প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

ভগবত গীতার শিক্ষা ও প্রতিটি অধ্যায়ের সারাংশ সূচী

অষ্টাদশ অধ্যায় – মোক্ষযোগ

অর্জুন সন্ন্যাস ও ত্যাগ বিষয়ে বিশদ ভাবে জানতে ইচ্ছা প্রকাশ করায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন স্বর্গাদি অশ্বমেধাদি যজ্ঞ প্রভৃতি কর্মের ফললাভের ইচ্ছা পরিত্যাগ করে যে সব কর্মের অনুষ্ঠান হয় তা হল সন্ন্যাস| আর যে সকল নিত্য-নৈমিত্তিক কর্ম অনুষ্ঠিত হয় তাদের যে ফল অনুষ্ঠাতার হবার সম্ভাবনা থাকে সেই ফলের আকাঙ্খা পরিত্যাগ পূর্বক যদি করা হয় তাহলে সেই হল ত্যাগ| ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শিক্ষা দিলেন যে যজ্ঞ, দান ও তপস্যারূপ কর্ম কারও পক্ষে ত্যাগ করা উচিত নয়| কারণ এরা ফলাকাঙ্খাত্যাগী মনীষিগণের চিত্তশুদ্ধিকারক| তিনি আরও বললেন যে নিত্য-নৈমিত্তিক কর্মও ত্যাগ করা উচিত নয় কারণ এগুলিও চিত্তশুদ্ধিকারক| কর্তৃত্ব অভিনিবেশরূপ আসক্তি ও ফলকামনা ত্যাগ করে কেবল কর্তব্যবোধে যে বিহিত কর্ম অনুষ্ঠিত হয় সেই ত্যাগই হল সাত্ত্বিক ত্যাগ| যিনি কর্মফল লাভের বাসনা ত্যাগ করে কর্ম করেন তিনিই ত্যাগী| কর্মে আসক্তি ও কর্মফল ত্যাগপূর্বক নিষ্কাম কর্মের অনুষ্ঠাতা সত্ত্বগুণ অবগত হয়ে আত্মজ্ঞান লাভ করেন| তিনি তখন কাম্য কর্মে দ্বেষ করেন না ও নিত্য কর্মে আসক্ত হন না| সেইজন্য তিনি কোন কর্মফল ভোগ করেন না|
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে শিক্ষা দিলেন যে শরীর, অহংকার, বুদ্ধি ও মন সহ সকল ইন্দ্রিয়, প্রাণাদির বিবিধ কার্য এবং চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয়ের আদিত্যাদি অধিষ্ঠাত্রী দেবতা এই পাঁচটি সর্ব কর্মের কারণ| শরীর, মন ও বাক্য দ্বারা মানুষ যে সৎ বা অসৎ কর্ম করে, সেই সমস্ত কর্মেরও কারণ এই পাঁচটি| কাজেই যিনি নিজেকে কর্মের কর্তা বলে মনে করেন তিনি ভ্রান্ত অর্থাৎ আত্মতত্ত্ব বা কর্মতত্ত্ব অবগত নন| অতএব আমি কর্তা এই অহংকার যার নেই এবং যিনি কর্মফলের আশা করেন না তিনিই প্রকৃত ত্যাগী|
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শিক্ষা দিলেন যে জ্ঞান, জ্ঞেয় ও জ্ঞাতা এই তিনটি একত্র হলেই সকল ক্রিয়া আরম্ভ হয়| সর্ব ক্রিয়াতেই করণ (ইন্দ্রিয়), কর্ম (ক্রিয়া) এবং কর্তা (করণের প্রযোক্তা) একত্র হয়| অতএব আত্মা কোন কর্মের প্রবর্তক বা আশ্রয় নয়| সাংখ্য শাস্ত্রে জ্ঞান, কর্ম ও কর্তা - সত্ত্বঃ, রজঃ ও তমঃ এই ত্রিগুণ ভেদে তিন প্রকার বলা হয়েছে| যে জ্ঞান দ্বারা অব্যক্ত হতে স্থাবর পর্যন্ত