প্রেমাঙ্কুর
আতর্থী (১৮৯০-১৯৬৪)
চিত্র-পরিচালক হিসেবে
প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর যা পরিচিতি তার ঢের বেশি পরিচিতি লেখক হিসেবে।
গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ মিলিয়ে ওঁর রচনা সংখ্যা প্রচুর। তবে
আর কিছু না লিখে শুধু মহাস্থবির জাতক - বইটি লিখলেও বাংলা সাহিত্যজগতে
ওঁর আসনটি পাকা হয়েই থাকতো। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আত্মজীবনীমূলক
এই বইয়ে নিজের জীবনের মাত্র ২৫ টি বছর উনি ধরে রাখবেন স্থির
করেছিলেন। নইলে সেই সময়কার সিনেমা জগতের একটি সুন্দর পরিচিতি
আমরা এই দক্ষ লেখকের হাত থেকে পেতাম। ভারতী পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত
ছিলেন। হেমেন্দ্র কুমার রায় আর চলচ্চিত্রকার পশুপতি চট্টোপাধ্যায়ের
সঙ্গে নাচঘর পত্রিকাও কিছুদিন সম্পাদনা করেছিলেন। ১৯২৯ সালে
উনিই অল ইণ্ডিয়া রেডিও-র বেতার-জগত্ পত্রিকাটি শুরু করেন।
১৯৩১
সালের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র 'দেনা পাওনা'
কৃষ্ণ হালদার ছদ্মনাম নিয়ে
অভিনয় জগতের শুরু। নির্বাক চিত্র পুনর্জন্ম (১৯২৭) ছিল ওঁর প্রথম
বই। পরে ১৯৩২ সালে নতুন করে সবাক পুনর্জন্ম তৈরি করা হয়। ১৯২৭
সাল থেকেই বি এন সরকারের কোম্পানীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অভিনয়
অল্পই করেছেন - মূলতঃ গল্প ও চিত্রনাট্য লেখার জন্যেই যোগ দিয়েছিলেন।
পরে চিত্র পরিচালনার দায়িত্ব পান। নিউ থিয়েটার্সের প্রথম সবাক
চিত্র দেনা পাওনা-র পরিচালনা তিনিই করেন। দেনা পাওনা মুক্তি
পাবার অল্প কিছু আগে ম্যাডান থিয়েটারের জামাই-ষষ্ঠী মুক্তি পাওয়ার
দরুণ দেনা-পাওনা প্রথম বাঙলা সবাক চিত্র হবার সন্মান থেকে বঞ্চিত
হয়। নিউ থিয়েটার্সের হয়ে বেশ কিছু উর্দু ছবিও প্রেমঙ্কুর করেছিলেন।
১৯৩৫ সালে ওঁর পরিচালনায় ইহুদি কি লড়কি মুক্তি পায় - যেটি সে
যুগের অন্যতম জনপ্রিয় ছবি। ঐ একই বছরে উনি কপালকুণ্ডলা ছবিটি
পরিচালনা করেন। ওঁর শেষ ছবি ১৯৫০ সালের সুধার প্রেম।
জীবনের শেষ দশ বছর বিশেষ
অসুস্থতার মধ্যে কাটান। তখন শুধু লেখালেখির কাজই করেছেন। মহাস্থবির
জাতকের চতুর্থ ও শেষ পর্বটি এই সময়েই অল্প অল্প করে শেষ করেন।
শেষের দিকে নিজের লেখারও ক্ষমতা ছিলো না। শুধু মুখে বলতেন কি
লিখতে চান। বইটি ওঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়।