ডুয়ার্সের
জঙ্গলে কয়েকদিন
১)
যাত্রারম্ভ -- শিলিগুড়ি
বাগডোগরায়
উড়ে গিয়ে ডুয়ার্স ভ্রমণ শুরু করার বাসনা আমার মনে আদপেই
ছিল না। বরং ইচ্ছে ছিল রাত্তিরে দার্জিলিং মেলে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে
যাবার, যাতে করে ভোরবেলা হাতমুখ ধুয়ে ফিটফাট হয়ে নিউ জলপাইগুড়ি
স্টেশনে নামতে পারি। কিন্তু বিধি বাদ সাধলেন। যাবার দিনে
কোনো রাতের ট্রেনেই রিজার্ভেশন পাওয়া গেল না। দার্জিলিং
মেলের বাতানুকুল দ্বিতীয় শ্রেণীর শায়নযানে দেখি সাতচল্লিশজনের
নাম রয়েছে প্রতীক্ষারতদের তালিকায়। প্রথম শ্রেণীতেও দশজনের
বেশী “ওয়েট লিস্টে”। অগত্যা উড়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিতেই বাধ্য
হলাম।
বাগডোগরা বিমানবন্দর দেখে ভালো লাগলো – ছোটো হলেও বেশ ছিমছাম
ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। টারমাকে ভারতবর্ষের প্রায় সবকটি অন্তর্দেশীয়
বিমানসংস্থার প্লেন দাঁড়িয়ে আছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাবার
জন্য। কিন্তু বেরুতে গিয়ে এক অপ্রত্যাশিত বাধার সম্মুখীন
হলাম। পার্কিং লটে আমাদের গাড়ী আটকে দেওয়া হোলো, কারণ ওই
সময় পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা ব্যানার্জি
সদলবলে শিলিগুড়ি থেকে কলকাতা ফিরছিলেন “উত্তরবঙ্গ উৎসব”
উদ্ধোধন কোরে। আমি বুঝতেই পারিনি যে সম্পূর্ণ অজান্তে আমার
সফর আর উত্তরবঙ্গ উৎসব একই সঙ্গে পড়ে গেছে। এই উৎসব একটি
প্রায় সপ্তাহব্যাপী বাৎসরিক অনুষ্ঠান যেটি উত্তরবঙ্গের একাধিক
শহরে একই সময় উদযাপিত হয় শিল্পী এবং প্রোগ্রাম ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে
ও ভাগাভাগি করে। এ লেখার শেষে আমি আবার উত্তরবঙ্গ উৎসবে
ফিরে আসবো।
বাগডোগরা থেকে শিলিগুড়ি যাবার পথে স্বভাবতঃই ছিল গাড়ীর ভীড়,
ট্র্যাফিক জ্যাম ও পুলিশের ছড়াছড়ি। এই আমার দীর্ঘ পঞ্চাশ
বছর পরে শিলিগুড়িতে আসা, তাই বহির্দৃশ্য যথাসাধ্য উপভোগের
চেষ্টা করলাম। গাড়ী গেল নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটির প্রধান
দরজার পাশ দিয়ে – এটা পঞ্চাশ বছর আগে ছিল না। তবু বলব যতটা
শুনেছিলাম শিলিগুড়ি ঠিক ততটা ইঁট আর কংক্রীটের বিশাল শহরে
পর্যবসিত হয় নি। কিছু উঁচু উঁচু বাড়ি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু
গ্রাম বাংলার মিষ্টি ছাপ এখনো যথেষ্ট রয়েছে।
আমার প্রথম গন্তব্যস্থল ছিল একটি চার-তারকার নিরামিষ হোটেল।
(এহেন ব্যাজস্তুতি কি একমাত্র ভারতবর্ষেই সম্ভব?) জায়গাটির
সন্ধান দিয়েছিল আমার এক ভ্রমণে অভিজ্ঞ শ্যালক – বলেছিল যাত্রারম্ভে
সমীচীন হবে। কথাটা মন্দ বলেনি। হাজার হোক চার তারকা তো পেয়েছে!
