প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

ভগবত গীতার শিক্ষা ও প্রতিটি অধ্যায়ের সারাংশ সূচী

একাদশ অধ্যায় – বিশ্বরূপ দর্শন যোগ

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখে তাঁর ঈশ্বরীয় বিভূতির বিবরণ শুনে অর্জুন সেই বিশ্বরূপ দেখবার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন| ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদে অর্জুন দিব্যদৃষ্ট লাভ করে ভগবানের অলৌকিক বিশ্বরূপ দর্শন করলেন| সেই বিশ্বরূপ অসংখ্য মুখ ও অসংখ্য নেত্র-যুক্ত, অসংখ্য আকৃতি ও অসংখ্য দিব্য অলঙ্কার বিশিষ্ট এবং অসংখ্য দিব্য আয়ুধে সজ্জিত| ভগবানের বিশ্বরূপ দিব্যমাল্য ও দিব্যবস্ত্রে ভূষিত, দিব্যগন্ধ দ্বারা অনুলিপ্ত, অত্যন্ত আশ্চর্যজনক, জ্যোতির্ময়, অনন্ত ও সর্বত্র মুখবিশিষ্ট| অর্জুন দেখলেন সেই বিরাট শরীরে দেব, পিতৃ ও মনুষ্যাদি নানাভাবে বিভক্ত সমগ্র জগৎ অবয়বরূপে অবস্থিত| অর্জুন সেই বিশ্বরূপ দর্শন করে আশ্চর্য্যান্বিত ও রোমাঞ্চিত হয়ে ভগবানকে প্রণাম করে বললেন – হে বিশ্বরূপ, আমি আপনার আদি, মধ্য, অন্ত দেখতে পাচ্ছি না| আমি আপনাকে কিরীট, গদা ও চক্রধারী, সর্বত্র বিদ্যমান, তেজঃ পুঞ্জস্বরূপ, দুর্নিরীক্ষ্য, প্রদীপ্ত অগ্নি ও সূর্যের ন্যায় প্রভাববিশিষ্ট এবং অপ্রমেয়স্বরূপ সর্বত্র দেখছি| আপনি অনন্ত, শক্তিশালী; চন্দ্র ও সূর্য আপনার নেত্র: আপনার মুখমণ্ডল প্রদীপ্ত অগ্নির জ্যোতি এবং আপনি স্বীয় তেজে সমস্ত জগৎ সন্তপ্ত করছেন| আমি দেখতে পাচ্ছি যে ঐ যুধ্যমান মনুষ্যধারী বসু-আদি দেবতাগণ আপনাতেই প্রবেশ করছেন| রাজন্যবর্গ সহ ধার্তরাষ্ট্রগণ এবং মৎপক্ষীয় প্রধান যোদ্ধাগণ, ভীষ্ম, দ্রোণ এবং কর্ণও আপনারই দংষ্ট্রাকরাল ভীষণ মুখগহ্বরে প্রবেশ করছেন| হে উগ্রমূর্তি, আপনাকে প্রণাম করি| আপনি কে তা জানতে ইচ্ছা করি|
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উত্তরে বললেন – আমি লোকক্ষয়কারী প্রবৃদ্ধ কাল| বর্তমানে লোকসংহারে প্রবৃত্ত হয়েছি| বিপক্ষদলে যে বীরগণ আছেন তারা কেউই জীবিত থাকবেন না কেননা তারা পূর্বেই আমা দ্বারা নিহত হয়েছে| তুমি, হে অর্জুন, শুধু নিমিত্ত মাত্র|
অর্জুন পুনঃ পুনঃ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করে বললেন – হে অমিতপ্রভাব, আপনিই এই চরাচর জগতের স্রষ্টা, পূজ্য গুরুরও গুরু, ত্রিভুবনে আপনার সমান আর কেউ নেই| আপনিই শ্রেষ্ঠ| হে সহস্রবাহো, আমি আপনাকে সেই কিরীট, গদা, চক্রধারী রূপেই দেখতে ইচ্ছা করি| ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পুনরায় তাঁর সৌম্যমূর্তি ধারণ করে অর্জুনকে বললেন - একমাত্র তুমিই আমার এই বিশ্বরূপ দর্শন করলে| এই দুর্লভ দর্শন বিশ্বরূপ দেখতে দেবতাগণও সদা আকাঙ্খা করেন| এই বিশ্বরূপ শুধুমাত্র বেদপাঠ, চান্দ্রায়ণাদি তপস্যা, গো-সুবর্ণাদি দান বা পূজার দ্বারা দর্শন করা যায় না| হে অর্জুন, কেবল মাত্র অনন্যা ভক্তি দ্বারাই আমাকে জানতে ও স্বরূপতঃ প্রত্যক্ষ করতে এবং আমাতে প্রবেশরূপ মোক্ষলাভ করতে ভক্তগণ সমর্থ হয়, অন্য কোন উপায়ে নয়|
বিশ্বরূপ দর্শন যোগ নামে ভগবত গীতার একাদশ অধ্যায়ের সমাপ্তি|

