দীপক সেনগুপ্ত
E-BOOK version by GLOBAL BOOKS, USA
১। শ্রীশ্রীভৃগুসংহিতা - মহর্ষি ভৃগু রচিত। এই গ্রন্থ পরাশরের পূর্বেই রচিত বলে মনে করা হয়। এতে বর্ণিত এই শাস্ত্রের নিয়মাবলী ভারতের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে মূলতঃ বণিকদের মাধ্যমে।
২। বৃহৎ পারাশরি হোরাশাস্ত্র - গ্রন্থটির রচয়িতা মহর্ষি পরাশর। এতে বর্ণিত নিয়ম নীতি গুলিই অধিকাংশ জ্যোতিষী অনুসরণ করেন। পরাশরের আবির্ভাবের কাল সম্বন্ধে য্থেষ্ট মতভেদ আছে। পরাশরকে বলা হয় মহাভারত রচয়িতা ব্যাসদেবের পিতা। পরাশর রচিত পরাশর সংহিতাই বৃহৎ পারাশরি হোরাশাস্ত্র নামে প্রচলিত। অনেকের মতে এর বহু শ্লোক লুপ্ত। এখন যে গ্রন্থটি পাওয়া যায় তা মূলগ্রন্থের পরিবর্তিত সংস্করণ।
৩। লঘু পারাশরি - লেখকের পরিচয় ও রচনাকাল অজ্ঞাত। মনে করা হয় জ্যোতিষ বিষয়ে বিদগ্ধ কোনো ব্যক্তি "বৃহৎ পারাশরি" গ্রন্থ অবলম্বনে মূল ৪২ টি শ্লোক আহরণ করে এই গ্রন্থটি রচনা করেন। ৪২ টি শ্লোকের সংযোজনের জন্য এটিকে কেরলবিয়াল্লিশও বলা হয়। অনেকে মনে করেন লেখক কেরলবাসী। কিন্তু এটা সর্বসম্মত নয়। এই গ্রন্থটির অন্য নাম "উড়ুদায়প্রদীপম"।
৪। বৃহৎ জাতক - বরাহমিহিরাচার্যের রচনা। পিতা আদিত্যদশা ও মাতা সত্যবতীর ( অন্য নাম ইন্দুমতী ) সন্তান বরাহমিহির খৃষ্টপূর্ব প্রথম শতকে মহারাজা বিক্রমাদিত্যর সভায় নবরত্নের অন্যতম ছিলেন। বৃহৎ জাতক ছাড়াও বরাহমিহির বৃহৎসংহিতা, লঘুজাতক, পঞ্চসিদ্ধান্তিকা ইত্যাদি গ্রন্থ রচনা করেন। বৃহৎ জাতক ৪০০-র বেশী অনুচ্ছেদ নিয়ে রচিত। ভট্টপাল এই গ্রন্থের ৮৫০০-রও বেশী শ্লোক সম্বলিত টিকা রচনা করেন। অনেকের মতে বরাহমিহির এক ব্যক্তি নন। এরা দু'জন জ্যোতিষী। বরাহ ও তার পুত্র মিহির। মিহিরের স্ত্রীর নাম ছিল খনা - যার কিছু প্রবচন এখনও অনেক লোকের মুখে মুখে ফেরে।
৫। সত্যজাতকম - ঋষি সত্যাচার্যের রচনা। ধ্রুবনাড়ী ও সত্যসংহিতা নাড়ী নামক জ্যোতিষগ্রন্থের মূল নীতিগুলি এই সত্যজাতকমে আলোচিত হয়েছে। এক মতে আছে, ধ্রুব জৈমিনীকে মূল বিষয় সম্বন্ধে অবহিত করেন। সে যুগের রীতি অনুযায়ী জৈমিনী গর্গকে, গর্গ ব্যাসদেবকে এবং ব্যাসদেব সত্যাচার্যকে এই জ্ঞান দান করেন।
৬। উত্তরকালামৃত - এই বিখ্যাত গ্রন্থটির রচয়িতা কালিদাস। কিন্তু ইনি কুমারসম্ভব বা রঘুবংশের কালিদাস নন। প্রথমে এই গ্রন্থ্টি তেলেগু ভাষায় ছাপা হয় এবং পরে অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়। এর রচনাকাল আনুমানিক ১৬-শ বা ১৭-শ খৃষ্টাব্দ।
৭। ভাবার্থ রত্নাকর - ভাষ্যম জগন্নাথাচার্যের পুত্র রামানুজাচার্য প্রণীত ভাবার্থ রত্নাকর আকারে ছোট হলেও এটি একটি অতি প্রয়োজনীয় গ্রন্থ। অনেকের মতে লঘু পারাশরী ( উড়ুদায়প্রদীপম ) ও ভাবার্থ রত্নাকর বর্ণিত পদ্ধতি ঠিকমত আয়ত্ত্ব হলে যে কোন কোষ্ঠিতে বহু ফল মিলিয়ে দেওয়া সম্ভব।
এ ছাড়াও কল্যান বর্মা রচিত সারাবলী , বরাহমিহিরের পুত্র পৃথ্যুয়াসাস রচিত হোরাসারা, বৈদ্যনাথ দীক্ষিত প্রণীত জাতক পারিজাত, ভেঙ্কটেশ দৈবজ্ঞ রচিত সর্ব্বার্থ চিন্তামণি, নারায়ণ ভট্ট প্রণীত চমৎকার চিন্তামনি প্রভৃতি গ্রন্থ গুলি উল্লেখ্য। অনেক নাড়ীগ্রন্থও এখন বিভিন্ন ভাষায় লভ্য।
এই গ্রন্থগুলির ইংরাজী ও হিন্দি অনুবাদ সহজলভ্য। জিজ্ঞাসু পাঠকেরা "অবসরে" ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত এই লেখার বাইরেও এই বই পড়ে তাদের কৌতূহল মেটাতে পারেন। তবে কোনো বই থেকেই জ্যোতিষশাস্ত্রের মূল বিষয়গুলি সম্বন্ধে প্রাথমিকভাবে জ্ঞান লাভ করা প্রথম পাঠকের পক্ষে একটু অসুবিধাজনক হতে পারে। এই ধরণের পাঠককে সাহায্য করবার জন্যই অবসরের এই প্রয়াস। সম্পূর্ণ রচনার শেষে পাঠকদের সাহায্যার্থে আরও কিছু বইয়ের নাম দেওয়া হবে।
মনে রাখা প্রয়োজন যে, বহুপূর্বে জ্যোতিষশাস্ত্র আজকের মত গ্রন্থাকারে সাধারণের সহজলভ্য ছিল না। এর শ্লোকগুলি শ্রুতি ও স্মৃতির সাহায্যে একটি অংশের মধ্যে প্রচলিত ছিল। অপব্যবহারের ভয়ে বা অন্য কোনও কারণে এই শাস্ত্রের গোপনীয়তা রক্ষা করা হতো। এর বহু শ্লোক কালক্রমে হারিয়ে যায়। বহুসূত্রের ব্যাখ্যাও স্পষ্ট নয়। কিছু প্রশ্নের কোনো ব্যাখ্যাও নেই। হয় ত দেশের কোনও অংশে কিছু লোকের কাছে এর অনেক সূত্র ও ব্যাখ্যা গোপনে সংরক্ষিত আছে। সে কারণেই অধুনা লভ্য এই শাস্ত্র অনেকাংশেই অসম্পূর্ণ।
পরবর্তী পর্যায়ে কিছু সাধারণ নিয়ম খুব বেশী ব্যাখ্যা বা জটিলতার মধ্যে না গিয়ে পরিবেশিত হবে। এ গুলি না জানলে প্রথম শিক্ষার্থীর পক্ষে এই শাস্ত্রের অন্দরমহলে প্রবেশ দুঃসাধ্য।
জ্যোতিষশাস্ত্র মতে ভ-চক্র (zodiac) হচ্ছে আকাশে বিস্তৃত একটি কাল্পনিক আলোকময় বৃত্ত যার মধ্যে কয়েকটি নক্ষত্রপুঞ্জ বা রাশি (constellations) অব্স্থান করছে। আমরা জানি যে পৃথিবী প্রকৃতপক্ষে সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে কিন্তু পৃথিবী থেকে মনে হয় সূর্যই পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। সূর্যের গতিপথ যে বৃত্তপথ তৈরী করছে তাকে বলা হয় ইক্লিপ্টিক (ecliptic) বা ক্রান্তিবৃত্ত। মনে করা যেতে পারে এই ইক্লিপ্টিক-এর উপর ১২ টি রাশি পরপর আছে এবং এই ইক্লিপ্টিক বৃত্তটি ২৪ ঘণ্টায় একবার অর্থাৎ ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে আসছে। এই ইক্লিপ্টিক-টিকে সমান ১২ ভাগে ভাগ করে এক একটি ভাগে এক একটি রাশি কল্পনা করা হয়। প্রত্যেক রাশিকে একটা কাল্পনিক চিত্ররূপ দেওয়া হয়েছে। তা হ'লে দাঁড়াল যে, প্রতি রাশির অব্স্থান ৩০ ডিগ্রি করে এবং যেহেতু ১২ টি রাশি প্রদক্ষিণ করতে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগছে, এক একটি রাশি অতিক্রম করার সময় ২ ঘণ্টা। ধরা যাক কোন এক জায়গায় সূর্যোদয়ের সময় পূর্বাকাশে একটি রাশির উদয় হলো, সেটা ২ ঘণ্টা পর্যন্ত অবস্থান করলো এবং তারপরে পরের রাশিটি উঠলো। এইভাবে পর্যায়ক্রমে ১২ টি রাশি ঘুরে গিয়ে ২৪ ঘণ্টা পরে সেই স্থানে পূর্বাকাশে আবার প্রথম রাশিটি ফিরে এলো।
কোনো ব্যক্তির জন্মের সময়ে যে রাশিটি পূর্বগগনে উদয় হয়, সেটাই হলো তার ( জাতক বা জাতিকার ) লগ্ন। প্রতি বছর একই স্থানে একই সময়ে লগ্ন ঠিক একই ডিগ্রিতে হবে না। তবে তফাৎ খুব সামান্যই। বিশদভাবে এর কারণ খুঁজবার এখনই কোনো প্রয়োজন নেই।
বৈশাখ মাসে ( অর্থাৎ এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে মে-র মাঝামাঝি পর্যন্ত ) রবি মেষ রাশিতে অবস্থান করে; অতএব এই মাসে যদি কোনো ব্যক্তির সূর্যোদয়ের সময় জন্ম হয়, তবে তার লগ্ন হবে মেষ। ঐ একই স্থানে যদি সূর্যোদয়ের ২ ঘণ্টা পরে কারো জন্ম হয় তবে তার লগ্ন হবে মেষের পরবর্তী রাশি অর্থাৎ বৃষ। এই ভাবে দু-ঘণ্টা পরপর লগ্ন পরিবর্তন হতে থাকবে। শ্রাবণ মাসে ( জুলাইের মাঝামাঝি থেকে অগাষ্টের মাঝামাঝি ) রবি থাকে কর্কট রাশিতে; সেইজন্যে ঐ মাসে যদি সূর্যোদয়ের সময় কারো জন্ম হয়, তবে তার লগ্ন হবে কর্কট। দু-ঘণ্টা পরে জন্ম হলে, লগ্ন হবে তার পরের রাশি অর্থাৎ সিংহ। মাস ও জন্মের সময় থেকে, এইভাবে মোটামুটি লগ্ন বের করা যায়।
জন্মের সময় রাশিচক্রের যে রাশিতে চন্দ্র অব্স্থান করে, সেটাই হল জাতকের রাশি। অর্থাৎ জন্মের সময়ে কোনও ব্যক্তির রাশিচক্রে চন্দ্র যদি তুলা রাশিতে অবস্থান করে, তবে তার রাশি হবে তুলা।
লগ্ন ও রাশি কাকে বলে সেটা বোঝা গেল। জন্ম সময় জানা থাকলে খুব সহজে মুখে মুখে কি করে কোন ব্যক্তির লগ্ন মোটামুটিভাবে বের করা যায় সেটাও জানা গেল; তবে সঠিকভাবে লগ্ন নির্ণয়ের পদ্ধতি পরে ব্যাখ্যা করা হবে।
রাশি, তার অধিপতি ও বৈশিষ্ট্য
আগেই বলা হয়েছে যে ১২ টি রাশি ২৪ ঘণ্টায় ৩৬০ ডিগ্রি
ঘুরে আসছে; অর্থাৎ একটি রাশি সরে গিয়ে পরের রশিটি উদয় হতে সময় লাগে ২ ঘণ্টা। এই
রাশিগুলি মেষ থেকে শুরু হয় এবং এক একটি রাশির ব্যাপ্তি ৩০ ডিগ্রি করে। সাধারণতঃ
পূর্ব ভারতে যে পদ্ধতি অনুসরণ করে এই রাশিগুলিকে সাজানো হয় তা ১ নং চিত্রে দেখানো
হলো। মেষ থেকে শুরু করে বামাবর্তে (anticlockwise) পরপর এগিয়ে যেতে হবে। রাশিগুলি
হলো : - মেষ (Aries); বৃষ (Taurus); মিথুন (Gemini); কর্কট (Cancer); সিংহ (Leo);
কন্যা (Virgo); তুলা (Libra); বৃশ্চিক (Scorpio); ধনু (Sagittarius); মকর (Capricorn);
কুম্ভ (Aquarius) ও মীন (Pisces)।
এই রাশিগুলির প্রত্যেকটির একটি করে অধিপতি গ্রহ (lord) আছে। মেষ ও বৃশ্চিকের অধিপতি
মঙ্গল; বৃষ ও তুলার অধিপতি শুক্র; মিথুন ও কন্যার অধিপতি বুধ; কর্কট ও সিংহের অধিপতি
যথাক্রমে চন্দ্র ও রবি; ধনু ও মীনের অধিপতি বৃহস্পতি এবং মকর ও কুম্ভের অধিপতি
শনি। অতএব দেখা যাচ্ছে, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনি - এদের প্রত্যেকটির
দু'টি রাশির উপর আধিপত্য রয়েছে কিন্তু চন্দ্র ও রবি কেবল একটি করে রাশিরই অধিপতি।
৩(১) নং চিত্রে বৃত্তের মধ্যে মেষ থেকে শুরু করে পরপর রাশির সংখ্যা এবং বন্ধণীর মধ্যে রাশিটির অধিপতির নাম লেখা আছে।
রাহু ও কেতুকে যেহেতু গ্রহ হিসাবে গণ্য করা হয় না, সেজন্য তারা কোনো রাশির অধিপতি নয়। তবে তাদের বলাবল নির্ণয়ের জন্য কয়েকটি রাশিকে তাদের স্বক্ষেত্র, মূলত্রিকোণ ও তুঙ্গস্থান হিসাবে ধরা হয়। এটা ৭ম অনুচ্ছেদে আলোচিত হবে।
প্রকৃতি ও গুণ অনুযায়ী রাশিগুলিকে অগ্নি, পৃথ্বী, বায়ু,
জল এই চারভাগে ভাগ করা হয়। আবার চর, স্থির ও দ্যাত্মক এই তিন ভাগেও ভাগ করা হয়।
মেষ থেকে শুরু করে রাশিগুলিকে অগ্নি, পৃথ্বী, বায়ু, জল অথবা চর, স্থির, দ্যাত্মক
হিসাবে পর পর ভাগ করে যেতে হবে। অর্থাৎ মেষ, সিংহ, ধনু হ'ল অগ্নি রাশি ( fiery
signs ) ; বৃষ, কন্যা, মকর পৃথ্বি রাশি ( earthly signs ); মিথুন, তুলা, কুম্ভ
বায়ু রাশি (airy signs) এবং কর্কট, বৃশ্চিক ও মীন জল রাশি ( watery signs )। অন্য
রকম বিভাগে, মেষ, কর্কট, তুলা, মকর চর রাশি ( movable signs ); বৃষ, সিংহ, বৃশ্চিক,
কুম্ভ স্থির রাশি ( fixed signs ) এবং মিথুন, কন্যা, ধনু ও মীন দ্যাত্মক রাশি (
common signs )। ফলাফল বিচারে রাশিগুলির এই বৈশিষ্ট্যও অনেক সময় কাজে লাগে। রাশিগুলির
অন্য একটি শ্রেণীবিভাগ হ'ল পুরুষরাশি ( masculine signs ) ও স্ত্রীরাশি ( feminine
signs )। বিজোড় সংখ্যার যে রাশিগুলি অর্থাৎ মেষ, মিথুন, সিংহ, তুলা, ধনু, কুম্ভ
এই ছয়টি পুরুষরাশি এবং জোড়সংখ্যার বাকি ছয়টি - বৃষ, কর্কট, কন্যা, বৃশ্চিক, মকর
ও মীন স্ত্রীরাশি।
এক নজরে মনে রাখবার জন্য উপরে বর্ণিত বৈশিষ্ট্য গুলিকে এ ভাবেও সাজানো যেতে পরে -
অগ্নিরাশি - মেষ, সিংহ, ধনু।
পৃথ্বীরাশি - বৃষ, কন্যা, মকর।
বায়ুরাশি - মিথুন, তুলা, কুম্ভ।
জলরাশি - কর্কট, বৃশ্চিক, মীন।
চররাশি - মেষ, কর্কট, তুলা, মকর।
স্থিররাশি - বৃষ, সিংহ, বৃশ্চিক, কুম্ভ।
দ্যাত্মকরাশি - মিথুন, কন্যা, ধনু, মীন।
পুরুষরাশি - মেষ, মিথুন, সিংহ, তুলা, ধনু, কুম্ভ।
স্ত্রীরাশি - বৃষ, কর্কট, কন্যা, বৃশ্চিক, মকর, মীন।
প্রতিটি লগ্নের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে জ্যোতিষ
শাস্ত্রের বইতে অনেক বিস্তৃত ভাবে লেখা আছে। এগুলি নিতান্তই সাধারণ গুণাগুণ এবং
এগুলি যে সবার ক্ষেত্রে নির্ভুল ভাবে মিলবে এমন নয়। গ্রহের বল ও অবস্থান অনুযায়ী
বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হতে পারে। তবে এগুলি কিছুটা না বললে লগ্নের প্রকৃতি বর্ণনা
অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সেজন্য সংক্ষেপে এদের সম্বন্ধে কিছুটা বলা হল।
মেষ - এরা স্বাধীনচেতা, জেদী, হঠকারী ও সাহসী হয়। এদের কর্মক্ষমতা খুব বেশী। এদের
একটু তোষামোদ করলে এরা অনেক বেশী উদ্বুদ্ধ হয়। এরা বৈজ্ঞানিক আলোচনা ভালোবাসে এবং
একটু তর্কপ্রিয় হয়। এরা অনেক বাধা বিপত্তি সত্বেও এগিয়ে যেতে পারে। এরা শরীরে আঘাত
বা মস্তিষ্ক সংক্রান্ত অসুখে ভুগতে পারে। হঠাৎ কোনো কিছুতে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রবণতা
থাকতে পারে।
বৃষ - এই লগ্নে জাত স্ত্রীলোকেরা সুশ্রী হতে পারে। এই লগ্নের জাতক জাতিকার অতিরিক্ত
ইন্দ্রিয়পরায়ণ হওয়া সম্ভব। কল্পনা প্র্বণতা বা প্রভুত্ব করার ইচ্ছা বেশী মাত্রায়
থাকতে পারে। স্মৃতিশক্তি ভাল থাকবে। তামসিক ভাব থাকতে পারে এবং প্ররোচিত হলে অতিমাত্রায়
ক্রুদ্ধ হয়ে উঠতে পারে।
মিথুন - এদের মধ্যে একটু দ্বৈত ভাব থাকবে এবং কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধায় ভুগতে
পারে। এর জাতকেরা চঞ্চলমতি ও অস্থিরচিত্ত হতে পারে। স্নায়ুর অসুখে এদের আক্রান্ত
হবার প্রবণতা থাকে। এদের বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে মেলামেশায় সংযত হলে ভাল হয়।
কর্কট - সৌন্দর্যপ্রিয়, আত্মবিশ্বাসী, সদালাপী, আবেগপ্রবণ, দীর্ঘদেহী। এরা অত্যন্ত
স্পর্শকাতর হতে পারে এবং বিয়ের ব্যাপারে হতাশায় ভুগতে পারে। এদের চট করে ঠাণ্ডা
লেগে যেতে পারে এবং কফের প্রবণতা থাকে।
সিংহ - এরা গাম্ভীর্যপ্রিয় এবং এদের একটু অহমিকার ভাব থাকবে। এরা আত্মবিশ্বাসী
হয় এবং অনায়াসেই অপরের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করতে পারে। এরা অধ্যবসায়ী ও উদ্যোগী হতে
পারে এবং রবি দুর্বল না হলে এরা অসাধারণ জীবনী শক্তির অধিকারী হয়। এই লগ্নের জাতিকারা
অনেক সময়েই অত্যধিক স্বাধীনচেতা হওয়ায় বিবাহিত জীবন খুব সুখের হয় না।
কন্যা - সাহিত্য, শিল্প ও সঙ্গীতপ্রিয়। লেখালেখির অভ্যাস থাকতে পারে। মানসিকতার
দ্রুত পরিবর্তন সম্ভব। আরাম প্রিয় ও ছেলেমানুষী স্বভাব হতে পারে। সাধারণতঃ স্ত্রী
বা স্বামীর ব্যাপারে সুখী হয়।
তুলা - দূরদৃষ্টিসম্পন্ন; মানুষের সঙ্গে ব্যবহারে সমভাব। জন সাধারণের উপর প্রভাব
থাকতে পারে। খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে বাস্তবতা হারিয়ে যেতে পারে। বিবাহিত
জীবন খুব সুখের নাও হতে পারে।
বৃশ্চিক - একটুতেই রেগে যেতে পারে। কর্কশ ব্যবহার। সবাইকে নিজের মতে টেনে আনার
চেষ্টা। জেদী; চঞ্চলতা। গোপনীয়তা। এরা একটু প্রভুত্ব প্রিয় হতে পারে এবং ব্য্বহারের
জন্য অনেক সময়েই অন্যের কাছে অপ্রিয় হয়।
ধনু - আদর্শপ্রিয়তা। রক্ষণশীলতা। এই লগ্নের জাতকেরা অনেক সময়েই জীবনে সফলতা লাভ
করে। এদের মধ্যে আধ্যাত্মিক ভাব থাকে এবং ঈশ্বরে বিশ্বাসী হয়। এদের অনেকেই ভুল
বুঝতে পারে কারণ এদের কথা বলার ধরণ অনেকের পছন্দ নয়।
মকর - পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতা থাকে। এদের জীবন ঘটনা বহুল ও দুঃখ্পূর্ণ
হয়। এরা উচ্চাভিলাষী হয় এবং বাধা বিপত্তি অতিক্রম করতে ভালবাসে। এদের মধ্যে নিয়মানুবর্তীতা
ও শৃঙ্খলাবোধ থাকবে। এদের স্ত্রী বা স্বামী ভাগ্য সাধারণ ভাবে ভাল। লোকের বিপদে
এরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।
কুম্ভ - দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গী, ধীর স্থির ও একাগ্রতা এই লগ্নের সাধারণ বৈশিষ্ট্য।
এই লগ্নের জাতক একটু একাকীত্ব পছন্দ করতে পারে। এরা মানুষের চরিত্র খুব ভাল বুঝতে
পারে এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হয়।
মীন - এই লগ্নের জাতকেরা সাধারণ্তঃ একটু রক্ষণশীল হয়। ঈশ্বরে বিশ্বাস থাকবে। আপাত
উচ্ছ্বাসের মধ্যেও গাম্ভীর্য থাকবে। এদের একটু স্পর্শকাতর হওয়া সম্ভব। পায়ের অসুখে
ভুগতে হতে পারে। স্বামী বা স্ত্রীর চর্মরোগ বা স্নায়ুর অসুখ হতে পারে।
মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে যে এই বৈশিষ্ট্যগুলি নিতান্তই সাধারণ। এগুলি মিলতেও পারে নাও মিলতে পারে। কারণ কোনো জাতকের চেহারা বা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য শুধু লগ্ন কোন রাশিতে তার উপর নির্ভর করে না। বিভিন্ন গ্রহের বল ও অবস্থানের উপর সেটা অনেকাংশেই নির্ভরশীল।
উদাহরণ ১।
জন্ম ১৭ ই ডিসেম্বর ১৯৭০, দুপুর ১২-২৫ মিঃ। জন্মস্থানের অক্ষাংশ (latitude) ২৬
ডিঃ ১০ মিঃ উত্তর এবং দ্রাঘিমাংশ (longitude) ৮৭ ডিঃ ২ মিঃ পূর্ব।
এখানে জন্মস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রঘিমাংশ দেওয়া আছে। যদি জন্মস্থানের নাম জানা থাকে ( যেমন কোলকাতা, দিল্লী ইত্যাদি ), তা হলে সেই সব স্থানের অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ বইতেই পাওয়া যাবে। ১৯৭০ খৃষ্টাব্দে ভারতের সর্বত্রই ইণ্ডিয়ান ষ্ট্যাণ্ডার্ড টাইম (I.S.T.) চালু ছিল, ভারতের কোন সময়ে কি টাইম চালু ছিল তা ঐ বইতেই উল্লেখ করা আছে। প্রথমে জাতকের যে সময়ে জন্ম তার স্থানীয় সময় বের করতে হবে। ভারতের যে দ্রাঘিমাংশ থেকে ষ্ট্যাণ্ডার্ড টাইম গণনা হয় সেটা ৮২ ডিঃ ৩০ মিঃ পূর্ব; এ ক্ষেত্রে জন্মস্থানটি (৮৭ ডিঃ ২ মিঃ - ৮২ ডিঃ ৩০ মিঃ ) বা ৪ ডিঃ ৩২ মিঃ পূর্বে অবস্থিত। এখন এটা জানা আছে যে ১ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশের জন্য সময়ের তফাৎ হয় ৪ মিনিট। অতএব ৪ ডিঃ ৩২ মিনিটের জন্য সময়ের তফাৎ হবে ১৮ মিঃ ৮ সেঃ। যেহেতু জন্মের স্থানটি আরও পূর্বদিকে, সেই জন্য স্থানীয় সময় হবে
দুপুর ১২ টা ২৫ মিঃ + ১৮ মিঃ ৮ সেঃ = দুপুর ১২ টা ৪৩ মিঃ ৮ সেঃ
মনে রাখতে হবে এই সময়টা দুপুর ১২ টার ৪৩ মিঃ ৮ সেঃ পরে। এখন সারণী (tables of ascendants) অনুযায়ী ১৭ ই ডিসেম্বরের দুপুর ১২ টার সময় নাক্ষত্রকাল (sidereal time) বা সংক্ষেপে (S.T) ১৭ ঘন্টা ৪১ মিঃ ৪৩ সেঃ । এই সময় দেওয়া আছে ১৯০০ খৃষ্টাব্দের দুপুর ১২ টার জন্য; অতএব ১৯৭০ সালের জন্য সংশোধন (correction) দরকার। সেটা দেওয়া আছে ১১ সেকেণ্ড। আবার দুপুর ১২ টা থেকে সময়ের ব্যবধান ৪৩ মিঃ ৮ সেকেণ্ডের জন্যও সংশোধন দরকার। ১ ঘণ্টা ব্যবধানের জন্য সময়ের সংশোধন দেওয়া আছে ১০ সেকেণ্ড; এই অনুযায়ী ৪৩ মিঃ ৮ সেকেণ্ডের জন্য সংশোধন হবে ৭ সেঃ। অতএব দাঁড়াল :
১৭ ই ডিসেম্বরের S.T. = ১৭ ঘঃ ৪১ মিঃ ৪৩ সেঃ
( ক )
১৯৭০ সালের জন্য সংশোধন = ১১ সেঃ (খ)
সময়ের ব্যবধান = ৪৩ মিঃ ৮ সেঃ (গ)
এই সময়ের ব্যবধানের জন্য সংশোধন = ৭ সেঃ (ঘ)
অতএব কার্যকারী S.T. = ( ক + খ + গ + ঘ ) = ১৮ ঘঃ ২৫ মিঃ ৯ সেঃ
এখন, জন্মস্থানের অক্ষাংশ (latitude) হল ২৬
ডিঃ ১০ মিঃ উত্তর।
tables of ascendants অনুযায়ী ২৬ ডিঃ ১০ মিঃ উত্তর অক্ষাংশের কাছাকাছি ২৬ ডিঃ অক্ষাংশের
জন্য ১৮ ঘঃ ২৪ মিনিট (S.T)-র লগ্নমান দেওয়া আছে ১১ অংশ ১৫ ডিঃ ১৭ মিঃ। বাকি ১ মিঃ
৯ সেকেণ্ডের জন্য correction বের করা দরকার। ঐ সারণীতে ৪ মিনিট পরে ১৮ ঘঃ ২৮ মিনিটের
জন্য লগ্ন দেওয়া আছে ১১ অংশ ১৬ ডিঃ ৩৯ মিঃ। অতএব ৪ মিনিট সময়ের জন্য লগ্নের তফাৎ
হচ্ছে ১ ডিঃ ২২ মিঃ। তা হলে, ১ মিঃ ৯ সেকেণ্ডের জন্য লগ্নের তফাৎ হবে ২৩ মিঃ (
সেকেণ্ড বাদ দিয়ে )। অতএব লগ্ন দাঁড়ালো ১১ অংশ ১৫ ডিঃ ১৭ মিঃ + ২৩ মিঃ অর্থাৎ ১১
অংশ ১৫ ডিঃ ৪০ মিঃ।
এখন ১১ অংশ ১৫ ডিঃ ৪০ মিনিটের অর্থ পরিষ্কার হওয়া দরকার। এর অর্থ ১১ টি রাশি অতিক্রম করে, আরও ১৫ ডিঃ ৪০ মিঃ পরে লগ্ন। অতএব লগ্ন হ'ল দ্বাদশ রাশি অর্থাৎ মীন। এর পরে আরও একটি সংশোধন দরকার। সেটি হল অয়নাংশ সংশোধন (ayanangsha correction) । ১৯৭০ খৃষ্টাব্দের অয়নাংশ সংশোধনের মান ঐ বইতেই দেওয়া আছে। সেটা হল ( - ) ২৭ মিনিট। এ ভাবে সঠিক লগ্নমান দাঁড়াল মীনরাশিতে ১৫ ডিঃ ৪০ মিঃ - ২৭ মিঃ = ১৫ ডিঃ ১৩ মিঃ।
এখানে একটা কথা বলা দরকার। প্রথম শিক্ষার্থীর
পক্ষে জটিলতা এড়ানোর জন্য নাক্ষত্রিক কাল ও অয়নাংশ কাকে বলে সেটা ব্যাখ্যা করা
হয় নি। এগুলি শুধু table থেকে দেখে নিলেই হ'ল। তা হলে সংক্ষেপে দাঁড়ালো এই রকম
:
ইণ্ডিয়ান ষ্ট্যাণ্ডার্ড টাইম (I.S.T.) = ১২ - ২৫ মিঃ p.m.
৮৭ ডিঃ ২ মিঃ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের জন্য সংশোধন = ( + ) ১৮ মিঃ ৮ সেঃ
অতএব জন্মকালীন স্থানীয় সময় = ১২ ঘঃ ৪৩ মিঃ ৮ সেঃ (অর্থাৎ দুপুর ১২টা ৪৩ মিঃ ৮
সেঃ)
১৭ ই ডিসেম্বরের নাক্ষত্রিক কাল (sidereal time) = ১৭ ঘঃ ৪১ মিঃ ৪৩ সেঃ
১৯৭০ সালের জন্য সংশোধন = ( + ) ১১ সেকেণ্ড
অতএব ১৯৭০ সালের দুপুর ১২ টার নাক্ষত্রিক কাল (sidereal time) = ১৭ ঘঃ ৪১ মিঃ ৫৪
সেঃ
দুপুর ১২ টা থেকে জন্ম সময়ের ব্যবধান = ( + ) ৪৩ মিঃ ৮ সেঃ
এই ব্য্বধানের জন্য সংশোধন = ( + ) ৭ সেঃ
জন্ম মুহূর্তের sidereal time = ১৮ ঘঃ ২৫ মিঃ ৯ সেঃ
১৮ ঘঃ ২৪ মিনিটের জন্য জন্মলগ্ন = ১১ অংশ ১৫ ডিঃ ১৭ মিঃ
বাকি ১মিঃ ৯ সেকেণ্ডের জন্য সংশোধন = ( + ) ২৩ মিনিট
অতএব লগ্নমান = ১১ অংশ ১৫ ডিঃ ৪০ মিঃ
১৯৭০ সালের অয়নাংশ সংশোধন (ayanangsha correction) = ( - ) ২৭ মিনিট
সুতরাং সংশোধিত লগ্নমান = ১১ অংশ ১৫ ডিঃ ১৩ মিঃ ; অর্থাৎ লগ্ন হল মীনরাশিতে ১৫
ডিঃ ১৩ মিঃ।
এখানে জন্মস্থানের অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ দেওয়া আছে। সাধারণতঃ জন্মস্থানের নামই জানা
থাকে, অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ নয়। সেই জায়গার অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ না জানা থাকলে, জন্মস্থানের
কাছাকাছি কোনো বড় জায়গা বেছে নিতে হবে। বড় বড় জায়গার অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ বইতেই
পাওয়া যাবে। মানচিত্র থেকেও অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ বের করে নেওয়া যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে
এর জন্য তফাৎ হবে সামান্যই।
এবার গ্রহদের স্ফুট বা longitudes বের করতে হবে। যদি এন.সি.লাহিড়ী প্রণীত সংক্ষিপ্ত
সারণী (condensed ephemeris) ব্য্বহার করা হয়, তা হলে সেই বছরের তথ্য সম্বলিত বই
যোগাড় করতে হবে। সংক্ষিপ্ত সারণীতে প্রতি ২৪ ঘণ্টা অন্তর চন্দ্র ও বুধের এবং প্রতি
৪৮ ঘণ্টা অন্তর অন্যান্য গ্রহের গতিপথ দেওয়া আছে।
আলোচ্য ক্ষেত্রে ১৯৭০ সালের ephemeris এ ১৭ই
ডিসেম্বর সকাল ৫ - ৩০ মিনিটে চন্দ্রের স্ফুট ৩ অংশ ১৯ ডিঃ ৫ মিঃ এবং ২৪ ঘণ্টা পরে
১৮ তারিখ সকাল ৫ - ৩০ মিনিটে স্ফুট হ'ল ৪ অংশ ১ ডিঃ ৪ মিঃ। অতএব ২৪ ঘণ্টায় চন্দ্র
অতিক্রম করেছে ১১ ডিঃ ৫৯ মিঃ পথ। যেহেতু জন্মসময় দুপুর ১২ - ২৫ মিঃ, সকাল ৫ - ৩০
মিনিট থেকে জন্ম সময়ের ব্যবধান ৬ ঘঃ ৫৫ মিঃ । তা হলে এই সময়ে চন্দ্র অতিক্রম করেছে
৩ ডিঃ ২৭ মিঃ ; অতএব চন্দ্রস্ফুট (longitude of Moon) দাঁড়াল : ৩ অংশ ১৯ ডিঃ ৫
মিঃ + ৩ ডিঃ ২৭ মিঃ = ৩ অংশ ২২ ডিঃ ৩২ মিঃ; অর্থাৎ চন্দ্রের অবস্থান হবে কর্কটের
২২ ডিঃ ৩২ মিঃ। অন্যান্য গ্রহস্ফুট এই ভাবেই বের করতে হবে। অতএব ইণ্ডিয়ান ষ্ট্যাণ্ডার্ড
টাইম
জানা থাকলে কি করে গ্রহদের স্ফুট (longitudes) বের করা যায় সেটা বোঝা গেল।
গ্রহস্ফুট ও লগ্ন নির্ণয় করা ছাড়াও সারণী
(table of ascendants) ও পঞ্জীতে আরও অনেক তথ্য দেওয়া আছে। কৌতূহলী পাঠকেরা সেগুলি
দেখে নিতে পারেন।
সম্পূর্ণ রাশিচক্রটি ৪(১) চিত্রে দেখান হয়েছে।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার। সারণীতে শনির দ্রাঘিমাংশ (longitudes) ১৫, ১৭, ১৯ ডিসেম্বরের জন্য লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, দ্রাঘিমাংশের মান ক্রমশঃ কমে যাচ্ছে - অর্থাৎ যেন শনি গ্রহটি উল্টোদিকে ঘুরছে। এটা হল গ্রহের বক্রগতি (retrograde motion)। এ সম্বন্ধে পরে বিশদ ভাবে বলা হয়েছে। শনির এই ‘বক্রগতি’ বোঝাবার জন্য ২ক চিত্রে প্রদত্ত জন্মকুণ্ডলীতে শ(বঃ) - এই ভাবে দেখানো হয়েছে। অন্যান্য গ্রহের ক্ষেত্রে রবি - র, চন্দ্র - চ, মঙ্গল - ম ইত্যাদি ভাবে এবং লগ্নকে লং হিসাবে দেখান হয়েছে। রাহু ও কেতু সব সময়েই বিপরীত দিকে ঘোরে; তাই এদের পাশে ( বঃ ) লেখা হয় না।
উদাহরণ ২ ।
লগ্ন বের করার জন্য ২য় একটি উদাহরণ নেওয়া
যাক। ধরা যাক কোন ব্যক্তির জন্ম ১৯৫৭ সালের ২২ শে মার্চ, জন্ম স্থানীয় সময় (Local
Standard Time) ৭ p.m. এবং জন্মস্থান জেনেভা (সুইজারল্যান্ড), যার অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ
যথাক্রমে ৪৬ ডিঃ ১২ মিঃ উত্তর এবং ৬ ডিঃ ৯ মিঃ পূর্ব।
সুইজারল্যাণ্ডের টাইম জোন ( +১ ) ঘঃ ; অতএব গ্রীণউইচ মীন টাইম (GMT) হবে ৭ p.m.
- ১ ঘঃ = ৬ p.m.। এর জন্য ইণ্ডিয়ান ষ্ট্যাণ্ডার্ড টাইম (IST) হবে ৬ p.m. + ৫ ঘঃ
৩০ মিঃ = ১১ - ৩০ p.m.। এতএব জন্ম সময়ের IST হ'ল ২২ শে মার্চের ১১-৩০ মিঃ p.m.।
যেহেতু জন্মস্থানটি গ্রীনউইচের পূর্বে অবস্থিত , সেইজন্য স্থানীয় সময় (LMT) GMT
এর থেকে বেশী হবে। কত বেশী ? প্রতি ডিগ্রি ৪ মিনিট হিসাবে ৬ ডিঃ ৯ মিঃ দ্রাঘিমাংশের
জন্য হয় ২৪ মিঃ ৩৬ সেঃ ( ধরা যাক ২৫ মিনিট )। অর্থাৎ স্থানীয় সময় হ'ল ৬ - ২৫ মিনিট
p.m.।
তা হলে দাঁড়াল -
স্থানের ষ্ট্যাণ্ডর্ড টাইম = ৭ p.m.
গ্রীণউইচ মীন টাইম (GMT) = ৬ p.m.
স্থানীয় সময় (LMT) = ৬ - ২৫ মিঃ (p.m.)
ইণ্ডিয়ান ষ্ট্যাণ্ডার্ড টাইম = ২২শে মার্চের ১১ -৩০ p.m.
এটা খেয়াল রাখতে হবে যে লগ্ন (ascendant) বের করতে হয় স্থানীয় সময় থেকে লগ্ন নির্ণয় সারণী (tables of ascendants) ব্যবহার করে এবং গ্রহদের স্ফুট (longitudes of planets) বের করতে হবে IST থেকে, সেই বছরের জন্য নির্দিষ্ট পঞ্জী (ephemeris) থেকে।
এখন tables of ascendants ব্যবহার করে ২২ শে মার্চ দুপুর ১২ টায় নাক্ষত্রিক কাল (sidereal time) পাওয়া যায় ২৩ ঘঃ ৫৭ মিঃ ১৩ সেঃ। ১৯৫৭ সালের জন্য সংশোধন ৪৬ সেঃ। এখন জেনেভার জন্য সংশোধন দরকার; কারণ উপরে ব্যবহৃত sidereal time দেওয়া আছে ৮২ ডিঃ ৩০ সেঃ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের জন্য। দ্রাঘিমাংশের ব্যবধান থেকে, প্রতি ডিগ্রিতে ০.৬৬৬ সেকেণ্ড হিসাবে এটা অনায়াসেই গণনা করা যায়। তবে সব চেয়ে ভাল, table of ascendants থেকে সরাসরি এর মানটা নিয়ে নেওয়া। table-এর পিছন দিকে অনেক বিদেশী শহরের জন্য এই মান দেওয়া আছে। জেনেভার জন্য এই সংশোধন ৫০ সেকেণ্ড। উপরের sidereal time পাওয়া গিয়েছে দুপুর ১২ টার জন্য; কিন্তু জন্ম বিকাল ৬ টা ২৫ মিনিটে। অতএব বিকাল ৬ টা ২৫ মিনিটের sidereal time হল ২৩ ঘঃ ৫৭ মিঃ ১৩ সেঃ + ৬ ঘঃ ২৫ মিঃ = ৩০ ঘঃ ২২ মিঃ ১৩ সেঃ। যেহেতু এটা ২৪ ঘণ্টার বেশী, অতএব ২৪ ঘণ্টা বিয়োগ করে sidereal time হবে ৬ ঘঃ ২২ মিঃ ১৩ সেঃ। আগের উদাহরণের মতই সময়ের ব্য্বধানের জন্য সংশোধন এক্ষেত্রে ১ মিঃ ৩ সেঃ। তা হলে সংক্ষিপ্তাকারে দাঁড়াল :
১৯০০ সালের ২২ শে মার্চের দুপুর ১২টায় S.T.
