বিমল
রায় (১৯০৯ - ১৯৬৬)
বি
এন সরকারের নিউ থিয়েটার্সে যে সব বিখ্যাত চিত্রপরিচালকের হাতে
খড়ি হয়েছিল, তাঁদের অন্যতম হলেন বিমল রায়। সম্ভ্রান্ত পরিবারের
ছেলে বিমল রায় ফটোগ্রাফি ভালোবাসতেন। নিউ থিয়েটার্সে তিনি যোগ
দেন ক্যামেরাম্যান হিসেবে। ১৯৩৫ সালে প্রমথেশ বড়ুয়া পরিচালিত
'দেবদাস' ছবিতে তিনি ক্যামেরাম্যান ছিলেন। পরে প্রমথেশ বড়ুয়ার
'মুক্তি' ছবিতেও ক্যামেরাম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু
ইচ্ছে ছিল পরিচালক হবার। সে সুযোগ এলো ১৯৪৪ সালে 'উদয়ের পথে'
ছবিতে। পরের বছর এই বাংলা ছবিটি হিন্দীতে তোলা হল 'হামরাহী'
নাম দিয়ে। ছবিটি অসামান্য সাফল্য লাভ করল।
নিউ থিয়েটার্স বন্ধ হয়ে
যাবার পর বিমল রায় মুম্বাইয়ে হিমাংশু রাই-দেবিকা রাণী প্রতিষ্ঠিত
বোম্বে টকিজে যোগ দেন। সেখানে 'মা' ও শরত্চন্দ্রের 'পরিণীতা'
ছবি তোলার পর নিজেই একটি ছবির কোম্পানী খোলেন। বিমল রায় প্রডাকশনের
প্রথম ছবি ছিল 'দো বিঘা জমিন'। ইতালীর নিওরিয়ালিস্টিক ছাঁদে
তোলা এই ছবি বক্স অফিসে খুব একটা সাফল্য লাভ না করলেও দেশী ও
বিদেশী চিত্র-সমালোচকদের অকুণ্ঠ প্রশংসা পায়।
বিমল রায়ের সবচেয়ে জনপ্রিয়
ছবি নিঃসন্দেহে 'মধুমতী'। ঋত্বিক ঘটকের লেখা কাহিনী, সুরকার
ছিলেন সলিল চৌধুরী। নিছক বিনোদনের জন্য এই ছবি - ক্যামেরার কাজ
আর সুরের জন্য হিন্দী সিনেমা জগতে চিরস্থায়ী আসন পেল। অনেকের
মতে - সুরকার হিসেবে মধুমতীই সলিলের শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তবে বিমল
রায়ের মধ্যে সব সময়েই ছিল একটা সমাজ-সচেতনতা। 'দো বিঘা জমিন'
দিয়ে নিজের প্রডাকশন শুরু করেছিলেন - ১৯৫৮ সালে মধুমতী মুক্তি
পাবার পর সেই সচেতনতাই তাঁকে উদ্বুদ্ধ করল সুবোধ ঘোষের লেখা
উপন্যাস 'সুজাতা' চিত্রায়িত করতে। ১৯৫৯ সালে সুজাতা মুক্তি পায়।
সংবেদনশীল মন নিয়ে বিমল রায়ের সুসংযত পরিচালনা ও নায়িকা নূতনের
অপূর্ব অভিনয় সুজাতা ছবির মস্ত সম্পদ। নূতনের অভিনয় প্রতিভাকে
তিনি আবার কাজে লাগালেন জরাসন্ধের লৌহকপাট থেকে নেওয়া গল্প 'বন্দিনী'
ছবিতে।
বাংলা চলচ্চিত্রের দুর্ভাগ্য
যে বিমল রায় বাংলা ছবি আর করলেন না। তবে বাংলা গল্প ও উপন্যাসের
স্বাদ তিনি বহু অবাঙালীর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন হিন্দী ছবির মাধ্যমে।
১৯৬৬ সালে এই বিখ্যাত চলচ্চিত্রকারের মৃত্যু হয়।