প্রথম পাতা

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বিবিধ প্রসঙ্গ

মার্চ ৩০, ২০১৬

 

(অ) সংরক্ষিত

ইন্দ্রনীল বক্সী


WE, THE PEOPLE OF INDIA, having solemnly resolved to constitute India into a SOVEREIGN SOCIALIST SECULAR DEMOCRATIC REPUBLIC and to secure to all its citizens:
JUSTICE, social, economic and political;
LIBERTY of thought, expression, belief, faith and worship;
EQUALITY of status and of opportunity;
and to promote among them all
FRATERNITY assuring the dignity of the individual and the unity and integrity of the Nation;
IN OUR CONSTITUENT ASSEMBLY this twenty-sixth day of November, 1949, DO HEREBY ADOPT, ENACT AND GIVE TO OURSELVES THIS CONSTITUTION.

…ব্যাস, এর পর কেটে গেছে অনেকগুলো বছর । ভারতের নদীগুলো দিয়ে বয়ে গেছে অনেক কিউসেক জল।

স্বাধীন ভারত পার করে এসছে অনেকগুলি ঐতিহাসিক বছর, ১৯৪৯ এর থেকে ২০১৫ অবধি ভারতের সংবিধান ১১৮ বার সংশোধিত-সংযোজিত হয়েছে। প্রাক কথনের অভিপ্রায়গুলি কি পূর্ন হয়েছে ? অধিকারগুলি কি রক্ষিত হয়েছে যথাযথ? যে অধিকার ও অবস্থান সংবিধান নিজেকে, জাতিকে দিয়েছিলো - তার সঠিক প্রয়োগ ও মূল্যায়ন হয়েছে তো? নাকি সমাজবিজ্ঞানের জটিল স্রোতে, রাজনৈতিক বাধ্য-বাধকতায় সংশোধিত-সংযোজিত হতে হতে তার মূল চেহারাই বদলে গেছে এতদিনে! ভারতীয় সংবিধানের চরিত্রের মূল মৌলিক আধারগুলির অন্যতম– সমাজতান্ত্রিক (SOCIAIST), ধর্মনিরপেক্ষ বা লোকায়ত (SECULAR), গণতান্ত্রিক (DEMOCRATIC)। এই বলিষ্ঠ অবস্থানগুলির মূল ও সাধারণ যে সংকল্পগুলি সেগুলি হলো – সংবিধানের দৃষ্টির কোনো তারতম্য ঘটবে না ধর্ম ,জাতি, বর্ণ, বিশ্বাস, ভাষা, লিঙ্গ ও সম্প্রদায়ের নিরিখে! লোকায়ত সংবিধান কখনো কোনো সম্প্রদায়কে বিশেষ করে উত্তোলন করবে না বা অবনমন ঘটাবে না। তার ধর্ম ও কার্যকারিতা হবে প্রতিটি নাগরিকের ক্ষেত্রেই সমান। সমাজতান্ত্রিক আচরণের প্রক্রিয়ায় সমাজে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে।  যথার্থ ধনবন্টনের মাধ্যমে থাকবে অর্থনৈতিক সাম্য, যা সমুচিত জীবনযাপনে সাহায্য করবে।

এতদূর পড়ে বেশ হতাশ হয়েছেন পাঠক, বুঝতেই পারছি। ভাবছেন এসব জানা কথাগুলি আবার কেন পড়ছি!  নাহ, এটি কোনো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্রের সংবিধান বিশেষজ্ঞতার প্রতিবেদন নয়। একজন সাধারণ নাগরিকের কিছু সংশয় ও প্রশ্ন। এবং প্রশ্নগুলি সংবিধান সম্পর্কিত ও মৌলিক নাগরিক অধিকারের সঙ্গে যুক্ত বৈকি! যেখানে মনে হচ্ছে তার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে – কারণ সংবিধান তার মূল প্রাথমিক সংকল্প থেকে অনেকটাই সরে এসেছে। সে বিশেষ বিশেষ জাতি-বর্ণ-সম্প্রদায়-লিঙ্গকে ‘সংরক্ষিত’ করছে ।

সংবিধানের মূল ধারা ও উপধারায় প্রোথিত রয়ে গেছে জাতি–বর্ণ-সম্প্রদায় বিভাজনের বীজ। ধারা ১৬ (৪), ধারা ২৪৩(ডি), ধারা ১, এরকম আরও অনেক সূত্রে। ধারা ৩৪১ এ যার সুত্রপাত হচ্ছে। সংবিধান স্ববিরোধী হয়ে পড়ছে, ঠিক যখন থেকে তাকে জাতি-সম্প্রদায়-লিঙ্গ-বর্ণভিত্তিক সংরক্ষন করতে হচ্ছে সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, শিক্ষাক্ষেত্রে, কর্মসংস্থানে এবং না জানি আরও কত কত ক্ষেত্রে!