বহুধা বিভক্ত সর্বভূতে এক অক্ষর আত্মবস্তু দৃষ্ট হন সেই অদ্বৈত আত্মদর্শনরূপ সম্যক জ্ঞানকে সাত্ত্বিক জ্ঞান বলে| কিন্তু যে জ্ঞান দ্বারা প্রতি দেহে পৃথক ভাবে অবস্থিত সকল প্রাণীশরীরে পরস্পর ভিন্ন ভিন্ন আত্মার দর্শন হয় তা রাজসিক জ্ঞান| আর যে জ্ঞান দ্বারা প্রকৃত তত্ত্ব বোঝা যায় না, বুদ্ধি ও মন কোন এক বিষয়ে আসক্ত থাকে, সেই অযৌক্তিক, অযথার্থ এবং তুচ্ছ জ্ঞান হল তামসিক জ্ঞান|
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আরও বললেন যে ফল-অভিলাষরহিত ব্যক্তি রাগ বা দ্বেষ বর্জনপূর্বক আসক্তিশুন্য হয়ে যজ্ঞ, দান ও হোমাদিরূপ যে নিত্য কর্ম করেন তা সাত্ত্বিক কর্ম| কাজেই অনাসক্ত, কর্তৃত্ব-অভিমানরহিত, ধৃতিশীল ও উদ্যমযুক্ত ক্রিয়মাণ কর্মের সিদ্ধিতে হর্ষহীন বা অসিদ্ধিতে বিষাদশুন্য কর্তা সাত্ত্বিক বলে গণ্য হন| কিন্তু ফল-কামনাযুক্ত বা অহংকারযুক্ত হয়ে বহু কষ্টসাধ্য যর যোগাদি কর্মের অনুষ্ঠান করা হয় সেই সকল কর্ম রাজসিক কর্ম| তাই বাসনাকুল-চিত্ত, কর্মফলাকাঙ্খী, পরদ্রব্যে লোভী, তীর্থাদিতে দানে অনিচ্ছুক, পরপীড়ক, বাহ্যাভ্যন্তর শৌচহীন, ইষ্টপ্রাপ্তিতে হর্ষযুক্ত ও ইষ্টবিয়োগে শোকযুক্ত কর্তা রাজসিক বলে গণ্য হন| আর ভাবী শুভ-অশুভ ফল, ধনক্ষয় বা শক্তিক্ষয়, পরপীড়া বা সামর্থ্য বিচার না করে অবিবেকবশতঃ যে যোগাদি কর্ম করা হয় তা তামসিক কর্ম| সেইজন্য বিষয়-বিক্ষিপ্ত-চিত্তহেতু অসমাহিত, বালকবৎ, অসংস্কৃতবুদ্ধি, অনম্র, বঞ্চক, স্বার্থবশতঃ পরবৃত্তিচ্ছেদনকারী, কর্তব্যে প্রবৃত্তিহীন, সদা অবসন্নস্বভাব ও দীর্ঘসূত্রী কর্তা তামসিক কর্তা বলে গণ্য হন|
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শিক্ষা দিলেন যে শুধু তাই নয, সত্ত্বঃ, রজঃ ও তমঃ এই তিন গুণ অনুসারে বুদ্ধি ও ধৃতিও তিন প্রকার| প্রবৃত্তিমার্গ ও নিবৃত্তিমার্গ, কর্তব্য ও অকর্তব্য, ভয় ও অভয়ের কারণ, সহেতুক বন্ধন এবং সহেতুক মোক্ষ এই সকল বিষয় যে বুদ্ধির দ্বারা জানা যায় তা সাত্ত্বিক বুদ্ধি| যে বুদ্ধি দ্বারা শাস্ত্র-বিহিত ও শাস্ত্রনিষিদ্ধ কর্ম এবং কর্তব্য ও অকর্তব্য যথাযথরূপে জানতে পারা যায় না তা রাজসিক বুদ্ধি| আর যে বুদ্ধি অধর্মকে ধর্ম মনে করে এবং সকল বিষয়ে বিপরীত বোঝে তা হল তামসিক বুদ্ধি| সেইরূপ ব্রহ্মে নিত্যসমাধি-অনুগতা ধৃতি দ্বারা মন, প্রাণ ও ইন্দ্রিয়ের ক্রিয়াসমূহের শাস্ত্রমার্গে বিধৃত হয়, তা হল যোগের দ্বারা ধৃতি এবং এই ধৃতিই সাত্ত্বিক ধৃতি| মানুষ যে ধৃতির দ্বারা ধর্ম, অর্থ ও কামকে কর্তব্যরূপে অবধারণ করে এবং উক্ত ধর্ম-কর্মাদি সম্পাদন কালে কর্তৃত্বাদি অভিনিবেশপূর্বক ফলাকাঙ্খী হয় তা হল রাজসিক ধৃতি| আর দুর্বুদ্ধি ব্যক্তি যে ধৃতি দ্বারা নিদ্রা, ভয়, প্রিয়বিয়োগ নিমিত্ত শোক, অবসাদ ও অহংকার পরিত্যাগ না করে সেগুলিকে ধারণ করে থাকে তা হল তামসিক ধৃতি|