= ২৩ ঘঃ ৫৭ মিঃ ১৩ সেঃ (ক)
১৯৫৭ সালের জন্য সংশোধন = ৪৬ সেঃ (খ)
জন্ম সময় = ৬ - ২৫ মিঃ ( p.m.) (গ)
জন্ম সময়ের S.T. = ( ক + খ + গ ) = ৩০ ঘঃ ২২ মিঃ ৫৯ সেঃ = ৬ ঘঃ ২২ মিঃ ৫৯ সেঃ
৬ ঘঃ ২৫ মিঃ সময়ের ব্যবধানের জন্য সংশোধন = ১ মিঃ ৩ সেঃ (ঘ)
জেনেভার জন্য সংশোধন = ৫০ সেঃ (ঙ)
অতএব সংশোধিত S.T. = ( ক + খ + গ + ঘ + ঙ ) = ৬ ঘঃ ২৪ মিঃ ৫২ সেঃ।
এখন ৬ ঘঃ ২৪ মিঃ ৫২ সেঃ অনুযায়ী লগ্ননির্ণয়
ঠিক আগের উদাহরণের মত লগ্ননির্ণয় সারণী (tables of ascendants) ব্যবহার করে করতে
হবে। আবার ১৯৫৭ সালের জন্য অয়নাংশ সংশোধনও করতে হবে। সারণী অনুযায়ী এর মান ( -
) ০ ডিঃ ১৬ মিঃ। এগুলো করে এক্ষেত্রে লগ্ন দাঁড়াবে কন্যারাশি ১১ ডিঃ ২৪ মিঃ।
গ্রহদের স্ফুট ( longitudes of planets ) বের করতে হবে IST ব্যবহার করে, ঠিক আগের
উদাহরণের মত।
আগের দিনের তৈরী কোষ্ঠিতে জন্ম সময় লেখা থাকত শকাব্দ, দণ্ড, পল, বিপল উল্লেখের মাধ্যমে। যেমন, ১৮২০।৩।২৪।৩৮।৫৬।১০ - এর অর্থ, জন্ম ১৮২০ শকাব্দে, বাংলা ৩য় মাসের পরবর্তী মাসে ২৪ দিন গত হয়ে পরের দিন সূর্যোদয় থেকে ৩৮ দণ্ড, ৫৬ পল ও ১০ বিপল পরে। শকাব্দ থেকে ৫১৫ বিয়োগ করলে বাংলা সাল পাওয়া যায়। তা হলে এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির জন্ম হল ১৩০৫ বঙ্গাব্দে শ্রাবণ মাসের ২৫ তারিখের সূর্যোদয় থেকে ৩৮ দণ্ড ৫৬ পল ১০ বিপল পরে। দণ্ড, পল, বিপলের হিসেবটা হচ্ছে : আড়াই দণ্ডে ১ ঘণ্টা, আড়াই পলে ১ মিনিট ও আড়াই বিপলে ১ সেকেণ্ড। তবে এভাবে এখন আর জন্ম সময় লেখা হয় না।
কোনো ব্যক্তির সঠিক জন্ম সময় জানাটা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এর উপরই লগ্ন ও অন্যান্য গ্রহের অবস্থান নির্ভর করে। এগুলি ভুল হলে সমস্ত বিচার বিশ্লেষণই ভুল হবে। যে ঘড়ি দেখে সময় ঠিক করা হবে সেটি নির্ভুল হওয়া দরকার। আগে স্থানীয় সময় থেকে IST নির্ণয় করতে অনেক সময়েই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হত; কারণ এক এক সময়ে এক এক রকম নিয়ম চালু ছিল। এখন অবশ্য এ ধরণের ভুল হবার সম্ভাবনা কম। অনেক সময়েই এমন হয়েছে, বিচারের ফলাফলের সঙ্গে আসল ঘটনা মেলেনি; পরে জানা গিয়েছে যে জন্ম সময়ে ভুল ছিল। এ ব্যাপারটা একটু খেয়ালে রাখতে হবে।
একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। সায়ন মতে লিপিবদ্ধ সারণী (table) থেকে পাশ্চাত্য বা সায়ন মতে লগ্ন বা গ্রহের অবস্থান বের করে অয়নাংশ বিয়োগ করলে প্রাচ্য বা নিরায়ন মতে লগ্ন বা গ্রহের অবস্থান পাওয়া যায়। অনেক সারণী নিরায়ন মতেই প্রস্তুত এবং তা থেকে সরাসরি প্রাচ্য মতে লগ্ন ও গ্রহের অবস্থান নির্ণয় করা যেতে পারে।
পরিশেষে একটি কথা। প্রথমে একটি কোষ্ঠি তৈরী করলে কিছুটা সন্দেহ থাকতে পারে - কোথাও ভুল হয় নি তো ? কোনো সারণী না দেখে লগ্ন হিসাব করার একটা মোটামুটি নিয়ম আগেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এর দ্বারা জন্ম সময় ও সেই দিনের সূর্যোদয়ের উপর ভিত্তি করে লগ্ন কোন রাশিতে পড়বে সেটা অনুমান করা যায়। এভাবে কিছুটা মিলিয়ে নেওয়া যেতে পারে। আর একটি কথাও মনে রাখা দরকার - রবি থেকে বুধ ২৮ ডিগ্রি এবং শুক্র ৪৭ ডিগ্রির বেশি দূরত্বে থাকতে পারে না।
মনে রাখতে হবে যে, কোনো জাতকের রাশিচক্রে সব গ্রহ ও লগ্নের মূল অবস্থান জন্মসময়েই তার সমস্ত জীবনের জন্য নিদ্র্দিষ্ট হয়ে থাকে। এ জীবনে তার আর পরিবর্তন হবে না। তবে সমস্ত গ্রহই সময়ের সঙ্গে ঘুরে চলেছে; কাজেই তাদের অবস্থান পরিবর্তিত হয়েই চলেছে। রাহু ও কেতু ছাড়া সব গ্রহই রাশিচক্রে ঘডি়র কাঁটার বিপরীতে (anticlockwise) ঘোরে। এর মধ্যে মঙ্গল, বুধ, বৃবৃহস্পতি, শুক্র ও শনি কোনো কোনো অবস্থায় কিছু সময়ের জন্য ঘডি়র কাঁটার মতও (clockwise) ঘুরতে পারে। এই গতিকে বলা হয় বক্রগতি (retrograde motion) চলসেই সময়ের জন্য সেই গ্রহকে বলা হয় 'বক্রী '। সত্যিই যে তারা বিপরীত দিকে ঘোরে তা ঠিক নয়; আপেক্ষিক গতির জন্য পৃথিবী থেকে দেখে মনে হয় তারা উল্টোদিকে ঘুরছে। কোন গ্রহ কখন বক্রী হবে তার একটা নিয়ম আছে। এ ছাড়াও কোনো গ্রহ মাঝে মাঝে কিছু সময়ের জন্য স্থির হয়েও থাকতে পারে বা দ্রুত গতিতেও (acceleration) চলতে পারে। সূক্ষভাবে বিচারের সময় এ সবই কাজে লাগানো হয়। বক্রী গ্রহের ব্যবহার, বৈশিষ্ট্য ও দৃষ্টি সম্বন্ধে জ্যোতিষীরা নানা মত পোষণ করেন। শাস্ত্রে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট ভাবে সে রকম কিছু বলা নেই।
যেহেতু গ্রহগুলি রাশিচক্রে ক্রমাগত ঘুরছে, বিভিন্ন সময়ে তাই এরা বিভিন্ন রাশিতে অবস্থান করে এবং প্রতিটি গ্রহই রাশিচক্রের বারটি রাশির প্রত্যেকটি অতিক্রম করে চলেছে। স্বাভাবিক ভাবেই পরিক্রম করার সময়ে কখনো গ্রহগুলি জন্মকুণ্ডলীতে অবস্থিত গ্রহকে দৃষ্টি দেয়, কখনো তাদের সঙ্গে কোণে বা কেন্দ্রে অবস্থান করে আবার কোনো কোনো সময়ে তাদের উপর দিয়েও গমন করে। গ্রহদের এই বিভিন্ন অবস্থান ও গতির উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা তৈরী হয়। একে বলা হয় গোচর ফল। এ সম্বন্ধে পরে বিস্তৃত অলোচনা করা হবে।
গড় হিসাবে চন্দ্র সওয়া দুই দিনে, বুধ ১৮ দিনে, শুক্র ২৮ দিনে, রবি ১ মাসে, মঙ্গল ৪৫ দিনে, বৃহস্পতি ১ বছরে, শনি আড়াই বছরে এবং রাহু ও কেতু দেড় বছরে এক একটি রাশি অতিক্রম করে। দ্রুতগামী বলে কখনো কখনো চন্দ্র, বুধ ও শুক্রকে চরগ্রহ (fast moving planets) এবং রবি, মঙ্গল, শনি, রাহু ও কেতুকে স্থিরগ্রহ (slow moving planets) বলা হয়ে থাকে। উপরে গ্রহদের রাশিচক্র অতিক্রমের যে সময় দেওয়া হল তা একটা মোটামুটি হিসেব। নির্দিষ্ট একটা উদাহরণ নেওয়া যাক। প্রতিটি রাশি আড়াই বছর হিসাবে শনির ৩০ বছরে একবার সম্পূর্ণ রাশিচক্র অর্থাত্ ১২ টি রাশি অতিক্রম করে আসার কথা। এখন শনির ৩০ বছর অন্তর অবস্থানের একটা মোটামুটি চিত্র দেখা যাক।
১৯০০ খৃষ্টাব্দের ১ লা এপ্রিল শনির অবস্থান
ধনু রাশির ১২ ডিঃ ২৬ মিনিটে
১৯৩০ খৃষ্টাব্দের ১ লা এপ্রিল শনির অবস্থান ধনু রাশির ১৮ ডিঃ ৪০ মিনিটে
১৯৬০ খৃষ্টাব্দের ১ লা এপ্রিল শনির অবস্থান ধনু রাশির ২৪ ডিঃ ৩০ মিনিটে
১৯৯০ খৃষ্টাব্দের ১ লা এপ্রিল শনির অবস্থান মকর রাশির ০ ডিঃ ৩০ মিনিটে
২০২০ খৃষ্টাব্দের ১ লা এপ্রিল শনির অবস্থান মকর রাশির ৬ ডিঃ ১৫ মিনিটে
২০৫০ খৃষ্টাব্দের ১ লা এপ্রিল শনির অবস্থান মকর রাশির ১২ ডিঃ ২০ মিনিটে
অর্থাত্ দেড়শ বছরে শনি প্রায় ৩০ ডিগ্রি এগিয়ে গিয়েছে।
অতএব শনি ৩০ বছরে একবার রাশিচক্র অতিক্রম করে এটা একটা মোটামুটি হিসাব। উপরে উল্লেখ করা হয়েছে যে মাঝে মাঝে কোন গ্রহ এক রাশিতে অনেক দিন স্থির হয়ে থাকতে পারে। যেমন নিকট অতীতেই মঙ্গল গ্রহ ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরের প্রায় মাঝামাঝি থেকে ২০১০ সালের মে মাসের মাঝামাঝি অবধি কর্কট রাশিতে অবস্থান করেছিল। গ্রহের এই বিভিন্ন গতির বিভিন্ন নাম আছে এবং সূক্ষভাবে বিচারের সময় এগুলিকেও কাজে লাগানো হয়।
গ্রহের বিভিন্ন গতির জন্য ফলের কি রকম তারতম্য হয় এ সম্বন্ধে জ্যোতিষ গ্রন্থে অনেক লেখা রয়েছে। সেগুলি এখনই খুব বিশদ ভাবে জানার বা প্রয়োগ করার প্রয়োজন নেই। তবে কৈলাস চন্দ্র জ্যোতিষার্ণব সঙ্কলিত "জ্যোতিষ প্রভাকর" গ্রন্থ থেকে গ্রহের গতি সম্বন্ধে নিম্ন লিখিত তথ্য তুলে দেওয়া হল।
"সূর্য হইতে ৬০ অংশ বা ডিগ্রীর মধ্যে গ্রহগণ শীঘ্রগামী, ৬১ হইতে ৯০ ডিগ্রী পর্যzন্ত সমগামী, ৯১ হইতে ১২০ পর্যzন্ত মৃদুগামী, ১২১ হইতে ১৮০ ডিগ্রী পর্যzন্ত বক্রগামী, ১৮১ হইতে ২৪০ ডিগ্রী পর্যzন্ত অতি বক্রগামী, ২৪১ হইতে ৩০০ ডিগ্রী পর্যন্ত সরলগামী, ৩০১ ডিগ্রী হইতে ৩৬০ ডিগ্রী পর্যzন্ত শীগ্রগামী হয়। রাহু ও কেতু সর্বদা বক্রগামী এবং চন্দ্র ও রবি সর্বদাই শীঘ্রগামী।"
প্রত্যেক গ্রহের কিছু নিজস্ব গুণ বা বৈশিষ্ট্য আছে। এই সব বিশেষত্ব যে সব সময়েই প্রকাশ পাবে তা নয়। কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে একটি গ্রহ কোন বিশেষ রাশিতে অবস্থানের ফলে বা অন্য গ্রহের দ্বারা প্রভাবিত হবার কারণে তার গুণের পরিবর্তন ঘটতে পারে। তবে সাধারণভাবে তাদের কারকত্বগুলি এই রকম :
১। রবি - আত্মা, অহঙ্কার, আত্মসম্মান,
উত্সাহ, প্রতিষ্ঠান, পিতা, জীবনীশক্তি, হৃদয় (heart), অস্থি (bones), উচ্চপদস্থ
কর্মচারী, রাজনীতি, জ্বর, রক্তচাপ, মস্তক, চক্ষু (বিশেষতঃ ডান চক্ষু), রক্তবর্ণ,
ঝাল ইত্যাদি।
অপর নাম - ভানু, অর্ক, সবিতা, আদিত্য প্রভৃতি।
২। চন্দ্র - মন, শারীরিক পুষ্টি ও লাবণ্য,
মাতা, শ্বেতবস্ত্র, আদর্শবাদিতা, শ্লেäমা, রক্ত(শ্বেতকণিকা), গলগণ্ড, জন সাধারণ,
ফুসফুস, দেহের জলীয় অংশ, চক্ষু (বিশেষতঃ বাম চক্ষু), শ্বেতবর্ণ, লবণরস ইত্যাদি।
অপর নাম - সোম, ইন্দু, শশাঙ্ক, উড়ুপ প্রভৃতি।
৩। মঙ্গল - সাহস, শক্তি, ক্ষিপ্রতা,
ক্রোধ, অগ্নি, উগ্র মানসিকতা, কুমারত্ব, কর্মক্ষমতা, তর্ক, ভ্রাতা, রক্ত (লোহিতকণিকা),
গুহ্যদেশ, রক্তচাপ, অর্শ, রক্তপাত, দুর্ঘটনা, জমি, ভূমি, আগুন, ক্ষত, কাটাছেঁড়া,
গাঢ় রক্তবর্ণ, তিক্তরস ইত্যাদি।
অপর নাম - কুজ, ভৌম, বক্র, ত্রুÝর, মহীজ প্রভৃতি।
৪। বুধ - পরিহাস, বালকসুলভ কথাবার্তা,
বাকশক্তি, বুদ্ধি, স্মৃতিশক্তি, অস্থিরচিত্ততা, বিচার বিশ্লেষণ, ভাল মন্দ বিচার
করার ক্ষমতা, মুদ্রিত রচনা, খবর, তথ্য, তথ্য আদান-প্রদান, সংবাদ, হিসাব, লেখন,
জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিষ, গণিতশাস্ত্র, বাণিজ্য, অÂমরস, ত্বক, স্নায়ু, নাক,
গলগ্রন্থি (thyroid gland), নিঃশ্বাস, সর্দি, জিহবারোগ, ইত্যাদি।
অপর নাম - সৌম্য, হেম, সোমসুত, চন্দ্রসুত, চন্দ্রজ, প্রভৃতি।
৫। বৃহস্পতি - পূজাআর্চা, শাস্ত্রপাঠ,
জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বাEøতা, জানুদেশ, যকৃত্, প্লীহা, বাকশক্তি, স্থূলতা, মধুমেহ
(blood sugar or diabetes), শ্লেäমা, যকৃত্ ও মূত্রাশয়, ধর্ম, গুরু, আধ্যাত্মিকতা,
মূল্যবোধ, আদর্শবাদিতা, পুরোহিত, শিক্ষক, শাস্ত্রপাঠ, আইনবিদ্যা, আইনজ্ঞ, বিদ্যা,
মধুর রস ইত্যাদি
অপর নাম - গুরু, জীব, আর্যz, সূরি প্রভৃতি।
৬। শুক্র - কাম-সম্বন্ধীয় কার্য, জাগতিক
সুখ, বিভিন্ন শাস্ত্র, আমোদ-প্রমোদ, সৌখিন ও বিলাস দ্রব্য, সৌন্দর্য, মাধুর্য,
মুখমণ্ডল, মোহ, শিল্প, সঙ্গীত, শয়নসুখ, দৃষ্টিশক্তি, যৌন আকর্ষণ, যৌনরোগ, অম্ল
রস ইত্যাদি।
অপর নাম - কবি, সিত, ভার্গব, উশনা, ভৃগু, দৈত্যগুরু প্রভৃতি।
৭। শনি - বৃদ্ধ, বয়স্ক লোক, বিলম্ব,
শৃÍলা, দুরারোগ্য ব্যাধি, নিঃসঙ্গতা, ক্লেশ, দুঃখ, দুঃশ্চিন্তা, ভীতি, মৃত্যু,
অস্থিপীড়া, পক্ষাঘাত, মৃত্যুভয়, বধিরতা, শরীর কম্পন, শ্বাসরোগ, যক্ষা, আয়ু,
সংযমী, স্বল্পতা, বিচ্ছেদ, সন্ন্যাসী, ত্যাগ, শ্রম, ধৈর্য, শ্রমিক, আধ্যাত্মিকতা,
নিম্নবর্গের লোক, দাস দাসী, অস্থি, দাঁত, পর্বত ভ্রমণ, কেশ, কষায় রস ইত্যাদি।
অপর নাম - যম, মন্দ, রবিসুত, শনৈশ্চর, অর্কপুত্র প্রভৃতি।
৮। রাহু - ভোগ, কপটাচার, বিভ্রান্তি,
অতৃপ্তি, আকাশ পথ, বিদেশ যাত্রা, উচ্চস্থান, শ্বাসপ্রশ্বাস, অপবাদ, তমোগুণ,
যথেচ্ছাচার, সর্প, ইন্দ্রজাল, অনির্ণিত রোগ ইত্যাদি।
অপর নাম - তম, অহি, অসুর, ভুজঙ্গ প্রভৃতি।
৯। কেতু - গোপনিয়তা, ব্রণ, আচম্বিতে
ঘটা ঘটনা, আঘাত, ক্ষত, মোক্ষ, কৈবল্য ইত্যাদি।
অপর নাম - শিখী, ধবজ, রাহুপুচ্ছ, ধুমবর্ণ প্রভৃতি।
জ্যোতিষশাস্ত্রে একটা খুব প্রচলিত কথা আছে। 'শনিবত্ রাহু' ও 'কুজবত্ কেতু'। রাহু ও কেতু অনেক বিষয়েই যথাক্রমে শনি ও মঙ্গলের মত বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে ও তদনুরূপ ফল প্রদান করে।
গ্রহের দৃষ্টি
জ্যোতিষশাস্ত্রে গ্রহদের দৃষ্টি (aspect) কল্পনা করা হয়। সব গ্রহই যে রাশিতে থাকে তার সপ্তম রাশিতে অর্থাত্ বিপরীতে অবস্থিত রাশিতে পূর্ণদৃষ্টি দিয়ে থাকে। এ ছাড়া কয়েকটি গ্রহের কিছু বিশেষ দৃষ্টি আছে। যেমন মঙ্গল যে রাশিতে থাকে তার ৪র্থ ও ৮ম রাশিতে পূর্ণদৃষ্টি দেয়। অর্থাত্ মঙ্গল যদি কারও কুণ্ডলীতে মেষ রাশিতে থাকে, তবে মেষের ৭ম ঘর তুলা ছাড়াও তার দৃষ্টি ৪র্থ বা কর্কট রাশিতে এবং ৮মে বা বৃশ্চিক রাশিতে থাকবে। এই ভাবে বৃহ্রপতির ক্ষেত্রে ৭ম ছাড়াও ৫ম ও ৯ম ঘরে দৃষ্টি থাকবে। এর অর্থ হ'ল বৃহ্রপতি যদি কারও কর্কটে থাকে, তবে ৭ম ঘর মকর ছাড়াও কর্কট থেকে ৫ম ঘর বৃশ্চিকে এবং ৯ম ঘর মীনে বৃহ্রপতির পূর্ণদৃষ্টি থাকবে। একই ভাবে শনির দৃষ্টি থাকবে ৭ম ছাড়াও ৩য় ও ১০মে। উদাহরণ স্বরূপ, শনি যদি কোনও ব্যক্তির জন্মকুণ্ডলীতে তুলায় থাকে তবে তার পূর্ণদৃষ্টি পড়বে ধনুতে (৩ য়ে) , মেষে (৭ মে ) ও কর্কটে অর্থাত্ ১০ম রাশিতে। পূর্ণদৃষ্টি ছাড়াও গ্রহদের অর্ধপাদ-দৃষ্টি, ত্রিপাদ-দৃষ্ট ইত্যাদি আছে। তবে ফল বিচারের জন্য কেবল পূর্ণদৃষ্টিই মুলতঃ গ্রহণীয়।
রাহু ও কেতুর দৃষ্টি সম্বন্ধে মতভেদ আছে। দক্ষিণ ভারতের প্রখ্যাত জ্যোতিষী প্রয়াত ডঃ বি. ভি. রমন রাহু ও কেতু যে ঘরে আছে তার ৭ম ঘর ছাড়া অন্য দৃষ্টির কথা বলেন নি। কিন্তু বিখ্যাত জ্যোতিষী জে. এন. ভাসিন মুম্বই থেকে প্রকাশিত পারাশরী হোরার একটি সংস্করণ উল্লেখ করে বলেছেন যে, উক্ত গ্রন্থের ৫১ নং পরিচ্ছেদের ২৬ নং শ্লোক অনুযায়ী রাহু ও কেতুর ৭ম ছাড়াও ৫ম ও ৯ম দৃষ্টিও গ্রাহ্য। অনেক সময় এটা ধরলে ফল ভালই পাওয়া যায়। তবে বহু জ্যোতিষীই এটা মানেন না। এই প্রসঙ্গে একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন। দ্রষ্টা গ্রহ একটি রাশিতে যত ডিগ্রিতে থাকবে, দৃষ্ট রাশির ঠিক তত ডিগ্রিতেই পূর্ণদৃষ্টি পড়বে। একটি উদাহরণ নেওয়া যাক। শনি যদি মকরে ১০ ডিগ্রিতে থাকে, তবে মীনের ১০ ডিগ্রিতে (৩য় দৃষ্টি), কর্কটের ১০ ডিগ্রিতে (৭ম দৃষ্টি) ও তুলার ১০ ডিগ্রিতে (১০ম দৃষ্টি) শনির পূর্ণদৃষ্টি থাকবে। উদাহরণ স্বরূপ, শনি যদি মকর রাশির ২০ ডিগ্রিতে এবং চন্দ্র তুলা রাশির ২১ ডিগ্রিতে থাকে তবে চন্দ্রের উপর শনির প্রায় পূর্ণ দৃষ্টি থাকবে। কিন্তু চন্দ্র যদি তুলার ২ ডিগ্রিতে থাকে তবে চন্দ্রের উপর শনির দৃষ্টির তীব্রতা অনেক কম হবে। তবে খুব সূক্ষভাবে বিচার না করলে চন্দ্র মোটামুটি শনির দ্বারা দৃষ্ট হিসাবেই ধরা যেতে পারে।
গ্রহের শুভত্ব, অশুভত্ব, শত্রুতা ও মিত্রতা
নয়টি গ্রহের সবকটিই শুভ নয় বা অশুভ নয়। রবি, মঙ্গল, শনি, রাহু ও কেতু নৈসর্গিক বা প্রাকৃতিক অশুভ গ্রহ (natural malefics)। বৃহস্পতি ও শুক্র প্রাকৃতিক শুভ গ্রহ (natural benefics)। বুধ গ্রহ অতি সহজে অন্য গ্রহ দ্বারা প্রভাবিত হয় বলে, কোনো পাপ গ্রহের (অশুভ গ্রহ) সংস্পর্শে পাপ গ্রহের মতই অশুভ ফল প্রদান করে। কিন্তু কোনও পাপ গ্রহের সংস্পর্শে না এলে বুধকে সাধারণভাবে শুভই ধরা হয়। চন্দ্র কৃষ্ণপক্ষের হ'লে পাপগ্রহ এবং শুক্লপক্ষের হ'লে শুভ ধরা হয়। কোনও জন্মকুণ্ডলীতে চন্দ্র ও রবির দুরত্ব যদি ৭২ ডিগ্রির বেশী হয়, তবে সেটা শুক্লপক্ষের চন্দ্র এবং ৭২ ডিগ্রির কম হলে, কৃষ্ণপক্ষের চন্দ্র।
গ্রহগুলির পারäপরিক সম্পর্ক সব সময়েই বন্ধìত্বপূর্ণ নয়। এদের পারäপরিক সম্পর্ক দু'ভাবে নির্ণীত হয়। প্রথমতঃ দুটি গ্রহ স্বভাব বশতঃই পরäপরের মিত্র বা শত্রু হতে পারে, একে বলে নৈসর্গিক মিত্রতা (natural friendship) বা শত্রুতা। দ্বিতীয়তঃ জন্মকুণ্ডলীতে কোনো গ্রহ থেকে যে সব গ্রহ ২য়, ৩য়, ৪র্থ অথবা ১০ম, ১১শ ও ১২শ ঘরে থাকে, তারা প্রথমোক্ত গ্রহের বা গ্রহদের সাময়িক বা তাত্কালিক মিত্র (temporary or tatkalik friendship)। নীচে গ্রহদের নৈসর্গিক বন্ধìত্ব, সমতা বা শত্রুতার একটা বিবরণ দেওয়া হচ্ছে।
* (ক) রবির মিত্র - চন্দ্র, মঙ্গল, বৃহ্রপতি;
সম - বুধ; শত্রু - শুক্র, শনি।
* (খ) চন্দ্রের মিত্র - রবি, বুধ; সম - রবি ও বুধ ছাড়া বাকি সব গ্রহ; শত্রু
- চন্দ্রের শত্রু নেই।
* (গ) মঙ্গলের মিত্র - বৃহস্পতি চন্দ্র, রবি; সম - শুক্র, শনি; শত্রু - বুধ।
* (ঘ) বুধের মিত্র - রবি, শুক্র; সম - বৃহস্পতি, মঙ্গল, শনি; শত্রু - চন্দ্র।
* (ঙ) বৃহস্পতির মিত্র - রবি, চন্দ্র, মঙ্গল; সম - শনি; শত্রু - বুধ, শুক্র।
* (চ) শুক্রের মিত্র - বুধ, শনি; সম - মঙ্গল, বৃহস্পতি; শত্রু - রবি, চন্দ্র।
* (ছ) শনির মিত্র - শুক্র, বুধ; সম - বৃহস্পতি; শত্রু - রবি, চন্দ্র, মঙ্গল।
* (জ) রাহুর মিত্র - শুক্র, শনি; সম - বুধ, বৃহস্পতি; শত্রু - রবি, চন্দ্র,
মঙ্গল।
* (ঝ) কেতুর মিত্র - রবি, চন্দ্র, মঙ্গল; সম - বুধ, বৃহস্পতি; শত্রু - শুক্র,
শনি।
উদাহরণ স্বরূপ, চন্দ্র যদি কোনো রাশিচক্রে তুলাতে থাকে, তবে তুলার অধিপতি শুক্র যেহেতু চন্দ্রের শত্রু, অতএব চন্দ্র শত্রু গৃহে অবস্থিত ধরতে হবে।
দুটি গ্রহ যদি একে অন্যের নৈসর্গিক মিত্র হয় এবং অবস্থান হেতু তাত্কালিক মিত্রও হয় তবে তাদের পরস্পরের অধিমিত্র বলা হয়। এক হিসাবে সম এবং অন্য হিসাবে মিত্র হলে পরস্পরের মিত্র এবং এক হিসাবে শত্রু ও অন্য হিসাবে মিত্র হলে তারা পরস্পরের সম হিসাবে গণ্য হয়। শত্রুতার বিষয়েও একই ভাবে বিচার করতে হবে। যেমন দুই বা ততোধিক গ্রহ একে অন্যের নৈসর্গিক শত্রু ও একই সঙ্গে তাত্কালিক শত্রু হলে তারা পরস্পরের অধিশত্রু ইত্যাদি।
গ্রহদের স্ত্রী, পুরুষ ইত্যাদি ভাগেও ভাগ করা হয়। যেমন চন্দ্র ও শুক্র স্ত্রীসংজ্ঞক গ্রহ (feminine planets); রবি, মঙ্গল, বৃহ্রপতি পুরুষ সংজ্ঞক গ্রহ (masculine planets) এবং বুধ ও শনি নপুংসক গ্রহ (hermaphrodite planets )।
৪র্থ অনুচ্ছেদে গ্রহদের অবস্থান যে ভাবে জন্মকুণ্ডলীতে দেখান হয়েছে, তা ছাড়াও অন্য রকম ছকের প্রচলন আছে। ভারতের বিভিন্ন স্থানে ও নানান বইতে জন্মকুণ্ডলীর বিভিন্ন রকমের কাঠামো ব্যবহার করা হয়। দক্ষিণ ভারতে সাধারণতঃ যে ভাবে গ্রহদের অবস্থান নির্দেশ করা হয় তা চিত্র ৬(১)-এ দেখান হয়েছে।
চিত্র ৬(১)
এখানে উপরের সারির চারটি বর্গক্ষেত্রের বাম দিক থেকে দ্বিতীয়টিতে মেষ রাশির অবস্থান ধরে ডান দিক থেকে ঘুরে (clockwise) পরপর বাকী রাশি গুলিকে ( বৃষ, মিথুন, কর্কট ইত্যাদি ) দেখানো হয়। ৩য় অনুচ্ছেদের ৪(১) চিত্রতে প্রদর্শিত কুণ্ডলীটি এই বিন্যাস অনুযায়ী যেমন দেখা যাবে সেটা চিত্র ৬(২)-এ দেওয়া হল।
চিত্র ৬(২)
৬(৩)-এ দেখানো অন্য এক ধরণের কাঠামোও প্রচলিত আছে। সাধারণতঃ উত্তর
ভারতের জ্যোতিষীরা এটা ব্যবহার করে থাকেন। এখানে লগ্ন সব সময়েই উপরে মাঝখানের চতুষ্কোণে
দেখানো হয় এবং সেখানে রাশির সংখ্যা নির্দেশ করা হয়। লগ্ন যে সংখ্যক রাশিতে হবে,
তার পর থেকে অন্যান্য রাশিগুলি যে ভাবে বসাতে হবে তা চিত্র ৬(৩) থেকেই পরিষ্কার
হয়ে যাবে। তবে প্রত্যেক ঘরেই রাশির সংখ্যা লিখতে হবে। এই কাঠামো অনুযায়ী ৪(১) চিত্রের
কুণ্ডলীটি যেমন দেখা যাবে তা ৬(৩)-এ দেখানো হল।
চিত্র ৬(৩)
চিত্র থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, ২, ৩, ৬ এবং ১০ নং রাশিতে অর্থাৎ বৃষ, মিথুন, কন্যা ও মকর রাশিতে কোনো গ্রহ নেই। কি ক্রম অনুযায়ী পরপর এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে যেতে হবে তা রাশির সংখ্যা দিয়ে নির্দেশ করা আছে। এই কাঠামো ব্যবহার করলে লগ্নকে উপরের মাঝের ঘরে ধরে পরপর রাশির সংখ্যা ও সেখানে অবস্থিত গ্রহ দুইই দেখাতে হবে।
বর্গ
আমরা এখন জানি যে মোট ১২ টি রাশির প্রতিটির
বিস্তৃতি ৩০ ডিগ্রি করে। এই ৩০ ডিগ্রিকে কয়েকটি বিশেষ ভাগে ভাগ করে, রাশিচক্রে
অব্স্থিত গ্রহদের বিভিন্ন ভাগে বসিয়ে নানা বর্গচক্র (divisional chart) তৈরী করা
হয়। ৩০ ডিগ্রিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে ( সমান ভাগে ) যে বিভিন্ন বর্গগুলি পাওয়া
যায় সেই নামগুলি এই রকম। নামের পাশে বন্ধনীর মধ্যে প্রত্যেক রাশিকে যে কয়টি সমান
ভাগে ভাগ করা হয় তা দেখানো হল।
রাশিচক্র (১); হোরা (২); দ্রেক্কোণ (৩); চতুর্থাংশ (৪); সপ্তাংশ (৭); নবাংশ (৯);
দশাংশ (১০); দ্বাদশাংশ (১২); ষোড়শাংশ (১৬); বিংশাংশ (২০); চতুর্বিংশাংশ (২৪); সপ্তবিংশাংশ
(২৭); ত্রিংশাংশ (৩০); চত্বারিংশাংশ (৪০); অক্ষবেদাংশ (৪৫); ষষ্ঠ্যংশ (৬০)। এই
মোট ১৬ টি বর্গকে ষোড়শ বর্গ বলা হয়। উপরের ১৬ টি বর্গের মধ্যে কয়েকটিকে নিয়ে বিভিন্ন
বর্গ সমষ্টি তৈরী করা হয়। যেমন : রাশি, হোরা, দ্রেক্কোণ, নবাংশ, দ্বাদশাংশ ও ত্রিংশাংশ
নিয়ে ষড়বর্গ। রাশি, হোরা, দ্রেক্কোণ, সপ্তাংশ, নবাংশ, দ্বাদশাংশ ও ত্রিংশাংশ নিয়ে
সপ্তবর্গ এবং রাশি, হোরা, দ্রেক্কোণ, সপ্তাংশ, নবাংশ, দশাংশ, দ্বাদশাংশ, ষোড়শাংশ,
ত্রিংশাংশ ও ষষ্ঠ্যংশ নিয়ে দশবর্গ। এ গুলি জ্যোতিষীরা নানা ভাবে ব্যবহার করে থাকেন।
প্রত্যেকটি বর্গই রাশিচক্রের মত ১২টি অংশে
বিভক্ত। রাশিচক্রের একটি গ্রহ কোন বর্গ বিভাগে কোন ঘরে অবস্থিত হবে সেটা নির্ণয়
করার পদ্ধতি আছে। তবে জ্যোতিষ গ্রন্থে নির্দেশিত বর্গ সরণী ব্যবহার করেও এটা বের
করে নেওয়া যায়। বর্গ গুলির ব্যবহার যে তত্ত্বের উপর নির্ভর করে আছে সেটা হল, রাশিচক্রের
একটি গ্রহ কোন বর্গে যদি বন্ধুর ঘরে বা স্বক্ষেত্রে থাকে তবে তার শুভত্ব বৃদ্ধি
পায়। কোন গ্রহ যদি কোন বর্গ বিভাগে (division) তার নিজের বর্গেই অবস্থিত থাকে তবে
বুঝতে হবে গ্রহটি স্ববর্গে রয়েছে। শত্রুর বর্গে থাকলে ধরতে হবে শত্রুবর্গে অবস্থিত।
এই ভাবে অধিমিত্র বা অধিশত্রুর ( ৫ম অনুচ্ছেদ ) ঘরেও থাকতে পারে। বর্গের মাধ্যমে
গ্রহটির স্থানবল বিচার করা হয়।
উপরে বর্ণিত বর্গ গুলি থেকে জাতকের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও চারিত্রিক গঠন বিচার করা
হয়। যেমন:
রাশি - শরীর ও সামগ্রিক বিচার।
হোরা - সম্পদ, আয়ের উপায়।
দ্রেক্কোণ - ভাই বোন, মৃত্যুর কারণ।
চতুর্থাংশ - শিক্ষা, সামগ্রিক সুখ।
সপ্তাংশ - সন্তান, সন্তান থেকে সুখ।
নবাংশ - স্বামী বা স্ত্রী।
দশাংশ - কর্মক্ষেত্র
দ্বাদশাংশ - পিতামাতা, পিতা মাতার আয়ু।
ষোড়শাংশ - ইচ্ছা, আকাঙ্খা, বাহন সুখ।
বিংশাংশ - আধ্যাত্মিক অগ্রগতি।
চতুর্বিংশাংশ - শিক্ষা বিষয়ে বা শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাপ্তি বা অভীষ্ট সাধন।
সপ্তবিংশাংশ - দুর্ভাগ্য।
ত্রিংশাংশ - মৃত্যু বিচার, রোগ বা অরিষ্টফল। স্ত্রীলোকের স্বভাব।
চতুর্বিংশাংশ - ভাল মন্দ বিচার।
অক্ষবেদাংশ - ব্যক্তির চরিত্র ও ভাল মন্দ।
ষষ্ঠ্যংশ - সামগ্রিক গণনার বিচার।
উপরে উক্ত বিভাগ ছাড়াও অনেক জ্যোতিষী পঞ্চাংশ, ষষ্টাংশ, অষ্টাংশ ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকেন। এগুলি খুবই সূক্ষ্ম বিচার এবং প্রথম শিক্ষার্থীর পক্ষে এ গুলি নিয়ে খুব বেশী মাথা ঘামাবার প্রয়োজন নেই। তবে একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন। যদি জন্ম সময় নির্ভুল ভাবে না জানা যায় তবে বর্গ বিভাগ ভুল হতে পারে। আবার অয়নাংশ কোনটি ঠিক তা নিয়েও বিভ্রান্তি আছে। এ ছাড়াও কোনো শিশুর জন্ম সময় জন্মের ঠিক কোন ক্ষণে নির্দিষ্ট করতে হবে তা নিয়েও বিভিন্ন মত রয়েছে। তবে এত বিভিন্ন বর্গের মধ্যে জ্যোতিষীরা নবাংশ বর্গকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। যদিও রাশিচক্রের গুরুত্ব নবাংশ চক্রের থেকে অবশ্যই বেশী তবুও নবাংশকে ঠিক রাশি চক্রের মতই বিচার করা হয়। এই সব কারণে আমাদের পরবর্তী আলোচনায় আমরা নবাংশ চক্রকে শুধু বিশ্লেষণের মধ্যে রাখব। তবে নাম করা জ্যোতিষীরা বিভিন্ন বর্গকে অত্যন্ত সফল ভাবেই বিচারের কাজে লাগিয়ে থাকেন। বিষয় সম্বন্ধে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করার পরবর্তী পর্যায়ে যারা এই শাস্ত্রের গভীরে প্রবেশ করতে আগ্রহী তারা অবশ্যই এ নিয়ে পড়াশুনা করতে পারেন।
নবাংশ
প্রতিটি রাশির ( মেষ, বৃষ ইত্যাদি ) বিস্তৃতি ৩০ ডিগ্রি করে এটা এখন জানা আছে। এটাকে নয় সমান ভাগে ভাগ করলে, প্রতিটি অংশের মান হয় ৩ ডিঃ ২০ মিঃ করে। এই নয় ভাগের এক একটি অংশই নবাংশ। জন্মকুণ্ডলীতে যেভাবে প্রতিটি গ্রহ একটি নির্দ্দিষ্ট রাশিতে বসিয়ে রাশিচক্র তৈরী করা হয়, ঠিক সেই ভাবে রাশিচক্রের প্রতিটি গ্রহকে একটি নির্দ্দিষ্ট স্থানে বসিয়ে নবাংশচক্র প্রস্তুত করতে হয়। কোন গ্রহ রাশিচক্রে যেখানে আছে সেটা ধরে নিয়ে , নবাংশচক্রে তার অবস্থান কি হবে সেটা স্থির করতে হবে। ধরা যাক, কোন জন্মকুণ্ডলীর রাশিচক্রে বৃহস্পতি তুলার ২৮ ডিগ্রিতে বসে আছে। এখন ৯ ভাগের প্রতিটি অংশ ৩ ডিঃ ২০ মিঃ করে হলে, ২য় অংশ শেষ হয় ৬ ডিঃ ৪০ মিনিটে। ৩য় অংশ শেষ হয় ১০ ডিগ্রিতে। এইভাবে এগোলে ২৮ ডিগ্রি পড়বে ৯ম অংশে। তা হ'লে নবাংশচক্রে বৃহস্পতি কোথায় বসবে ? নিয়ম হল, যেহেতু বৃহস্পতি তুলায় অর্থাৎ চররাশিতে রয়েছে, বৃহস্পতি তুলা থেকে ৯ম ঘর বা মিথুনে বসবে। আগেই বলা হয়েছে, নবাংশচক্র হল ঠিক রাশিচক্রের মতই ছককাটা ১২ টি ভাগ করা একটি কাঠামো এবং লগ্ন ও বাকি ৯টি 'গ্রহ' এর কোনো না কোনো ঘরে বসবে। তুলা রাশি ধরে বৃহস্পতির উদাহরণ দেওয়া হল। এবার ধরা যাক, রাশিচক্রে বৃহস্পতি বৃশ্চিক রাশিতে ২৮ ডিগ্রিতে আছে। ২৯ ডিগ্রি হল ৯ম অংশ; কিন্তু যেহেতু বৃশ্চিক স্থিররাশি, অতএব বৃশ্চিক থেকে ৯ম রাশি বা কর্কট থেকে গণনা শুরু করতে হবে। অতএব কর্কট থেকে ৯ম ঘর অর্থাৎ মীনরাশিতে বৃহস্পতি বসবে। এবার ধরা যাক, রাশিচক্রে বৃহস্পতি ধনুরাশির ২৮ ডিগ্রিতে আছে। যেহেতু ধনু একটি দ্যাত্মক রাশি, এক্ষেত্রে গুণতে হবে, ধনু রাশির ৫ম ঘর অর্থাৎ মেষরাশি থেকে। তা হলে বৃহস্পতি নবাংশচক্রে মেষ থেকে ৯ম রাশি বা ধনুতেই বসবে। তা হলে দেখা গেল, বৃহস্পতি রাশিচক্রে ধনু রাশিতে ছিল এবং নবাংশচক্রেও ধনুতেই বসেছে। যদি কোন গ্রহ রাশিচক্র এবং নবাংশচক্রে একই রাশিতে অবস্থান করে, সেই গ্রহকে বলা হয় বর্গোত্তম গ্রহ। এতে গ্রহটি শক্তিশালী হয় এবং সাধারণতঃ শুভ ফলপ্রদ হয়।
নবাংশচক্র একটি সম্পূর্ণ প্রতীকী বিন্যাস। এটা করার যুক্তি সাধারণভাবে বোধগম্য নয়, তবে শাস্ত্রকারদের বিধান ত মানতে হবে।
অনুশীলনের জন্য যে কুণ্ডলীটি ৪র্থ অনুচ্ছেদের ২ক চিত্র তে দেখান হয়েছে, সেটা নেওয়া যাক। এখানে বৃহস্পতি রয়েছে বৃশ্চিক রাশিতে ১ ডিগ্রি ১২ মিনিটে, যেটা নয় ভাগের প্রথম ভাগেই আছে। বৃশ্চিক একটি স্থির রাশি বলে, এখানে গণনা শুরু হবে বৃশ্চিকের ৯ম রাশি অর্থাৎ কর্কট থেকে। কর্কট থেকে প্রথম রাশি অর্থাৎ কর্কটেই বৃহস্পতি বসবে। কর্কট যেহেতু বৃহস্পতির তুঙ্গস্থান, অতএব বৃহস্পতি নবাংশে তুঙ্গী। এতে গ্রহটি জোরাল হল। নবাংশকেও রাশির মতই বিচার করা হয়। অন্যান্য গ্রহগুলি বসিয়েও দেখা যেতে পারা, ঠিক হচ্ছে কি না।
৪র্থ অনুচ্ছেদে লগ্ন বের করার যে ১নং উদাহরণটি
দেওয়া হয়েছে এবং যেটির রাশিচক্র ৪(১) চিত্রে দেখানো হয়েছে, তার নবাংশচক্র ৬(৪)
চিত্রে দেখান হল।
চিত্র ৬(৪)
প্রাথমিক ভাবে অনাবশ্যক শুষ্ক তত্ত্বকে এড়িয়ে চলার জন্য অয়নাংশ সম্বন্ধে বিশদভাবে কিছু বলা হয় নি। তবে এটুকু বলে রাখা ভাল যে, অয়নাংশ সম্বন্ধে বিখ্যাত জ্যোতিষীদের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ আছে। ভারতে সাধারণতঃ লাহিড়ী বা রমণের অয়নাংশ অনুসরন করা হয়। কিন্তু এই দুই অয়নাংশের মান এক নয়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৬১ সালের ১লা জানুয়ারীতে লাহিড়ী অয়নাংশ ২৩ ডিগ্রি ১৮ মিনিট ৩৮ সেকেণ্ড কিন্তু রমণের মতে এটা হবে ২১ ডিগ্রি ৫০ মিনিট ১৭ সেকেণ্ড। তফাৎ ১ ডিঃ ২৮ মিঃ ২ সেঃ। তাই কোন গ্রহের স্ফুট (longitude) লাহিড়ী অয়নাংশ অনুযায়ী যদি হয় ১৯ ডিঃ ২০ মিঃ, তবে রমণের মত অনুযায়ী সেটা হবে ২০ ডিঃ ৪৮ মিঃ ( সেকেণ্ডের অংশ বাদ দিয়ে )। অর্থাৎ প্রথমোক্ত মতে গ্রহটি ৬ষ্ঠ নবাংশগত কিন্তু ২য় মতে ৭ম নবাংশে অবস্থিত। রাশিকে যত সূক্ষ্ম ভাবে ভাগ করা হবে, এই তফাৎ ততই প্রকট হবে। তবে এখন অধিকাংশ জ্যোতিষী লাহিড়ী অয়নাংশ মেনে চলেন বলেই মনে হয়।
তা হ'লে দাঁড়াল, প্রথমে কোন গ্রহ প্রতিটি
ভাগ ৩ ডিগ্রি ২০ মিনিট করে ৯টি ভাগের কত নম্বর ভাগে পড়ছে সেটা বের করতে হবে। এর
পরে রাশিচক্রে যদি গ্রহটি চর, স্থির বা দ্যাত্মক রাশিতে অবস্থিত থাকে, তা হ'লে
যথাক্রমে সেই রাশি থেকে, সেই রাশির ৯ম রাশি থেকে বা সেই রাশির ৫ম রাশি থেকে গুণতে
শুরু করে তত রাশিতে গ্রহটিকে বসাতে হবে। এইভাবে লগ্ন ও বাকি ৯টি গ্রহকে বসালেই
রাশিচক্রের অনুরূপ নবাংশ্চক্র তৈরী হবে।
যদিও বলা হয়েছে, নবাংশ থেকে শুধু স্বামী বা স্ত্রীর বিচার করা হয়, কিন্তু জ্যোতিষীরা
জাতকের অন্যান্য বিষয় বিচার করার জন্যও নবাংশ চক্রকে রাশিচক্রের মতই ব্যবহার করে
থাকেন। তাই অন্যান্য বর্গ বিভাগের চেয়ে নবাংশ চক্রের গুরুত্ব সাধারণভাবে অনেক বেশী।
মূলত্রিকোণ
কোনো কোনো রাশির কিছু অংশকে বিশেষ কিছু গ্রহের মূলত্রিকোণ বলা হয়। যেমন, রবির মূলত্রিকোণ সিংহের প্রথম ২০ ডিগ্রি; চন্দ্রের মূলত্রিকোণ বৃষের ৪ থেকে ২০ ডিগ্রি; মঙ্গলের মূলত্রিকোণ মেষের প্রথম ১২ ডিগ্রি; বুধের মূলত্রিকোণ কন্যার ১৬ ডিগ্রি থেকে ২০ ডিগ্রি; বৃহস্পতির মূলত্রিকোণ ধনুর প্রথম ১০ ডিগ্রি; এইভাবে শুক্র - তুলার প্রথম ১৫ ডিগ্রি; শনি - কুম্ভের প্রথম ২০ ডিগ্রি; রাহু - কুম্ভ রাশি এবং কেতু - সিংহ রাশি। তবে বিভিন্ন মতে কয়েক ডিগ্রির তারতম্য দেখা যায়।
তুঙ্গস্থান
এ ছাড়াও প্রত্যেকটি গ্রহের একটি করে উচ্চ (exalted) বা তুঙ্গক্ষেত্র আছে। রবির তুঙ্গস্থান মেষরাশি; চন্দ্রের তুঙ্গস্থান বৃষরাশি; এইভাবে, মঙ্গলের - মকর; বুধের - কন্যা; বৃহস্পতির - কর্কট; শুক্রের - মীন; শনির - তুলা; রাহুর - মিথুন ও কেতুর - ধনু। পরাশরের মতে রাহুর তুঙ্গস্থান বৃষ ও কেতুর তুঙ্গস্থান বৃশ্চিক। উপরি উক্ত রাশিগুলিতে গ্রহগুলি একটি বিশেষ অবস্থানে সুতুঙ্গী (most exalted) হয়।
রবি মেষের ১০ ডিগ্রিতে; চন্দ্র বৃষের ৩ ডিগ্রিতে; মঙ্গল মকরের ২৮ ডিগ্রিতে; বুধ কন্যার ১৫ ডিগ্রিতে; বৃহস্পতি কর্কটের ৫ ডিগ্রিতে; শুক্র মীনের ২৭ ডিগ্রিতে; শনি তুলার ২০ ডিগ্রিতে; রাহু মিথুনের ২০ ডিগ্রিতে এবং কেতু ধনুর ২০ ডিগ্রিতে সুতুঙ্গী।
তুঙ্গক্ষেত্র অতিক্রম করার পরেই গ্রহগুলির শক্তি ক্রমশঃ কমতে থাকে। এইসব গ্রহকে বলা হয় অবরোহী। তুঙ্গস্থানের দিকে যখন কোনও গ্রহ এগিয়ে চলে তখন তাকে বলা হয় আরোহী বা তুঙ্গাভিলাষী। এইসব গ্রহ যত তুঙ্গক্ষেত্রের দিকে অগ্রসর হয় তত শক্তিশালী হয়। তবে প্রাথমিকভাবে ফল বিচারের জন্য খুব বেশী সূক্ষবিচারে না গিয়ে মোটামুটি ভাবে সম্পূর্ণ রাশিকেই গ্রহটির স্বক্ষেত্র, মূলত্রিকোণ ( মূলত্রিকোণকে আনন্দস্থানও বলা হয় ) বা তুঙ্গস্থান বলা যায়। যে সব রাশিগুলি গ্রহের তুঙ্গস্থান, ঠিক বিপরীতে অব্স্থিত রাশি সেই সব গ্রহের নীচস্থান। যেমন, মঙ্গল মকর রাশিতে তুঙ্গী (exalted) এবং বিপরীত রাশি কর্কট মঙ্গলের নীচস্থান (place of debilitation)। শুক্র মীনে তুঙ্গী এবং বিপরীত রাশি কন্যা শুক্রের নীচস্থান। নীচস্থানে কোনও গ্রহ থাকলে, সেটা দুর্বল হয় এবং সেটা সাধারণতঃ অশুভ ফল দেয়। কোনও গ্রহ স্বক্ষেত্রে বলবান, মূলত্রিকোণে তার থেকেও বলবান এবং তুঙ্গস্থানে সবচেয়ে বেশী শক্তিশালী|
সাধারাণভাবে শুভ গ্রহ শক্তিশালী হলে শুভ ফলের আধিক্য হয় এবং অশুভ গ্রহ শক্তিশালী হলে অশুভ ফলের হ্রাস হয়। অতএব জন্মকুণ্ডলীতে গ্রহরা যত শক্তিশালী হয় ততই ভাল।
অস্তগত গ্রহ
সব গ্রহের মধ্যে রবিই একমাত্র দীপ্ত। রবির খুব কাছে কোনো গ্রহ এলে রবির রশ্মিতে সেটা নিস্প্রভ হয়ে পড়ে। রবির দুই পাশে সাড়ে সাত ডিগ্রি করে মোট ১৫ ডিগ্রি অংশ রবির দীপ্ত্যংশ। এই অংশের মধ্যে কোন গ্রহ অবস্থিত হলে সেটা অস্তগত (combust) হয়। এই ধরণের গ্রহ সাধারণত শুভ ফল দেয় না। তবে কোন কোন সময়ে বুধের ক্ষেত্রে এই নিয়মের ব্যতিক্রম দেখা যায় বলে জ্যোতিষীরা মত প্রকাশ করেছেন।
গ্রহদের বল নির্ণয়
শুভগ্রহ কতটা ভাল ফল দেবে সেটা নির্ভর করবে গ্রহটির অবস্থান ছাড়াও তার শক্তির উপর। এমন কি অশুভ গ্রহও শক্তিশালী হলে অশুভ ফলের হ্রাস হয়। কোন গ্রহের বল নির্ণয়ের জন্য ছয়টি বিভিন্ন শক্তির উৎস কাজে লাগিয়ে প্রত্যেকটি গ্রহের জন্য আলাদা করে বল গণনা করতে হবে। এই ছয়টি নির্ণায়ককে বলা হয় ষট্বল। কোন গ্রহের সামগ্রিক বল হবে এই ছয়টি বলের যোগফল। এই ছয়টি হ'ল : - (১) স্থানবল (positional strength); (২) দিক্বল (directional strength) ; (৩) কলাবল (temporal strength); (৪) নৈসর্গিক বল (permanent strength); (৫) চেষ্টাবল (motional strength) ; (৬) দৃক্বল (aspect strength)। এর প্রত্যেকটির আবার বিভিন্ন ভাগ আছে। এগুলি ধরে প্রতিটি গ্রহের বল সংখ্যার আকারে বের করা যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ ও শ্রমসাধ্য ব্যাপার। এই প্রসঙ্গে বি. ভি. রমণ প্রণীত graha and bhava balas বইটি দেখা যেতে পারে। তবে বিশদ ভাবে না হলেও এর প্রত্যেকটির সম্বন্ধে মোটামুটি একটা ধারণা করা যাক।
(১) স্থানবল - এটা বের করার জন্য গ্রহটি রাশিচক্রে কোথায় অবস্থান করছে সেটা দেখতে হবে। যদি কোন গ্রহ বন্ধুর ঘরে, স্বক্ষেত্রে, মূলত্রিকোণে বা তুঙ্গীক্ষেত্রে অবস্থিত হয়, তবে তার বল বেশী হবে। বন্ধুর ঘরের চেয়ে স্বক্ষেত্রে, স্বক্ষেত্রের থেকে মূলত্রিকোণে, মূলত্রিকোণের চেয়ে তুুঙ্গক্ষেত্রে এবং সুতুঙ্গী অবস্থায় গ্রহটির বল সবচেয়ে বেশী। গ্রহটি কোন বর্গে রয়েছে ( ৬ষ্ঠ অনুছেদ ) সেটাও দেখে নিতে হবে।
(২) দিক্বল - কিছু গ্রহ লগ্ন থেকে কয়েকটি ঘরে বসলে তার দিক্বল বেশী হয়। যেমন বুধ ও বৃহস্পতি লগ্নে, রবি ও মঙ্গল ১০ম ভাবে, চন্দ্র ও শুক্র ৪র্থ ভাবে এবং শনি ৭ম ভাবে বলশালী।
(৩) কলাবল - চন্দ্র, মঙ্গল ও শনি রাত্রি বেলা এবং রবি, বৃহস্পতি ও শুক্র দিনের বেলা বেশী শক্তিশালী হয়। কলাবলের এ রকম আরও কারণ রয়েছে।
(৪) নৈসর্গিকবল - এই নিয়মে বল বের করতে গেলে মনে রাখতে হবে যে, কিছু গ্রহ প্রকৃতিগত ভাবেই অন্য কতকগুলি গ্রহ থেকে শক্তিশালী। যেমন রবি চন্দ্র থেকে এবং শুক্র বৃহস্পতি থেকে বেশী বলশালী। এইভাবে বেশী থেকে কম বল অনুযায়ী সাজালে দাঁড়ায় : - রবি, চন্দ্র, শুক্র, বৃহস্পতি, বুধ, মঙ্গল এবং শনি। অর্থাৎ নৈসর্গিক বলের হিসাবে শনি সব থেকে কম শক্তিশালী।
(৫) চেষ্টাবল - রবি ও চন্দ্র মকর, কুম্ভ, মীন, মেষ, বৃষ ও মিথুন রাশিতে চেষ্টা বলযুক্ত হয়। মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনি বক্রী হলে বা পূর্ণচন্দ্রের সঙ্গে অবস্থিত হলে চেষ্টা বলযুক্ত হয়।
(৬) দৃক্বল - কোন গ্রহ শুভ গ্রহের দ্বারা দৃষ্ট হলে দৃক্বলে বলী হয় এবং অশুভ গ্রহের দৃষ্টি দৃক্বল হ্রাস করে।
