প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বিষ্ণুধাম মুক্তিনাথ (সূচী)

প্রায় পৌনে আটটার সময় আমরা জিপ-স্ট্যান্ডের দিকে হাঁটতে আরম্ভ করলাম। পাথর বসানো চওড়া রাস্তার ধারে বেশ কিছু সাজানো দোকান রয়েছে, কেক্‌, পাঁউরুটি, লজেন্স, চক্‌লেট যেমন রয়েছে, তেমনি টাটকা সব্জি, আলু, টমাটো ইত্যাদিও সাজানো আছে দোকানের সামনে। মনে হলো সকাল বলেই এই সবজি বিক্রির ব্যবস্থা। এই সুযোগে একটা কথা জানানোর মতো আছে, আমাদের উত্তর ভারতে সব্জি বলে এবং বাংলায় অনেক সময় তাকেই আমরা তরকারি বলে থাকি। এখানে দেখলাম সব্জি না বলে তরকারি বলতেই এরা অভ্যস্ত। ঠিক যেমন এরা চা খাবার কথাই সাধারণত বলে, পান করা নয়। যাই হোক্‌, যথাক্রমে অন্নপূর্ণা কনসার্ভেসন এরিয়া প্রোজেক্টের অফিসে এবং পুলিসের (নেপালে পুলিস বলেনা, বলে প্রহরী) চেক্‌ পোস্টে আমাদের বেশি মূল্য দিয়ে নেওয়া ছাড়পত্র দেখালাম। কিছুটা হাঁটার পর জোমসোমের শেষ প্রান্তে পাথরের পাঁচিল ঘেরা গম আর বাঁধাকপির ক্ষেত পার করে ডান দিকে মোড় নিয়ে কালী গণ্ডকীর ওপর ছোট ব্রিজ পার হলাম (চিত্র-৩১ ও ৩২)।

চিত্র ৩১ নতুন থেকে পুরনো জোমসোমে আসা । ছবিঃ শ্রী অজয় মান্না

চিত্র ৩২ কালী-গণ্ডকী পার করে জোমসোমে । ছবিঃ শ্রী অজয় মান্না

তারপর পুরানো জোমসোমের তুলনামুলক অপরিষ্কার সরু গলি দিয়ে গিয়ে গ্রামের শেষ প্রান্তে পোঁছলাম তখন প্রায় ৮:১৫। দেখলাম পুরানো জোমসোমেও থাকবার জায়গা আছে, তবে নতুন জায়গার মতো পরিষ্কার নয়। এই দিকে এসে থাকলে যেমন একটা সুবিধে আছে জিপ স্ট্যান্ডে তাড়াতাড়ি আসা যাবে কিন্তু সাধারণত যে সময় যাত্রীরা জোমসোম বাসে করে এসে পৌঁছবেন, তখন আর তাঁদের শক্তি থাকবে না আরও এক কিলোমিটার হেঁটে এখানে এসে থাকা। বরণ সকালেই সেই হাঁটা অনেক সহজ। অবশ্য যাঁরা আকাশ-পথে আসবেন তাদের কথা আলাদা। এই সমস্ত ভাবনার মধ্যে আমার মনে হলো কিছুদিন আগে পর্যন্ত পোখরা থেকে সম্পূর্ন পথটাই হেঁটে তির্থযাত্রীরা এই জোমসোমের উপর দিয়ে মুক্তিনাথ পৌঁছাতেন। অনেক দিন আগে থেকেই অবশ্য জোমসোমে প্লেনে করে এসে বাকি রাস্তা হেঁটে মুক্তিনাথ দর্শন করে এখান থেকে প্লেনেই পোখরা বা কাটমান্ডু চলে যাবার ব্যবস্থা ছিল। এই প্রসঙ্গে বৈতালিক ‘মুক্তিতীর্থ মুক্তিনাথ’-এ প্লেনে জোমসোম এসে মুক্তিনাথ দর্শনকারীদের কটাক্ষ করেছেন। তিনি লিখেছেন,

“প্লেনে জুমসুম এসে মুক্তিনাথ দর্শন অনেকটা শোনমার্গ বালতাল হয়ে অমরনাথ দর্শনের মত। পাকা আমের বদলে আমের গন্ধযুক্ত ট্যাবলেট খাওয়া।
.... আমি মনে করি তীর্থ পরিক্রমাই হচ্ছে সার্থক তীর্থদর্শন। হিমালয়ের অপরূপ রহস্যের মধ্য দিয়ে পরিক্রমা শেষে দেব দর্শন। যেন সোনার হাতে সোনার চুড়ি। স্রষ্টা এবং সৃষ্টি। অঙ্গাঙ্গী অবিচ্ছেদ্য। যেন সুরের এক মিলিত ‘সিম্ফনী’।“

বৈতালিক এনাদেরই এই বলেছেন, তা হলে আমাদের কি বলবেন, বা বলতেন? যাক, থাকবার ব্যবস্থা কোথায় করলে ভাল হয় চিন্তা করার বদলে এখানে এসে কি দেখলাম সেটাই জানানোর মত কথা। দেখলাম টিকিট কাউন্টার বন্ধ ।

শুনলাম মাওবাদী বন্ধ! তা হলে নেতার কথা? যাই হোক একজন জিপ ড্রাইভার আমাদের এই পরিসেবার আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলতে উপদেশ দিলেন। আমাদের তাঁর খোঁজে যাওয়ার পথে এক দল প্রহরীর সঙ্গে দেখা। তাঁদের কথা শুনে আধিকারিকের খোঁজ না করেই আবার স্ট্যান্ডে ফিরে আসলাম। প্রহরীর দল নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে লাগলো। সেই সম্পাদক মশাইও এলেন। শেষে ১১টা নাগাদ জিপ ছাড়ার ব্যবস্থা হলো। আমি বুকিং কাউন্টারে প্রথম টিকিট পেলাম, আমার প্রথমে কিউয়ে দাঁড়ানোর সুবাদে। তবে আমাদের জিপ সর্বশেষে স্ট্যান্ড থেকে ছাড়লো, কেননা আমাদের জন্যে যে জিপ দুটোর নম্বর কাউন্টার থেকে টিকিটের উপর লিখে দিলো সেগুলো স্ট্যান্ডের সব থেকে ভিতরে ছিলো।
একটি জিপের বহন ক্ষমতা ১২ জন। আমাদের ২০ জনের জন্য দুটি জিপের ২৪টি সিটের টিকিট নিতে হলো। জন প্রতি ভাড়া ৩৫০ নেপালি টাকা তাহলে আমাদের জন প্রতি লাগলো ৪২২ নেপালি টাকা। এখান থেকে জিপ যাবে মুক্তিনাথ মন্দিরের ঠিক নিচে, দূরত্ব ২০কিমি। সেখান থেকে মন্দিরে যেতে গেলে কম বেশি ৫০০ মিটার চড়াই-এ উঠতে হবে। স্ট্যান্ডে অপেক্ষমান জিপের জন্যে যাত্রীর সংখ্যা আন্দাজে প্রায় ১০০ জন। আমরা আর চার পাঁচ জন বিদেশি ছাড়া সকলেই দক্ষিণ ভারতীয়। আমরা যখন জিপ ছাড়ার অপেক্ষায় বসে দাঁড়িয়ে সময় কাটাচ্ছিলাম, দক্ষিণ ভারতীয়রা বিষ্ণুর স্তব গান ইত্যাদি করছিলেন। লক্ষ্য করলাম তাঁরা যদিও বিভিন্ন গোষ্ঠিতে এসেছেন, তা হলেও প্রায় প্রত্যেক গোষ্ঠির পরিচালক হিসাবে এক জন করে গুরু আছেন, তাঁরাই নিজ নিজ দলের নেতা ও গাইডের কাজ করছেন ।

