প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

ভগবত গীতার শিক্ষা ও প্রতিটি অধ্যায়ের সারাংশ সূচী

নবম অধ্যায় – রাজবিদ্যা-রাজগুহ্য যোগ

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন – হে পার্থ, অতি গুহ্য অনুভবযুক্ত ব্রহ্মজ্ঞান সম্পর্কে তোমাকে বলছি| এই ব্রহ্মবিদ্যাই সর্ব বিদ্যার মধ্যে শ্রেষ্ঠ| এই বিদ্যা অতি উত্তম, পবিত্র, সাক্ষাৎফলপ্রদ, ধর্মসঙ্গত, সহজসাধ্য ও অক্ষরফলযুক্ত| এই শিক্ষা লাভ করলে তুমি সংসার বন্ধন হতে মুক্ত হবে| এই ধর্মের স্বরূপ ও ফলের প্রতি শ্রদ্ধাহীন ব্যক্তিগণ আমাকে না পেয়ে মৃত্যময় সংসার পথে পুনঃ পুনঃ যাতায়াত করেন| তিনি অর্জুনকে জানালেন যে তিনি ইন্দ্রিয়ের অগোচর ও অব্যক্ত মূর্তি; তাঁর দ্বারাই এই সমগ্র বিশ্ব পরিব্যাপ্ত| ব্রহ্মাদি স্থাবর পর্যন্ত সমস্ত ভূত তাঁহাতেই অবস্থিত|
পরবর্তী কয়েকটি শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বিষদভাবে ব্যাখ্যা করে বললেন যে সর্বত্র বিচরণশীল মহাবায়ু যেরূপ আকাশে অসঙ্গভাবে অবস্থান করে সেরূপ সর্বব্যাপী ও অসংশ্লিষ্ট তাঁর স্বরূপে ভূতসমূহ স্থিতিকালে অবস্থিত| তিনি বললেন – হে কৌন্তেয়, প্রলয় কালে সকল ভূত আমার ত্রিগুণাত্মক মায়াতে লীন হয়| আবার সৃষ্টিকালে আমি সেগুলিকে সৃষ্টি করি| তাই মহাত্মাগণ শম, দম, দয়া ও শ্রদ্ধাদিযুক্ত স্বাত্ত্বিক স্বভাব আশ্রয় করে আমাকে সর্ভভূতের কারণ ও অবিনাশী জেনে অনন্যচিত্তে আমার ভজনা করেন| তিনি অর্জুনকে জানালেন যে তিনিই অগ্নিষ্টোমাদি শ্রৌত যজ্ঞ, পঞ্চ স্মার্ত যজ্ঞ, পিত্রর্থ শ্রাদ্ধাদি; তিনিই ভেষজ মন্ত্র, হোমের ঘৃত; তিনিই হোমাগ্নি এবং হোমক্রিয়া; তিনিই ওম্; তিনিই ঋকবেদ, সামবেদ ও যর্জুবেদ স্বরূপ| ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন – হে কৌন্তেয়, যারা আস্তিক্যবুদ্ধিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ভক্তিপূর্বক অন্য দেবতার পূজা করেন, তাঁরাও অজ্ঞানপূর্বক আমারই পূজা করেন| আমিই সকল শ্রৌত ও স্মার্ত কর্মের ভোক্তা ও ফলদাতা| তিনি জানালেন যে তাঁর পূজাও অতি সহজ; যে কেহ শুভবুদ্ধি সহ নিষ্কাম ভক্তিপূর্বক শুধুমাত্র পত্র, পুষ্প, ফল ও জল অর্পণ করে তাও তিনি অতি প্রীতির সঙ্গে গ্রহন করেন| ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে উপদেশ দিলেন – হে কৌন্তেয়, যাহাই অনুষ্ঠান কর, যাহা আহার কর, যাহা হোম কর, যাহা দান কর এবং যে তপস্যা কর সেই সবই আমাকে সমর্পন করবে| এইরূপে আমাতে সব কর্ম অর্পণ দ্বারা শুভাশুভ ফল বিশিষ্ট কর্মের বন্ধন হতে মুক্ত হয়েই জীবিতকালেই মুক্তিলাভ করবে এবং দেহান্তে আমাকেই পাবে| তিনি আরও বললেন যে অতি দুরাচার ব্যক্তিও যদি অনন্য ভক্তির সঙ্গে ‘আমাকে’ ভজনা করে তাহাকেও সাধু মনে করবে কেননা তার সঙ্কল্প অতি শুভ| ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন – যখন এই অনিত্য সুখহীন মর্তলোকে মনুষ্যদেহ ধারণ করেছ, তখন অন্যান্য সকল কর্তব্য ত্যাগ করে কেবল আমাকেই ভজনা কর| তুমি মদগতচিত্ত হও, আমার ভজনশীল ও পূজনশীল হও| কায়মনোবাক্যে আমাকে প্রণাম কর| এইরূপে আমাতে মন ও বুদ্ধি সমাহিত করলে আমাকেই লাভ করবে|
রাজযোগ নামে ভগবত গীতার নবম অধ্যায়ের সমাপ্তি|