জন্মকুণ্ডলী মোটামুটি বিচারের জন্য এত পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে প্রতিটি নিয়ম অনুযায়ী গ্রহের বল বিচারের প্রয়োজন নেই। সাধারণতঃ কোনো গ্রহ রাশিচক্রে শত্রুর না মিত্রের ঘরে কোথায় অবস্থিত, শুভ বা অশুভ কোন গ্রহের দ্বারা দৃষ্ট কি না, অস্তগত কি না, নবাংশ বল কি রকম এবং চন্দ্রের ক্ষেত্রে কৃষ্ণ না শুক্ল পক্ষের চন্দ্র ইত্যাদি দেখে নিলেই চলে। অনেক ছক পরীক্ষা করতে করতে একটা সূক্ষদৃষ্টি (intuition) তৈরী হয়, যাতে এক নজরেই কোন গ্রহের বল সম্বন্ধে অনেকটাই ধারণা করা সম্ভব।
যে বারটি রাশির কথা আগে বলা হয়েছে, সে গুলি বেষ্টন করে ২৭ টি নক্ষত্র রয়েছে। ৩৬০ ডিগ্রিতে যদি ২৭ টি নক্ষত্র থাকে তবে এক একটি নক্ষত্রের ব্যপ্তি ১৩ ডিগ্রি ২০ মিনিট করে অর্থাৎ মেষরাশির শুরু থেকে ১৩ ডিগ্রি ২০ মিনিট অন্তর পর পর একটি করে নক্ষত্র রয়েছে। নক্ষত্রগুলির নাম ও সংখ্যা হ'ল - অশ্বিনী (১); ভরণী (২); কৃত্তিকা (৩); রোহিণী (৪); মৃগশিরা (৫); আর্দ্রা (৬); পুনর্বসু (৭); পুষ্যা (৮); অশ্লেষা (৯); মঘা (১০); পূর্বফাল্গুনী (১১); উত্তরফাল্গুনী (১২); হস্তা (১৩); চিত্রা (১৪); স্বাতী (১৫); বিশাখা (১৬); অনুরাধা (১৭); জ্যেষ্ঠা (১৮); মূলা (১৯); পূর্বাষাঢ়া (২০); উত্তরাষাঢ়া (২১); শ্রবণা (২২); ধনিষ্ঠা (২৩); শতভিষা (২৪); পূর্ব্বভাদ্রপদ (২৫); উত্তরভাদ্রপদ (২৬); রেবতী (২৭)।
এই ২৭ টি নক্ষত্রের প্রত্যেকটির একটি করে অধিপতি গ্রহ আছে। এই গ্রহগুলির ক্রম হ'ল - কেতু, শুক্র, রবি, চন্দ্র, মঙ্গল, রাহু, বৃহস্পতি, শনি ও বুধ। অর্থাৎ ১ম নক্ষত্র অশ্বিনীর অধিপতি গ্রহ কেতু; ভরণী নক্ষত্রের অধিপতি গ্রহ শুক্র; কৃত্তিকার অধিপতি রবি - এই ভাবে চলে ৯ নং নক্ষত্র অশ্লেষার অধিপতি উপরি উক্ত ক্রমে ৯ম গ্রহ বুধ। এরই পুনরাবৃত্তি হবে। অর্থাৎ ১০ নং নক্ষত্র মঘার অধিপতি আবার কেতু, পূর্ব্বফাল্গুনীর শুক্র - এই ভাবে চলে ১৮ নং নক্ষত্র জ্যেষ্ঠার অধিপতি আবার ৯ম গ্রহ বুধ। এই নিয়ম অনুযায়ী মূলার ( ১৯ নং নক্ষত্র ) অধিপতি কেতু এবং সবশেষে রেবতীর ( ২৭ নং নক্ষত্র ) অধিপতি বুধ।
প্রাচীন জ্যোতিষী সত্যাচার্যের মতে , একটি নির্দিষ্ট ঘটনা কখন ঘটবে সেটা বের করার জন্য ঐ ঘটনার সঙ্গে সম্বন্ধ যুক্ত গ্রহ কোন নক্ষত্রে অবস্থান করছে সেটা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ| আগেই বলা হয়েছে এক একটি নক্ষত্রের বিস্তৃতি ১৩ ডিঃ ২০ মিঃ করে। অতএব মেষের প্রথম ১৩ ডিঃ ২০ মিঃ অশ্বিনী নক্ষত্রের স্থান; পরের ১৩ ডিঃ ২০ মিঃ ভরণী নক্ষত্র। মেষের ( মোট ৩০ ডিগ্রি ) আর বাকি রইল ৩ ডিঃ ২০ মিঃ। এই ৩ ডিঃ ২০ মিনিট ও পরের রাশি বৃষের ১০ ডিগ্রি এই মোট ১৩ ডিঃ ২০ মিঃ পরের নক্ষত্র কৃত্তিকার স্থান। এই ভাবে এগোলে বোঝা যায়, প্রতিটি রাশিতে ৩ টি করে নক্ষত্র পড়েছে। কোন জাতকের কোষ্ঠিতে কোন গ্রহ কোন নক্ষত্রে আছে সেটা এখন বোঝা সহজ। ধরা যাক কারও জন্ম সময়ে রবি মেষের ১০ ডিগ্রিতে অবস্থান করছে। তবে তার রবি আছে ১ নং অশ্বিনী নক্ষত্রে। যদি কারও বৃহস্পতি সিংহের ২০ ডিগ্রিতে থাকে, তবে তার বৃহস্পতির অবস্থান ১১ নং পূর্ব্বফাল্গুনী নক্ষত্রে। এই ভাবে সব গ্রহের নক্ষত্রসংখ্যা বের করতে হবে। কোনও একটি কোষ্ঠী পরীক্ষা করলে, গ্রহের উপরে যে সংখ্যাগুলির উল্লেখ দেখা যায় সেটা হল নক্ষত্রসংখ্যা। প্রতিটি নক্ষত্রের বিস্তৃতি ১৩ ডিগ্রি ২০ মিনিট। এটাকে ৪ ভাগে ভাগ করলে প্রতিটি ভাগ ৩ ডিগ্রি ২০ মিনিট করে নক্ষত্রের এক একটি পাদ ; অর্থাৎ প্রতিটি নক্ষত্রকে ৪ টি পাদে ভাগ করা যায়, প্রতি পাদের বিস্তৃতি ৩ ডিগ্রি ২০ মিনিট করে।
নক্ষত্রের বৈশিষ্ট্য ও প্রভাব সম্বন্ধে জ্যোতিষশাস্ত্রে সবিস্তারে কিছু বলা নেই। তবে একটি গ্রহ যে নক্ষত্রে আছে, রাশিচক্রে তার অধিপতির অব্স্থান ও গুণাগুণের উপর নির্ভর ক'রে অনেক সময়েই বিচার করা হয়। কোন কোন জ্যোতিষী মুলতঃ নক্ষত্রের উপরে নির্ভর করেই ফলাফল বলেন। এটাই নক্ষত্র জ্যোতিষ (stellar astrology)।
গণ নির্ণয়
বিয়ের ব্যাপারে একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়। পাত্র বা পাত্রীর কি গণ? গণ তিন রকম হয়। দেবগণ, নরগণ, দেবারিগণ বা রাক্ষসগণ। কি গণ সেটা নির্ভর করবে পাত্র বা পাত্রীর কোষ্ঠীতে চন্দ্র কোন নক্ষত্রে রয়েছে তার উপরে। চন্দ্র যে যে নক্ষত্রে থাকলে ঐ তিন গণ হয় সেটা নীচে দেওয়া হল।
দেবগণ - অশ্বিনী, মৃগশিরা, পুনর্বসু, পুষ্যা,
হস্তা, স্বাতী, অনুরাধা, শ্রবণা ও রেবতী।
নরগণ - ভরণী, রোহিণী, আর্দ্রা, পূর্বফাল্গুনী, উত্তরফাল্গুনী, পূর্ব্বাষাঢ়া, উত্তরাষাঢ়া,
পূর্বভাদ্রপদ ও উত্তরভাদ্রপদ।
রাক্ষসগণ - কৃত্তিকা, অশ্লেষা, মঘা, চিত্রা, বিশাখা, জ্যেষ্ঠা, মূলা, ধনিষ্ঠা ও
শতভিষা।
৪র্থ অনুচ্ছেদে চিত্র ২(ক) তে দেখান জন্মকুণ্ডলীতে চন্দ্র ৯ নম্বর নক্ষত্রে রয়েছে। ৯ নম্বর হল অশ্লেষা নক্ষত্র। অতএব এই জাতকের গণ হল রাক্ষসগণ।
বিংশোত্তরী দশা নির্ণয়
প্রতিটি মানুষ জন্মের সময় থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত কয়েকটি দশা অন্তর্দশা ইত্যাদি ভোগ করে। এগুলির এক একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। কোন সময়টা কেমন যাবে, সেটা শুধু তার কোষ্ঠিতে গ্রহের অবস্থানের উপর নির্ভরশীল নয়। সেই সময়ে কোন দশা অন্তর্দশা সে ভোগ করছে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গ্রহ শুভ বা অশুভ থাকলেও একটি নির্দিষ্ট সময় ছাড়া সেগুলি ঠিক সেভাবে ফল দেয় না। জ্যোতিষশাস্ত্রের বইতে অনেক রকম দশার কথা বলা আছে - বিংশোত্তরী, অষ্টোত্তরী ইত্যাদি। এদের মধ্যে বিংশোত্তরী দশাই অধিকাংশ জ্যোতিষী মেনে চলেন বলে সেটাই এখানে ব্যাখ্যা করা হবে।
প্রথমেই জানতে হবে যে প্রতিটি গ্রহের জন্য একটি দশাকাল নির্দ্দিষ্ট আছে। সেগুলি হল - কেতু ৭ বছর, শুক্র ২০ বছর, রবি ৬ বছর, চন্দ্র ১০ বছর, মঙ্গল ৭ বছর, রাহু ১৮ বছর, বৃহস্পতি ১৬ বছর, শনি ১৯ বছর ও বুধ ১৭ বছর। সব গুলি সময় যোগ করলে মোট হয় ১২০ বছর। সেই জন্যই এই দশা পদ্ধতির নাম বিংশোত্তরী।
এই দশা নাক্ষত্রিকী, অর্থাৎ জন্ম সময়ে চন্দ্র যে নক্ষত্রে অবস্থান করছে তার উপর নির্ভর করেই দশা নির্ণয় করা হয়। একটি উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাক। ধরা যাক, কোনো ব্যক্তির জন্মসময়ে চন্দ্র মকর রাশির ২৮ ডিগ্রিতে অবস্থান করছে। তা হলে চন্দ্র ২৩ নং ধনিষ্ঠা নক্ষত্রে অবস্থিত। এখন জানা আছে ২৩ নং নক্ষত্র ধনিষ্ঠার অধিপতি গ্রহ মঙ্গল। অতএব বুঝতে হবে ঐ ব্যক্তির মঙ্গলের দশায় জন্ম।
মঙ্গলের মোট দশাকাল ৭ বছর। এই ৭ বছরের কতটা সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে এবং আরও কতটা সময় তাকে ভোগ করতে হবে (balance of dasha) সেটা বের করতে হবে। ধনিষ্ঠা নক্ষত্র মকরের ২৩ ডিঃ ২০ মিঃ থেকে আরও ১৩ ডিঃ ২০ মিঃ অর্থাৎ কুম্ভের ৬ ডিঃ ৪০ মিঃ অবধি বিস্তৃত। যেহেতু চন্দ্র মকর রাশির ২৮ ডিগ্রিতে অবস্থিত, অতএব সেটা ধনিষ্ঠার ৪ ডিঃ ৪০ মিঃ পথ জন্মের আগেই অতিক্রম করে এসেছে। আর বাকি থাকে ( ১৩ ডিঃ ২০ মিঃ - ৪ ডিঃ ৪০ মিঃ ) ৮ ডিঃ ৪০ মিঃ পথ। চন্দ্রের দশা যেহেতু ১০ বছর; তা হলে ১৩ ডিঃ ২০ মিনিটের জন্য ১০ বছরের ধার্য হলে, ৮ ডিঃ ৪০ মিনিটের জন্য কত সময় ? সেটা দাঁড়াবে ৪ বছর ৬ মাস ১৮ দিন। অতএব সেই জাতকের মঙ্গলের দশায় জন্ম এবং তার ভোগ্য দশা ( balance of Mars dasha ) মঙ্গলের ৪ বছর ৬ মাস ১৮ দিন। মঙ্গলের দশা কেটে গেলে তার পর ভোগ্য রাহুর দশা - যেটা হল ১৮ বছরের। এই ভাবে পর পর চলবে।
অন্তর্দ্দশা ও প্রত্যন্তর্দ্দশা গণনা
এক একটি দশার সময়কাল বেশ দীর্ঘ। এর মধ্যে অনেক ঘটনাই ঘটতে পারে। সেইজন্য একটি দশাকে আরও ভাগ করা হয়। একে বলে অন্তর্দ্দশা। যে কোনো গ্রহের অন্তর্দ্দশা সেই গ্রহ থেকে শুরু হয়। উদাহরণ স্বরূপ মঙ্গলের অন্তর্দ্দশা এইরকম - মঙ্গল-মঙ্গল; মঙ্গল-রাহু; মঙ্গল-বৃহস্পতি; মঙ্গল-শনি; মঙ্গল-বুধ; মঙ্গল-কেতু; মঙ্গল-শুক্র; মঙ্গল-রবি ও মঙ্গল-চন্দ্র। বোঝাই যাচ্ছে এই অন্তর্দ্দশাগুলি গ্রহের ক্রমিক সংখ্যা অনুযায়ী ঘুরে আসছে। উক্ত প্রতিটি অন্তর্দ্দশার একটা সময়সীমা আছে। সেটা হিসাব করা খুব সহজ। বিংশোত্তরী দশার মোট ১২০ বছরের মধ্যে মঙ্গলের জন্য নির্দ্দিষ্ট ৭ বছর। অতএব মঙ্গল-মঙ্গল অন্তর্দ্দশার সময় ( ৭x৭ ) / ১২০ বছর বা ৪ মাস ২৭ দিন। মঙ্গল-রাহু অন্তর্দ্দশার সময় কত ? রাহুর জন্য নির্দ্দিষ্ট ১৮ বছর, অতএব মঙ্গল-রাহু হবে ( ৭x১৮ ) /১২০ বছর বা ১ বছর ১৮ দিন। এইভাবে এগোতে হবে। তবে বাস্তব ক্ষেত্রে কোনো জন্ম-কুণ্ডলী তৈরী করে দশা-অন্তর্দ্দশা নির্ণয়ের জন্য এত হিসাব করার প্রয়োজন নেই। সবই chart করে ephemeris এ দেওয়া আছে। সেখান থেকে দেখে নিলেই হ'ল।
এই অন্তর্দ্দশারও আবার বিভাগ আছে। সেগুলি হ'ল প্রত্যন্তর্দ্দশা, সূক্ষদশা ও প্রাণদশা। উপরের উদাহরণ অনুযায়ী, মঙ্গল-মঙ্গল এর প্রন্ত্যন্তর্দ্দশা হবে মঙ্গল-মঙ্গল-মঙ্গল, মঙ্গল-মঙ্গল-রাহু, মঙ্গল-মঙ্গল-বৃহস্পতি ইত্যাদি। ঠিক অন্তর্দশা বের করার নিয়ম অনুসরণ করে প্রত্যন্তর্দ্দশাও অনায়াসেই বের করা যেতে পারে। মঙ্গল-মঙ্গল-মঙ্গল-এর প্রত্যন্তর্দ্দশা কত সময়ের ? মঙ্গল-মঙ্গল অন্তর্দশা মোট ৪ মাস ২৭ দিন। অতএব মঙ্গল-মঙ্গল-মঙ্গল-এর সময়কাল হবে ( ১৪৭ দিন x ৭/১২০ = ৮ দিন ১৩ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট)। এইভাবে মঙ্গল-মঙ্গলের বাকি প্রত্যন্তর্দ্দশা বের করা যেতে পারে। নীচে সেটা দেওয়া হল। মিলিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
মঙ্গল-মঙ্গল-মঙ্গল = ৮ দিন - ১৩ ঘঃ - ৪৮ মিঃ
মঙ্গল-মঙ্গল-রাহু = ২২ দিন - ১ ঘঃ - ১২ মিঃ
মঙ্গল-মঙ্গল-বৃহস্পতি = ১৯ দিন - ১৪ ঘঃ - ২৪ মিঃ
মঙ্গল-মঙ্গল-শনি = ২৩ দিন - ৬ ঘঃ - ৩৬ মিঃ
মঙ্গল-মঙ্গল-বুধ = ২০ দিন - ১৯ ঘঃ - ৪৮ মিঃ
মঙ্গল-মঙ্গল-কেতু = ৮ দিন - ১৩ ঘঃ - ৪৮ মিঃ
মঙ্গল-মঙ্গল-শুক্র = ২৪ দিন - ১২ ঘঃ
মঙ্গল-মঙ্গল-রবি = ৭ দিন - ৮ ঘঃ - ২৪ মিঃ
মঙ্গল-মঙ্গল-চন্দ্র = ১২ দিন - ৬ ঘঃ
সব গুলি যোগ করলে মোট ১৪৭ দিন হবে।
একই ভাবে এর পরের অন্তর্দশা অর্থাৎ মঙ্গল-রাহুর প্রন্ত্যন্তর্দশাও বের করা যেতে
পারে।
অনেক জ্যোতিষী শুধুমাত্র অন্তর্দ্দশা অবধি বের করেন; আবার কেউ কেউ প্রত্যন্তর্দ্দশাও গণনা করে থাকেন। তবে কোন ঘটনা ঘটার সময় নির্ভুল ভাবে বের করতে হলে, প্রত্যন্তর্দ্দশা বের করাই যুক্তিযুক্ত। এর পরের ভাগ গুলি গবেষণার কাজে ব্য্বহার করা ছাড়া বাস্তবে খুব প্রয়োজনীয় নয়। তবে প্রত্যন্তর্দশা বের করে ফল নির্দেশ করতে হলে জন্ম সময় অবশ্যই নির্ভুল ভাবে জানা থাকা দরকার। কোন ব্যক্তির জন্ম সময় যেটা পাওয়া যায়, অনেক সময়েই সেটা নির্ভুল নয়। সঠিক জন্ম সময় ঠিক কোন ক্ষণ সেটা নিয়ে মতভেদ তো আছেই; তা ছাড়াও জন্ম মুহূর্ত অনেক ব্যস্ততার মধ্যে প্রায়ই ঠিক ভাবে লিখে রাখা হয় না এবং যে ঘড়ি ধরে সময় লেখা হচ্ছে, সেটা নির্ভুল ভাবে চলতে নাও পারে। মনে রাখতে হবে ৪ মিনিট সময় কম বেশীর জন্য লগ্ন ১ ডিগ্রি পিছিয়ে আসতে বা এগিয়ে যেতে পারে। সেই জন্য অভিজ্ঞ জ্যোতিষীরা অতীতের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা থেকে জন্ম সময় সংশোধন (rectification of birth time) করে নেন। তারপর সেই সংশোধিত জন্ম সময় ধরে ভবিষ্যতের ফল নির্দেশ করেন। তবে এর জন্য যথেষ্ট পারদর্শিতা প্রয়োজন।
লগ্নকে ১ নং ধরলে, লগ্ন (১ম), ৪র্থ, ৭ম ও ১০ম ভাবকে কেন্দ্র (quadrangular or angular houses) বলা হয়। ১ম, ৫ম ও ৯ম ভাবকে ত্রিকোণ (trinal or triangular houses) বলে। অতএব দেখা যাচ্ছে লগ্নকে কেন্দ্র ও কোণ দুই বলা যায়। এই দুইয়ের মধ্যে লগ্নকে কেন্দ্র হিসাবেই ধরা হয়। তা হলে ৫ম ও ৯ম শুধু ত্রিকোণ ভাব।
পরাশরের মতে কেন্দ্রের অধিপতি যদি কোন নৈসর্গিক শুভগ্রহ ( অর্থাৎ বৃহস্পতি, শুক্র, বুধ এবং শুক্ল পক্ষের চন্দ্র ) হয় তবে তা অশুভ। আবার কেন্দ্রের অধিপতি যদি কোন অশুভ গ্রহ ( রবি, মঙ্গল ও শনি ) হয় তবে তা শুভফলপ্রদ। এই হিসাবে, সিংহলগ্নের ক্ষেত্রে শুক্র যেহেতু ১০ম কেন্দ্র বৃষ রাশির অধিপতি অতএব অশুভ। একই ভাবে মিথুন ও কন্যা লগ্নের বৃহস্পতি ( যথাক্রমে ৭ম, ১০ম এবং ৪র্থ, ৭ম কেন্দ্রের অধিপতি ) ইত্যাদি অশুভ। মেষলগ্নে চন্দ্র ৪র্থ স্থানের অধিপতি এবং যেহেতু কৃষ্ণপক্ষের চন্দ্র অশুভ, অতএব কোনো ব্যক্তির কুণ্ডলীতে যদি লগ্ন মেষ হয় এবং চন্দ্র কৃষ্ণপক্ষের হয় তবে সেই চন্দ্র অশুভ হয়ে ৪র্থ কেন্দ্রের অধিপতি হওয়ার ফলে শুভ ফলদায়ক।
কেন্দ্রপতি ও কোণপতির যোগ
' লক্ষ্মীস্থানং ত্রিকোণঞ্চ বিষ্ণুস্থানঞ্চ কেন্দ্রকম'। ও ১ম, ৪র্থ, ৭ম ও ১০ম এই চারটি কেন্দ্র সুখসংজ্ঞক (বিষ্ণুস্থানও বলা হয়) আবার ৫ম ও ৯ম স্থান ধনসংজ্ঞক (লক্ষ্মীস্থানও বলা হয়)। কোন কোন লগ্নের পক্ষে কিছু গ্রহ একই সঙ্গে কোণ ও কেন্দ্রের অধিপতি। যেমন, বৃষলগ্নের শনি (৯ম ও ১০ম ভাবের অধিপতি); কর্কট ও সিংহ লগ্নের মঙ্গল (যথাক্রমে ৫ম ১০ম ও ৪র্থ ৯ম ভাবের অধিপতি); তুলা লগ্নের শনি (৪র্থ ও ৫ম ভাবের অধিপতি) এবং মকর ও কুম্ভ লগ্নের শুক্র (যথাক্রমে ৫ম ১০ম ও ৪র্থ ৯ম ভাবের অধিপতি) একই সঙ্গে কোণ ও কেন্দ্রের অধিপতি। অতএব ঐ সব লগ্নের পক্ষে উক্ত গ্রহগুলি শুভ ফলদায়ক হবে যদি অন্য ভাবে অশুভত্ব প্রাপ্ত না হয় বা দুর্বল না হয়। কেন্দ্র ও কোণের অধিপতির এই সম্বন্ধকে রাজযোগ বলা যয়। এখানে রাজযোগ বলতে বুঝতে হবে এই যোগ ধন সম্মান ইত্যাদি পার্থিব উন্নতির কারক; আধ্যাত্মিক অর্থে রাজযোগ নয়।
এখানে মনে রাখা দরকার, এই সব ভাবের অধিপতি যদি ৩য়, ৬ষ্ঠ বা ১১শ স্থানেরও অধিপতি হয় তবে এই যোগ ভঙ্গ হয়। এই কারণে মেষলগ্নের ক্ষেত্রে বৃহস্পতি ও শনি ৯ম ও ১০ম পতি হওয়া সত্বেও তাদের সম্বন্ধ রাজযোগকারক হয় না - যেহেতু মেষ লগ্নের ক্ষেত্রে শনি ১০ম ভাব ছাড়াও ১১শ ভাবেরও অধিপতি। তবে অন্য শুভ গ্রহের সংস্পর্শে এই দোষ কেটে যেতে পারে বলে বলা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে শনি বৃহস্পতি সম্পূর্ণ রাজযোগকারক না হলেও আংশিক রাজযোগ কারক হতেই পারে। এই গ্রহ সংস্থানে অর্থ ও সম্মান দুয়েরই বৃদ্ধি হয় ব'লে একে রাজযোগ বলা হয় এবং এই গ্রহদের বলা হয় যোগকারক গ্রহ। একই ভাবে ৪র্থ-৭ম, ৫ম-৭ম, ৭ম-৯ম ভাবের অধিপতির যোগাযোগও শুভ ফলদায়ক হয়, তবে ৪র্থ-৫ম, ৯ম-১০ম এর মত নয়।
দুঃস্থান
লগ্ন থেকে ৬ষ্ঠ, ৮ম ও ১২শ ভাবকে দুঃস্থান বলা হয়। এদের মধ্যে ৮ম নিকৃষ্টতম। কোন জন্মকুণ্ডলীতে এই সমস্ত ভাবে বেশীসংখ্যক গ্রহ থাকলে জীবনে তার সুখী হবার সম্ভাবনা কম এবং পরমায়ুও সাধারণতঃ বেশী হবার কথা নয়। দুঃস্থানস্থ গ্রহ বা ভাবাধিপতি রোগ, শত্রুতা, অর্থব্যয় ও জীবনে নানা ধরণের বাধাবিপত্তি ও ঝঞ্ঝাট সৃষ্টি করে। ফল বিচারের সময় এইগুলি দৃষ্টিতে রাখতে হবে। দুঃস্থান সম্বন্ধে পরে বিশদ ভাবে বলা হবে।
উপচয়
৩য়, ৬ষ্ঠ, ১০ম ও ১১শ ভাবকে উপচয় বলে। এ সব ভাবে সব গ্রহই কিছু না কিছু ভাল ফল দেয়। বিশেষ করে ১১শে সব গ্রহই শুভ ফল প্রদান করে। তবে ফল শুধুই শুভ হবে এটা ঠিক নয়। এদের মধ্যে ৬ষ্ঠ একই সঙ্গে দুঃস্থান এবং উপচয়। অর্থাৎ ৬ষ্ঠ স্থান কোন ব্যক্তির পক্ষে শুভ অশুভ দুইই হতে পারে। তবে সাধারণভাবে ৬ষ্ঠ স্থান শুভর থেকে অশুভ ফলই বেশী প্রদান করে।
১ম, ৪র্থ, ৭ম ও ১০ম ভাবকে যেমন কেন্দ্র এবং ৫ম ও ৯ম ভাবকে কোণ বলে অভিহিত করা হয়, তেমনি ২য়, ৫ম, ৮ম ও ১১শ ভাবকে পণফর (cadent houses) এবং ৩য়, ৬ষ্ঠ, ৯ম ও ১২শ ভাবকে অপক্লিম (succeedent houses) বলা হয়। এদের মধ্যে ৫ম ও ৯ম যেহেতু কোণ, অতএব এই দুই ভাবকে পণফর ও অপক্লিম থেকে বাদ দেওয়া হয়। তবে এই সব নাম শুধু শাস্ত্রীয় সংজ্ঞা হিসাবেই গুরুত্বপূর্ণ; ফল বিচারে এদের খুব প্রয়োজন নেই।
৩য়, ৬ষ্ঠ ও ১১শ স্থানকে এক সঙ্গে 'ত্রিষড়ায়া' বলে। এদের দোষযুক্ত বলে অভিহিত করা হয়। ৩য় স্থানকে ঠিক দুঃস্থান বলা না হলেও স্থান হিসাবে খুব শুভ ফলদায়ক বলে ধরা হয় না। অনেকে এই স্থানকে কিছুটা দুঃস্থান হিসাবেই গণ্য করেন।
এক একটি লগ্নের পক্ষে এক একটি গ্রহ শুভ বা অশুভ। এখানে কিন্তু আধিপত্য হিসাবে শুভ বা অশুভ বুঝতে হবে। যেমন বৃহস্পতি একটি নৈসর্গিক শুভ গ্রহ। যে কোন লগ্নের পক্ষেই তার শুভত্ব কিছুটা থাকবে। কিন্তু তুলা লগ্নের পক্ষে বৃহস্পতি ৬ষ্ঠ পতি হওয়ায় এবং একই সঙ্গে ৩য় স্থানের অধিপতি হওয়ায় এই লগ্নের ক্ষেত্রে বৃহস্পতিকে কার্যতঃ অশুভ (functional malefic ) বলে ধরা হবে। এক্ষেত্রে বৃহস্পতি অধিপতি অনুযায়ী শুভ ফল দেবে না, তবে নৈসর্গিক শুভ গ্রহ হিসাবে তার শুভত্ব ত থাকবেই। এখানে বৃহস্পতির অবস্থান দেখে সামগ্রিকভাবে তার ভালমন্দ বিচার করতে হবে। এইভাবে প্রতিটি লগ্নের ক্ষেত্রে গ্রহদের শুভাশুভত্ব বর্ণনা করা হচ্ছে। এগুলি মনে রাখলে কোষ্ঠি বিচারে সুবিধা হবে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ৬ষ্ঠ , ৮ম ও ১২শ স্থানকেই মুলতঃ দুঃস্থান হিসাবে ধরা হয়। কিন্তু "ত্রিষড়ায়" অর্থাত্ ৩য়, ৬ষ্ঠ ও ১১শ স্থানের অধিপতিকেও জ্যোতিষীরা পাপ বলে চিহ্নিত করেছেন। ৬ষ্ঠ যে দুঃস্থান এ কথা আগেই বলা হয়েছে। ৩য়, ৬ষ্ঠ ও ১১শ তিনটিই উপচয় স্থান এবং এদের অধিপতি কিছু না কিছু শুভ ফল দেয় বলেই মনে করা হয়। বহু প্রচলিত “একাদশে বৃহস্পতি” কথাটার অর্থ বোঝার জন্য জ্যোতিষশাস্ত্র জানার প্রয়োজন নেই। ১০ম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোণ এবং কেন্দ্রপতির সম্বন্ধ রাজযোগ সৃষ্টি করে। কিন্তু কোনও কোণ বা কেন্দ্রপতি যদি একই সঙ্গে ৩য়, ৬ষ্ঠ ও ১১শ-এর কোন একটির অধিপতি হয় তবে রাজযোগ ভঙ্গ হয় বলে বলা হয়েছে। নীচে মেষ লগ্ন আলোচনার সময়ে (ছ) নং ধারায় এর উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। যদিও ১১শ আয়স্থান এবং ১১শে অবস্থিত সব গ্রহই কিছু শুভ ফল দেয় তবুও ১১শের অধিপতিকে কেন পাপ বলা হয় তা বোঝা কঠিন। পরাশরের এটাই মত। হয় ত একাদশের অধিপতি শুধুই আয় বা বৈষয়িক চিন্তা মনে জাগায় বলে অহংকার ও অধঃপতন ডেকে আনার সম্ভাবনা থাকে এবং এর পরিণাম অশুভ, এটাও হতে পারে। ফল বিচারে ২য় ও ১২শ পতিকে 'পরতন্ত্রী' হিসাবে ধরা হয়। অর্থাত্ যেখানে সে অবস্থান করবে বা যার সঙ্গে সে যুক্ত থাকবে সেই অনুযায়ী ফল দান করবে।
নীচে প্রতিটি লগ্নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অধিপতি গ্রহ শুভ না অশুভ সেটা বলা হল। এটা থেকে অত্যন্ত সাধারণভাবে একটা ফলাফলের আভাস পাওয়া যাবে মাত্র। একটি গ্রহ কোন লগ্নে কোন ভাবের অধিপতি শুধু তার উপরই ফল নির্ভর করে না। গ্রহটির অবস্থান কি, কি গ্রহের দ্বারা দৃষ্ট, গ্রহটির বল কি রকম ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে সামগ্রিক ভাবে ফল বিচার করতে হবে।
১। মেষলগ্ন
(ক) এই লগ্নের রবি ৫ম পতি। কোণপতি হিসাবে অবশ্যই শুভ। রবি বলবান হলে এর দশায় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সফলতা আসতে পারে। সম্মান ও সুনাম বৃদ্ধি হতে পারে ইত্যাদি।
(খ) মেষলগ্নে চন্দ্র ৪র্থ কেন্দ্রের অধিপতি; অতএব ক্ষীণচন্দ্র হলে পরাশরের মতে শুভ ফলদায়ক। কিন্তু শুক্লপক্ষের চন্দ্র হলে শুভ নয়। তবে কেন্দ্রাধিপত্য দোষ চন্দ্রের ক্ষেত্রে অতটা প্রযোজ্য নয়। চন্দ্র শুভ হলে গৃহলাভ, গৃহসুখ, আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল ইত্যাদি হতে পারে। কিন্তু চন্দ্র দুর্বল হলে অন্যান্য অশুভ ফল ছাড়াও পিতার শারীরিক সমস্যা হওয়া অসম্ভব নয়; কারণ, ৪র্থ স্থান হ'ল ৯ম ( পিতৃস্থান ) স্থানের ৮ম ( নিধন ) স্থান।
(গ) মঙ্গল লগ্নপতি ও ৮ম পতি। লগ্নপতি হিসাবে শুভ, আবার মূলত্রিকোণ লগ্ন হওয়ায় মঙ্গল মুলতঃ লগ্নপতি হিসাবেই ফল দেবে। মঙ্গল সবল হ'লে মঙ্গলের দশায় সুস্বাস্থ্য লাভ, সম্মান বৃদ্ধি, জমি ও অর্থাগম ইত্যাদি হতে পারে। কিন্তু মঙ্গল দুর্বল হ'লে অর্শ, মূত্রাশয় ইত্যাদি সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
(ঘ) বুধ এই লগ্নে ৩য় ও ৬ষ্ঠ পতি। দুটি অশুভ স্থানের অধিপতি হিসাবে শুভ নয়। তবে ৩য় ও ৬ষ্ঠ দুই-ই উপচয় স্থান। কাজেই কিছু শুভ ফল দিতেই পারে। তবে বুধ যেহেতু বালক গ্রহ এবং যে গ্রহের দ্বারা প্রভাবিত হয় সেই গ্রহেরই ফল দেয় বলে বলা হয়েছে, অতএব শুভ গ্রহের সঙ্গে যুক্ত বা শুভ দৃষ্ট হলে শুভ ফল দিতে পারে। তবে একটা কথা আগেও উল্লেখ করা হয়েছে। ৩য়, ৬ষ্ঠ, ৮ম বা ১২শ পতি হলে সেই সমস্ত গ্রহদের অন্য কোন গ্রহের সঙ্গে সম্পর্ক শূন্য হয়ে আলাদা ভাবে বসে থাকাই ভাল। উদাহরণ স্বরূপ, মেষ লগ্নের একটি ছকে বুধ ( ৩য় ও ৬ষ্ঠ পতি ) ১১শে কুম্ভ রাশিতে অবস্থিত এবং কোন গ্রহের দ্বারা দৃষ্ট নয় বা কোন গ্রহকে দৃষ্টিও দিচ্ছে না। জাতকের এই বুধের দশা সামগ্রিক ভাবে খুব খারাপ কাটে নি।
(ঙ) বৃহ্রপতি ৯ম ও ১২শ পতি। যেহেতু বৃহস্পতির মূলত্রিকোণ লগ্ন থেকে ৯ম স্থান ধনুরাশি; অতএব বৃহস্পতি শুভ। বৃহস্পতি বলবান হলে এর দশায় নানা ভাবে ভাগ্যোন্নতি সম্ভব। কিন্তু বৃহস্পতি দুর্বল বা পাপগ্রহ যুক্ত হলে পিতার দুর্ভাগ্য বা পিতার শারীরিক সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
(চ) এই লগ্নের শুক্র ২য় ও ৭ম পতি। দুটি-ই মারকস্থান। আবার শুক্র নৈসর্গিক শুভ গ্রহ হয়ে ৭ম কেন্দ্রের অধিপতি হওয়ায় অশুভ। অতএব শুক্র সম্পূর্ণই অশুভ ফলদায়ক। তবে সব সময় তত্ব অনুযায়ী ফল হয় না। এটা দেখা গেছে, যদি শুক্র অত্যন্ত বলশালী হয় ও অন্যান্য অশুভ সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকে, তবে শুক্রের দশা জাগতিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের পক্ষে শুভই হয়। কিন্তু দুর্বল হলে, চক্ষুরোগ বা শারীরিক সমস্যা হতে পারে। অনেক জ্যোতিষী বলেন, শুক্র মারক হলেও মেষ লগ্নের জাতকের সাধারণতঃ মৃত্যু ডেকে আনে না। সেটা অনেক সময়েই করে শনি।
(ছ) শনি ১০ম ও ১১শ ভাবের অধিপতি। নৈসর্গিক পাপগ্রহ হয়ে ১০ম পতি হওয়ায় শুভ কিন্তু ১১শ পতি হিসাবে অশুভ। এ কারণেই মেষলগ্ন জাতকের বৃহস্পতি ও শনির ( ৯ম কোণ ও ১০ম কেন্দ্রের অধিপতি হওয়া সত্বেও ) রাজযোগকারক নয় বলা হয়েছে। বৃহস্পতি ও শনি যদি সংযুক্ত থাকে, তবে বৃহস্পতির সংযোগে শনির শুভত্ব বৃদ্ধি হবে ঠিকই কিন্তু শনির সংস্পর্শে বৃহস্পতি অশুভ হয়ে পড়বে এবং এই বৃহস্পতি ভাল ফল দেবে না। তবে বৃহস্পতি ও শনি যদি অন্য শুভ গ্রহের দ্বারা প্রভাবিত হয় তবে শুভ ফল দিতেও পারে।
২। বৃষলগ্ন
(ক) এই লগ্নে রবি নৈসর্গিক পাপগ্রহ হয়ে ৪র্থ পতি হওয়ায় শুভ। রবি বলবান হলে এই গ্রহের দশায় চাকরীতে উন্নতি ইত্যাদি হতে পারে। কিন্তু রবি দুর্বল বা অশুভত্ব প্রাপ্ত হলে, বন্ধু বা আত্মীয়দের সঙ্গে মন মালিন্য, শারীরিক সমস্যা ইত্যাদি হওয়া অসম্ভব নয়।
(খ) চন্দ্র ৩য়পতি হিসাবে শুভ নয়। তবে শক্তিশালী হলে শুভ ফল দিতে পারে।
(গ) মঙ্গল ৭ম ও ১২শ পতি। কেন্দ্রপতি হওয়ায় শুভ কিন্তু মূলত্রিকোণ ১২শ রাশিতে পড়ায় অশুভত্বই বেশী। তবে ১২শ স্থান যেহেতু পরতন্ত্রী, সেই হেতু মঙ্গল ৭ম-এর ফলই দেবে। তবে মঙ্গল যেহেতু ৭ম পতি, তাই এর শুভত্ব অশুভত্বের উপর বিবাহিত জীবন বা স্বামী / স্ত্রী সম্পর্কিত বিষয় অনেকটাই নির্ভরশীল। মঙ্গলের জোর থাকলে ব্যবসার উন্নতিও হতে পারে।
(ঘ) বুধ ২য় ও ৫ম পতি হওয়ায় শুভ। মূলত্রিকোণ ৫ম স্থানে হওয়ায় বুধের বল থাকলে এর দশায় জাতকের পরীক্ষা, পুত্র-কন্যা ইত্যাদি সম্পর্কে ভাল ফল দিতে পারে। তবে বুধ যেহেতু অন্য গ্রহের দ্বারা প্রভাবিত হয় বেশী, তাই শুভ গ্রহের সঙ্গে যুক্ত হলে অর্থাগম বা সঞ্চয় বিষয়ে শুভ ফল দিতে পারে। রবি ও বুধের যোগ অন্য ভাবে অশুভত্ব প্রাপ্ত না হলে কিছুটা রাজযোগের ফল দিতে পারে। ভাবার্থ রত্নাকরের মতে বৃষ লগ্নে বুধ ও শুক্র এবং ৭মে অর্থাৎ বৃশ্চিক রাশিতে বৃহস্পতি থাকলে, বুধের দশায় প্রবল রাজযোগের ফল হবে।
(ঙ) বৃহস্পতির মূলত্রিকোণ ধনু রাশি ৮ম স্থানে হওয়ায় বৃহস্পতি এই লগ্নের পক্ষে অশুভ। ১১শ পতি হিসাবে স্থান বিশেষে কিছু ভাল ফল দিলেও অশুভত্বই বেশী। তবে শক্তিশালী বৃহস্পতি অর্থ প্রাপ্তিতে সাহায্য করতে পারে এবং এই দশায় বড় ভাইএর ( ১১শ স্থান থেকে বড় ভাই / বোনের বিচার হয় ) ভাগ্য বৃদ্ধিও হতে পারে।
(চ) শুক্র লগ্নপতি হিসাবে শুভ হলেও যেহেতু মূলত্রিকোণ তুলা রাশিতে অর্থাৎ ৬ষ্ঠে পড়েছে তাই শুক্র এই লগ্নের পক্ষে লগ্ন পতি হওয়া সত্বেও সমভাবাপন্ন বলা হয়েছে। তবে খুব জোরালো হলে অবশ্যই ভাল ফল দেবে।
(ছ) শনি ৯ম ও ১০ম পতি হওয়ায় কেন্দ্র ও কোণ পতি হিসাবে একাই রাজযোগের ফল দেবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় অনেক জ্যোতিষীর লব্ধ অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে শনি কুম্ভে অর্থাৎ ১০মে না থাকলে খুব ভাল ফল দেয় না। ভাবার্থ রত্নাকর গ্রন্থেও শনিকে রাজযোগকারী বলা হয় নি। জ্যোতিষশাস্ত্রের অনেক তত্বই বাস্তবে অন্য রকম ফল দেয়। সব সময়েই অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞানের দ্বারা যাচাই করে নেওয়া উচিত।
৩। মিথুন লগ্ন
(ক) রবি ৩য় পতি হিসাবে শুভ ফলদায়ক নয়। তবে জোড়ালো হলে কর্মক্ষমতা বাড়াতে পারে, তবে একগুঁয়ে ভাবও বৃদ্ধি পেতে পারে।
(খ) চন্দ্র ২য় পতি। যদি চন্দ্র বলবান হয়, তবে অর্থাগম, বিবাহ, পড়াশুনা ইত্যাদি বিষয়ে শুভ ফল হতে পারে। কিন্তু চন্দ্র দুর্বল হলে বিপরীত ফল হবে। চন্দ্র ২য় পতি হলেও মারকত্ব দোষ খুব একটা থাকবেনা যদি না অন্য কোন মারক লক্ষণাক্রান্ত গ্রহের সঙ্গে সংযুক্ত হয়।
(গ) মঙ্গল এই লগ্নে ৬ষ্ঠ ও ১১শ পতি। দুটো স্থানই অশুভ। তবে ভাবার্থ রত্নাকর গ্রন্থে বলা হয়েছে, মিথুন লগ্নের মঙ্গল ও চন্দ্র ১১শ স্থানে অর্থাত্ মেষ রাশিতে অবস্থিত হলে আয় বৃদ্ধি হবে। আবার শনি ৯মে অর্থাৎ কুম্ভে থাকলে বিশেষ ধনযোগ হবে। ১১শ পতি ( ১১শ থেকে আয় বিচার হয় ) ২য় পতি ( ২য় স্থান সঞ্চয় নির্দেশ করে ) সহ ১১শে থাকলে এবং ৯ম পতি ( ৯ম থেকে ভাগ্য বিচার হয় ) শনি ৯মে বসে ১১শে দৃষ্টি দিলে যে ধন লাভ হবে এতে আর আশ্চর্য কি ! তবে মঙ্গল যদি লগ্নকে বা লগ্নপতিকে দৃষ্টি দেয় বা অন্য পাপ গ্রহের সঙ্গে সংযুক্ত হয় তবে জাতকের শরীরের ক্ষতি করতে পারে; কঠিন পীড়া হওয়াও অসম্ভব নয়।
(ঘ) বুধ লগ্ন ও ৪র্থ পতি। বুধ শক্তিশালী হলে, জাতকের স্বাস্থ্য ভল হবে, আত্মীয় বন্ধুদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকবে। কিন্তু বুধ দুর্বল বা অশুভ গ্রহ দ্বারা যুক্ত হয়ে অশুভ স্থানে থাকলে, শরীর খারাপ ছাড়াও নানা অশান্তি ডেকে আনতে পারে।
(ঙ) বৃহস্পতি ৭ম ও ১০ম কেন্দ্রের অধিপতি হিসাবে কেন্দ্রাধিপত্য দোষে দুষ্ট। তবে বৃহস্পতি উপচয় স্থানে অথবা কোণে ( ৫ম বা ৯ম ) থাকলে সাধারণতঃ খারাপ ফল দেয় না। তা না হলে বিবাহ বা পারিবারিক ক্ষেত্রে নানা বিপর্যয় ঘটতে পারে।
(চ) এই লগ্নের ক্ষেত্রে শুক্রকেই ( ২য় ও ১২শ পতি ) একমাত্র শুভ গ্রহ হিসাবে ধরা হয়। ১২শ পতি হিসাবে শুক্র 'পরতন্ত্রী'; কাজেই ৫ম পতি হিসাবে ফল দেবে। শুক্র শক্তিশালী হলে পরীক্ষায় সাফল্য, সন্তানের শুভ ইত্যাদি ঘটতে পারে। তবে শুক্র অশুভ গ্রহ দ্বারা প্রভাবিত হলে মহিলা সংক্রান্ত ব্যাপারে জড়িয়ে পড়া অসম্ভব নয়।
(ছ) এখানে শনি ৮ম ও ৯ম পতি হওয়ায় শুভ না অশুভ তা নিয়ে মতভেদ আছে। তবে মূলত্রিকোণ ৯মে পড়ায়, শনি বলশালী হলে শনির দশায় ভাগ্যোন্নতি হতে পারে। বৃহ্রপতির কেন্দ্রাধিপত্য দোষ এবং শনির ৮ম পতিত্ব হেতু শনি ও বৃহস্পতির যোগ রাজযোগকারী হবে না বলে বলা হয়েছে।
৪। কর্কট লগ্ন
(ক) রবি এই লগ্নে ২য় পতি। শক্তিশালী হলে রবি অর্থযোগ, পারিবারিক শুভত্ব, ক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি ঘটাতে পারে। আবার রবি দুর্বল হলে ঠিক বিপরীত ফলও ফলতে পারে। চক্ষুরোগও হতে পারে।
(খ) চন্দ্র লগ্ন পতি। চন্দ্র পক্ষবলে বলী এবং অবস্থানগত ভাবে শুভ হলে চন্দ্রের দশায় শরীর ও মন সুস্থ থাকবে। সম্মান বৃদ্ধি পাবে। মাতার ক্ষেত্রেও শুভ। কিন্তু দুর্বল চন্দ্র এর ঠিক উল্টো ফলও দিতে পারে।
(গ) মঙ্গল কর্কট লগ্নে কোণ ও কেন্দ্রপতি বলে ( ৫ম ও ১০ম পতি ) একাই রাজযোগকারী। মঙ্গল শক্তিশালী হলে মঙ্গলের দশা খুব ভাল যাবার কথা। সাধারণতঃ লগ্নপতি লগ্নে অবস্থিত হলে ভাল হবার কথা; কিন্তু এখানে চন্দ্র কর্কট রাশিতে নীচস্থ হওয়ায় ফল কি হবে ? লগ্নপতি নীচস্থ হয়ে লগ্নে থাকলে ফল ভাল না হবারই কথা। কিন্তু অনেকের বক্তব্য হল মঙ্গল কর্কট রাশিতে থাকলে, তার স্বক্ষেত্র বৃশ্চিক থেকে ৯মে এবং মেষ থেকে ৪র্থ কেন্দ্রে থাকার জন্য ভাল ফলই দেবে।
(ঘ) বুধ এই লগ্নে ৩য় ও ১২শ পতি হওয়ায় অশুভ। তবে অনেকে মনে করেন যদি বুধ এমন কোন ঘরে থাকে যাতে ৩য় ও ১২শ এই দুই অশুভ ঘরের অশুভত্ব কেটে যায় তবে বুধ ভাল ফল দেবে। যেমন, বুধ যদি লগ্নের ৫মে অর্থাত্ বৃশ্চিকে থাকে তবে বুধ ৩য় ঘরের থেকে ৩য়ে এবং ১২শ ঘরের ৬ষ্ঠে থাকবে। অতএব ৩য় ও ১২শ ঘরের থেকে দুঃস্থানে থাকায় ঐ দুই ঘরের অধিপতি হিসাবে বুধের অশুভত্ব কেটে যাবে এবং বুধ ভাল ফল দেব। এটা পরীক্ষা সাপেক্ষ।
(ঙ) বৃহস্পতি এখানে ৬ষ্ঠ ও ৯ম পতি; যেহেতু মূলত্রিকোণ ৬ষ্ঠ স্থান ধনুতে পড়েছে, অতএব বৃহস্পতি খুব ভাল ফল দেবে না। তবে অনেকে বলেন যেহেতু বৃহস্পতি লগ্নপতি চন্দ্রের মিত্র অতএব অবস্থান বিশেষে কিছু ভাল ফল দিতে পারে।
(চ) শুক্র ৪র্থ ও ১১শ পতি। কেন্দ্রাধিপত্য দোষ এবং ১১শের অধিপতি হওয়ায় দু দিক থেকেই অশুভ। তবে এটা দেখা গেছে শুক্র শক্তিশালী হলে অর্থভাগ্য খারাপ হয় না; যান বাহনেরও মালিক হতে পারে। তবে দুর্বল শুক্র শরীর এবং অর্থ দুই এর পক্ষেই খারাপ।
(ছ) শনি ৭ম ও ৮ম পতি। মূলত্রিকোণ ৮ম স্থানে হওয়ায় শনি অশুভ কিন্তু ৭ম কেন্দ্রের অধিপতিত্ব হেতু শুভ ( কেন্দ্রপতি অশুভ গ্রহ হওয়ায় )। দুই-এ মিলে শনিকে সম বলা যেতে পারে। তবে শনির ৮ম পতিত্ব হেতু, অশুভ গ্রহের সংযোগ না থাকলে পরমায়ু বৃদ্ধি হওয়া সম্ভব।
৫। সিংহ লগ্ন
(ক) রবি লগ্নপতি। রবি শক্তিশালী হলে জাতক সুনাম, সম্মান, সুস্বাস্থ্য ইত্যাদি ভোগ করবে; কিন্তু রবি যদি দুর্বল হয় এবং অশুভ গ্রহের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত হয় তবে এর বিপরীত ফলও হতে পারে। দুর্নামও রটতে পারে।
(খ) চন্দ্র এখানে ১২শ পতি। জোরালো হলে চন্দ্র কিছুটা শুভ ফল দিতে পারে। তবে খুব একটা শুভ ফল আশা না করাই ভাল। চন্দ্র ও মঙ্গলের সম্বন্ধ ঘটলে বিদেশে বসবাসের সম্ভাবনা থাকে।
(গ) মঙ্গল ৪র্থ ও ৯ম পতি হওয়ায় একাই রাজযোগকারী গ্রহ। বলশালী মঙ্গল জাতককে সৌভাগ্য, মান-সম্মান, পড়াশুনা বিষয়ে ভাল ফল দিতে পারে। দুর্বল হলে খুব ভাল ফল হবে না।
(ঘ) বুধ ২য় ও ১১শ পতি। বুধের জোর থাকলে এবং অশুভ সংস্পর্শ থেকে মুক্ত থাকলে অর্থলাভ হতে পারে। তবে অশুভ গ্রহের সংযোগে এলে বা শক্তিহীন হলে শরীরের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
(ঙ) বৃহস্পতি ৫ম ও ৮ম পতি। মূলত্রিকোণ ৫ম স্থান ধনু হওয়ায় বৃহ্রপতি ৫ম স্থানের ফলই বেশী দেবে। অতএব শক্তিশালী বৃহস্পতি জাতককে সন্তান, পিতা, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে শুভ ফল দিতে পারে। তবে ৮ম পতিত্ব দোষও থাকায় বৃহস্পতি দুর্বল হলে ভাল ফল হয় ত হবে না।
(চ) শুক্র ৩য় ও ১০ম পতি; ১০ম পতি শুভ গ্রহ হওয়ায় পরাশরের মতে কেন্দ্রাধিপত্য দোষ থাকবে। এখানে শুক্র শুভ গ্রহ নয়। অবস্থান খারাপ হলে বা শুক্র দুর্বল হলে শুক্রের দশায় ভাল ফল কিছু আশা না করাই ভাল।
(ছ) শনি ৬ষ্ঠ ও ৭ম পতি। কেন্দ্রপতি হওয়ায় শুভ কিন্তু ৬ষ্ঠ পতি হওয়ায় শনিকে সম বলে গণ্য করা ভাল। অশুভ শনি নানা ভাবে দুঃখের কারণ হতে পারে।
৬। কন্যা লগ্ন
(ক) রবি এই লগ্নে ১২শ পতি। খুব ভাল ফল আশা করা যায় না। তবে খুব জোরালো হলে কিছু ভাল ফল হতে পারে। দুর্বল রবি চক্ষু পীড়ার কারণ হতে পারে।
(খ) চন্দ্র ১১শ পতি। শক্তিশালী চন্দ্র অর্থাগমের পক্ষে শুভ। তবে দুর্বল হলে শরীরের পীড়া হতে পারে।
(গ) মঙ্গল ৩য় ও ৮ম পতি। অত্যন্ত অশুভ। তবে মঙ্গল শক্তিশালী হলে জাতক দীর্ঘায়ু হতে পারে; কিন্তু দুর্ভোগ থাকবে।(ঘ) বুধ লগ্ন ও ১০ম পতি। লগ্নপতি বলে ১০ম কেন্দ্রের আধিপত্য দোষ থাকবে না। বুধের জোর থাকলে এবং অশুভ গ্রহের সংযোগ হীন হলে ফল ভালই দেবে।
(ঙ) বৃহস্পতি ৪র্থ ও ৭ম পতি হিসাবে কেন্দ্রাধিপত্য দোষ থাকবে। বৃহস্পতি দুর্বল হলে বা অশুভ গ্রহযুক্ত হলে বৃহস্পতির দশায় পারিবারিক সমস্যা হতে পারে। এই লগ্নে বৃহস্পতির ২য়, ৬ষ্ঠ, ৭ম বা ৮ম স্থানে না থাকাই ভাল।
(চ) শুক্র ২য় ও ৯ম পতি। ২য় 'পরতন্ত্রী' হওয়ায় মুলতঃ শুক্র এখানে ৯ম স্থানের ফলই দেবে। অতএব শক্তিশালী হলে শুভ। অশুভ শুক্র অর্থক্ষয় ও ভাগ্য বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।
(ছ) শনি ৫ম ও ৬ষ্ঠ স্থানের অধিপতি। মূলত্রিকোণ ৬ষ্ঠ হওয়ায় শনি শুভ নয়। অশুভ শনি শত্রুভয়, ভবিষ্যত্ সম্ভন্ধে দুঃশ্চিন্তা, কর্মে বাধা ইত্যাদি বয়ে আনতে পারে।
৭। তুলা লগ্ন
(ক) রবি ১১শ পতি হিসাবে শরীরের দিক থেকে কিছুটা অশুভ কিন্তু যদি বল থাকে তবে রবির দশায় অর্থাগম হতে পারে ও অন্যান্য বাসনাও পূর্ণ হতে পারে।
(খ) চন্দ্র ১০ম পতি হওয়ায় পরাশরের মতে ক্ষীণ চন্দ্র হলে শুভ। ৯ম পতি বুধের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত হলে রাজযোগের ফল দিতে পারে; যদিও বুধের ১২শ পতিত্বের জন্য কিছু অশুভ ফলও দিতে পারে।
(গ) মঙ্গল ২য় ও ৭ম পতি। কেন্দ্রপতি বলে কিছুট শুভ হতে পারে; তবে দুই মারক স্থানের অধিপতি হিসাবে যদি দুঃস্থানে ( ৬ষ্ঠ, ৮ম বা ১২শ ) অবস্থিত হয় তবে যথেষ্ট শারীরিক সমস্যা তৈরী করতে পারে।
(ঘ) বুধ ৯ম ও ১২শ পতি। মূলত্রিকোণ ১২শে হওয়ায় ৯ম স্থানের ফল কমই দেবে। তবে ১২শ স্থান 'পরতন্ত্রী'; তাই ৯ম স্থানের ফল বেশ কিছু ফলবে বলে অনেকে মনে করেন। চন্দ্রের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত হলে ৯ম ও ১০ম পতির যোগ হিসাবে কিছু শুভ ফল আশা করা যায়।
(ঙ) বৃহস্পতি ৩য় ও ৬ষ্ঠ স্থানের অধিপতি হিসাবে অশুভ। তবে দুই উপচয়ের অধিপতি হিসাবে কিছু ভাল ফল দেবে। ভাবার্থ রত্নাকর গ্রন্থেও বৃহস্পতিকে সম্পূর্ণ অশুভ বলা হয় নি।
(চ) শুক্র লগ্নপতি ও ৮ম পতি। লগ্নপতি হওয়ায় অবশই শুভ; তবে শুক্র যদি ১২শে অর্থাত্ কন্যা রাশিতে নীচস্থ হয়ে অবস্থান করে তবে কতটা ভাল হবে সন্দেহ।
(ছ) শনি ৪র্থ ও ৫ম পতি; অতএব রাজযোগকারী গ্রহ। শনি বলশালী হলে এবং শুভ দৃষ্ট হলে শনির দশা খুব ভাল ফল দেবে আশা করা যায়।
৮। বৃশ্চিক লগ্ন
(ক) রবি ১০ম পতি হিসাবে শুভ। বলযুক্ত হলে রবি কর্মক্ষেত্রে উন্নতি, সম্মান ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি ইতাদি ফল দিতে পারে।
(খ) চন্দ্র ৯ম পতি হিসাবে শুভ ফল দেবে যদি শক্তিশালী হয়। দুর্বল হলে দুর্ভাগ্য ডেকে আনতে পারে।
(গ) মঙ্গল লগ্ন ও ৬ষ্ঠ পতি। মূলত্রিকোণ ৬ষ্ঠে হওয়ায় মঙ্গলের জোর এবং অবস্থান শুভ না হলে শারীরিক বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
