বিখ্যাত
নেতা বিপিন চন্দ্র পালের পুত্র। কম বয়সে বিপ্লবী দলের সংস্পর্শে
আসেন। ওঁকে ইংল্যাণ্ডে পাঠানো হয় ডাক্তারি পড়ার জন্য। নিরঞ্জন
ডাক্তারি পড়লেন না। ১৯১৩ সালে ন্যাচেরাল কালার কিনেটোগ্রাফ কোম্পানীতে
যোগ দিলেন। লিখলেন ছোট ছোট গল্প, নাটক ও চিত্রনাট্য। কয়েকটি
চিত্রনাট্য (স্ত্রিïপ্ট) বিক্রিও হল। ১৯১৫ সালে তোলা ইংল্যাণ্ডের
প্রথম দিকের নির্বাক ছবি 'ফেইথ অফ এ চাইল্ড' তৈরি হয়েছিল ওঁর
স্ত্রিïপ্টের উপর ভিত্তি করে। ১৯৩১ সালে তোলা সিনক্লেয়ার হিল-এর
ছবি 'এ জেণ্টলম্যান অফ প্যারিস' তৈরি হয়েছিল ওঁর লেখা উপন্যাস
'হিজ অনার দ্য জাজ'-এর উপর ভিত্তি করে।
লণ্ডনে থাকাকালীন তিনি
ইণ্ডিয়ান প্লেয়ার্স গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন এবং বেশ কয়েকটি নাটক
মঞ্চস্থ করেন। সেই সূত্রেই হিমাংশু রাইয়ের সঙ্গে ওঁর যোগাযোগ
হয়। বুদ্ধের জীবনী নিয়ে একটি সিনেমা তৈরি করার প্রস্তাব সম্ভবত
উনিই হিমাংশু রাইকে দেন। ওঁর স্ত্রিïপ্টের উপর ভিত্তি করেই তৈরি
হয় হিমাংশু রাইয়ের 'প্রেম সন্ন্যাস' (লাইট অফ এশিয়া, ১৯২৫) ছবিটি।
এর পর হিমাংশু রাইয়ের আরও দুটি ছবি - শিরাজ (১৯২৮) ও প্রপঞ্চ
পাশ-এর (১৯২৯) স্ত্রিïপ্ট উনিই লেখেন।
১৯২৯ সালে নিরঞ্জন পাল
কলকাতায় ফিরে আসেন। মধু বসু, চারু রায় ও প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর
সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করেন কলকাতার ইণ্ডিয়ান প্লেয়ার্স গ্রুপ।
লণ্ডনে করা ওঁর একটি নাটক 'দ্য গডেস' মঞ্চস্থ করা হয় কলকাতায়।
ওঁর লেখা আরেকটি নাটক 'জারিনা' মধু বসু তাঁর নিজের থিয়েটার গ্রুপ
দিয়ে মঞ্চস্থ করেন। জারিনা পরে ছবিতেও রূপায়িত হয়েছিল।
পরিচালক হিসেবে নিরঞ্জন
পাল কম কাজই করেছেন। ওঁর পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য ছবি হল স্বরচিত
কাহিনীর উপর ভিত্তি করে বাংলা ছবি 'শুকতারা' (১৯৪০) ও ছোটদের
জন্য স্বল্প দৈর্ঘের ছবি 'হাতেখড়ি' (১৯৩৯)। এছাড়া বাণিজ্য সংস্থার
জন্য কিছু প্রমোশনাল ছবি করেছিলেন ও আরোরা কোম্পানীর জন্য করেছেন
কিছু নিউজ রিল।
১৯৩৪ সালে উনি বোম্বেতে
গিয়ে হিমাংশু রাই ও দেবিকা রানীর বোম্বে টকিজে যোগ দেন। ১৯৩৬
সালের বোম্বে টকিজের দুটি বিখ্যাত ছবি 'অছ্যুত্ কন্যা' ও 'জীবন
নয়া' - ওঁরই লেখা। সব গল্পে ছবি হয় না - করলেও তা উতরায় না।
কোন গল্পে ছবি হবে - এই মন্ত্রটি নিরঞ্জন পালের জানা ছিলো। তাই
ওঁর বহু স্ত্রিïপ্ট চলচ্চিত্রে পরিণত হয়ে জনপ্রিয় হয়েছে। ওঁর
আত্মজীবনী 'সাচ ইস লাইফ' ওঁর মৃত্যুর পরে ন্যাশেনাল ফিল্ম ক্রিটিক্স
পুরস্কার পায়।