প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

পোনুর চিঠি --- রবীন্দ্রমেধ

ছার [১]

আপনি একটা কিছু করুন। দয়া করে। আমি দিব্যি গালছি যে আমি নিজে গিয়ে চিত্রগুপ্তের খাতায় আপনার নাম সোনার জলে লিখিয়ে আসবো, নিজের গাঁটের কড়ি খরচা করে। যতোই চুপচাপ থাকুন আর গোঁফের আড়ালে হাসুন, আমি তো জানি আপনি কত এলেমদার সম্পাদক, কোলকাতার জোরালো সাহিত্যিক গুণ্ডা মহলে [পরশুরাম, দক্ষিণরায় পশ্য] আপনার শুধু যাতায়াতই নয়, সর্দারদের (ইটালির মাফিয়ারা হলে তাদের বলতো ডন) সঙ্গে দস্তুরমত দহরম-মহরম আছে। তারপর আপনার এই অবসর পত্রিকাটি বৈদ্যুতিন মাধ্যমের বাংলা ঊর্ণনাভ-অকুস্থল (কুট্টির বাংলায় বললে ইন্টারনেটের ওয়েবসাইট) তালিকার শীর্ষস্থ দশটির একটি স্থান পাবার পরে তো আপনার পায়া দশগুণ ওজনে বেড়ে গেছে বলে শুনছি! পারলে আপনিই পারবেন। বলছি কী, সার্ধশতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে এই নৃশংস রবীন্দ্রমেধ পালাটিকে, যদি বন্ধ নাও করতে পারেন, অন্তত কিঞ্চিত্ প্রশমিত করতে চেষ্টিত হোন।

অভয় পেলে একটু ঝেড়ে কাশতে পারি। এই সপ্তাহান্তে গিয়েছিলাম উত্তর আমেরিকার বাত্সরিক বঙ্গ সম্মেলনে সম্মিলিত হতে, এই নিউ জার্সিরই নামকরা জুয়াড়ির আখড়া অ্যাটলাণ্টিক সিটিতে। গৃহিণীর তাড়নায়, এদিকে আবার তাঁর বদান্যতাতেও বটে। আপনি তো জানেন আমার গৃহিণী যুগপত্ কোপন ও কৃপণস্বভাবা, কাজেই তাড়নাটি যেমন প্রত্যাশিত, বদান্যতাটিও তেমনি আশাতীত, আর আমার ঘাড়ে, অন্তঃসারশূন্য হলেও, মাথা একটিই। অতএব। যাইহোক, সম্মেলন সম্বন্ধে বিশেষ কিছু বলার নেই, আমাদের সত্যদ্রষ্টা সত্যজিত্ রায় মশায় অনেকদিন আগে তাঁর সৃষ্ট "গুপী গায়েন বাঘা বায়েন" চলচ্চিত্রে ঘটনাটির চরিত্র বিশদভাবে চিত্রবদ্ধ করে গেছেন -- ভূতের রাজার বাপের শ্রাদ্ধ, অবশ্যই যথোপযুক্ত আয়োজন ও উপচারসহ, তাতে গায়েন গুপী আর বায়েন বাঘা। এবারে বোধ হোলো গুপী আর বাঘাকে পাওয়া যায়নি, বোধহয় তৃণমূল গোষ্ঠীর সমর্থনের অভাবে, পরিবর্তে তাদের চেলাদের আনতে হয়েছে। যাকগে আমি আদাবাজারের লোক, জাহাজের কাছে ঘেঁষিনা, আমার কী দরকার ওসব নিয়ে মাথা ঘামানোর। আমি গিয়েছিলাম দুটি কারণে। প্রথম: "বিশ্বের অঙ্গনে বাংলার কৃষ্টি" বলে একটি বাণী এঁদের প্রচার উদ্যোগে মাঝে মাঝেই বিদ্যুত্ঝলকের মত দেখা যাচ্ছিলো। এই জন্তুটির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে পরিচিত হবার আকাঙক্ষা ছিলো। দ্বিতীয়: এঁদেরই প্রচারমাধ্যমে একটি অঘটনের কথাও বহুদিন ধরে ঘোষিত হচ্ছিলো (বিষয়ের গাম্ভীর্য রক্ষার কারণে ইংরেজিতে): Tribute to Rabindranath Tagore (marking the 150th birth anniversary year) - Intriguing discussions on the works of Tagore.-- (যল্লিখিতং, মাইরি।)। এদিকে রবীন্দ্রনাথের ব্যাপারে আমার দশা আপিংখোরের মতো, সেতো আপনি জানেন, আপনার শ্রীহস্তে লাঠৌষধি খেয়েও আমি এই নেশাটা কিছুতেই ছাড়তে পারিনি। তার ওপর আবার " ইন্ট্রিগিং" -- চূড়ার ওপর ময়ূরপাখা! কী বলবো স্যার, উত্তেজনায় তিন রাত্তির ঘুম হয়নি। বিশেষত বাংলার সাহিত্য কুরুক্ষেত্রের ঐ শ্রেণীর মহারথীদের সমাহার দেখার পর।

