ছবি
(শচীন্দ্রনাথ) বিশ্বাস (১৯০০ -১৯৬২)
কলকাতায়
জন্ম। যাত্রা ও থিয়েটারে বরাবরই উত্সাহ ছিল। প্রেসিডেন্সী কলেজে
পড়ার সময় এমেচার থিয়েটার করেছেন - শিশির ভাদুড়ী নরেশ মিত্রের
মত বড় বড় অভিনেতাদের সঙ্গে। সম্ভ্রান্ত জমিদার বংশের ছেলে। জমিদারী
গেলেও - তার মেজাজটা তাঁকে কোনদিন ছেড়ে যায় নি। অভিনেতা বিকাশ
রায়ের কথায়, "ছবিদা ছিলেন লাস্ট অফ দ্য এরিষ্টোক্রাটস্।
তা কী অভিনয়ে, কী পারিবারিক চালচলনে।"
পেশাদার হিসেবে চিত্রজগতে এসেছেন অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সে। ১৯৩৬
সালের অন্নপূর্ণার মন্দির হল ওঁর প্রথম ছবি। এর পর অজস্র ছবিতে
উনি অভিনয় করেন প্রথম দিকের কয়েকটিতে নায়কের চরিত্রে - পরে পাশ্র্বচরিত্রে।
অসামান্য দক্ষ অভিনেতা। সত্যজিত রায়ের জলসাঘর-এ (১৯৫৮) এক নিঃস্ব
জমিদারের আভিজাত্য আঁকড়ে রাখার করুণ চেষ্টা - ছবি বিশ্বাসের
মর্মস্পর্শী অভিনয়ে পূর্ণ বাস্তবতা পেয়েছে। সত্যজিত সুযোগ পেলেই
ওঁর অভিনয়-প্রতিভাকে কাজে লাগিয়েছেন - যেমন, পরশ পাথর (১৯৫৭),
দেবী (১৯৬০) ও কাঞ্চনজঙঘা (১৯৬২) ছবিতে। তপন সিংহের কাবুলিওয়ালা-তে
(১৯৫৬) কাবুলিওয়ালার ভূমিকায় ছবি বিশ্বাসের অনবদ্য অভিনয় দর্শকরা
ভুলতে পারবেন না। অভিনয় করেছেন অজস্র ছবিতে। পঞ্চাশ দশকের প্রথম
থেকে ১৯৬২ সালে ওঁর মৃত্যু পর্যন্ত ভালো বাংলা ছবি অল্পই মুক্তি
পেয়েছিল - যেখানে উনি অভিনয় করেন নি।
এমেচার নাটক দিয়ে জীবন
শুরু করে পেশাদারী রঙ্গমঞ্চেও তিনি নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে
পেরেছিলেন। ১৯৩৮ সাল থেকে পেশাদার হিসেবে নাট্যনিকেতনে যোগ দেন।
দেবদাস, কাশীনাথ, সিরাজ-উদ-দৌলা, ইত্যাদিতে প্রধান ভূমিকায় ছিলেন।
এছাড়া সমাজ, দুই পুরুষ, বিজয়া, ইত্যাদি নাটকেও ওঁকে আমরা পেয়েছি।
যদিও শেষের দিকে ব্যস্ততার জন্য মঞ্চাভিনয়ে অতটা সময় দিতে পারেন
নি। পেশাদারী জীবনের প্রথম দিকে দুটি ছবিও উনি পরিচালনা করেছিলেন
- ১৯৪৪ সালে 'প্রতিকার' ও ১৯৪৯ সালে 'যার যেথা ঘর'। কিন্তু পরিচালক
হিসেবে তিনি বিশেষ সাফল্য লাভ করেন নি।
১৯৫৯ সালে সঙ্গীত নাটক
একাডেমী ওঁকে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সন্মান দেয়। মাত্র ৬২ বছর বয়সে
মোটর দুর্ঘটানায় ওঁর জীবনাবসান হয়।