প্রথম পাতা


পরিবেশ


বিজ্ঞান


স্বাস্থ্য


ছোটদের বই

ছোটদের ছড়া

ছোটদের গল্প

নিজেদের পাতা


 


বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের দেহ ও মনের পরিবর্তন

বয়ঃসন্ধি হল সেই সময়টা যখন শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে ছেলেমেয়েরা ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ পুরুষ ও নারীতে রূপান্তরিত হয়। বয়সন্ধির প্রথম পর্যায়ে শধু শারীরিক লক্ষণগুলিই পরিস্ফুট হয়। মেয়েদের বয়ঃসন্ধি সুরু হয় ছেলেদের আগে থেকে - সাধারণতঃ ৮ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে।

বয়ঃসন্ধি বা পিউবার্টি (puberty) আরম্ভ হয় যখন একটি বিশেষ ধরণের হর্মোন Estrogen শরীরে অধিক মাত্রায় সৃষ্টি হতে শুরু করে। হর্মোনের এই আধিক্যের জন্য মেয়েদের শরীরে নানা পরিবর্তন ঘটে। তারা লম্বা হতে শুরু করে, স্তন স্ফিত হয়, তাদের নিতম্ব বা পেছনটা বিস্তৃত ও গোল হয়ে ওঠে, বগলের নিচে, পায়ে ও যৌনাঙ্গের আশপাশে লোম গজায় এবং সর্বোপরি এই সময়ে তাদের ঋতু শুরু হয়। কোনও মেয়ের ঋতু সুরু হওয়ার অর্থ হল তার শরীর প্রস্তুত হচ্ছে যাতে একদিন সে মা হতে পারে।

ঋতু হল মেয়েদের যৌনাঙ্গ থেকে রক্তস্রাব (মূলতঃ রক্ত ও কিছু টিস্যুর মিশ্রণ) যেটি ২ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই রক্তস্রাবের পরিমান খুব বেশি নয় - ৩০ মিলি-লিটার বা বড় চামচের দু-চামচের মত। এই নিসৃত রক্তের দাগ যাতে কাপড়ে না লাগে, সেইজন্য প্যাড (যা অন্তর্বাসের ভেতরে থাকে) ব্যবহার করতে হয়, অথবা রক্ত-শোষক ট্যাম্পন (Tampon) যৌনাঙ্গের অভ্যন্তরে ঢুকিয়ে রাখতে হয়। এটি যৌনাঙ্গের ভেতরে থাকে বলে মুত্রনালীতে বাধা সৃষ্টি করে না - তাই প্রস্রাব করতে কোনও অসুবিধা হয় না। একটা সুতো ট্যাম্পুনের সঙ্গে আটকানো থাকে - যাতে সেটা রক্তে ভিজে গেলে টেনে করা যায়। তবে প্যাড বা ট্যাম্পুন কেনার সামর্থ অনেকের থাকে না; সেক্ষেত্রে পরিস্কার পুরনো কাপর ভাঁজ করে প্যাডের মত বানিয়ে সেগুলো অন্তর্বাসের ভেতরে রাখা যেতে পারে।

এই শারীরিক পরিবর্তনগুলি, বিশেষ করে ঋতুর ব্যাপারটা আগে থেকে জানা না থাকলে, ছোটদের মনে অহেতুক ভীতির সৃষ্টি হতে পারে। আসলে ব্যাপারটাতে ভয়ের কিছুই নেই। এই রক্তস্রাব কেন হয় জানতে হলে নিজেদের শরীর সম্পর্কে একটু জেনে নিতে হবে। মেয়েদের শরীরে একটা গর্ভাশয় বা জরায়ু (uterus) থাকে, যেখানে ভ্রুণ বড় হয়। কিন্তু ভ্রুণের সৃষ্টি হয় কী করে? মেয়েদের যখন সন্তান ধারণের ক্ষমতা আসে, তখন রক্ত আর টিস্যু দিয়ে জরায়ুর দেওয়ালে একটি সুন্দর চাদর বিছানো হয়। প্রতি ঋতু-চক্রে মেয়েদের ডিম্বাশয় থেকে একটি ক্ষুদ্র ডিম্বাণু ফিলোপিয়ান টিউব দিয়ে নেমে এসে সেখানে আশ্রয় নেয়। সেখানে যদি ডিম্বাণুটি পুরুষের শুক্রে নিষিক্ত হয়, তাহলে ভ্রুণের সৃষ্টি হয় এবং ডিম্বাণুটি জরায়ুর সেই দেয়াল থেকে বাঁচার রসদ সংগ্রহ করে। তবে বেশির ভাগ সময়েই জরায়ুতে আসা ডিম্বাণু নিষিক্ত হয় না। সেইজন্য এই রক্ত আর টিস্যুর তৈরি দেওয়ালটারও প্রয়োজন হয় না। শরীর তখন সেটিকে পরিত্যাগ করে এবং মেয়েদের যৌনাঙ্গ দিয়ে সেগুলো বাইরে বেরিয়ে আসে।

