দুর্গাদাস
বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৩-১৯৪৩)
দুর্গাদসের জন্ম ২৪ পরগণার কালিকাপুরে।
১৯২২ সালে ওঁর যখন ২৯ বছর বয়স তখন শিশির ভাদুড়ী ওঁকে বিষবৃক্ষ
সিনেমায় অভিনয় করানোর জন্য নিয়ে আসেন। সেই থেকে ৩০ দশকের শেষ পর্যন্ত
উনি ছিলেন বাংলা চিত্র-জগতে একজন বিশিষ্ট নায়ক। সম্ভ্রান্ত জমিদার
পরিবারের ছেলে দুর্গাদাসের আচরণে সব সময়ে একটা আভিজাত্যের ভাব
প্রকাশ পেত। সেটা ভালো কি মন্দ সে প্রশ্ন না তুলে বলা যেতে পারে
যে, এর ফলে অন্যান্য অনেক অভিনেতাদের থেকে তিনি যেন একটু আলাদা
ভাবে দেখা দিতেন। বহু ছবিতে অভিনয় করেছেন। নির্বাক যুগের ছবিগুলির
মধ্যে আছে, চন্দ্রনাথ (১৯২৪), কৃষ্ণকান্তের উইল (১৯২৬), কপালকুণ্ডলা
(১৯২৯), ইত্যাদি। প্রসঙ্গতঃ ১৯৩৩ সালে যখন কপালকুণ্ডলার সবাক ছবি
তোলা হয় তখন দুর্গাদাসই তাতে নায়ক ছিলেন। কিন্তু প্রথম সবাক ছবি
ছিল চিরকুমার সভা (১৯৩২) - সেটিও ছিল শিশির ভাদুড়ী পরিচালিত। ঐ
একই বছরের ছবি - দেবকী বসু পরিচালিত কাব্যধর্মী চিত্র চণ্ডীদাসে
তিনি ছিলেন উমাশশীর বিপরীতে । (প্রসঙ্গতঃ চণ্ডীদাসের হিন্দী সংস্করণে
ওঁর চরিত্রে সাইগল অভিনয় করে নিজেকে চিত্রজগতে প্রতিষ্ঠিত করেন)।
পরে দেবকী বসুর কাব্যধর্মী আরেকটি বিখ্যাত ছবি বিদ্যাপতি-র (১৯৩৮)
বাংলা সংস্করণেও দুর্গাদাস রাজার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন (হিন্দীতে
সেই চরিত্রে ছিলেন পৃথ্বিরাজ কাপুর)। ১৯৩৩ সালে তিনি সবাক কপালকুণ্ডলাতেও
নায়কের ভূমিকায় ছিলেন।
১৯২৩ সালে কর্ণার্জুন দিয়ে দুর্গাদাসের
নাট্যাভিনয় শুরু। তারপর বহু নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। কর্ণ ও অর্জুনের
দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করাটাই বোধহয় ছিল বোধহয় নাট্যজীবনে ওঁর সবচেয়ে
কঠিন কাজ। স্টেজে দুর্গাদাসের অভিনয় সে-যুগের দর্শকদের ছিল মস্ত
একটি আকর্ষণ। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে দুর্গাদাসের মৃত্যু হয়। কিন্তু
কখনো থেমে থাকেন নি উনি। তাঁর ছবি অবতার মুক্তি পেয়েছিল ১৯৪৩ সালে
- যেবছর তাঁর মৃত্যু হয়। দুর্গাদাসের অভিনয় যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের
অনেকেই এখন গত। কিন্তু যাঁরা আছেন, তাঁরা এখনও দুর্গাদাসের সমকক্ষ
বিশেষ কাউকে পান না।