‘সংরক্ষণ’ একটি বিজ্ঞান। বহু বর্ণ, বহু জাতি, বহু সম্প্রদায় অধ্যুষিত এই ভারতের এটি ইতিহাস, এটি বর্তমান। বর্ণাশ্রম বিভাজিত ভারতে এর শুরু কিন্ত বহু বহু বছর আগেই। খ্রীষ্টপূর্ব ২য় শতকে ‘মনুস্মৃতি’র ব্রাহ্মণদের ল’-বুকে সব আইনই ছিলো জাতি-বর্ণ ভিত্তিক। সেখানে দক্ষতা, নৈপুণ্য বিচার্য ছিলো না । জন্মসূত্র, ঐশ্বর্য, রাজনৈতিক ক্ষমতাই ছিলো মানদণ্ড! তার উপরেই নির্ভর করতো ধর্মীয় নেতৃত্ব লাভ, সামাজিক প্রতিষ্ঠা, শিক্ষালাভ – বলাই বাহুল্য যা সংরক্ষিত থাকতো শুধুমাত্র সমাজের উচ্চবর্ণ ও শ্রেনীর জন্যই।  এতদূর জেনে প্রতিবেদক অবাক! তার (এবং অনেকের) ধারণা ছিলো ‘সংরক্ষণ’ কথাটি বোধহর মাত্র ৬৬ বছর পূরানো, এবং এর উদ্ভাবক ডঃ বি আর আম্বেদকর! নাহ, তাহলে ‘সংরক্ষণ’ ছিলো, বর্তমান ব্যবস্থা যাকে বলে শুধু পরিশীলিত, পরিমার্জিত – রিভাইজড!

ডঃ আম্বেদকর তাঁর মেধাবী দূরদৃষ্টি দিয়ে বুঝেছিলেন সমাজ বিজ্ঞানের এই অমোঘ বাস্তবতাকে। বহু বর্ণ-দুঃস্থ ভারতে পিছিয়ে পড়া জনজাতিসমূহকে কেউ জায়গা ছেড়ে দেবে না। এতদিনের জাত-পাত, সম্প্রদায় বিভক্ত অনুশীলনে অভ্যস্থ তথাকথিত উচ্চবর্ণের, জাতের নাগরিকেরা জায়গা দেবে না, সে যতই সংবিধানে সমাজতন্ত্র, লোকায়ত গরিমা থাকুক না কেন। সংরক্ষণের মূল অর্থ তাঁর কাছে ছিলো মূলতঃ প্রতিনিধিত্বমূলক। সংরক্ষণের সুফল কোনো ব্যক্তি বিশেষকে নয়, তার জনজাতির প্রতিনিধি হিসেবেই দেওয়া হবে যাতে সে সংশ্লিষ্ট জনজাতিকে ভবিষ্যতে উত্তরণে সাহায্য করতে পারে। এবং এটি অবশ্যই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয় কখনই। তিনি চেয়েছিলেন এই সংরক্ষণ থাকুক আগামী ৪০ বছর এবং যেন তারপর সম্প্রসারিত না হয়। এসেম্বলি তার এই মত খন্ডন করে এবং ১০ বছরের জন্য সংরক্ষন বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নেয়! যা ৬৬ বছর পর্যন্ত বজায় রয়েছে এবং সম্প্রসারিত হয়েছে।

এই ‘প্রতিনিধিত্ব’মূলক সংরক্ষণে নিজ নিজ জাতি-গোষ্ঠি-বর্ণ-লিঙ্গের প্রতি সুবিচার হয়েছে কি? যাঁরা সংরক্ষণের প্রসাদলাভ করেছেন তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করে সঠিক ‘প্রতিনিধিত্ব’ করেছেন কি? নিজ জাতি-বর্ণ-লিঙ্গের উত্তরণে সদর্থক সামাজিক ভূমিকা পালন করেছেন কি? ইতিহাস এবং বর্তমান সোচ্চারে বলছে - ‘না’ ! আমরা কেউই কি করেছি? দু একজন মহৎপ্রাণ, ক্ষনজন্মা মানুষ এই সমাজ, এই বৃহৎ জনসমষ্টির পক্ষে শুধুই দু-একজন ব্যাতিক্রমী ছাড়া আর কিছু নন।