ফলাফল বলি। প্রথমটির কথা যদি বলেন তাহলে বোধহয় রানী ক্লিওপ্যাট্রার আমলের মিশরী, ঊর্ধবাহু মেক্সিকান, বিবস্ত্র গ্রীক এবং অন্য অনেক কুত্সিত মূর্তিখচিত কদর্য মঞ্চসজ্জাই হোলো বিশ্বের অঙ্গন কিন্তু অনেক সাধ্যসাধনা করেও বাংলার কৃষ্টির দেখা পেলাম না সেখানে। তা যাকগে, কিন্তু আমার সর্বনাশটি হোলো ওই দ্বিতীয় ঘটনাটি সম্পর্কে কৌতূহল দমন করতে পারলাম না বলে। আপনার মত সুকুমারমতি, গোয়েন্দাকাহিনীর লেখক খুনখারাপি, রক্তপাত ইত্যাদির বিভীষিকা সহ্য করতে পারেন না জেনেও একটু বিশদ করে লিখতে বাধ্য হচ্ছি। নিজগুণে মার্জনা করে নেবেন।

যা ভাবছেন ঠিক তাই -- প্রচারপত্রের সপ্তরথী শনিবারের রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে পাঁচশতাধিক কুলীন বাঙালী সাক্ষী রেখে রবি-অভিমন্যুকে বধ করলেন, একেবারে কচুকাটা যাকে বলে। এতো বছর বিদেশবাস করে যদি মহাভারতের ঘটনা সব ভুলে গিয়ে থাকেন তাহলে শেক্স্পীয়ারের লেখা জুলিয়াস সীজার নাটকে সীজার-বধ দৃশ্যের কথা মনে করতে পারেন।

গৌরচন্দ্রিকার পর এবার কীর্তনে আসা যাক। "ইন্ট্রিগিং"-এর রহস্য মোচন করলেন সঞ্চালক। কী, না আজকের আলোচনার বিষয় "রবীন্দ্রনাথ ও আন্তর্জাতিকতা"। আয়োজনের তো কোনো ত্রুটি নেই আমাদের,"বিশ্বের অঙ্গন" - তো, তাই হোলো "আন্তর্জাতিকতা" আর এই আমার মতোই বাংলাভাষাভাষী কিছু মূর্খের মতে তো রবীন্দ্রকৃতি আর বাংলার কৃষ্টি প্রায় সমার্থক। প্র্রথম তীরক্ষেপের যিনি রথী তিনি "বর্তমান বাংলা সাহিত্যের একজন অভিভাবক" (সঞ্চালকের দেওয়া পরিচয়)। প্রথম রথী বললেন রবীন্দ্রনাথের আন্তর্জাতিকতা নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে, আমি তার চেয়ে আপনাদের গোটা দুই গল্প শোনাই। প্রথমটি হোলো গদর-আন্দোলনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের নাম কী করে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল, তাতে রবীন্দ্রনাথের এক আমেরিকা সফরে অনেক ঝামেলা পোয়াতে হয় -- সেই নিয়ে। এর মধ্যে রথী একটু খুন-খারাপির মশলা দিলেন, আমরা রোমাঞ্চিত হয়ে দ্বিতীয় কাহিনীর প্রতীক্ষায় গুছিয়ে বসলাম। দ্বিতীয় কাহিনীটি হোলো রবীন্দ্রনাথের তৃতীয় আমেরিকা ভ্রমণ খুব অর্থপ্রসূ হয়নি কেন তার কারণ ব্যাখ্যান করে। লেনার্ড এল্ম্হাস্র্টের কথা বললেন। আমরা যে এদিকে উত্কণ্ঠায় মরে যাচ্ছি। রবীন্দ্রনাথের নারীঘটিত নানা কেলেঙ্কারি নিয়ে যেসব কাহিনী প্রচলিত আছে, মহারথী তার দুয়েকটির লব্বìপ্রতিষ্ঠ গবেষক, উনি যে এখনো তা নিয়ে কিছু বললেন না। আরে মশায় , এতজন ভক্তের আকুতি কি মহাপ্রাণ ব্যক্তিরা উপেক্ষা করতে পারেন। মধুর হাস্য দিয়ে কথিকা শেষ করলেন এই বলে: "তারপর অবশ্য এল্ম্হাস্র্ট, রাণু অধিকারী আর রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এক ত্রিভুজ গড়ে ওঠে তা আপনারা প্রায় সবাই জানেন, তা সে কাহিনী অন্য কখনো হবেখন।" রবীন্দ্রনাথ আর আন্তর্জাতিকতা, দুইয়ের কাঁথাতেই অগ্নি সংযোগ হোলো, এখন পরবর্তী রথীদের কাজ রইলো মাত্র সেই আগুনকে চারিয়ে তোলা। চটাপট হাততালি পড়লো। আরে না না মশায়, আমাদের রুচি নিয়ে যা ভাবছেন তা নয়, প্রেক্ষাগৃহে মশকাধিক্য কারণেই এই তালি, এ আমি আপনাকে লিখে দিচ্ছি।