দেখলাম ঘরগুলি সুন্দর, কল খুললে ঠাণ্ডা এবং গরম দুরকম জলই
পড়ে, ডিনারে মেলে সুস্বাদু নিরামিষ খানা, ও রাত্রে “বার”টি
ঠাসা থাকে বিদেশী মাদকদ্রব্যের দামী বোতলে। কিন্তু “সিণ্ড্রেলা”
নামটিতে খটকা লাগলো – সিণ্ডারেলা নয় কেন? হোটেলের মালিককে
সে প্রশ্ন করায় তিনি লজ্জিত মুখে স্বীকার করলেন যে সেটি
তারই ভুল; উচ্চারণটি চারিপাশে ওইরকম শুনে শুনে বানানটি ভুল
করে বসেছেন। এটি হোটেলটির একটি অতিরিক্ত বিশেষত্ব বলা চলতে
পারে।
হোটেলের মালিকের সাথে দেখা করেছিলাম কারণ সে এবং তার পরিচিত
ট্রাভেল এজেন্ট আমার ডুয়ার্স সফরের সব বন্দোবস্ত করে দিয়েছিল।
কথায় কথায় জানলাম ভদ্রলোকের আদিপুরুষ এসেছিল বিকানীর থেকে।
তার প্রপিতামহ এসে পত্তন গাড়ে আসামের তেজপুর শহরে এবং সেখানে
ব্যবসা করে বেশ বিত্তশালী হয়ে ওঠে। কিন্তু ঊনিশশো বাষট্টির
চীন যুদ্ধের পরে তার পিতৃপিতামহ সপরিবার উত্তর বাংলায় চলে
আসে। তার অধুনা বিস্তৃত পরিধির ব্যবসার মধ্যে রয়েছে হোটেল
ছাড়াও একটি হিন্দী ভাষার দৈনিক সংবাদপত্র। শিলিগুড়ি থেকে
প্রকাশিত হয় অনেক ভাষার দৈনিক পত্রিকা, যেটা অবশ্যই ওই অঞ্চলের
বিভিন্ন ভাষাভাষী বাসিন্দাদের প্রতিফলনমাত্র।
২) জলদাপাড়া – বন্যপ্রাণীদের
জন্য সংরক্ষিত এলাকা
ডুয়ার্স নামটি এসেছে
সংস্কৃত শব্দ দ্বার থেকে। ডূয়ার্স বলতে বোঝায় পূর্ব হিমালায়ের
পাদদেশের সমতল ও পাহাড়ের নদীবারি সিঞ্চিত বন্যাপ্রবণ জায়গা,
যেটা সিকিম ও ভুটানের পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের সমতলভূমিতে
নামার দ্বারস্থান বিশেষ। নেপালের দিকে এই একই জায়গার নামকরণ
হয় তরাই। ডুয়ার্সে ভারতের অধিকাংশ প্রান্ত থেকে আসতে হয়
নেপাল ও বাংলাদেশ দিয়ে চাপা এক অতি সরু “করিডোর” দিয়ে, যার
মাঝে রয়েছে অতি গুরুত্বপূর্ণ সেই শিলিগুড়ি শহর আর জংশন স্টেশন।
সিণ্ড্রেলা হোটেলে এক রাত কাটিয়ে আমি এবং আমার স্ত্রী পরের
দিন রওনা দিলাম ভাড়া করা ভ্যানে চেপে জলদাপাড়া সংরক্ষিত
বনাঞ্চল উদ্দেশে। শিলিগুড়ি থেকে রাস্তায় ডুয়ার্স যেতে গেলে
তিস্তা নদী পার হতে হয় “করোনেশন ব্রিজ” দিয়ে। এই ব্রিজটা
জল থেকে অনেক উঁচুতে দুটো পাহাড়কে সংযোজন করে; নীচে গভীর
খাদের মধ্যে দেখা যায় জলধারা। সে এক অতি মনোরম দৃশ্য (প্রথম
ছবিটি দেখুন)। ব্রিজটির নামকরণের কারণ এটির ভিত্তিপ্রস্তর
স্থাপন করা হয় ১৯৩৭ খৃষ্টাব্দে সম্রাট ষষ্ঠ জর্জের রাজসিংহাসন
আরোহণের সময়। ব্রিজটির নির্মাণকার্য সমাপ্ত হয় ১৯৪১ সালে।
এটিকে অনেক সময় “সেবক ব্রিজ”ও বলা হয় তৈরীর সময়কার তত্বাবধনকারী
ব্রিটিশ আর্মি এঞ্জিনীয়ার সেবক সাহেবের নাম স্মরণ করে।
প্রথম
ছবি - করোনেশন ব্রিজ থেকে তিস্তার বঙ্কিম দৃশ্য
জলদাপাড়া
পৌঁছাতে দিনের বেশীরভাগটাই কেটে গেল। রাস্তাটি নামে জাতীয়
সড়ক হলেও কার্যতঃ অনেক জায়গাতেই তার বেশ অবহেলিত ভাঙচুড়
অবস্থা। গিয়েছে কখনো বনের ভেতর দিয়ে, কখনো ফাঁকা সমতলভূমি
কেটে, কখনো বা শীতে প্রায় জলশূন্য নদীর উপর ব্রিজ ধরে। রাস্তার
ধারে প্রত্যক্ষদৃশ্য বনজ সম্পদ – শাল, সেগুন, খয়ের, অর্জুন
প্রভৃতি দামী কাঠের গাছ। কিন্তু যেটা আমাদের সবচেয়ে চোখে
পড়ল ও আকৃষ্ট করল সেটা হল রাস্তার ধারে সারি সারি সুদৃশ্য
চা-বাগান। চা গাছগুলো ওপর থেকে এমন নিপুণভাবে ছাঁটা যে দেখে
মনে হয় দিগন্তবিস্তৃত সবুজ গালিচা কেউ পেতে দিয়েছে। শুধু
মাঝে মাঝে গালিচা ফুঁড়ে উঠেছে ছত্রছায়াধারী কিছু গাছ। আমাদের
সঙ্গের নেপালী ড্রাইভারটি স্বচ্ছন্দে বাংলায় কথা বলছিল;
জানালো যে তার এক বড় ভাই ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে কার্গিল
যুদ্ধে শহীদ হয়েছে। আমার উত্তর বঙ্গ ভ্রমণের একটি ফলশ্রুতি
হোলো এই যে আমি ওই অঞ্চলের বাসিন্দা বিভিন্ন জাতি-উপজাতি
সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আর সেই সঙ্গে বুঝতে পারলাম
ওই নানা সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক দাবি-দাওয়া
সর্বসম্মতিক্রমে মেটানোর সমস্যাটা কত দুঃসাধ্য।
সন্ধ্যাবেলা পৌঁছে গেলাম পশ্চিমবঙ্গ সরকার পরিচালিত জলদাপাড়া
ট্যুরিষ্ট লজে। সুন্দর ছিমছাম পরিষ্কার এই অতিথিশালা ও তার
সঙ্গে খাবার ব্যবস্থা। কাঠের দোতলা মজবুত বাড়ী তৈরী করা
হয়েছে বনের ভেতরে একটু ফাঁকা জায়গায়। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে
ছোট্ট পাহাড়ী ঝরণা, ওপরে সাঁকো। (শীতকালে অবশ্যই শুকনো,
জলবিহীন)। ট্যুরিষ্ট লজের এক দিকে রয়েছে কেয়ারি করা ফুলের
বাগান, আর মাঝখানে আছে সযত্নে পরিচর্যিত মাঠ ও মিনিয়েচার
পাহাড় ও নালার মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা স্থানীয় পশু ও প্রাণীদের
খোদাই করা মূর্তি। সেখানে দেখতে পাবেন প্রমাণ সাইজের হাতী,
গণ্ডার, চিতা, নানারকমের হরিণ ও পাখী, এমনকি বিবিধ সাপ এবং
বিছেও। শুধু তাই নয়, রাত্রে মূর্তিগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে শব্দ-ও-আলোর
(“সন এ লুমিয়্যারের”) খেলায়। তখন বিভিন্ন প্রাণীর ওপরে আলো
পড়ে আর নেপথ্যে শোনা যায় তাদের প্রকৃতি ও স্বভাবগত তথ্য।
এই নেপথ্যবাণীতে পুরুষের কণ্ঠস্বর দিয়েছেন প্রখ্যাত অভিনেতা
এবং প্রকৃতিপ্রেমী সব্যসাচী চক্রবর্তি।
ভারতবর্ষে
সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে তিন শ্রেণীর। “বন্যপ্রাণীর নিরাপদাশ্রয়”
(“Wildlife Sanctuary”) হোলো এমন এক জায়গা যেখানে বন্যপ্রণীরা
অবাধে বিচরণ করতে পারে মানুষের খুব একটা সংশ্রবে না এসে।
“জাতীয় উদ্যান” (“National Park”) সংরক্ষিত এই অর্থে যে
সেখানে গাছ কাটা নিষিদ্ধ। কিন্তু স্থানীয় লোকেরা সেখানে
পোষ্যপ্রাণী (যেমন গরু, মোষ) চড়াতে পারে ও প্রান্তিক এলাকায়
কিছু চাষ-আবাদও করতে পারে। আর “জাতীয় বন” (“National Forest”)
সংরক্ষিত হলেও সেখানে গভর্মেন্টের তত্ত্বাবধানে কাঠুরিয়াদের
গাছ কাটতে দেওয়া হয়; তবে গাছ কাটা হলে সেই জায়গায় গভর্মেন্ট
আবার নতুন করে গাছ লাগায়।
পরদিন খুব ভোরে আমরা অন্যান্য অভিযাত্রীদের সঙ্গে রওনা হয়ে
গেলাম জলদাপাড়ার মাঝখানে হোলং নামে একটা জায়গার উদ্দেশে।
মুখ্য উদ্দেশ্য হাতীর পিঠে চড়ে খোলা জঙ্গলে বুনো পশু দেখতে
যাওয়া। হোলঙে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বড়কর্তাদের জন্য তৈরী একটি
সুন্দর বাংলো আছে। বাংলোটিকে বন থেকে তফাৎ করেছে তোর্সা-গামী
একটি পাহাড়ী উপনদী। আসলে জলদাপাড়ার বনকে নানাস্থানে কেটে
কেটে তোর্সার বেশ কয়েকটি উপনদী বয়ে গেছে। বাংলোর সামনে যে
চওড়া নালাটা আছে, তার উলটো দিকে বনের সামনে কিছুটা জায়গা
সাফ করা। সেখানে বন-বিভাগের কর্মচারীরা কয়েকটি নুনের ঢিপি
চৈরী করে রাখে, যাতে করে বন্য প্রাণীরা (লবণের প্রয়োজনে)
সেটা চেটে নালায় জল খেতে আসতে পারে। আমাদের ভাগ্য ছিল প্রসন্ন;
পৌঁছানোমাত্রই দেখলাম সকালের কুয়াশা ভেদ করে একটি গণ্ডার
ধীরে-সুস্থে, হেলতে দুলতে এগিয়ে আসছে নুনের ঢিপি চাটবার
জন্যে (দ্বিতীয় ছবিটি দেখুন)।
দ্বিতীয়
ছবি -- গণ্ডার এগোচ্ছে নুনের ঢিপির দিকে (হোলং, জলদাপাড়া)
আমাদের
দল ছিল সকালের “সাফারি”র দু নম্বর গ্রুপ। প্রথম গ্রুপের
হাতী ও আরোহীদের জন্য আপেক্ষা করতে করতে আমার কিছু জ্ঞানার্জন
হল। যথা, প্রতি হাতীর পিঠে চারজন সওয়াড়ি বসতে পারে। তারা
বসে হাতীর পিঠে বাঁধা একটা কাঠের বোর্ডের ওপর, যেটার চারিদিক
দিয়ে সুরক্ষার কারণে “গার্ড রেল” দেওয়া থাকে। যাত্রীরা বসে
একদিকে দুজন ও অন্যদিকে দুজন; সীটে বসে ধরে থাকে গার্ড রেল
আর পা গলিয়ে দেয় রেলের তলা দিয়ে হাতীর পিঠের ধারে। সবচেয়ে
মজার কথা, এই সাফারিতে যান হিসেবে কেবলমাত্র মেয়ে হাতী ব্যবহার
করা হয়, কারণ তাদের পিঠ চওড়া ও চারটি যাত্রী নিতে সক্ষম।
পুরুষ হাতীরা বেশী উঁচু এবং তাদের পিঠের গড়নটা ঢালু। সেখানে
কাঠের বোর্ড দিয়ে চারজনের বসা সম্ভব নয়।
হাতীর পিঠে চড়তে হয় সিঁড়ি দিয়ে উঠে একটা কংক্রীটের প্ল্যাটফর্ম
থেকে। আমার উঠে গিয়ে ঠিক জায়গায় বসতে বিশেষ অসুবিধে হোলো
না। একটু চাপাচাপি ছিল অবশ্যই, কিন্তু হাতী চলাকালে কোনো
অস্বস্তি বা কষ্ট হয় নি। আমাদের মা-হাতীটার সঙ্গে তার আবার
একটা বাচ্চাও ছিল; সুযোগ পেলেই সে শুঁড় দিয়ে একটু একটু দুধ
চুষে নিচ্ছিল। অল্প পরেই আমরা দেখতে পেলাম জঙ্গলে উঁচু ঘাসের
মধ্যে আধখানা ঢাকা আরেকটা গণ্ডার। জলদাপাড়া বনের প্রকৃতি
অন্ততঃ তিন রকমের – কোথাও ঘন জঙ্গল, কোথাও অনেকখানি জায়গা
জুড়ে শুঘু উঁচু ঘাস, আর কোথাও বা মাঠের মাঝে হঠাৎ করে কতিপয়
বড় গাছের সমষ্টি। আমরা যেতে যেতে প্রায়শঃই তোর্সার উপনদীগুলো
পার হচ্ছিলাম (তৃতীয় ছবিটি দেখুন) আর হঠেৎ হঠাৎ করে দেখতে
পেলাম (বাহারি শিংসহ) সম্বর হরিণ, গাউর (অথবা ভারতীয় বাইসন),
ছোট সাইজের “বার্কিং ডিয়ার” ও নানা জাতের রঙ-বেরঙের পাখী।
আমাদের সামনের হাতীর যাত্রীরা নাকি নিমেষের জন্য চিতাবাঘ