(ঘ) বুধ এই লগ্নে ৮ম ও ১১শ পতি। শরীরের দিক থেকে শুভ নয় তবে বল ও অবস্থান বিশেষে অর্থপ্রাপ্তির পথ সুগম করতে পারে। বলহীন হয়ে অশুভ গ্রহের সঙ্গে যুক্ত হলে, মঙ্গলের বা যে অশুভ গ্রহের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে তাদের দশা অন্তর্দশায় শারীরিক সমস্যা ত হতেই পারে, মৃত্যু হওযাও অসম্ভব নয়।
(ঙ) বৃহস্পতি ২য় ও ৫ম পতি। শুভগ্রহ। বৃহস্পতির জোর থাকলে যথেষ্ট শুভ ফল আশা করা যায়।
(চ) শুক্র ৭ম ও ১২শ পতি। কেন্দ্রপতি হেয়ে নৈসর্গিক শুভ গ্রহ হওয়ায় ভাল ফল দেবার কথা নয়। তবে ২য় ও ৭ম দুই ঘর থেকেই পরিবার, বিবাহ, স্ত্রী ( বা স্বামী ) ইত্যাদি বোঝায়। শুক্রের বল থাকলে এবং অবস্থানগত ভাবে শুভ হলে উক্ত বিষয়ে শুভ ফল দিতে পারে; কিন্তু পাপগ্রহ যুক্ত হলে অবৈধ সংসর্গ ঘটাতে পারে।
(ছ) শনি ৩য় ও ৪র্থ পতি। ৪র্থ কেন্দ্রের অধিপতি হিসাবে শুভ হলেও ৩য় পতি বলে অশুভ। শুভ গ্রহের প্রভাব না থাকলে এখানে শনি খুব ভাল ফল দেবে না।
৯। ধনু লগ্ন
(ক) রবি ৯ম পতি হিসাবে অত্যন্ত শুভ। রবি বলশালী হলে ও অশুভ সংযোগ থেকে মুক্ত থাকলে রবির দশায় জাতকের ভাগ্যোন্নতি, সম্মান ও সৌভাগ্য লাভ ইত্যাদি সম্ভব। রবি দুর্বল হলে ভাগ্য বিপর্যয় ছাড়াও পিতার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে ( রবি পিতৃকারক গ্রহ )।
(খ) চন্দ্র ৮ম পতি হলেও ৮ম পতিত্বের দোষ চন্দ্রকে স্পর্শ করে না বলে শাস্ত্রে বলা হয়েছে। তবে ক্ষীণ চন্দ্র হলে বা অন্য কারণে চন্দ্র দুর্বল হলে জাতকের ক্ষতি হতে পারে; পরমায়ু হ্রাস হতে পারে।
(গ) মঙ্গল ৫ম ও ১২শ পতি এবং মূলত্রিকোণ ৫ম স্থানে হওয়ায় মঙ্গল শক্তিশালী হলে শুভ ফলই দেবে।
(ঘ) বুধ ৭ম ও ১০ম পতি বলে কেন্দ্রাধিপত্য দোষ রয়েছে। তবে রবি ও বুধের সম্বন্ধ ( ৯ম ও ১০ম পতির যোগ ) রাজযোগের ফল দেয় বলে কোন কোন জ্যোতিষী মনে করেন। বুধ দুঃস্থানস্থ হলে শারীরিক অসুস্থতার কারণ হতে পারে, পারিবারিক ক্ষেত্রেও অশান্তি ডেকে আনতে পারে।
(ঙ) বৃহস্পতি লগ্ন ও ৪র্থ পতি। লগ্নপতি হওয়ায় ৪র্থ পতিত্বের দোষ থাকবে না। বৃহ্রপতির জোর থাকলে এবং শুভ ভাবে থাকলে বৃহস্পতির দশায় জাতকের সুখ শান্তি বৃদ্ধি পাবে।
(চ) শুক্র ৬ষ্ঠ ও ১১শ পতি। অশুভ গ্রহের সঙ্গে সংযুক্ত হলে শরীরের সমস্যা তৈরী করতে পারে। তবে শুক্র বলশালী হলে আয়বৃদ্ধি হতে পারে এবং কর্মক্ষেত্রে উন্নতিও হতে পারে।
(ছ) শনি ২য় ও ৩য় পতি। মারক স্থান ও ৩য় স্থানের অধিপতি হিসাবে অশুভ।
১০। মকর লগ্ন
(ক) রবি যদিও ৮ম পতি তবে রবি ৮ম পতিত্বের দোষ থেকে মুক্ত বলে বলা হয়। তবে রবি দুর্বল হলে বা দুঃস্থানস্থ হলে পরমায়ু হ্রাস হতে পারে।
(খ) চন্দ্র ৭ম পতি বলে ক্ষীণ চন্দ্র হলে শুভ। তবে চন্দ্রের মারকত্ব দোষ থাকতে পারে। চন্দ্র যদি ৫ম বা ৭মে থাকে তবে ভাল ফল হবে বলে মনে হয়।
(গ) মঙ্গল ৪র্থ ও ১১শ পতি। কেন্দ্র পতি হিসসবে শুভ হলেও ১১শ পতি হিসবে অশুভ। তবে জোর থাকলে মঙ্গলের দশায় গৃহসুখ ও ধন লাভ হতে পারে। স্বাস্থ্যের ব্যাপারে তত ভাল নয়।
(ঘ) বুধ ৬ষ্ঠ ও ৯ম পতি। মূলত্রিকোণ ৯ম স্থান কন্যা রাশিতে হওয়ায় ৯ম স্থানের ফল দেবে বলে শুভ গ্রহ হিসাবেই ধরা যায়। তবে বুধ অন্য গ্রহের দ্বারা সহজেই প্রভাবিত হয় বলে, পাপগ্রহের সঙ্গে সংযুক্ত থাকলে তত ভাল ফল দেবে না।
(ঙ) বৃহস্পতি ৩য় ও ১২শ পতি হিসাবে অশুভ।
(চ) শুক্র কোণ ও কেন্দ্রপতি ( ৫ম ও ১০ম পতি ) হওয়ায় রাজযোগকারী গ্রহ। তবে ভাল ফল দিতে হলে শুক্রকে অবশ্যই জোরাল হতে হবে।
(ছ) শনি লগ্ন ও ২য় পতি। শনি বলশালী হলে শনির দশায় জাতকের স্বাস্থ্য, সম্মান ও ধন লাভ হতে পারে। আবার শনি আয়ুষ্কারক হিসাবে আয়ুবৃদ্ধি হওয়াও সম্ভব।
১১। কুম্ভ লগ্ন
(ক) রবি ৭ম পতি; অতএব কেন্দ্রপতি হিসাবে শুভ। রবির বল থাকলে এই দশায় জাতকের ব্যবসায় লাভ, উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ ইত্যাদি ফল লাভ হতে পারে।
(খ) চন্দ্র ৬ষ্ঠ পতি বলে অশুভ।
(গ) মঙ্গল ৩য় ও ১০ম পতি। ১০ম পতি হিসাবে হয় ত কিছুটা শুভ কিন্তু ৩য় পতিত্ব হেতু অশুভ। অনেকে বলেন মঙ্গল শুধু ১০ম পতি হলে ভাল ফল দেয় না; সেই সঙ্গে কোণের অধিপতি হলে তবেই শুভ ফলদায়ক।
(ঘ) বুধ ৫ম ও ৮ম পতি; কিন্তু মূলত্রিকোণ ৮ম স্থানে হওয়ায় খুব শুভ নয়। এমন কি অশুভ সংস্পর্শে থাকলে মারক দোষেও দুষ্ট হতে পারে।
(ঙ) বৃহস্পতি ২য় ও ১১শ পতি। বৃহস্পতির বল থাকলে এর দশায় আয়বৃদ্ধি হতে পারে; যদিও শরীরের দিক থেকে শুভ নয়।
(চ) শুক্র এই লগ্নে ৪র্থ ও ৯ম পতি হওয়ায় একাই রাজযোগকারী। শুক্র বলশালী হলে শুক্রের দশায় জাতকের গৃহসুখ, বাহন লাভ, বন্ধু ও আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ এবং নানা ভাবে ভাগ্যোন্নতি হতে পারে।
(ছ) শনি লগ্ন ও ১২শ পতি। পরাশরের মতে ১২শ ভাব 'পরতন্ত্রী' বলে, শনি লগ্ন পতি হিসাবেই ফল দেবে। অতএব শনি শক্তিশালী হলে জাতকের শরীর ভাল যাবে, আধ্যাত্মিক যোগাযোগও হতে পারে, অবশ্য যদি অন্যান্য শুভ যোগ থাকে।
১২। মীন লগ্ন
(ক) রবি ৬ষ্ঠ পতি। দুঃস্থানের অধিপতি হিসাবে শুভ নয়। তবে ৬ষ্ঠ উপচয় স্থান বলে, অবস্থান বিশেষে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাল ফল দিতে পারে। রবি যেহেতু পিতৃকারক গ্রহ এবং জীবনী শক্তিরও কারক অতএব রবির অবস্থান এই লগ্নে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলের সূচক হতে পারে।
(খ) চন্দ্র ৫ম পতি। চন্দ্রের জোর থাকলে এর দশায় জাতকের শুভ ফল লাভ হবে।
(গ) মঙ্গল ২য় ও ৯ম পতি। ২য় ভাব 'পরতন্ত্রী' বলে মঙ্গল ৯ম স্থানের ফলই মুলতঃ দেবে, অতএব শুভ। তবে দুর্বল বা পাপযুক্ত হলে যথেষ্ট দুর্ভাগ্যের কারণ হতে পারে।
(ঘ) বুধ ৪র্থ ও ৭ম পতি; অতএব কেন্দ্রাধিপতির দোষ রয়েছে; দুঃস্থানস্থ ( ৬ষ্ঠ, ৮ম ) হলে বা ২য় স্থানে অবস্থান করলে সুখ-শান্তি ও চাকরীর ক্ষেত্রে অশুভ ফল দিতে পারে।
(ঙ) বৃহস্পতি লগ্ন ও ১০ম পতি। যেহেতু লগ্নপতি অতএব ১০ম কেন্দ্রের অধিপতি হিসাবে অশুভ ফল দেবে না বলেই বলা হয়েছে। বৃহস্পতি শক্তিশালী হলে জাতকের চাকরীর উন্নতি, সম্মান বৃদ্ধি, শুভ যোগাযোগ ইত্যাদি ঘটতে পারে। জাতকের যথেষ্ট নৈতিকতা ও মূল্যবোধ থাকবে।
(চ) শুক্র ৩য় ও ৮ম পতি। যেহেতু ৩য় ও ৮ম স্থান থেকে আয়ু বিচার হয়, অতএব শুক্র শক্তিশালী হলে ও অশুভ গ্রহের সংস্পর্শে না এলে পরমায়ু বৃদ্ধি পাবে।
(ছ) শনি ১১শ ও ১২শ পতি। ১২শ ঘর 'পরতন্ত্রী' বলে ১১শ স্থানের ফল দেবার কথা। এই কারণে শনি শুভ হলে আয়বৃদ্ধি হতে পারে; কিন্তু শরীরের পক্ষে শুভ নাও হতে পারে। দুর্বল শনি ক্ষতিবৃদ্ধি করবে।
তবে এগুলি সাধারণ নিয়ম বলে অনেক জ্যোতিষী মনে করেন। যদিও কোন লগ্নের জন্য কোন গ্রহ শুভ বা অশুভ এটা অবশ্যই জানা দরকার, তবে আক্ষরিক অর্থে এগুলি মেনে চললে অনেক সময়েই ভুল হবার সম্ভাবনা। জ্যোতিষশাস্ত্রে কোন কুণ্ডলীর বিচার সামগ্রিক ভাবে করতে হবে, শুধু কোনো একটি নিয়মকে গুরুত্ব দিয়ে নয়। এই প্রসঙ্গে সুশ্লোকশতকে উক্ত আছে -
গ্রহাঃ খলাঃ খলা নাত্র, সৌম্যাঃ সৌম্যাঃ কদাচন।
তত্তত্স্থানানুসারেণ ভবন্তীহ খলাঃ শুভাঃ ।।
এর অর্থ হল, গ্রহদের মধ্যে শুভ বা অশুভ বলে কিছু নেই, অর্থাত্ শুভ গ্রহ হলেই শুভ ফল দেবে বা অশুভ গ্রহ মাত্রেই অশুভ ফল দেবে এমন কিছু নয়। কোন গ্রহ কোথায় অবস্থিত তার উপরেই শুভাশুভ ফলাফল নির্ভর করে।
(১) আলোচ্য জন্মকুণ্ডলীতে লগ্ন মীন ও রাশি কর্কট ( যেহেতু চন্দ্র কর্কট রাশিতে রয়েছে) । লগ্নপতি বৃহস্পতি ৯মে বৃশ্চিক রাশিতে রয়েছে। বৃশ্চিক রাশির অধিপতি মঙ্গল বৃহস্পতির মিত্র হওয়ায়, বৃহস্পতি বন্ধুর ঘরে অবস্থিত।(২) ৯ম ঘর সবচেয়ে শক্তিশালী ত্রিকোণ (triangular house)। সেখানে বৃহস্পতির অবস্থান বেশ ভাল। আবার গ্রহটি রয়েছে ১৬ নং অর্থাত্ বিশাখা নক্ষত্রে যার অধিপতি বৃহস্পতি নিজেই। নবাংশে বৃহস্পতি কর্কটে নিজের তুঙ্গীক্ষেত্রে অবস্থান করছে। এগুলি সবই বৃহস্পতির পক্ষে ভাল। কিন্তু লগ্ন মীন রাশির ১৫ ডিঃ ৮ মিনিটে হওয়ায় ৯ম ভাবের মধ্যবিন্দু পড়েছে বৃশ্চিক রাশির ১৫ ডিঃ ৮ মিনিটে । যেহেতু বৃহস্পতির অবস্থান ১ ডিঃ ১২ মিঃ অতএব বৃহস্পতি প্রায় ৮ম ও ৯ম ভাবের সন্ধিতে রয়েছে। আবার তার অবস্থান বৃশ্চিক রাশির ১ ডিঃ ১২ মিঃ হওয়ায় বৃহস্পতি বৃশ্চিক রাশির গোড়ায় বা রাশিসন্ধিতে রয়েছে। একে বলে গ্রহের শৈশাবস্থা (state of infancy )। এই শেষের দুই কারণে বৃহস্পতি ঠিক কাঙ্খিত ফল দিতে পারবে না।
(৩) শনি নৈসর্গিক অশুভ গ্রহ। মীন লগ্নের পক্ষে শনি ১১শ (আয়ভাব) ও ১২শ (ব্যয়ভাব) ভাবের অধিপতি। বসে আছে মেষ রাশিতে অর্থাত্ ২য় ভাবে। ২য় ভাব পরিবার, সঞ্চয় ইত্যাদির সূচক। মেষরাশি শনির নীচস্থান হলেও বক্রী হওয়ায় ৭ম অনুচ্ছেদে বর্ণিত নিয়ম অনুসারে চেষ্টাবল যুক্ত হয়েছে। এ জন্য শনি তার দুর্বলতা অনেকটাই কাটাতে পেরেছে। শনি বসে আছে ২নং ভরণী নক্ষত্রে; অধিপতি শুক্র। শুক্র ৭ম ভাবের বা জায়া ( স্বামী বা স্ত্রী ) ভাবের কারক। শনি মঙ্গল ও শুক্রকে দৃষ্টি দিচ্ছে।(৪) ৫ম পতি চন্দ্র ৫ম ঘর কর্কটে রয়েছে। অর্থাত্ চন্দ্র স্বক্ষেত্রে আছে। চন্দ্র থেকে রবির দূরত্ব ৭২ ডিগ্রির বেশী হওয়ায় চন্দ্র এখানে ক্ষীণচন্দ্র নয় এবং কোনও অশুভ গ্রহের দ্বারা দৃষ্টও নয়। ৫ম ঘর একটি ত্রিকোণ এবং ৫ম ভাব থেকে আবেগ, বুদ্ধি ইত্যাদি বিচার করা হয়। আলোচ্য কোষ্ঠীতে চন্দ্র বৃহস্পতির ৯ম দৃষ্টির দ্বারা দৃষ্ট। লগ্ন, লগ্নপতি বৃহস্পতি ও ৫ম পতি চন্দ্র তিনটি কোণে বসে আছে - লগ্ন থেকে ৫মে চন্দ্র, চন্দ্র থেকে ৫মে অর্থাত্ লগ্ন থেকে ৯মে বৃহস্পতি।
(৫) ৩য় ও ৮ম পতি শুক্র ৮ম ঘরে তুলারাশিতে নিজের মূলত্রিকোণে (৭ম অনুচ্ছেদ ) অবস্থিত। রয়েছে ১৬নং বিশাখা নক্ষত্রে - নক্ষত্রের অধিপতি বৃহস্পতি। শুক্র শনির দ্বারা দৃষ্ট। ৩য় ও ৮ম ঘর থেকে আয়ু বিচার হয়। শনিও আয়ুষ্কারক গ্রহ। ৩য় স্থান পরাক্রম, ধৈর্য্য ইত্যাদিরও কারক। এ ছাড়াও শুক্র ৭ম ভাবের (জায়াভাবের) কারক। ৮ম স্থান, আগেই বলা হয়েছে, দুঃস্থানের মধ্যে নিকৃষ্টতম। ৮ম ভাব বাধা, বিপত্তি, বিঘ্ন ইত্যাদির কারক।(৬) ২য় ও ৯ম পতি মঙ্গল ৮ম ঘর তুলায় অবস্থিত। কোনও ভাবের অধিপতির সেই ভাবের দ্বাদশে বসে থাকা সেই ভাবের পক্ষে শুভ নয়। কোনও ভাবের ১২শ স্থান সেই ভাবের ক্ষতি বা ব্যয় সূচনা করে। ৯ম হ'ল ভাগ্যস্থান এবং ২য় পরিবার, সঞ্চয় ইতাদির স্থান। মঙ্গল রয়েছে ১৫নং স্বাতী নক্ষত্রে - নক্ষত্রের অধিপতি গ্রহ রাহু। মঙ্গল শনির দ্বারা দৃষ্ট। রাহুর ৯ম দৃষ্টি ধরলে ( অনেক জ্যোতিষী এটা মানেন না ) শুক্র ও মঙ্গল রাহুর দ্বারা দৃষ্ট।
(৭) ৬ষ্ঠ পতি রবি ১০মে ধনুরাশিতে আছে (অধিপতি বৃহ্রপতি)। ১০ম ভাব চাকরী, কর্ম, জীবিকা ইত্যাদি নির্দেশ করে এবং ৬ষ্ঠ ভাব থেকে প্রতিবন্ধকতা, শত্রু ইত্যাদি বোঝায়। রবি রয়েছে ১৯নং মূলা নক্ষত্রে - অধিপতি কেতু। কেতু রবির ঘর ৬ষ্ঠেই বসে আছে। কেতু ও রবি নৈসর্গিক অশুভ গ্রহ। কেতু ১০নং মঘা নক্ষত্রে আছে - মঘার অধিপতি কেতু নিজে।(৮) ৪র্থ পতি ও ৭ম পতি বুধ ১০ম ভাবে ধনুরাশিতে অবস্থিত। ৬ষ্ঠ পতি রবির সঙ্গে থাকলেও দু'টি গ্রহের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ১৯ ডিগ্রি। বুধ বসে আছে ২০নং পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্রে - অধিপতি শুক্র। ৪র্থ ভাব থেকে মন, মাতা, বিদ্যালাভ, গৃহসুখ ইত্যাদি বিচার্যz। কেতুর ৫ম দৃষ্টি গ্রাহ্য হ'লে (অনেক জ্যোতিষী মানেন না) বুধ ও রবি কেতুর দ্বারা দৃষ্ট।
(৯) রাহু বসে আছে ১২শে ব্যয়ভাবে, কুম্ভরাশিতে। কুম্ভরাশির অধিপতি শনি ২য় ভাবে মেষে। রাহু আছে ২৩নং ধনিষ্ঠা নক্ষত্রে - অধিপতি মঙ্গল। অনেক জ্যোতিষীর মতে ১২শ স্থান রাহুর পক্ষে সবচেয়ে ভাল।(১০) নবাংশ চক্রটি পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, রবি, বৃহস্পতি, শনি, মঙ্গল - এই চারটি গ্রহ নবাংশে তুঙ্গী। অতএব এই গ্রহগুলি পরোক্ষে বল সঞ্চয় করল। নবাংশ লগ্ন বৃশ্চিক। অধিপতি মঙ্গল ৩য় ঘরে বসে আছে। ৩য় উপচয় স্থান। মঙ্গল তুঙ্গী বৃহস্পতি (কর্কট রাশিতে রয়েছে) দ্বারা দৃষ্ট।
আলোচ্য কোষ্ঠীটির বিচারের নিরীখে গ্রহদের অবস্থান, দৃষ্টি ইত্যাদি বিষয়ে উপরে যা বলা হয়েছে, সে সব নিয়ম বা ব্যবহৃত সংজ্ঞা সবই আগে আলোচনা করা হয়েছে। আরও অনেক কিছুই রয়েছে যা আলোচনা করা হয় নি। তবে উপরের পর্যালোচনা একেবারে আক্ষরিক অর্থে না ধরে একটু মন দিয়ে বুঝলে, খুঁটিয়ে দেখলে অনেক ফলাফল বেরিয়ে আসবে। যেমন,
(ক) বৃহস্পতির (লগ্নপতি) লগ্নে দৃষ্টি থাকায় জাতকের শরীর অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও সুগঠিত। লগ্ন মীন রাশিতে ও লগ্নপতি বৃহস্পতি দুইই জলরাশিতে ( মীন ও বৃশ্চিক জলরাশি - ৩য় অনুচ্ছেদ ) অবস্থিত হওয়ায় শরীরে স্থূলত্বের ভাব রয়েছে। নবাংশ লগ্ন বৃশ্চিকের অধিপতি মঙ্গল ৩য়ে মকর রাশিতে তুঙ্গী। এতে জাতকের শরীরের বলিষ্ঠ ভাবই সমর্থিত হয়। ৩য় ভাব থেকে সাহস, পরাক্রম, কোনো কাজে লেগে থাকার ক্ষমতা ইত্যাদি বিচার্য। এই জাতক অত্যন্ত পরিশ্রমী ও সাহসী।(খ) চন্দ্র মনের কারক। চন্দ্র কোনো অশুভ গ্রহ দ্বারা দৃষ্ট নয় এবং স্বক্ষেত্র কর্কটে ৫ম ঘরে অবস্থিত। এটা শুক্লপক্ষের চন্দ্র (যেহেতু রবি ও চন্দ্রের মধ্যে দূরত্ব ৭২ ডিগ্রির বেশী)। এসব কারণে চন্দ্র অত্যন্ত শুভ ও শক্তিশালী। ৫ম ভাব থেকে আবেগ, উদ্ভাবনী শক্তি, বুদ্ধি ইত্যাদি বিচার্য। জাতক অত্যন্ত অনুভূতি প্রবণ এবং চরিত্রে ভণ্ডামীর লেশমাত্র নেই। অন্যের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। তবে চন্দ্রের এ ধরণের অবস্থান অতি সংবেদনশীলতার জন্য জাতককে কোন কোন সময়ে বাস্তব জ্ঞান বর্জিত করে তুলতে পারে।
(গ) ৪র্থ ভাব অন্যান্য অনেক বিষয়ের সঙ্গে গৃহসুখও (domestic peace) নির্দেশ করে। ৪র্থে শনির দৃষ্টি থাকায় এবং ৪র্থ পতি বুধ শত্রুর ঘরে ( ধনু রাশিতে ) অবস্থিত হওয়ায় জাতকের গৃহসুখের অভাব থাকবে।
(ঘ) চন্দ্র আবার আধ্যাত্মিক গ্রহ বৃহস্পতির দ্বারা দৃষ্ট এবং বৃহস্পতি ৯মে ( ৯ম থেকে ধর্ম বিচার হয় ) থাকায় এবং ৯ম দৃষ্টিতে ৫মে অবস্থিত চন্দ্রকে দেখায় (৫ম থেকে ভক্তি ভাবও বিচার হয়), জাতকের মধ্যে সব সময়ে একটা দার্শনিক সুলভ দৃষ্টিভঙ্গী ও সহনশীলতা কাজ করে। অতি বিপদেও ধীর স্থির থেকে নিজের আদর্শে অবিচল থাকে।(ঙ) ১১শ পতি (এবং ১২শ পতি) শনি ( ১১শ স্থান থেকে আয় ও ১২শ থেকে ব্যয় বিচার হয় ) বক্রী হয়ে ২য় স্থানে (সঞ্চয় স্থান) অবস্থান করছে। আবার শনিকে ২য় ও ৯ম পতি মঙ্গলও দৃষ্টি দিচ্ছে (কিন্তু ৮ম ঘর থেকে)। এর দ্বারা বোঝা যায় আয় ভালই হবে, তবে ব্যয়ও যথেষ্ট। এ ছাড়া আয় ও সঞ্চয়ের পথে কিছু বাধা ও বিলম্ব হওয়া অসম্ভব নয়।
(চ) জায়া কারক গ্রহ শুক্র ৮মে (নিকৃষ্টতম দুঃস্থান) অবস্থিত হয়ে শনির দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক অনেকটাই শীতল। এই বিবাহিত জীবনের পরিণতি খুব সুখের না ও হতে পারে।(ছ) কর্মস্থানের (১০ম স্থান) অধিপতি বৃহস্পতি ভাগ্যস্থানে সু-অবস্থিত হওয়ায়, জাতক একটি নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক। তবে বৃহস্পতির বল কম হওয়ায় ( উপরে আলোচিত হয়েছে ) জাতককে চাকরী পেতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। ১০মে ৬ষ্ঠ পতির অবস্থানও এর জন্য দায়ী। ১০মে ৬ষ্ঠপতি রবির অবস্থান কর্মক্ষেত্রে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিরোধ ও শত্রুতা নির্দেশ করে।
বাস্তব ক্ষেত্রে জাতকের জীবনে এ সব কিছুই ঘটেছে। আরও কিছু নিয়ম যেগুলি এখনও আলোচিত হয়নি, সেগুলি থেকে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য বেড়িয়ে আসতো। কোষ্ঠি দেখায় সাফল্য অর্জন করা ২/১ দিনের মধ্যে সম্ভব নয়। সব নিয়ম আয়ত্ব করে অনেক ছক বিশ্লেষণ করতে করতে ধীরে ধীরে এই ক্ষমতা জন্মায়। এটা চেষ্টা ও পরিশ্রম সাপেক্ষ। তবে অনেক কোষ্ঠিতেই সাধারণভাবে কিছু ফলাফল বলতে পারা অল্প চেষ্টাতেই সম্ভব। গভীরে ঢুকে বিচার না করলে কিছু ফল যেমন মিলবে, অনেক ফল নাও মিলতে পারে।
১নং নিয়ম
জন্মকুণ্ডলীতে কোন গ্রহ ফলদান করে মুলতঃ যে বিষয় গুলিকে
কেন্দ্র করে সেগুলি হ'ল (ক) গ্রহটি যে ভাবের অধিপতি তার
ফল; (খ) যে ভাবে অবস্থিত তার ফল; (গ) নিজের কারকত্ব অনুযায়ী
ফল; (ঘ) যে গ্রহদ্বারা দৃষ্ট হচ্ছে বা যে গ্রহের সঙ্গে যুক্ত
আছে তার ফল; (ঙ) যে নক্ষত্রে অবস্থিত তার অধিপতির ফল; (চ)
নবাংশ বা অন্যান্য বর্গে গ্রহটির অবস্থান বিচারের ফল।
৪র্থ অনুচ্ছেদে সংযোজিত চিত্র ২ক তে দেখান জন্মকুণ্ডলীটিকে উদাহরণ হিসাবে নেওয়া যাক। ধরা যাক শনি গ্রহটি। শনি কি ফল দিতে পারে ? শনি এখানে ১১শ ও ১২শ ভাবের অধিপতি - অতএব ১১শ ও ১২শ ভাবের ফল; অবস্থিত ২য় ভাবে - অতএব ২য় ভাবের ফল। ৫ম অনুচ্ছেদে সব গ্রহের সঙ্গে শনিরও কারকত্ব সম্বন্ধে বলা হয়েছে - অতএব তার কিছু ফল; শনি দৃষ্ট হচ্ছে মঙ্গল ও শুক্র দ্বারা - অতএব এদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ায় এদের সম্পর্কিত কিছু ফল; শনি ২নং ভরণী নক্ষত্রে অবস্থিত হওয়ায় এই নক্ষত্রের অধিপতি শুক্রের ফল এবং পরিশেষে শনির নবাংশগত ফল। এতগুলি সম্ভাব্য ফলের মধ্যে, সব দিক বিচার করে যেটি বা যেগুলি ঘটবার সম্ভাবনা সমধিক - সেই ফলই বলতে হবে। এখানেই জ্যোতিষীর মুন্সিয়ানা। কোন ফল কতটা ফলবে এবং কোন ঘটনা কোন সময়ে ঘটবে সেটা সঠিকভাবে নির্দেশ করা খুব কঠিন - অনেক পড়াশুনা এবং দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা না থাকলে সফল হবার আশা কম। তবে সাধারণ কিছু ফল বিশ্লেষণ অপেক্ষাকৃত সহজ।
২নং নিয়ম
বৃহস্পতি, শুক্র, পাপগ্রহের সংযোগহীন বুধ ও শুক্লপক্ষের
চন্দ্র (রবি থেকে চন্দ্রের অবস্থান ৭২ ডিগ্রির বেশী হলে)
নৈসর্গিক শুভ গ্রহ। পরাশরের মতে (যেটা বেশীর ভাগ জ্যোতিষীই
মেনে চলেন) শুভগ্রহ কেন্দ্রের অধিপতি হলে অশুভ ফল দেয়, পক্ষান্তরে
অশুভগ্রহ (এখানে শনি, রবি ও মঙ্গলকে ধরতে হবে) কেন্দ্রাধিপতি
হলে শুভ। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, সিংহ লগ্নের ক্ষেত্রে শুক্র
৩য় ও ১০ম পতি। শুক্র নৈসর্গিক শুভ গ্রহ হয়ে ১০ম কেন্দ্রের
অধিপতি হওয়ায়, সিংহ লগ্নের শুক্র সাধারণভাবে শুভ গ্রহ নয়।
কোণপতি সব সময়েই শুভ। শুভগ্রহের কেন্দ্রাধিপত্য দোষ সম্বন্ধে
পরে আরও বিশদভাবে বলা হবে। কোন ভাবে শুভগ্রহ অবস্থান করলে
বা কোন ভাব শুভগ্রহ দ্বারা দৃষ্ট হলে, সেই ভাবের ফল শুভ
হয়।
তবে এখানে একটা বিশেষ নিয়ম রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, কর্কট
লগ্নের ক্ষেত্রে শুক্রের ৪র্থ পতি (এবং ১১শ পতি) হিসাবে
কেন্দ্রাধিপত্য দোষ রয়েছে; কিন্তু শুক্র যদি জন্মকুণ্ডলীতে
৪র্থে অর্থাত্ তুলা রাশিতে অবস্থিত হয় তবে তার অশুভত্ব কেটে
যাবে যেহেতু সেটা স্বক্ষেত্রে রয়েছে। সব ক্ষেত্রেই এ রকম
ধরতে হবে।
৩নং নিয়ম
কোন ভাবের অধিপতি গ্রহ বন্ধìরাশিতে, স্বক্ষেত্রে, মূলত্রিকোণে
বা তুঙ্গক্ষেত্রে বসে থাকলে সেই ভাবের শুভ হয়। কিন্তু কোন
গ্রহ শুভই হোক বা অশুভই হোক (বিশেষ করে অশুভ গ্রহ) যদি নীচস্থ
হয়ে বা শত্রুগৃহগত হয়ে কোনো ভাবে অবস্থিত হয় তবে সেই ভাবের
হানি হয়। ধরা যাক, মকর লগ্নের শনি ৪র্থে মেষ রাশিতে বসে
আছে। যেহেতু শনি মেষে নীচস্থ হয় তাই ৪র্থ ভাবের পক্ষেও অশুভ
এবং যেহেতু মকর লগ্নের পক্ষে শনি লগ্নপতি (এবং ২য় পতি),
অতএব শরীরের পক্ষেও খারাপ। এই জাতকের মা-এর শরীর( ৪র্থ ভাব
থেকে মাতা ও গৃহসুখের বিচার হয়) নিয়েও দুঃশ্চিন্তা থাকতে
পারে এবং গৃহসুখেরও হানি হতে পারে। এটা শুধু শনির অবস্থান
থেকে বলা হ'ল, সামগ্রিকভাবে ফল নির্দেশের জন্য অন্যান্য
গ্রহের অবস্থানও বিচার্য।
৪র্থ নিয়ম
যদি কোনও ভাবের অধিপতি শুভগ্রহ যুক্ত বা দৃষ্ট হয়ে সেই ভাবের
কেন্দ্রে বা কোণে (অর্থাত্ লগ্নে, ৪র্থে, ৭মে, ১০মে বা ৫মে,
৯মে) অবস্থান করে, তবে সেই ভাবের পক্ষে শুভ।
৫ম নিয়ম
যদি কোনো ভাবের অধিপতি শুভগ্রহ দ্বারা দৃষ্ট না হয়ে দুঃস্থানগত
(৬ষ্ঠ, ৮ম, ১২শ ভাব) হয় অথবা ৬ষ্ঠ, ৮ম, ১২শ ভাবের অধিপতি
যদি শুভদৃষ্ট না হয়ে কোনো ভাবে অবস্থিত হয়, তবে সেই ভাবের
হানি হবে। এখানে একটা কথা মনে আসতেই পারে - সেটা হ'ল যদি
৬ষ্ঠ স্থানের অধিপতি ৬ষ্ঠ ভাবেই বসে থাকে তা'হলে কি হবে
? যেহেতু দুঃস্থানের অধিপতি যে ভাবে থাকবে সেই ভাবের অশুভ
হয়, তাই ৬ষ্ঠ স্থানের অধিপতি ৬ষ্ঠে থাকলে ৬ষ্ঠ ভাবের হানি
হবে। যেহেতু ৬ষ্ঠ ভাব থেকে ঋণ, রোগ, বাধা ইত্যাদি বিচার্য,
অতএব ৬ষ্ঠপতি ৬ষ্ঠে থাকায় এগুলির হানি হলে জাতকের পক্ষে
শুভই হবে। ধরা যাক কর্কট লগ্নের চন্দ্র কুম্ভে রয়েছে। কর্কট
লগ্নের চন্দ্র লগ্নপতি বলে এবং কুম্ভ কর্কটের ৮ম স্থান বলে
তনুভাবের (শরীর) পক্ষে মঙ্গলজনক হবে না। আবার ধরা যাক, কর্কট
লগ্নের শনি ৩য় ভাব কন্যায় অবস্থিত। ৮ম পতি শনি ৩য় ভাবে থাকায়
৩য় ভাবের শুভ হবে না। তবে ৩য় উপচয় বলে, শনির অবস্থান সেখানে
কিছুটা ভাল এবং যেহেতু কন্যা রাশি শনির মিত্র ক্ষেত্র, অতএব
৭ম ও ৮ম স্থানের কিছু শুভ হবারই কথা। অপর একটি উদাহরণ নেওয়া
যাক। কোন জাতকের মেষ লগ্নে শনি রয়েছে। ফল কি হবে ? মেশ রাশিতে
শনি নীচস্থ এবং শনি লগ্নে (তনুভাব) থাকার জন্য শরীর নিয়ে
সমস্যা হতে পারে। কিন্তু ১০ম ও ১১শ স্থানের থেকে ( মেষ লগ্নে
শনি ১০ম ও ১১শের অধিপত) যথাক্রমে ৪র্থে ও ৩য়ে (কেন্দ্রে
ও উপচয়ে) অবস্থানের জন্য ১০ম ও ১১শ ভাবদ্বয়ের পক্ষে শুভ।
তাই কর্মক্ষেত্রে বা আয়ের ক্ষেত্রে ভাল ফল হবার কথা। তবে
যেহেতু শনি দুর্বল (যদি নীচভঙ্গ না হয়) অতএব ফল খুব ধীরে
ধীরে হবে। রাতারাতি কিছু হবার নয়।
এটা বলা হয়েছে যে কোন গ্রহ লগ্ন থেকে কেন্দ্রে বা কোণে অবস্থিত হলে সেটা বলশালী হয়। অশুভ গ্রহের বেলা কি হবে ? উদাহরণ দেওয়া যাক। বৃষ লগ্নের ক্ষেত্রে শনি ৯ম কোণ ও ১০ম কেন্দ্রের অধিপতি বলে রাজযোগকারী গ্রহ। ধরা যাক সেটি ৭ম কেন্দ্র বৃশ্চিকে অবস্থান করছে। তা হলে উপরি উক্ত নিয়মে শনির বল বৃদ্ধি হল। তা হলে শনি ৯ম ও ১০ম ঘরের পক্ষে শুভ হবে। এটা হবার আর একটা কারণ হলো, শনি ৭মে থাকার জন্য ৯ম ঘর থেকে ১১শে (লাভস্থান) এবং ১০ম ঘর থেকে ১০ম কেন্দ্রে রয়েছে। এক্ষেত্রে কারকত্ব হিসাবে শনি আয়ুষ্কারক গ্রহ বলে জাতকের কিছুটা আয়ু বৃদ্ধিও হতে পারে। কিন্তু যে ঘরে শনি অবস্থিত, সে ঘরের পক্ষে শুভ নয়। এখানে শনি ৭মে থাকায় বিবাহিত জীবনের পক্ষে শুভ ফলদায়ক নয়। ঠিক একই ভাবে কোন ভাবের অধিপতি সেই ভাবে থাকলে ভাল বলা হয়েছে। তুলা লগ্নের শনি ৪র্থ ও ৫ম পতি। ৫মে অর্থাৎ কুম্ভে-মূলত্রিকোণে থাকলে ৫ম স্থানের পক্ষে শুভ অবশ্যই; কিন্তু শনির স্বভাবসিদ্ধ প্রকৃতি হিসাবে ৫ম স্থানের কিছু ক্ষতিও করবে। ৫ম যেহেতু সন্তানস্থান, একটি দুটি সন্তান দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
৬নং নিয়ম
কোনো ভাবের অধিপতি সেই ভাব থেকে বা লগ্ন থেকে দুঃস্থানে
(৬ষ্ঠ, ৮ম ও ১২শে) থাকলে উক্ত ভাবের হানি হয়। যেমন বৃষলগ্নের
বৃহ্রপতি ৮ম পতি এবং ৮ম স্থান থেকে আয়ু বিচার হয়; অতএব এই
বৃহস্পতি ৮মের ১২শে অর্থাত্ বৃশ্চিকে বসলে, আয়ুর পক্ষে শুভ
নয়। মেষলগ্নের ২য়পতি শুক্র এবং ২য় স্থান সঞ্চয়ের নির্দেশক।
এই শুক্র যদি লগ্নের ১২শে অর্থাত্ মীনে থাকে তবে কি ধন সঞ্চয়ের
পক্ষে অশুভ ? ভাবার্থ রত্নাকরে বলা হয়েছে এই শুক্র ধনস্থানের
পক্ষে শুভ। কারণটা সোজা। শুক্র মীন রাশিতে তুঙ্গী হয়। তাই
শুভ ফল দেবে। আবার ২য় পতি ১২শে থাকার অর্থ - ২য় পতি ২য় স্থান
থেকে ১১শে আছে। ১১শ থেকে আয় বা লাভ বোঝায়। তাই ২য় পতি ২য়
স্থান থেকে ১১শে থাকায় ২য় স্থানের পক্ষে শুভ। তবে এটা শুধু
মেষ লগ্নের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এই ভাবে ফল বিচার প্রয়োজন।
কোন কোন গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, যেহেতু শুক্র এখানে লগ্ন
থেকে ১২শে আছে, অতএব ধন সঞ্চয় হবে ঠিকই তবে সঞ্চিত ধন জাতকের
ভোগে আসবে না।
৭নং নিয়ম
যে সব গ্রহ দু'টি করে ভাবের অধিপতি, সেই গ্রহ ঐ লগ্নের পক্ষে
শুভ না অশুভ সেটা নির্ভর করবে, ঐ দু'টি ভাবের মূলত্রিকোণ
দুঃস্থানগত কি না তার উপর। উদাহরণ দেওয়া যাক। মেষলগ্নের
বৃহস্পতি ৯ম ও ১২শ ভাবের অধিপতি। কিন্তু বৃহস্পতির মূলত্রিকোণ
ধনু অর্থাত্ ৯ম ভাব। ৯ম যেহেতু ভাগ্যস্থান ও বৃহস্পতির মূলত্রিকোণ,
তাই মেষ লগ্নের পক্ষে বৃহস্পতি শুভ গ্রহ। আবার বৃষ লগ্নের
বৃহস্পতি ৮ম ও ১১শ স্থানের অধিপতি; কিন্তু বৃহস্পতির মূলত্রিকোণ
ধনু ৮ম ভাবে হওয়ায় এবং ৮ম একটি দুঃস্থান হওয়ায়, বৃষলগ্নের
বৃহস্পতি শুভ নয়। একই কারণে কন্যালগ্নের মঙ্গল শুভ নয়, কারণ
মঙ্গলের (৩য় ও ৮ম ভাবের অধিপতি) মূলত্রিকোণ মেষরাশিতে এবং
মেষ কন্যা লগ্নের ৮ম স্থান। এখানে অনেকগুলি প্রশ্ন উঠতে
পারে। প্রথমতঃ লগ্নপতিকে শুভ বলা হয় , কারণ লগ্ন একই সঙ্গে
কেন্দ্র এবং কোণ হওয়াতে এর অধিপতি শুভ। এবার, লগ্নপতির মূলত্রিকোণ
যদি দুঃস্থান হয় তবে কি হবে ? যেমন বৃশ্চিক লগ্নের মঙ্গল
লগ্নপতি ও ৬ষ্ঠ পতি। বৃশ্চিকের ৬ষ্ঠ স্থান মেষ এবং মেষরাশি
মঙ্গলের মূলত্রিকোণ। এখানে মঙ্গল একই সঙ্গে শুভ ও অশুভ হওয়ায়
মঙ্গলকে সমভাবাপন্ন (neutral) হিসাবে ধরা হয়। তবে যদি মঙ্গল
শুভ ভাবে অবস্থান করে ও শুভ গ্রহযুক্ত বা শুভদৃষ্ট হয়, তবে
নিশ্চয়ই মঙ্গল শুভ হবে। যেমন, যদি বৃশ্চিকলগ্নের লগ্নপতি
মঙ্গল লগ্নের ৫মে মীনে থাকে এবং লগ্নে বৃহস্পতি বসে মীন
রাশিতে অবস্থিত মঙ্গলকে দৃষ্টি দেয়, তবে অবশ্যই শুভ। এখানে
অন্য একটি সম্ভাব্য প্রশ্নেরও উত্তর দেওয়া দরকার। আগেই জানা
আছে যে নৈসর্গিক অশুভ গ্রহ যদি কেন্দ্রের অধিপতি হয় তবে
শুভ। কিন্তু এক্ষেত্রে যদি গ্রহটির মূলত্রিকোণ দুঃস্থানগত
হয় তবে কি হবে ? যেমন, কর্কট লগ্নের শনি। শনি ৭ম ও ৮ম স্থানের
অধিপতি। কর্কটের ৮ম স্থান কুম্ভ রাশি শনির মূলত্রিকোণ, অতএব
এই হিসাবে কর্কট লগ্নের শনি অশুভ। কিন্তু শনি আবার ৭ম (কেন্দ্র)
ভাবের অধিপতি হওয়ার জন্য শুভ। তা হলে ? এক্ষেত্রে অনেক জ্যোতিষী
কর্কট লগ্নের শনিকে সম (neutral) হিসবে গণ্য করেন। তবে জন্মকুণ্ডলীতে
শনির অবস্থান ও অন্যান্য গ্রহের পারস্পরিক সম্বন্ধের উপর
সামগ্রিকভাবে ফল নির্ভর করবে।
৮নং নিয়ম
কোনো গ্রহ রবির খুব কাছে এলে ( কোন গ্রহ কত কাছে এলে এটা
হবে তা ৭ম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ) অস্তগত (combust) হয় এবং
সেই গ্রহ সাধারণতঃ শুভ ফলদায়ক হয় না। বুধ গ্রহকে এর কিছুটা
ব্যতিক্রম বলে কোন কোন জ্যোতিষী মনে করেন। এই সঙ্গে কোন
গ্রহ রাশি সন্ধি বা ভাব সন্ধিতে অবস্থান করলে যে দুর্বল
হয় ( ৮ম অনুচ্ছেদ ) সেটাও মনে রাখতে হবে।
৯নং নিয়ম
শুভ গ্রহ যে ভাবে অবস্থান করে সেই ভাবের বৃদ্ধি বা শুভ হয়।
কিন্তু ৬ষ্ঠ, ৮ম, ১২শ ভাবের বেলা নিয়মটা একটু আলাদা। ৬ষ্ঠে
শুভগ্রহ ৬ষ্ঠ ভাবের বৃদ্ধি করে না অর্থাৎ শত্রু বৃদ্ধি করে
না বরং শত্রু হ্রাস করে। ৮মে শুভগ্রহ রোগ ও বাধা-বিপত্তির
হানি করে এবং ১২শে শুভগ্রহ ব্যয় হ্রাস করে। তবে শুভ গ্রহ
যদি নীচস্থ বা বলহীন হয় বা অশুভ গ্রহ দৃষ্ট হয় তা হলে ফল
অন্য রকম হতে পারে। ৬ষ্ঠে পাপগ্রহ রোগ বৃদ্ধি করে। ৬ষ্ঠে
একাধিক পাপগ্রহ জাতককে একেবারে শয্যাশায়ী করে ফেলতে পারে।
শনি পাপগ্রহ হলেও যেহেতু আয়ুষ্কারক গ্রহ, ৮মে শনি শক্তিশালী
হলে আয়ুবৃদ্ধি হয় বলে বলা হয়েছে। দুঃস্থানে (৬ষ্ঠ, ৮ম ও
১২শে) পাপগ্রহ জীবনে নানা ভাবে অশান্তি ডেকে আনে। রাহু পাপগ্রহ
হলেও ৬ষ্ঠে রাহুর অবস্থানকে ভাল বলা হয়েছে। ৬ষ্ঠে রাহু শত্রুজয়ী
করে ও জাতককে দীর্ঘজীবী করে। তবে রাহু পাপগ্রহ হয়ে ৬ষ্ঠে
থাকায় কিছু শারীরিক সমস্যা হতে পারে। ৬ষ্ঠ (৯মের ১০ম স্থান)
দুঃস্থান হলেও একটি উপচয় স্থান একথা মনে রাখতে হবে। উপচয়ে
সব গ্রহই কিছু শুভ ফল দান করে। দুঃস্থান সম্বন্ধে পরে আরও
বিশদ ভাবে বলা হবে।
১০নং নিয়ম
কোন ভাবের অধিপতি যে রাশিতে অবস্থান করবে সেই রাশির অধিপতি
যদি দুঃস্থানে থাকে বা পাপগ্রহ যুক্ত হয় তবে সেই ভাবের হানি
হয়। উদাহরণ স্বরূপ, যদি মেষলগ্নের চন্দ্র (৪র্থ স্থানের
অধিপতি ) সিংহ রাশিতে থাকে এবং সিংহের অধিপতি রবি তুলা রাশিতে
(তুলা রাশিতে রবি নীচস্থ হয়) থাকে তা হ'লে ৪র্থ ভাবের হানি
হবে। এ ক্ষেত্রে মঙ্গল সিংহ রাশিতে রয়েছে বলে, সিংহ রাশির
অধিপতি রবি তার রাশি অধিপতি (sign dispoitor)। ঠিক একই ভাবে
রাশি অধিপতির অবস্থান শুভ হলে রাশিতে স্থিত গ্রহটি শক্তিশালী
হয়। জ্যোতিষশাস্ত্রে কোন গ্রহের রাশির অধিপতি অনেক সময়েই
গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়কের ভূমিকা নেয়।
১১নং নিয়ম
কোন ভাবের অধিপতি কোন ভাবে বা রাশিতে অবস্থিত সেটার উপর
অনেক ফলাফল নির্ভর করে। ধরা যাক লগ্নপতি দুর্বল হয়ে দুঃস্থানগত
(৬ষ্ঠ, ৮ম, ১২শ ) এবং শত্রুগৃহগত হয়ে পাপগ্রহ দ্বারা দৃষ্ট,
এ ক্ষেত্রে জাতকের নানা শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে এবং সে
একজন সাধারণ ব্যক্তি হবে - খ্যাতির কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
৫ম পতি ৭মে থাকলে ফল কি হবে ? ৫ম স্থান সূক্ষ্মবুদ্ধি নির্দেশ
করে; ৭ম স্থান জায়াস্থান। অতএব ৫ম পতি ৭মে থাকলে স্ত্রী
(বা স্বামী) বুদ্ধিমান ও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন হবারই কথা। আবার
৫ম স্থান থেকে যেহেতু আবেগ ইত্যাদি বিচার্য, ৫ম পতির ৭মে
অবস্থান তাই প্রণয় ঘটিত কোন ব্যাপারকেও বোঝাতে পারে। আবার
৫ম স্থান উচ্চ পদে আসীন কোনও ব্যক্তির অনুগ্রহও নির্দেশ
করে এবং ৭ম ভাব থেকে (১০ম স্থানের ১০ম স্থান) কর্ম্মে উন্নতিও
বিচার করা যায়। অতএব ৫ম পতি ৭মে থাকলে উপরওয়ালার অনুগ্রহে
কর্ম্মে উন্নতিও হতে পারে। তবে এই সব ফলই কোন ব্যক্তির একই
সঙ্গে না হতেই পারে। এ গুলি সবই সম্ভাবনাময় দিক। ঠিক কি
হবে সেটার জন্য অন্যান্য গ্রহের অবস্থান, তাদের পারস্পরিক
সম্পর্ক ও কারকত্ব বিচার্য।
১২ নং নিয়ম
কোনো কোষ্ঠীতে দুটি গ্রহের মধ্যে চার রকম সম্পর্ক হতে পারে।
(ক) সবচেয়ে ভাল বা শ্রেষ্ঠ সম্পর্ক হ'ল পরস্পর ক্ষেত্র বিনিময়
সম্পর্ক। ধরা যাক, মেষলগ্নে রবি (৫ম পতি) ধনুরাশিতে আছে
এবং বৃহস্পতি (৯ম পতি ও ১২শ পতি) সিংহরাশিতে আছে। তা হ'লে
রবি বৃহস্পতির ক্ষেত্রে ও বৃহস্পতি রবির ক্ষেত্রে অবস্থান
করছে। অথবা বলা যায়, রবি ও বৃহস্পতি স্থান বা ক্ষেত্র বিনিময়
করেছে। ৫ম ভক্তিস্থান ও ৯ম ধর্মস্থান ব'লে এই যোগ অন্যান্য
ফলের সঙ্গে নিঃসন্দেহে আধ্যাত্মিক উন্নতিও নির্দেশ করে।
(খ) দুটি গ্রহ পরস্পরকে পূর্ণদৃষ্টিতে দেখলে ২য় সম্বন্ধ
হয়। যদি মঙ্গলের ৪র্থে শনি থাকে তবে শনির ১০মে মঙ্গল থাকবেই।
মঙ্গল ৪র্থ দৃষ্টিতে শনিকে এবং শনি ১০ম দৃষ্টিতে মঙ্গলকে
দেখবে। শনি ও মঙ্গল ছাড়া অন্য যে কোনো দুটি গ্রহ পরস্পরের
৭মে বসে না থাকলে এই যোগ হবে না। উদাহরণস্বরূপ কর্কট রাশিতে
শনি এবং মেষ রাশিতে মঙ্গল থাকলে অথবা কন্যা রাশিতে রবি এবং
মীন রাশিতে চন্দ্র থাকলে পরস্পরের দৃষ্টি বিনিময়ের এই ২য়
রকমের সম্পর্ক হতে পারে। (গ) দুটি গ্রহ যখন একটি অপরটির
ক্ষেত্রে অবস্থান করে এবং একটি অপরটিকে দৃষ্টি দেয় কিন্তু
অন্যটি অপরটিকে দৃষ্টি দেয় না তখন ৩য় সম্বন্ধ হয়। যেমন,
মঙ্গল সিংহরাশিতে রবির ক্ষেত্রে এবং রবি বৃশ্চিক রাশিতে
মঙ্গলের ক্ষেত্রে অবস্থান করছে। এ ক্ষেত্রে মঙ্গল ৪র্থ দৃষ্টিতে
রবিকে দেখছে কিন্তু রবি মঙ্গলকে দেখছে না। এখানে মঙ্গল ও
রবি ৩য় সম্বন্ধের দ্বারা আবদ্ধ। অথবা শনি বৃহ্রপতির ক্ষেত্র
ধনুতে এবং বৃহ্রপতি শনির ক্ষেত্র কুম্ভতে রয়েছে। শনি ৩য়
দৃষ্টিতে বৃহস্পতিকে দেখছে কিন্তু বৃহস্পতি শনিকে দৃষ্টি
দিচ্ছে না। অতএব এখানে শনি ও বৃহস্পতির ৩য় সম্বন্ধ হল। (ঘ)
দুটি গ্রহ একই রাশিতে যুক্ত হলে ৪র্থ সম্বন্ধ হয়। যেমন,
মেষ রাশিতে শনি ও বৃহস্পতি থাকলে, শনি ও বৃহস্পতির মধ্যে
এই ৪র্থ সম্বন্ধ হয়েছে বলা যায়।
১৩নং নিয়ম
একটি গ্রহ কোন রাশিতে নীচস্থ হ'লে, সেই রাশির অধিপতি অথবা
সেই রাশিতে যে গ্রহ তুঙ্গী হয় সেটি যদি লগ্ন বা চন্দ্র থেকে
কেন্দ্রে অবস্থিত হয় তবে প্রথমোক্ত গ্রহের নীচভঙ্গ হয়। একে
নীচভঙ্গ রাজযোগ বলে। এতে ঐ নীচস্থ গ্রহের নীচ ভাব কেটে যায়
এবং সেটা শুভ ফল প্রদান করে। উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরা যাক
কোন জাতকের লগ্ন মেষ ও রাশি ধনু এবং বুধ মীন রাশিতে নীচস্থ
হয়ে অবস্থান করছে। এখন যে রাশিতে বুধ নীচস্থ হয়ে রয়েছে তার
অধিপতি বৃহস্পতি; এই বৃহস্পতি যদি লগ্ন বা চন্দ্র থেকে কেন্দ্রে
থাকে (যেমন বৃহস্পতি যদি লগ্নের ৭ম তুলা রাশিতে থাকে) অথবা
চন্দ্র থেকে কেন্দ্রে থাকে (যেমন ৪র্থ কেন্দ্র মীনে থাকে)
তবে বুধের নীচভঙ্গ হবে। স্পষ্টতই ২য় ক্ষেত্রে নীচভঙ্গ অনেক
জোরালো ফল দেবে কারণ বৃহস্পতি মীনে স্বক্ষেত্রে বসে নীচভঙ্গ
যোগ তৈরী করেছে। আবার মীন রাশিতে শুক্র তুঙ্গী হয় ; এই শুক্রও
যদি লগ্ন বা চন্দ্রের কেন্দ্রে অবস্থিত হয় তা হলেও বুধের
নীচভঙ্গ হবে। জ্যোতিষগ্রন্থে নীচভঙ্গের আরও অনেক নিয়ম দেওয়া
আছে। এখানে একটি মুখ্য নিয়ম বলা হল।
১৪নং নিয়ম
কোন রাশিতে স্থিত গ্রহের সন্নিহিত দুই রাশিতে (অর্থাত্ ঐ
রাশির ২য়ে ও ১২শে) যদি পাপগ্রহ (নৈসর্গিক অশুভ গ্রহ - রবি,
মঙ্গল, শনি, রাহু ও কেতু) অবস্থিত হয় তবে পূর্বোক্ত রাশিস্থিত
গ্রহের শুভত্বের হানি হয়। একে বলে পাপ-কর্তরী যোগ। ঠিক একই
ভাবে পাশের দুই রাশিতে অবস্থিত শুভ গ্রহের (নৈসর্গিক শুভ
গ্রহ - বৃহ্রপতি, শুক্র, বুধ ও শুক্ল পক্ষের চন্দ্র) প্রভাবে
মধ্যস্থিত গ্রহের শুভত্ব বৃদ্ধি পায়। এর নাম শুভ-কর্তরী
যোগ। ধরা যাক মেষ লগ্নের রবি যদি কর্কটে থাকে এবং কর্কটের
দুই পাশের রাশিতে (মিথুন ও সিংহ রাশিতে) যথাক্রমে রাহু ও
শনি অবস্থিত হয় তবে রবি ৫ম পতি হওয়া সত্বেও পাপমধ্যগত হওয়াতে
রবির শুভত্বের হ্রাস হবে। তেমনি, কুম্ভ লগ্নের শনি (লগ্ন
ও ১২শ পতি) যদি সিংহে শত্রু গৃহগত হয় কিন্তু কর্কটে শক্তিশালী
চন্দ্র ও কন্যায় বুধ অবস্থিত হয়, তবে শুভ-কর্তরী যোগের জন্য
শনির অশুভত্ব অনেক কমে যাবে।
১৫নং নিয়ম
(ক) দশা বিচার কালে ২য় ও ১২শ ভাবের শুভাশুভত্ব কিছুই ধরা
হয় না। তারা শুভ গ্রহের সংযোগে শুভ ফল এবং অশুভ গ্রহের সংযোগে
অশুভ ফল প্রদান করে। এরা কোন গ্রহের সঙ্গে যদি যুক্ত না
থাকে, তবে যে স্থানে থাকে সেই ভাবাধিপতির গুণানুক্রমে ফল
দান করে। ২য় ও ১২শ ভাবাধিপতিকে সেই জন্য ‘পরতন্ত্রী’ বলা
হয়। (খ) ২য় ব ৭ম পতি অথবা তাদের সঙ্গে যুক্ত যে কোন গ্রহই
মারক হতে পরে। মারক অর্থে এদের দশা-অন্তর্দশায় মৃত্যু হবে
তা সব সময়ে নয়। তবে এদের দশা-অন্তর্দশায় জাতক-জাতিকার নানা