দ্বিতীয় রথী রণক্ষেত্রে (বা বধ্যভূমিতে, যেটা আপনার মনে লাগে) অবতীর্ণ হয়ে শিশুর মত সরল একগাল হেসে জানালেন যে "আমার দৈনিক কাজকর্মের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বিশেষ যোগাযোগ নেই, আর এই বিষয় নিয়ে আমার ঘাঁটাও হয়নি বিশেষ" -- অর্থাত্ অস্ত্র ভোঁতা। আমার পাশের এক নির্বোধ প্রশ্ন করলেন "তাহলে স্টেজে উঠেছেন কেন?" , অবশ্যই ফিসফিস করে, তাও আমি তার গলা টিপে রাখলাম, শুনতে পেলে লোকে আমাদের অসভ্য বলবে যে। সেই চোরের নাককাটা ছুরি আস্ফালন করেই দ্বিতীয় রথী পনেরো মিনিট কাটালেন, অসম্ভব মুন্সিয়ানার সঙ্গে সম্পূর্ণ অর্থহীন কিছু শব্দগুচ্ছ আউড়ে। অলমতিবিস্তরেণ।

আসল খেলোয়াড় নামলেন এর পর। মঞ্চে আসতে একটু দেরি হয়েছিলো, তা অবশ্য ভালোই হোলো, ঘাড়ে গর্দানে ঘি মেখে বলি ততক্ষণে রেডি। কথা বলছিলেন বেশ জড়িয়ে জড়িয়ে। ওঁর কথার বেশীর ভাগই অবোধ্য রয়ে গেল, কুয়াশার মধ্য দিয়ে যে দুয়েকটি কথার অর্থ উদ্ধার করা গেল তা হোলো এইমতো। একবার বললেন যে রবীন্দ্রনাথকে অত্যধিক শ্রদ্ধা দেখানোটাও যেমন ওঁর ভালো লাগেনা, তেমনি আবার রবীন্দ্রনিন্দায় মত্ত হওয়াটাও উনি পছন্দ করেন না। খাঁটি কথা, সর্বম্ অত্যন্তম্ গর্হিতম্। ও হ্যাঁ, আর বললেন "রবীন্দ্রনাথের ঘতেঅনজঅলে নোবেল পুরস্কার পাবার যোগ্য নয়, এই আমার মত।" তারপর কাজটা ভালো হোলো কীনা ঠিক করতে না পেরে যোগ করলেন, "রবীন্দ্রনাথ ওর থেকে অনেক ভালো সব কবিতা লিখেছেন।" বাড়ি ফিরে পুরনো পত্রিকা ঘেঁটে দেখি যে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে আরেকজনও ঠিক এই ধরণের কথা বলেছিলেন [২]। সাত মিনিটের বত্তৃÝতায় চার মিনিট অবোধ্য, দু মিনিট অকথ্য আর বাকি এক মিনিটে যা শোনানো হোলো তাও অনশ্রুত! অর্থাত্ সমস্তটাই অশ্রাব্য -- হায়রে কপাল।

আমি কিন্তু এলেবেলেদের বাদ দিলাম। কোপ পড়ে বলির ধড় আর মুণ্ডু কাটা হয়ে গেছে, শেষ যিনি উঠলেন তাঁর কাজ সে দুটো আলাদা করে দেওয়া। এই রথী বয়সে তরুণ, কিন্তু কৌশলে নিপুণ, তিনি শুরু করলেন আপ্লুতকণ্ঠে " আমাদের ছোটো নদী চলে এঁকে বেঁকে / বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে" আবৃত্তি করে। "বেঁকে"-র সঙ্গে "থাকে"-র মিল, তার সঙ্গে তাঁর নাম যুক্ত করা হবে জানলে রবীন্দ্রনাথ সত্যি সত্যি " আত্মঘাতী" হতেন, নীরদ চৌধুরীর পরামর্শের জন্য অপেক্ষা করতেন না। গানে আন্তর্জাতিকতা প্রসঙ্গে তিনি বললেন "নিধুবাবু লিখেছিলেন 'ভালোবাসিবে বলে ভালোবাসি নে'; রবীন্দ্রনাথ সে জায়গায় লিখলেন 'মনে রবে কিনা রবে আমারে'"। গল্পকথা বলে মনে হচ্ছে, তাই না!

অসুস্থ হয়ে পড়লেন নাকি? কী সর্বনাশ, মহাত্মা গান্ধীর বাণী মনে করুন, চরম দুঃখের মধ্যেও আমাদের কিছু শেখার থাকতে পারে। সত্যিই মহাত্মা বলেননি একথা, আপনাকে পুনর্জীবিত করার জন্য আমি বানিয়ে বললাম। দেখুন, একনম্বর, বঙ্গ সম্মেলনে রবীন্দ্রস্মরণে কিছু করা হচ্ছে না (সে প্রোগ্রাম দেখলেই বুঝতে পারবেন, এমনকি সম্মেলন-পুস্তিকাতেও-- বাহারে নাম সাহিত্য সংকলন-- কেবল তিন পৃষ্ঠার উড়ো খই গোবিন্দায় নম, তাও আবার রদেন্স্টাইনের লেখার অনুবাদ) বলে মনোকষ্টে ছিলাম। শনিবার সকালের এই কেলেঙ্কারিটি দেখার পর বুঝলাম ভগবান আমাদের, এবং রবীন্দ্রনাথকে কী বাঁচানটাই বাঁচিয়েছেন। উত্সাহের আধিক্যে যদি বাণিজ্য বৈঠকে কলার ব্যবসায়ী হিসেবে রবীন্দ্রনাথের নাম উঠত তাহলে কী কেলেঙ্কারি হোত বলুনতো। দ্বিতীয়ত, আমাদের সনাতনধর্মের ওপর শ্রদ্ধা বেড়ে গেল দশগুণ। আমরা মৃত দাহ করি, যবনদের মত কবরস্থ করে এপাশ ওপাশ করার কষ্ট দিই না। কাজেই এই কেচ্ছায় আমরা যত্পরোনাস্তি আঘাত পেলেও রবীন্দ্রনাথের গায়ে এর আঁচ লাগলো না। তৃতীয়ত, এই সব বক্তা কেন এবং কী করে আমাদের টাকার শ্রাদ্ধ করতে সম্মেলনে আসতে পারেন, কেই বা তাদের আনে, কারাই বা তাদের স্টেজে উঠতে দেয়, এসব নিয়ে সমাজ ও নৃতাত্বিক গবেষণার বিষয় পাওয়া গেলো কিছু।