দেখতে পেয়েছিল; আমরা পাই নি। বুনো হাতীও দেখিনি – ভাগ্য
ভাল বলে কি? – আর মনে হয়না ওই বনে আসল বাঘ এখন আর আছে। যাই
হোক, সব মিলিয়ে সাফারিটা হল এক আসাধারণ ও অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
তৃতীয়
ছবি - হাতীর পিঠে চেপে জলদাপাড়ায় ছোট নদী অতক্রম
৩)
চিলাপাতা ও গরুমারা
জলদাপাড়ায়
সাফারি করে বিকেলে আমরা গেলাম চিলাপাতা জাতীয় বন দেখতে।
আর পরের দুদিন ঘুরলাম গরুমারা জাতীয় উদ্যানের ভেতরে ও চারিপাশের
অঞ্চলে। হাতীর পিঠে চেপে বেড়াবার মত মজা অবশ্য আর কোথাও
করা যায় নি। পশুপাখীও জলদাপাড়ায় যা দেখেছি অন্য দু জায়গায়
সেরকমটিই দেখলাম। তবে দু-একটা উল্লেখযোগ্য নতুন জিনিস দেখা
গেলো।
প্রথমতঃ চিলাপাতার জঙ্গলের মাঝখানে গাইড আমাদের নিয়ে গিয়ে
দেখাল “নল রাজার গড়ে”র ধ্বংসাবশেষ। সেখানে যাবার আগে কেউ
একজন আমায় বলেছিল যে ওই নল রাজা আর মহাভারাতের নল ও দময়ন্তী
উপাখ্যানের নায়ক একই। আমাদের গাইড সে প্রসঙ্গকে উড়িয়েই দিল
অবাস্তব ও অনৈতিহাসিক বলে। আমাদের গাইডটি ছিল একটি অল্পবয়সী
অত্যুৎসাহী ছেলে; বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাসে তার বিরাট আস্থা।
তার মতে চিলাপাতার নল রাজা ছিলেন স্থানীয় কোনো ছোটখাট অঞ্চলের
অধিকর্তা। গড় বা দুর্গ বানিয়েছিলেন প্রজাদের উত্তর (সম্ভবতঃ
ভুটান) থেকে আগত হানাদারদের অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা করতে।
দুঃখের কথা দুর্গের এখন চরম দুর্গতি – ভাঙ্গা ইঁটের দেয়াল
আর তোরণের অবক্ষয় ছাড়া বিশেষ কিছুই অবশিষ্ট নেই। সেগুলোও
আবার গাছ ও আগাছায় অনেকাংশে ঢেকে গেছে। সাপ ও বিছের ভয়ে
আমি গড়ের ভগ্নদ্বার অতিক্রম করার চেষ্টা করিনি।
দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য জিনিস গরুমারা জাতীয় উদ্যানের “যাত্রাপ্রসাদ”
দর্শনস্তম্ভ বা ওয়াচটাওয়ার। গরুমারাতে কোনো হাতীর পিঠে চড়ে
সফরের ব্যবস্থা নেই। তার পরিবর্তে আছে বেশ কয়েকটি পশুপাখী
দেখার পক্ষে উপযুক্ত বাঁধানো উঁচু জায়গা। সেসব ওয়াচটাওয়ার
থেকে বন্যপ্রাণীরা নুন চাটতে বা জলপান করতে আসলে তাদের দেখতে
পাওয়া যায়। “যাত্রাপ্রসাদ” নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক অভিনব
গল্প। নামটি আসলে ছিল একটি পোষা পুরুষ হাতীর, যেটি গ্রামবাসী
থেকে বনবিভাগের কর্মচারী সকলেরই খুব প্রিয় ছিল। কারণ সে
একাধারে মানুষ থেকে শুরু করে শস্যক্ষেত্র রক্ষা করত বুনো
বা পাগলা হাতীর কবল থেকে। হাতীটি মারা গেলে তার নামে তৈরী
করা হয় সবচেয়ে আকর্ষণীয় দর্শনস্তম্ভ। আমরা “যাত্রাপ্রসাদ”
থেকে দেখতে পেলাম আরো কিছু গণ্ডার, গাউর (ভারতীয় বাইসন)
ও এক দল গায়ে গোলগোল ছাপওয়ালা চিতল হরিণ (চতুর্থ ছবিটি দেখুন)।
চতুর্থ ছবি – গরুমারার যাত্রাপ্রসাদ
থেকে তোলা চিতল হরিণের দৃশ্য
গরুমারায়
এসে আমার স্থানীয় আদিবাসী এবং উপজাতি সম্বন্ধে ধারণাটা আরো