এখানে যে ঋতু-চক্র কথাটা ব্যবহার করা হল, সেটা কি? সাধারণতঃ মেয়েদের ক্ষেত্রে ঋতু হয়েছে বা চলছে কথাটা বলতে বোঝায় রক্তস্রাবের ব্যাপারটা। কিন্তু সেটা সমস্ত প্রক্রিয়ার একটা অংশ মাত্র। পুরো ব্যাপারটা ঘটতে, অর্থাৎ রক্তস্রাব হয়ে টিস্যু ও রক্তগুলি চলে যাবার পর আবার নতুন করে জরায়ুতে রক্ত আর টিস্যুর দেওয়াল সৃষ্টি হওয়া, ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণুর জরায়ুতে এসে নিষিক্ত হবার জন্য অপেক্ষা করা; নিষিক্ত না হলে আবার রক্ত আর টিস্যুর চাদরের সঙ্গে সেটির দেহের বাইরে চলে যাওয়া - এই সমস্ত প্রক্রিয়াটি ঘটে মোটামুটি এক মাস সময়ের মধ্যে। সেইজন্য এই চক্রকে অনেক সময়ে বাংলায় 'মাসিক' বলা হয়। তবে প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই যে এটি একমাস হবে তার মানে নেই। সাধারণতঃ এই প্রক্রিয়া ২১ থেকে ৪৫ দিন অন্তর নতুন করে শুরু হয়।

সাধারণভাবে মেয়েদের ঋতু শুরু হয় ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। গ্রীäম প্রধান দেশে একটু আগে শুরু হয়। ঋতু শুরু হবার বছর দুই আগে থেকে মেয়েদের স্তন স্ফিত হতে শুরু করে। তারপর যৌনাঙ্গ থেকে একটু আধটু জলীয় স্রাব শুরু হয়। এটি সাধারণতঃ ঘটে ঋতু শুরু হবার মাস ছয়েক আগে থেকে। ঋতু শুরু হবার পর অনেক সময়েই মেয়েদের দুর্ভাবনা হয় যে যা ঘটছে তা স্বাভাবিক কিনা। খুব সম্ভবতঃ যা ঘটছে - তা খুবই স্বাভাবিক। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে,

• রক্তস্রাব ৭ দিনের বেশি সময় ধরে হচ্ছে কিনা;

• রক্তস্রাবের পরিমান বেশি হচ্ছে কি না (দুয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্যাড পরিবর্তনের প্রয়োজন হচ্ছে কিনা);

• দুই ঋতুর মধ্যবর্তী কাল তিন মাসের বেশি হয়ে যাচ্ছে কিনা;

• ঋতুর সময়ে বা তার আগে অস্বাভাবিক যন্ত্রণা হচ্ছে কিনা;

• ঋতু নিয়মিত হতে হতে হঠাত্ অনিয়মিত হয়ে গেছে কিনা;

• দুই ঋতু মধ্যেও মাঝে মাঝে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে কিনা;


সাধারণভাবে ঋতু শুরু হবার প্রথম বছরে ঋতুর সময় ও ঋতুচক্র একটু অনিয়মিত হতে পারে। ধীরে ধীরে সেটা একটা নির্দিষ্ট ছন্দে চলতে থাকে। ঋতু শুরু হবার পর থেকে কিছুদিন কতদিন ধরে ঋতু চলছে বা কতদিন অন্তর হচ্ছে সেগুলো লিখে রাখা উচিত। ঋতু প্রথম সুরু হবার বছর ছয়েক বাদে ঋতু চক্রের সময়কাল সাধারণতঃ ছোট হয় এবং বেশ নিয়মিত হয়ে যায়। ঋতুর সময়ে ছোটখাটো যে ব্যথা হয়, সেটা আইবুপ্রোফিন বা ব্যথা কমাবার ওষুধ খেলে কমানো যায়। পেটে গরম সেঁক দিলেও আরাম পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে যতটা দুশ্চিন্তা-মুক্ত হয়ে নিজেকে ছেড়ে দেওয়া যায়, ততই সুবিধা। কিন্তু এসব সত্বেও যদি ঋতুর জন্য দৈনন্দিন জীবন যাপনে অসুবিধা হয়, তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন।

ঋতুর সময়ে হর্মোনের পরিবর্তন কিছু কিছু মেয়েকে প্রভাবিত করে - তারা একটুতেই উত্যক্ত বোধ করতে পারে বা অনেক সময়ে মন খারাপ করে। এই সময়ে নানা শারীরিক কাজে যুক্ত থাকলে বা নিয়মিত শরীর চর্চা করলে উপকার হয়। ঋতুর আগমণ অনেক মেয়ের বিরক্তির কারণ হয় ঠিকই, কারণ ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে অস্বোয়াস্তিকর। অন্যপক্ষে এটা মেয়েদের সুস্থতার একটা সূচক। এর থেকেই বোঝা যায়, তাদের শারীরিক অগ্রগতি ঠিক ভাবে হচ্ছে।


Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।