দ্বাদশ অধ্যায় – ভক্তিযোগ

অর্জুন প্রথমেই জিজ্ঞাসা করলেন – যে সকল ভক্ত অনন্যশরণ হয়ে নিরন্তর ভগবৎ কর্মাদিতে নিযুক্ত হয়ে আপনার উপাসনা করেন এবং যারা সমস্ত বাসনা ও কর্ম পরিত্যাগ পূর্বক সর্ব উপাধিরহিত ইন্দ্রিয়াতীত অক্ষরব্রহ্মের উপাসনা করেন, এই উভয়ের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ যোগী|
এর উত্তরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জানালেন যে পরমেশ্বরের ভজন দ্বারাই জীবের উদ্ধার হয়, এই বিশ্বাস দৃঢ় করে যারা আমার বিশ্বরূপে মনোনিবেশপূর্বক মৎচিত্ত হয়ে অহোরাত্র অতিবাহিত করেন তারাই শ্রেষ্ঠ যোগী| কিন্তু যারা সর্বদা ইষ্ট ও অনিষ্ট প্রাপ্তিতে রাগ ও দ্বেষরহিত, সকল কল্যাণে নিযুক্ত এবং ইন্দ্রিয় সংযমী, যারা শব্দাদিপ্রমাণ দ্বারা অপ্রতিপাদ্য, প্রত্যক্ষাদি প্রমাণের অগোচর, সর্বব্যাপী মনের অতীত, কুটস্থ (মায়া-অধিষ্ঠান অর্থাৎ প্রস্তরতুল্য নির্বিকার), অচ্যুতস্বরূপ এবং শাশ্বত নির্গুণ ব্রহ্মের উপাসনা করেন তাঁরাই তাঁকে প্রাপ্ত হন কারণ নির্গুণ ব্রহ্মে নিষ্ঠা লাভ করা দেহাভিমানী ব্যক্তিগণের পক্ষে অতিশয় কষ্টকর| ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন – হে পার্থ, যাঁরা সমস্ত কর্ম আমাতে সমর্পণপূর্বক – আমিই পরম পুরুষার্থরূপে উপাস্য – এই ভাবে মৎপরায়ণ হয়ে অনন্য যোগের দ্বারা আমার উপাসনা ও ধ্যান করেন, মদগতচিত্তে সেই সকল ভক্তকে আমি মৃত্যুময় সংসার থেকে অচিরে উদ্ধার করি| অতএব তুমি আমাতেই মন সমাহিত কর, আমাতেই বুদ্ধি নিবিষ্ট কর| এইরূপ করলে তুমি নিশ্চয়ই আমাতেই স্থিতিলাভ করবে| তিনি বললেন – আমাতে যদি স্থির ভাবে চিত্ত সমাহিত করতে না পার তবে অভ্যাস যোগের দ্বারা আমাকে লাভ করতে যত্ন কর| তাহাতেও যদি সমর্থ না হও তবে ভগবৎ প্রীতিকর কর্মে একনিষ্ঠ হও| কারণ আমার কর্ম করতে করতেই তুমি ক্রমে সিদ্ধি লাভ করবে| আর ইহাতেও যদি অক্ষম হও তবে ইন্দ্রিয় সংযম পূর্বক আমাতে সর্ব কর্ম সমর্পণরূপ যোগ আশ্রয় করে সর্বপ্রকার কর্মের ফল ত্যাগ কর| তিনি জানালেন যে অবিবেকপূর্বক অভ্যাস অপেক্ষা জ্ঞান শ্রেষ্ঠ| জ্ঞান অপেক্ষা জ্ঞানপূর্বক ধ্যান শ্রেষ্ঠ| জ্ঞানপূর্বক ধ্যান অপেক্ষা কর্মফল ত্যাগ শ্রেষ্ঠ|
পরবর্তী কয়েকটি শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কারা তাঁর প্রিয় ভক্ত তা জানালেন| তিনি বললেন – যিনি কাহাকেও উদ্বিগ্ন করেন না, যিনি কাহারও দ্বারা উদ্বিগ্ন হন না, যিনি হর্ষ ও বিষাদ, ভয় ও উদ্বেগ হতে মুক্ত, যিনি নিঃস্পৃহ, বাহ্যাভ্যন্তর শুচি, দক্ষ, পক্ষপাতশুন্য, ভয়হীন, সকাম কর্মের অনুষ্ঠান ত্যাগী, যিনি ইষ্ট ও অনিষ্ট প্রাপ্তিতে দ্বেষ করেন না, অপ্রাপ্ত ইষ্টবস্তু আকাঙ্খা করেন না, শুভাশুভ সকল কর্ম পরিত্যাগ করেছেন, যিনি আসক্তিহীন, যিনি শত্রু ও মিত্রে সমবুদ্ধি, যিনি সম্মানে ও অসম্মানে অবিচলিত, যিনি শীতোষ্ণজনিত সুখে ও দুঃখে নির্বিকার, পরমাত্মাতে স্থিরবুদ্ধি, প্রশংসায় হর্ষ ও নিন্দায় বিষাদশুন্য, যিনি সংযতবাক, সর্ব অবস্থায় সন্তুষ্ট এবং যিনি নির্দিষ্ট বাসস্থানহীন, যিনি মৎপরায়ণ ভক্ত, যিনি মোক্ষদায়ক ধর্ম উক্ত প্রকারে শ্রদ্ধাসম্পন্ন হয়ে সাধন করেন – এঁরাই হলেন আমার প্রিয় ভক্ত|
ভক্তিযোগ নামে ভগবত গীতার দ্বাদশ অধ্যায়ের সমাপ্তি|

অসীম ভট্টাচার্য

( ক্রমশঃ )

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।

সেকালের জনপ্রিয় লেখক ও তাঁদের লেখা

পুরনো দিনের পত্রিকা ও বই থেকে নির্বাচিত প্রবন্ধ