বিবিধ প্রসঙ্গ
ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
বইমেলা এবং কিছু মিথ
সৌরাংশু
সেই কোন কাক ডাকা ভোরে বই প্রকাশক এবং বেশ কিছু বইপ্রকাশক এবং বই বেচুবাবুরা মিলে মিশে গঠন করলেন গিল্ড। সেটা সেই ১৯৭৫! সুশীল মুখোপাধ্যায় ছিলেন প্রথম সভাপতি তার। আর তারপর মার্চস্য পঞ্চম দিবসে, ১৯৭৬-এ ৩৪টি প্রকাশক প্রথম বইমেলা শুরু করলেন অ্যাকাদেমির উল্টো দিকের খোলা ময়দানে।
সেই শুরু! তারপর কোলকাতার ফুসফুসে বসে ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ে চুমুক দিয়ে দিন দশেক বই নিয়ে হই চই! তার রূপ আমেজ পরিবেশ এবং সর্বোপরি ব্যবহার বরাবরই পাল্টেছে!
সেই ৯৭এর আগুনটা মনে আছে? তদানীন্তন সংস্কৃতি মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সহায়তায় গিল্ড ৩ দিনের মধ্যেই ফিনিক্সের মতো আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল।
বই তো বুকের পাঁজর! মনের আয়না! প্রাণের আরাম! সেই বইয়ের জন্য নব্বইয়ের দশকে কত যে চুল পাকিয়ে হেঁটে হেঁটে ঘুরেছি মাঠময়! তখন ট্যাঁকের জোর ছিল না কিন্তু ঠ্যাঙের জোর ছিল! ঘন্টার পর ঘন্টা আনন্দ, দেজ আর কত কি নামী অনামী স্টল! ছোট পত্রিকা ছোট বই! ছোট লেখক! আর কত কত নতুন ধরণের বই! মাইকেলের ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ থেকে অমরেন্দ্র চক্রবর্তীর ‘হিরু ডাকাত’ ‘শাদা ঘোড়া’। নব্বইয়ের দশকে একাধারে বেড়ে উঠছি নিজের মতো করে আর অপরদিকে বইয়ের জগত টানছে! বাহির ভিতর এক হয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে বইমেলাগুলোতে! গিল্ডের বইমেলা! তখন আর গিলোটিনই বা কি আর গিল্ডই বা কি! পশ্চিমবঙ্গ গ্রন্থ মেলা বলে একটা মেলা রাজ্য সরকার করত বটে, কিন্তু তাতে প্রাণের স্পন্দন ছিল না! বিশেষত কোলকাতার ঘুমন্ত ফুসফুস যেভাবে ওই কটা দিন জেগে উঠত তার জুড়ি মেলা ভার!
তারপর? তারপর আর কী? পেটের দায়ে শহর ছাড়া! মনের মধ্যে আর দেরাজে থেকে গেল শুধু পুড়ে যাওয়া বইমেলার আধপোড়া খালিল গিব্রান আর সমরেশ বসু! যমুনার জল বয়ে বয়ে ভাগীরথী দিয়ে সমুদ্রে মিশল, কিন্তু আমার আর কোলকাতা বইমেলা যাওয়া হল না!
২০১০-এর বইমেলার একটা দৃশ্য |
গিল্ডের বইমেলা গোকুলে বাড়ছে! বাড়ছে ফুসফুসে বিষ! হাইকোর্ট ঘোষণা করে দিল ময়দানে বইমেলা করা যাবে না! গিল্ড বলল করব না! পাবলিক সেন্টিমেন্ট! ছিঁচকাদুনি! বই বিক্রেতারা একত্রিত হয়ে বইমেলা করল! তাও সুপ্রিম কোর্টে পিল! ফুসফুস ভারাক্রান্ত! কিন্তু তাও আমরা সেখান থেকেই অক্সিজেন নিতে যাব!
স্টেলমেট! অনড়পন্থা! ছুঁচের ডগার মাটিও নয়! এর মাঝেই এগিয়ে এল সমাধান সেখানে! মিলনমেলা তো তৈরী! আরে সেই সেই ধাপার মাঠের কাছে সায়েন্স সিটির পাশে! কিন্তু যাবি কি করে মনা? কেন বাস আছে! ট্যাক্সি আছে! আর ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো! মেট্রো? তৈরী হয়েছে সে? না হলে কি হবে! দশ বছরে তো হয়ে যাবে! দূরদৃষ্টি থাকা দরকার হে খোকা! বইমেলা কি কালকেই শেষ নাকি?