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এরপর বললেন যে সুখও তিন প্রকার| যে সুখের দীর্ঘ অভ্যাস দ্বারা মানুষ প্রীত ও পরিতৃপ্ত হয় এবং যে সুখ প্রাপ্ত হলে সব দুঃখ থেকে সম্যকরূপে মুক্ত হয়, যে সুখ প্রথমে বিষতুল্য দুঃখাত্মক কি্তু শেষে অমৃততুল্য প্রীতিকর, আত্মনিষ্ঠ বুদ্ধির নির্মলতা হতে উৎপন্ন, সেই সুখ সাত্ত্বিক সুখ| যে সব সুখ শব্দাদি বিষয় ও শোত্রাদি ইন্দ্রিয়ের সংযোগ হতে উৎপন্ন হয় তা প্রথমে অমৃতবৎ কিন্তু পরিশেষে বিষতুল্য, সেই সুখ রাজসিক সুখ| আর যে সুখ প্রথমে ও পরিণামে সৎ ও অসতের কারণ বুদ্ধির বিনাশ করে এবং যাহা নিদ্রা, আলস্য ও অনবধানতা হতে উৎপন্ন হয় তা হল তামসিক সুখ| পৃথিবীতে এমন কোন প্রাণী বা বস্তু নেই যা এই প্রকৃতিজাত ত্রিগুণ বন্ধনের কারণ হতে মুক্ত|
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে জানালেন যে প্রকৃতিজাত অর্থাৎ স্বভাবজাত এই ত্রিগুণ অনুসারেই ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র এই চার বর্ণের কর্তব্য কর্মসমূহ স্থির করেছেন তিনি| ব্রাহ্মণের স্বভাবজাত কর্ম হল বাহ্যেন্দ্রিয় ও অন্তরীন্দ্রিয়ের সংযম, কায়িক, বাচিক ও মানসিক তপস্যা, অর্ন্তবহিঃ শৌচ, ক্ষমা, সরলতা, শাস্ত্রজ্ঞান, অধ্যাপনা ও তত্ত্ব-অনুভূতি এবং ভগবানে বিশ্বাস| ক্ষত্রিযের স্বভাবজাত কর্ম হল পরাক্রম, তেজ, ধৃতি, কর্মকুশলতা, যুদ্ধ হতে অপলায়ন, দানে মুক্তহস্ততা ও শাসন-ক্ষমতা| বৈশ্যের স্বভাবজত কর্ম হল কৃষি, গোরক্ষা ও বাণিজ্য| আর পরিচর্যা হল শুদ্রের স্বভাবজাত কর্ম| ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন যে মানুষ তার স্বভাবজাত কর্ম নিষ্ঠা সহকারে করলে নিশ্চয়ই সিদ্ধিলাভ করে| তিনি আরও বললেন যে স্বীয় বর্ণাশ্রম অনুযায়ী স্বভাবজাত কর্মসাধন পরধর্ম অনুযায়ী কর্মসাধন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ| তিনি বললেন যে দোষযুক্ত হলেও স্বধর্ম অনুযায়ী স্বভাবজাত কর্ম ত্যাগ করা উচিত নয়|