ঝঞ্ঝাট ও দুঃখের মধ্যে কাটে। (গ) রাহু বা কেতু কেন্দ্রে
থেকে কোণপতির (৫ম বা ৯ম) সঙ্গে সম্বন্ধ করলে যোগকারক হয়
এবং শুভ ফল দান করে। রাহু বা কেতু যে গ্রহের সঙ্গে যুক্ত
থাকে বা যে গ্রহের ৭মে অবস্থান করে তার সঙ্গেই সম্বন্ধযুক্ত
হয়। কোন গ্রহের সঙ্গে যুক্ত না থাকলে, যে রাশিতে বসে থাকে
তার ভাবাধিপতির ফল দেয়। (ঘ) জন্মকুণ্ডলীতে ৩য়, ৬ষ্ঠ ও ১১শ
পতির যথেষ্ট প্রভাব দেখা যায়। ৩য় পতি অনেক সময়ে খুব দুঃসাহস,
গোয়ার্তুমি বা গা-জোয়ারির কারণ হতে পারে। হঠাৎ হঠাৎ অসুখ
করাও অসম্ভব নয়। ৬ষ্ঠ পতি নানা বাধা বিপত্তি, রোগ, দুর্ঘটনা,
মামলা-মোকদ্দমা ঘটাতে পারে, ঋণগ্রস্তও করতে পারে। ১১শ পতি
অনেক সময় মনে অতিরিক্ত চাহিদা বা উচ্চাশা জাগিয়ে তুলতে পারে
বা স্বৈরাচারী মনোবৃত্তির কারণ হতে পারে। জাতক ও জাতিকার
পক্ষে ভাল হবে যদি এই সব ভাবাধিপতি জন্মকুণ্ডলীতে অন্য কোন
গ্রহের সঙ্গে সম্বন্ধহীন হয়ে অবস্থান করে। অর্থাত্ এইসব
স্থানের অধিপতি অন্য কোনো গ্রহের উপর প্রভাব না ফেললেই ভাল।
১৬নং নিয়ম
এতক্ষণ লগ্ন থেকেই সমস্ত ভাব বিচারের কথা বলা হয়েছে| কিন্তু
জ্যোতিষীরা চন্দ্র এবং রবি থেকেও ভাব বিচার করতে বলেন| অর্থাৎ
চন্দ্র ও রবি যে রাশিতে অবস্থিত সেই রাশিকে লগ্ন ধরে আলাদা
করে বিচার করতে হবে| জ্যোতিষীরা বলেন, যদি লগ্ন, চন্দ্র
ও রবি থেকে বিচারের ফল একই হয় তবে ঘটনাটা ঘটার সম্ভাবনা
সমধিক| এই নিয়মকে ঐসুদর্শন বলা হয়| ১৩(১) নং চিত্রে একটি
উদাহরণ দেখান হল| এটি ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী
বাজপেয়ীর জন্মকুণ্ডলী| অনেকেরই জানা আছে শ্রীবাজপেয়ী হাঁটুর
সমস্যায় ভুগতেন এবং এক সময়ে তাঁর হাঁটুতে অস্ত্রপ্রচারও
করা হয়| জন্ম ছকের ১০ম স্থান থেকে হাঁটুর বিচার হয় (৯ম অনুচ্ছেদ)|
লগ্ন থেকে বিচার করলে বৃশ্চিক লগ্নের ১০ম ঘর সিংহ রাশির
অধিপতি রবি ২য়ে ধনু রাশিতে অবস্থিত| ১০মে বৃহস্পতির দৃষ্টি
আছে| চন্দ্র বৃশ্চিকে নীচস্থ ও পাপ কর্তরী যোগে দুষ্ট (
শনি ও রবি ২টি পাপ গ্রহের মধ্যে অবস্থিত বলে )| আবার চন্দ্রকে
লগ্ন ভেবে বিচার করলেও একই ফল হবে, যেহেতু চন্দ্র ও লগ্ন
একই রাশিতে অবস্থিত| ১০ম পতি রবি শনির ৩য় দৃষ্টি দ্বারা
ক্লিষ্ট| শনিকে আবার মঙ্গল দৃষ্টি দেওয়ায় শনির অশুভত্ব বৃদ্ধি
পেয়েছে| একই ভাবে রবি থেকে দেখলে, ১০ম পতি বুধও শনিদৃষ্ট|
আবার কালপুরুষের অঙ্গবিভাগ (৯ম অনুচ্ছেদ) অনুযায়ী মকর রাশি
হাঁটুর নির্দেশক| মকর রাশিতে কেতুর অবস্থান অশুভ এবং মকরের
অধিপতি শনিও মঙ্গলের ৮ম দৃষ্টি দ্বারা পীড়িত| অতএব সব দিক
থেকে বিচার করে একই ফলে পৌঁছান গেল| এখানে এই ঘটনাটি ঘটবেই
বলা চলে এবং সুস্থ হবার আশা প্রায় নেই| অবশ্য ১০মে বৃহস্পতির
দৃষ্টি অস্ত্র প্রচারের পর সাময়িক সুস্থতা দিতে পারে| তবে
তত্বগত ভাবে লগ্ন, চন্দ্র ও রবি থেকে বিচারের কথা বলা হলেও,
সাধারণতঃ লগ্ন ও চন্দ্র থেকেই বিশ্লেষণ করা হয়; রবিকে ধরা
হয় না|
১৭নং নিয়ম
জ্যোতিষ শাস্ত্রে বেশ কিছু বিশেষ নিয়ম রয়েছে; যেমন উত্তর
কালামৃত গ্রন্থে ৬ষ্ঠ ভাবস্থ শুক্রকে, মকর লগ্নের বৃহস্পতিকে
(৩য় ও ১২শ ভাবাধিপতি ), লগ্নের ৮মস্থ বৃহস্পতিকে এবং লগ্নের
৮মে বুধের অবস্থানকে শুভ বলা হয়েছে। কিন্তু লগ্নের ৮মে স্থিত
বৃহস্পতিকে অনেক জ্যোতিষীই শুভ বলে মানতে রাজি নন যদি না
ঐ বৃহস্পতি ৮ম ভাবে থেকে স্বক্ষেত্রে বা তুঙ্গীক্ষেত্রে
অবস্থিত হয়। এভাবে দেখলে বৃষলগ্নের ধনুরাশিতে স্থিত বৃহস্পতি
হয় ত শুভ ফল দান করতে পারে যেহেতু ধনুরাশি বৃহস্পতির মূলত্রিকোণ
ক্ষেত্র। জ্যোতিষীদের এই ভিন্নমত নিশ্চয়ই তাদের অভিজ্ঞতা
লব্বì। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। অনুশীলনের জন্য শুধু গ্রহ-অবস্থানের
বিবরণ দেওয়া হচ্ছে। কুণ্ডলীটি অনায়াসে এঁকে নেওয়া যায়। লগ্ন
বৃশ্চিক, মকরে কেতু, কুম্ভে শনি, মিথুনে বৃহস্পতি, কর্কটে
রাহু, সিংহে বুধ, মঙ্গল, চন্দ্র, কন্যায় রবি ও তুলায় শুক্র।
এখানে বৃহস্পতি ( ২য় ও ৫ম ভাবের অধিপতি হওয়ায় যথেষ্ট শুভ
) লগ্নের ৮মে মিথুনে অবস্থিত। কিন্তু বৃহস্পতির দশায় ও মঙ্গলের
অন্তদ্র্দশায় জাতকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহ্রপতির দশায় ও লগ্নপতির
অন্তদ্র্দশায় মৃত্যু হ'লে বৃহস্পতিকে শুভ বলে মেনে নেওয়া
শক্ত। এখানে লক্ষণীয় যে মঙ্গল লগ্নপতি হলেও ৬ষ্ঠ পতি এবং
৬ষ্ঠ স্থান মঙ্গলের মূলত্রিকোণ। অতএব মঙ্গলের ৬ষ্ঠপতিত্ব
দোষ ভালই থাকবে। আবার মঙ্গল ৮ম পতি বুধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে
একপাশে রাহু ও অন্যপাশে রবির মধ্যবর্তী; অতএব পাপ কর্তরী
যোগে পীড়িত হওয়ায় যথেষ্টই অশুভ। এই মঙ্গল লগ্ন পতি হলেও
মৃত্যুকারক হতেই পারে। বৃহ্রপতি যে রাশিতে (মিথুনে) রয়েছে
সেই রাশির অধিপতি (sign dispositor) বুধ মঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত
হওয়ায় বৃহস্পতিও পরোক্ষে মৃত্যুকারক হয়েছে। বৃহস্পতি ২য়
পতি (নিধন স্থান) হয়ে ৮মে থাকায় মারক হিসাবে কাজ করেছে।
অতএব সব ক্ষেত্রে ৮মে স্থিত বৃহস্পতিকে সব দিক থেকে শুভ
বলা যায় না।
১৮নং নিয়ম
(ক) জন্মকুণ্ডলীতে নৈসর্গিক অশুভ বা পাপগ্রহের পক্ষে সব
চেয়ে ভাল হচ্ছে ৩য়, ৬ষ্ঠ, ১০ম ও ১১শ ভাবে অবস্থিত হওয়া।
এই ভাব গুলিকে উপচয় বলা হয় এ কথা আগেই উল্লেখিত হয়েছে। এখানে
শুভ অশুভ সব গ্রহই কিছু না কিছু ভাল ফল দান করে।
(খ) ১২শ একটা দুঃস্থান হলেও এখানে শুক্রের অবস্থান শুভ যদি
ঐ শুক্র রাশিচক্রে বা নবাংশে শনির ঘরে অবস্থিত না হয় বা
অশুভ গ্রহ দ্বারা পীড়িত না হয়। তবে ‘ভাবার্থ রত্নাকর’-এর
মতে মেষ লগ্নের ক্ষেত্রেই ১২শে শুক্র শুভ ফলপ্রদ, যেহেতু
মেষের ১২শে মীন লগ্নে শুক্র তুঙ্গী হয়।
(গ) শনি স্বক্ষেত্রস্থ বা তুঙ্গী হলে অথবা বৃহস্পতির ঘরে
থাকলে শুভ ফল প্রদান করে বলে জ্যোতিষীরা মনে করেন।
(ঘ) ২য় ও ৭ম স্থানকে মারক স্থান বলা হয়। রবি ও চন্দ্র ২য়
বা ৭ম ভাবাধিপতি হলেও মারক হয় না বলা হয়েছে। তবে রবি ও চন্দ্র
দুর্বল হলে এটা কতটা খাটবে বলা শক্ত। ৭ম এর থেকে ২য় পতির
মারকত্ব অনেক বেশী। ২য় ও ৭ম পতি ছাড়াও যে সব গ্রহ ২য় বা
৭ম-এ (বিশেষতঃ ২য়ে) অবস্থিত হয় বা যে সব গ্রহ এই সব গ্রহের
সঙ্গে সম্বন্ধ যুক্ত হয়, তাদের দশা বা অন্তর্দশা মারক হতে
পারে। ২য় ও ৭ম স্থান যেহেতু মারক স্থান, ৭ম এর ৭ম বা ২য়ের
২য় বোঝাবে মারকের মারক স্থান অর্থাৎ আয়ু স্থান। এই নিয়মে
অনেক সময়েই কোন ভাবের কারকত্ব বোঝা যায়। ৯ম ভাগ্যস্থান।
৯ম এর ১২শ (৮ম স্থান) ভাবের অর্থ ভাগ্য স্থানের ব্যয় স্থান
অর্থাৎ দুর্ভাগ্য স্থান। এই জন্যই ৮ম স্থান দুঃস্থান গুলির
মধ্যে সব চেয়ে খারাপ।
(ঙ) কোন ভাবে অবস্থিত গ্রহ, শুভ বা অশুভ যাই হোক, সেই ভাবের
ফল সব চেয়ে বেশী দেয়। সেই ভাবে দৃষ্টিদান কারী গ্রহ তার
চেয়ে কম ফল দেয় এবং সেই ভাবের অধিপতি ফল দেয় সবচেয়ে কম।
সব ভাব সম্বন্ধেই এই নিয়ম খাটে।
১৯নং নিয়ম
শুক্র ও শনি যদিও পরস্পরের মিত্র তবু একের দশা ও অন্যের
অন্তদ্র্দশায় ফল খুব অদ্ভুত রকমের হয়। যদি জন্মকুণ্ডলীতে
শনি ও শুক্র খুব ভালো ঘরে অবস্থান করে ও তাদের বল বেশী হয়,
তবে দশা-অন্তর্দশার ফল খুব খারাপ হবে বলে জ্যোতিষীরা বলেন।
এ নিয়মটা সাধারণ নিয়মের ঠিক বিপরীত। তবে এই নিয়ম সতর্কতার
সঙ্গে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রয়োগ করা উচিত।
২০নং নিয়ম
গ্রহ দুর্বল হলে কার্যতা ফল দিতে পারেনা বলে বলা হয়েছে।
বিভিন্ন স্থানে আলোচিত সব কটি কারণকে একসঙ্গে দেখলে বলা
যায় একটি গ্রহ দুর্বল হয় গ্রহটি - (ক) নীচস্থ হলে, (খ) শত্রুর
ঘরে অবস্থান করলে, (গ) দুঃস্থানে অবস্থান করলে, (ঘ) অশুভ
গ্রহ দ্বারা দৃষ্ট হলে, (ঙ) অশুভ গ্রহের সঙ্গে অবস্থান করলে,
(চ) অস্তগত হলে, (ছ) নবাংশে নীচস্থ, শত্রুগৃহগত বা দুঃস্থানে
থাকলে, (জ) পাপকর্তরী যোগ দ্বারা পীড়িত হলে, (ঝ) রাশিসন্ধি
বা ভাবসন্ধিতে অবস্থান করলে, (ঞ) গ্রহটি যে রাশিতে অবস্থিত
তার অধিপতি দুর্বল বা দুঃস্থানগত হলে, (ট) গ্রহটি অশুভ নক্ষত্রে
অবস্থান করলে। স্পষ্টতই এগুলির বিপরীত কারণে কোন গ্রহ বলশালী
হয়।
গ্রহ শক্তিশালী হলে যে কার্যত ফল দিতে সাহায্য করে, চিত্র ১৩(২) এবং ১৩(৩) তে দেখান দুটি কুণ্ডলীর মাধ্যমে সেটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা হবে। প্রথমটিতে জাতকের জন্ম সময় ১৯১০ খৃষ্টাব্দের ১৫ ই অক্টোবর সকাল ১০টা নেবং ২য় টির জন্ম সময় ১৯৩৫ খৃষ্টাব্দের ২৬শে এপ্রিল রাত ৯ টায় দিল্লির কাছে। প্রশ্ন হল, এই দুই জাতকের কি সন্তান হবে ? প্রথমটির ৫ম ভাবের ( সন্তান স্থান ) অধিপতি বৃহ্রপতি লগ্নের ১২শে (দুঃস্থানে) শত্রুর ঘরে কেতুর সঙ্গে অবস্থিত এবং শনি ও রাহুর দ্বারা দৃষ্ট। ৫ম স্থানটি রবি, মঙ্গল, বুধ (৮ম পতি) ও শুক্র (৭ম ও ১২শ পতি) দ্বারাও দৃষ্ট। চন্দ্র থেকে বিচার করলেও দেখা যাবে ৫ম পতি বুধ নিকৃষ্টতম দুঃস্থান ( যদিও স্বক্ষেত্রে ) ৮মে অবস্থিত। খুব স্বাভাবিক কারণেই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে এই জাতকের কোন সন্তান হবে না। এবং বাস্তব ক্ষেত্রেও একাধিক বিবাহ যোগে আবদ্ধ হলেও তার কোন সন্তান হয় নি। ১৩(৩) নং কুণ্ডলীতে বৃহস্পতি বক্রী হয়ে ১২শে অবস্থিত এবং রবির দ্বারা দৃষ্ট। তবে চন্দ্র থেকে দেখলে ৫ম পতি শুক্র (মকর রাশির ক্ষেত্রে রাজযোগকারী গ্রহ) ৫মে স্বক্ষেত্রে অবস্থিত, এটা নিশ্চয়ই একটি সম্ভাবনাময় দিক। এই জাতকের দুটি সন্তান হয়েছে। এর অন্য একটি গুরুত্ব পূর্ণ কারণ আছে যেটা এখনও বিশ্লেষণ করা হয় নি। ১৩(২) নং চিত্রে বৃহ্রপতি (সন্তান কারক গ্রহ) পূর্বে আলোচিত কারণ ছাড়াও দুর্বল তার কারণ বৃহস্পতি রবির খুব কাছে হওয়ায় দ্রুতগামি (accelerated motion) হয়েছে (৫ম অনুচ্ছেদ) এবং এতে বৃহ্রপতি অত্যন্ত দুর্বল হওয়ায় কারক গ্রহ হিসাবে ফল দান করতে পারে নি। কিন্তু ১৩(৩) কুণ্ডলীতে বৃহ্রপতি বক্রী হওয়ায় চেষ্টাবল (৭ম অনুচ্ছেদ) যুক্ত হয়েছে এবং শক্তি সঞ্চয় করেছে। এখানে বৃহ্রপতি রবি থেকে দূরে থাকায় দ্রুতগামীও নয়। ফলে কারক গ্রহ তুলনামূলক ভাবে অনেক শক্তিশালী এবং এই সব কারণেই ফলদায়ক হয়েছে। এখান থেকে অপর একটি শিক্ষণীয় বিষয় হল, চন্দ্র থেকে কুণ্ডলীর বিচার খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং শুধু একটিমাত্র কারণের উপর নির্ভর করে ফল বলা ঠিক নয়। এখানে বৃহ্রপতি দুই ক্ষেত্রেই ১২শে (দুঃস্থানে) অবস্থিত এবং শুধু এ কারণেই বলা উচিত নয় যে দু ক্ষেত্রেই কোন সন্তান হবে না।
১৩(৪) নং চিত্রে প্রদর্শিত কুণ্ডলীটি
আমেরিকার ৪০ তম প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগনের, যিনি ১৯৮১সাল
থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত পরপর দুবার প্রেসিডেন্ট পদে আসীন ছিলেন।
লগ্ন ধনু; শনি ২য় ও ৩য় পতি হয়ে ৫মে মেষ রাশিতে নীচ্স্থ।
রামানুজাচার্য্য রচিত ‘ভাবার্থ রত্নাকর’ আকারে ছোট হলেও
একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ একথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।
ধনুলগ্ন সম্বন্ধে আলোচনা প্রসঙ্গে প্রথম শ্লোকেই বলা হয়েছে
ধনুর্লগ্নে তু জাতস্য পঞ্চমস্থ
শনের্দশা।
শুভপ্রদাযোগদেতি বদন্তি বিভুদোত্তমাঃ। ।
অর্থাৎ ধনু লগ্নে শনি ৫মে অবস্থিত
হলে যোগকারক হয়। ধনু লগ্নে শনি ২য় ও ৩য় ভাবের অধিপতি। ২য়
ধনস্থান এবং ৩য় স্থান কেও অল্পবিস্তর দুঃস্থান হিসাবে গণ্য
করা হয়। ২য় পতি ৫মে থাকলে, ২য় স্থানের কেন্দ্রে অবস্থিত
হওয়ায় ৪র্থ নিয়ম অনুসারে ২য় স্থানের পক্ষে শুভ এবং শনি ৫মে
( অর্থাৎ ৩য় স্থানের ৩য়ে বা পাপস্থান থেকে পাপস্থানে ) থাকায়
পাপত্বের হানি হয়ে অনেকট শুভ ভাবসম্পন্ন হল। কিন্তু মেষ
লগ্নে শনি ত নীচস্থ; তা হলে ভাল ফল হবে কি করে ? এখানেই
এই ২১নং নিয়ম খাটবে। শনি দুঃস্থানের অধিপতি হয়ে নীচ্স্থ
হওয়ায় শুভ্ত্ব প্রাপ্ত হল। এখানে অবশ্য শনির রাশি অধিপতি
অর্থাৎ মঙ্গল লগ্ন কেন্দ্রে থাকায় ১৩ নং নিয়ম অনুযায়ী নীচভঙ্গ
রাজযোগের সূচনা করেছে। ১৯৮১ খৃষ্টাব্দে রেগন যখন প্র্সেডেন্ট
হন, তখন তার শনির দশা এবং বুধের অন্তর্দশা চলছিল। বুধ ১০ম
পতি হয়ে লগ্নে অবস্থিত এবং ২৮ ডিগ্রি ৫৫ মিনিট স্ফুট (longitude)
হওয়ায় নবাংশেও ধনু রাশিতেই অবস্থান করবে। অতএব বুধ বর্গোত্তম
নবাংশ যুক্ত। বর্গোত্তম ১০ম পতি লগ্নে থাকায় (১০ম থেকে ৪র্থ
কেন্দ্রে) বুধ যথেষ্ট শক্তিশালী। এ ছাড়া বুধ লগ্নে দিকবলে
বলী হয় (৭ম অনুচ্ছেদ ) আবার বুধ যে রাশিতে রয়েছে ( ধনু )
সেই রাশির অধিপতি ( sign dispositor ) ১১শে ( লাভস্থানে
) অবস্থিত হওয়ায় ১০নং নিয়ম অনুযায়ী বুধের দশা-অন্তর্দশায়
কোন কিছু লাভ করার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে। অতএব শনি-বুধ
দশা-অন্তর্দশায় প্রেসিডেন্ট পদ প্রাপ্তি যথেষ্টই যুক্তিযুক্ত।
উপরের ১৬নং নিয়ম অনুযায়ী চন্দ্র লগ্ন থেকে বিচার করা যাক।
শনি লগ্নে নীচস্থ; কিন্তু রবি যেহেতু মেষ লগ্নে তুঙ্গী হয়
অতএব রবি চন্দ্রের ১০মে অবস্থিত হওয়ায় ১৩নং নিয়ম অনুসারে
শনির নীচভঙ্গ হয়ে রাজযোগ হয়েছে। রবি রাজ্নীতি এবং উচ্চ সরকারী
পদের কারক গ্রহ। রবি ১০মে (কর্মভাবে) থাকাতে জাতকের উচ্চ
পদে আসীন হওয়ার ইঙ্গিতও পাওয়া গেল।
২২নং নিয়ম
জন্মকুণ্ডলীতে কিছু গ্রহ বিশেষ্ভাবে সম্বন্ধ যুক্ত হলে,
বিভিন্ন যোগের সৃষ্টি হয়। ১৪নং অনুচ্ছেদে এই রকমের কিছু
যোগের কথা বলা হয়েছে। এই ধরণের যোগ সমগ্র কুণ্ডলীটিকেই শক্তিশালী
করে এবং যোগের উপর নির্ভর করে বিশেষ কিছু ঘটনা ঘটবার সম্ভাবনা
তৈরী হয়।
২৩নং নিয়ম
দুটি নিয়ম জ্যোতিষশাস্ত্রে খুব প্রচলিত আছে। একটি হচ্ছে
‘কারকো ভাবনাশকঃ’ এবং অপরটি ‘ভাবৎ ভাবম’। এ দুটি আলাদা ভাবে
আলোচনা করা যাক।
(ক) ‘কারকো ভাবনাশকঃ’ কথাটির অর্থ হ’ল, কোন কারক গ্রহ যদি
সেই ভাবে বা রাশিতে অবস্থিত হয়, তবে সেই ভাবের নাশ হয়। উদাহরণ
দেওয়া যাক। রবি পিতৃকারক গ্রহ এবং ৯ম স্থান থেকে পিতার বিচার
হয়। অতএব কোন জাতকের রবি লগ্ন থেকে ৯মে থাকলে তার পিতার
পক্ষে সেটা ভাল নয়। একই ভাবে, মঙ্গলের (ভ্রাতৃকারক) ৩য়ে,
বৃহস্পতির (ধনকারক) ২য়ে, শুক্রর (জায়াকারক) ৭মে, বৃহস্পতির
(পুত্রকারক) ৫মে ইত্যাদি অবস্থান ভাল নয়। কিন্তু অভিজ্ঞতায়
দেখা গেছে, ২য়ে বৃহস্পতি ধন সঞ্চয়ের পক্ষে খারাপ নয়। ৭মে
শুক্রের অবস্থান খারাপ ত নয়ই, বরং অনেক ক্ষেত্রেই এটা বিবাহিত
জীবন সুখী করতে সাহায্য করে। তবে দেখা গেছে ৫মে বৃহস্পতির
অবস্থান সন্তানের ব্যাপারে সুখকর হয় না। আবার মনে করিয়ে
দেওয়া হচ্ছে যে সামগ্রিক ভাবে ফল বিচার করতে হবে; শুধু একটি
কারণের উপর নির্ভর করে ফল নির্দেশ করা ঠিক নয়।
চিত্র ১৩(৫) ও ১৩(৬)-এ দুটি উদাহরণ দেওয়া হচ্ছে। ১৩(৫) নং ছকে লগ্ন কুম্ভ এবং ৭ম পতি রবি ৬ষ্ঠে। ৭ম পতি দুঃস্থানে রয়েছে ঠিকই কিন্তু ১০মে অবস্থিত বৃহস্পতি দ্বারা দৃষ্ট। এবং শুক্র ৭মে অবস্থিত হলেও কুম্ভ লগ্নের ক্ষেত্রে শুক্র রাজযোগকারী গ্রহ (৫ম পতি ও ১০ম পতি), তার ৭ম স্থিতি অবশ্যই ভাল। এছাড়াও শুক্র স্থির রাশিতে ( সিংহ স্থির রাশি - ৩য় অনুচ্ছেদ ) অবস্থিত হওয়ায় স্নেহ ও ভালবাসার স্থিরত্ব নির্দেশ করে। চন্দ্র থেকে বিচার করলে দেখা যাবে ৭ম পতি মঙ্গল ৪র্থ কেন্দ্র সিংহ রাশিতে লগ্নপতি ( চন্দ্র লগ্নের অধিপতি ) শুক্রের সঙ্গে অবস্থান করছে - এটা খুবই ভাল। এ ছাড়া ৭ম পতি মঙ্গল ৭ম ঘরে দৃষ্টি দেওয়ায় ৭ম ভাবটি শক্তিশালী হয়েছে। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে ছকটিতে কারক গ্রহ শুক্র ৭মে শত্রুগৃহে এবং রবি ও কেতুর মধ্যে অবস্থান করা ( পাপকর্তরী যোগ ) সত্বেও এক্ষেত্রে জাতকের বিবাহ খুব সুখের হয়েছে।
চিত্র ১৩(৬)-এ দেখান ছকটিতে কারক গ্রহ শুক্র ৭মে মঙ্গলের ঘরে অবস্থিত এবং তুঙ্গী বৃহস্পতি ( ৮ম পতি ও ১১শ পতি ) দ্বারা দৃষ্ট। আগের কুণ্ডলীতে শুক্র রাজযোগকারী গ্রহ ছিল; কিন্তু এখানে শুক্র লগ্নপতি ঠিকই কিন্তু ৬ষ্ঠ পতিও বটে এবং ৬ষ্ঠ স্থান তুলা রাশি মূলত্রিকোণ হওয়ায় শুক্রর অশুভত্ব যথেষ্ট রয়েছে। এ ছাড়াও শুক্র পাপকর্তরী যোগের দ্বারা ক্লীষ্ট। ৭ম পতি মঙ্গলের ৮মে অবস্থান মোটেই ভাল নয়, রাহুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় মঙ্গলের অশুভত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। চন্দ্র লগ্ন থেকে দেখলেও চন্দ্র লগ্নের ৭মে অবস্থিত বৃহস্পতি ৩য় ও ১২শ পতি। এ ছাড়াও চন্দ্রের ৭ম স্থান শনির ১০ম দৃষ্টির দ্বারা দৃষ্ট। এর কোনটিই ভাল নয়। সব মিলিয়ে ফল হল মূলতঃ মঙ্গল রাহুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ৮মে থাকায় এই জাতিকার স্বামী বিয়ের ১ বছরের মধ্যেই মারা যান। আলোচ্য দুটি জন্মকুণ্ডলীতেই শুক্র ৭মে অবস্থিত ; কিন্তু ‘কারকো ভাবনাশকঃ’ সূত্রটি ঠিক আক্ষরিক অর্থে দুটি ছকে সমান ভাবে ফলপ্রদ হল না।
(খ) অপরটি ‘ভাবৎ ভাবম’। এর অর্থ
কোন ভাব বিচারের সময় সেই ভাব এবং একই সঙ্গে সেই ভাব থেকে
আরও তত রাশি পরে যে ভাব সেটাও বিচার্য। উদাহরণ স্বরূপ, সন্তান
স্থান বিচার করতে হলে লগ্ন থেকে ( বা চন্দ্র থেকে ) ৫ম ঘর
দেখাই নিয়ম। কিন্তু এই নিয়ম অনুসারে ৫ম ঘর থেকে আরও ৫ম এগিয়ে
৯ম ঘরও বিচার্য। ঠিক একই ভাবে পিতৃস্থান বিচার করতে হলে,
৯ম ভাব এবং ৯ম থেকে ৯ম অর্থাৎ ৫ম ভাবও বিবেচ্য। এই কারণে
আয়ু বিচারের জন্য ৮ম স্থান বিচার করা হয় এবং ৮ম থেকে ৮ম
অর্থাৎ ৩য় ভাবও বিচার করে দেখা হয়।
এই নিয়মগুলির সারবত্তা আছে নিশ্চয়ই, তবে অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর
করে সঠিক ভাবে প্রয়োগ না করলে অনেক সময়ে ভ্রান্ত সিদ্ধান্তে
পৌঁছানর সম্ভাবনা থাকে।
২৪নং নিয়ম
এটিকে আলাদা ভাবে একটি নিয়ম হিসাবে চিহ্ণিত করতে হয় ত অনেকের
আপত্তি হতে পারে; তবে যেহেতু কুণ্ডলী বিচারে অনেক সময়েই
এটা প্রয়োগ করা হয়, সেই জন্য আলাদা ভাবে এর উল্লেখ করা হল।
৮ম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে এক একটি ভাব থেকে এক এক আত্মীয়
স্বজন বা জ্ঞাতিবর্গের বিচার হয়। যেমন লগ্ন থেকে নিজের,
২য় থেকে বিবাহিত সূত্রে প্রাপ্ত আত্মীয় বর্গের, ৩য় থেকে
কনিষ্ঠ ভ্রাতা বা ভগিনীর, ৪র্থ থেকে মাতার, ৫ম থেকে সন্তানের
ইত্যাদি। এইবার ধরা যাক, শ্যালক বা শ্যালিকার বিচার কোন
ঘর থেকে হবে ? যেহেতু ৭ম জায়া ভাব, অতএব ৭ম থেকে ৩য় অর্থাৎ
৯ম স্থান থেকে শ্যালক বা শ্যালিকার বিষয়টি বোঝা যাবে। ৪র্থ
ভাব ( মাতৃস্থান ) থেকে ৩য় অর্থাৎ ৬ষ্ঠ ভাব থেকে, মাতার
ভ্রাতা বা ভগিনী নির্দেশ করে। সে জন্য ৬ষ্ঠ স্থান থেকে মাসী
বা মামা বাড়ির বিচার হয়। এই নিয়ম প্রয়োগ একটু সতর্ক ভাবে
করতে হবে। যেমন ৪র্থ ভাব মাতাকে নির্দেশ করে, তা হলে ৪র্থের
৭ম অর্থাৎ ১০ম ভাব পিতাকে নির্দেশ করা উচিৎ। কিন্তু আমরা
জানি যে পিতার বিচার ১০ম নয়, ৯ম ভাব থেকে হয়। কিছু মূল বিষয়
ধরে নিয়ে বাকী গুলির বিচার করতে হবে, না হলে ভুল হবার সম্ভাবনা।
৩য় ভাব যেমন ছোট ভাই বা বোনকে নির্দেশ করে, ১১শ ভাব তেমনি
বড় ভাই বা দিদিকে বোঝায়।
১৩(৭) নং চিত্রে দেখান কুণ্ডলীটি উদাহরণ হিসাবে নেওয়া হল। এটি নেওয়া হয়েছে ঐসপ্ত ঋষি নাড়ীঐ নামক গ্রন্থ থেকে। তামিল ভাষায় রচিত গ্রন্থটি ছাপা হয়েছে মাদ্রাজ ( বর্তমানে চেন্নাই ) সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়।
আলোচ্য কুণ্ডলীর জাতকটি তার মামাত বোনকে বিয়ে করেছিল ( তখন হয় ত প্রচলিত ছিল )। কি করে এই সিদ্ধান্তে আসা যাবে ? ৪র্থ স্থান মাতাকে নির্দেশ করে; অতএব ৪র্থ স্থানের ৩য় স্থান ( ৬ষ্ঠ স্থান )মা’র ভাই বা মামাকে বোঝায়। সেখান থেকে ৫ম ( পুত্র বা কন্যা স্থান ) অর্থাৎ ১০ম স্থান মামাত বোনকে নির্দেশ করে। ছকটিতে বৃষ লগ্ন থেকে ১০ম স্থান কুম্ভ রাশিতে পড়েছে। অধিপতি গ্রহ শনি কুম্ভ রাশিতেই অবস্থিত। আবার জাতকের ৭ম স্থান ( জায়া স্থান ) বৃশ্চিক রাশি। তার অধিপতি মঙ্গল বৃশ্চিকেই অবস্থিত। শনি ( মামাত বোন ) ১০ম দৃষ্টিতে ৭ম স্থান এবং ৭ম পতি মঙ্গলকে দৃষ্টি দিচ্ছে এবং ৭মে অবস্থিত মঙ্গল ৭ম পতি হয়ে শনিকে দৃষ্টি দিচ্ছে ( মঙ্গলের ৪র্থ দৃষ্টি )। লক্ষ্যণীয় যে বিবাহের কারক গ্রহ শুক্র যে রাশিতে রয়েছে ( মেষ রাশি ) তার অধিপতি গ্রহ (sign dispositor) হল মঙ্গল, যেটি জাতকের ৭ম স্থানে রয়েছে। এ ছাড়াও শনি ৩য় দৃষ্টিতে জায়া কারক গ্রহ শুক্রকে দেখছে। এর ফলে স্পষ্টতই জাতকের ৭ম ভাব, ৭ম পতি, ১০ম ভাব, ১০ম পতি এবং জায়া কারক গ্রহ শুক্র এদের মধ্যে একটা নিবিড় সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। চন্দ্র লগ্নের সাপেক্ষে বিশ্লেষণের ফলটাও খুব কৌতূহলোদ্দীপক। চন্দ্র লগ্ন থেকে ১০ম ভাবের অধিপতি গ্রহ ( কর্কট রাশির অধিপতি ) চন্দ্র নিজেই এবং সেটা চন্দ্র লগ্নে অবস্থিত। চন্দ্র লগ্নের অধিপতি শুক্র (জায়া কারকও বটে) ৭মে ( জায়া স্থান ) এবং ৭ম পতি মঙ্গল ২য়ে ( বিবাহ সূত্রে প্রাপ্ত আত্মীয় ) অবস্থিত। অতএব ঘটনাটি বাস্তবায়িত হওয়া প্রায় নিশ্চিত।
২৫নং নিয়ম
কোন কুণ্ডলী বিচারের সময় প্রথমেই লগ্ন, রবি ও চন্দ্রের অবস্থান
এবং বল নির্ণয় প্রয়োজন; কারণ এই তিনটির বলই কুষ্ঠীটিকে সাধারণ
ভাবে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। কেন্দ্র স্থানে ( লগ্ন,
৪র্থ, ৭ম ও ১০ম ) গ্রহের অবস্থান, বিশেষ করে শুভ গ্রহের
অবস্থান, ছকটিকে আরও জোরাল করে। পরস্পরের কেন্দ্রে অবস্থিত
সব গ্রহই একে অন্যকে প্রভাবিত করে।
২৬নং নিয়ম
একটা কথা বিশেষ ভাবে মনে রাখতে হবে। জ্যোতিষশাস্ত্র গণিতের
মত একই নিয়মে একক ফল নির্দেশ করে না। এই শাস্ত্র সৃষ্টির
কিছু অব্যক্ত বিধান এবং কালের গতির উপর নির্ভরশীল। আমরা
জানি এই যুগে সাধারণ ভাবেই মানুষের গড় আয়ু অনেক বেশি। এটা
এ কালের নিয়ম। এর মানে এই নয় যে গ্রহের গুণাগুণ বা কারকত্ব
একালে বদলে গিয়েছে। জ্যোতিষে সবচেয়ে বেশি যেটা বিচার্য সেটা
হল দেশ, কাল ও পাত্র। ১০০ বছর আগে লটারিতে ১০০০ টাকা পেলে
সেটা বড় ধরণের প্রাপ্তি ছিল, কিন্তু এখন ১০০০ টাকা তেমন
কোনো প্রাপ্তি নয়। যে গ্রহ সংস্থানে এখানে কোন ব্যক্তির
রং ফর্সা হয়, বিদেশে একই গ্রহের অবস্থানে কোন ব্যক্তির গাত্রবর্ণ
অনেক বেশি ফর্সা হতে পারে। এই নিয়ম অনেকে স্বীকার করেন না।
কিন্তু দেশ কাল পাত্র বাদ দিয়ে এই শাস্ত্রের বিচার সম্পূর্ণ
হয় বলে মনে হয় না।
২৭নং নিয়ম
পরিশেষে একটা কথা মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। শাস্ত্র বাক্য
আক্ষরিক অর্থে মেনে চললে, অনেক সময়েই ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছতে
হতে পারে এবং বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ
একটা শ্লোকের উল্লেখ করা হচ্ছে। ‘উড়ুদায়প্রদীপম’ জ্যোতিষশাস্ত্রে
একটি অতি নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ। সেই গ্রন্থে ‘দারিদ্রযোগপ্রকরণম’
অধ্যায়ে বলা আছে -
রবিণা সহিতো মন্দঃ শুক্রেণ চ
যুতোপি বা।
এষ দারিদ্রযোগো বৈ সমুদ্রমপি শোষয়েৎ। ।
অর্থাৎ শুক্র, শনি ও রবি এই
তিন গ্রহ একত্রে যুক্ত থাকলে এমন দারিদ্র যোগ হয় যে সমুদ্রও
শুষ্ক হয়ে যায়। ১৩(৮) নং চিত্রে একটি জন্ম ছক দেখান হল।
লগ্ন মেষ এবং সঙ্গে মঙ্গল ও বুধ; ২য়ে বৃষ রাশিতে কেতু; ৮মে
বৃশ্চিক রাশিতে রাহু; ১০মে মকর রাশিতে বৃহস্পতি; ১১শে কুম্ভে
চন্দ্র এবং ১২শে মীন রাশিতে শুক্র, শনি ও রবি। এখানে শুক্র,
শনি ও রবি শুধু একত্রে নয় ১২শে ( দুঃস্থানে ) অবস্থিত। অতএব
এই জাতকের অসহনীয় দারিদ্রে কষ্ট পাওয়ার কথা। বাস্তবে জাতক
একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি, যথেষ্ট স্বচ্ছল ও বিত্তবান। তবে
কি শাস্ত্র বাক্য ভুল ? তা ঠিক নয়। এখানে দারিদ্রযোগ হয়
নি তার কারণ অন্য। আলোচ্য কুণ্ডলীতে দারিদ্র যোগের সঙ্গে
অন্য অনেক ভাগ্য যোগও থাকায় দারিদ্র যোগের ফল ফলে নি।
যেমন, ৯ম পতি (এবং ১২শ পতি) বৃহস্পতির সঙ্গে ১০ম পতি (এবং ১১শ পতি) শনির ক্ষেত্র বিনিময় ঘটেছে এবং ১২(ক) নিয়ম অনুযায়ী এটা একটা শক্তিশালী রাজযোগ। বৃহস্পতি মকর রাশিতে নীচস্থ ঠিকই কিন্তু মকর রাশি মঙ্গলের তুঙ্গী ক্ষেত্র এবং সেই মঙ্গল লগ্নপতি হয়ে লগ্ন কেন্দ্রে অবস্থিত। অতএব বৃহস্পতির নীচভঙ্গ হয়েছে (১৩নং নিয়ম)। মঙ্গল লগ্নপতি এবং লগ্নে মূলত্রিকোণে (মেষ রাশিতে) অবস্থিত হওয়ায় লগ্ন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়েছে। মঙ্গল জোরাল হবার জন্য বৃহস্পতির ২৩ নং ধনিষ্ঠা নক্ষত্রে (অধিপতি মঙ্গল) অবস্থান পরোক্ষে বৃহস্পতিকে আরও বলযুক্ত করেছে। এ ছাড়াও ছকটিতে শুক্র (২য় ও ৭ম পতি) বর্গোত্তম নবাংশ যুক্ত হয়ে মেষ লগ্নের ১২শে থাকায় ধন সঞ্চয়ের পক্ষে অত্যন্ত সহায়ক হয়েছে (৬ম নিয়মে বর্ণিত আলোচনা দ্রষ্টব্য)। ২য় ও ৭ম দুইই মারক স্থান কিন্তু অধিপতি শুক্র শক্তিশালী হওয়ায় জাতকের শুক্রের দশা বেশ ভালই কেটেছে। এই সব কারণে এই জাতকের ক্ষেত্রে শাস্ত্র বর্ণিত দারিদ্র যোগ কার্যকারী হয় নি, পক্ষান্তরে তিনি সমাজে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি এবং অবস্থা বেশ স্বচ্ছল।
অতএব শাস্ত্র বাক্যের সারবত্তা আছে ঠিকই কিন্তু আক্ষরিক অর্থে চোখ বুজে সেটা ব্যবহার করলে অনেক ক্ষেত্রেই ভুল হতে পারে। শুধু একটি নিয়ম মিললেই হবে না। অন্য সব গ্রহের অবস্থান ও নির্দিষ্ট শুভ যোগের ফল মিলিয়ে সামগ্রিক ভাবে ফলাফল বিচার করতে হবে।
পাশ্চাত্য জ্যোতিষের সঙ্গে প্রাচ্য জ্যোতিষের যে কয়েকটি মূল বিষয়ে তফাৎ দেখা যায় তার মধ্যে একটি প্রধান হলো কোন জন্মকুণ্ডলীতে কিছু গ্রহ বিন্ন্যাসের জন্য বিশেষ যোগ। অর্থাৎ লগ্ন বা চন্দ্র থেকে কোন কোন গ্রহের বা গ্রহ সমষ্টির কয়েকটি নির্দিষ্ট রাশিতে অবস্থান কিছু ফলের নির্দেশক হিসাবে কাজ করে। এই যোগ বহু ধরনের হতে পারে কিন্তু এখানে কয়েকটি মাত্র গুরুত্বপূর্ণ যোগের আলোচনাই করা হবে। বিশদ ভাবে জানার জন্য অন্যান্য গ্রন্থের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে; যেমন (Three hundred important combinations by B. V. Raman)। এই যোগ তিন রকমের হতে পারে। রাজযোগ - এতে সম্মান প্রভুত্ব ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়; ধনযোগ - এটা অর্থ ও ঐশ্বর্য বর্ধক এবং তৃতীয়টি হচ্ছে জ্ঞানযোগ - এতে আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ প্রশস্ত হয়। কয়েকটি যোগকারক গ্রহের অবস্থান ও ফলাফল নীচে দেওয়া হলো। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা দরকার। বর্ণনা অনুযায়ী গ্রহের অবস্থান মিলে গেলেই বর্ণিত ফল সেভাবে নাও মিলতে পারে। এটা দেখতে হবে যে ফলদায়ক গ্রহ যেন যথেষ্ট বলশালী হয় এবং অন্য অশুভ গ্রহের দ্বারা প্রভাবিত না হয়। যোগকারক গ্রহ ফলপ্রদ হবে তাদের বা তাদের সঙ্গে সম্বন্ধ যুক্ত গ্রহের দশা অন্তর্দশায়।
(১) গজকেশরী যোগ ( বা জীব যোগ ) - যদি বৃহস্পতি চন্দ্র
থেকে কেন্দ্রে থাকে তাকে গজকেশরী যোগ বলে।
ফল - সৌভাগ্যের অধিকারী, দীর্ঘস্থায়ী সম্মান, দীর্ঘ জীবন, আবেগ প্রবণ ও বুদ্ধিমান।
বৃহস্পতি ও চন্দ্রের বলের উপর ফলের হ্রাস বা আধিক্য নির্ভর করে। দুটি কুণ্ডলীর
চন্দ্র ও বৃহস্পতির অবস্থান ধরা যাক। প্রথমটিতে চন্দ্র কর্কটে স্বক্ষেত্রে এবং
বৃহস্পতি চন্দ্রের ১০ম কেন্দ্র মেষ রাশিতে অবস্থিত। দ্বিতীয়টিতে চন্দ্র বৃশ্চিকে
নীচস্থ ও বৃহস্পতির অবস্থান বৃশ্চিক থেকে ৪র্থ কেন্দ্র কুম্ভে। স্পষ্টতই প্রথমটিতে
গজকেশরী যোগের ফল পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী।
এটা খুবই সহজবোধ্য যে, যেহেতু চন্দ্র ৩০ দিনে রাশিচক্রকে একবার ঘুরে আসে, অতএব বৃহস্পতি থেকে কেন্দ্রে ( অর্থাৎ বৃহস্পতির সঙ্গে, ৪র্থে, ৭মে বা ১০মে ) চন্দ্রের অবস্থানের সম্ভাবনা খুবই বেশী। তাই বহু লোকের জন্ম কুণ্ডলীতে গজকেশরী যোগ থাকতে পারে। সেই জন্য নিতান্ত আক্ষরিক অর্থে চালিত না হয়ে দেখতে হবে বৃহস্পতি ও চন্দ্রের বল কতটা এবং এই দুটি গ্রহ কোনো অশুভ গ্রহের দ্বারা দৃষ্ট বা অশুভ গ্রহের সঙ্গে যুক্ত কি না। ফল সেই ভাবেই ফলবে।
গজকেশরী যোগ যে শুভ ফল দেয় সেটা আমরা পরে দেখব ( মহাত্মা
গান্ধীর জন্ম কুণ্ডলী )। কিন্তু এই যোগ আক্ষরিক অর্থে ঘটলেই, অর্থাৎ চন্দ্র ও বৃহস্পতি
পরস্পরের কেন্দ্রে থাকলেই যে শুভ ফল হবে সেটা মোটেই নয় বরং অনেক ক্ষেত্রে যথেষ্ট
অশুভ ঘটতে পারে। উদাহরণ হিসাবে Charles Mansion -এর জন্ম ছকটি বিচার করা যেতে পারে।
এই ব্যক্তিটি Tate-LaBianca খুনী নামে কুখ্যাত। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৬৯ খৃষ্টাব্দের
অগাষ্ট মাসে ( বিশদ ভাবে জানার জন্য ইন্টারনেটের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে )। লোকটি
বিচারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়ে এখনও কারাগারে বন্দী। ১৯৩৪ সালের ১২ ই নভেম্বর বিকেল
৪টা ৪০ মিনিটে Charles Mansion-এর জন্ম। জন্মস্থান Cincinnati, Ohio, USA. Time
Zone : 5-0-0 W; Day Light Saving : Nil. চিত্র ১৪(১) তে জন্ম কুণ্ডলীটি দেখান
হয়েছে।
চিত্র ১৪(১)
এখানে শুধু গজকেশরী যোগের অংশ টুকু আলোচনা করা হচ্ছে। এখানে স্পষ্টতই চন্দ্র ও
বৃহস্পতি পরস্পরের কেন্দ্রে রয়েছে; অতএব নিয়ম অনুযায়ী গজকেশরী যোগ হয়েছে। অথচ জাতকের
জীবনের কি মর্মান্তিক পরণতি ! একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, চন্দ্র রাহুর সঙ্গে
প্রায় একই ডিগ্রিতে রয়েছে এবং শনির সঙ্গে শত্রু ক্ষেত্রে অবস্থান করছে। বৃহস্পতিও
শনির দ্বারা দৃষ্ট ও রাহুর নক্ষত্রে স্থিত। ছকটিতে একমাত্র মঙ্গল ছাড়া সব কটি গ্রহ
শনির দ্বারা হয় দৃষ্ট না হয় শনির সঙ্গে একই ঘরে রয়েছে। অতএব গজকেশরী যোগ হলেই ফল
শুভ হয় না। এখানে অন্য একটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, মঙ্গল ছাড়া সব গ্রহই লগ্নের কেন্দ্রে
রয়েছে। সাধারণ ভাবে বলা হয় যে, কেন্দ্রস্থিত গ্রহ ( বিশেষ করে শুভ গ্রহ ) কুণ্ডলীকে
শক্তিশালী করে। অবশ্য শক্তিশালী সব সময় শুভ অর্থে হবে তা ঠিক নয়, অশুভ ভাবও শক্তিশালী
হয়ে জন্ম কুণ্ডলীতে থাকতে পারে।
(২) সুনফা যোগ - চন্দ্রের ২য় ঘরে রবি ছাড়া অন্য গ্রহ
( অবশ্যই রাহু ও কেতু বাদ ) থাকলে এই যোগ হয়।
ফল - স্ব-অর্জ্জিত সম্পত্তি, বুদ্ধিমান, সুনাম ও সম্মানের অধিকারী। সুনফা যোগ সাধারণতঃ
কোন ব্যক্তির আর্থিক দিকই বেশী নির্দেশ করে।
এখানেও চন্দ্রের ও তার ২য় ঘরে অবস্থিত গ্রহের বলের উপর ফলের হ্রাস বা আধিক্য নির্ভর
করবে। চন্দ্রের ২য় ঘরে অনেক গ্রহ থাকলেও তার ফল শুভ হবে তার কোন অর্থ নেই। দৃষ্টান্তস্বরূপ
চিত্র ১৪(২) ও চিত্র ১৪(৩) কুণ্ডলী দু’টি নেওয়া যাক।
চিত্র ১৪(২)
চিত্র ১৪(৩)
চিত্র ১৪(২) - এর ছকটিতে লগ্ন-কুম্ভ; মেষে শনি, রাহু; কন্যায় চন্দ্র; তুলায় বৃহস্পতি, কেতু, বুধ, রবি, শুক্র ও মঙ্গল। অর্থাৎ চন্দ্রের ২য় ঘরে ৫ টি গ্রহ ( কেতু বাদ দিয়ে ) অবস্থিত। এটা দেখে আশান্বিত হবার কারণ নেই। একটু খুঁটিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে চন্দ্রের ২য় ঘর তুলায় অনেক অশুভ শক্তির সমাবেশ হয়েছে। কারণ এখানে বৃহস্পতি কেতুর সঙ্গে যুক্ত এবং শনি ও রাহুর দ্বারা দৃষ্ট। রবি নীচস্থ। শুক্র মূলত্রিকোণ তুলায় থাকলেও অন্যান্য অশুভ শক্তির প্রভাবে ক্লীষ্ট। বুধ ৮ম পতি হয়ে ৯মে এবং অশুভ গ্রহের সঙ্গে যুক্ত ও অশুভ গ্রহদৃষ্ট। ফলে জাতক একটি অতি সাধারণ লোক এবং সুনফা যোগের কোন ফলই ফলে নি। চিত্র ১৪(৩) এ দেখান কুণ্ডলীতে চন্দ্রের ২য়ে বুধ ১১শে অবস্থিত এবং কোন গ্রহের দ্বারা দৃষ্ট নয়। বুধ ৩য় ও ৬ষ্ঠ পতি হওয়া সত্বেও জাতকের বুধের দশায় সুনফা যোগের প্রায় সব ফলই ফলেছে। শুধু আক্ষরিক অর্থে বিশ্লেষণ করলে যে ভ্রান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে এই ছক দুটি তারই প্রকৃষ্ট প্রমাণ।
(৩) অনফা যোগ - চন্দ্রের ১২শে রবি ছাড়া অন্য গ্রহ থাকলে
( রাহু কেতু বাদে ) অনফা যোগ হয়।
ফল - সুন্দর শারীরিক গঠন, ভদ্র, নম্র, সৌখিন, শেষ জীবনে নিরাসক্তি ও আধ্যাত্মিক
উন্নতি।
এখানেও একই ভাবে গ্রহদের প্রকৃতি ও বল বিশ্লেষণ প্রয়োজন। ধরা যাক, লগ্ন তুলা; চন্দ্র
কুম্ভ রাশিতে এবং বৃহস্পতি ও শনি মকরে। এখানেও যোগের ফল সে ভাবে ফলবে না কারণ বৃহস্পতি
নীচস্থ। বৃহস্পতির যদিও নীচভঙ্গ হয়েছে কারণ বৃহস্পতি যে রাশিতে রয়েছে তার অধিপতি
অর্থাৎ শনি লগ্ন থেকে কেন্দ্রে অবস্থিত। তা হলেও বৃহস্পতি সে ভাবে ফল দেবে না।
তবে শনি এখানে রাজযোগকারী গ্রহ হয়ে স্বক্ষেত্রে থাকায় জাতকের শনির দশা ভাল যাবার
কথা।
(৪) কেমদ্রুম যোগ - জন্মকুণ্ডলীতে চন্দ্রের দুই পাশের
ঘরে কোন গ্রহ না থাকলে এই যোগ হয়।
ফল - নিম্নমতির লোক, ঠক ও প্রতারক, মানসিক শান্তির অভাব, দুঃখী ইত্যাদি। এক্ষেত্রে
অবশ্য লগ্ন বা চন্দ্র থেকে কোন গ্রহ কেন্দ্রে অবস্থান করলেই এই যোগের অশুভত্ব কেটে
যায়। আক্ষরিক অর্থে এই ফল কোন লোককে বলে ফেলা ঠিক না; গ্রহের শুভত্ব, অশুভত্ব,
কারকত্ব তার বল ইত্যাদি বিচার করে নিশ্চিত হয়ে তবেই বলা যেতে পারে।
(৫) পঞ্চ মহাপুরুষ যোগ - মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনি এই ৫টি গ্রহের কোন একটি জন্মকুণ্ডলীতে লগ্ন থেকে ( অথবা চন্দ্র থেকে ) কেন্দ্রে অবস্থান করে যদি স্বক্ষেত্রে বা তুঙ্গী ক্ষেত্রে অবস্থান করে তবে ঐ প্রত্যেকটি গ্রহের জন্য আলাদা আলাদা যোগ হয়। এই ৫টি যোগ কি কি দেখা যাক।
(ক) মঙ্গল - মঙ্গল যদি যোগকারক হয় অর্থাৎ মঙ্গল যদি
লগ্ন বা চন্দ্র থেকে কেন্দ্রে অবস্থান ক’রে স্বক্ষেত্রস্থ বা তুঙ্গী হয় তবে রুচক
যোগ হয়।
ফল - সুন্দর সবল স্বাস্থ্য, সাহসী, বিখ্যাত, পুলিশ বা সেনা বাহিনীর নেতা, দীর্ঘায়ু।
মঙ্গল যদি পাপ গ্রহ যুক্ত বা দৃষ্ট হয় তবে মঙ্গল অশুভত্ব প্রাপ্ত হওয়ায় ঐ মঙ্গল
হিংসা ও ঔদ্ধত্যের কারণ হতে পারে।
(খ) বুধ - বুধ যদি একই ভাবে যোগকারক হয় তবে ভদ্র যোগ
হয়।
ফল - সুন্দর গড়ন, দীর্ঘায়ু, ধীর ও সংযত বাক।
(গ) বৃহস্পতি - বৃহস্পতি লগ্ন বা চন্দ্র থেকে কেন্দ্রে
স্বক্ষেত্রস্থ বা তুঙ্গী হলে হংস যোগ হয়।
ফল - পবিত্রতা প্রিয়, আভিজাত্যপূর্ণ চেহারা, লোকপ্রিয়।
(ঘ) শুক্র - শুক্র যখন উক্ত ভাবে যোগকারক হয় তখন মালব্য
যোগ হয়।
ফল - পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুখী, বিদ্বান, ঐশ্বর্য্যশালী, বাহনের মালিক, সুশ্রী।
(ঙ) শনি - শনি যোগকারক হলে শশযোগ হয়।
ফল - দাসদাসী থাকবে, স্বভাব ভাল না হলেও সম্মানের অধিকারী হতে পারে, তবে শুভ গ্রহ
