কাননদেবী
(১৯১৬ - ১৯৯২)

কাননদেবীর
বয়স যখন মাত্র ৫ বছর তখন তাঁর বাবা রতন চন্দ্র দাসের মৃত্যু
হয় । অর্থাভাবের মধ্যে মা রাজবালাদেবী সংসার চালাচ্ছিলেন । দশ
বছর বয়সে সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাননদেবী 'জয়দেব' ছবিতে
একটি কম বয়সী মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন । সেই থেকেই শুরু হয়
চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে কাননদেবীর চিরস্থায়ী সম্পর্ক । ১৯৩১ সালে
মাত্র পনেরো বছর বয়সে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ আসে । রাধা
ফিল্মসের সেই ছবি - 'জোরবরাত'-এর পরিচালক ছিলেন জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়,
নায়ক জয়নারায়ণ মুখোপাধ্যায় । । কাননদেবী (তখন তিনি কাননবালা
বলে পরিচিত ছিলেন) ভালো গান গাইতেন । কিন্তু ছবির জগতে যখন প্রবেশ
করেন, তখন ওঁর গানের গলাটাই শুধু ছিল । মেয়েকে সঙ্গীত শিক্ষা
দিতে পারার মত সচ্ছলতা রাজবালাদেবীর ছিল না । পরে অবশ্য কাননদেবী
ওস্তাদ আল্লা রাখার কাছে তালিম নিয়েছিলেন । যখন মেগাফোন কোম্পানীতে
গাইবার চাকরি পান, তখন ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের কাছেও সঙ্গীতশিক্ষার
সুযোগ পান । পরে তিনি অনাদি দস্তিদার, পঙ্কজ মল্লিক প্রমুখের
কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখেন ।
শোনা যায় প্রমথেশ বড়ুয়া
নাকি কাননদেবীকে তাঁর 'দেবদাস' ছবির জন্য চেয়েছিলেন, কিন্তু
চুক্তিগত কারণে তাঁকে পান না । তাঁর বদলে যমুনা বড়ুয়া দেবদাসে
পারুর ভূমিকায় অভিনয় করে । পরে কাননদেবী নিউ থিয়েটার্সে যোগ
দিলে বড়ুয়া তাঁকে তাঁর ১৯৩৭ সালে তোলা 'মুক্তি' ছবিতে অভিনেত্রী
হিসেবে পান । অসামান্য সুন্দরী কাননদেবীর শ্রেষ্ঠ ছবি সম্ভবত
সেই একই বছরে তোলা বিদ্যাপতি ।
সে সময়ে বিভিন্ন ভাষায় একই ছবি তোলা হত । গানে ও অভিনয়ে হিন্দী
ও বাংলা - দুটো ছবিতেই কাননবদেবী জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছিলেন
। ১৯৪১ সালে কানদেবী নিউ থিয়েটার্স ছেড়ে নিজের পছন্দমত বইয়ে
অভিনয় শুরু করেন । সেই সময়কার ছবির মধ্যে ১৯৪২ সালে তোলা প্রমথেশ
বড়ুয়া পরিচালিত 'শেষ উত্তর' ও তার হিন্দী 'জবাব' ছবিটি বিশেষ
উল্লেখের দাবী - আর কিছু না হোক, অন্ততঃ তাঁর 'তুফান মেল' গানটির
জন্য ।
১৯৪৯ সালে কাননদেবী শ্রীমতী
পিকচার্স স্থাপন করে ফিলম প্রযোজনার দিকে মন দেন । তাঁর দ্বিতীয়
স্বামী (প্রথম স্বামী ছিলেন অশোক মৈত্র) হরিদাস ভট্টাচার্য শ্রীমতী
পিকচার্সের হয়ে শরত্চন্দ্রের অনেক গল্প চিত্রায়িত করেছিলেন ।
কাননদেবী অভিনয় জীবন শেষ হবার পরে অনেক সেবামূলক কাজে নিজেকে
যুক্ত করেন । দুঃস্থ বয়স্ক শিল্পীদের সাহায্যের জন্য তিনি সব
সময়ে সক্রিয় ছিলেন । ১৯৬৮ সালে উনি পদ্মশ্রী পান । ১৯৭৩ সালে
প্রকাশিত হয় তাঁর জনপ্রিয় আত্মজীবনী 'সবারে আমি নমি' । ১৯৭৭
সালে তাঁকে দেওয়া হয় দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার ।