মায়াবতী
আজকাল ভ্রমণ
ভীষণ এক ব্যস্ততার ব্যাপার, প্রতিটি মূহুর্ত নতুন কিছু খোঁজার
আর পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। কেনই বা তা হবে না? প্রত্যেকেই তার প্রতিটি
পয়সা ভ্রমণে বেরিয়ে উসুল করতে চায়। সে যাই হোক ওই পয়সা তো
ভ্রমণার্থীর কষ্টার্জিত অর্থ। তবে আমার মনে হয়, এই রকম করে
ভ্রমণ করলে ভ্রমণের আসল উদ্দেশ্য চরিতার্থ হয় না। ভ্রমণের
আসল উদ্দেশ্য বলতে আমি মনে করি শরীর ও মনের বিশ্রাম। এখন ডিস্কভারি
বা ন্যাশানাল জিওগ্রাফিক ইত্যাদি চ্যানেলের দৌলতে নতুন কিছু
দেখা ঘরে বসেই হতে পারে। মনে করবেন না যে আমি নিজে উপস্থিত
থেকে কিছু দেখার থেকে এই রকম দেখা শ্রেয় মনে করছি। তবে এটা
সত্যই যে আজকাল অনেক সংস্থ্যা আছে যাঁরা ভ্রমনের প্রতিটি পদের
ব্যবস্থা করে দেন কিন্তু আপনাকেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে
যেতে হবে। তা হলেও সবকিছুই সেক্ষেত্রে এক রুটিন মাফিক হয়ে
যায়, কেবল মাত্র বাড়িতে থাকলে যা করতেন তা না করে অন্য কিছু
করবেন। অনেকে আবার ভ্রমণে বেরিয়েও “বাড়ির বাইরে বাড়ি” (Home
away from home), এই myth বা মিথ্যার আচ্ছাদনে থাকতে চান।
এও কাঙ্ক্ষিত হওয়া উচিত নয়, তাহলে বাড়ির বাইরেই যাওয়া কেন,
বাড়িতে থাকা কি দোষের হল?
আমি আপনাদের
একটি স্থানের কথা বলতে পারি যেখানে গেলে আপনি মনের শান্তি
পাবেন, দেহকে বিশ্রাম দিতে পারবেন আর চোখের সামনে অপরূপ দৃশ্য
দেখতে পাবেন। এই স্থান ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের চম্পাবত
জেলার ‘মায়াবতী’।
১৮৯৬ খৃষ্টাব্দে, স্বামী বিবেকানন্দ সুইট্জারল্যান্ডের আল্প্স
পাহাড়ের কোনও এক স্থানে স্বাস্থ্যোদ্ধারের জন্য গিয়েছিলেন।
আল্প্সের সুন্দর, শান্ত আর নির্মল পরিবেশে মোহিত হয়ে উনি
তাঁর সহযাত্রী ব্রিটিশ শিষ্যদের কাছে তাঁর এক ইচ্ছার কথা প্রকাশ
করেন, হিমালয়ের নিভৃতে এক আশ্রম স্থাপনা করা। সেই আশ্রম হবে
কেবল মাত্র বৈদিক সাধনার স্থল। লক্ষ্য অদ্বৈত সাধনা, সেখানে
কোনও ধর্মীয় ক্রিয়াপদ্ধতি পালনে দিন বাঁধা থাকবে না।
অল্প দিনের
মধ্যেই তেমন এক স্থান খুঁজে পাওয়া গেল, আলমোড়া থেকে প্রায়
১০০মাইল পূর্বে। ব্রিটিশ শিষ্য, ক্যাপ্টেন যে. এইচ. সেভিয়ার
সম্পত্তি ক্রয়ের প্রয়োজনীয় মূল্য দান করলেন এবং ১৮৯৯ সালে
বেলুর মঠ স্থাপনের মাত্র তিন মাসের মধ্যে সেই স্থানে ‘অদ্বৈত
আশ্রম’ স্থাপিত হল। আশ্রম স্থাপনকালে স্থানের নাম ছিল ‘মাই-কি-পিঠ’
বা মায়ের স্থান। এই নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ হল ‘মায়াবতী’।
উত্তরাখণ্ড
রাজ্যের চম্পাবত জেলার লোহাঘাট (১৬৪৫মি.) থেকে মাত্র ৯কিমি.