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন যে সকল বিষয়ে অনাসক্ত, সংযতচিত্ত এবং দেহ ও জীবনে ভোগস্পৃহাশুন্য আত্মজ্ঞ ব্যক্তি কর্মসন্ন্যাসের দ্বারা ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করে নিষ্ক্রিয় আত্মস্বরূপে অবস্থানরূপ প্রকৃষ্ট সিদ্ধি লাভ করেন| এইরূপ সিদ্ধিপ্রাপ্ত ব্যক্তির জ্ঞাননিষ্ঠাক্রমে পরম নিষ্ঠা বা পরিসমাপ্তিরূপ ব্রহ্মপ্রাপ্তি হয়| তিনি বললেন যে আত্মাকে ব্রহ্মরূপে নিশ্চয়পূর্বক সংশয় ও বিপর্যয়শুন্য বুদ্ধিযুক্ত হয়ে, ধ্যৈর্যের সঙ্গে শরীর ও ইন্দ্রিয় বশীভূত করে শরীর স্থিতির জন্য যা মাত্র প্রয়োজন তদব্যতিরিক্ত শব্দাদি বিষয় পরিত্যাগপূর্বক শরীর স্থিতির উপযোগী বিষয়েও আসক্তি ও দ্বেষ বর্জন করে নির্জন স্থানে অবস্থান ও পরিমিত আহার করে বাক্য, শরীর ও মন সংযত করে নিত্য ধ্যাননিষ্ঠা ও যোগপরায়ণ হয়ে দৈহিক ও পারত্রিক বিষয়ে বৈরাগ্য অবলম্বন করে দেহ-ইন্দ্রিয়াদিতে আত্মবুদ্ধি, কাম-ক্রোধযুক্ত বল, দর্প, কাম, ক্রোধ ও পরিগ্রহ ত্যাগ করে দেহে ও জীবনে মমতা বর্জিত এবং চিত্তবিক্ষেপশুন্য করতে পারেন তিনিই এই জীবনে ব্রহ্মজ্ঞান প্রাপ্ত হন| ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন - ব্রহ্মজ্ঞান প্রাপ্তি হলেই তিনি বুঝতে পারেন যে ‘আমিই’ উপাধিকৃত ভেদবিশিষ্ট এবং স্বরূপতঃ নিরুপাধি, অদ্বিতীয় চৈতন্যময় উত্তম পুরুষ| ‘আমার’ এই তত্ত্ব অবগত হওয়া মাত্রই তিনি ‘আমাতে’ প্রবেশ করেন, ‘আমাকে’ লাভ করেন|
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে উপদেশ দিলেন - বিবেকবুদ্ধি দ্বারা ঐহিক ও পারত্রিক সব কর্ম ‘আমাতে’ সমর্পণপূর্বক সৎপরায়ণ হও এবং সিদ্ধিতে ও অসিদ্ধিতে হর্ষ-বিষাদ শুন্যরূপ বুদ্ধিযোগ অবলম্বন পূর্বক আমাতে সর্বদা চিত্ত সমাহিত কর| তাহলে তুমি আমার অনুগ্রহে এই দুরন্ত সংসার ও তার কারণসমূহ অতিক্রম করবে| তিনি আরও বললেন অহংকারকে আশ্রয় করে যুদ্ধ করব না এইরূপ যা মনে করছ তা ভুল কেননা তোমার ক্ষত্রিয় ধর্মই তোমাকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করবে| ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন – হে অর্জুন, তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়; সেইজন্য তোমায় বলছি তুমি আমাতে চিত্ত স্থির কর| আমার ভজনশীল ও পূজনশীল হও এবং আমাকে প্রণাম কর| তাহলেই তুমি আমাকে প্রাপ্ত হবে| তিনি বললেন –
সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ|
অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ|| (১৮:৬৬)
সকল ধর্মাধর্মের অনুষ্ঠান পরিত্যাগপূর্বক পরমেশ্বররূপে একমাত্র আমার শরণাগত হও| আমা হতে অতিরিক্ত কোন কিছু নেই, এইরূপ দৃঢ় নিশ্চয় হয়ে আমাকে সদা স্মরণ কর| তুমি এইরূপ নিশ্চিতবুদ্ধিযুক্ত ও স্মরণশীল হলে তোমার ধর্মাধর্ম বন্ধনরূপ সব পাপ থেকে আমি তোমাকে মুক্ত করব| অতএব শোক কোরো না|