দশম অধ্যায় – বিভূতি যোগ

এই অধ্যায়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কি ভাবে ভগবান চিন্তনীয় সেই বিষয়ের পুনারবৃত্তি করলেন কেননা ভগবত তত্ত্ব অতি দুরূহ এবং দুর্বিজ্ঞেয়| ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জানালেন যে যেহেতু তিনি দেবতাবৃন্দ ও মহর্ষিগণের আদি কারণ সেহেতু কেহই অর্থাৎ ব্রহ্মাদি দেবতাগণ বা ভৃগু ও অন্যান্য মহর্ষিগণ তাঁর উৎপত্তি অবগত নন| কিন্তু যিনি তাঁকে আদিহীন, জন্মরহিত সর্বলোকের মহেশ্বর বলে জানেন মনুষ্য মধ্যে তিনিই মোহশুন্য হয়ে জ্ঞান-অজ্ঞান কৃত সব পাপ হতে মুক্ত হন| তিনি আরও বললেন যে অন্তঃকরণের সূক্ষ্ম বিষয়ের বোধসামর্থ্য, আত্মাদির জ্ঞান, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, ক্ষমা, সত্য, বাহ্যেন্দ্রিয় ও অন্তরিন্দ্রিয়ের সংযম, সুখ, দুঃখ, জন্ম, মৃত্যু, ভয়, অভয়, অহিংসা, সমচিত্ততা, সন্তোষ, তপস্যা, দান, ধর্মনিমিত্ত কীর্তি ও অধর্মনিমিত্ত অকীর্তি – এই সকল ভিন্ন ভিন্ন ভাব প্রাণীগণের স্ব স্ব কর্ম অনুসারে আমা হতেই উৎপন্ন হয়| ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন – যিনি আমার এই বিভূতি ও যোগ যথার্থ রূপে জানেন তিনি অবিচলিত সম্যক দর্শন অর্থাৎ তত্ত্বজ্ঞান লাভ করেন| এই সম্যক জ্ঞানের দ্বারাই তাঁরা আমাকে আত্মারূপে উপলব্ধি করেন|
অর্জুনের অনুরোধে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ – যদিও আমার বিভূতির অন্ত নেই – বলে সেই বিভূতি বর্ণনা করলেন| তিনি বললেন – হে অর্জুন, আমিই সব প্রাণীর হৃদয়ে অবস্থিত প্রত্যগ আত্মা, আমিই প্রাণিগনের উৎপত্তি, স্থিতি, ও প্রলয়স্বরূপ, দ্বাদশ আদিত্যের মধ্যে আদিত্য বিষ্ণু| প্রকাশকদিগের মধ্যে আমি কিরণশীল সূর্য, ঊনপঞ্চাশ বায়ুর মধ্যে আমি মরীচি এবং আমি নক্ষত্রগণের অধিপতি চন্দ্র, চার বেদের মধ্যে আমি সামবেদ, দেবগণের মধ্যে আমি ইন্দ্র, ইন্দ্রিয়সকলের মধ্য আমি প্রবর্তক মন এবং প্রাণী দেহে অভিব্যক্ত চেতনা অর্থাৎ বুদ্ধিবৃত্তি, আমি একাদশ রুদ্রের মধ্যে শঙ্কর, যক্ষ ও রাক্ষসগণের মধ্যে আমি কুবের, অষ্টবসুর মধ্যে আমি অগ্নি, উচ্চ শৃঙ্গযুক্ত পর্বতসকলের মধ্যে আমি মেরুপর্বত, পুরোহিতগণের মধ্যে আমি দেবগুরু বৃহস্পতি, সেনানয়কগণের