বৃহস্পতি বা শুক্রের সঙ্গে যুক্ত হলে ফল খুব ভাল হতে পারে। শনি জাতককে শিল্পপতিও
করতে পারে।
সব ক্ষেত্রেই একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন। ১০ম হল সবচেয়ে শক্তিশালী কেন্দ্র। কেন্দ্রে
অবস্থানের ক্ষেত্রে এই ১০ম কেন্দ্রে গ্রহ থাকলে যোগ অনেক শক্তিশালী হয়।
চিত্র ১৪(৪)
একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। অ্যাডল্ফ্ হিটলারের জন্ম কুণ্ডলী ১৪(৪) নং চিত্রে দেখান
হয়েছে। এখানে মঙ্গল কেন্দ্রের ৭মে মূলত্রিকোণে অবস্থিত হওয়ায় প্রবল রুচক যোগ হয়েছে।
কিন্তু মঙ্গলের উপর অশুভ ছায়া স্পষ্ট। মঙ্গল তুঙ্গী রবির ( ১১শ পতি ) সঙ্গে যুক্ত
এবং শনির ১০ম দৃষ্টির দ্বারা দৃষ্ট। আগেই বলা হয়েছে ১১শ ভাব থেকে অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের
সঙ্গে দুঃসাহস, গোয়ার্তুমি ইত্যাদিও বোঝায়। এখানে মঙ্গল অশুভ হওয়ায় রুচক যোগ জাতককে
তার পরাক্রমের জন্য বিখ্যাত করেছে ঠিকই কিন্তু ইতিহাসে তার স্থান হয়েছে স্বৈরাচারী
ও অত্যাচারী হিসাবে। স্পষ্টতই ফল বিচারের সময় গ্রহের কারকত্ব ও তার উপর অন্যান্য
গ্রহের প্রভাব সম্বন্ধেও সচেতন থাকা প্রয়োজন। এই কুণ্ডলীটি পরে বিশদভাবে বিশ্লেষণ
করা হবে।
চিত্র ১৪(৫)
১৪(৫) নং চিত্রে দেখান ছকটি জোসেফ স্ট্যালিনের ( ১৮৭৮
- ১৯৫৩ )। বলশেভিক বিপ্লবী ও সোভিয়েত রাশিয়ার এই রাজনৈতিক নেতা ১৯২২ থেকে ১৯৫৩
পর্যন্ত সোভিয়েত রাশিয়ার কম্যুনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন ছিলেন। তার
কিছু সংস্কার মূলক নীতির রূপায়নে রাশিয়া অর্থনৈতিক শক্তিতে পৃথিবীর ২য় স্থানে উঠে
এলেও পরবর্তী কালে তিনি অনেক বিরূপ সমালোচনার সম্মুখীন হন। একদল তাকে নিষ্ঠুর প্রশাসক
ও অত্যাচারী হিসাবে চিহ্ণিত করলেও অনেকের কাছে তিনি একজন সফল জননেতা হিসাবে স্বীকৃত।
জন্মকুণ্ডলীটিতে মঙ্গল ও শুক্র যথাক্রমে লগ্নের ৭মে তুঙ্গস্থানে এবং লগ্ন কেন্দ্রে
স্বক্ষেত্রে অবস্থিত হয়ে যথাক্রমে রুচক যোগ ও মালব্য যোগের সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে
মঙ্গল ও শুক্রের যোগকারক হিসাবে এই অবস্থান ( দুই গ্রহের বৈশিষ্ট্য গত পার্থক্যের
জন্য ) তাকে বিতর্কিত ব্যক্তি হিসাবে পরিচিতি দিয়েছে। ৩য় স্থান থেকে সাহস, পরাক্রম
ইত্যাদির বিচার হয়। এখানে ৩য় ধনু রাশিতে ( অগ্নি রাশি ) রবি ( ১১শ পতি ও অপর একটি
অগ্নি রাশি সিংহের অধিপতি ) রাহুর সঙ্গে যুক্ত এবং শনির দ্বারা দৃষ্ট হয়ে অবস্থিত
হওয়ায় এবং শক্তিশালী রুচক যোগের প্রভাবে তার অত্যাচারী মনোভাব থাকতে পারে।
৪র্থ স্থান ও কারক গ্রহ চন্দ্র থেকে মনের বিচার হয়। এখানে ৪র্থ পতি শনি চন্দ্রের
সঙ্গে যুক্ত হয়ে ৬ষ্ঠে অবস্থিত এবং কোন শুভ গ্রহের দ্বারাও দৃষ্ট নয়। কোন জন্ম
কুণ্ডলীতে চন্দ্রের অবস্থান লগ্ন থেকে ৬ষ্ঠ, ৮ম ও ১২শে হওয়া এমনিতেই অশুভ; তার
উপর শনির সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় এবং শনির ( ৪র্থ ও ৫ম পতি ) সঙ্গে বৃহস্পতির ( ৩য় পতি
ও ৬ষ্ঠ পতি ) স্থান বিনিময় হওয়ায় জাতকের মনকে সংশয়াচ্ছন্ন, বাতিকগ্রস্ত ও অত্যাচারী
করে তুলেছে।
(৬) বুধাদিত্য যোগ - রবির সঙ্গে বুধের যোগ হলেই এই
যোগ হয়। ৭ম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে কোন গ্রহ রবির ১৫ ডিগ্রির মধ্যে এলে অস্তগত
(combust) হয় এবং গ্রহটি দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু বুধের ক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম
রয়েছে। রবির থেকে বুধের দূরত্ব ১০ ডিগ্রির কম হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। যেহেতু বুধ রবির
খুব কাছে থেকেই আবর্তিত হয় তাই এই যোগ খুবই সহজ লভ্য।
ফল - অত্যন্ত বুদ্ধিমান, সম্মানিত ও সুনামের অধিকারী। বুধ এবং রবি একই সঙ্গে অবস্থিত
হলেই যে ফল ভাল হবে তা নয়। এই যোগ যথাযথ ফল দেবে যদি রবি ও বুধের বল যথেষ্ট হয়।
মনে রাখতে হবে বুধ অগ্নি ও বায়ু রাশিতে সব চেয়ে বেশী নিজেকে প্রকাশ করে। অনেকের
মতে এই যোগ বেশী ফলদায়ক হবে যদি বুধ ও রবি মেষ, মিথুন, সিংহ বা কন্যা রাশিতে সংযুক্ত
হয়। মেষ রবির তুঙ্গী ক্ষেত্র, মিথুন বুধের স্ব্ক্ষেত্র, সিংহ রবির স্বক্ষেত্র এবং
কন্যা বুধের স্বক্ষেত্র ও তুঙ্গীক্ষেত্র। কন্যা যদিও পৃথ্বীরাশি, তবুও বুধের স্বক্ষেত্র
ও মূলত্রিকোন বলে এই রাশিতে ভাল ফল দিতে পারে। তবে অধিকাংশই নির্ভর করবে বুধের
শক্তির উপর। সেই জন্যই গ্রহের বল নির্ণয় খুব প্রয়োজন। নির্দ্দিষ্ট জন্মকুণ্ডলী
বিশ্লেষণের সময় এ সম্বন্ধে আরও আলোকপাত করা যাবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে,
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই যোগ মেষ রাশিতে, বঙ্কিমচন্দ্র ও শরৎচন্দ্রের ক্ষেত্রে এই
যোগ যথাক্রমে মিথুন ও কন্যা রাশিতে ছিল।
(৭) অধিযোগ - যদি বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্র-এই
তিন নৈসর্গিক শুভ গ্রহ চন্দ্র থেকে ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮মে থাকে তবে এই যোগ হয়। এই তিন
গ্রহের সব কটি বা যে কোন একটি বা দু'টি এই তিন ঘরের সব কটিতে বা একটি দুটিতে অবস্থান
করতে হবে। অনেক জ্যোতিষীর মতে চন্দ্র থেকে শুভ গ্রহ থাকলে যেমন এই যোগ হয় তেমনি
লগ্ন থেকেও ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮মে উক্ত তিন শুভ গ্রহের অবস্থিতিও এই যোগ তৈরী করতে পারে।
এখানে বলে রাখা ভাল, যদি লগ্ন বা চন্দ্র থেকে ৬ষ্ঠে, ৭মে অথবা ৮মে পাপ গ্রহ থাকে
তা হলে ফল কিন্তু হবে ঠিক বিপরীত।
ফল - সুখী, ভদ্র, প্রাচুর্য, শত্রুজয়ী, সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু। ফল কতটা ফলবে তা
নির্ভর করে গ্রহের বল ও সঠিক দশা-অন্তর্দ্দশার উপর।
১৪(৬) চিত্রের জন্মকুণ্ডলীটিতে লগ্নের ৬ষ্ঠে
কন্যা রাশিতে বৃহস্পতি ও শুক্র অবস্থিত হওয়ায় অধিযোগ হয়েছে। ৭মে তুলা রাশিতে বুধ।
যদিও বুধের সঙ্গে রবি নীচস্থ হয়ে থাকাতে ততটা ভাল হয় নি। ৮মে কোন গ্রহ নেই। এই
জাতক একটি অত্যন্ত সাধারণ অবস্থায় মানুষ হয়েছে এবং একটি সামান্য চাকরী করত। কিন্তু
বৃহস্পতির দশায় তার ধীরে ধীরে ভাগ্যোন্নতি শুরু হয় এবং সে নিজের বাড়ি তৈরী করা
ছাড়াও অনেক অর্থ উপার্জন করেছে। তবে বৃহস্পতির দশা যদি সে না পেত তা হলে এতটা উন্নতি
হত না। যে জন্য বলা হয়েছে যে গ্রহদের ফল দানের জন্য সঠিক দশা-অন্তর্দশা ভোগ করা
দরকার, শুধু কুণ্ডলীতে শুভ যোগ থাকলেই হবে না।
(৮) পারিজাত যোগ - লগ্নাধিপতি যে রাশিতে থাকবে সেই রাশির অধিপতি যে রাশিতে অবস্থান
করবে তার অধিপতি যদি লগ্ন থেকে কোণে, কেন্দ্রে অথবা স্বক্ষেত্রে বা তুঙ্গী ক্ষেত্রে
থাকে তবে এই যোগ হয়।
ফল - মধ্য ও শেষ জীবনে সুখী। সম্মানিত, বিখ্যাত ও ঐশ্বর্যশালী।
উদাহরণ হিসাবে ১৪(৩) চিত্রে দেখান ছকটি ধরা যাক। মেষরাশিতে লগ্ন, শনি ও বৃহস্পতি;
কন্যায় রাহু; মকরে মঙ্গল ও চন্দ্র; কুম্ভে বুধ; মীনে কেতু, শুক্র ও রবি। এখানে
লগ্নাধিপতি মঙ্গল মকরে তুঙ্গী। মকরের অধিপতি শনি মেষলগ্নে অবস্থিত। সেই মেষ রাশির
অধিপতি মঙ্গল লগ্নের ১০ম ঘরে তুঙ্গী। অতএব পারিজাত যোগ হয়েছে। আবার চন্দ্র থেকে
বৃহস্পতি ৪র্থ কেন্দ্রে থাকায় গজকেশরী যোগও হয়েছে। ১০ম পতি ( ও ১১শ পতি ) শনির
সঙ্গে লগ্নপতি ( ও ৮ম পতি ) মঙ্গলের স্থান বিনিময়ও হয়েছে। জাতক বিদ্বান ও সমাজে
প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। সুনাম ও সম্মানের অধিকারী এবং অর্থবান। তবে শনি নীচস্থ হওয়াতে
এবং জন্মকুণ্ডলীতে মঙ্গল মকর রাশির একেবারে গোড়াতে রাশিসন্ধিতে অবস্থান করাতে মঙ্গল
বর্গোত্তম হওয়া সত্বেও শনি ও মঙ্গল উভয়েই কিছুটা দুর্বল। কর্মে উন্নতি ও অর্থাগম
হয়েছে তবে খুব ধীরে ধীরে।
(৯) ভেরী যোগ - লগ্নাধিপতি, শুক্র ও বৃহস্পতি
পরস্পরের কেন্দ্রে অবস্থিত হলে এবং ৯ম পতি শক্তিশালী হলে এই যোগ হয়।
ফল - রোগহীন, দীর্ঘায়ু, স্ত্রী ও সন্তান সুখে সুখী, উদার ও সম্মানিত।
একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। তুলারাশিতে লগ্ন ও শনি; মকরে মঙ্গল, বুধ ও শুক্র; কুম্ভে
রবি, রাহু; মিথুনে চন্দ্র; কর্কটে বৃহস্পতি ও সিংহে কেতু। ছকটা এঁকে নিন। এখানে
শুক্র নিজেই লগ্নাধিপতি। বৃহস্পতি (কর্কটে তুঙ্গী) ও শুক্র পরস্পরের কেন্দ্রে।
৯ম পতি বুধ ৪র্থ কেন্দ্রে লগ্নপতির সঙ্গে যুক্ত ও তুঙ্গী বৃহস্পতির দ্বারা দৃষ্ট।
নবাংশে ( এখানে দেখান হয় নি ) বুধ স্বক্ষেত্রে অবস্থিত। অতএব ৯ম পতি বুধ বলশালী।
জাতকের ভেরী যোগ হয়েছে এবং যথেষ্ট সুফল ভোগ করেছে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে বৃহস্পতি
শনির ১০ম দৃষ্টির দ্বারা এবং মঙ্গলের ৭ম দৃষ্টির দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় অশুভ। তবে
শনি তুলা লগ্নে রাজযোগকারী গ্রহ (৪র্থ ও ৫ম পতি) হওয়ায় অশুভত্ব অনেক কম। আবার বৃহস্পতি
৩য় ও ৬ষ্ঠ পতিও বটে। এদের অশুভ ফল ত ফলবেই। নিরবচ্ছিন্ন ভাল হয় না কিছু খারাপও
সঙ্গে থাকে।
(১০) শঙ্খ যোগ - ৫ম ও ৬ষ্ঠ পতি পরস্পরের কেন্দ্রে
এবং লগ্নাধিপতি বলশালী হলে এই যোগ হয়।
ফল - আমোদপ্রিয়, সুখী, বিদ্বান ও দীর্ঘজীবী।
উদাহরণ : লগ্ন কুম্ভ; মীনে রাহু; বৃষে শনি ও চন্দ্র; কর্কটে রবি; সিংহে মঙ্গল,
বুধ ও শুক্র; কন্যায় কেতু; বৃশ্চিকে বৃহস্পতি। ছকটা এঁকে নিন। এখানে ৫ম ও ৬ষ্ঠ
পতি যথাক্রমে বুধ ও চন্দ্র পরস্পরের কেন্দ্রে অবস্থিত। দুটি গ্রহই মিত্র ক্ষেত্রে
( চন্দ্র বৃষে শুক্রের ঘরে এবং বুধ সিংহে রবির ঘরে ) অবস্থিত। লগ্নপতি শনি ৪র্থ
কেন্দ্রে বৃষ রাশিতে বন্ধুর ঘরে অবস্থান করে ১০ম দৃষ্টিতে লগ্নকে দেখছে, অতএব লগ্ন
বলযুক্ত হয়েছে। এটি একটি শঙ্খ যোগের উদাহরণ। তবে লগ্নপতি শনি ৬ষ্ঠ পতি চন্দ্রের
সঙ্গে যুক্ত। ৭ম পতি রবি ৬ষ্ঠে রয়েছে এবং শনির দ্বারা দৃষ্ট। কিছু খারাপ ফল ত ফলবেই।
(১১) কালসর্প যোগ (KSY) - সব গ্রহ রাহু ও কেতুর মধ্যবর্তী হলে কালসর্প যোগ হয়। ধরা যাক মেষে রাহু ও তুলায় কেতু এবং বাকী সব গ্রহ ও লগ্ন বৃষ থেকে কন্যা রাশিতে আছে। এটা কালসর্প যোগ। অনেকে বলেন রাহু ও কেতুর মধ্যবর্তী না হয়ে কেতু ও রাহুর মধ্যবর্তী হলেও এই যোগ হবে। এই যোগটিকে অনেকেই ভীতিপ্রদ বলে মনে করেন। কিন্তু বাস্তবে সব সময়ে তা নয় বলেই দেখা গেছে। তবে রাহু - কেতু লগ্নে ও ৭মে অবস্থিত হলে বিবাহিত জীবনে সমস্যা হতে পরে ( যদি অন্য শুভ যোগ না থাকে ); ২য় ও ৮মে হলে অর্থ উপার্জ্জনে বাধা সৃষ্টি হতে পারে; ৪র্থ ও ১০ম ক্ষেত্রে হলে কর্ম ক্ষেত্র ও গৃহসুখের হানি হতে পারে ইত্যাদি। তবে লগ্ন যদি এই অর্ধ বৃত্তের বাইরে থাকে তবে যোগের প্রভাব ক্ষীণ হয় এবং একটি গ্রহও যদি রাহু বা কেতুর সঙ্গে থাকে তবে এই যোগ ভঙ্গ হয়। George W Bush যিনি পর পর দু'বার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেণ্ট ছিলেন, তার ছকেও এই কালসর্প যোগ ছিল। অন্যান্য গ্রহের অবস্থান শুভ হলে এই যোগ থেকে অযথা ভয় পাবার কোন কারণ নেই।
(১২) সরস্বতী যোগ - বৃহস্পতি, শুক্র ও বুধ
কোন কুণ্ডলীতে এক সঙ্গে বা পৃথক ভাবে যদি ২য়, ৪র্থ, ৫ম, ৭ম, ৯ম, ১০ম ঘরে অবস্থান
করে তবে এই যোগ হয়।
ফল - কবি, লেখক, বহু বিষয়ে জ্ঞান, প্রশংসিত ও সম্মানিত, স্ত্রী ও সন্তান বিষয়ে
শুভ।
বৃহস্পতি, শুক্র ও বুধ এই তিনটি নৈসর্গিক শুভ গ্রহের উল্লিখিত ঘর গুলিতে অবস্থানের
সম্ভাবনা মোটেই বিরল নয় এবং অনেক জন্মকুণ্ডলীতেই হয় ত এই যোগ পাওয়া যাবে। প্রসঙ্গত
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছকে এই যোগ ছিল। কিন্তু যাদেরই এই যোগ রয়েছে তারা
ত সবাই রবীন্দ্রনাথের মত বিরল প্রতিভা ও সম্মানের অধিকারী নন। সেই জন্যই বলা হয়েছে
যে কোন যোগের ফল সঠিক ভাবে পেতে হলে গ্রহকে শক্তিশালী হতে হবে এবং তাদের অবস্থান
কোন অশুভ গ্রহের সংযোগ বিহীন হওয়াও প্রয়োজন। এই যোগের ফলে বলা হয়েছে স্ত্রী ও সন্তান
বিষয়ে শুভ; কিন্তু রবীন্দ্রনাথ এই বিষয়ে শোক পেয়েছেন যথেষ্ট। কারণ এই যোগ জনিত
গ্রহসংস্থান এবং অন্যান্য গ্রহের অবস্থান রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বকবি হিসাবে পরিচিতি
দিলেও তাঁর জায়া ও সন্তান স্থান অন্যভাবে ক্লীষ্ট ছিল। এই ভাবে সামগ্রিক দৃষ্টিতে
কোন কুণ্ডলী বিচার করতে না পারলে, শুধু আক্ষরিক অর্থে বিশ্লেষণ করলে সঠিক ফল বের
করে আনা কঠিন। রবীন্দ্রনাথের জন্মকুণ্ডলী পরে বিশদ ভাবে বিশ্লেষণ করা হবে।
(১৩) গৌরী যোগ - রাশিচক্রের ১০ম পতি নবাংশে
যে রাশিতে থাকবে, তার অধিপতি যদি রাশিচক্রে তুঙ্গী হয়ে লগ্ন থেকে ১০মে থাকে তবে
এই যোগ হয়। অনেক জ্যোতিষী মনে করেন, যদি ৯ম পতি এবং চন্দ্র রাশিচক্রে তুঙ্গী বা
স্বক্ষেত্রগত হয়ে লগ্ন থেকে কেন্দ্র বা কোণে অবস্থান করে, তা হলেও এই যোগ হয়।
ফল - সম্ভ্রান্ত, উচ্চ পদাধিকারী, সবার দ্বারা প্রশংসিত।
উদাহরণ স্বরূপ এই ছকটি এঁকে নিন। রাশিচক্র - মিথুনে বুধ, রাহু, শুক্র; কর্কটে বৃহস্পতি,
রবি, মঙ্গল; কন্যায় চন্দ্র; লগ্ন তুলা; ধনুতে কেতু এবং মীনে শনি। নবাংশচক্র - মিথুনে
বুধ; কর্কটে কেতু; ধনুতে রবি ও শনি; মকরে রাহু; কুম্ভে মঙ্গল, শুক্র এবং মীনে লগ্ন,
বৃহস্পতি ও চন্দ্র। এখানে ১০ম পতি চন্দ্র নবাংশে মীনে রয়েছে এবং মীনের অধিপতি বৃহস্পতি
রাশিচক্রে ১০মে ( কর্কটে ) তুঙ্গী। অতএব গৌরী যোগ হয়েছে। জাতক উচ্চ পদে আসীন সরকারী
অফিসার এবং প্রশংসনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন।
মন্ত্রেশ্বর রচিত ফলদীপিকায় গৌরী যোগের একটা অন্য রকম গ্রহ বিন্যাসের কথা বলা হয়েছে। তার মতে চন্দ্র যদি স্বক্ষেত্র বা তুঙ্গী ক্ষেত্রগত হয়ে লগ্ন থেকে কেন্দ্র বা কোণে অবস্থান করে এবং বৃহস্পতির দ্বারা দৃষ্ট হয়, তা হলেও গৌরী যোগ হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জন্মকুণ্ডলীতে এই যোগ রয়েছে।
(১৪) লক্ষ্মী যোগ - বিভিন্ন জ্যোতিষীর এই
যোগের বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। সেগুলি হল - (ক) লগ্নপতি এবং ৯ম পতি যদি শক্তিশালী
হয়ে যুক্ত থাকে; (খ) ৯ম পতি যদি কেন্দ্র, ত্রিকোণ বা তুঙ্গ স্থানে অবস্থিত হয়;
(গ) ৯ম পতি এবং শুক্র যদি কেন্দ্রে বা কোণে স্বক্ষেত্রে বা তুঙ্গক্ষেত্রে অবস্থিত
হয়।
ফল - জাতক বিত্তবান, বিদ্বান ও সুনামের অধিকারী হয় এবং জীবনে সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য
ভোগ করে।
এখানে মূল যে জিনিসটি খেয়াল রাখতে হবে সেটি হল, ৯ম পতি, লগ্নপতি ( এবং সম্ভব হলে
শুক্র ) খুব শক্তিশালী হয়ে কুণ্ডলীতে অবস্থান করতে হবে। কতটা সম্পদের অধিকারী জাতক
হবে সেটা নির্ভর করবে গ্রহের বলের উপর। উদাহরণ হিসাবে চিত্র ১৪(৩) এর কুণ্ডলীটি
নেওয়া যেতে পারে। এখানে ৯ম পতি বৃহস্পতি তুঙ্গী নয় ঠিকই কিন্তু লগ্ন কেন্দ্রে দিকবল
যুক্ত হয়ে অবস্থিত। লগ্নপতি ১০ম কেন্দ্রে তুঙ্গী ও বর্গোত্তম; শুক্রও তুঙ্গক্ষেত্রে
অবস্থিত। জাতক ধীরে ধীরে যথেষ্ট অর্থ সঞ্চয় করেছে এবং জীবনে অনেক বাধা বিপত্তির
সম্মুখীন হলেও পরিশেষে সম্মান ও প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সম্পূর্ণ দোষমুক্ত যোগ পাওয়া
খুব শক্ত। এখানেও বৃহস্পতি নীচস্থ শনির সঙ্গে যুক্ত এবং মঙ্গলও রাশিসন্ধিতে অবস্থিত
হওয়ায় কিছুটা বলহীন হয়েছে। তা সত্বেও যোগটি যথেষ্টই ফলদান করেছে।
(১৫) জয় যোগ - ৬ষ্ঠ পতি যদি নীচস্থ হয় এবং
১০ম পতি যদি তুঙ্গী হয়ে কোন কুণ্ডলীতে অবস্থান করে, তা হলে জয় যোগ হয়।
ফল - সুখী, শত্রুজয়ী, প্রায় সব কাজে সফল এবং দীর্ঘজীবী।
৬ষ্ঠ স্থান এবং ৬ষ্ঠপতি বাধা বিপত্তির কারণ। এই স্থান শত্রুতা, রোগ, মামলা মোকদ্দমা ইত্যাদির সূচনা করে। ৬ষ্ঠ পতি দুর্বল হলে এগুলি জাতকের খুব ক্ষতি করতে পারে না। পক্ষান্তরে ১০ম স্থান এবং ১০ম পতির অবস্থা থেকে কর্মক্ষেত্র, জীবিকা, সম্মান ইত্যাদির বিচার হয়। ১০ম পতি তুঙ্গী হলে ( অবশ্যই কোন অশুভ প্রভাব থাকা চলবে না ) এ সব থেকে সফলতা আশা করা যায়; অতএব এই যোগের ফল ফলবার সম্ভাবনা সমধিক। তবে সঠিক ফল পেতে হলে যোগকারক গ্রহের বল বিচার অবশ্যই করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ ১৪(৭) কুণ্ডলীটি দেখান হল।
ছকটিতে লগ্ন বৃশ্চিক, লগ্নপতি মঙ্গল কর্কট রাশিতে নীচস্থ। ১০ম পতি রবি মেষ রাশিতে তুঙ্গী। অতএব নিয়ম অনুযায়ী জয় যোগ হয়েছে। কিন্তু এখানে যোগের ফল শুধু আংশিক ভাবে ফলেছে। কারণ, এখানে মঙ্গল ৬ষ্ঠ পতি ঠিকই কিন্তু লগ্ন পতিও বটে এবং মঙ্গল নীচস্থ হওয়াতে লগ্নটিও কিছুটা শক্তিহীন হয়েছে। ছকটিতে মঙ্গল শুধু লগ্নপতি নয়, চন্দ্র লগ্নেরও অধিপতি; অতএব দু দিক দিয়েই খারাপ। আবার রবি মেষে তুঙ্গী ঠিকই কিন্তু রবি ৬ষ্ঠে অবস্থিত এবং ৬ষ্ঠ দুঃস্থান হওয়াতে এখানে রবির অবস্থান কাঙ্খিত নয়। এ ছাড়া লগ্ন ও চন্দ্র শনির সঙ্গে যুক্ত থাকায় ছকটি দুর্বল হয়েছে। কাজেই, সে ভাবে ফল ফলবে না। আবার মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আক্ষরিক অর্থে যোগ তৈরী হলেই হবে না। সঠিক ফল পাবার জন্য গ্রহের অবস্থান, কারকত্ব ও বল বিচার্য এবং লগ্নেরও জোর থাকা দরকার।
(১৬) ভেসি যোগ ( vesi yog ) - রবির ২য়ে চন্দ্র,
রাহু ও কেতু ছাড়া অন্য গ্রহ থাকলে এই যোগ হয়।
ফল - ভাগ্যবান, সুখী, ধার্মিক, বিখ্যাত ও সম্ভ্রান্ত
যদি ২য়ে শুভ গ্রহ থাকে তবে শুভ ভেসি যোগ ও পাপগ্রহ থাকলে পাপ ভেসি যোগ হয়। পাপ
ভেসি যোগ হলে ফল অবশ্যই উপরে লিখিত ফলের সঙ্গে মিলবে না, ফল হবে বীপরিত। ফল কতটা
ফলবে সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে রবি ও ২য়ে অবস্থিত গ্রহের বলের উপর। ধরা যাক একটি
ছকে লগ্ন কর্কট। ২য় পতি রবি ১০মে মেষ রাশিতে তুঙ্গী এবং রবির ২য়ে বৃষ রাশিতে শুক্র
( ৪র্থ ও ১১শ পতি ) স্বক্ষেত্রে অবস্থিত। এখানে রবি ও শুক্র অত্যন্ত বলশালী হওয়ায়
ভেসি যোগের ফল অত্যন্ত জোরাল হবে। তবে ফল হবে কিন্তু রবি ও শুক্রের দশা অন্তর্দশায়।
এই বার কর্কট লগ্নের ছকটিতে যদি রবি তুলা রাশিতে নীচস্থ থাকে এবং ২য়ে বৃশ্চিক রাশিতে
শুক্র থাকে তা হলে ফল নিশ্চয়ই এক রকম হবে না।
চিত্র ১৪(৮)-এ ভেসি যোগের একটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। রবির ২য়ে মঙ্গল, বুধ ও শুক্র অবস্থিত থাকায় ভেসি যোগ হয়েছে। তবে বুধ ও শুক্র শুভ গ্রহ হলেও মঙ্গল অশুভ। কিন্তু জ্যোতিষী বি. ভি. রমন ব্যাখ্যা করেছেন, যেহেতু মঙ্গল রবি থেকে প্রায় ২৯ ডিগ্রি দূরে রয়েছে অতএব মঙ্গলের অশুভত্ব অন্য দুটি গ্রহের ফলফলে বিঘ্ন ঘটাবে না। উপরন্তু লগ্নের ৭মে গ্রহের জন্য ভেসি যোগ হওয়াতে, জাতক শুভ ফল যা ভোগ করবে তা মুখ্যতঃ ৭ম ভাব সম্বন্ধীয়। মঙ্গল যদি অপেক্ষাকৃত কাছে থাকত, তবে ফল কিন্তু অত ভাল হত না। বোঝাই যাচ্ছে, সঠিক ফল বলতে পারার জন্য সুক্ষ বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে।
১৭. ভাসি যোগ ( vasi yog ) - রবির ১২শে চন্দ্র,
রাহু ও কেতু ছাড়া অন্য গ্রহ থাকলে এই যোগ হয়।
ফল - সুখী, প্রতিষ্ঠিত, শাসক শ্রেণীর প্রিয়।
ভেসি যোগের মত এখানেও শুভ ভাসি ও পাপ ভাসি যোগ হবে। বিচারও একই ভাবে করতে হবে।
১৮. অমলা যোগ - লগ্ন বা চন্দ্র থেকে ১০মে শুভ গ্রহ অবস্থিত হলে এই যোগ হয়।
ফল - স্থায়ী নাম, যশ, খ্যাতি, নিষ্কলঙ্ক চরিত্রের অধিকারী।
অন্যান্য যোগের মত এখানেও ফলের গভীরতা নির্ভর করবে ১০মে স্থিত গ্রহের বলের উপর।
যে কোন কুণ্ডলীতে ১০ম হল সব চেয়ে শক্তিশালী কেন্দ্র; সেখানে জোরাল শুভ গ্রহের অবস্থান
যে কোন জাতকের পক্ষে অত্যন্ত শুভ দায়ক হবে সেটা বলাই বাহুল্য।
চিত্র ১৪(৯) ও চিত্র ১৪(১০)-এর কুণ্ডলী দুটি পরীক্ষা করা যাক। ১৪(৯) চিত্রে লগ্নের ১০মে বৃহস্পতি রয়েছে কিন্তু সঙ্গে শনিও আছে; তাদের দূরত্ব মাত্র ৩ ডিগ্রি। অতএব বৃহস্পতির শুভত্ব যথেষ্ট হ্রাস হয়েছে। আবার চন্দ্র থেকেও ১০মে শুক্র মীন রাশিতে তুঙ্গী অবস্থায় রয়েছে কিন্তু সঙ্গে রবি এবং কেতুও রয়েছে, পরস্পরের দূরত্ব প্রায় ৩-৪ ডিগ্রি। অতএব এই কুণ্ডলীতে স্বাভাবিক কারণেই যোগ কারক গ্রহ সে রকম জোরাল ফল দিতে পারে নি। যদিও কিছু ফল হয়েছে। পক্ষান্তরে ১৪(১০)-এ দেখান ছকটিতে লগ্নের ১০মে শুক্র ও বুধ অবস্থিত। শুক্র নীচস্থ হলেও বুধের সঙ্গে ১০ম কেন্দ্রে থাকায় শুক্রের নীচ ভঙ্গ হয়েছে। বুধ ও শুক্র কোন অশুভ গ্রহ দ্বারা দৃষ্ট নয়। আবার চন্দ্র থেকেও ১০মে বৃহস্পতি থাকায় চন্দ্রের সাপেক্ষেও অমলা যোগ হয়েছে। এখানে ১০মে গ্রহদের অবস্থান অত্যন্ত ভাল এবং এদের দশা অন্তর্দশায় যে অমলা যোগের ফল ফলবে তা অবশ্যই খুব শুভ।
বিঃ দ্রঃ : উপরে কয়েকটি মাত্র যোগের কথা বলা হল। এ ছাড়াও গ্রহের বিভিন্ন ধরণের অবস্থানের জন্য অন্য অনেক যোগ হওয়া সম্ভব। কোন জন্ম কুণ্ডলী বিশ্লেষণের সময় এ রকম কোন যোগ থাকলে সেটা সেখানেই উল্লেখ করা হবে।
গোড়ার কথা
তাত্বিক আলোচনা ক্রমাগত চলতে থাকলে একঘেয়েমি ছাড়াও বাস্তব দিকটা উপেক্ষিত হবার সম্ভাবনা থাকে। এই অনুচ্ছেদে কয়েক জন বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্মকুণ্ডলী সম্বন্ধে আলোচনা করা হবে। যে সব নিয়ম আগেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে সেই সূত্র ধরেই বিচার বিশ্লেষণ অনেকটাই সম্ভব। জ্যোতিষ শাস্ত্রকে যারা গভীর ভাবে ভালবাসেন বা এটাকে যারা পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন তাদের অনেকেরই শত শত শ্লোক মুখস্থ থাকে এবং প্রয়োজন মত সেগুলি তারা প্রয়োগ করেন। এর জন্য বিষয় বস্তু সম্বন্ধে গভীর অনুরাগ ছাড়াও, সময়, অধ্যবসায় ও মনঃসংযোগ প্রয়োজন। এটা না হলেও প্রাথমিক ভাবে কয়েকটি সাধারণ নিয়ম আয়ত্ব করে বেশ কিছু ফল বলা সম্ভব এবং সেই চেষ্টাকে ফলপ্রসূ করাই এই ধারাবাহিক লেখার উদ্দেশ্য।
যে কোন কুণ্ডলী নির্ভুল বিচারের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন সঠিক জন্ম সময়ের। অনেক ক্ষেত্রেই এটা পাওয়া খুব দুষ্কর। মনে রাখতে হবে ৪ মিনিট সময় হেরফের হলে লগ্নের ১ ডিগ্রি পরিবর্তন হতে পারে। অনেক বিখ্যাত লোকের জন্মকুণ্ডলী যা বিভিন্ন বইতে বা অন্যত্র প্রকাশ করা হয়েছে তাতে জন্ম সময়ের অনেক তারতম্য দেখা যায়। এর ফলে অনেক সময় গ্রহের অবস্থান এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে সরে যেতে পারে। আরও সূক্ষ্ম ভাগে বিভিন্ন বর্গ বিচার করলে ত এর সম্ভাবনা আরও বেশী। এই তারতম্যের জন্য জাতকের চরিত্রগত মূল বৈশিষ্ট্য কিছুটা বিশ্লেষণ করা সম্ভব হলেও কোন ঘটনা সম্বন্ধে নির্দ্দিষ্ট ভাবে কিছু বলা শক্ত। যে কয়েক জন বিখ্যাত ব্যক্তির জন্ম কুণ্ডলী এই অনুচ্ছেদে বিশ্লেষণ করা হবে এরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন অথবা তাদের বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বা কর্মকাণ্ডের জন্য ইতিহাসে স্থান পেয়েছেন। প্রতিটি কুণ্ডলী বিশ্লেষণের আগে এদের জীবনের কিছু বিশেষ দিক বা ঘটনা তুলে ধরা হবে যা কুণ্ডলীর বিচার বিশ্লেষণের জন্য প্রয়োজন।
কোন কুণ্ডলীতে গ্রহদের অবস্থান জন্মের সময়েই
নির্দিষ্ট হয়ে যায়; জাতকের জীবদ্দশায় সেটা আর বদলায় না। কিন্তু গ্রহ ত ঘুরেই চলেছে;
ঘুরতে ঘুরতে সেগুলি জাতকের মূল রাশিচক্রের বিভিন্ন স্থান অতিক্রম করে এবং এতে বিভিন্ন
ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা দেখা দেয়। একে বলা হয় গোচর ফল। এটা এখনও আলোচনা করা হয় নি।
বিভিন্ন বর্গ সম্বন্ধে প্রাথমিক ভাবে আলোচনা করা হলেও (অনুচ্ছেদ ৬), সেগুলি নির্ণয়
করার নিয়ম বা তার ব্যবহারের পদ্ধতিও আলোচিত হয় নি। অতএব এগুলি বাদ দিয়েই এই অনুচ্ছেদে
বর্ণিত কুণ্ডলী গুলির বিচার বিশ্লেষণ করা হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভোগ্য দশা দেওয়া
হয়েছে (এটা কি করে বের করতে হয় সেটা খুব বিশদ ভাবে ৯ম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে); সেটা
থেকে যে কোন সময়ের দশা অন্তর্দশা বের করে নেওয়া যেতে পারে।
১. মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী
জন্ম
বিবরণ : ২রা অক্টোবর, ১৮৬৯; সময় : সকাল ৭ - ১২ মিঃ; স্থান : পোরবন্দর, গুজরাট,
ভারতবর্ষ; অক্ষাংশ ২১ ডিঃ ৩৮ মিঃ উত্তর; দ্রাঘিমাংশ ৬৯ ডিঃ ৩৬ মিঃ পূর্ব। লাহিড়ী
অয়নাংশ। ভোগ্য দশা (balance of dasha) : বুধ ২ বছর ৭ মাস ৮ দিন।
বিখ্যাত জ্যোতিষী প্রয়াত বি. ভি. রমন তার
Notable Horoscopes বইতে জন্ম সময় সকাল ৭ - ৪৫ মিঃ ধরেছেন। তবে প্রত্যয়িত তথ্য
ভাণ্ডার (Rodden's Astro-Databank) থেকে সংগৃহীত জন্ম সময় সকাল ৭ - ১২ মিঃ ব্যবহার
করেই বর্তমান কুণ্ডলীটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
জীবনের কিছু ঘটনা :
লণ্ডনে ইউনিভার্সিটি কলেজে আইন নিয়ে পড়াশোনা
করেন। ১৮৯১ খৃষ্টাব্দে ভারতে ফিরে বম্বেতে আইনজীবী হিসাবে কাজ শুরু করেন, কিন্তু
সফল হন নি। এরপর তিনি একটি কোম্পানির চাকরী নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ডারবানে যান।
সেখানে ভারতীয়দের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসাবে গণ্য হতে দেখে তাদের মানবাধিকারের
দাবীতে সোচ্চার হন। ২০ বছর তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিলেন এবং জীবনে অনেকবার কারাদণ্ড
ভোগ করেছেন। সত্যের প্রতি তার ছিল অবিচল নিষ্ঠা। তার আন্দোলন সত্যাগ্রহ নামে অভিহিত
হয়। ১৯২০ সালে আন্দোলন দমনে ভারত সরকারের নিগ্রহ ও আটক আইন চালু করার প্রতিবাদে
গান্ধীজী অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৩২ সালে অস্পৃশ্যতা নীতির প্রতিবাদে তিনি
আমরণ অনশনের কর্মসূচী গ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে তিনি কারারুদ্ধ হন কিন্তু ভগ্ন স্বাস্থ্যের
জন্য তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরাধীনতার গ্লানি থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য তার অহিংস
আন্দোলন দেশব্যাপী সাড়া ফেলে এবং বহু লোক এতে যোগদান করেন।
তার কিছু নিজস্ব চিন্তাধারা ও মতামত অন্যের উপর চাপিয়ে দেবার জন্য ব্যক্তিগত জীবনে
তাকে অনেকবার সমস্যায় পড়তে হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস করার সময় তিনি নিজে পায়খানা
পরিষ্কার করতেন এবং নিজের স্ত্রীকেও সেটা করতে বাধ্য করার জন্য তার স্ত্রী মনে
খুব আঘাত পান। তিনি নিজের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা লাভে উৎসাহিত করেন নি কারণ দেশের
বহু ছেলে মেয়ে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তার এই "সাম্যবাদের" ফলে ক্ষোভ
ও দুঃখে তার বড় ছেলে হরিলাল মদ্যপানে আসক্ত হন এবং মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করেন। তবে
তার অপর পুত্র দেবদাস বাবার পাশেই ছিলেন এবং তাকে বিভিন্ন কাজে সহায়তা করেছেন।
দেশপ্রেম, মানবিক মূল্যবোধ, আত্মত্যাগ, আধ্যাত্মিকতা, অহিংস নীতিতে অবিচল বিশ্বাস
ও মানুষকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসার জন্য তিনি মহাত্মা (great soul) নামে পরিচিত
হন। ১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারী আততায়ীর গুলিতে তার মৃত্যু হয়। তার সম্বন্ধে ১৯৪৪
সালের জুলাই মাসে বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন মন্তব্য করেছিলেন, "
ভবিষ্যতের মানুষ হয়ত বিশ্বাসই করবে না যে রক্ত মাংসের এ রকম এক জন মানুষ সত্যিই
একদিন এই পৃথিবীতে বিচরণ করেছিলেন। "
কুণ্ডলীর বিশ্লেষণ
মহাত্মা গান্ধীর রাশিচক্রটি ১৫(১)ক চিত্রে এবং নবাংশটি ১৫(১)খ চিত্রে দেখান হয়েছে।
(১) লগ্ন তুলা এবং লগ্নপতি (ও ৮ম পতি) শুক্র লগ্নে থাকায় লগ্ন শক্তিশালী হয়েছে। কিন্তু নৈসর্গিক অশুভ গ্রহ মঙ্গল (২য় ও ৭ম পতি) লগ্নপতির খুব কাছে রয়েছে, জীবনী শক্তির কারক গ্রহ রবি ১২শে অবস্থিত এবং লগ্ন ও লগ্নপতি পাপ কর্তরী যোগে (অনুচ্ছেদ ১৩-নিয়ম ১৪) ক্লীষ্ট। এ সব কারণে জাতকের শরীর খুব সবল হবার কথা নয়। অন্যান্য শারীরীক সমস্যাও হয় ত ছিল।
(২) চন্দ্র ১০পতি হয়ে ১০মে অবস্থান করার জন্য গান্ধিজী পবিত্রমনা এবং সৎকার্যে নিরত ছিলেন। রাহু চন্দ্রের সঙ্গে এক রাশিতে থাকলেও তাদের দূরত্ব প্রায় ১৪ ডিগ্রি। তা হলেও মন মাঝে মাঝে সংশয়াচ্ছন্ন ও বিভ্রান্ত হতে পারে। ১০মে রাহুর অবস্থান সাধারণতঃ নতুন কিছু (innovative) কর্মে প্রবৃত্ত করায়। দূরত্ব থাকলেও চন্দ্রের সঙ্গে রাহুর একই রাশিতে ১০মে অবস্থানের জন্য চিন্তাধারা একটু অপ্রচলিত ধরণের ছিল এবং অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষাও তিনি করেছেন।
(৩) লগ্ন বা চন্দ্র থেকে কেন্দ্রে অনেক গ্রহ রয়েছে। লগ্নে শুভ গ্রহ বুধ ও শুক্র, ৭মে বৃহস্পতি ও ১০মে চন্দ্র (যদিও চন্দ্র পক্ষবলে বলী নয় অর্থাৎ শুক্ল পক্ষের চন্দ্র নয়) অবস্থিত হওয়ায় কুণ্ডলীটি সামগ্রিক ভাবে অনেক শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময়।
(৪) মঙ্গল স্বাধীনতা, ক্ষীপ্রতা, ক্রোধ, স্বার্থপরতা ইত্যাদির কারক গ্রহ; কিন্তু মঙ্গলের তুলা লগ্নে ( sign of balance ) ও ১৬ নং বিশাখা নক্ষত্রে (অধিপতি বৃহস্পতি) অবস্থান এবং বৃহস্পতির দ্বারা দৃষ্ট হবার জন্য মঙ্গলের তীব্রতা অনেক হ্রাস পেয়েছে। তার কাজের মধ্যে অনেক সময় একটু আগ্রাসী ও প্রভুত্ব করার মনোভাব থাকলেও কখনই সেটা মাত্রা ছাড়ায় নি এবং অভিমুখ কল্যাণকর হয়েছে।
(৫) 'জাতক ‘জাতক পারিজাত’ গ্রন্থের ৯ম পরিচ্ছেদের ১০ নং শ্লোকে বলা হয়েছে 'বুধ গ্রহ ১০মে অবস্থিত হলে, জাতক নিঃস্বার্থ ভাবে এবং ত্যাগের সঙ্গে কাজ করবে।' ১০ম কর্মস্থান। সেখানে বুধের অবস্থান যদি নিঃস্বার্থভাবে কর্মে প্রবৃত্ত করায়, তবে অবশ্যই বুধের একটি কারকতা হল উদারতা, দয়া, পরোপকার এবং আত্মত্যাগ। এখানে বুধ লগ্ন কেন্দ্রে এবং ১০ম কেন্দ্র ও ১০ম পতি চন্দ্র থেকে ৪র্থ কেন্দ্রে অবস্থিত হয়ে বৃহস্পতি দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় গান্ধীজী জনকল্যাণ মূলক কাজ করে গেছেন।
(৬) গান্ধীজীর ছকে কয়েকটি শক্তিশালী যোগ রয়েছে।
প্রথমতঃ লগ্নপতি শুক্র ও ৯ম পতি বুধ যুক্ত ভাবে লগ্নে রয়েছে ; এটা একটা রাজযোগ।
দ্বিতীয়তঃ লগ্নপতি শুক্র লগ্ন কেন্দ্রে স্বক্ষেত্রে থাকায় মালব্য যোগ হয়েছে এবং
তৃতীয়তঃ বৃহস্পতি ও চন্দ্র পরস্পরের কেন্দ্রে থাকায় গজকেশরী যোগ হয়েছে (অনুচ্ছেদ
১৪)। ৯ম ধর্মস্থান। লগ্নপতি শুক্র ও ৯ম পতি একত্রে লগ্নে থাকায় জাতকের আধ্যাত্মিক
মনোভাব ছিল। মালব্য যোগের ফলে এবং বিশেষ করে শুক্র মঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত থাকায় জাতকের
মনে কখনও কখনও ঈর্ষা, ভোগ বাসনার উদয় এবং প্রভুত্ব করার ইচ্ছা হয় ত হয়েছে কিন্তু
বৃহস্পতির জোরাল দৃষ্টি এই দুই গ্রহের উপর থাকায় কখনই এই চিন্তা তেমন ভাবে কার্যে
পরিণত হয় নি। নবাংশ চক্রে লগ্নের ৭মে বৃষ লগ্নে মঙ্গল, শুক্র ও কেতুর অবস্থান সাধারণ
ভাবে যৌন বিকৃতি নির্দেশ করে। রাশি চক্রে বৃহস্পতির দৃষ্টি মঙ্গল ও শুক্রের উপর
না পড়লে বা গজকেশরী যোগের প্রভাব না থাকলে ফল অন্য রকম হতেও পারত। তার জীবনী যারা
বিশদ ভাবে পড়েছেন তারা ৭মে এই গ্রহ সমাবেশের আংশিক প্রভাব কিছুটা বুঝতে পারবেন।
চন্দ্র ১০ম কেন্দ্রে স্বক্ষেত্রে থেকে বৃহস্পতির সঙ্গে গজকেশরী যোগ তৈরী হওয়ায়
জাতক অসামান্য সম্মান ও স্বীকৃতি পেয়েছেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে বৃহস্পতি নৈসর্গিক
শুভ গ্রহ হলেও তুলা লগ্নের পক্ষে ৩য় ও ৬ষ্ঠ পতি এবং এক্ষেত্রে বক্রী; মাঝে মাঝেই
তিনি শত্রুতা, বাধা বিপত্তি ও সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন। মঙ্গলের ক্ষেত্রে (এখানে
মেষ রাশিতে) বৃহস্পতির অবস্থান এবং তার উপর মঙ্গলের দৃষ্টি মনে অহং বোধের জন্ম
দিতে পারে।
(৭) গান্ধীজীর বাবা একটি ছোট রাজ্যের রাজার
প্রধান উপদেষ্টা (prime minister) ছিলেন। ৯ম (পিতৃস্থান) ভাবের অধিপতি বুধ জাতকের
২য় ভাবের অধিপতি (সঞ্চয়) মঙ্গল ও লগ্নপতি শুক্রের সঙ্গে লগ্নে রয়েছে। কিন্তু পিতৃকারক
গ্রহ রবি ১১শ পতি (আয় স্থান) হয়ে লগ্নের ১২শে (ব্যয় স্থান) অবস্থিত হওয়ায় পিতার
মৃত্যুর সঙ্গে জাতকের আর্থিক ক্ষতির সূচনা করে।
পিতার মৃত্যু হয় ১৮৮৫ খৃষ্টাব্দে শুক্রের দশা ও মঙ্গলের অন্তর্দশায়। শুক্র পিতৃস্থান
৯ম ঘরের ১২শ স্থানের অধিপতি। চন্দ্র থেকে ৯ম স্থানের ২য় (মারক) স্থানের অধিপতি
মঙ্গল। আবার মঙ্গল ও শুক্র পিতৃকারক গ্রহ রবির ২য় স্থানে (মারক স্থান) অবস্থিত।
অতএব শুক্র - মঙ্গলে পিতার মৃত্যু অপ্রত্যাশিত নয়।
(৮) গান্ধীজী বিয়ে করেন মাত্র ১৩ বছর বয়সে শুক্র-শুক্র দশা অন্তর্দশায়। ৭ম পতি মঙ্গল এবং বিবাহের কারক গ্রহ শুক্র (ও লগ্ন পতি) একত্রে লগ্নে অবস্থান করে ৭মে দৃষ্টি দিচ্ছে - ফল অল্প বয়সে বিয়ে। তবে এখনকার দিনে এই যোগে এত অল্প বয়সে হয় ত কারোর বিয়ে হত না। দেশ, কাল, পাত্রের প্রভাব মানতে হবে (অনুচ্ছেদ ১৩-২৬ নং নিয়ম)। অতএব শুক্র-শুক্র দশা-অন্তর্দশায় বিয়ে হওয়াটা খুব স্বাভাবিক।
(৯) উপরে পিতৃকারক গ্রহ হিসাবে রবির ১২শে (ব্যয় স্থান) অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু রবির এই অবস্থানের অন্য একটি ব্যাখ্যা রয়েছে। রবি অহংকার, আত্মাভিমান ইত্যাদিরও কারক। তার ১২শে অবস্থানের অর্থ হল জাতকের অহং বোধ (ego) সে ভাবে কখনও মাথা তুলতে পারে নি। ১২শে রবির অবস্থান আধ্যাত্মিকতা নির্দেশ করে কারন অহং বোধের হ্রাসই আধ্যাত্মিক জ্ঞানের জন্ম দেয়। ১১শ পতি ১২শে থাকার অর্থ তিনি চহিদাকে যথেষ্ট ছেঁটে ফেলতে পেরেছেন। রবি রাজনীতিরও কারক গ্রহ। তার সম্বন্ধে যাই প্রচার থাক, গ্রহের অবস্থান থেকে এটা মোটামুটি স্পষ্ট যে তিনি মাঝে মাঝে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন ঠিকই কিন্তু মন থেকে তিনি কখনও রাজনীতির মাধ্যমে ক্ষমতা লাভের চেষ্টা করেন নি।
(১০) ১৮৮৮ খৃষ্টাব্দে গান্ধীজীর প্রথম পুত্র
হরিলালের জন্ম হয়। এই সময় তার শুক্র-রাহুর দশা-অন্তর্দশা চলছিল। ৫ম স্থান থেকে
এবং কারক গ্রহ বৃহস্পতির থেকে সন্তানের বিচার হয়। চন্দ্র থেকে ৫ম পতি মঙ্গল ১৬
নং বিশাখা নক্ষত্রে (অধিপতি বৃহস্পতি - অনুচ্ছেদ ৯) রয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে
লগ্নে অবস্থিত মঙ্গল, বুধ ও শুক্র তিনটি গ্রহই বৃহস্পতির (পুত্র কারক গ্রহ) নক্ষত্রে
অবস্থিত এবং তিনটি গ্রহই বৃহস্পতির দ্বারা দৃষ্ট। আগেই বলা হয়েছে (অনুচ্ছেদ ৫)
যে রাহুর বৈশিষ্ট্য ঠিক শনির মত, 'শনিবৎ রাহু'। চন্দ্রের ৫মে শনি অবস্থিত অতএব
শুক্র - রাহুর দশা-অন্তর্দশায় সন্তানের জন্ম সম্ভব।
