খিলখাবানা নদীর ধারে
এক ধরণের লোক ছিল
পিঠে তাদের উল্কি আঁকা
গালগুলো সব জুলফি ঢাকা
নাকটা উঁচু চোখটা কটা
ওজন হবে ষাট কিলো
নাম শুধলে বলত তারা,
'সবাই জানে আমরা কারা
আমরা হলাম খিলখাবানার
উল্কি-আঁকা গাম্বিলো।'
গাম্বিলোদের রাজ্য থেকে
তফাৎ হবে এক কোশের -
খিলখাবার অন্য পারে
বাবলা ঝোপের অন্ধকারে
থাকতো যে-দল জাত হিসেবে
গাম্বিলোদের রকমফের।
পিঠটা কেবল শূন্য ফাঁকা
নেই সেখানে উল্কি আঁকা
ঐটি বাদের আর যা-কিছু
এক্কেবারে এক ধাঁচের।
উল্কি-আঁকা গাম্বিলোরা
ভাবতো তারা উচ্চ-জাত
কারণ সেতো সবাই জানে
উল্কি থাকার তাইতো মানে
উল্কি-আঁকা উল্কি-ছাড়া -
দুয়ের মধ্যে ঢের তফাৎ।
দেখলে কোনও উল্কি-ছাড়া
করতো তাকে বিষম তাড়া
বলতো, 'পালা এই নিমেষে,
নইলে ঘটবে রক্তপাত!'
উল্কি-ছাড়া গাম্বিলোরা
ভাবতো সবই কপাল ফের -
আগ জন্মে পাপ ছিল খুব,
নিশ্চয় তার চলছে জের।
চৌকি পেতে ঘরের কোনে,
ভাবতো বসে নিজের মনে,
আহা যদি উল্কি পেতাম,
ওদের সঙ্গে খেলতে যেতাম
একই সঙ্গে আসন পেতে
খিচুড়ি আর পায়েস খেতাম!
একদিন খুব সকাল বেলা
কোত্থেকে এক সায়েব এলো
টুপি খুলে ঘাড় ঘুরিয়ে
সবাইকে সে বলল, 'হ্যালো।'
পেছনে তার তিনটে চ্যালা
সঙ্গে নিয়ে যন্ত্র মেলা
বলল সায়েব, 'আমি হলাম
হার্ভাডে রিসাচ্ ফেলো।'
উল্কি-ছাড়া গাম্বিলোদের
ছিল একটি বৃদ্ধ কাকা
বলল, 'সায়েব ভুল করেছো
আমরা অধম বড়ই নীচ;
খুঁজছ তুমি গাম্বিলোদের -
পিঠে যাদের উল্কি আঁকা।'
সায়েব বলে,'ভুল করি নি।
ওদের আমি ভালোই চিনি
ওরা হচ্ছে উচ্চ-নাসা
দাম্ভিক আর হৃদয়হীন।
তাইতো বহুত রিসাচ্ করে
বানিয়েছি এক যন্ত্র ওরে
এক্কেবারে সুপার ডিলাক্স
উল্কি আঁকার ছাপ-মেশিন।
একটা টাকা যেই খসাবি
অমনি পিঠে উল্কি পাবি।
তাই দেখিয়ে সামনে ওদের
নাচবি তোরা তা ধিন্ ধিন্।'
উল্কি-ছাড়া গাম্বিলোরা
ভাবল শুনে আর কি চাই
এগিয়ে দিয়ে একটা টাকা
ফেলল বলে বৃদ্ধ কাকা
'আর জন্মে পুণ্য ছিল,
নইলে কি আর তোমায় পাই;
কিন্তু সায়েব ভুল বুঝো না
দেখবো আগে যন্ত্রখানা
কামড়ায় কি কামড়ায় না;
যন্ত্রে আমি খুব ডরাই।'
সায়েব বলে, 'ঘাবড়াও মৎ
মেশিন আমার খুব নিরাপদ
যন্ত্রটাতে পিঠ লাগিয়ে
দম নিয়ে নাও এই ফাঁকে;
ঘট ঘট ঘট - ঘট ঘটঘট
লাগ উল্কি লাগ ফটাফট
আয় না সোনা উল্কি আমার
আয় চলে আয় এক ডাকে।'
নদীর ধারে উল্কি ছাড়া
ছিল যত গাম্বিলো
সবিস্ময়ে দেখল তারা
পিঠটা কাকার উল্কি ভরা
সবাই তখন ভক্তি ভরে
ভগবানের নাম নিলো।
বলল সায়েব,' উল্কি আমার
সেন্ট পারসেণ্ট গ্যারান্টি
রং হবে না মোটেই ফিকে