সৃষ্টিসুখের স্টল |
তা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবার মতো করে ছিল দিল্লির বইমেলা! সেসব ছিলই, সঙ্গে এল বই! আরে! তাই নাকি? বই বেরোচ্ছে? ফিসফাস বই হয়ে বেরোচ্ছে? বাহ বাহ অভিনন্দন! কিন্তু বইমেলাটা উটকো টাইমে কেন কাকা? শীতের ছুটি গরমের ছুটি! সব গেল যাব কবে? কবে যাব বইমেলা? ২০১৩... ১৪... ১৫! ভাবলাম অনেক হয়েছে! নয় নয় করে দুটো বই হয়ে গেল! এবার তো দায়বদ্ধতা মেটাতে যাই! সৃষ্টিসুখের কাছে! পাঠকদের কাছে! সেই শুরু করে এবারও!
অনেক লড়াই করে ছুটির অনুমতি না পেয়েও এসে হাজির সৃষ্টিসুখের স্টলে! সরাসরি শিয়ালদা থেকেই! নিজের বই, বন্ধুর বই, অন্যের বই, নতুন বই, পুরনো বই আর সবার উপরে মীরের বই!
‘দাদা, এক পিস মীর আছে?’ ওয়র্ল্ড পিস! ‘দাদা মীরের আত্মজীবনী আছে?’ ওয়র্ল্ড পিস! ‘মীরাক্কেল’ ওয়র্ল্ড পিস! মাঝে গেল কপি ফুরিয়ে! রোজ শয়ে শয়ে লোক ফিরে যাচ্ছে! ‘মীরের বই নেই?!!! আন্টার্ক্টিকা থেকে এসেছি! টিম্বাক্টুতে গাড়ি পার্ক করা! তুতিকোরিণে বাস যায় না! হাওড়া স্টেশনে আলাস্কার ট্রেন নেই!’ কি হবে? প্রকাশক যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে অর্ডার দিয়েছে আর মুদ্রক রাত দিন আমেরিকা ইংল্যণ্ড করে ছাপছে!
এমন হল যে আমরা শিখে গেলাম কে মীরের বই খুঁজতে আসছে! তার মধ্যেই এক ব্যাক ফায়ার! মাটিতে বসে আছি! এক ভদ্রলোক এলেন! আমি জিজ্ঞাসা করলাম! “মীর?” “সে আবার কি? রাশিয়ান বই?” “না না আপনি দেখুন!” “আচ্ছা মীরের বই বললেন? সেটা কি অনুবাদ” “নাহ নাহ মীর আফসার আলির উপর বই বেরিয়েছে!” “সে কে?” “ওই যে মিরাক্কেল?” “অ”। নিষ্ক্রমণ! আমার ইগোর মহাপ্রস্থান!
এমনই কত কথা! কত নতুন পুরনো মুখ! নতুন চেনা পুরনো না চেনা! পেরিয়ে বইমেলা চলতেই থাকে! ভিড় বাড়ে কমে! বইমেলা চলতেই থাকে! বইপ্রকাশ! বহিঃপ্রকাশ! আদিখ্যেতা! আদর! ইমোশন! সেলফি! পাউট! পাউচ! জল! পান! জলপান! PUN! আর খাওয়া খাওয়া খাওয়া! আর ও হ্যাঁ আরও একদলের সোচ্চার উপস্থিতি আছে! টিভি চ্যানেল! যেন সকাল সন্ধ্যে মুণ্ডু চটকে লাভ হচ্ছে না! নেমে পড়েছেন বইমেলাকে হট্টমেলা বানাতে! বাহা! আহা! কেশর! কেশব! নন্দিতা! অঙ্কুশ! মিমি! মোমো! উইগ! উইশফুল থিঙ্কিং! গাঁকগাঁকিয়ে মাইক বাজিয়ে বুদ্ধিচর্চার বারোটা! কটা বাজে দাদা? অ্যাঁ? কটা বাজে? কে জানে আমি তো ভাবলাম বারোটা! ওহ আমি ভাবলাম বারোটা বেজেই গেছে! না না বারোটা বেজে গেছে! ওহো! ঠিক আছে! বারোটা বাজার বাকি নেই কিছুই তো! এহেহেহেহে!
শুদ্ধিকরণ বুদ্ধিকরণ পেরিয়ে লিটল ম্যাগাজিন! মাটির কাছাকাছি কাগজ! আহ! আজকাল লিটল ম্যাগে লেখা হয় নাকি? তারা পয়সা দেয় না! কপি দেয় না! ও হো! দেজ আনন্দ? ও সব তো বড়লোকের বড় বড় কথা! ছোট লেখকদের জন্য কিস্যু না! পেটোয়াদের স্বর্গরাজ্য! কারিগর, অভিযান, লালমাটি, পুনশ্চ? ঢুকতে পারে না দাদা! বৃত্তের বাইরে কাউকে তো চাওয়া হয় না!