শুক্র-রাহুর দশা-অন্তর্দশাতেই গান্ধীজী বৃটেনে যান আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে। ৪র্থ
স্থান থেকে বিদ্যা লাভের বিচার হয় (এ সম্বন্ধে পরে বিশদ ভাবে আলোচনা করা হবে)।
চন্দ্র থেকে ৪র্থের অধিপতি শুক্র স্বক্ষেত্রে ৪র্থে অবস্থিত। আইনের কারক গ্রহ বৃহস্পতি
শুক্রকে দৃষ্টি দিচ্ছে। লগ্ন থেকে ৪র্থে মকর রাশিকে রাহু দৃষ্টি দিচ্ছে। রাহু ৮ম
নক্ষত্র পুষ্যাতে (অধিপতি শনি) অবস্থিত। ৭ম ও ৯ম স্থান সাধারণতঃ দূর দেশ ভ্রমণ
বা বিদেশ যাত্রা নির্দেশ করে। ৭মে বৃহস্পতি অবস্থিত এবং ৪র্থ পতি শুক্রকে দৃষ্টি
দিচ্ছে। ৯ম পতি বুধ বৃহস্পতির নক্ষত্রে এবং শুক্রের সঙ্গে লগ্নে অবস্থিত। রাহু
বিদেশ যাত্রার কারক গ্রহ (অনুচ্ছেদ ৫)। অতএব শুক্র-রাহুর দশা-অন্তর্দশায় আইন শিক্ষা
লাভের জন্য বিদেশ যাত্রা সম্ভব। অন্য একটি বিষয়ে দৃষ্ট রাখা দরকার। রাহু বৃহস্পতি,
বুধ ও শুক্রের কেন্দ্রে অবস্থিত। কেন্দ্রে অবস্থিত সব গ্রহই একে অন্যকে প্রভাবিত
করে। এখানে অন্য একটি ব্যাখ্যাও সম্ভব। ৪র্থ স্থান (এখানে মকর রাশি) যেমন বিদ্যালাভ
বোঝায় তেমনি ৪র্থ স্থান থেকে গৃহ ও বাসস্থানেরও বিচার হয়। রাহু ও শনি বিচ্ছেদকারক
গ্রহ (separative planet) হিসাবে চিহ্ণিত। ৪র্থ স্থানকে রাহু দৃষ্টি দেওয়ায় রাহুর
দশা বা অন্তর্দশায় গৃহ থেকে বিচ্ছেদ বা বিদেশ যাত্রা বোঝাতে পারে।
(১১) ১৮৯২ খৃষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে শুক্র-শনি দশা-অন্তর্দশায় গান্ধীজীর ২য় পুত্র মণিলাল এবং ১৮৯৭ সালে শুক্র-বুধে ৩য় পুত্র রামদাস জন্ম গ্রহণ করে। চন্দ্র থেকে ৫ম পতি মঙ্গল ও বুধের সঙ্গে যুক্ত। মঙ্গল, বুধ ও শুক্র তিনটি গ্রহই পুত্রকারক বৃহস্পতির নক্ষত্রে স্থিত এবং বৃহস্পতির দ্বারা দৃষ্ট। এ ছাড়া চন্দ্রের ৫মে শনি অবস্থিত। অতএব উক্ত দশা-অন্তর্দশায় পুত্রের জন্ম সম্ভব।
(১২) গান্ধীজী একজন সুলেখক ছিলেন। কিছু পত্রিকাও তিনি সম্পাদনা করেছেন; গ্রন্থও প্রকাশ করেছেন। ৩য় স্থান বা ভাব থেকে ছাপার অক্ষরে কিছু প্রকাশ করা বোঝায়; বুধ হল এর কারক গ্রহ। এখানে ৩য় পতি বৃহস্পতি ৭ম কেন্দ্র থেকে ৩য়ে দৃষ্টি দেওয়ায় ৩য় ভাবটি শক্তিশালী হয়েছে। আবার বৃহস্পতি লগ্নের ৭মে অবস্থিত হয়ে বুধকেও দৃষ্টি দিচ্ছে। চন্দ্র থেকে বিচার করলেও ৩য় পতি বুধ নিজেই চন্দ্র থেকে ৪র্থ কেন্দ্রে অবস্থান করছে।
(১৩) গান্ধিজী অনেকবার কারাবরণ করেছেন। দেখা গেছে যে, লগ্ন বা লগ্নপতির সঙ্গে ৬ষ্ঠ ও ৮ম পতির যোগ জাতককে কারাগারে রুদ্ধ করে। এখানে লগ্ন পতি (ও ৮ম পতি) শুক্র লগ্নে অবস্থিত এবং ৬ষ্ঠ পতি বৃহস্পতির দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় এই কারাবরণ যোগটি হয়েছে। এটাও লক্ষ্য করার মত যে, লগ্ন ও লগ্নপতি একদিকে রবি এবং অন্য দিকে শনির দ্বারা পাপকর্তরী যোগে আবদ্ধ।
(১৪) মহাত্মা গান্ধী নিহত হন ১৯৪৮ খৃষ্টাব্দের ৩০ শে জানুয়ারী আততায়ীর গুলিতে। তখন বৃহস্পতি-কেতুর দশা-অন্তর্দশা চলছিল। বৃহস্পতি লগ্নের ৭মে (মারক স্থান) অবস্থিত এবং ২য় ও ৭ম পতি (দুই মারকাধিপতি ) মঙ্গল দ্বারা দৃষ্ট। আবার চন্দ্র লগ্ন থেকে কেতু ৭মে অবস্থিত এবং ৭ম ও ৮ম পতি ( চন্দ্র থেকে ) শনির দ্বারা দৃষ্ট। ‘কুজবৎ কেতু’ (অনুচ্ছেদ ৫) অনুসারে কেতুর বৈশিষ্ট্য মঙ্গলের মতই। মঙ্গল রক্তপাত ও হিংসাত্মক ঘটনা নির্দেশ করে। চন্দ্র থেকে ৭ম স্থানে ৩টি অশুভ শক্তির সমাবেশ হয়েছে - কেতুর অবস্থান, শনি ও মঙ্গলের দৃষ্টি। চন্দ্র থেকে ২য় (মারক স্থান) পতি রবির নক্ষত্রে অবস্থিত হওয়ায় বৃহস্পতির মারকত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে (বৃহস্পতি ৩ নং নক্ষত্র কৃত্তিকায় অবস্থিত, কৃত্তিকার অধিপতি বৃহস্পতি)। বৃহস্পতি-কেতুর দশা-অন্তর্দশায় তাই আততায়ীর গুলিতে প্রাণত্যাগ করা অস্বাভাবিক নয়।
২. মেরিলিন মনরো (Marilyn Monroe)
জন্ম
বিবরণ : ১লা জুন, ১৯২৬ খৃষ্টাব্দ; সকাল ৯ - ৩০ মিঃ; স্থান : Los Angeles, CA, USA;
34 N 04, 118 W 15; Time Zone : PST 8-0-0 hr West। লাহিড়ী অয়নাংশ। ভোগ্য দশা (balance
of dashaa) : মঙ্গল ৫ বছর ৫মাস ১৬ দিন।
জীবনের কিছু ঘটনা:
জন্ম সময়ে তার নাম ছিল Norma Jeane Mortenson। তিনি ছিলেন অভিনেত্রী, গায়িকা এবং মডেল। ১৯২৪ খৃষ্টাব্দে Gladys Pearl Baker ( পারিবারিক পদবী ছিল মনরো ) এর সঙ্গে Martin E. Mortenson এর বিবাহ হয় এবং ২ বছর পরেই Gladys এর স্বামী Martin বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেন। সমস্ত জীবনে মেরিলিন Motenson কে তার বাবা বলে স্বীকার করেন নি। মা Gladys মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন এবং আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যও ছিল না। এ অবস্থায় তিনি তার বাবা মার কাছে মেরিলিনকে রেখে আসেন এবং ৭ বছর বয়স পর্যন্ত মেরিলিন সেখানেই ছিলেন। একদিন এক অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটল। মেরিলিনের কাছে হঠাৎ তার মা Gladys এসে হাজির, তিনি মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু মেরিলিনের দিদিমা মেরিলিনকে ছাড়তে রাজি নন, কারণ Gladys মানসিক ভাবে অসুস্থ। ঝগড়া ও তর্কাতর্কির এক ফাঁকে Gladys মেরিলিনকে একটা বড় ব্যাগের মধ্যে ভরে ফেলেন এবং চেন আটকে মেরিলিনকে বয়ে নিয়ে যেতে উদ্যত হন। ব্যাগের মধ্যে ছোট্ট মেরিলিন তখন পরিত্রাহী চীৎকার করে চলেছে।
১৯৩৩ সালে Gladys একটি বাড়ি কিনে মেরিলিনকে নিয়ে আসেন কিন্তু কিছুদিন পরেই তিনি মানসিক রোগে আক্রান্ত হন এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। মেরিলিন মা'র বন্ধু Grace McKee-র কাছে থাকতে শুরু করেন। Grace মেরিলিনকে সঙ্গে নিয়ে সিনেমায় যেতেন এবং বলতেন 'তুমি একদিন অভিনেত্রী হবে'। পরবর্তী কালে মেরিলিন Grace-এর এই ভালবাসার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেছেন। Grace-ই মেরিলিনের মনে চলচ্চিত্র সম্বন্ধে কৌতূহল জাগিয়ে তোলেন। কিন্তু ১৯৩৫ খৃষ্টাব্দে Grace বিয়ে করার পর মেরিলিনের স্থান হয় অনাথ আশ্রমে। ১৯৩৭ সালে Grace আবার মেরিলিনকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনেন কিন্তু সেখানে ১১ বছরের মেরিলিন Grace-এর এক আত্মীয়ের যৌন নির্যাতনের শিকার হন। নিরুপায় Grace মেরিলিনকে তার এক পিসিমার কাছে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু সেখানেও পিসিমার ছেলে মেরিলিনের উপর অত্যাচার করে - মেরিলিনের স্থান হয় আর এক কাকিমা Ana Lower-এর কাছে। এখানেই ১২ বছরের মেরিলিন একটু শান্তি পায়। ১৯৪২ সালে Ana শারীরিক ভাবে ভীষণ অসুস্থ হযে পড়লে আবার সমস্যার সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে মেরিলিন প্রতিবেশীর ছেলে Jim-এর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। বিভিন্ন সময়ে একাধিক পরিবার মেরিলিনকে দত্তক হিসাবে গ্রহণ করতে চাইলেও মেরিলিনের মা Gladys রাজী হন নি। ১৯৪২ সালে ১৬ বছর বয়সে মেরিলিন Jim কে বিয়ে করেন।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় সৈন্য বাহিনীর ফটোগ্রাফার David Conover একটা পত্রিকার জন্য মেরিলিনের একটা ছবি তোলেন। ছবিটি প্রশংসিত হয়। এ ভাবেই মেরিলিনের মডেল দুনিয়ায় প্রবেশ। একাধিক পত্রিকায় তার ছবি ছাপা হতে থাকে। এদিকে Jim মেরিলিনকে জানিয়ে দেয় তার সঙ্গে থাকতে হলে মডেলিং ছাড়তে হবে। কিন্তু মডেলিং পেশায় ভবিষ্যতের সম্ভাবনার কথা ভেবে মেরিলিন Jim এর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পথেই হাঁটেন। মডেলিং এর মাধ্যমেই তিনি 20th Century Fox-এর এক কর্তা ব্যক্তির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ; এভাবেই তার চলচ্চিত্রের জগতে আগমন ঘটে। প্রকৃত পক্ষে এখানেই তার নাম হয় Norma Jeane থেকে Marilyn Monroe। মেরিলিন জীবনে খ্যাতি এবং স্বীকৃতি হয় ত অনেক পেয়েছেন কিন্তু অল্প বয়সের বঞ্চনা এবং বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তার জীবনে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে।
চলচ্চিত্রে তার যাত্রা শুরু হয় ১৯৫০ সালে
The Ashphalt Jungle নামে ছবি দিয়ে। Gentlemen Prefers Blondes (1953), How to
Marry a Millionaire (1954) ইত্যাদি চলচ্চিত্র তাকে যথেষ্ট সুনাম এনে দেয়। ১৯৫১
থেকে ১৯৬২ সালের মধ্যে অনেক পুরষ্কার তিনি পেয়েছেন। বহু গান তিনি গেয়েছেন। মা'র
মত তিনিও মানসিক বিষাদ ও হতাশায় ভুগতেন। এ জন্য বেশ কয়েকজন মনরোগ বিশেষজ্ঞ তার
চিকিৎসা করেছেন।
তিনি তিন বার বিয়ে করেছেন। জীবনে তিনি কখনও শান্তি পান নি এবং অসম্ভব অস্থিরতার
মধ্যে তার সমস্ত জীবন অতিবাহিত হয়েছে। বহু মানুষের সংস্পর্শে তিনি এসেছেন; বহু
লোকের সঙ্গে তার সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। শোনা যায় প্রেসিডেন্ট কেনেডির সঙ্গেও তার
সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল। ১৯৬২ সালে ১৯শে মে প্রেসিডেন্ট কেনেডির জন্ম দিনের
অনুষ্ঠানে তাকে তাকে শেষ বারের মত জন সমক্ষে গান গাইতে শোনা যায়। ১৯৬২ সালের ৫ই
অগাষ্ট মাত্র ৩৬ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়। জানা গিয়েছে অত্যধিক ঘুমের ওষুধ সেবনই
তার মৃত্যুর কারণ। অনেকে বলেন, এটা একটা হত্যাকাণ্ড এবং প্রেসিডেন্ট কেনেডি, মাফিয়া
চক্র এবং সি.আই.এ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। যাই হোক, সঠিক কারণ কখনই সন্দেহাতীত ভাবে
জানা যায় নি। অত্যন্ত দুঃখের মধ্য দিয়ে মানুষ হওয়া, হতাশাগ্রস্ত এবং আকর্ষণীয় এই
অভিনেত্রীর মৃত্যু আজও রহস্যাবৃত।
কুণ্ডলীর বিশ্লেষণ
মেরিলিন মনরোর রাশিচক্র ও নবাংশ যথাক্রমে চিত্র ১৫(২)ক এবং ১৫(২)খ তে দেখান হয়েছে।
(১) লগ্ন কর্কট ও লগ্নপতি চন্দ্র ৭মে মকর রাশিতে অবস্থিত। কর্কট লগ্নের জাতক জাতিকারা অত্যন্ত স্পর্শকাতর, কৌতূহলী ও চঞ্চল হয়। স্নায়বিক দৌর্বল্যে আক্রান্ত হবার প্রবণতাও থাকে। আবার লগ্নপতি ৭মে অবস্থানের ফল - স্বামী ( বা স্ত্রীর ) মৃত্যু বা একাধিক বিবাহ; বিদেশে অসংযত জীবন যাপন; বহু স্থানে গমন ইত্যাদি। এ সবই সাধারণ ফল এবং অন্যান্য গ্রহের অবস্থানের উপর নির্ভর করে এগুলির পরিবর্তন হতে পারে। আলোচ্য ছকে লগ্নপতি চন্দ্র লগ্নকে দৃষ্টি দিলেও শত্রু ক্ষেত্রে শনির ঘরে স্থিত এবং পাপ কর্তরী যোগের দ্বারা আক্রান্ত। স্বভাবতই শরীর খুব সবল নয় এবং অল্পতেই অসুখ হবার সম্ভাবনা।
(২) লক্ষণীয় যে, ৯ম পতি বৃহস্পতি ৯মের ১২শে অর্থাৎ ৮মে ( দুঃস্থানে ) অবস্থিত হওয়ায় জাতিকার সঙ্গে তার পিতার কোনও সম্পর্কই ছিল না। পিতৃকারক গ্রহ রবিও শত্রুক্ষেত্রে ৩য় ও ১২শ পতি বুধের সঙ্গে যুক্ত।
(৩) ৪র্থ স্থান থেকে মা, মন, গৃহসুখ, বাসস্থান ইত্যাদির বিচার হয়। ৪র্থে বক্রী শনি অবস্থিত শুধু নয়, ৪র্থ পতি শুক্রকেও শনি দৃষ্টি দিচ্ছে। শনির উপর বৃহস্পতির দৃষ্টি রয়েছে ঠিকই কিন্তু বৃহস্পতি ৬ষ্ঠ পতি এবং ৮ম ঘরে অবস্থিত হবার জন্য তার শুভত্ব খুবই কম। এর জন্য ৪র্থ ভাব সম্বন্ধীয় বহু বিষয়ে থেকেই তিনি বঞ্চিত থেকেছেন। মনের কারক গ্রহ চন্দ্র শনির ঘরে এবং ৪র্থ স্থানে শনি অবস্থিত হওয়ায় তিনি সব সময়েই মানসিক ভাবে বিষাদগ্রস্ত ছিলেন। চন্দ্র থেকে বিচার করলেও ৪র্থ স্থানে শনির দৃষ্টি রয়েছে এবং ৪র্থ পতি মঙ্গল ৩য় ও ১২শ পতি বৃহস্পতির সঙ্গে যুক্ত।
(৪) ৫ম স্থান থেকে আবেগ (emotion) অনুভুতি
(feeling) ইত্যাদি বিচার্য। মেরিলিনের ৫ম স্থানটির অশুভত্ব চোখে পড়ার মত। লগ্ন
থেকে ৫ম স্থান বৃশ্চিক রাশি শনি ও কেতুর দ্বারা পাপ কর্তরী যোগে ক্লীষ্ট; ৫ম পতি
মঙ্গলও নিকৃষ্টতম দুঃস্থান ৮মে অবস্থিত। আবার চন্দ্র থেকে ৫ম রাশিতে ৮ম পতি রবি
অবস্থিত এবং মঙ্গলের দ্বারা দৃষ্ট। ৫ম পতি শুক্রের উপরেও শনির দৃষ্টি রয়েছে। নবাংশ
চক্রেও লগ্ন থেকে ৫ম বৃষ রাশি এবং অধিপতি শুক্র রাহুর সঙ্গে যুক্ত। নবাংশে চন্দ্র
থেকে ৫ম স্থান তিনটি অশুভ গ্রহ শনি, মঙ্গল ও রবির দ্বারা দৃষ্ট; ৫ম পতি বৃহস্পতিও
৫মের ১২শে কেতুর সঙ্গে যুক্ত ও রাহুর দ্বারা দৃষ্ট। ৫ম স্থান থেকে মনের নিম্ন স্তরের
অনুভূতিরও (lower human feelings) বিচার হয়। জাতিকার আবেগ ও অনুভুতি বিভিন্ন ভাবে
নানা দিক থেকে জর্জরিত হয়েছে। নবাংশে মনের কারক গ্রহ চন্দ্র ৮মে বিচ্ছিন্ন ভাবে
(in isolation) অবস্থিত হওয়ায় একাকীত্ব বোধ ও সুখহীন ভাব আরও জোরালো হয়েছে।
(৫) উপরি উক্ত কারণে ৫ম স্থান অশুভ হওয়ায় এবং সন্তানের কারক গ্রহ বৃহস্পতি ৮মে
অবস্থিত হওয়ায় জাতিকা নিঃসন্তান ছিলেন। তবে ১৯৫৭ সালের ১লা অগাষ্ট মেরিলিনের একটি
সন্তান জন্মের সময়েই মারা যায়। তার তখন বৃহস্পতির দশায় কেতুর অন্তর্দশা চলছিল।
সন্তান কারক বৃহস্পতি রাজযোগকারী গ্রহ মঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত থাকায় হয় ত সন্তান জন্মের
কিছুটা সম্ভাবনা ছিল; কিন্তু সেটা অবশেষে কার্যকরী হয় নি। লগ্ন থেকে ৫ম স্থান (
সন্তান স্থান ) বৃশ্চিক রাশির ২য়ে ( মারক স্থান ) কেতু অবস্থিত। আবার চন্দ্র থেকে
৫ম স্থানের ৮মে ( আয়ু বা নিধন স্থান ) কেতুর অবস্থান। লক্ষণীয়, কারক গ্রহ বৃহস্পতিও
নবাংশে কেতুর সঙ্গে যুক্ত।
(৬) লগ্ন পতি চন্দ্র ( মনেরও কারক গ্রহ ) ৭মে ( জায়া, কাম সম্পর্কিত বিষয় ইত্যাদি - অনুচ্ছেদ ৮ ) এবং ৭ম স্থানের রাশিপতি শনি ১০মে অবস্থিত শুক্রের দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় ( ৭ম পতি শনি নিজেও ৪র্থে শুক্রের ক্ষেত্রে অবস্থিত ) জাতিকার অত্যধিক যৌন চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে।
(৭) মেরিলিনের জীবনে এত দুখঃ ও বঞ্চনার প্রাথমিক
কারণ তার ভাগ্যপতি ( ৯ম পতি ) বৃহস্পতির ৮মে অবস্থান। আবার বৃহস্পতি ৬ষ্ঠ স্থানেরও
অধিপতি এবং ৬ষ্ঠ স্থান ধনু রাশি বৃহস্পতির মূলত্রিকোণ ( অনুচ্ছেদ ৭ ); অতএব বৃহস্পতির
নৈসর্গিক শুভত্বের সঙ্গে অশুভত্বও বিদ্যমান। এসব সত্বেও মেরিলিনের এত সফলতার কারণ
কি ? প্রথমতঃ মঙ্গল কর্কট লগ্নের ক্ষেত্রে রাজযোগকারী গ্রহ ( ৫ম ও ১০ম পতি - অনুচ্ছেদ
১০ ), মঙ্গল ৯ম পতি বৃহস্পতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় সৌভাগ্য যোগ আরও প্রবল হয়েছে।
তবে দু'টি গ্রহই নিকৃষ্টতম দুঃস্থান ৮মে থাকায় শুভত্ব অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে ঠিকই
কিন্তু নিঃশেষ হয় নি। দ্বিতীয়তঃ চন্দ্র থেকে বিচার করলে মকর রাশির রাজযোগকারী গ্রহ
শুক্র ( ৫ম ও ১০ম ভাবের অধিপতি ) ৪র্থে কেন্দ্রে অবস্থিত এবং চন্দ্র লগ্নের অধিপতি
শনির দ্বারা দৃষ্ট। এটা খুবই ভাল যোগ। এটাই তার অসামান্য জনপ্রিয়তার কারণ। চন্দ্র
জনসাধারণের কারক গ্রহ। কিছুটা শনিরও এই কারকত্ব রয়েছে, তবে শনি সাধারণতঃ দলিত ও
নিম্ন বর্গের লোক নির্দেশ করে। চন্দ্র লগ্নের অধিপতি শনি ১০মে তুঙ্গী হয়ে ( অনেকে
অবশ্য মনে করেন, বক্রী গ্রহ তুঙ্গী হলে তার তুঙ্গত্ব নষ্ট হয় ) রাজযোগকারী গ্রহ
৪র্থে অবস্থিত শুক্রের দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় জনপ্রিয়তা অবশ্যম্ভাবী। ৪র্থ স্থান জন
সংযোগ নির্দেশ করে এবং কারক গ্রহ চন্দ্র।
এখানে আর একটি যোগের কথা না উল্লেখ করলেই নয়। শনি লগ্ন ( এবং চন্দ্র থেকেও ) তুলা
রাশিতে তুঙ্গী ক্ষেত্রে কেন্দ্রে ( লগ্ন থেকে ৪র্থ কেন্দ্রে এবং চন্দ্র থেকে ১০ম
কেন্দ্রে ) অবস্থিত হওয়ায় শশযোগ ( অনুচ্ছেদ ১৪ ) তৈরী হয়েছে। শনি লগ্ন থেকে ৭ম
পতি হয়ে ৪র্থে শুক্রের ক্ষেত্রে অবস্থিত হওয়ায় এবং শুক্রের দ্বারা দৃষ্ট হয়ে শশ
যোগ তৈরী করায় ও শনি বক্রী হওয়ায় এই যোগের ফল মোটেই শুভ হয় নি। এখানে এই যোগ স্বেচ্ছাচার
ও অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন নির্দেশ করে। জনমানসে তার প্রভাব তার যৌন আবেদনের জন্য
যতটা, অভিনয় প্রতিভার জন্য ততটা নয়।
(৮) শুক্র নৃত্য গীত ইত্যাদির কারক গ্রহ।
১০ম স্থান জীবিকা বা কর্ম ( house of action ) নির্দেশ করে। শনি শৃঙ্খলা বোধের
জন্ম দেয়। আবার শনি কালপুরুষের অঙ্গ বিভাগের নিরীখে ( অনুচ্ছেদ ৮ ) পদদ্বয়ের কর্তা।
অতএব ১০মে শুক্রের উপর শনির দৃষ্টি নৃত্য নৈপুণ্য নির্দেশ করে এবং এবং শোনা যায়
মেরিলিন যথেষ্ট ধৈর্য্য ও শৃঙ্খলার সঙ্গে নৃত্য অভ্যাস করতেন।
(৯) ৪র্থে শনি ৪র্থ পতির সঙ্গে যুক্ত হলে মা'র অকাল মৃত্যু হতে পারে। এখানে শনি
৪র্থ পতির সঙ্গে যুক্ত নয় কিন্তু ৪র্থ পতি শুক্রকে দৃষ্টি দিচ্ছে। কিন্তু এখানে
মা'র জীবন বিপন্ন না হবার কারণ, চন্দ্র লগ্ন থেকে রাজযোগকারী গ্রহ শুক্রের ৪র্থে
( মাতৃস্থান ) অবস্থান। শুক্র নৈসর্গিক শুভ গ্রহও বটে। এ ছাড়া বৃহস্পতির শুভত্ব
অনেক কমে গেলেও ২৩ নং ধনিষ্ঠা নক্ষত্রে ( অধিপতি রাজযোগকারী গ্রহ মঙ্গল ) অবস্থিত
হওয়ায় তার শুভত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। শনি বৃহস্পতির দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় শনির অশুভত্ব
হ্রাস পেয়েছে। তবে মৃত্যু না হলেও বক্রী শনির ৪র্থে অবস্থান এবং ৪র্থ পতি শুক্রকে
দৃষ্টি দেবার ফলে মা মানসিক বৈকল্যের শিকার হয়েছেন।
(১০) মেরিলিনের জন্ম মঙ্গলের দশায়, চলেছে প্রায় ১৯৩১ সাল অবধি। এর পর ১৮ বছরের রাহুর দশা। রাহু মিথুনে তুঙ্গী ( অধিকাংশ জ্যোতিষীর মত ) কিন্তু ১২শে বুধের ক্ষেত্রে এবং বৃহস্পতির নক্ষত্রে অবস্থিত। অতএব রাহু কিছুটা বুধের এবং কিছুটা বৃহস্পতির ফল দেবে। বুধ এবং রবি একত্রে থাকায় ( ১১শে ) বুধাদিত্য যোগ তৈরী হয়েছে ( অনুচ্ছেদ ১৪ )। অবশ্য এই যোগের বল খুব বেশী নয় ( রবি শত্রু ক্ষেত্রে এবং বুধ রবির মাত্র ৪ ডিগ্রির ব্যবধানে থাকায় )। তবে ১১শ স্থানে শুক্রের ক্ষেত্রে অবস্থিত হওয়ায় এবং রাজযোগকারী গ্রহ মঙ্গল দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় রাহুর দশাতেই ধীরে ধীরে মডেল হিসাবে তার পরিচিতি বাড়তে থাকে। শনিবৎ রাহু শ্লোক অনুসারে রাহুর বৈশিষ্ট্যও শনির মত। তুঙ্গী শনি বৃহস্পতির দ্বারা দৃষ্ট হওয়াতেও মেরিলিনকে মডেল হিসাবে পরিচিত হতে সাহায্য করেছে। ১৯৫০ সাল থেকে মেরিলিনের বৃহস্পতির দশা শুরু হয়। এখানে অন্য একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, মঙ্গল ও বৃহস্পতির নক্ষত্র বিনিময় হয়েছে। বৃহস্পতি মঙ্গলের ২৩ নং ধনিষ্ঠা নক্ষত্রে এবং মঙ্গল বৃহস্পতির ২৫ নং পূর্বভাদ্রপদ নক্ষত্রে অবস্থান করছে। এই নক্ষত্র বিনিময় সাধারণ ভাব বিচারে খুব একটা বিবেচিত না হলেও নক্ষত্র জ্যোতিষে (stellar astrology) ( অনুচ্ছেদ ৯ ) এটা গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষ্য করার বিষয় ১৯৫০ সালে বৃহস্পতির দশা শুরু হতেই তার ছবি Ashphalt Jungle জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার সমস্ত পুরষ্কার ও স্বীকৃতি তিনি পান ১৯৫১ থেকে ১৯৬২ সালের মধ্যে - বৃহস্পতির দশায়। তবে মঙ্গল ও বৃহস্পতি ৮মে অবস্থিত হওয়ায় তাকে বহু বাধা বিঘ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে নিশ্চয়ই। অনেকের মতে ৬ষ্ঠ পতি ( দুঃস্থানের অধিপতি ) ৮মে ( অন্য একটি দুঃস্থান ) থাকায় বিপরীত রাজযোগ হয়েছে। তবে এতে কিছু ভাল ফল ফললেও অশুভ ফলও যথেষ্ট হবার সম্ভাবনা।
(১১) বৃহস্পতি-চন্দ্রের দশা-অন্তর্দশায় মেরিলিনের gall bladder ও বস্তি প্রদেশে অস্ত্রোপচার করা হয়। শরীরের এই দুই স্থান ৬ষ্ঠ ও ৭ম ভাব থেকে বিচার হয়। লগ্নপতি চন্দ্র ৭মে শত্রু ক্ষেত্রে অবস্থিত এবং ৬ষ্ঠ পতি ( রোগ স্থানের অধিপতি ) বৃহস্পতি ৮মে মঙ্গলের ( অস্ত্রোপচার, রক্তপাত ইত্যাদির কারক গ্রহ ) সঙ্গে থাকায় এবং ৬ষ্ঠ স্থানে কেতু অবস্থিত হওয়ায় ঘটনাটি ঘটা খুব স্বাভাবিক।
(১২) কুণ্ডলীতে ৭ম পতি শনি ৪র্থে তুঙ্গী হয়ে
শুক্রের দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় এবং ৭মে লগ্নপতি চন্দ্র মঙ্গলের নক্ষত্রে অবস্থিত হওয়ায়,
মেরিলিনের বিয়ে হয়েছিল দুই বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে (Joe DiMaggio এবং Arthur Miller)
, এক জন ক্রীড়া জগতের ( মঙ্গলের প্রভাব ) এবং অন্য জন শিল্প জগতের ( চিত্র নাট্য
লেখক ) ( ৭ম পতির উপর শুক্রের প্রভাব )। মঙ্গল যতই রাজযোগকারী গ্রহ হোক, তার ৮মে
অবস্থান , বিশেষতঃ শনির ঘরে, বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে।
(১৩) মেরিলিনের মৃত্যু হয় ১৯৬২ সালের ৫ই অগাষ্ট, মাত্র ৩৬ বছর বয়সে। তখন তার বৃহস্পতির
দশা এবং মঙ্গলের অন্তর্দশা চলছিল। দুটি গ্রহই লগ্নের ৮মে ( নিধন বা আয়ু স্থান )
এবং চন্দ্রের ২য়ে ( মারক স্থান ) অবস্থিত। অতি সাধারণ দৃষ্টিতেই ধরা পড়ে জাতিকার
বৃহস্পতি-মঙ্গলের দশা-অন্তর্দশায় কোন গুরুতর দুর্ঘটনা বা মৃত্যু ঘটতে পারে।
(১৪) মেরিলিনের মৃত্যুর কারণ কি ? বলা হয় তিনি অতিরিক্ত মাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ১২শ রাশিতে ( শয্যাসুখ, নিদ্রা ইত্যাদি বোঝায় ) রাহুর অবস্থান এবং ১২শ পতি বুধের রবির খুব কাছে থেকে অস্তমিত (combust) ( অনুচ্ছেদ ৭ ) হওয়ায় জাতিকার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতেই পারে। এর জন্য ওষুধ খাওয়াও অসম্ভব নয় । কিন্তু অনেক জ্যোতিষীর মতে আত্মহত্যার জন্য ৩য় পতির সঙ্গে লগ্ন বা লগ্নপতির যোগ এবং অশুভ গ্রহের দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু কুণ্ডলীতে সে রকম কিছু নেই। তাই এটা আত্মহত্যার ঘটনা নাও হতে পারে। তবে এটা প্রশ্নাতীত নয়।
কর্কট লগ্নের একটি বৈশিষ্ট্য হল, লগ্ন পতি
চন্দ্র মনেরও কারক গ্রহ; অর্থাৎ শরীর এবং মন পরস্পরকে ভীষণ ভাবে প্রভাবিত করে।
এখানে চন্দ্র মঙ্গলের নক্ষত্রে অবস্থিত এবং মঙ্গলের অবস্থান ৮মে। চন্দ্র রয়েছে
লগ্নের ৭মে ( জায়াস্থান )। অতএব ৭ম স্থান, মঙ্গল, ৮ম ( মৃত্যু বা আয়ু ) স্থান অঙ্গাঙ্গী
ভাবে যুক্ত। এই কারণে সম্পর্ক জনিত কোন জটিলতায় হঠাৎ রাগ বা ক্ষোভের বশে ( ৫ম পতি
মঙ্গল ) কিছু করে বসা এবং সেটা মৃত্যুর কারণ হওয়া অসম্ভব নয়। শোনা যায় মেরিলিন
আগে তিন বার আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন, হয় ত ৮মে বৃহস্পতি তাকে অনেক বার রক্ষা
করেছে। কিন্তু শেষ বারে গ্রহদের গোচরে অবস্থান হয় ত খুবই অশুভ ছিল। অতএব আত্মহত্যা
একেবারে অসম্ভব নয়। এখানে আত্মহত্যা হলেও সেটা আত্মহত্যার মানসিকতা নিয়ে করা নয়;
হঠাৎ ঘটে যাওয়া (impulsive) কোন ঘটনা।
৩. বিল গেট্স ( Bill Gates )
জন্ম
বিবরণ : ২৮ শে অক্টোবর, ১৯৫৫; রাত ৯ - ২৫ মিঃ ; স্থান : Seattle, Washington,
USA. 122 W 20; 47 N 36. Time zone : 8-0-0 West. লাহিড়ী অয়নাংশ; ভোগ্য দশা
(balance of dasha) : শনি ২ বছর ১০ মাস ১৩ দিন।
জীবনের কিছু ঘটনা
মেধা, উদ্যোগ ও অধ্যাবসায় ( এবং অবশ্যই অদৃষ্ট ) মানুষকে ঐশ্বর্য ও সাফল্যের
কোন সীমায় পৌঁছে দিতে পারে Bill Gates তার একটা জ্বলন্ত উদাহরণ। জন্ম ১৯৫৫
সালের ২৮ শে অক্টোবর। যে পরিবারে তার জন্ম, ব্যবসা, রাজনীতি ও সমাজ সেবায় তাদের
অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাবা William H. Gates, Seattle-এর বিখ্যাত আইনজীবী এবং
মা Mary Maxwell Gates স্কুল শিক্ষিকা এবং একটি সমাজ সেবা প্রতিষ্ঠানের chairperson।
ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান বিষয়ে বিশেষ করে গণিতের দিকে ঝোঁক লক্ষ্য করে তাকে Lakeside
Public School-এ ভর্তি করে দেওয়া হয়। সেখানেই তার কম্প্যুটার সম্বন্ধে কৌতূহল
জন্মায় এবং তিনি ছোটখাট প্রোগ্রাম লিখতে শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে ১৬০০ নম্বরের
মধ্যে ১৫৯০ পেয়ে স্কুল থেকে বেরিয়ে Harvard কলেজে ভর্তি হন। সেখানে এক অধ্যাপক
তাকে একটি অমিমাংসিত গাণিতিক সমস্যা করতে দিলে তিনি খুব সংক্ষেপে সেটির সমাধান
করে ফেলেন এবং পরবর্তী ৩০ বছরে তার থেকে কম সময়ে সমাধানে পৌঁছনোর পদ্ধতি বের
করতে অন্য কেউ পারে নি।
Harvard কলেজে Bill তার ঘণিষ্ঠ বন্ধু Paul Allen এর সঙ্গে কম্প্যুটার নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন এবং নিয়মিত ক্লাসে যোগদান করতে না পারার জন্য তিনি কলেজের পাঠ শেষ করতে পারেন নি। তিনি স্বপ্ন দেখতেন যে Personal Computer শুধু ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে নয়, সব অফিসে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও একদিন অপরিহার্য হয়ে উঠবে। এই আশায় তিনি ও তার বন্ধু ১৯৭৫ সালে Microsoft কোম্পানি খুলে ফেললেন। ১৯৮০ সালে IBM Microsoft কে IBM PC র জন্য প্রোগ্রাম লিখতে অনুরোধ করে। বিল গেট্স MS DOS চালু করলে IBM তার নিজস্ব operating system OS/2 চালু করে বিল গেট্সেরই সহায়তায়। IBM থেকে বেরিয়ে এসে তিনি ১৯৮৩ সালের ১০ই নভেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে Microsoft Corporation থেকে Microsoft Windows বাজারে ছাড়েন। অফিস সংক্রান্ত কাজকর্মের সুবিধার জন্য কিছু উপযোগী software একসঙ্গে নিয়ে বিল Microsoft Office বাজারে নিয়ে আসেন ১৯৮৯ সালে এবং দু'সপ্তাহের মধ্যেই এর এক লক্ষ কপি বিক্রী হয়ে যায়।
১৯৯৪ সালের ১লা জানুয়ারী ৩৮ বছর বয়সে বিল গেট্স বিয়ে করেন Microsoft এরই সহকর্মী Melinda French কে। তাদের ১৯৯৬ সালে এক কন্যা, ১৯৯৯ সালে এক পুত্র এবং ২০০২ সালে অপর এক কন্যা জন্ম গ্রহণ করে। ১৯৯৬ সালে বিল গেট্স্ তার পরিবারকে নিয়ে Lake Washington এর তীরে ৫৪ মিলিয়ান ডলার ব্যয়ে নির্মিত ৫৫ হাজার বর্গ ফুটের বাড়িতে বাস করতে শুরু করেন। ১৯৯৪ সালের জুন মাসে তার মা ক্যান্সারে মারা গেলে তিনি খুবই আঘাত পান।
সফলতার সঙ্গে বিল গেট্স্কে কিন্তু সমালোচনা ও বাধা কম সহ্য করতে হয় নি। তার উচ্চাকাঙ্খা পূরণ করতে গিয়ে উগ্র ব্যবসায়িক নীতি খাটিয়ে তিনি software এর বাজার প্রায় কুক্ষিগত এবং একচেটিয়া করে রাখার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এই জন্য অন্যান্য কোম্পানির সঙ্গে Microsoft এর প্রায়ই আইনি লড়াই চলত। ১৯৯৮ সালের ১৮ই মে বিল গেট্স Microsoft vs United States মামলায় জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০৭ পর্যন্ত একটানা এবং ২০০৯ সালে তিনি বিশ্বের সব চেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসাবে চিহ্ণিত হন। ২০১১ সালে তার সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৬ বিলিয়ান ডলার ( ৫৬০০ কোটি টাকা )। মৃদু, স্বলপ্ভাষী ও মার্জিত রুচির বিল গেট্স ব্যবসায়ী হিসাবে ছিলেন অত্যন্ত তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও অনমনীয় মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তি। পূর্ব পুরুষের ধারা বজায় রেখে তার সমাজ সেবা মূলক কর্মকাণ্ডের পরিধিও ছিল বিস্তৃত। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে তার উদ্যোগ প্রশংসনীয়। ২০০০ সালে তিনি ও তার স্ত্রী Bill and Melinda Gates Foundation প্রতিষ্ঠা করেন। স্বচ্ছভাবে পরিচালিত এটাই পৃথিবীতে এ ধরণের সংস্থার মধ্যে বৃহত্তম হিসাবে গণ্য। ২০০৮ সালে বিল গেট্স্ Microsoft Corporation এর CEO পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
কুণ্ডলীর বিশ্লেষণ
বিল
গেট্সের রাশিচক্র ও নবাংশটি যথাক্রমে ১৫(৩)ক এবং ১৫(৩)খ তে দেখান হয়েছে।
(১) প্রতিটি জন্মকুণ্ডলীর একটা বিশেষ দিক ও বৈশিষ্ট্য থাকে। বিল গেট্সের ক্ষেত্রে
মূল বিষয়টি হল ধনযোগ। একাদিক্রমে বহু বছর ধরে বিশ্বের এক নম্বর ধনী ব্যক্তি
হিসাবে স্বীকৃতি এসেছে কি ধরণের গ্রহ বিন্যাসের জন্য ?
সফলতা যে পথ দিয়েই আসুক না কেন, শক্তিশালী লগ্ন সব ক্ষেত্রেই সহায়ক হয়। এক্ষেত্রে
মিথুন লগ্নের অধিপতি বুধ ৪র্থ কেন্দ্রে শুধু নয় তুঙ্গীক্ষেত্রে অবস্থিত। আগে
আলোচনা করা হয়েছে ( অনুচ্ছেদ ৭ ) যে কন্যা রাশি বুধের স্বক্ষেত্র, তুঙ্গীক্ষেত্র
এবং মূলত্রিকোণ স্থান। অত্যন্ত বলবান এই বুধ জাতকের সফলতার অন্যতম কারণ। বলবান
লগ্নপতি ৪র্থে অবস্থিত হওয়ায় তার লেখাপড়া, গৃহসুখ, বাসস্থান, মাতা ইত্যাদি
বিষয়ে শুভ ফল লাভ হয়েছে। যেহেতু লগ্নস্ফূট ২৫ ডিঃ ৫৪ মিঃ, অতএব প্রতিটি ভাবের
মধ্যবিন্দুই ( অনুচ্ছেদ ৮ ) ২৫ ডিঃ ৫৪ মিনিটে রয়েছে; অর্থাৎ ৪র্থ ভাবের মধ্যবিন্দু
(middle point or most effective point) কন্যা রাশির ২৫ ডিঃ ৫৪ মিনিটে থাকবে।
এখানে লক্ষ্যণীয় যে ছকটির তিনটি সব চেয়ে শক্তিশালী গ্রহ বুধ, শুক্র ও শনি ৪র্থ
বা ৫ম রাশির মধ্যবিন্দুর খুব কাছাকাছি রয়েছে, এর ফলে এই গ্রহদের ফল দান করার
ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
(২) ২য় ভাব ধনসঞ্চয় নির্দেশ করে ( অনুচ্ছেদ ৮ )। এখানে ২য়পতি শুক্ল পক্ষের চন্দ্র ১০ম কেন্দ্রে মীন রাশিতে বৃহস্পতির ক্ষেত্রে অবস্থিত এবং লগ্ন পতি ও ৪র্থ পতি বুধের দ্বারা দৃষ্ট। এটা ধন লাভের ক্ষেত্রে অত্যন্ত শুভ।
(৩) শাস্ত্র মতে লগ্ন থেকে ৫ম স্থান যদি শুক্রের রাশি হয় ( অর্থাৎ তার অধিপতি যদি শুক্র হয় ) এবং শুক্র ও শনি যদি যথাক্রমে ৫ম ও ১১শে অবস্থিত হয়; তা হলে এটা প্রবল ধনযোগ সৃষ্টি করে। এখানে মিথুন লগ্নের ৫ম রাশি তুলা এবং অধিপতি শুক্র তুলাতে অবস্থিত। তুলা শুক্রের মূলত্রিকোণ হওয়ায় শুক্র এখানে খুবই জোরাল। শনি কুণ্ডলীতে ১১শে নেই ঠিকই কিন্তু শনি শুক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ১১শে মেষ রাশিতে দৃষ্টি দিচ্ছে। এটাতে ফল প্রায় একই হবে। প্রসঙ্গতঃ বলা যায় যে, এই যোগটি একমাত্র মিথুন ও মকর লগ্নের বেলাতেই প্রযোজ্য; কারণ অন্য কোন লগ্নের ক্ষেত্রে লগ্নের ৫ম স্থানের অধিপতি শুক্র হওয়া সম্ভব নয়।
(৪) শনি ৯ম ( এবং ৮ম ) ভাবের অধিপতি হয়ে ৯ম স্থান ( ভাগ্য স্থান ) থেকে ৯মে অর্থাৎ ৫মে তুলারাশিতে ( তুলা রাশি শনির তুঙ্গী ক্ষেত্র ) অবস্থান করায় শনি অত্যন্ত শুভ ফলদায়ী হয়েছে। শাস্ত্র বাক্য হল " পঞ্চমং নবমং চৈব বিশেষ ধনমুচ্যতে। চতুর্থং দশমং চৈব বিশেষ সুখমুচ্যতে। " এখানে ৫ম পতি ও ৯ম পতি অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে যুক্তভাবে ৫মে থাকায় ধন যোগ অত্যন্ত প্রবল। দ্বিতীয় অংশটিও আংশিক ভাবে সত্যি হয়েছে। এখানে ৪র্থপতি শক্তিশালী বুধ ৪র্থে অবস্থিত হয়ে ১০মে দৃষ্টি দিচ্ছে ২য় পতি চন্দ্রকে। অতএব বিল গেট্স্ ধন এবং সুখ ( ধন থাকলেই সব সময় সুখ থাকে না ) দুটিই লাভ করেছেন। লক্ষ্যণীয় যে, শুক্র ও শনি দুটি গ্রহই ১৬নং বিশাখা নক্ষত্রে রয়েছে; বিশাখার অধিপতি বৃহস্পতি ধনকারক গ্রহ।
(৫) ২য়, ৫ম, ৯ম ও ১১শ স্থান থেকে সাধারণতঃ ধনলাভ বিচার হয়। এখানে ২য়পতি চন্দ্র ১০মে মিত্র ক্ষেত্রে মীন রাশিতে অবস্থিত। ৫ম ও ৯ম পতি ৫মে যুক্ত। ১১শ পতি মঙ্গলের ১১শে দৃষ্টি রয়েছে ( যদিও মঙ্গলের ৮ম দৃষ্টি ততটা শুভ বলে গণ্য নয় )। ১১শ পতি মঙ্গল ২য় পতি চন্দ্রকে দৃষ্টি দিচ্ছে। চন্দ্র লগ্ন থেকে দেখলেও ( অনুচ্ছেদ ১৩, ১৬নং নিয়ম ) ২য় পতি ও ৯ম পতি মঙ্গলের ৫ম পতি চন্দ্রের উপর দৃষ্টি রয়েছে। এ ছাড়াও ধনকারক গ্রহ বৃহস্পতির ২য় স্থানে দৃষ্টি রযেছে। গুরুত্বের ক্রম অনুযায়ী কোন কুণ্ডলীকে লগ্ন থেকেই প্রথমে বিশ্লেষণ করতে হবে এবং তার পরেই চন্দ্র থেকে দেখা যেতে পারে।
৬) এখন দেখা যাক, বিল গেট্স্ কি কি দশা ভোগ করেছেন এবং এখন করছেন। কারণ জ্জন্মকুণ্ডলীতে গ্রহের অবস্থান ভাল হলেও সঠিক দশা ভোগ না করলে ফল সে ভাবে পাওয়া যাবে না। বিলের জন্ম শনির দশায়; আগেই বলা হয়েছে শনির ভোগ্য দশা ( অর্থাৎ শনির দশার এই সময়টা তাকে জন্মের পরে ভোগ করতে হবে ) ২ বছর ১০ মাস ১৩ দিন। এর পর ১৭ বছরের বুধের দশা শুরু এবং চলবে প্রায় ১৯৭৫ সাল অবধি। এর পর কেতুর দশা ৭ বছরের ১৯৮২ সালে শেষ হবে। তার পর ২০ বছরের শুক্রের দশা শেষ হবে ২০০২ সালে। পরবর্তী দশা রবির ৬ বছরের, শেষ হবে ২০০৮-এ। এর পর চলবে ১০ বছরের চন্দ্রের দশা ২০১৮ অবধি। বুধ, শুক্র, চন্দ্র যে দশাগুলি তিনি পেয়েছেন, সে সবগুলিই ধনকারক ও সুখকারক হিসাবে খুবই শুভ ফলদায়ক।
(ক) ১৯৭৩ সালে যখন তার বুধ-শনির দশা-অন্তর্দশা চলছিল তখন তিনি স্কুলের পরীক্ষায় তাক লাগান ভাল ফল করে Harvard কলেজে ভর্তি হন। বুধ ৪র্থ স্থানের অধিপতি। ৪র্থ স্থান থেকে বিদ্যার বিচার হয় এবং বুধই এর কারক গ্রহ। "কারকো ভাবনাশকঃ" তত্ব ( অনুচ্ছেদ ১৩, ২৩ নং নিয়ম ) অনুসারে ৪র্থে মাতৃকারক গ্রহ চন্দ্রের অবস্থানকে অনেক জ্যোতিষী অশুভ বললেও ৪র্থে বুধের অবস্থান বিদ্যার হানি ঘটায় বলে মনে করা হয় না। শনি ৯ম পতি, অতএব বুধ-শনি দশা-অন্তর্দশায় পড়াশুনায় উৎকর্ষ দেখা যেতে পারে। কিন্তু একটা কুণ্ডলীতে সবই ত শুভ হয় না; শনির ৮ম পতিত্ব হেতু এবং বুধের সঙ্গে ৬ষ্ঠ পতি মঙ্গল যুক্ত থাকায় পড়াশুনায় ছেদ পড়ে এবং Harvard কলেজ থেকে তিনি ডিগ্রি নিয়ে বের হতে পারেন নি।
(খ) মায়ের মৃত্যু হয় ১৯৯৪ সালের জুন মাসে; তখন তার শুক্র-বৃহস্পতির দশা-অন্তর্দশা চলছিল, প্রত্যন্তর্দশা ( অনুচ্ছেদ ৯ ) ছিল শুক্রের। অর্থাৎ তার তখন শুক্র-বৃহস্পতি-শুক্র চলছিল। বিলের লগ্নের ৪র্থ স্থান কন্যা রাশি। কন্যার ২য়ে ( মারক স্থান ) শুক্র অবস্থিত; আবার ৪র্থ স্থানের ৭ম স্থান ( অপর একটি মারক স্থান ) মীন রাশির অধিপতি বৃহস্পতি। আবার চন্দ্র থেকে বিচার করলেও চন্দ্র লগ্নের ৪র্থ স্থান মিথুন রাশির ৭ম পতিও বৃহস্পতি। মাতৃকারক গ্রহ চন্দ্রের ৮মে ( নিধন স্থান ) শুক্র অবস্থিত। অতএব শুক্র-বৃহস্পতি-শুক্রে মা'র মৃত্যু একরকম নিশ্চিত।
(গ) ৬ষ্ঠ স্থান থেকে বাধা, বিপত্তি, মামলা, মোকদ্দমা ইত্যাদি বিচার্য। ৬ষ্ঠ পতি মঙ্গল ( মিথুন লগ্নের পক্ষে খুবই অশুভ গ্রহ ) লগ্নপতি বুধের সঙ্গে যুক্ত থাকায় Microsoft প্রতিষ্ঠা করার প্রায় প্রথম থেকেই বিল গেট্স কে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে; অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আইনজীবীদের লড়াই লেগেই থাকত। তবে সবচেয়ে বড় মামলাটি হয় Microsoft vs United States নামে ১৯৯৮ সালের ১৮ই মে তারিখে; তখন বিলের শুক্র-শনির দশা-অন্তর্দশা। শুক্র ও শনি পরস্পরের মিত্র হলেও, যদি জন্ম ছকে দুটি গ্রহেরই অবস্থান শুভ হয় তবে এদের পরস্পরের দশা-অন্তর্দশায় ফল খুব অশুভ হতে পারে ( অনুচ্ছেদ ১৩, ১৯নং নিয়ম )। এটা খুবই অদ্ভুত তবে এটাই অনেক সময়ে ঘটতে দেখা যায়। ১৯৯৮ সালের ১৮ই মে শুক্র-শনির সঙ্গে প্রত্যন্তর্দশা ছিল রাহুর। রাহু নীচস্থ হয়ে লগ্নের ৬ষ্ঠ স্থানে মঙ্গলের রাশি বৃশ্চিকে অবস্থিত। মঙ্গল ৬ষ্ঠ পতি। উল্লিখিত বড় মামলাটি চলার জন্য এর চেয়ে উপযুক্ত সময় আর কি হতে পারে?