দূরে অবস্থিত এই মায়াবতী। লোহাঘাট উত্তর-পূর্ব রেলের শেষ ষ্টেশন
টনকপুর থেকে প্রায় ৯০কিমি. উত্তরে পিথোরাগড়ের পথে এক পাহাড়ি
শহর। এই টনকপুর-পিথোরাগড় রাস্তা আরও উত্তরে চলে গেছে এবং এই
পথেই এখন মানস-কৈলাস যাওয়া হয়ে থাকে। আলমোড়ার দিক থেকেও বেশ
ভাল রাস্তা আছে এখানে আসার জন্যে।
মায়াবতী
মোটামুটি নভেম্বর মাসের প্রথম থেকে প্রায় মার্চ মাস পর্যন্ত
বরফাচ্ছাদিত থাকে, এই সময় আর বর্ষার সময় বাদ দিয়ে বাকি সময়ে
যাওয়া যায়। তবে বসন্তে অর্থাৎ এপ্রিল মাসে এখানে আসতে পারলে
খুব ভাল লাগবার কথা, কেননা প্রকৃতি তখন ফুলে, বিশেষ করে ঝলমলে
লাল রডোডেনড্রনে ঢেকে থাকে। আর শরৎ কালেও এখানকার আর এক বিশেষ
আকর্ষণ, পেঁজা তুলোর মত সাদা মেঘ ছড়ানো সুনীল আকাশ আর দিগন্ত
বিস্তৃত তুষার কিরীটের পশ্চাদ্পট। এখান থেকে অনেকগুলি বরফ
শীর্ষ দেখা গেলেও নন্দাদেবী (৭৮১৮মি.) শ্রেণীর শিখরগুলি আর
পঞ্চচুল্লি ( ১ম-৬০০৪মি., ২য়-৬৩৫৫মি., ৩য়-৬৩১২মি., ৪র্থ-৬৩৩৪মি.
ও ৫ম-৬৪৩৭মি.) বেশ কাছে মনে হয়।
আগেই বলেছি,
এখানে আসবার প্রধান কারণ শরীর ও মনের বিশ্রাম গ্রহণ। তবে কোনও
কর্মক্ষম ও বোধশক্তিধারী মানুষের কি মন একেবারে চিন্তাশূন্য
থাকে? কিছু না কিছু চিন্তাধারা সর্বদাই মনে বয়ে যায়। তাই সবথেকে
ভাল হয় যদি এখানকার বই-এর ভাণ্ডার কিছুটা পরখ করা যায়। বইএর
সংগ্রহ, বিশেষ করে তার বিষয়বৈচিত্র বিশাল। বিষয়বৈচিত্রের কিছু
উদাহরণ উপস্থিত করি, টি. ফিসার ইরউইনের ‘Prosperous British
India’, দাদা ভাই নৌরোজির লেখা, ‘Menace of Hindu Imperialism’,
মার্ক টোয়েনের ‘Adventure of Huckleberry Finn’ বা এডিংটনের
‘The Nature of Physical World’।
পুস্তকের
সংগ্রহ যে ঘরে আছে, সেই ঘরেই স্বামীজি ১৫ দিন থেকেছিলেন। উনি
জানুয়ারি ৩, ১৯০১ সালে এই আশ্রমে আসেন। আশ্রমে তাঁর স্বপ্ন
কেমন বাস্তবায়িত হচ্ছে দেখবার জন্যে অনেক দিন থেকেই আসার ইচ্ছা
ছিল। কিন্তু হঠাৎ ক্যাপ্টেন সেভিয়ারের মৃ্ত্যু তাঁকে জানুয়ারি
মাসের ভয়ঙ্কর শীতের মধ্যেই মিসেস সেভিয়ারকে সান্ত্বনা দেবার
জন্যে টেনে নিয়ে আসে।
প্রথমেই
বলা হয়েছে যে এই আশ্রম কেবল মাত্র অদ্বৈতের আরাধনা করার জন্যে
নির্মিত হয়েছিল। স্বামীজি এখানে এসে দেখলেন যে আশ্রমবাসীরা
একটি ঘরে তাঁদের গুরু শ্রীরামকৃষ্ণের ছবি ফুলের মালায় সাজিয়ে