নিকট অতীত ও বর্তমানে ‘সংরক্ষণ’ কথাটির সঙ্গে কোনো ভাবেই আর উত্তরণের কাহিনী জড়িয়ে নেই, আছে সংসদীয়-দলীয় রাজনীতির ভোটব্যাঙ্কের সূক্ষ্ম হিসাব-নিকেশ। এখন দেখা যাক চিত্রটি কিরকম – SC-15%+ ST-7.5% + OBC-27% = 49.5% মোট! দাঁড়ান, গল্প আরও আছে! এর সঙ্গে যোগ হবে লিঙ্গ(স্ত্রী) বা মহিলাদের জন্য, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য, এবং এখন তৃতীয় লিঙ্গের জন্যও।  তাহলে ‘অ-সংরক্ষিত’রইলো কত শতাংশ?

শিক্ষাক্ষেত্রে চিত্র আরো ভয়ানক। SC- 13.0%, ST- 7.0%, বিমুক্তজাতি- 3.0%, নোমাডিক ট্রাইবস (NTI-1)- 2.5%, নোমাডিক ট্রাইবস (NTI-2)-3.5% , নোমাডিক ট্রাইবস (NTI-3)- 2.0% , OBC -19.0% = মোট 50%! জাতি-উপজাতি-বর্ণ ছাড়াও আছে NRI-5%, মহিলা-30%, NCC কোটা, রাজনৈতিকভাবে উপদ্রুতরা, উদবাস্তু, সামরিক- বাহিনির কর্মীর সন্তান, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর সন্তান। এর বাইরে যাঁরা, তারাই একমাত্র ‘অসংরক্ষিত’। ভেবে দেখুন চিত্রটা! এই 7-8 কি 10 শতাংশে শুধু থাকবে যোগ্যতার বিচার! একজন যদি ওপরের কোনো একটির মধ্যে না হয়, তবে তার জন্য রয়েছে এই যৎসামান্য সুযোগ, যেখানেও তাকে প্রতিযোগিতা করতে হবে 100% এর সঙ্গেই! এ কি রকম বিজ্ঞান? কিরকম উন্নয়নের কলকব্জা? সামাজিকভাবে উপরে তুলে আনা বা উচ্চবর্ণ-জাতির সমকক্ষ করে তোলাই যদি ‘সংরক্ষণ’-এর উদ্দেশ্য হয়, তাহলে তা প্রাইমারী স্কুলের ক্লাস ওয়ান থেকে শুরু করে একেবারে অবসর প্রাপ্তি অবধি কেন? এবং তা বংশপরম্পরায়! প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই সুযোগ পেয়ে যাবে ‘সামাজিক ভাবে পিছিয়ে’ এই শংসাপত্র দেখিয়ে! বা তফশীলি জাতিভুক্ত এই যুক্তিতেই! প্রকৃতিগত লিঙ্গের অজুহাতেই! যদি এমনও হয়- তারা তিন প্রজন্মের সরকারী চাকুরে, তাহলেও? এবং এটাই হয়ে থাকে, যারা সুযোগ পেয়েছেন- তাঁরাই নিয়ে চলেছেন। যাঁরা অন্ধকারে ছিলেন তাদের বিশেষ অগ্রগতি হয়নি ‘সংরক্ষণ’ নামক প্রহসনে। সমাজে প্রবণতা বেড়েছে অবৈধ উপায় এস সি /এস টি/ও বি সি তালিকাভুক্ত হওয়ার, এমনকি যথার্থ লিঙ্গপরিচিতি লুকিয়ে সুযোগ নেওয়ারও। এই পরিচিতি তাদের কাছে সুযোগের শীলমোহর। আর উলটো দিকে, সুযোগ কমতে কমতে একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে এই ‘সংরক্ষিত’ বৃত্তের বাইরের জনতা – সেও অনেকদিন হল।

