প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

দেবিকা রানী (১৯০৭ - ১৯৯৪)*

দেবিকা রানীর বাবা ছিলেন সেনাবিভাগের ডাক্তার কর্নেল এন. চৌধুরী । মা লীলা চৌধুরী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ভাগ্নী । ছোটবেলাতেই তিনি ইংল্যাণ্ডে যান । সেখানে আর্কিটেকচার ও সেই সঙ্গে টেক্সটাইল ডিসাইন নিয়ে পড়াশুনো করেন । ব্রুস উলফের আর্ট স্টুডিওতে কাজ করার সময়ে অপরূপ সুন্দরী দেবিকা রানী হিমাংশু রাইয়ের তৃতীয় নির্বাক চিত্র, এ থ্রো অফ ডাইস ছবিতে সেট ডিসাইনে সাহায্য করতে ভারতবর্ষে আসেন । সেই ছবি প্রস্তুতকালে বাইশ বছরের দেবিকা রানীর সঙ্গে বয়সে পনেরো বছরের বড় হিমাংশু রাইয়ের প্রেম হয় এবং ছবি শেষ হতে না হতেই ওঁদের বিয়ে হয় ।

বিয়ের পর হিমাংশু রাইয়ের সঙ্গে দেবিকা রানী জার্মানীতে যান । হিমাংশু রাই সবাক চিত্র তৈরি করার চিত্র-নির্মানের খুঁটিনাটি ভালো করে শিখতে চান । তাই জার্মানীর ইউ.এফ. এ স্টুডিওর বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে ছবি তোলার প্রযুক্তিগত কৌশলগুলি ওঁরা ভালো করে শেখেন । আর সেই সঙ্গে দেবিকা রানী শেখেন সে-যুগের নামকরা শিক্ষকদের কাছে অভিনয় করার বিদ্যা ।

হিমাংশু রাই তাঁর প্রথম সবাক ছবি কর্ম (১৯৩৩) করলেন ইংরেজিতে । নায়ক হিমাংশু রাই, নায়িকা দেবিকা রানী । মামুলী গল্প । কিন্তু তাও ইংল্যাণ্ডে প্রশংসিত হল দেবিকা রানীর অভিনয় । সমালোচকরা মুখর হলেন ওঁর রূপের বর্ণনায় । লণ্ডনের ষ্টার পত্রিকায় এক মুগ্ধ সমালোচক দেবিকা রানী সম্পর্কে লিখলেন - যার অনুবাদ করলে দাঁড়ায় , "এর থেকে ভালো কণ্ঠস্বর বা কথা বলার ধরণ আর কোথাও শুনতে পাবে না, এতো সুন্দর মুখও আর কোথাও দেখতে পাবে না ।"
স্টার-এর সঙ্গে সুর মেলালো ডেলি ডেসপ্যাচ । ডেলি ডেসপ্যাচের সমালোচক লিখলেন, "বলতে গেলে বিশ্বের ছবির পর্দায় এখন পর্যন্ত যে সব নারীরা এসেছেন, তাঁদের মধ্যে দেবিকা রানী সবচেয়ে সুন্দরী ।"