সামনে ধূপ-ধুনা দিয়েছে। অর্থাৎ পূজা করেছে। স্বামীজি তখন কিছু
না বলে, আশ্রমের ব্যবস্থাপকদের তিরস্কার করলেন। তাঁরা ব্যাপারটা
বুঝতে পেরে লজ্জিত হয়ে পূজা বন্ধ করে দিলেন এবং পরে ঠাকুরঘরও
তুলে দিলেন। বিবেকানন্দ ওখান থেকে চলে আসার পর কিন্তু পূজা
করার প্রধান হোতা ‘সুপ্রিম কোর্টে’ নালিশ পেশ করলেন। যথা সময়ে
সেই নালিশ ‘চিফ্ জাস্টিস’ খারিজ করে দেবার রায় জানিয়ে অর্ডার
দিলেন, “আমাদের গুরু জিনি, তিনি তো অদ্বৈত; তোমরা যখন সেই
গুরুর শিষ্য, তখন তোমরাও অদ্বৈতবাদী। আমি জোর করিয়া বলিতে
পারি, তোমরা অবশ্য অদ্বৈতবাদী।” পাঠক নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন
চিফ্ জাস্টিস কে? স্বামীজি বেলুড় মঠে ফিরে এসে ঐ ঘটনা যেমনভাবে
বিবৃত করেছিলেন তা বেশ জানার মত। তিনি বলেছিলেন, “আমি ভেবেছিলুম
অন্ততঃ একটি কেন্দ্রেও তাঁর বাহ্যপূজাদি বন্ধ থাকবে! কিন্তু
হায়, হায় গিয়ে দেখি বুড়ো সেখানেও জেঁকে বসে আছেন।” আমি এই
ঘটনার কথা মায়াবতীর আশ্রমেই ওখানকার প্রেসিডেন্ট মহারাজের
কাছে শুনেছিলাম। ঘটনার বিবরণ “হিমালয়ে শেষবার” পরিচ্ছেদে স্বামী
গম্ভীরানন্দ রচিত “যুগনায়ক বিবেকানন্দ”, তৃতীয় খণ্ডের (উদ্বোধন
কার্যালয়, কলকাতা, প্রথম সংস্করণ, দ্বাদশ পুনর্মূদ্রণ, আষাড়
১৪১০)পৃ. ৩০৩-এ আছে।
ইতিহাস
সরিয়ে রেখে আবার আমরা আশ্রম দেখতে আরম্ভ করি। আপনি যদি বই
পড়তে পড়তে অন্য কিছু করতে চান, বা আদৌ বই পড়তে আপনার ইচ্ছা
না হয়, আশ্রমের ডান দিকে বাগানের ভিতর দিয়ে কিছুটা এগিয়ে এসে
ছোট ছোট আগাছা এবং শুকনো পাতা সরিয়ে মাটিতেই বসে পড়ুন আর সামনের
দিকে তাকান। একটু নিচের দিকে আশ্রমের দাতব্য চিকিৎসালয় ও হাসপাতাল
দেখতে পাবেন। দৃষ্টি একটু উপরের দিকে করলেই আপনি চমৎকৃত হবেন
দিগন্ত বিস্তৃত শ্বেত শুভ্র তুষার কিরীটের সারি দেখতে পেয়ে।
আপনার মন অদ্ভুত এক শূন্যতায় ভরে যাবে। আপনি ভাবছেন শূন্যতা
আবার মন ভরাতে পারে নাকি। দেখুন না পরীক্ষা করে? আপনি অনুভব
করবেন যে আপনি এই জগতে কত অকিঞ্চিৎ। আর আপনার অহ্ম যদি ভীষণ
শক্তিশালী হয়, তা হলে ওই নিঃসীম শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে থেকেই
হয়ত আপনার মনে পরবর্তী বোর্ড মিটিংএ আপনার কার্যপদ্ধতি উদ্ভাবন
করে নিতে পারবেন।
৪কিমি.
