৮৮৪) ; 'রসগোল্লা' (১৮৮৪) ; 'টাকার তোড়া' (কাহিনী কাব্য, ১৮৮৬) ; 'কবিতা' ( ১৮৮৭) ; 'গান' (১৮৮৮) ; 'কতিপয় কবিতা' (১৮৯০) ; 'সরল কবিতা' (১৮৯১) ; 'এ মেয়ে পুরুষের বাবা' (কাহিনী কাব্য, ১৮৮৬)। পৌরাণিক নাটক : 'অনলে বিজলী' (১৮৭৮) ; 'তারক সংহার' (১৮৮০) ; 'হরধনুর্ভঙ্গ' (১৮৮২) ; 'রামের বনবাস' (১৮৮২) ; 'যদুবংশধবংস' (১৮৮৪) ; 'তরণী সেন বধ' (১৮৮৪) ; 'প্রলহাদ চরিত্র' (১৮৮৪) ; 'রাজা বংশধবংস' (১৮৯১) ; 'প্রলহাদ মহিমা' (১৮৯১) ; 'নরমেধ যজ্ঞ' (১৮৯১) ; 'ধ্রুবচরিত্র' (১৯২৪)। জীবনী নাটক : 'হরিদাস ঠাকুর' (১৮৮৮) ; 'মীরাবাঈ' (১৮৮৯)। প্রহসন ও ব্যঙ্গ নাটক : 'দ্বাদশ গোপাল' (১৮৭৮) ; 'কলির প্রলহাদ' (১৮৮৮) ; 'পূজার বাজার' (১৮৮৮) ; 'কানাকড়ি' (১৮৮৮) ; 'চমত্কার' (১৮৮৯) ; 'খোকাবাবু' (১৮৯০) ; 'বেলুনে বাঙ্গালী বিবি' (১৮৯০) ; 'ডাক্তারবাবু' (১৮৯০) ; 'টাট্কা টোট্কা' (১৮৯০) ; 'জগা পাগলা বা জ্যান্তে মরা' (১৮৯০) ; 'লোভেন্দ্র গবেন্দ্র' (১৮৯০) ; জুজু (১৮৯০) ; 'প্রতিফল' (১৮৯০)। গীতিনাট্য : 'পতিব্রতা' (১৮৭৫) ; 'চন্দ্রাবলী' (১৮৯০) ; 'চতুরালী' (১৮৯০) ; 'হীরে মালিনী' (১৮৯১) ; 'লয়লা মজনু' (১৮৯১) ;ঋষ্যশৃঙ্গ' (১৮৯২) ; 'বেনজির যদুরে মুনির' (১৮৯৩)। ঐতিহাসিক নাটক : 'ঐতিহাসিক নাট্যসম্ভার' (রূপক-১৮৭৬) ; 'রাজা বিক্রমাদিত্য' (১৮৮৪) ; 'লক্ষহীরা' (১৮৯১) ; 'বনবীর' (১৮৭২)। উপন্যাস : 'হিরন্ময়ী' (১৮৮০) ; 'শান্তিকুটীর' (১৮৮৮) ; 'অদ্ভুত ডাকাত' (১৮৮৯) ; 'জ্যোতির্ময়ী' (১৮৮৯)। গল্প : 'খোস গল্প' (১৮৮০-৮৫) ; 'দুই শিকারী' (১৮৮২)। বিবিধ : 'বালী রাজার রাজবংশের বিবরণ' (১৮৭৫) ; 'হিন্দি বাঙ্গালা পরিচয়' (১৮৭৫) ; 'রাশিয়ার ইতিহাস' (১৮৮৫) ইত্যাদি।

রাজকৃষ্ণের 'হরধনুর্ভঙ্গ' (১৮৮২) নাটকে তিনি প্রথম ভাঙা অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেন। 'বর্ষার মেঘ' ( 'আার্যদর্শন', জুলাই ১৮৮৪ ) ও 'বিক্রমাদিত্য' নাটকে তার গদ্য কবিতা লেখার প্রয়াস উল্লেখযোগ্য। অনেকের মতে তিনিই প্রথম বাঙালী লেখক যিনি সাহিত্য রচনাকে পেশা হিসাবে গ্রহন করেছিলেন। তার অনেক নাটকই উচ্ছ্বাস ও সঙ্গীত প্রাচুর্যতায় যাত্রার সমধর্মী। শরত্চন্দ্র দেবের সঙ্গে তিনি ভারতবর্ষ সম্বন্ধে তথ্যসমৃদ্ধ 'ভারতকোষ' (১৮৮০-৯২) রচনা করেন। মহাভারত ও রামায়ণের পদ্যানুবাদও করেছেন তিনি। ভক্তিরসের প্রাবল্য হেতু তার পৌরাণিক নাটকগুলির জনপ্রিয়তা খুব বেশী। 'প্রলহাদ-চরিত্র' ও 'নরমেধযজ্ঞ' তার অত্যন্ত জনপ্রিয় নাটক। 'সোম রায়' ছদ্মনামও তিনি ব্যবহার করেছেন। ১৮৯৪ খ্রীষ্টাব্দের ১১ মার্চ রাজকৃষ্ণের জীবনদীপ নির্বাপিত হয়। ]
দীপক সেনগুপ্ত।

 

একদা মদন করিয়ে যতন,
বাছি বাছি তুলি কুসুম-রতন,
শয়ন রচিলা মনের মতন,
শয়ন-সন্তোষ লাভের তরে;
অতি অনুপম সে ফুল-শয়ন
হইল, দেখিলে জুড়ায় নয়ন,
সুরভি-নিকরে ভরিল ভুবন,
শুইলা মদন তাহর'পরে।

ঘুমের ঘোরেতে হয়ে অচেতন,
মুদিয়ে নয়ন রহিলা মদন;
ফুলদল-তলে শোভিল বদন,
তারাপতি যথা তারার মাজ।
ক্ষণকাল পরে আসব-আশায়,
মধুমাছি এক আসিল তথায়,
বসিল কুসুমে, সুখেতে যথায়
শায়িত আছেন মদনরাজ।

ঘুমঘোরে কাম নড়িলা যেমন,
মধুমাছি-দেহে বাজিল চরণ;
রাগ-ভরে মাছি সবলে তখন
ফুটাইল কাম-চরণে হুল;
অধীর হইয়ে বিষের জ্বালায়,
উঠি রতিপতি ছুটিয়ে পালায়,
প্রিয়তমা রতি বসিয়ে যথায়,
গাঁথিতেছিলেন মালতী-ফুল।

"অয়ি প্রিয়তমে!" কহিলা রতিরে
রতিনাথ "প্রাণ যায় যে,-অচিরে
ফেল ফুলমালা, চেয়ে দেখ ফিরে,
একি জ্বালা, উহু, হইল হায়!
কেন শুইলাম বিছাইয়া ফুল?
তাই মধুমাছি ফুটাইল হুল,
বিষের জ্বালায় হয়েছি আকুল,
কি হবে-কি করি-প্রাণ যে যায়!"

ব্যথিত হৃদয়ে, অথচ হাসিয়ে,
কহে কামে রতি-সমীপে আসিয়ে,-
"ছোট মধুমাছি দিয়েছে বিঁধিয়ে
বিষভরা হুল তোমার পায়;
তাই তুমি নাথ! হইলে কাতর?
ভাল, বল দেখি দাসীর গোচর,
কতই জ্বলিবে তাহার অন্তর,
পঞ্চশর তুমি বিঁধিবে যায়?"


('আর্য্যদর্শন' পত্রিকা, জ্যৈষ্ঠ ১২৮১ বঙ্গাব্দ )

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।