মুস্কিল হচ্ছে যেভাবেই সমস্যাটি ব্যবচ্ছেদ করেন আর যেদিক থেকেই দেখেন, দোষটা কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদেরই অর্শাবে। এতবচ্ছর পরেও আমরা কোলকাতার এই শিল্পী-লেখক-গোষ্ঠীর সঙ্গে সুস্থ লেনদেনের সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারলাম না। আমাদের এই চাহিদা, আপনি এই দেবেন, এই তার মূল্য বলে আমরা একমত হলাম, এবার চুক্তিমত আপনি দিলেন, আমরা নিলাম, আমরা দিলাম, আপনি পেলেন। আমি শুনেছি দেশে এইসব সংস্কৃতি-কৃষ্টির ব্যাপারেও আজকাল এইভাবেই কাজ করার ব্যবস্থা চালু হয়েছে - সত্য কি মিথ্যা জানিনা। কিন্তু আমাদের কী হবে? কিছুই না, কেননা সমীকরণটি যত সহজ মনে হচ্ছে তত সহজ নয়। এর মধ্যে স্বজনপোষণ আছে, দালালি আছে, অনুগ্রহ/প্রতিদানের ব্যাপার আছে, পরের টাকায় কাপ্তেনি করার এমন সুযোগ কী করে নষ্ট হতে দেওয়া যায়, সে প্রশ্ন আছে-- এবং সবটাতেই বেহিসেবি হবার অলিখিত সর্তও আছে। নয়তো, ভেবে দেখুন, যাঁরা ভাগের মায়ের এই গঙ্গাপ্রাপ্তির গুরুভার স্বেচ্ছায় এবং বিনা প্রতিবাদে মাথা পেতে নিলেন, সময় ও শক্তি ব্যয়ের হিসেব রাখতে গিয়ে তাঁরা দিনান্তে নিজেদের কী বলে সান্ত্বনা দেবেন। আমাদের অবশ্য একটি উপায় আছে, এসব ব্যাপারে না গেলেই হয়, কিন্তু তার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে গৃহিণীর সঙ্গে সমঝোতা করা। যে কর্ম অর্ধশতাব্দীতে করে উঠতে পারলাম না, সেটা আজ ঝুপ করে হয়ে যাবে, এ আশ্বাস আপনাকে কে দিলো?

গভীর দুঃখের রাত্রিরও শেষ আছে। তাই হোলো, রবীন্দ্রমেধের শেষে আমরা বাইরে এলাম:

"ভদ্র মোরা, শান্ত বড়ো,
পোষ-মানা এ প্রাণ
বোতাম-আঁটা জামার নীচে
শান্তিতে শয়ান।
দেখা হলেই মিষ্ট অতি
মুখের ভাব শিষ্ট অতি,
অলস দেহ ক্লিষ্টগতি--
গৃহের প্রতি টান।
. . .
বাঙালি সন্তান।"

(দুরন্ত আশা, মানসী, ১৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৮) -- অর্থাত্ প্রায় একশো বিশবছর আগেকার আপ্তবাক্য।

ধর্ষিত মন নিয়ে সাহিত্যসভার এক উদ্যোক্তার কাছে হাহাকার করলাম -- স্যার এটা কী করে ঘটতে দিলেন? চট্জলদি উত্তর, ওঁরা আমার কোনো কথা শুনলেন না। ইস্তফা দিলেন না কেন? তাহলে তো কাজটা হবেই না। তা না হয় নাই হোলো, দুষ্ট গরুর থেকে শূন্য গোয়াল ভালো। শক্তিশেলটার অপেক্ষায় ছিলাম, এতক্ষণ পরে সেটি প্রযুক্ত হোলো। " আমার ইচ্ছে ছিলো", এক, দুই, তিন, . . . ঠিক ধরেছেন স্যার, "আমার ইচ্ছে ছিলো শঙ্খ ঘোষকে আনবার, তা তিনি তো . . . " -- গত দশ বছর ধরে সর্বকর্মে ব্যবহৃত হবার পরেও এই অজুহাত অপ্রতিরোধ্য, এই দাহ অনির্বাণ।

আমার কথাটি ফুরলো, নটে গাছটি মুড়লো।


নমস্কারান্তে, আপনাদের চির-অর্বাচীন এবং চির-অবসর প্রাপ্তির আশায় গতনিদ্র পোনু

[১]-নাইটহুড ত্যাগ করার পরেই রবীন্দ্রনাথ স্যার-খেতাবটির কথা এই ভাবে লেখেন একটা চিঠিতে, ভাইঝি ইন্দিরা দেবীকে বলে মনে পড়ছে।
[২] - "স্টাইলের দিক থেকে বিচার করলে ইংরেজী গীতাঞ্জলি কখনো নোবেল পুরস্কার পেত না; . . . পড়লে মনে হয় গ্রন্থটির অন্তর্ভুক্ত 'গীত'গুলি প্রথমে বাংলাতেই লেখা হয়েছিল;" -- হারীতকৃষ্ণ দেব, রাষ্ট্রভাষা ও রবীন্দ্রনাথ, দেশ, রবীন্দ্রশতবার্ষিকী সংখ্যা, ১৯৬১, পৃঃ ৬৮।

 

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।