মধ্যে আমি দেবসেনাপতি কার্তিকেয়, জলাশয়সমূহের মধ্যে আমি সাগর, মহর্ষিগণের মধ্যে আমি ভৃগু, শব্দসমূহের মধ্যে আমি একাক্ষর বাচক ওম্, যজ্ঞসমূহের মধ্যে আমি জপরূপ যজ্ঞ এবং পদার্থসমূহের মধ্যে আমি দেবতাত্মা হিমালয়, বৃক্ষসমূহের মধ্যে আমি অশ্বত্থ, দেবর্ষিগণের মধ্যে আমি নারদ, গন্ধর্বগণের মধ্যে আমি চিত্ররথ এবং সিদ্ধপুরুষগণের মধ্যে আমি কপিলমুনি, অশ্বগণের মধ্যে আমি উচ্চৈঃশ্রবা, হস্তিগণের মধ্যে আমি ঐরাবত এবং মনুষ্যগণের মধ্যে আমি রাজা, অস্ত্রসমূহের মধ্যে আমি দধীচির অস্থিনির্মিত বজ্র, গাভীগণের মধ্যে আমি কামধেনু, প্রাণিগণের প্রজনন শক্তি কাম এবং সর্পগণের মধ্যে সর্পরাজ বাসুকি, নাগগণের মধ্যে নাগরাজ অনন্ত, জলদেবতার মধ্যে বরুণ, পিতৃগণের মধ্যে পিতৃরাজ অর্যমা এবং নিয়ামকগণের মধ্যে আমি মৃত্যুরাজ যম, দৈত্যগণের মধ্যে আমি প্রহ্লাদ, সংখ্যাকারিগণের মধ্যে আমি কাল, পশুগণের মধ্যে আমি পশুরাজ সিংহ, পক্ষিগণের মধ্যে আমি গরুড়, বেগবানদিগের মধ্যে আমি বায়ু, শস্ত্রধারিগণের মধ্যে আমি দাশরথি রাম, মৎস্যগণের মধ্যে আমি মকর এবং সকল নদীর মধ্যে আমি গঙ্গা, আকাশাদি সৃষ্ট বস্তুসমূহের উৎপত্তি-স্থিতি ও সংহার কর্তা আমি, বিদ্যাসমূহের মধ্যে আমি মোক্ষপ্রদ আত্মবিদ্যা, অক্ষরসমূহের মধ্যে আমি ‘অ’কার, নারীগণের মধ্যে আমি কীর্তি, শ্রী, বাক, স্মৃতি, মেধা ও ক্ষমা এবং আমি সর্বকর্মফলের বিধানকর্তা, ছলনাকারীগণের মধ্যে আমি অক্ষক্রীড়ারূপ ছল, আমি বৃষ্ণিবংশীয়গণের মধ্যে তোমার সখা কৃষ্ণ, পাণ্ডবগণের মধ্যে অর্জুন, মুনিগণের মধ্যে বেদব্যাস, সূক্ষ্মবিবেকীদিগের মধ্যে দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য| হে অর্জুন, যাহা সর্বভূতে বীজস্বরূপ তাহাও আমি| সর্বভূত মদাত্মক| হে পার্থ, আমার দিব্য বিভূতির অন্ত নেই; অতি সংক্ষেপে আমি এই সকল বিভূতির বর্ণনা দিলাম| হে অর্জুন, শুধু এইটুকু মাত্র জেনে রাখ যে আমিই শুধু এক পা দ্বারা সমগ্র জগৎ ব্যাপ্ত করে আছি|
বিভূতি যোগ নামে ভগবত গীতার দশম অধ্যায়ের সমাপ্তি|

অসীম ভট্টাচার্য

( ক্রমশঃ )

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।

সেকালের জনপ্রিয় লেখক ও তাঁদের লেখা

পুরনো দিনের পত্রিকা ও বই থেকে নির্বাচিত প্রবন্ধ