স্পষ্ট হোলো। উত্তর বাংলার আদিবাসীরা এক প্রজাতির নয়। এদের
মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন উপজাতি – যেমন সাঁওতাল, ওড়িয়া, রাজবংশী,
ইত্যাদি। গরুমারায় আমরা একটি ওড়িয়া উপজাতির গাইড পেয়েছিলাম।
“যাত্রাপ্রসাদ” থেকে ফেরার পথে সে আমাদের মানে যাত্রীর দলকে
নিয়ে গেল একটা পাথরের বেঞ্চি দিয়ে গোল করে ঘেরা সুন্দর মাঠে।
সেখানে একদল আদিবাসী তরুণী তাদের নিজস্ব চিত্তাকর্ষক গ্রুপ
নাচ (“লাইন ড্যান্স”) করে আমাদের দেখাল। পরে গরুমারার কাছে
অনেক দোকানে দেখলাম যে আদিবাসী গহনা ও হস্তশিল্প বিক্রী
হচ্ছে। আগেই শিলিগুড়িতে নেপালী ড্রাইভার ছাড়াও অনেক গুর্খা
দেখেছিলাম। গরুমারায় এসে বুঝলাম যে উত্তর বঙ্গের রাজনৈতিকি
ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এবং সর্বজনগ্রাহ্যা শাসন ব্যবস্থা নির্ণায়নে
গুর্খারা ছাড়াও বিভিন্ন আদিবাসী উপজাতিদেরও বড় ভূমিকা থাকতে
বাধ্য।
৪) পারিপার্শ্বিক
যাত্রা – ভুটান (ফুন্টশোলিঙ) ও সুন্তালিখোলা
ভারত-ভুটান সীমানার একদিকে আছে পশ্চিম বাংলার শশব্যস্ত শহর
জয়গাঁও আর অন্যদিকে শান্ত ছবির মতো ভুটানের শহর ফুন্টশোলিঙ।
ভারতীয়দের ভুটানে (বিশেষ করে সীমান্ত অঞ্চলে) ঢুকতে কোনো
নিষেধ নেই; দু-দেশের সীমান্তরক্ষীরাই পাহাড়া দেয় বেশ ঢিলেঢালা
ভাবে। আমি সেই ঢিলেঢালামি ও নিজের চেহারার সুযোগ নিয়ে গাড়ীতে
করে দিব্যি ভুটানে ঢুকে পড়লাম সরকারী কাগজ-পত্র ছাড়াই। ঢুকে
অল্প উঁচুতে একটি বৌদ্ধবিহার দেখতে গেলাম। বৌদ্ধবিহারটি
তৈরী হয়েছে একেবারে পাহাড়ের গায়ে; সেখান থেকে নীচে শহরের
ও অল্প দূরে খাড়া পাহাড়ের কোলে প্রবহমান তোর্সা নদীর এক
অতি মনোরম দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায় (পঞ্চম ছবিটি দেখুন)।
পঞ্চম ছবি – বৌদ্ধবিহার থেকে তোলা ফুন্টশোলিঙ এবং তোর্সা
নদীর দৃশ্য
ফুন্টশোলিঙ
ছাড়াও গরুমারা থেকে আমি আরেকটা সাইড ট্রিপ নিয়েছিলাম দার্জিলিঙ
জেলার সুন্তালিখোলা নামে সাতশ মিটার উচ্চতার একটি ছোট পাহাড়ী
শহরে। যাত্রাপথে পড়ল গুডরিক কোম্পানীর বিখ্যাত চালসা চা-বাগান।
তবে সাত্যি কথা বলতে কি সুন্তালিখোলা শহরটিতে বিশেষ কিছু
দ্রষ্টব্য দেখতে পেলাম না। শহরের মাঝখানে কয়েকটি দোকান ও
চায়ের স্টল ছাড়া অন্য কিছু চোখে পড়ল না। এটা অবশ্য বলতেই
হবে যে একটু নীচে নেমে একটা রাজ্যসরকার পরিচালিত সুদৃশ্য
“ট্যুরিষ্ট কটেজ” রয়েছে, আর তার কাছেই রয়েছে খাড়া পাহাড়ের
মাঝখানে একটি ঝর্ণার ওপরে ঝুলন্ত সাঁকো। দুঃখের কথা শীতকালে
ঝর্ণায় জলের তুলনায় উপলখণ্ডের আধিক্য ছিল। মনে মনে কল্পনা
করে নিলাম বর্ষাকালে সরু নদীটি কেমন স্রোতস্বিনী হয়ে উঠবে।
ফেরার পথে আরেকটি দ্রষ্টব্য জায়গা ছিল “সিনক্লেয়ার্স রিট্রিট”
হোটেলের সামনের পার্কটি। এখান থেকে পাওয়া যায় গরুমারা জাতীয়
উদ্যান ও বনের এক পূর্ণাঙ্গের অসাঘারণ দৃশ্য।
৫)