শেষ পর্যন্ত ১১:২০ মিনিট নাগাদ আমাদের জিপ চলতে শুরু করলো । জোমসোম থেকে মুক্তিনাথের পাদদেশে রানিপৌয়া (এখানকার বিষয় পরে জানাবো) পর্যন্ত আমরা প্রায় সমস্ত পথটাই পাথর ভর্তি কাঁচা রাস্তা দিয়ে এসেছি আর গাড়ির ঝাঁকানিকে নানা ভাবে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করেছি। তবে এই রাস্তায় যে ঝাঁকানি, তা নিজে ভোগ না করে বুঝলে কেবল মাত্র বর্ননায় তা আপনাদের বোঝানোর ভাষা আমি খুঁজে পাচ্ছি না। আমি জিপের পিছনে বসেছিলাম এবং গাড়ির গতির দিকে মুখ ছিলনা, তাই ঝাঁকানি সহ্য করা আরও কষ্টদায়ক হচ্ছিলো। মাথার উপর একটা রডে কয়েকটা চামড়ার হাতল ঝোলানো ছিল। একটা হাতল প্রাণপনে চেপে ধরেও গাড়ির ঝাঁকানির সঙ্গে ডাইনে, বাঁয়ে আর সামনের দিকে পড়ে যেতে যেতে প্রধানত অন্যের সাহায্যে নিজেকে জিপের সিটের সঙ্গে আটকে রাখবার চেষ্টা করে যেতে হচ্ছিলো সমানে। অবশ্য অন্যের সাহায্য নেবার কথায় ভাববেন না যে তাঁরা স্থির হয়ে বসে থাকতে পারছিলেন। আসলে আমরা একে অন্যকে নিজের চেষ্টা ব্যতিরেকে সামলাচ্ছিলাম।
নিজেদের সামলাতে সামলাতে আমরা বাইরের দিকে দেখবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে তা ঠিক মতো সম্ভব হচ্ছে না, কারণ জিপের উপরাংশ মোটা পলিথিন দিয়ে ঘেরা, বৃষ্টির জল আটকাবার জন্য, যদিও বৃষ্টি তখন পড়ছিল না। অন্যান্য জিপ ঢাকা থাকা সত্বেও জানালা থাকার কারণে বাইরে দেখা কিছুটা সম্ভব ছিল। যাই হোক আমাদের গাড়িতেই ড্রাইভারের পাশে বসে সুজু, অর্থাৎ শ্রীসুজিত ঘোষ ভিডিও ছবি তোলার চেষ্টা করছে লক্ষ্য করলাম। ওইখানে ঝাঁকানি ততটা সহ্য করতে হচ্ছে না ওকে। রাস্তার একধারে খাদ আর অন্য ধারে পাহাড়, যদিও যথাক্রমে খুব একটা গভীর বা উঁচু নয়। একেবারে ঊষর, কেবল মাত্র কিছু ছোট ছোট কাঁটা ঝোঁপ রয়েছে ।

হঠাৎ গাড়ি থেমে গেল। ড্রাইভার নেমে পিছন দিকে এসে আমাকে বললো যে এক মেমসাহেব বাচ্চা নিয়ে হাঁটছেন, কাগবেণী যাবেন, লিফ্‌ট চাইছেন। আমরা রাজি থাকলে তাঁকে গাড়িতে তুলবেন। রাজি না হবার কোনও কারণ ছিল না, বিশেষ করে আমাদের জিপেও নিয়ম মাফিক আরও দুজনের স্থান রয়েছে। আমি যখন কাউন্টারে টিকিট কাটার জন্যে কিউয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম, শিশু কোলে এক তন্বী বিদেশিনি টিকিট কাটা সম্পর্কে কথা বলছিলেন লক্ষ্য করেছিলাম। এখন দেখলাম তিনিই আমাদের জিপে উঠলেন। আমার পাশেই জায়গা দিলাম, তবে বেশ অস্বস্তিতে পড়লাম যে তাঁর সঙ্গে ধাক্কা না লাগে গাড়ি চলার সময়ে। তাঁর সুন্দর ও সপ্রতিভ ব্যবহারের কারণে সাহস করে প্রশ্ন করলাম তাঁর নাম-ধাম জানার জন্যে। জানতে পারলাম যে তিনি নরওয়ের মহিলা, নাম য়্যানি তবে গত প্রায় পাঁচ বছর ভারতের গোয়ায় যোগাসন শেখাচ্ছেন। তাঁর স্বামী হেঁটে কাগবেণীতে চলে গিয়ে তাঁর জন্যে অপেক্ষা করছেন। শিশুকে নিয়ে তাড়াতাড়ি তিনি হাঁটতে পারেননি, তাই পরে যাচ্ছেন। এ ছাড়া তাঁর পিঠে বেশ বড় এক রুক্‌-স্যাকও রয়েছে। শিশুটির নাম য়্যালেক্স আর মনে হলো সে মাত্র বছর দেড়েকের। ভীষণ হাসিখুসি। গাড়ির ঝাঁকুনিতে তার মা সহ সকলে এবং মায়ের কোলে সেও কি রকম যাকে বলে শুকনো ডাঙাতেই নাকানি-চোবানি খাচ্ছে, সেই দেখে ও ভোগ করে তার সে কী হাসি। অচিন্ত্য এ রকম অবস্থার মধ্যেই তার একটা অত্যন্ত সুন্দর ছবি তুলতে পারলো (চিত্র-৩৩)।

চিত্র ৩৩ অ্যালেক্স। ছবিঃ শ্রী অচিন্ত্য পাল

কিন্তু অচিন্ত্য তার পরেই তাকে আদর করার জন্যে একটু গাল টিপে দিতেই তার সে কী রাগ, হাসি বেশ কিছুক্ষণের জন্যে একেবারে বন্ধ করে দিলো।
দেখতে দেখতে একলেভাট্টি (২৭৪০মি.) হয়ে কাগবেণী (২৮০০মি.) পৌঁছে গেলাম ১১:৪৫ মিনিটে, জোমসোম থেকে দূরত্ব ৯কিমি। এই অঞ্চলে পথের ধারেই কয়েকটা হোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে। বাইরে থেকে দেখতে বেশ ভালই। কাছাকাছি ‘অন্নপূর্ণা কনসারভেশন এরিয়ার’ এক বড় হোর্ডিং দেখতে পেলাম ।

কাগবেণীতে গাড়ির রাস্তা গ্রামের অনেকটা উপর দিয়ে। গ্রাম বেশ বড়, মরুভূমির মধ্যে মরুদ্বানের মত গাছ ও চাষের ক্ষেতে ভরা। অচিন্ত্য আমাদের জিপে ছিল, বেশ অসুবিধের মধ্যেও আর অন্য জিপে অজয়দা ছিলেন, সেখানে তুলনামূলক ভাবে সুবিধের মধ্যে থেকে এই পথের অনেক ছবিই তুলেছিলেন। তার মধ্যে থেকে কয়েকটা ছবি এখানে উপস্থিত করলাম (চিত্র-৩৪ থেকে ৩৯)।

চিত্র ৩৪ ঊষর ও উর্বর। ছবিঃ শ্রী অজয় মান্না

চিত্র ৩৫ ঊষর ও উর্বর - ২। ছবিঃ শ্রী অজয় মান্না

চিত্র ৩৫ ঊষর ও উর্বর - ৩। ছবিঃ শ্রী অচিন্ত্য পাল

চিত্র ৩৭ পাহাড়ের কোলে। ছবিঃ শ্রী অজয় মান্না

চিত্র ৩৮ কাঁটা গাছের ঝোঁপ। ছবিঃ শ্রী অজয় মান্না

চিত্র ৩৯ বাড়ি না দুর্গ? ছবিঃ শ্রী অজয় মান্না

কালী গণ্ডকী আর কৃষ্ণা নদীর ধারে এই গ্রাম। গ্রামের মধ্যেই এই দুই নদীর সঙ্গম। আগেই বলেছি যে গ্রামের অনেকটা উপর দিয়েই যাচ্ছি। যেতে যেতে সুজু অনেক কষ্ট করে কাগবেনির ভিডিও তুলেছে। স্বাভাবিক ভাবেই তা খুব ভাল হয়েছে তা নয়। তাও কিছু কাট-ছাঁট করে আমি আপনাদের সামনে তুলে দিলাম।

পাঠকের আশা করি মনে আছে যে আমি এই লেখার শুরুতেই এক ভদ্রলোকের কথা বলেছিলাম যাঁর কাছ থেকে মুক্তিনাথ যাবার গাড়ির রাস্তার কথা জেনেছিলাম। তিনি, শ্রী অনিরুদ্ধ হীরা ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ওখানে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে মুক্তিনাথ অঞ্চলে প্রচুর বরফ ছিল। জোমসোম-রানিপৌয়ার রাস্তা অনেকটাই বরফাচ্ছাদিত ছিল। উনি জিপের ছাদে বসে ভ্রমণ করেছিলেম বাধাহীন অবস্থায় পথের ছবি তোলার জন্যে। তাঁর তোলা এই পথের ও পথের ধারের কয়েকটি ছবি দেখুন (চিত্র-৪০-৪৫)। দারুন, না?