এই দেখে নাও দিচ্ছি লিখে
হয় যদি তা, রইলো আমার
রিপ্লেসমেণ্ট ওয়ারাণ্টি।'
উল্কি-ছাড়া গাম্বিলোদের
লাগলো তখন বিষম তাড়া
ঝনঝন পড়ছে টাকা
চলছে পিঠে উল্কি আঁকা।
সইছে না তর, কখন সবাই
বুক ফুলিয়ে ঘুরবে পাড়া।
দুপুর হবার একটু আগেই
শেষ হল সব উল্কি আঁকা
যন্ত্রটাকে ঝেড়েঝুড়ে,
টাকাগুলো বাক্সে পুরে -
তিন চ্যালাকে সঙ্গে নিয়ে
সায়েব দিলেন গাত্রঢাকা।
উল্কি পেয়ে গাম্বিলোরা
ছুটল নদীর অন্য পারে।
'ওরে ব্যাটা উল্কি-আঁকা,
বেরিয়ে এসে একটু তাকা;
তোদের গর্ব খর্ব এখন
চোখটা খুলে একটু চা-রে।
উল্কি নিয়ে ছিল বড়াই,
এখন তোদের থোড়াই ডরাই;
সবাই মোরা উল্কি-আঁকা -
চা খাবো আজ তোদের ভাঁড়ে।'
উল্কি-আঁকা গাম্বিলোদের
মাথায় হল বজ্রাঘাত
সামনে যারা দাঁড়িয়ে খাড়া -
উল্কি-আঁকা সবাই তারা;
সেই হিসেবে এদের সাথে
আজকে যে আর নেই তফাৎ!
কিন্তু এ যে ঘোর অবিচার -
শাস্ত্রে কি এর বিধান নেই?
জাত বিচারে আমরা আসল।
ওরা ভেজাল, ওরা নকল -
তলিয়ে যারা দেখতে জানে,
এক নিমেষে বুঝবে সেই।
কিন্তু তেমন কজন আছে
খিলখাবানার এই সমাজে -
উল্কি-আঁকা গাম্বিলোদের
উথলে ওঠে দারুণ শোক।
জগতে যে ওরাই খাঁটি,
সত্য অতি এই কথাটি -
কেমন করে প্রচার হবে,
জানবে সেটা বিশ্বলোক?
এমন সময়ে কেউ জানে না
কোত্থেকে এক সায়েব এলো।
পেছনে তার তিনটে চ্যালা,
সঙ্গে নিয়ে যন্ত্র মেলা।
বলল সায়েব, 'আমি হলাম,
হার্ভাডে রিসাচ্ ফেলো।
বুঝছি আমি আসল নকল
নিয়ে সবার হচ্ছে ধকল।
বলতে গেলে এই চিন্তায়
সমস্যাটা জটিল হয়।
ভাবতে হবে অন্যভাবে,
উল্কি কেন থাকতে হবে?
আমার মতে এই জগতে,
উল্কি এখন ফ্যাশন নয়।
তাইতো অনেক রিসাচ্ করে
বানিয়েছি এক যন্ত্র ওরে,
পেটেন্ট নেওয়া উল্কি তোলার
দারুণ ভালো ব্লিচ্ মেশিন।
একটা টাকা লাগবে শুধু,
পিঠটা হবে শূন্য ধু ধু -
উল্কি ছাড়া শূন্য পিঠে
নাচবি সবাই তা ধিন্ ধিন্।'
এই না শুনে হল্লা লাগে,
সবাই আগে আসতে চায়।
সায়েব বলে, 'সবুর কর.
লাইন করে দাঁড়িয়ে পড়।
খেয়াল রেখো ওদের না কেউ,
উল্কি তোলার সুযোগ পায়।'
মেশিন কাঁধে তিনটে চ্যালা
এবার দেখায় তাদের খেলা;
কল লাগিয়ে ফুঁ দেয় পিঠে
উল্কি তোলার মন্ত্র গায়।
গাম্বিলোরা দেখল চেয়ে -
নেই পিঠে আর উল্কি আঁকা।
যাক রে বাবা পেলাম ফিরে,
মান সম্মান সব কিছু রে!
এমন কি আর খর্চা হল
লাগলো মোটে একটা টাকা।
গাম্বিলোরা দারুণ খুশি,
মিটল তাদের সব চাওয়া।
যন্ত্রটাকে ঝেড়েঝুড়ে,
টাকাগুলো বাক্সে পুরে -
সায়েবটি তার চ্যালা সমেত
ট্যাক্সি ধরে দেন হাওয়া।