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন সংসার নিবৃত্তির জন্য তোমাকে যে শাস্ত্রকথা বললাম তা কোন তপস্যাহীন, ঈশ্বরে ভক্তিরহিত এবং শ্রবণে অনিচ্ছুক ব্যক্তিকে কখনও বলবে না| কেবলমাত্র ভগবানে বিশ্বাসী, তপস্বী ও ভক্ত ব্যক্তিকেই এই শাস্ত্রকথা বলবে| কেননা সেইরূপ ব্যক্তিই পরাভক্তি লাভ করে আমাকে প্রাপ্ত হবেন| এই সাবধান বাণী উচ্চারণ পূর্বক ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে জিজ্ঞাসা করলেন – হে ধনঞ্জয়, তুমি কি একাগ্রচিত্তে এই শাস্ত্রকথা শুনেছ? এই শাস্ত্রকথা শুনে তোমার অজ্ঞানজনিত মোহ কি বিনষ্ট হয়েছে? ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রশ্নের উত্তরে অর্জুন বললেন – হে অচ্যুত, আপনার প্রসাদে আমার মোহ ও অজ্ঞনতা নষ্ট হয়েছে এবং আমি পরমাত্মা বিষয়ক শাস্ত্রজ্ঞান লাভ করেছি| এখন আমি আপনারই উপদেশ পালন করব, আমার আর কোন কর্তব্য নেই|
এইখানেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের কথোপকথনের সমাপ্তি|
পরবর্তী কয়েকটি শ্লোকে সঞ্জয়, যিনি অন্ধরাজা ধৃতরাষ্ট্রকে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের বিবরণ দেবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন, বললেন – হে রাজা ধৃতরাষ্ট্র, শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের এই পূণ্য শাস্ত্রের কথপোকথন শুনে আমি রোমাঞ্চিত ও আনন্দিত হয়েছি| আমি ধন্য| যে পক্ষে শ্রীকৃষ্ণ ও গাণ্ডীবধারী অর্জুন, সেই পক্ষেই রাজ্যশ্রী, বিজয়, অভ্যুদয় ও অব্যভিচারিণী নীতি বিরাজ করে; ইহাই আমার নিশ্চিত অভিমত|
মোক্ষযোগ নামে ভগবত গীতার অষ্টাদশ অধ্যায়ের সমাপ্তি|

ভগবত গীতার সমাপ্তি|
______________________________________________________________

ওঁ নমো ব্রহ্মণ্য দেবায় গো ব্রাহ্মণ হিতায় চ|
জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ||

_____________________________________________________________

যে বইদুটির সাহায্য নিয়েছি
১) শ্রীমদ্ভগবদগীতা – স্বামী জগদীশ্বরানন্দ কর্তৃক অনূদিত এবং সম্পাদিত; উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা ৭০০০০৩
২) শ্রীমদ্ভগবদগীতা – শ্রীজগদীশচন্দ্র ঘোষ, সম্পাদিত ও শ্রীঅনিলচন্দ্র ঘোষ কর্তৃক সুসংস্কৃত; প্রেসিডেন্সী লাইব্রেরী, কলকাতা ৭০০০৭৩

অসীম ভট্টাচার্য

( ক্রমশঃ )

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।

সেকালের জনপ্রিয় লেখক ও তাঁদের লেখা

পুরনো দিনের পত্রিকা ও বই থেকে নির্বাচিত প্রবন্ধ