মনে পড়েছে ‘মন্ডল কমিশন’-উত্তর সারা ভারত জুড়ে ছাত্রদের ক্ষোভ! আত্মাহুতি! কিন্তু এই ‘পাইয়ে দেওয়ার’ রাজনৈতিক শঠতা চলছে এখনও এতে দেশের সত্যিকারের অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রান্তে সুযোগ পৌঁছানোর আগেই ছিনিয়ে নিচ্ছেন শহুরে কয়েক প্রজন্মের সংরক্ষণের সুযোগপ্রাপ্তরা। এক এক সময়ে প্রতিবাদ জেগে উঠছে কোনো কোনো জাতি বা সম্প্রদায়ের মনে, কিন্তু তাঁদেরও যখন সংরক্ষণের অমৃতফল খাইয়ে দেওয়া হচ্ছে তাঁরাও চলে যাচ্ছেন এরই পক্ষে। যে উদ্দেশ্যে এই প্রথা শুরু হয়েছিলো, তা তার উদ্দেশ্যের ধারে কাছেও যেতে পারেনি, পারবেও না। কারণ উন্নয়নের উদ্দেশ্য আর স্বার্থকেন্দ্রিক উপঢৌকনের অভীষ্ট এক হতে পারেনা। একদা এই বিজ্ঞানটি বর্তমানে ভোটকেন্দ্রিক সংসদীয় ব্যাবস্থার শুধুমাত্র জনমোহিনী কৌশলে পরিণত হয়েছে। সত্যিকারের উন্নয়নের আঁচ সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে না দিয়ে, ‘সংরক্ষণ’ নামক ব্যাবস্থার বহর বারংবার বাড়িয়ে দিয়ে জনতাকে সম্মোহিত করাও যাচ্ছে, সমাজের বিভাজনকেও ধরে রাখা যাচ্ছে। সত্যিকারের ‘এম্পাওয়ারমেন্ট’ কি এভাবে সম্ভব? জাতি-বর্ণ-লিঙ্গ ভিত্তিক চিরকালীন শোষণ-নির্যাতন কি এতে বিলুপ্ত হবে? ‘সংরক্ষণ’-এর ৬৬ বছরের ইতিহাস কী বলছে? পরিসংখ্যান কী বলছে? সে চিত্র নিতান্তই হতাশা ব্যাঞ্জক। SC জনসংখ্যার প্রথ মশ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী অবধি স্কুলছুটের অনুপাত ৬৯%, দারিদ্র্য সীমার নিচে রয়েছে গ্রামীণ অঞ্চলে ৩৭%, শহুরে অঞ্চলে ৪০%! শিক্ষিতের হার ৫৪% মাত্র। এবং এঁদের বেশীরভাগই কৃষক বা কৃষি শ্রমিক। বলাই বাহুল্য, ST তালিকাভুক্ত জনসংখ্যার অবস্থা আরও শোচনীয়। স্কুলছুটের অনুপাত সেখানে প্রথম ও দশমশ্রেণীর মধ্যে ৭৯%, শিক্ষিতের হার ৪৭%, দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে গ্রামীণ অঞ্চলে ৪৭%, শহুরে অঞ্চলে ৩৩%। OBC-দের গল্পও তথৈবচ। এরকম অনুন্নয়ের পরিসখ্যান দিতে দিতে কালি ফুরিয়ে যাবে। তাহলে ৬৬ বছরের সযত্নে লালিত ‘সংরক্ষণ’-বটিকা যাদের জন্য নির্দিষ্ট- তাদের কী দিলো? 

একটু পরিসংখ্যানগত দিক দিয়ে বোঝার চেষ্টা করা যাক প্রথমত শিক্ষা বা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে – ভারতের জনগণনার ভিত্তিতে মোট জনসংখ্যার ৩৬% - ৩৯% অগ্রসর শ্রেণী (পড়ুন ‘অসংরক্ষিত’)। এটা সারা ভারতের গড় অনুপাত। এই অনুপাত বিভিন্ন রাজ্যে পৃথক পৃথক, কোথাও ৪৪% আবার কোথাও ৯২%। ভারতীয় জনসংখ্যার গড় ভিত্তিতেই একজন জন্মগতভাবে চিহ্নিত ‘অগ্রসর শ্রেণীর’ মানুষকে জনসংখ্যার ভিত্তিতে তার আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ধরে রাখার জন্য মুক্ত প্রতিযোগিতায় ৭২% - ৭৮% আসন নিশ্চিত করতেই হবে। ‘সংরক্ষিত’ অংশের কিন্তু এরকম কিছু করার প্রয়োজন নেই, কারণ তাদের প্রতিযোগিতা ১০০% এর সঙ্গে নয় কখনই, তাদের আসন সংরক্ষিত রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ক্ষেত্রে এই অনুপাত ৬৩%, তাদের আনুপাতিক হার ধরে রাখতে প্রয়োজন ১২৬% আসন! বুঝুন কেমন গোঁজামিলের অঙ্ক! আরও একটি তথ্য এখানে দেওয়া যাক, ভারতের মোট জনসংখ্যার ৩৬% -৩৯% (আনুমানিক) অগ্রসর শ্রেণীর, যাদের ৬৫% সরকারি সজ্ঞায় দারিদ্র্যসীমার নিচে, এবং তাদের ৩০% নিরক্ষর!

