কুন্দলাল
সাইগল
কুন্দলাল
সাইগলের জন্ম জম্মুতে। পিতা
অমর চাঁদ ছিলেন জম্মু ও কাশ্মীর রাজার তহশিলদার। মা কেশরবাই
গান ভালোবাসতেন এবং ছেলেকে নানা ধর্মীয় সঙ্গীতের আসরে নিয়ে যেতেন।
সেই থেকেই গানের প্রতি আকর্ষণ জন্মায়। পড়াশুনোয় উত্সাহ ছিল না।
তাই তাতে ইতি দিয়ে প্রথমে কিছুদিন রেলওয়েতে কাজ করেছিলেন, পরে
সেলসম্যানের একটা কাজ পান। কিন্তু ওঁর ইচ্ছা গানের জগতে আসবেন।
গান গাইতে পারতেন, যদিও রীতি মাফিক শিক্ষা নেবার সুযোগ কখনো
পান নি। ভাগ্যচক্রে রাইচাঁদ বড়ালের সঙ্গে ওঁর যোগাযোগ হয়ে যায়।
রাইচাঁদ তখন নিউ থিয়েটার্সের সঙ্গে যুক্ত। সাইগলের মধ্যে রাইচাঁদ
প্রতিভার স্ফুরণ দেখলেন। নিউ থিয়েটার্সে ওঁর চাকরি হল।
নিউ থিয়েটার্সে সাইগল পঙ্কজ
মল্লিক, তিমিরবরণ, কে-সি দে-র মত বড় বড় সঙ্গীতকারের সংস্পর্শে
এলেন । কাজ করার সুযোগ পেলেন প্রমথেশ বড়ুয়া, দেবকী বসু, ফনী
মজুমদারের মত পরিচালকদের সঙ্গে। সঙ্গীত ও অভিনয় জগতে সাইগলের
অপরিসীম সাফল্যের মূলে এঁদের সবার অবদানই অল্পবিস্তর ছিল।
সিনেমা
জগতে সাইগলের সবচেয়ে বড় সুযোগ আসে, যখন ১৯৩৬ সালে প্রমথেশ বড়ুয়া
হিন্দী দেবদাসে নিজে অভিনয় না করে যমুনা বড়ুয়ার (পারু) বিপরীতে
সাইগলকে (দেবদাস) অভিনয় করতে বলেন। এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার
সাইগল করতে সমর্থ হন। শুধু অভিনয়ে দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করা
নয়, দেবদাসের প্রতিটি গান জনপ্রিয়তা শীর্ষে ওঠে। এই একটি ছবির
দৌলতেই সাইগল সেই সময়কালে সুপারস্টার খ্যাতি অর্জন করেন।
৪০ দশকের প্রথমে সাইগল মুম্বাইয়ে চলে যান এবং মূলতঃ হিন্দী ছবিতেই
অভিনয় করেন। ৪০ দশকের মাঝামাঝি তাঁর মদ্যপানের মাত্রা বেড়ে যায়।
অসংযত জীবনযাত্রার ফল তাঁর স্বাস্থ্য ও কর্মজগত - দুয়েই প্রতিফলিত
হয়। ১৯৪৭ সালে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে পাঞ্জাবের জলন্ধর শহরে সাইগল
তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সাইগলের ৩৬ ছবির মধ্যে
মাত্র ৭ টি ছিল বাংলায় (দিদি, সাথী, ইত্যাদি)। সিনেমা ও সিনেমার
বাইরে (গজল, ভজন ইত্যাদি গান) ২৫০ টির মত গান তিনি গেয়েছেন,
তাদের মধ্যে মাত্র ৫০ টি ছিল বাংলা গান। কিন্তু তা সত্বেও নিউ
থিয়েটার্সের কৃতি সন্তান সাইগলকে সে-যুগে বাঙালীরা নিজেদের একজন
হিসেবেই দেখেছেন।