উপসংহার – জাতি, উপজাতি ও তিস্তাপারের রাজনীতি
ডুয়ার্স
ভ্রমণ আমার অনেক কারণেই মনে থাকবে। একদিকে দেখলাম নানান
জায়গার অতি মনোরম দৃশ্য; অন্যদিকে জানলাম স্থানীয় জন্তু-জানোয়ার
ও গাছ-পালা সম্পর্কে অনেক তথ্য। কিন্তু যে বিষয়ে আমার অপ্রত্যাশিত
জ্ঞানলাভ হোলো তা হচ্ছে কী ধরণের লোক উত্তর বঙ্গে বসবাস
করে, এবং সেই বিভিন্ন উপজাতির সহাবস্থানের প্রতিফলন কীভাবে
ভবিষ্যতের রাজনীতির ওপরে পড়তে পারে।
বলতে পারেন এটা আমার অজ্ঞতা, কিন্তু আমি শিলিগুড়িতে গিয়েছিলাম
এই ভেবে যে আমি একটি নিছক বাঙালী শহর দেখবো। ওখানে গিয়ে
বুঝলাম যে ব্যাপারটা অতটা সহজ নয়। শিলিগুড়ির অধিবাসীদের
মধ্যে রয়েছে বাঙালী ছাড়াও নেপালী, আদিবাসী ও ভারতবর্ষের
নানা জায়গার মানুষের সংমিশ্রন। ফলতঃ সেখানে দেখা যায় নানা
ভাষার দৈনিক পত্রিকা – বাংলা, হিন্দী, নেপালী, ইংরেজি –
যাদের বেশীরভাগই শিলিগুড়ি থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়। শিলিগুড়ি
থেকে আমরা যত পূর্বদিকে (অর্থাৎ ডুয়ার্স অভিমুখে) যেতে থাকলাম,
তত দেখতে পেলাম যে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে গুর্খার সংখ্যা
কমছে ও আদিবাসীদের সংখ্যা বাড়ছে। এদের মধ্যে সাংস্কৃতিক
ও ধর্মীয় তফাৎও যে আছে তা বুঝলাম যখন লক্ষ্য করলাম ডুয়ার্সের
গ্রামে গ্রামে রয়েছে ছোট ছোট গীর্জার সমারোহ। আর একটি জিনিস
আমার বিশেষ করে দৃষ্টি আকর্ষণ করল। ভুটান সীমান্তে ফুন্টশোলিঙের
উলটো দিকে পশ্চিম বাংলার জয়গাঁও নামে যে শহরটি রয়েছে, সেখানে
আমি মাত্র দুটি সাইনবোর্ডে বাংলা হরফে লেখা দেখতে পেলাম।
এবং সে দুটি লেখাও হচ্ছে সরকারী দপ্তরের সুবাদে – যেমন ধরুণ
পুলিশ স্টেশন। অথচ হিন্দী ও ইংরেজিতে লেখা সাইনবোর্ড দোকানে
দোকানে অজস্র – এমনকি বাঙালী মালিকানার গয়নার দোকানেও। হঠাৎ
আমার সামনে পরিষ্কার হয়ে উঠল পশ্চিম বঙ্গকে বিভাজন করে গুর্খাল্যাণ্ড,
কামতাপুর ইত্যাদি তৈরীর তাগিদা ও উৎসাহ কোনখান থেকে আসছে।
আর এটাও বুঝলাম উত্তর বঙ্গে গুর্খা ও আদিবাসীদের ক্ষমতার
লড়াইয়ের উৎস কোথায়, যে কারণে প্রস্তাবিত “গুর্খাল্যাণ্ড
টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে”র সীমারেখা নির্ধারণে ও
শাসনক্ষমতা বন্টনে এত অসুবিধে হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ উত্তর বঙ্গকে কোন দিকে নিয়ে যাবে তা আন্দাজ করা
শক্ত, কিন্তু এ কথা স্বচ্ছন্দে বলা যায় যে আগামী বেশ কয়েক
বছর ধরে এর সমস্যা বাংলার রাজধানী কলকাতাকে বেগ দেবে। আসাম,
উত্তর প্রদেশ ও মধ্য প্রদেশের ইতিহাস ভাবলে আমার মনে হয়
যে পশ্চিম বঙ্গের পার্বত্যাঞ্চল ভেঙ্গে আলাদা একটা রাজ্য
বানানোর সম্ভাবনা বেশ প্রবল। এই ভাঙ্গনের প্রভাব কাটানোর
একটা উপায় হতেই পারে বাঙ্গালী সংস্কৃতি ও কৃষ্টির গৌরবময়
ঐতিহ্যকে সামনে রেখে ও তার ওপর নির্ভর করে প্রদেশের সমস্ত
বাসিন্দাদের ঐক্যবধ্য করা। কেন জানিনা আমার (স্বাভাবকুটিল?)