খুব সাধারণভাবেই এ প্রশ্ন উঠে আসছে - যাদের জন্য এবং যাদের বঞ্চিত করে এই ‘সংরক্ষণ’ নামক ব্যাবস্থা – তাদের কেউই এতে তেমনভাবে উপকৃত হচ্ছে কি? বরং একশ্রেণী চরম বঞ্চিত হচ্ছে যোগ্য সুযোগ থেকে, আর এক শ্রেণী উন্নয়নের সঠিক দিশা থেকে। মাঝখান থেকে কিছু ‘নেপো’য় দই হরণ করছে মাত্র, বংশপরম্পরায় ! তাহলে এই ব্যবস্থা কেন দিন দিন বহরে বেড়ে চলেছে? কার স্বার্থে?

এমন নয় যে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা-বিতর্ক হয়নি।  কিংবা দেশের কাণ্ডারীরা এই বাস্তবতা সম্পর্কে অবগত নন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কে বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে? এরকম একটি ভোট উপার্জনকারি-জনপ্রিয় ‘ব্যবস্থা’র মরীচিকা থেকে জনতাকে (এক্ষেত্রে ভোটার) বাইরে নিয়ে আসার বা পরিবর্তন করার ঝুঁকি কে নেবে! তাই অনুন্নয়নের বিবর্ণ দেওয়ালে বছরের পর বছর চলছে ‘সংরক্ষণ’-এর চুনকাম! কিন্তু এ নিয়ে এবার ভাবা দরকার, ‘সংরক্ষণ’-এর নতুন ব্যাখা দরকার, যদি নিতান্তই রাখতে হয় দেশের সামগ্রিক উৎকর্ষতার ক্ষতি মেনে নিয়েও, সামাজিক-অর্থনৈতিক কারণে – তবে তার পর্যালোচনা দরকার। পুনর্বিন্যাস দরকার। দরকার ‘সংরক্ষণ’ এর নতুন অর্থ প্রতিষ্ঠার।

নাহলে ধরে নেওয়া যাক প্রায় ২৫০০ বছরের ‘মনুস্মৃতি’-নির্দেশিত জাত-পাত-বর্ণ-লিঙ্গ ভিত্তিক প্রাচীন সংরক্ষণ ব্যবস্থার বালিঘড়িটি উলটে দেওয়া হয়েছে ৬৪ বছর ধরে, এবং তা চলবে আগামী শত-সহস্র বছর ধরে! নতুন করে গড়ে উঠবে বর্ণভিত্তিক, জাতিভিত্তিক, লিঙ্গভিত্তিক প্রতিশোধের ইতিহাস! যারা অসংরক্ষিত, রাষ্ট্রের দ্বারা প্রতারিত, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে পক্ষপাতের শিকার -তারা হাহুতাশ করতে করতে অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। মেধা, যোগ্যতা, কুশলতার সংজ্ঞা নতুন করে লেখা হবে। শুধুমাত্র জন্মসূত্রে ‘উচ্চশ্রেণী’ ‘উচ্চবংশীয়’ বা রাষ্ট্রের দাগিয়ে দেওয়া ‘প্রথম লিঙ্গ’-এর পরিচিতির কারণেই তারা হয়ে থাকবে ‘অ-সংরক্ষিত’ যার অন্য নাম বঞ্চনা, সে তারা যতই যোগ্য হোক, দরিদ্র হোক, দুঃস্থ হোক না কেন।

তথ্যসূত্রঃ WIKIPEDIA, NSSO, NFHS, planningcommission.gov.in, indiankanoon.org, Census of India, MHRD,etc.

 


লেখক পরিচিতি - ইন্দ্রনীল বক্সীর জন্ম ও বড় হওয়া দুর্গাপুরে, বর্তমান বসবাস বর্ধমানে। লেখালেখির সঙ্গে অনেকদিনের আত্মীয়তা। কবিতা বহুদিনের সংগী। ইদানীং গদ্যও লিখছেন।  বহু লিটিল ম্যাগাজিন, ই-পত্রিকা, আজকাল ও দেশ পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে। সৃষ্টিসুখ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত দুটি কবিতা সঙ্কলন - 'নজর মিনার' ও 'পিয়ানোঘুম'। 

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।