দেশে ফিরে হিমাংশু রাই আর দেবিকা রানী স্থাপন করলেন তাঁদের স্বপ্ন বোম্বে টকিজ । উদ্দেশ্য সত্যিকারের ভালো হিন্দী ছবি তৈরী করা । বোম্বে টকিজের প্রথম ছবি ছিল ১৯৩৫ সালের জওয়ানী কি হাওয়া । হত্যা রহস্যের উপর গড়ে ওঠা এই ছবিটিতে দেবিকা রানীর বিপরীত ভূমিকায় ছিলেন নাজাম-উল-হুসেন । তারপরেই ঘটল এক অঘটন । ছবি তোলা শেষ হতে না হতেই দেবিকা রানী নাজাম-উল-হুসেনের সঙ্গে গোপনে গৃহত্যাগ করলেন । পরে অবশ্য তিনি হিমাংশু রাইয়ের কাছেই ফিরে আসেন । দেবিকা রানীকে গ্রহণ করলেও নাজাম-উল-হুসেনকে হিমাংশু রাই ক্ষমা করেন না । ফলে পরের ছবি জীবন নয়া-তে (১৯৩৬) বোম্বে টকিজের ল্যাবে কর্মরত অশোককুমারকে দেবিকা রানীর বিপরীতে নায়ক নামানো হয় । দেবিকা রানী-অশোককুমার জুটি এর পর বেশ কয়েকটি রোম্যাণ্টিক ছবি করেন । দ্বিতীয় ছবি অছ্যুত্ কন্যা (১৯৩৬) ওঁদের দুজনকেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে তুলে দেয় ((নীচের ভিডিওটা দেখুন))।

এছাড়া দেবিকা রানী মমতা (১৯৩৬), জীবন প্রভাত (১৯৩৭), বচন (১৯৩৮), ইত্যাদি বহু ছবির নায়িকা ছিলেন ।

১৯৪০ সালে হিমাংশু রাইয়ের মৃত্যুর পর দেবিকা রানীকে বোম্বে টকিজ চালানো ভার দেওয়া হয় এবং দক্ষতার সঙ্গে সেটিকে তিনি কিছুদিন চালান । পুনর্মিলন (১৯৪০), কিসমত্ (১৯৪১), বসন্ত (১৯৪২) - এগুলি তাঁর আমলেই তৈরি হয়েছিল । সেই সঙ্গে অভিনয়ও করছিলেন । ১৯৪৩ সালে জয়রাজের বিপরীতে হামারি বাত (১৯৪৩) ছবিটি করার পর অভিনয় করা ছেড়ে দেন । বোম্বে টকিজের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিরোধ ও ছবি তৈরির আর্থিক সমস্যা ইত্যাদিতে বিরক্ত হয়ে দেবিকা রানী বোম্বে টকিজও ত্যাগ করেন ।

১৯৪৫ সালে তিনি বিয়ে করেন রাশিয়ান চিত্রকর স্বেতোশ্লাভ রোরিককে (Svetoslav Roerich) । প্রথমে উত্তর ভারতে পরে ব্যাঙ্গালোরে একটি বিরাট কম্পাউণ্ড যুক্ত বাংলোতে ওঁরা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত থাকেন । দেবিকা রানী ছবি ও আর্টের জগত থেকে একেবারে সরে যান নি । সঙ্গীত নাটক একাডেমি, ললিত কলা একাডেমি এবং ফিল্ম সেন্সার বোর্ডে তিনি কিছুদিন যুক্ত ছিলেন । বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থার সঙ্গেও ওঁর যোগ ছিলো । ১৯৫৮ সালে দেবিকা রানীকে পদ্মশ্রী দেওয়া হয় । ১৯৭০ সালে দাদা সাহেব ফালকের প্রথম পুরস্কার পান দেবিকা রানী । রোরিকের মৃত্যু হয় ১৯৯৩ সালে । তার এক বছরের মধ্যেই নিঃসন্তান দেবিকা রানী পরলোক গমন করেন ।

_____________
* দেবিকা রানীকে বাংলা চলচ্চিত্রের সঙ্গে পথিকৃত কোনোমতেই বলা চলে না । বাংলা ছবিতে তিনি অভিনয় করেন নি । কিন্তু তিনি ছিলেন বাঙালী এবং ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের এককালের সাম্রাজ্ঞী । সর্বোপরি স্বামী হিমাংশু রাইয়ের সঙ্গে বোম্বে টকিজ প্রতিষ্ঠা করে ভারতীয় ছায়াছবির জগতকে তিনি গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিলেন । সেই সব ভেবেই ওঁকেও আমরা এখানে অন্তর্ভুক্ত করলাম ।

 

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।