ট্রেক করে ৩০০মি. আরও উঁচুতে উঠে আপনি ‘ধরমগড়ে’, বা ‘ধর্মগড়ে’
চলে যেতে পারেন। কেন যাবেন? জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পায়ে হেঁটে
ঘোরার একটা রোমাঞ্চ আছে না? তাছাড়া আশ্রমের পাশ থেকে যেমন
দেখা যায়, তার তুলনায় ওই তুষার কিরীটশ্রেণীর দিগন্ত বিস্তৃত
দৃশ্য ওখান থেকে আরও বিশাল মনে হয়। এবং সামনের পর্বতময় অঞ্চল
আরও বেশি করে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। বিশেষ করে যেমন আগেই বলেছি,
আপনি যদি বসন্তকালে আসেন, আপনি এক স্বর্গীয় বাতাবরণে উপস্থাপিত
হয়ে যেতে পারবেন; ফুলন্ত রডোডেন্ড্রনের কারণে চতুর্দিগন্ত
আগুনের রঙে রাঙা হয়ে থাকা আরও সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারবেন।
অবশ্য মনে রাখবেন, অন্ধকার হবার আগেই ফেরার পথ ধরবেন সে আপনার
যতই ইচ্ছা করুক না ওখানকার পরিবেশ আরও কিছুক্ষণ উপভোগ করতে।
কারণ, অনেকটাই নিচে নামতে হবে পাহাড়ি জঙ্গলের পথে। তা ছাড়া
যদিও এখন প্রায় নেই বললেই হয়, বন্য জন্তুর উপস্থিতির সম্ভাবনা
একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
স্বামী বিবেকানন্দ এখানে ১৫ দিন বাসের সময় প্রায় প্রত্যেক
দিনই এই ধর্মগড়ে এসে ধ্যান করতেন। এই জায়গা ওনার খুবই পছন্দ
হয়েছিল। বলেছিলেন যে, “জীবনের শেষভাগে সমস্ত জনহিতকর কাজ ছেড়ে
এখানে আসব আর গ্রন্থরচনা ও সঙ্গীতালাপ করে দিন কাটাব।” এই
কথাও আপনি “যুগনায়ক বিবেকানন্দয়” পাবেন। তাঁর ধ্যানের স্থানে
এখন একটি ছোট্ট ঘর তৈরি করা হয়েছে।
আশ্রম থেকে
বেশ কিছুটা নিচে সারদা নদীর ধারে এক ছোট উপত্যকা। সেখানে আপনি
ভোর বেলা চলে আসতে পারেন। এও এক অনিবর্চনীয় অভিজ্ঞতা হবে আপনার।
ক্যাপ্টেন সেভিয়ারকে এখানেই তাঁর ইচ্ছানুযায়ী হিন্দু শাস্ত্র
মতে দাহ করা হয়েছিল। তবে মনে রাখবেন, আপনি ধর্মগড়েই যান বা
সারদা নদীর পারেই যান, আশ্রম থেকে গাইড হিসাবে কোনও একজন সঙ্গী
নিতে ভুলবেন না। আগেই বলেছি, পাহাড়ি ও জঙ্গলের পথ, তাছাড়া
চিহ্ন দেখে দেখে আপনাকে এগোতে হবে, ঠিক মত কোনও পথ করে রাখা
নেই।
মায়াবতী
পাহাড় ও আশপাশের এলাকা আশ্রমের সম্পত্তি, কাজেই ওইখানে অন্য
কোনও প্রকার বাড়ি-ঘর নেই। তাই আপনাকে সাময়িক বাস আশ্রমের অতিথিশালাতেই
করতে হবে। তবে আপনি গেলেন আর সেখানে আপনার স্থান পেয়ে গেলেন,
তা কিন্তু হবে না। আপনাকে প্রায় তিন/চার মাস আগে থাকার জন্যে
চিঠি লিখে ব্যবস্থা করতে হবে। চিঠি লিখবেন “অদ্বৈত আশ্রম,