পুরস্কার আর তিরস্কার? সবই তাঁবেদারদের জন্য তাহলে? খাবার স্টলগুলো? সেও তাদের জন্য! দাঁড়ান দাঁড়ান! সব খারাপ হয় নাকি কত্তা! নাকের ডগায় রাজ্যের বিরক্তি ঝুলিয়ে গোলাপ ফুলকে এপ্রিল ফুল বললেই তা হয়ে যাবে নাকি? ভরা ফেব্রুয়ারির বসন্তে আবার?
আচ্ছা এক কাজ করি বরং! যে অনুযোগ অভিযোগ বা পরামর্শগুলো আসছে সেগুলি আগে ধরি!
আশিস খাস্তগীর বলে এক ভদ্রলোক বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছেনঃ
১) মেলায় দর্শনী হোক! অন্ততঃ দশ টাকা! এতে অন্ততঃ উটকো লোক আসবে না!
২) জলের পাউচ হোক অন্তত দু টাকা। যত্র তত্র পাউচ ফেলা বন্ধ হোক।
৩) শুধু চায়ের জন্যই স্টল হোক। দাম নির্দিষ্ট থাকুক ৫-১০ টাকা।
৪) মুক্তমঞ্চে বিকট শব্দ সহ গান বন্ধ হোক। কবিতাপাঠ, গল্পপাঠ, আলোচনা, বিতর্ক চলুক। যত্র তত্র গান বন্ধ হোক। তার জন্য গানমেলা আছে!
৫) মিডিয়া স্টল পুরোপুরি বন্ধ হোক।
৬) যতটা সম্ভব বিষয় ও ভাষাভিত্তিক স্টল সাজানো হোক। এবার সে চেষ্টা ছিল। পুরনো দুষ্প্রাপ্য বইয়ের স্টল পরপর থাকুক।
৭) ১০০০, ৫০০০, ১০০০০ টাকার উর্ধে ক্রেতাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক পুরষ্কার বা লটারির ব্যবস্থা থাক।
৮) যেহেতু এই মেলা মুদ্রিত বইয়ের মেলা, তাই ই-বুকের স্টল আমরা চাই না!
৯) বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনার বিবর্তন বিষয়ক একটি স্টল চাই! সঙ্গে মুদ্রণ যন্ত্র!
১০) বাংলা সাময়িক পত্র, লিটল ম্যাগাজিন (২০০০ সাল পর্যন্ত)-এর আকর্ষণীয় প্রদর্শনী চাই।
এবার দেখি গিল্ড কি বলে?
গিল্ড বলছে মিডিয়া স্টলগুলি যে পরিমাণ অর্থ দেয়, প্রকাশকরা দেবে? মেলা চালাতে খরচ হয় না? আচ্ছা! টিকিট তো নেই! রোজগার কোত্থেকে হবে? খাবার খাবে না মানুষ বই কিনতে এসে? সে কি? আমরা খাই কত? তা মানুষ কি দোষ করল? আর প্রদর্শনী ফ্রদর্শনীর জন্য চিন্তাভাবনা কে করবে? মেলায় আসে তো সবাই আনন্দ করতে! ওরকম গুরুগম্ভীর আঁতেল মেলা হলে লোক আসবে নাকি?
খাবার খাবে না মানুষ বই কিনতে এসে? |
ব্যাস বলুন কি বলবেন? আসুন আমরা সবাই মিলে রাস্তা এবং জঙ্গল উভয়ই খোঁজার চেষ্টা করি!