চিত্র ৪০ সম্ভবত বার্লি চাষ। ছবিঃ শ্রী অনিরুদ্ধ হীরা

চিত্র ৪১ স্থানীয় তীর্থযাত্রীর সঙ্গে। ছবিঃ শ্রী অনিরুদ্ধ হীরা

চিত্র ৪২ মালবাহকেরা। ছবিঃ শ্রী অনিরুদ্ধ হীরা

চিত্র ৪৩ জীপের ছাদ থেকে। ছবিঃ শ্রী অনিরুদ্ধ হীরা

চিত্র ৪৪ যেন পটে আঁকা ছবি। ছবিঃ শ্রী অনিরুদ্ধ হীরা

চিত্র ৪৫ বরফে ঢাকা দুর্গ? ছবিঃ শ্রী অনিরুদ্ধ হীরা

কথা মত, য়্যানি য়্যালেক্সকে নিয়ে এখানে নেমে গেল। দেখলাম ড্রাইভার তার কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছে। আমি আপত্তি করলাম কেননা আমরা তো ১২টা সিটের ভাড়াই দিয়েছি। কয়েক সেকেণ্ড চিন্তা করে ড্রাইভার য়্যানিকে পয়সা ফেরৎ দিলো। এবার য়্যানি আমাকে সেই ভাড়া দিতে এলো। আমি আপত্তি করলে ও কত বার যে ধন্যবাদ দিলো তার ইয়ত্তা নেই। আসলে আমি দেখেছি এখানকার যে কোনও পরিসেবার জন্যে এরা বিদেশিদের কাছ থেকে সাধারণের দশ গুন মূল্য নিতেও পিছোয় না। তাই সেই ব্যাপার ঘটলো না অথচ ওর কাজ হলো বলে অভিভূত হয়ে পড়লো।
এই বোধ হয় জিপ নিশ্চয় ওল্টালো, এই রকম বার বার ভাবতে ভাবতে আবার আমরা এগোতে থাকলাম। এখান থেকেই রাস্তা বেশ খাড়াই। বিভিন্ন লেখকের লেখায় এই হাঁটা পথের বর্ণণায় এই চড়াইএর কথা বিশেষ করে উল্লেখ আছে। অভীষ্ট লক্ষের দিকে পৌঁছবার উৎসাহ এই চড়াই অতিক্রম করার রশদ যোগাতো। এখানে পথের পাথর ছাড়া আরেক উপসর্গ যোগ হয়েছে, জল-কাদা ঢাকা গর্ত, সেখানে আমাদের সামনের এক দক্ষিণ-ভারতীয় তীর্থ-যাত্রী বোঝাই জিপ আটকে গেল ।

এ ছাড়াও রাস্তা বেশ প্যাঁচালো থাকার কারণেও প্রায়ই গাড়ি দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। এই ভিডিওতে তাই কয়েক জায়গায় ছবি মোটামুটি অনেকটা স্থির দেখানো গেছে। ক্রমে খিঙ্গা (৩৩৫৫মি.) আর ঝারকোট (৩৫৫০মি.) পার হলাম। ঝারকোট বেশ বড় জনপদ আর প্রাচীন বসতি। মানুষের বাস হবার কারণে এখানে গাছ-পালা-চাষ-আবাদ বেশ ভালই আছে। এক বিশেষ শ্রেণীর পপলার গাছের আধিক্য। এখানে শুনেছি এই গাছের নাম পিপল বলতে। গাছের কান্ডের ২/৩মি. উপর দিক থেকে প্রচুর শাখা সরল ভাবে উপরে উঠে গেছে। বাড়ির ছাদে কড়ি-বরগা হিসাবে এই গাছের গুঁড়ির ও ডালের ব্যবহার দেখেছি, যেমন লাদাখের অন্যান্য অঞ্চলেও প্রচলিত। তবে এই অঞ্চলে যে কয়েকটা হোটেল বা বাডিতে ঢুকেছি, এই রকমের কড়ি-বরগা দেখিনি, যা কারগিল বা লেহ্‌-এর প্রায় প্রত্যেক হোটেলেই দেখেছি।

ড. শুভেন্দু প্রকাশ চক্রবর্তী

 

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।