৫ ডিহি এন্টালি রোড, কোলকাতা-৭০০০১৪” অথবা “প্রেসিডেন্ট মহারাজ,
অদ্বৈত আশ্রম, পোস্ট অফিস-মায়াবতী (লোহাঘাট হয়ে), পিন-২৬২৫২৪,
জেলা-চম্পাবত, উত্তরাখণ্ড” এই ঠিকানায়। চিঠিতে আপনাকে জানাতে
হবে যে রামকৃষ্ণ-সারদা মা-বিবেকানন্দের ভাবধারার সঙ্গে, অথবা
রামকৃষ্ণ মিশন বা এই গোষ্ঠীর কোনও সংস্থার সঙ্গে আপনি কতটা
জড়িত। তবে হতাশ হবেন না যদি আপনি এই সমস্ত সংস্থা বা ভাবধারার
সঙ্গে সোজাসুজি যুক্ত নাও হন। সেক্ষেত্রে আপনি আশ্রমের অতিথি
নিবাসে অবশ্য থাকতে পারবেন না। কিন্তু মায়াবতী আপনি ঘুরতে
পারবেন এবং যা যা বলেছি, সবগুলোই উপভোগ করতে পারবেন। আমি যেমন
ছিলাম, আপনিও লোহাঘাটে থাকবেন। লোহাঘাট এক ছোট্ট পাহাড়ি শহর।
থাকবার বেশ ভাল জায়গা আছে এখানে। জি.এম.ভি.এন.এলের বিশ্রামাগার
আর আছে বেশ কিছু সাধারণ মানের হোটেল। বিশ্রামাগারে থাকবার
জন্যে এদের অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন (কে.এম.ভি.এন.এলের অফিস
ভারতের অনেক শহরেই আছে, তবে এখন এদের ওয়েবসাইট, http:://www.kmvn.gov.in
দেখে ব্যবস্থা করা সবথেকে সহজ)। অন্যান্য হোটেলে জায়গা পাবার
জন্যে লেখার প্রয়োজন হয় না।
লোহাঘাটে থাকলে আপনি সকাল সকাল নিজের ব্যবস্থা করা গাড়িতে
আশ্রমে চলে যাবেন। দুপুরের আগে পৌঁছে আশ্রমের অফিসে দেখা করবেন।
আপনাদের দুপুরের আহার এইখানেই করে নিতে পারবেন।
লোহাঘাট, ছোট পাহাড়ি নদী লোহাবতীর পারে অবস্থিত। নামটি সম্ভবত
‘লহূ’ বা রক্ত থেকে এসেছে। কারণ এখানকার মাটি লাল বেলে পাথরের।
নদীর পারে, এমনকি বর্ষাকাল ছাড়া অন্য সময়ে শীর্ণকায়া নদীর
জলের উপরে দিয়েও হাঁটতে পারবেন, সেও এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা
হবে আপনার। রকমারি চেহারার পাথর কুড়াতে পারেন নদী-গর্ভ থেকে,
আমরাও কুড়িয়েছিলাম।
‘এবট্-মাউন্ট’
নামে এক টিলার টঙে যেতে পারেন, মাত্র ৮কিমি. দূরে। এককালে
এই টিলার উপরের ছোট্ট এক উপত্যকায় ক্রিকেট খেলত ইংরেজরা। বেশ
বড়, প্রায় ধ্বংশপ্রাপ্ত এক বাংলো রয়েছে এখনো মাঠের পাশে। মাঠের
ধারেই ওকের জঙ্গলের মাঝ থেকে শৈল কিরীটের মালা সুন্দর দৃশ্যমান।
সূর্যাস্তের দৃশ্যও অপূর্ব।
লোহাঘাটে আসা-যাওয়ার পথে ‘শামলাতালে’ আর এক আশ্রম, স্বামী
বিরজানন্দ প্রতিষ্ঠিত বিবেকানন্দ আশ্রম দেখতে বা কিছুদিন সেখানে
থাকতেও পারেন। তা ছাড়া এই পথে আরও অনেক দেখবার মত জায়গা আছে।
এ বিষয় পরে আবার কোনও সময়ে বলা যাবে।
শুভেন্দু
প্রকাশ চক্রবর্তী