মেলায় দর্শনী তো ছিল! কিন্তু যেই গিল্ড এনজিও স্ট্যাটাস পেল তখনই সব উঠিয়ে দিতে হল! আসলে গিল্ড কর্তারা সংখ্যা দিয়ে গুণমানের হিসাব করতে চাইছেন! সেটা ব্যক্তিগত আলাপচারিতাতেও উঠে এসেছে।
জলের পাউচ? দুটাকা দাম করলে কি মাঠে ফেলা কমবে? স্বচ্ছ ভারত নির্মল ভারত খিল্লি ভারত দুর্ভাগা ভারত! স্বচেতনতা না আসলে মাঠটা ধাপারই থেকে যায়! মিলনমেলা শুধু তো নামেই বেঁচে থাকে।
এক সিনিয়র সার্জেন্ট এসেছিলেন কোলকাতা পুলিশ থেকে! কথা বলতে বলতে বললেন ‘খাবার জন্যই তো বাঁচি দাদা! বই তো অনুষঙ্গ!’ খাবার দোকান সেদিনও ছিল আজও আছে! বইপ্রেমীদের আড্ডার ভিক্টোরিয়া কফি হাউসে কি শুধুই সিগারেট আর আড্ডার ধোঁয়া? চিকন চিকেন স্যান্ডউইচ নেই? শুকতলার মতো ঠাণ্ডা চিকেন কাটলেট নেই? তাহলে? আমি তো জানি যে তিনটে খাবার স্টল এই বইমেলা থেকেই উঠে এসেছে! ‘বেনফিশ’ (এখন বাসি চ্যাঙা মাছের চিউইং গাম খাওয়ায়), আরামবাগস চিকেন (মন্দের ভাল) এবং মাদার ডেয়ারি (মা আমার সর্বংসহা)! খাব দাব কলকলাব আর বই নিয়ে গুঁতোগুঁতি করব! এর জন্যই তো মেলা! মার্গ সঙ্গীত আর রক পপের তো কোন বিরোধ নেই! তবে হ্যাঁ! তেলা হাতে বই ধরবেন না যেন! অথবা চায়ের কাপ নিয়ে বই হাতে ঘড়ি দেখতে যাবেন না!
গান টান চলুক না! মিডিয়াও চলুক! তবে তা বইয়ের দোকানকে বা ক্রেতাকে অতিক্রম করে নয় কখনই! মেলায় লোক হোক! কিন্তু তার ভিড়ে যারা বইয়ের খোঁজে আসে তারা যেন তাড়া খেয়ে পালিয়ে না যায়! এটা দেখা দরকার! মিডিয়া স্টলগুলো একদিকে থাক না হয়! রেভেনিউ যখন আসল কথা! তখন তা ডিঙিয়ে না ঘাস খেয়ে ঘোড়ার সঙ্গে মিলে মিশে চিবোলেই তো হয়! বই মেলাই তো এটা! হই চই মই উড়ো খই গোবিন্দায় নমঃ তো নয়! তবে বইয়ের স্টলকে প্রায়োরিটি কিন্তু দিতেই হয়! বিশেষত যারা ছোট ব্যবসায়ী! গিল্ডের লক্ষ্য শুধুই থাকে বড় প্রকাশক আর টাকা! ছোট প্রকাশকরা নিজেরা যদি রাস্তা খুঁজে না বার করতে পারে তাহলে রাস্তাতেই তাদের বসে মাছি মারতে হয়!
ই-বুক তো ভবিষ্যৎ! তাকে ছেড়ে এগোই কি করে! তবে একটা কথা! ছোট ছোট থোকা থোকা ছানা পোনাদের উচ্চতা বাড়ার আগেই নাকের ডগায় চারচক্ষু লেগে যাচ্ছে কিন্তু এই সব গ্যাজেটের আলোগুলির জন্যই! সে সব একটু বাবা মায়েরা নজর করলেই চলে! গিল্ড তো শুধু হিসাব কষবে! কষের দাঁত উঠল কি না সে খবর আদার ব্যাপারী কি করবে!
আর প্রদর্শনী? বই নিয়ে সরস আলোচনা? হ্যাহ! সে সব করতে মনন দরকার হয় উদ্দেশ্য দরকার হয়! তেলা মাথায় তেল দিতে বা মসৃণ পিঠ চুলকোতে গেলে তো সেসব হয় না! আসলে কেমন জানি মনে হচ্ছে চাপটা অন্য জায়গায় পড়ে যাচ্ছে। বই ব্যবসা বা বই পড়ার দিকে গিল্ড না ভেবে ধীরে ধীরে এটাকে হরেকরকমবার দিকে নিয়ে চলে যাচ্ছে!
