গুজরাতে কয়েকদিন
দ্বারকা
ও ভেট দ্বারকা
কালাদূঙ্গা
থেকে ৩৭০ কিমি গাড়ীতে ভ্রমণ করে এলাম জামনগরে।
দ্বারকা ও ভেট দ্বারকা দেখতে হলে এখানে থাকাই
বাঞ্ছনীয়। জামনগরে মেরিন পার্ক ও পাখিনীলয় আছে।
দ্বারকায় দ্বারকানাথজীর মন্দির ছাড়াও গীতাভবন,
ও আর অনেক ছোট-বড় মন্দির ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
ভারতের দ্বাদশ জ্যোতিলিঙ্গের মধ্যে একটি মন্দির
হল নাগেশ্বর মন্দির। সেটি এখানে। কথায় বলে শ্রীকৃষ্ণের
আসল সাম্রাজ্য ছিল ভেট দ্বারকায়। পরে সেটিকে
স্থানান্তরিত করা হয় দ্বারকাতে। ভেট দ্বারকাতে
যেতে দ্বারকার থেকে সমুদ্র পেরিয়ে যেতে হয়।
লাগে আধ ঘন্টার মতন। এখানে শ্রীকৃষ্ণের মন্দির
ছাড়া, রুক্মিনী দেবী, লক্ষীদেবীর মন্দির দেখা
যায়। এছাড়াও আর ১০-১৫টা মন্দির রয়েছে ছড়িয়ে
ছিটয়ে। আর একটি জায়গা দেখার আছে, সেটি হল “গো্পি
তলাও”। শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকায় চলে যাবার পর, গোপিদের
সবার মন ভেঙে যায়, তারা এই পুকুরটিকে বেছে নেন
আত্মাহুতি দেবার জন্য। আজও ভক্তরা ভক্তিভরে
এই পুকুরের মাটি কপালে দিয়ে তিলক কাটেন।
দ্বারকাজীর মন্দিরের সান্ধ্য এবং ভোরের আরতি
দেখার মতন।
সোমনাথ মন্দির
ভিরাওয়াল
পৌঁছলাম সোমনাথ দেখার জন্য। এখানে প্রচুর ছোট-ছোট
মন্দির আছে। তাদের মধ্যে বিখ্যাত “দেহ উৎসব”
মন্দির। কথিত আছে শ্রীকৃষ্ণ এই স্থানে দেহ রক্ষা
করেছিলেন। যেখানে ‘জরা’ নামধারী ব্যাধ তাঁর
পদযুগলকে হরিণের চোখ ভেবে তীরবিদ্ধ করেন – সেই
জায়গাটি এই মন্দির থেকে একটু দূরে। আঘাত পাবার
পর শ্রীকৃষ্ণ অনতিদূরে গাছের তলায় এসে দেহত্যাগ
করেন।
সোমনাথ মন্দিরের নিরাপত্তা অসম্ভব কড়া। বহুবার
আতংকবাদিরা এটাকে ভাঙ্গার ছক কষেছে। কোন রকম
ছবি তোলার সরঞ্জাম নিয়ে ভেতরে প্রবেশ নিষিদ্ধ।
মন্দির দেয়ালের কারূকাজ দেখার মতন। প্রবেশ দ্বারের
প্রথম দুটি স্তম্ভ সোনার চাদরে মোড়া। সন্ধারতির
পর সোনিয়ে-লু্মিয়ের মাধ্যমে সোমনাথের ইতিহাস
জানান হয় দর্শকদের। জানা যায় কতবার মন্দিরটি
মোঘলরা লুঠ এবং ধ্বংস করেছিল। স্বাধীনতার পরে,
সর্দার বল্লভভাইর প্যাটেল এটিকে স্বমহিমায় ফিরিয়ে
আনতে প্রচুর সাহাজ্য করেন। সোমনাথ কে পূজা দেবার
রিতি এখানে একটু অন্যরকম।
গিরের
জঙ্গল
সোমনাথ
থেকে মাত্র ৪২ কিমি এর দূরত্ব। আফ্রিকার ছাড়া