মনে ধারণা হোলো “উত্তর বঙ্গ উৎসবের” পেছনে এমন একটা গূঢ়
অভিসন্ধি উদ্যোক্তাদের অবচেতন মনে রয়েছে। আমি যখন গরুমারা
জাতীয় উদ্যানের পাশের শহর লাটাগুড়িতে থাকছিলাম, তখন ওই বহুপ্রতীক্ষিত
বাৎসরিক উৎসবের একটি অংশ ওখানে মঞ্চস্থ করা হচ্ছিল। একটি
বিশাল প্যাণ্ডেল খাটানো হয়েছিল আমার হোটেলের সামনের রাস্তার
ঠিক উল্টো দিকে। লাউড স্পীকারের সঠিক অবস্থানের কল্যাণে
এক রাতে “সহজ মা”র গানের প্রোগ্রাম ঘর থেকে পুরোই শোনা গেল।
পরদিন সন্ধ্যেবেলা আমি ও আমার স্ত্রী হেঁটে গেলাম কী প্রোগ্রাম
তা অনুসন্ধান করতে। প্রায় সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন
দিনে ছিল নানান ধরণের গান (আধুনিক, রবীন্দ্রসঙ্গীত) ও অন্যান্য
বিনোদনের ব্যবস্থা। আমরা যেদিন গেলাম, সেদিনের বড় আকর্ষণ
ছিল উদ্ভট নামের বাংলা যাত্রা – “সিঁদুর কৌটোয় কাঁকড়াবিছে”।
গিয়ে দেখি জায়গাটা লোকে লোকারণ্য; টারপলিনে ঢাকা প্যাণ্ডেল
উপচে পড়ে জনতা বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে। ভীড়ের একটা বড় অংশ মনে
হল আদিবাসী মহিলাদের দল। দূরে দাঁড়িয়ে খানিকক্ষণ যাত্রা
দেখে বেরিয়ে আসলাম। আর মনে মনে ভাবলাম দ্বিতীয় বঙ্গভঙ্গ
রোধে বাংলা যাত্রা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কি কার্যকরী হবে?
শেষ করার আগে আরেকটা কথা না বলে পারছি না। উত্তর বাংলায়
ঘুরতে ঘুরতে আমার অনেক সময়েই মনে হচ্ছিল দেবেশ রায়ের “তিস্তা
পারের বৃত্তান্ত”র কথা। আমি ঠিক বাঘারুর মত চা-বাগানের ভেতর
দিয়ে হেঁটে গিয়ে গরুমারা জঙ্গলে মোষের বাথানে অবশ্যই যাইনি।
কিন্তু চা-বাগানের পাশ দিয়ে যেতে যেতে বা গরুমারা জঙ্গলের
প্রান্তে পোষ্যপ্রাণী চড়তে দেখে তিস্তা পাড়ের বৃত্তান্তর
কথা অনেক সময়েই মনে পড়েছে। ভেবেছি ও তারিফ করেছি দেবেশ রায়ের
অসাধারণ খুঁটিনাটি দেখার ও বর্ণনা করার ক্ষমতা। এমন কি লাটাগুড়িতে
উত্তর বঙ্গ উৎসবে যাত্রা দেখতে গিয়ে মনে পড়ে গেছে অতীতে
একই উপলক্ষে দেবেশ রায়ের শ্রীদেবীর নাচের বর্ণনা। শীতকালে
তিস্তা বা তোর্সার সেরকম জলের স্রোত দেখিনি – বন্যায় গ্রামকে
গ্রাম ডুবে যাওয়া তো দূরের কথা। দেবেশ বাবুর নভেল শেষ হয়েছে
তিস্তার ব্যারেজের বর্ণনা দিয়ে, যার লক্ষ্য জলপাইগুড়ি অঞ্চলকে
গত ষাট বা সত্তর দশকের মহাপ্লাবনের পুনরাবৃত্তি থেকে বাঁচানো।
সেটা কতদূর কার্যকর হয়েছে জানার জন্য বর্ষাকালে আবার উত্তর
বঙ্গে ফিরে যাবার ইচ্ছে রইলো।
জুলাই
২০১২
অমিতাভ
বাগচী