আচ্ছা একটা কথা বলুন তো? লোকে বই প্রকাশ করতে আসে কেন? টাকা রোজগার হলে তো শেয়ারে খাটালেই চলত! শুধু তো তা নয়! একটা সূক্ষ্ম সামাজিক বোধও কাজ করে বোধহয়! স্কুল বা হাসপাতালকে যারা ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স বাড়াবার পন্থা হিসাবে দেখেন তাদের সঙ্গে প্রকাশকদের ফারাক করাটা বোধহয় দরকার! কিন্তু! গাঁটের কড়ি খরচ করে বই করলাম! আর বিক্রি করতে গিয়ে দেখলাম লেখকের দায়িত্ব নেই! বিক্রির জায়গা নেই! মুখ ঢেকে গেছে তিমি মাছের বিজ্ঞাপনে! তাহলে এগোব কি করে? পাঠক ভাল জিনিস জানবে কি করে? ভাল লেখা পড়বেই বা কি করে? হাহুতাশ করেই হতাশ হব! একটা সুনীল নেই, বুদ্ধদেব নেই, সমরেশ নেই, বিভূতি নেই, শক্তি নেই, নেই প্রেমেন মিত্তির!
কিন্তু নতুনদের উঠে আসার রাস্তা কে করে দেবে? কেন রতনে রতন চেনে! নতুন প্রকাশক আর নতুন লেখক যদি সঙ্গত করে তাহলে আসর জমে যাবে! কিন্তু পাঠক শুনবে কি করে? তার রাস্তাও আছে! বইয়ের প্রচার সঠিক হওয়া দরকার! কিন্তু সেটা শুধু প্রকাশকের দায়িত্ব নয়! লেখককেও সেই রাস্তায় হাঁটতে হবে!
এখন তো সোশাল নেটওয়র্ক বা অন্তর্জালের যাদুকাঠি আছে হাতে! ব্যবহৃত হোক! তবে গালবাদ্য আর তালবাদ্যের মধ্যে সূক্ষ্ম ফারাকটা ধরে রাখতেই হয়! আমার বই কেনো আমার বই কেনো না করে আমার বই কেন কিনবে সেটাতে জোর দেওয়া! নিজের লেখার দোষগুণ বিচার করে আরও উন্নত করা! সর্বোপরি নিজের জ্ঞান বৃদ্ধি! যাতে উতকর্ষতা বৃদ্ধি হয়!
বই পড়তে চাইছে না লোক? কথাটা আংশিক ভুল! আসলে জনসংখ্যা এত বেড়ে গেছে, পাঠক সংখ্যা সেই তুলনায় বাড়ে নি! তবুও কিন্তু বই কিনছে লোকে! পড়ছে বা সাজিয়ে রাখছে! কিন্তু ব্যাগে ঝুলিয়ে বুকে করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে! এই জায়গাটাকেই কিন্তু আমাদের দেখতে হবে! দেখতে হবে! এই সংখ্যাটা যাতে কমে না যায়! যেন ধীরে ধীরে বাড়ে! লাফ দিয়ে বাড়তে গেলে ভিত নষ্ট হয়ে যায়!
জিজ্ঞাসা করলাম বই কি? লোকে বই পড়ে কেন? জ্ঞান আহরণ করা ছাড়াও বইয়ের কি কাজ থাকে? সাহিত্য কাকে বলে? তত্ত্বকথার মধ্যে না গিয়ে বলি কি, নিজের ভিতর থেকেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বার করুন! বইয়ের সাহচর্যে উতকর্ষতা বাড়ুক, প্রশস্ত হোক মন, জ্ঞান বৃদ্ধি হোক! সাহিত্য কথাটার অর্থই তো “জীবনের সহিত”। আমাদের ঘটমান চলমান বহমান জিন্দেগীতে বই নিয়ে আসুক তাজা হাওয়া! আর বইমেলা আকাশ ভর্তি অক্সিজেন!
বইমেলা মেলা বই
বইমেলা মেলা বই
বই কিনি বই পাই
বই ছাড়া গতি নাই
ডিসেম্বরের শেষে
কালীবাড়ি প্রাঙ্গণে
শীত যদি বেশী পড়ে
বই আঁচে গনগনে
রোগা বই মোটা বই
আধা বই গোটা বই
কচি বই কালো বই
পাতি বই ভালো বই
বই দিয়ে বই নিয়ে
বই স্রোতে ভেসে যাই।।
এই ফালতু পদ্যটা লিখেছিলাম গতবার দিল্লি বইমেলার জন্য! ডিসেম্বরটা জানুয়ারি আর কালীবাড়িটা মিলনমেলা করে দিলেই কিন্তু আবহটা একই থেকে থাকে! নতুন বইয়ের গন্ধ নিয়ে বেঁচে থাকুক বইমেলা! আবার দেখা হবে! কেমন?
লেখক পরিচিতি : লেখক ভারত সরকারের আধিকারিক। অধুনা দিল্লিবাসী এবং নিয়মিত বাংলা ব্লগার। ফিসফাস-১ ও ফিসফাস-২ নামে লেখকের দুটি বই সৃষ্টিসুখ প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।