শুধু এই অরণ্যে কেশরওয়ালা সিংহের দেখা মেলে।
অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে চিতল হরীণ, চিতাবাঘ,
ভাল্লুক, নীলগাই, শেয়াল আর নানা প্রজাতির পাখির
দেখা পাওয়া যায়। তবে সাফারিতে বেরিয়ে এদের দেখা
মেলা, ভগবানএর দর্শন পাওয়ার মতন। একটি অভয়ারণ্য
আছে যার মধ্যে তিনটি সিংহী ও একটা সিংহর দেখা
মিলবে। প্রচুর হরিণ আছে এই অরণ্যে। থাকার জন্য
বিভিন্ন দামের অতিথিশালা আছে। আমরা যেটাতে ছিলাম,
সেটা প্রায় ১০ কিমি জঙ্গলের মধ্যে। ভারি সুন্দর
আর আরামদায়ক সব ব্যবস্থা। থাকতে হয় তাঁবুতে।
কিন্তু সমস্ত রকমের সাচ্ছন্দ্য আছে এগুলোতে।
নিরামিষ খেয়ে খেয়ে যদি কেউ ক্লান্ত হয়ে থাকেন,
তাঁর কাছে এই জায়গাটি অবশ্যই পছন্দসই হবে -
এখানে আমিষ খাদ্য মিলবে।
দিউ
জুনাগড়
থেকে এর দুরত্ব ১৭০কিমি। গির অরণ্য থেকে ১১০
কিমি। এটি একটি স্বশাসিত রাজ্য। ১৯৫৪-র আগে
এটি ছিল ওলনদাজদের উপনিবেশ। সমুদ্রতট এখানে
অপূর্ব। থাকার জায়গাগুলির অনেকগুলিঈ বিলাসবহুল।
মিলবে রকমারি খাবার। মদ্যজাতিয় পানীয় এখানে
বেশ সস্তা। গুজরাট থেকে সপ্তাহ-অন্তে অনেকে
আনন্দ করতে এখানে চলে আসে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন
সুন্দর সাজানো শহর। প্রচুর পুরান স্থাপত্য কলা
রয়েছে যা দেখার মত। এখানকার স্থানীয় লোকেদের
অনেকেই মৎস্যজীবি ।
লোথাল
দিউ থেকে
আহমেদাবাদের পথে পড়ে লোথাল। এখানেও পুরাতন হরপ্পা
সভ্যতার নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। সে যুগে জাহাজ
মেরামতের জন্য Dry docks এখানে দেখে অবাক হয়ে
গেছি। সমস্ত শহরটা অদ্ভুত ভাবে প্লান করে বানান।
দেখলাম ধাতু গলিয়ে তার থেকে নানা রকমের দ্রব্যাদি
বানাবার সরঞ্জাম। এরই পাশ দিয়ে বয়ে যেত সিন্ধু
নদী। নদীপথে এরা বহু দূরদূর রাজ্যে বাণিজ্য
করতে যেত। সংগ্রহশালায় বহু দেখার মত জিনিস আছে।
এই সভ্যতা উৎকর্ষের কোন চূড়ায় পৌছেছিল - তার
কিছুটা এই সব জিনিষগুলো থেকে আঁচ করা যায়।
যাত্রার শেষে আবার এসে পৌঁছালাম সেই আমেদাবাদে।
এবার ঘরে ফেরার পালা। আমেদাবাদ মেলে হাওড়া পৌছতে
লাগে দু-রাত এক দিন।
ভাল থেকো
গুজরাট আর তোমার কর্মঠ লোকেরা।
ছবি
– সুবীণ দাশ
লেখা – তুষারসিক্তা দাশ
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)