প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

গুজরাতে কয়েকদিন

কচ্ছ প্রদেশের ছোটা রাণ

রাস্তার দুপাশে যত দূর দৃষ্টি যায় শুধু সাদা আর সাদা। হঠাৎ দেখলে মনে হবে সাদা চাদর দিয়ে সব কিছু ঢেকে দেওয়া হয়েছে। কাছে গেলে বোঝা যায় মিহি নুন-এর আচ্ছাদনে সমস্ত কিছু ঢাকা। সমুদ্রের নোনা জল বর্ষার সময়ে রাস্তার দুপাশের জমিতে ভরে যায়। তারপর ধীরে ধীরে জল শুকতে থাকে আর পিছনে রেখে যায় নুনের সাদা চাদর। এর সৌন্দর্য চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয় না। এই নুনের সাগর রাস্তার দুধারে ১০কিমি পয্যন্ত বিস্তৃত। দুপাশ দুধ সাদা আর মাঝ দিয়ে কাল রাস্তা চলে গেছে। দেখার মতন সে দৃশ্য। এরই কিছু দুরে বিশাল এক লবণ হ্রদ, যেখানে দেখা পাবেন নানা প্রজাতির পরীজাই পাখিদের। দেখা পাবেন গাধা, নীল গাই, মরূ শেয়ালের এই কচ্ছর রাণে। মরূভুমির নানা ধরণের উদ্ভিদও চোখে পড়বে।

নুনের সাগর

ছোটা রাণের গাধা

নীল গাই

আর চখে পড়বে মানুষের তৈরি করা লবণ তৈরির ব্যবস্থা। নোনা জল এই বাঁধ দেওয়া চৌবাচ্চায় জমানো হয় যা ধিরে ধরে বাষ্প হয়ে উড়ে গেলে পেছনে ফেলে যায় সাদা নুনের আচ্ছাদন। এই নুন উৎপাদন এখানকার লোকেদের প্রধান জিবিকা। পৃথিবীর ৬৫ শতাংশ নুন এখান থেকে রপ্তানি হয়।
এখানে থাকার যে জায়গাটি পাওয়া গিয়েছিল, এক কথায় অপূর্ব। কচ্ছি গ্রামের আদলে তৈরি। জায়গাটির নাম “দাসাদা”। গ্রামটির নাম Runn Rider’s camp। খাওয়া-দাওয়া সম্পূর্ণ নিরামিষ। প্রায় সব রান্না প্রাদেশিক। থাকার ঘরগুলি অতি সুন্দর আর আরামপ্রদ।


ধোলাভিরা, হরপ্পান সভ্যতার ধংসাবশেষ

এই জায়গাটিতে দেখা যাবে বিখ্যাত হরপ্পা সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ। এখানে না এলে বুঝতে পারতাম না কয়েক সহস্র বছর আগেকার এই সভ্যতা্য় নগরনির্মাণক্ষমতা ও স্থাপত্য কলার দক্ষতা কোন পর্যায় পৌঁছেছিল। মানষর আর মরণ্ডমী নদীর প্রবাহ পথ ছিল এই নগরীর পাশ দিয়ে। নদীর জল পরিশোধন করার পন্থা দেখলে এখনও বিস্মিত হতে হয় আর বিস্মিত হতে হয় বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ভাবনা আর অপূর্ব কৌশল দেখে। সে যুগেও জল পুনঃ ব্যবহার করার কৌশল রপ্ত করে ছিল হরপ্পা সভ্যতার লোকেরা। এখানে একটা সংগ্রহশালা আছে, যেখানে দেখা যাবে খনন করা সব প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনগুলি। জায়গাটিতে তিনবার জনবসতি গড়ে উঠেছিল, প্রতিবার বন্যা আর ভূমিকম্পে সেগুলি ধ্বংস হয়। খনন কাজ ২০০৫ সাল থেকে বন্ধ আছে কোন অজানা কারণে। সারা গুজরাটে এরকম ধংশাবশেষ ছড়িয়ে আছে বহু জায়গায়।
প্রসঙ্গত এখানে Tourist resort-এর cottageগুলি গোলাকার। এই ভাবনাটি এসেছে তখনকার হরপ্পা গ্রামের স্থাপত্য কলাকে নকল করে। এই ভাবে বাড়ি বানালে তা যে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, সে জ্ঞান সে সময়কার মানুষ বোধহয় ঠেকে আবিক্ষার করেছিল। সে যাই হোক, cottageগুলিতে ব্যবস্থা অপ্রতুল – হয়তো খুব বেশি অতিথি এখানে রাত্রিবাস না করার জন্যেই ।


ভূজের রাজপ্রাসাদ

প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন মহাবীর সিংজি গজেলা অপর রাজার নাম লাখোপতীজি। প্রাসাদের বাইরের অংশ সম্পূর্ণ ইউরোপীয় শৈলীতে তৈরী। অন্দর মহলটি আবার পুরপুরি ভারতীয়। সমস্ত প্রাসাদটি ছোট-ছোট আয়না দিয়ে মোড়া। তার জন্য এটার নাম; আয়না মহল। একটি প্রদর্শনীশালা আছে। রাজাদের ব্যবহৃত বহু দ্রষ্টব্য সেখানে রাখা আছে। না দেখলে আপশোস থেকে যেত। ২০০৭-এর ভূকম্পে এই রাজপ্রাসাদের বেশ কিছুটা ধ্বংস হয়ে গেছে।


 

Greater Runn of Kutch.

আদি অন্তহীন নুনের প্রান্তর। যত দূর চোখ যায় শুধু সাদা নুন আর নুন। পূর্ণিমার চাঁদ যখন ওঠে তার আলো এই নুনের ওপর পড়ে, সে দৃশ্য না দেখলে গুজরাট দেখা অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। এখানে সূর্যাস্তও দেখবার মতন।

বরষায় এই অঞ্চল ১ থেকে ৫ মিটার জলের তলায় চলে যায়। সেই জল শুকোতে শুকোতে লেগে যায় ৪ থেকে ৬ মাস। রাণ দেখে আমরা ফিরে গেলাম শ্যাম-ই-শরহদ নামে একটি resort-এ। গ্রামের ঘরগুলি নকল করে থাকার ঘরগুলো বানানো হয়েছে। তবে আধুনিক সব রকমের সাচ্ছন্দ মিলবে। খাওয়া এখানেও নিরামিষ। সন্ধ্যায় ক্যাম্প ফায়ারের সামনে গ্রামের শিল্পীরা তাদের নাচ-গান পরিবেশন করতে আসেন। অতি মনোরম পরিবেশ। এখান থেকে পরের দিন সকালে গেলাম “কালাদুঙ্গা” দেখতে। দত্তাত্রেওর বিখ্যাত মন্দির পাহাড়ের মাথায় অবস্থান করছে। View point থেকে সমস্ত রাণ দেখা যায়। এটি কচ্ছ প্রদেশের সব থেকে উঁচু পাহাড়।

ছবি – সুবীণ দাশ
লেখা – তুষারসিক্তা দাশ

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

 

 

 

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।