(ঘ) বিল গেট্সের বিয়ে হয় ৩৮ বছর বয়সে ১৯৯৪ সালের ১লা জানুয়ারী। অনেক দেরীতে বিয়ে হয়েছে বিলের। বিলম্বের কারণ ৭মে ( জায়াস্থান ) শনির দৃষ্টি এবং জায়া কারক গ্রহ শুক্রের সঙ্গে শনির অবস্থান। নবাংশেও ৭ম পতি মঙ্গল ও জায়া কারক গ্রহ শুক্র ২য়ে শনির সঙ্গে অবস্থিত। শনি বিচ্ছেদকারক এবং বিলম্বকারক ( separative and delaying ) গ্রহ হিসাবে পরিচিত। বিয়ে হয়েছে শুক্র-বৃহস্পতির দশা-অন্তর্দশায় এবং প্রত্যন্তর্দশা ছিল বুধের। শুক্র জায়া কারক গ্রহ, বৃহস্পতি লগ্নের ৭ম স্থানের অধিপতি এবং বুধ চন্দ্র লগ্নের ৭মে অবস্থিত। আবার লগ্ন থেকে ২য় পতি ( ২য় স্থান পরিবারকে বোঝায় ) চন্দ্র ১০ম কেন্দ্রে অবস্থিত হয়ে লগ্নপতি বুধকে দৃষ্টি দিচ্ছে। অতএব উক্ত দশা-অন্তর্দশা-প্রত্যন্তর্দশায় বিয়ে হতেই পারে। লগ্নের ৭ম স্থানকে ১০ম পতি ( ১০ম স্থান কর্মক্ষেত্র, জীবিকা ইত্যাদি নির্দেশ করে ) বৃহস্পতি দৃষ্টি দেওয়ায় কর্মস্থানের সঙ্গী বা সহকর্মীর সঙ্গে বিলের বিয়ে হয়েছে।
(৭) ১৪নং অনুচ্ছেদে কিছু যোগের কথা বলা হয়েছে। এদের অবস্থান সামগ্রিক ভাবে রাশিচক্রকে বলবান করে এবং দশা-অন্তর্দশার উপর নির্ভর করে বিশেষ বিশেষ সময়ে কিছু ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা তৈরী করে। বিল গেট্সের কুণ্ডলীতে এই ধরনের কি কি যোগ আছে দেখা যাক।
(ক) প্রথমেই বলতে হয় ভদ্র যোগের কথা। এটি পঞ্চ মহাপুরুষ যোগের অন্যতম ( অনুচ্ছেদ ১৪ )। বুধ তুঙ্গী হয়ে লগ্নের ৪র্থ কেন্দ্রে ( চন্দ্র থেকেও ৭ম কেন্দ্রে ) অবস্থান করায় এই যোগ হয়েছে। এই যোগের ফল স্বরূপ জাতক সংযত বাক ও মৃদুভাষী হয়েছেন। শারীরীক গঠনও সুন্দর এবং তার দীর্ঘজীবী হবার সম্ভাবনা। বুধ ৪র্থে থাকায় জীবনে সুখী হবারও কথা। চন্দ্র থেকে বুধ কেন্দ্রে থাকায় এই যোগের বল আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
(খ) ৯ম পতি শনি এবং শুক্র ( ৫ম পতি ) উভয়েই যথাক্রমে তুঙ্গী ও স্বক্ষেত্রস্থ হয়ে লগ্ন থেকে ৫মে থাকায় লক্ষ্মী যোগ হয়েছে।
(গ) চন্দ্র থেকে ৬ষ্ঠে বৃহস্পতি, ৭মে বুধ এবং ৮মে শুক্র থাকায় অধিযোগ হয়েছে। বৃহস্পতি কোন অশুভ ভাবে যুক্ত বা দৃষ্ট নয; অতএব যোগকারক হিসাবে বৃহস্পতির অবস্থান খুব ভাল। বুধ ও শুক্রের সঙ্গে অবশ্য অশুভ গ্রহ মঙ্গল ও শনি রয়েছে। এদের দশা-অন্তর্দশায় শুভ ফলের সঙ্গে কিছু অশুভ ফলও লাভ হবে। এই যোগের ফল হিসাবে জাতক সুখী, ভদ্র, বিত্তবান ও শত্রুজয়ী হয়েছেন।
(ঘ) চন্দ্র ও মঙ্গল পরস্পরের ৭মে থাকায় চন্দ্র মঙ্গল যোগ ( বা শশী মঙ্গল যোগ ) হয়েছে। শুক্ল পক্ষের চন্দ্র ( চন্দ্র ও রবির দূরত্ব ৭২ ডিগ্রির বেশী ) ১০ম কেন্দ্রে বৃহস্পতির ক্ষেত্রে থাকায় চন্দ্রের অবস্থান খুবই শুভ। চন্দ্রের উপর কোনও অশুভ দৃষ্টিও নেই। এই যোগের ফলে জাতকের প্রচুর ধন লাভ হয়েছে।
(ঙ) বলশালী চন্দ্র লগ্ন থেকে ১০ম কেন্দ্রে থাকায় অমলা যোগ হয়েছে। ফল স্বরূপ জাতক অসামান্য যশ ও খ্যাতির অধিকারী হয়েছেন। জনসাধারণের কারক গ্রহ শুভ চন্দ্র ১০মে থাকায় সুনাম পরিব্যাপ্ত হয়েছে ও জাতক নিষ্কলঙ্ক চরিত্রের অধিকারী হয়েছেন।
(চ) রাহু ও কেতু বাদে বাকী সব গ্রহ ৪টি রাশিতে ( বৃহস্পতি সিংহে, বুধ ও মঙ্গল কন্যায়, শুক্র, রবি ও শনি তুলায় এবং চন্দ্র মীনে ) অবস্থান করায় কেদার যোগ হয়েছে। এই যোগের কথা ১৪নং অনুচ্ছেদে বলা হয় নি। এর ফলে জাতক অত্যন্ত পরোপকারী এবং সাধারণের প্রতি সহানিভূতি সম্পন্ন হয়েছেন। তার সাহায্যের ফলে বহু দরিদ্র লোক উপকৃত হয়েছে।
(৮) পরিশেষে একটা প্রশ্ন দেখা দিতে পারে।
৩য় স্থান থেকে উদ্যম, পরাক্রম ইত্যাদি বিচার্য। বিল গেট্সের কোষ্ঠিতে ৩য় স্থানের
অধিপতি রবি তুলা রাশিতে নীচস্থ হওয়ায় মনে হতে পারে উদ্যম ছাড়াই তিনি এতটা সফল
হলেন কি করে। তুলা রাশিতে শুক্র ও শনি অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে লগ্ন থেকে কোণে
অবস্থানের জন্য রবি পরোক্ষ ভাবে কিছুটা বল ফিরে পেয়েছে। একটা কথা স্বীকার করতেই
হবে বিলের সফলতা ও জয় অনেকটাই সহজ ভাবে এসেছে, প্রতি পদে তাকে সংগ্রাম করে
ছিনিয়ে আনতে হয় নি। এ ছাড়া ৭ম ও ১০ পতি বৃহস্পতি ৩য় স্থানে থাকায় ৩য় স্থানটির
বল যথেষ্টই তৈরী হয়েছে।
একটা কথা। বিলের কুণ্ডলীতে চন্দ্র অত্যন্ত শুভ কিন্তু বিচ্ছিন্ন ভাবে (isolated)
থাকায় বিলের মনে কোথায় যেন একটা একাকীত্ব বোধ রয়েছে। চোখ ধাঁধানো সফলতার মধ্যে
সেটা অনায়াসেই দৃষ্টির বাইরে থাকে। ১২শে কেতুর অবস্থান মধ্যে মধ্যে তার মনে
আধ্যাত্মিকতা জাগিয়ে তোলে। এটাই হয় ত তাকে জনসাধারণের জন্য কাজ করতে প্রেরণা
দিয়েছে।
সংক্ষিপ্ত ঘটনাবলী
পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু ও কমলা নেহেরুর একমাত্র সন্তান ইন্দিরা
গান্ধীর জন্ম ১৯১৭ সালের ১৯শে নভেম্বর এলাহাবাদে। মহাত্মা
গান্ধীর জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে যোগদান করার জন্য জওহরলালকে
প্রায়ই বাড়ীর বাইরে কাটাতে হত বা জেল খাটতে হত। মা ছিলেন
যক্ষা রোগে শয্যাশায়ী। ছোটবেলা ইন্দিরা গান্ধী মানসিক ভাবে
খুবই একাকীত্বের শিকার হয়েছেন এবং স্কুলের পড়াশোনায় মাঝে
মাঝেই ছেদ পড়েছে। ১৯৩৪ সাল থেকে ১৯৩৫ অবধি তিনি শান্তিনিকেতনে
পড়াশোনা করেন; রবীন্দ্রনাথ তার নাম দেন প্রিয়দর্শিনী।
১৯৩৬ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী সুইজারল্যাণ্ডে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে কমলা নেহেরুর মৃত্যু ঘটে। জওহরলাল ইন্দিরাকে কোন বৃটিশ স্কুলে পড়াতে রাজী ছিলেন না। ১৯৩৭ সালে ইন্দিরা Oxford University-র Somerville College-এ ভর্তি হন। বাবার সঙ্গে নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকে ছোটবেলা থেকেই ইন্দিরার রাজনৈতিক সচেতনতা গড়ে ওঠে।
দুই পরিবারের আপত্তি সত্বেও ১৯৪২ সালের ২৩শে মার্চ ইন্দিরার সঙ্গে গুজরাটের পার্শী পরিবারের ফিরোজ গান্ধীর বিয়ে হয়। এর পর ফিরোজ গান্ধি জওহরলাল প্রতিষ্ঠিত National Herald পত্রিকার মুখ্য পরিচালক হন। কিন্তু এই বিয়ে খুব সুখের হয় নি এবং প্রায় বিচ্ছেদেই পর্যবসিত হয়। পর পর দু'বার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৬০ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর ফিরোজ গান্ধীর মৃত্যু হয়।
স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান করার জন্য ইন্দিরা গান্ধি প্রথম কারাবরণ করেন ১৯৪২ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর। তার বড় ছেলে রাজীব গান্ধীর জন্ম হয় ১৯৪৪ সালের ২০শে অগাষ্ট এবং ছোট ছেলে সঞ্জয়ের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৪ই ডিসেম্বর।
ইন্দিরার বাবা জওহরলাল নেহেরুর মৃত্যু ঘটে ১৯৬৪ সালের ২৭শে মে। ১৯৬৪ সালের জুন মাসে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী যখন প্রধান মন্ত্রী তখন ইন্দিরা বেতার সম্প্রসারণ মন্ত্রী হয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভায় যোগদান করেন। লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর পর ১৯৬৬ সালের জানুয়ারী মাসে ইন্দিরা গান্ধী ভারতের ৩য় প্রধান মন্ত্রী হিসাবে দেশ পরিচালনার ভার গ্রহণ করেন। মাত্র এক সপ্তাহ আগেই ১৯৬৫ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের অবসান হয়েছে। ১৯৬৭ সালের ৪র্থ সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস একক ভাবে সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করে এবং ইন্দিরা আবার প্রধান মন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিন্তু অনেক রাজ্যেই তখন কংগ্রেসের পরাজয় ঘটেছে। ইন্দিরা গান্ধী দলকে আরও গতিময় ও জনমুখী করার উদ্দেশ্যে দলে কিছু নীতিগত পরিবর্তন আনেন; কিন্তু রক্ষণশীল অংশ এটা মেনে নিতে পারে নি। তারা বিক্ষুব্বì হয়ে ওঠে। ১৯৬৯ সালের জুলাই মাসে ১৪ টি প্রধান ব্যাঙ্ক জাতীয়করণকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ আরও প্রবল হয়ে ওঠে এবং কংগ্রেস বিভক্ত হয়ে যায়। ১৯৭০ সালে ইন্দিরা গান্ধী রাষ্ট্রপতিকে পার্লামেণ্ট ভেঙে দিতে অনুরোধ করেন। নির্ধারিত সময়ের ১ বছর আগেই ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে মধ্যবর্তী নির্বাচন হয় এবং ইন্দিরার দল দুই তৃতীয়াংশ গড়িষ্ঠতা পেয়ে জয় লাভ করে। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে ইন্দিরার দৃঢ় মনোভাব এবং অবশেষে জয়লাভ অনেকেরই প্রশংসা অর্জন করে। কিন্তু তার বিরোধী পক্ষ তিনি নির্বাচন বিধি লঙঘন করেছেন এই অভিযোগ তুলে মামলা করলে হাইকোর্ট সেটা সমর্থন করে। দেশের আভ্যন্তরীন পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৯৭৫ সালের ২৬শে জুন ইন্দিরা গান্ধী দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন এবং নির্বাচন স্থগিত করে দেন।
১৯৭৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে ইন্দিরার দল শোচণীয় ভাবে পরাজিত হলে, ইন্দিরা প্রধান মন্ত্রীর পদ ত্যাগ করেন। বিরোধী সরকার কিন্তু বেশীদিন স্থায়ী হয় নি। মোরারজি দেশাই পদত্যাগ করলে, চরণ সিং প্রধান মন্ত্রী হন; কিন্তু মাত্র স্বল্প সময়ের জন্য। প্রেসিডেণ্ট নীলম সঞ্জীব রে®ী পার্লামেণ্ট ভেঙে দিলে, পরবর্তী নির্বাচন হয় এবং বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ১৯৭৯ সালে ইন্দিরা গান্ধী পুনরায় প্রধান মন্ত্রী নির্বাচিত হন।
১৯৮০ সালের ২৩শে জুন
ইন্দিরা গান্ধীর ছোট ছেলে সঞ্জয় গান্ধী বিমান দুর্ঘটনায়
নিহত হন।
শিখ সম্প্রদায়ের বড় একটা অংশ বহুদিন থেকে আলাদা রাজ্য গঠনের
জন্য অন্দোলন করে চলেছিল। সেই আন্দোলন আরও প্রবল আকার নেয়
এবং শিখেরা অনেক অস্ত্র শস্ত্র অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে জড়
করে বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়। ইন্দিরা সরকারী রক্ষী
বাহিনীকে স্বর্ণমন্দির আক্রমণ করে (operation
Blue Star) অস্ত্র উদ্ধারের আদেশ দিলে সংঘর্ষে অনেক শিখ
মারা যান। মনে করা হয় এরই পরিণতি হিসাবে নিজেরই বাস ভবনে
১৯৮৪ সালের ৩১শে ডিসেম্বর তার শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে তিনি
নিহত হন।
ইন্দিরার জীবন ছিল কর্মচঞ্চল ও সংগ্রামী। বহু বাধার সম্মুখীন তিনি হয়েছেন, অনেক বিরূপ সমালোচনা তাকে সহ্য করতে হয়েছে এবং জীবনে স্বজন বিয়োগের বহু শোক তাকে ধবস্ত করেছে; কিন্তু সাহসিকতার সঙ্গে তিনি সেই সব পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন। অসাধারণ ব্যক্তিত্বপূর্ণ এই মহিলা প্রধান মন্ত্রী তার নেতৃত্বে ভারতকে নানা ভাবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সাহায্য করেছেন।
জন্মকুণ্ডলীর
বিশ্লেষণ
ইন্দিরা
গান্ধীর রাশি চক্রটি ১৫(৪)ক চিত্রে এবং নবাংশটি ১৫(৪)খ চিত্রে
দেখান হয়েছে।
(১) লগ্ন কর্কট এবং
লগ্নপতি চন্দ্র ৭মে মকর রাশিতে। কর্কট লগ্নের জাতক জাতিকারা
খুব আবেগপ্রবণ ও স্পর্শকাতর হন, কারণ এর অধিপতি চন্দ্র মনের
কারক। এখানে লগ্ন ৯নং অশ্লেষা নক্ষত্রে (অধিপতি বুধ) অবস্থিত।
শুভ ফলদাতা হিসাবে অশ্লেষা নক্ষত্রের খুব একটা খ্যাতি নেই।
কর্কট লগ্নে শনির অবস্থানের প্রভাবে মানসিক অশান্তি, কর্মক্ষেত্রে
বাধা, স্নায়বিক দৌর্বল্যের ইঙ্গিত দেয়। এরা যাদের ভালবাসেন
তাদের দ্বারা খুব প্রভাবিত হন। চন্দ্র লগ্নে দৃষ্টি দেওয়ায়
এবং শনির দৃষ্টি চন্দ্রের উপর থাকায়, ইন্দিরা গান্ধী মাকে
খুব পছন্দ করলেও শনির প্রভাবে মাতৃস্নেহ তিনি সেভাবে পান
নি।
৪র্থ স্থান থেকে মা, গৃহসুখ, পড়াশোনা ইত্যাদি বিচার্য। ৪র্থ পতি শুক্র ৬ষ্ঠে (রোগ
স্থান) রাহুর সঙ্গে যুক্ত থাকায় তিনি মাতৃবিষয়ে সুখী হন নি (মূলতঃ মায়ের অসুখের
জন্য)। গৃহসুখ ত ছিলই না এবং পড়াশোনাও ঠিক সেভাবে হয় নি। শুধু ৬ষ্ঠ স্থানের জন্যই
নয়; রাহু ধনু রাশিতে নীচস্থ (অধিকাংশ জ্যোতিষীর মত) হয়ে ৪র্থ পতি শুক্রের
সঙ্গে অবস্থান করায় তার লেখাপড়াতে যথেষ্ট ছেদ পড়েছে।
(২) মাতৃকারক গ্রহ চন্দ্র শনির দ্বারা দৃষ্ট
হওয়ায় এবং ৬ষ্ঠ পতি (রোগ, অসুস্থতা ইত্যাদি) বৃহ্রপতি চন্দ্রকে
দৃষ্টি দেওয়ায় মা খুবই অসুস্থ ছিলেন। আবার বৃহ্রপতি ৪নং নক্ষত্র রোহিণীতে (অধিপতি
চন্দ্র) অবস্থিত হওযায় এই সম্ভাবনা আরও জোরাল হয়েছে। ৯ম স্থানের (পিতৃস্থান) অধিপতি
বৃহ্রপতি ইন্দিরা গান্ধীর কুণ্ডলীতে ১১শে অবস্থিত। চন্দ্র লগ্ন থেকেও ৯ম পতি বুধ
১১শে (লাভ স্থানে) পিতৃকারক গ্রহ রবির সঙ্গে রয়েছে। এতে তার নিজের গড়ে ওঠার পেছনে
বিশেষ করে তার ভবিষ্যত্ রাজনৈতিক জীবনের ভিত্তি গঠন করার ক্ষেত্রে তার পিতা জওহরলাল
নেহেরুর অবদান অনস্বীকার্য। চন্দ্র লগ্ন থেকেও ৯ম পতি বুধ ১১শে (লাভ স্থান) পিতৃকারক
গ্রহ রবির সঙ্গে অবস্থিত। চন্দ্র শনিদৃষ্ট হওয়ায় এবং শনি লগ্নে থাকায় মনের দিক
দিয়ে তিনি ছিলেন অনেকটা একা কিন্তু শনির প্রভাবে তার শৃÍলা বোধ ছিল অসাধারণ।
(৩) শনি জনসাধারণের কারক গ্রহ কিন্তু শনি সাধারণতঃ সমাজের দলিত ও নীচু তলার মানুষকে নির্দেশ করে। ৯ম পতি (ভাগ্য পতি) বৃহ্রপতি চন্দ্রকে দৃষ্টি দিচ্ছে। ইন্দিরা গান্ধীর, বিশেষ করে দরিদ্র ও অবহেলিত শ্রেণীর উপর, একটা জনমোহিনী প্রভাব কাজ করত; তবে শনির দৃষ্টি চন্দ্রের উপরে থাকায় এবং শনির ৮ম পতিত্ব হেতু এটা মাঝে মাঝে তার অনুকূলে ফল দেয় নি।
(৪) ইন্দিরা গান্ধীর ২য় পতি রবি মঙ্গলের ক্ষেত্র বৃশ্চিকে অবস্থিত। মঙ্গল রুক্ষ, কর্কশতা ইত্যাদির কারক। মঙ্গল লগ্নের ২য়ে (বাকস্থান) অবস্থিত হয়ে রাশি অধিপতি (sign dispositor) রবিকে দৃষ্টি দিচ্ছে। ইন্দিরা গান্ধী কথা বলতেন খুব দৃঢ় ভাবে এবং প্রায় আদেশের ভঙ্গীতে। ৩য় স্থান ও কারক গ্রহ বুধ থেকে লিখন (writing) এর বিচার করা হয়। এখানে ৩য় পতি বুধ নিজেই এবং বুধ রবির সঙ্গে যুক্ত হয়ে মঙ্গলের দ্বারা দৃষ্ট। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, ২য় পতি রবির সঙ্গে ৫ম ও ১০ম পতি মঙ্গলের স্থান বিনিময় হয়েছে। ১০ম অর্থাত্ কর্মক্ষেত্রেও তার এই বৈশিষ্ট্য কাজ করত। তার লেখার মধ্যেও এক ধরণের আবেগহীনতা ও নির্মমত্ব প্রকাশ পেত। শোনা যায় তিনি তার বাবা, স্বামী এবং ছেলেদেরও এই ভঙ্গীতে চিঠি লিখতেন।
রবি রাজনীতিরও কারক গ্রহ এবং রবি ৫ম কোণে মঙ্গলের ক্ষেত্রে মঙ্গলের দ্বারা দৃষ্ট। রবি ১৭নং অনুরাধা নক্ষত্রে (অধিপতি শনি) অবস্থিত। রাজনীতির ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন দৃঢ়, আপোষহীন ও অসহিষুÎ। ৯ম (ও ৬ষ্ঠ) পতি বৃহস্পতি ১১শে থেকে রবিকে দৃষ্টি দেওয়ায় তার মধ্যে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের বিকাশ হয়েছে। মঙ্গলের ক্ষেত্রে রবির অবস্থান, মঙ্গলের উপর বৃহ্রপতির দৃষ্টি সম্ভবতঃ তার মধ্যে একটা অহং বোধের (ego) সৃষ্টি করেছিল। তিনিই যেন সব কিছুর শেষ কথা। বৃহস্পতি ৬ষ্ঠ পতিত্ব হেতু তাকে অনেক বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
(৫) ইন্দিরা গান্ধীর মা কমলা নেহেরুর মৃত্যু হয় ১৯৩৬ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী। ইন্দিরার তখন দশা-অন্তর্দশা চলছিল মঙ্গল-রবি। প্রত্যন্তর্দশা দশা ছিল রবির। কর্কট লগ্নের ৪র্থ (মাতৃস্থান) রাশি তুলা। তুলা থেকে ২য় ( মারক স্থান ) স্থানের অধিপতি মঙ্গল এবং সেখানে রবি অবস্থিত। আবার চন্দ্র থেকে ৪র্থ স্থান মেষ রাশির ৮ম পতি (নিধন স্থান) মঙ্গল এবং ৮মে রবি অবস্থিত। অতএব মঙ্গল-রবি-রবিতে মায়ের মৃত্যু খুব স্বাভাবিক।
(৬) ইন্দিরার রাহুর দশা চলেছিল ১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৫৫ সাল অবধি। তার বিয়ে হয় ১৯৪২ সালের ২৩শে মার্চ, ফিরোজ গান্ধীর সঙ্গে। ইন্দিরার তখন রাহু-শনি-শনি চলছিল। ৭ম পতির লগ্নে অবস্থান নির্দেশ করে যে জাতক বা জাতিকা যাকে বিয়ে করবে তার সঙ্গে পূর্ব পরিচয় ছিল। আবার ৭ম পতি শনি লগ্ন পতি চন্দ্রের সঙ্গে স্থান বিনিময় করেছে। ৭মে শনির অবস্থানের জন্য সাধারণতঃ স্বামীর বয়স অনেকটা বেশী হয় অথবা স্বামী ভিন্ন শ্রেণীর হয়। এখানে ফিরোজ গান্ধী পার্শী ছিলেন। লগ্ন পতি ও ৭ম পতির স্থান বিনিময়ের জন্য বিয়ের ব্যাপারে শনির যোগ থাকবেই। কিন্তু রাহুর দশায় বিয়েটা হল কেন ? " শনিবত্ রাহু " ( অনুচ্ছেদ ৫ ) অনুসারে রাহু অনেক বিষয়ে শনির মতই কাজ করে। রাহু পরতন্ত্রী গ্রহ হিসাবে বৃহস্পতির ঘরে এবং শুক্রের সঙ্গে থাকার জন্য শনি ছাড়াও রাহু বৃহ্রপতি ও শুক্রের ফলও আংশিক ভাবে দেবে। বৃহস্পতি শুক্রের ঘরে ১১শে ( ইচ্ছা পূরণ ) থেকে লগ্নের ৭মে (জায়া স্থান) দৃষ্টি দেওয়ায় রাহুর মহাদশায় বিয়ে হয়েছে। কিন্তু মঙ্গল লগ্নের ২য়ে অবস্থিত হয়ে ৮মে দৃষ্টি দেওয়ায় এবং চন্দ্র থেকেও মঙ্গল ৮মে থাকায় আইন অনুযায়ী বিবাহ বিচ্ছেদ না ঘটলেও (২য়ে মঙ্গল সাধারণতঃ বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটায় না) ভুল বোঝাবুঝি প্রকৃতপক্ষে বিচ্ছেদেই পর্যবসিত হয়েছিল।
(৭) ১৯৪২ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর ইন্দিরার যখন রাহু-শনি-বুধের দশা-অন্তর্দশা-প্রত্যন্তর্দশা চলছিল তখন তিনি গ্রেপ্তার বরণ করেন এবং এবং ৮ মাস তাকে জেলে কাটাতে হয়। শনি দশাপতি রাহু থেকে ৮মে এবং অন্তর্দশাপতি বুধ থেকে ১২শে অবস্থিত। নীচস্থ রাহু চন্দ্রের ১২শে ও লগ্নের ৬ষ্ঠে অবস্থিত। লগ্নের ৪র্থ পতি (বাসস্থান) শুক্রের সঙ্গে রাহু যুক্ত এবং চন্দ্রের ৪র্থে মেষ রাশিতেও শনির দৃষ্টি রয়েছে। কারকত্ব হিসাবে শনি এবং রাহুর একটা বিচ্ছিন্ন করার (separative planets) শক্তি আছে। অতএব উক্ত দশা-অন্তর্দশায় ইন্দিরা বাসস্থান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জেলে কাটান।
(৮) ইন্দিরার প্রথম পুত্র রাজীব গান্ধীর জন্ম হয় ১৯৪৪ সালের ২০শে অগাষ্ট। ইন্দিরার তখন রাহু-শনি-বৃহস্পতি চলছিল। রাহু ও কেতুর বৈশিষ্ট্য হল, যার ক্ষেত্রে তারা অবস্থান করবে সেই অধিপতির বা যার সঙ্গে যুক্ত অথবা যার দ্বারা দৃষ্ট তাদের ফল প্রদান করে। রাহু বৃহস্পতির রাশি ধনুতে থাকায় বৃহ্রপতির ফল দিতে পারে। বৃহ্রপতি বর্গোত্তম হওয়ায় যথেষ্ট শক্তিশালী। বৃহস্পতি পুত্রকারক গ্রহ হয়ে লগ্নের ১১শে (ইচ্ছাপূরণ, লাভ, আয় ইত্যাদি) অবস্থিত হয়ে লগ্নের ৫মে ( সন্তান স্থান ) দৃষ্টি দেওয়ায় সন্তান জন্মের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়েছে। আবার শনি বুধের নক্ষত্রে (অশ্লেষা নক্ষত্র) অবস্থিত এবং বুধ লগ্নের ৫মে রয়েছে। পুত্রকারক বৃহস্পতি থেকে ৫মের অধিপতি (এ ভাবেও বিচার করা হয়) অর্থাত্ কন্যা রাশির অধিপতি, বুধ চন্দ্র থেকে ১১শে অবস্থিত। অতএব সন্তান লাভের সঙ্গে শনিও যুক্ত। দ্বিতীয় পুত্র সঞ্জয়ের জন্ম হয় ১৯৪৬ সালের ১৪ই ডিসেম্বর, ইন্দিরার রাহু-বুধ-বৃহস্পতি দশা-অন্তর্দশা-প্রত্যন্তর্দশায়। পূর্বোক্ত কারণে রাহু সন্তানকারক বৃহস্পতির ফল দেবে। বুধ ৫মে সন্তান স্থানে অবস্থিত। অতএব দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম সঠিক সময়েই হয়েছে।
(৯) ইন্দিরার বৃহস্পতির দশা চলেছিল ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। ১৯৬০ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর ইন্দিরা গান্ধীর স্বামী ফিরোজ গান্ধী মারা যান। তখন ইন্দিরার বৃহস্পতি-বুধ-চন্দ্রের দশা। শুক্র প্রেম, প্রীতি, ভালবাসার সূচক ঠিকই কিন্তু মহিলার ক্ষেত্রে স্বামীর কারক গ্রহ বৃহস্পতি। পুরুষের ক্ষেত্রে স্ত্রীর কারক গ্রহ শুক্র। এখানে স্বামীর কারক গ্রহ বৃহস্পতির ৭মে (মারক স্থান) বুধ অবস্থান করছে এবং বৃহস্পতির ২য় অপর একটি মারক স্থান) স্থানের (মিথুনের) অধিপতিও বুধ। এ ছাড়া লগ্নের ৭মে চন্দ্র অবস্থিত হওয়ায় এবং শনির দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় বৃহস্পতি-বুধ-চন্দ্রের দশায় ইন্দিরা স্বামীকে হারিয়েছেন।
(১০) ১৯৫৯ সালে বৃহস্পতি-শনির
দশা-অন্তর্দশায় ইন্দিরা গান্ধী Indian National Congress-এর
সভাপতি নির্বাচিত হন। ৯ম পতি (ভাগ্য পতি) বৃহস্পতির
১১শে অবস্থান খুবই শুভ। আবার চন্দ্র লগ্নের অধিপতি শনির
৯মে (কন্যা রাশিতে) দৃষ্টি রয়েছে। অতএব বৃহস্পতি-শনিতে এই
পদ প্রাপ্তি ঘটতে পারে। শনি শৃÍলা ও দায়িত্ব বোধের কর্তা;
শনির অন্তর্দশায় জনসাধারণের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ নির্দেশ
করে। তবে একই সঙ্গে বৃহস্পতি যে ৬ষ্ঠ পতি এবং শনি ৮ম পতি
এ কথা ভুললে চলবে না। ইন্দিরার এই পদ গ্রহণকে কেন্দ্র করে
নিশ্চয়ই কিছু বিরুদ্ধ মত এবং শত্রুতা তৈরী হয়েছিল।
জওহরলালের মৃত্যুর পর লালবাহাদুর শাস্ত্রী প্রধান মন্ত্রী
হন ১৯৬৪ সালের জুন মাসে এবং ঐ সালেই ইন্দিরা বেতার সম্প্রসারণ
মন্ত্রী হয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভায় যোগদান করেন। তখন তার
বৃহস্পতি-শুক্রের দশা-অন্তর্দশা চলছিল। বর্গোত্তম বৃহস্পতি
৯ম পতি হয়ে ১১শে অবস্থিত এবং শুক্র চন্দ্র লগ্ন থেকে ৫ম
ও ১০ম পতি হিসাবে রাজযোগকারী গ্রহ।
(১১) ইন্দিরার পিতা জওহরলাল নেহেরুর মৃত্যু ১৯৬৪ সালের ২৭শে মে। তখন ইন্দিরার বৃহস্পতি-শুক্র-বৃহ্রপতি চলছিল। লগ্নের ৯ম (পিতৃস্থান) স্থানের অধিপতি বৃহস্পতি; শুক্র বৃহস্পতি থেকে ৮মে (নিধন স্থানে) এবং পিতৃকারক গ্রহ রবি থেকে ২য়ে (মারক স্থানে) অবস্থিত। চন্দ্র থেকে দেখলে চন্দ্র লগ্নের ৯ম স্থানের ৭মের অধিপতি বৃহ্রপতি এবং ২য় স্থানের অধিপতি শুক্র। কারক গ্রহ রবি থেকে বৃহস্পতি ৭মে অবস্থিত। অতএব এখানে ৯ম পতি বৃহ্রপতি নিজেই পিতার মারক হিসাবে কাজ করেছে।
(১২) প্রথম দফায় ইন্দিরা গান্ধী প্রধান মন্ত্রী হন ১৯৬৬ সালের ১৯শে জানুয়ারী। তখন তার বৃহস্পতি-রবির দশা-অন্তর্দশা চলছিল। বৃহস্পতি ৯ম পতি ( ভাগ্য স্থানাধিপতি ) হয়ে ১১শে (লাভ স্থান) রয়েছে। রবি ( রাজনীতির কারক গ্রহ ) রাজযোগকারী গ্রহ মঙ্গলের (৪র্থ ও ৯ম পতি) সঙ্গে স্থান বিনিময় করায় রবি মঙ্গলের শুভ ফল দিতে পারে। নবাংশে রবি স্বক্ষেত্রে এবং মঙ্গল বর্গোত্তম হওয়ায় যথেষ্ট শক্তিশালী। চন্দ্র থেকে বিচার করলেও ১১শ পতি মঙ্গল ১১শে অবস্থিত রবিকে দৃষ্টি দেওয়ায় ১১শ স্থান (ইচ্ছা পূরণ) সম্পর্কিত ফলের সম্ভাবনা আরও প্রবল হয়েছে। অতএব বৃহস্পতি-রবিতে তার একটি বড় ধরণের প্রাপ্তিযোগ নির্দেশ করে।
ইন্দিরার শনির দশা শুরু হয় ১৯৭০ সালের নভেম্বর মাসে। ১৯৭১ সালের নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। তখন তার শনি-শনি চলছিল। শনি চন্দ্র লগ্নের অধিপতি, ৭মে বুধের ক্ষেত্রে অবস্থিত। বুধ চন্দ্র থেকে ৯ম পতি, রয়েছে চন্দ্রের ১১শে। জয়লাভ তিনি করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু প্রতিটি গ্রহের অশুভত্বের দিকটা ভুললে চলবে না। শনি লগ্ন থেকে ৮ম স্থানের অধিপতি, বুধ ৩য় ও ১২শ পতি; বৃহস্পতির ৬ষ্ঠ পতিত্ব দোষও রয়েছে। বৃহস্পতি ১১শে অবস্থিত বুধকে দৃষ্টি দিচ্ছে। চন্দ্র লগ্ন থেকে বুধ ৯ম পতি হলেও ৬ষ্ঠ পতিত্ব দোষও রয়েছে। নির্বাচনে জয়ের পর বিরোধীরা নির্বাচন বিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে আইনের সাহায্য নিলে, ১৯৭৫ সালের ২২শে জুন তারিখে এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় ইন্দিরার বিপক্ষেই যায়। ১৯৭৫ সালের ২৬শে জুন emergency জারি করে তিনি সাময়িক ভাবে রক্ষা পেতে চেষ্টা করেন।
(১৩) ১৯৭৭ সালের ২২শে মার্চ সাধারণ নির্বাচনে শনি-কেতুর দশায় ইন্দিরার শোচণীয় পরাজয় ঘটে। দশাপতি শনি থেকে অন্তর্দশাপতি কেতু ১২শে অবস্থিত। এটা শুভ নয়। ১২শে বুধের ঘরে কেতুর অবস্থানের জন্য কেতু মূলতঃ বুধের ফলই দেবে। ১২শ থেকে ক্ষতি, ব্যয় ইত্যাদি বিচার্য। শনি লগ্নের ৭ম ও ৮ম পতি। ৮ম স্থান মৃত্যু ছাড়াও অবমাননা, অপদস্থতা, সম্মানহীনতারও দ্যোতক। ৩য় ও ১২শ পতি বুধ কর্কট লগ্নের পক্ষে অশুভ গ্রহ। কাজেই শনি-কেতুতে ইন্দিরা গান্ধীর শোচনীয় পরাজয়। ১৯৮০ সালের ১৪ই জানুয়ারীতে শনি-শুক্রের দশা-অন্তর্দশায় সাধারণ নির্বাচনে জিতে তিনি আবার প্রধান মন্ত্রী হন। চন্দ্র লগ্নের অধিপতি হিসাবে শনির কিছুটা শুভত্ব আছে। মকর লগ্নের ক্ষেত্রে শুক্র ৫ম ও ১০ম পতি হওয়ায় রাজযোগকারী গ্রহ, অবস্থিত ২০নং পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্রে যার অধিপতি শুক্র নিজেই। অতএব শুক্র যথেষ্ট জোরাল। এ ছাড়া শুক্রের রাশি অধিপতি (sign dispositor) বৃহ্রপতি (অনুচ্ছেদ ১৩, ১০নং নিয়ম) ৯ম পতি (ভাগ্য পতি) হয়ে ১১শে (আয়, লাভ, ইচ্ছপূরণ ইত্যাদি) অবস্থিত হওয়ায়, শুক্রের দশা-অন্তর্দশায় তিনি দ্বিতীয়বার প্রধান মন্ত্রী হন। শনি ও শুক্র পরস্পরের ৬ষ্ঠ ৮মে অবস্থান করায় শনি-শুক্রর দশা শুভ ফলদায়ক হয়েছে (অনুচ্ছেদ ১৩, ১৯নং নিয়ম)।
(১৪) ১৯৮০ সালের ২৩শে জুন ইন্দিরা গান্ধীর ছোট ছেলে সঞ্জয়
বিমান দুর্ঘটানায় মারা যান। ইন্দিরার তখন শনি-শুক্র-বুধের
দশা। শনি স্বাভাবিক দুঃখদায়ক ও মৃত্যুকারক গ্রহ। শনি লগ্নে
বুধের অশ্লেষা নক্ষত্রে অবস্থিত। বুধ রয়েছে লগ্নের ৫মে (সন্তান
স্থান) মঙ্গলের রাশি বৃশ্চিকে এবং পুত্রকারক গ্রহ বৃহস্পতি
থেকে মারক স্থানে (৭মে)। বুধ লগ্নের ৫ম স্থান থেকে ৮মেরও
অধিপতি। চন্দ্র লগ্ন থেকে বিচার করলেও ৫ম (সন্তান স্থান)
স্থানের ৭মে রয়েছে বুধ এবং ৮মে ( নিধন স্থান ) শুক্র। লগ্ন
থেকে ৫ম স্থান বৃশ্চিক রাশি থেকে ৭মের অধিপতি শুক্র এবং
শুক্রের অবস্থান লগ্ন থেকে ৫ম স্থানের ২য়ে। কোন স্থানের
২য়ে কোন গ্রহ থাকলে সেটাই সেই স্থানের মুখ্য মারক হিসাবে
গণ্য হয়। অতএব নানা দিক থেকে বিচার করলে শনি-শুক্র-বুধের
দশা-অন্তর্দশা-প্রত্যন্তর্দশা সন্তানের মৃত্যুর কারণ হয়েছে।
বুধ শনির নক্ষত্রে থাকায় এবং মঙ্গলের দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায়
দুর্ঘটনায় মৃত্যু অসম্ভব নয়। এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়।
রাহু আকাশ পথ নির্দেশ করে (অনুচ্ছেদ ৫)। রাহু সন্তান স্থান
(৫ম) থেকে ২য়ে (মারক স্থান) এবং সন্তানের কারক গ্রহ বৃহ্রপতি
থেকে ৮মে (মৃত্যু স্থান) অবস্থিত। নবাংশেও রাহু বৃহস্পতির
২য়ে রয়েছে। বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কারন হিসাবে এটা ধরা
যেতে পারে।
(১৫) ইন্দিরা গান্ধীর নিজের মৃত্যু ১৯৮৪ সালের ৩১শে অক্টোবর, শনি-রাহু-রাহুর দশায়। লগ্নের ৭ম ও ৮ম পতি শনি লগ্নপতি চন্দ্রের সঙ্গে স্থান বিনিময় করে চন্দ্র লগ্নের ৭মে থাকায় জাতিকার মৃত্যুর বিষয়ে শনির ভূমিকা অনস্বীকার্য। বৃহস্পতি ধর্মভাবের কারক গ্রহ। ভ-চক্রের (natural zodiac) ৯ম স্থান (৯ম ভাব থেকে ধর্মের বিচার হয় - ৫ম ও ৮ম অনুচ্ছেদ দ্রষ্টব্য) ধনু রাশি ধর্মভাবের দ্যোতক। ধনুতে নীচস্থ রাহুর অবস্থান বিধর্মীদের সঙ্গে মনোমালিন্য বা তাদের থেকে আঘাত বা প্রত্যাঘাত বোঝাতে পারে। লক্ষ্য করার বিষয় হল, যখন ইন্দিরার বিধর্মীর সঙ্গে (ফিরোজ গান্ধী পার্শী ছিলেন) বিয়ে হয় তখন তাকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল এবং তখন তার দশা চলছিল রাহু-শনি-শনি। শনি-রাহু-রাহুতে বিধর্মী শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে তার নিজের মৃত্যু হয়। চন্দ্র লগ্নের ২য় পতি শনি চন্দ্র লগ্নের ৭মে অবস্থিত হওয়ায় এবং লগ্নের ৭ম ও ৮ম পতি শনি লগ্নপতি চন্দ্রের সঙ্গে স্থান বিনিময় করায় শনি মুখ্য মারক হয়েছে (শনি অশ্লেষা নক্ষত্রেও অবস্থিত)। "শনিবত্ রাহু" অনুসারে নীচস্থ রাহু লগ্নের ৬ষ্ঠে এবং চন্দ্র লগ্নের ১২শে অবস্থিত হওয়ায় রাহুর দশা ও প্রত্যন্তর্দশা মারক হয়েছে। লগ্নের ৮মে (মৃত্যু বা নিধন স্থান) শনির ক্ষেত্রে মঙ্গলের দৃষ্টি অস্ত্রের আঘাতে (বা দুর্ঘটনায়) মৃত্যু নির্দেশ করে।
(১৬) ইন্দিরা গান্ধীর কুণ্ডলীতে লগ্ন থেকে ৫মে বৃশ্চিক রাশিতে বুধাদিত্য যোগ ছাড়াও আরও দুটি বিশেষ যোগের কথা উল্লেখ করা হয় নি। একটি হল মহাভাগ্য যোগ; কোন মহিলার ক্ষেত্রে জন্ম যদি রাত্রি বেলা হয় এবং লগ্ন, রবি ও চন্দ্র যদি জোড় বা স্ত্রী রাশিতে (অনুচ্ছেদ ৩) অবস্থান করে তবে এই যোগ হয়। ইন্দিরার রাত্রিবেলা জন্ম এবং লগ্ন, রবি ও চন্দ্র যথাক্রমে কর্কট, বৃশ্চিক ও মকর রাশিতে অবস্থিত; তিনটিই স্ত্রী রাশি। এই যোগের নামকরণ থেকে বোঝা যাচ্ছে, জাতিকার ভাগ্য জীবনে তার খুবই সহায়ক হবে। ইন্দিরার ক্ষেত্রে সেটা অবশ্যই ফলপ্রসূ হয়েছে; তবে এই যোগের অর্থ এই নয় যে তাকে জীবনে কোনও কষ্ট সহ্য করতে হবে না। দ্বিতীয় যোগটি হল বসুমতী যোগ। উপচয় স্থানে (অনুচ্ছেদ ১০) শুভ গ্রহ (চন্দ্র, বুধ, বৃহ্রপতি ও শুক্র) অবস্থিত হলে এই যোগ হয়। সব কটি গ্রহই উপচয়ে থাকতে হবে তা নয়; দুই একটিও থাকতে পারে, তবে ফল অনুরূপ হবে। এখানে ৬ষ্ঠে শুক্র এবং ১১শে বৃহস্পতি রয়েছে। যদিও রাহু শুক্রের সঙ্গে যুক্ত তবে দুই-এর মধ্যে দূরত্ব প্রায় ১২ ডিগ্রি। বসুমতি যোগের ফলে মূলতঃ সম্পদ বৃদ্ধি হয়, ক্ষমতা বিষয়ে খুব কিছু বলা নেই।
(১৭) কিছু জ্যোতিষীর মতে ইন্দিরা গান্ধীর লগ্ন কর্কট না হয়ে সিংহ হবে। কারণ, কর্কট লগ্নের ক্ষেত্রে শনি ৭ম ও ৮ম পতি হয়ে লগ্নপতি চন্দ্রের সঙ্গে ক্ষেত্র বিনিময় করায় এবং এবং শনি চন্দ্রকে দৃষ্টি দেওয়ায় ফল খুবই খারাপ হবে এবং সেক্ষেত্রে ইন্দিরা গান্ধী যে সাফল্য পেয়েছেন সেটা পাবার কথা নয়। এটা একটু খুঁটিয়ে দেখা যাক। শনি কর্কট লগ্নের ক্ষেত্রে ৭ম ও ৮ম স্থানের অধিপতি। নৈসর্গিক অশুভ গ্রহ হয়ে ৭ম কেন্দ্রের অধিপতি হওয়ায় পরাশরের মতে শুভফলদায়ক (অনুচ্ছেদ ১০) কিন্তু একই সঙ্গে ৮মের (দুঃস্থান) অধিপতি হওয়ায় পরিশেষে অশুভই (অনেকের মতে সম ভাবাপন্ন)। কিন্তু শনির অশুভত্ব অনেক হ্রাস পেয়েছে, কারণ (ক) শনি ৮ম দুঃস্থানের ৬ষ্ঠে (অপর একটি দুঃস্থান) অবস্থিত হওয়ায় ৮মের অশুভত্ব অনেক কমে গিয়েছে (খ) মঙ্গল ও কেতুর মধ্যবর্তী হয়ে পাপ কর্তরী যোগে দুষ্ট হওয়ায় শনির অশুভ ফল দেবার তীব্রতা হ্রাস পেয়েছে এবং (গ) মঙ্গল কর্কট লগ্নের রাজযোগকারী (৫ম কোণ ও ১০ম কেন্দ্রের অধিপতি) গ্রহ হলেও মঙ্গলের নৈসর্গিক অশুভত্ব ত রয়েছে এবং তার ৮মে দৃষ্টি থাকায় ৮মের কিছু অশুভত্ব কমে গিয়েছে; অবশ্য নিধন স্থানের (৮ম স্থান) সাপেক্ষে এর ফল ভাল হয় নি - এতে আয়ু হ্রাস পেয়েছে এবং মৃত্যুও হয়েছে হিংসাত্মক ঘটনার মাধ্যমে। অতএব ইন্দিরা গান্ধীর কর্কট লগ্ন হওয়াতে কোন সমস্যা আছে বলে মনে হয় না। তবে এই বিশ্লেষণ কিছু জ্যোতিষী করলেও অনেকের কাছে এটা গ্রহণ যোগ্য নাও হতে পারে। ভারতের প্রধান মন্ত্রী তিনি হয়েছেন ঠিকই কিন্তু ব্যক্তি হিসাবে তাকে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি, শোক, তাপ ইত্যাদি সহ্য করতে হয়েছে।
(১৮) ইন্দিরার কুণ্ডলীতে একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল, বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র বিনিময় সম্পর্ক (অনুচ্ছেদ - ১৩, ১২ নং নিয়ম)। প্রথমতঃ লগ্নপতি চন্দ্রের সঙ্গে ৭ম ও ৮ম পতি শনির; দ্বিতীয়তঃ দ্বিতীয় পতি রবির সঙ্গে ৫ম ও ১০ম পতি মঙ্গলের; তৃতীয়তঃ ৬ষ্ঠ ও ৯ম পতি বৃহ্রপতির সঙ্গে ৪র্থ ও ১১শ পতি শুক্রের। প্রথমটির ফল বহু বাধা বিপত্তি ভোগ ও বৈবাহিক গোলযোগ; দ্বিতীয়টির ফল বাক ক্ষমতা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও কর্মক্ষেত্রে সাহসিকতা এবং তৃতীয়টির ফল বাধা ও প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও ভাগ্যোন্নতি।
(১৯) ইন্দিরা গান্ধীর কুণ্ডলীতে একটি মুখ্য বিষয় হল তার পরাক্রম, কূটনৈতিক বুদ্ধি ও অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। পরাক্রমের কর্তা (৩য় স্থান ও অধিপতি থেকে পরাক্রম বিচার্য) ৩য় পতি বুধ রবির (রাজনীতি, জীবনী শক্তি, আত্মসম্মান বোধ, অহঙ্কার ইত্যাদির কারক) সঙ্গে যুক্ত হয়ে এবং মঙ্গলের ক্ষেত্রে অবস্থিত হয়ে মঙ্গলের দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় পরাক্রম ত আছেই; তার সঙ্গে একটা দৃঢ় ও সংগ্রামী মনোভাব রয়েছে। বুদ্ধির কারক গ্রহ বুধ লগ্নের ৫মে (সূক্ষবুদ্ধি) রবির সঙ্গে বুধাদিত্য যোগ তৈরী করেছে এবং এই দুটি গ্রহ আবার ১১শ স্থান থেকে ৯ম পতি বৃহস্পতির দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় ব্যক্তিত্ব ও আত্মসম্মান বোধ পূর্ণ মাত্রায় লক্ষিত হয়েছে।
বাস্তবে অসম্ভব বলে মনে হলেও মানুষের চরিত্রে পরস্পরের বিপরীত ধর্মী দুই ভাবের একই সঙ্গে সমাবেশ ঘটতে পারে। জ্যোতিষ মতে গ্রহের কারকত্ব ও গুণাগুণ দিয়ে এর ব্যাখ্যা অপেক্ষাকৃত সহজ। কুণ্ডলীতে ৫ম পতি মঙ্গলের এবং ৯ম পতি বৃহ্রপতির ৫মে দৃষ্টি থাকায় ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে একটা ধর্মভাব সুপ্ত ছিল। অনেক ক্ষেত্রেই তাকে অনেক মহাপুরুষ ও ধর্মগুরুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে দেখা গেছে।
(২০) জাতক পারিজাত এবং সর্বার্থ চিন্তামণি গ্রন্থে বর্ণিত কিছু গ্রহ সন্নিবেশ অনুযায়ী ইন্দিরার কুণ্ডলীতে কিছু রাজযোগ তৈরী হয়েছে। যেমন (ক) যদি বুধ কেন্দ্রে বা কোণে অবস্থিত হয়ে ৯ম পতি দ্বারা দৃষ্ট হয় তবে জাতক রাজার মত শক্তিশালী হয়। ইন্দিরার ছকে বুধ লগ্ন থেকে ৫ম কোণে অবস্থিত হয়ে ৯ম পতি বৃহস্পতির দ্বারা দৃষ্ট। (খ) যদি বৃহস্পতি বুধের সঙ্গে যুক্ত থাকে বা বুধ দ্বারা দৃষ্ট হয় তবে রাজ্য লাভ হয়। এটিও ছকে রয়েছে। (গ) চন্দ্রের রাশিপতি নবাংশে যে রাশিতে থাকবে তার অধিপতি যদি রাশিতে লগ্ন থেকে বা বুধের থেকে কেন্দ্রে বা কোণে অবস্থিত হয় তা হলে জাতক রাজাধিপতি হবে। ইন্দিরার ছকে চন্দ্রের রাশিপতি শনি এবং শনি নবাংশে নিজের ক্ষেত্রেই অবস্থিত। শনি রাশিতে লগ্ন কেন্দ্রে এবং বুধের থেকে ৯ম কোণে রয়েছে; অতএব এই যোগ হয়েছে। শ্লোকের অর্থ আক্ষরিক অর্থে না ধরে জাতক বা জাতিকার রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি লাভ হয় এই ভাবেই ধরতে হবে।
১৯৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধীর পতন কেন হল ? জ্যোতিষ
শাস্ত্র মতে দুটি গ্রহ যদি একে অপরের ৬ষ্ঠ-৮ম রাশিতে থাকে (এটাকে ষষ্ঠাষ্টক অবস্থানও
বলে) তবে তাদের দশা-অন্তর্দশার ফল শুভ হয় না। ইন্দিরার নবাংশ চক্রে বুধ ও শুক্র
বৃহ্রপতি থেকে ৮মে ; শনি-রবি এবং শনি-মঙ্গলও পরস্পরের ষষ্ঠে-অষ্টমে রয়েছে। সত্যাচার্যের
সূত্র অনুযায়ী এটাই ইন্দিরা গান্ধীর অন্তর্বর্তী কালে পতনের কারণ।
শাস্ত্রে এ রকম কয়েক হাজার শ্লোক ও নিয়ম রয়েছে। এ গুলি সাধারণের পক্ষে আয়ত্ব করা
বা মনে রেখে যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। এই কারণেই বর্তমান ধারাবাহিকে কিছু
সাধারণ নিয়ম ও যুক্তির উপর নির্ভর করে কুণ্ডলীর বিশ্লেষণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
৫. অ্যাডল্ফ হিটলার
জন্ম
বিবরণ : ১৯৮৯ সাল, ২০শে এপ্রিল; সময় সন্ধ্যা ৬-৩০ সেকেণ্ড| স্থান : Branau-am-Inn,
Austria, 48 N 15, 13 E 2. Time zone : 1-0-0 hr East লাহিড়ী অয়নাংশ| ভোগ্য দশা :
শুক্র ১৮ বছর ৭ মাস ১৫ দিন|
সংক্ষিপ্ত ঘটনাবলী
হিটলারের জন্ম অষ্ট্রিয়া ও জার্মানী সীমার কাছাকাছি একটি শহরে| বাবার নাম Alois
এবং মা Klaaraa. হিটলারের আগে তাদের দুই সন্তান জন্মেছিল কিন্তু শৈশবেই তারা মারা
যায়| ৬ বছর বয়সে হিটলার বিদ্যালয়ে ভর্তি হন| Edmund নামে তার ছোট ভাই ৬ বছর বয়সেই
মারা যায় এর পর তার এক বোন Paula জন্মগ্রহণ করে| ১৯০৩ সালের ৩রা জানুয়ারী হিটলারের
পিতৃবিয়োগ হয়| শিল্পী হবার বাসনা নিয়ে হিটলার বিদ্যালয় ত্যাগ করেন তবে বিদ্যালয়ে
তার ফলও খুব ভাল হচ্ছিল না| ১৮ বছর বয়সের হিটলারের কোন রোজগার ছিল না| সেই সময়
তিনি রাজনীতি ও ইতিহাস বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে পড়েন| শিল্পী হবার বাসনায় Vienna Academy
of Fine Arts -এ ভর্তি হতে গিয়ে তিনি ব্যর্থ মনোরথ হন| ১৯০৭ সালের ২১শে ডিসেম্বর
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হিটলারের মা মারা যান| এর পর হিটলার প্রায় গৃহহীন অবস্থায়
ঘুরে বেড়ান এবং দান ছত্রের দয়ায় বেঁচে থাকেন| মাঝে মাঝে তিনি বিজ্ঞাপনের জন্য ছবি
আঁকতেন কিন্তু সেখান থেকে তার আয় হত যৎসামান্য|
১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় তিনি জার্মান সৈন্য বাহিনীতে যোগদান করেন; ঐ বছরেই তিনি বিষাক্ত গ্যাসের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে সাময়িক অন্ধত্ব নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন| হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি সৈন্য বাহিনীতেই ফিরে যান এবং জনসমক্ষে বক্তৃতা করবার দক্ষতা অর্জন করতে সচেষ্ট হন| এই সময়ে একদিন German Worker's Party -র একটি সভায় জনৈক বক্তার বক্তব্যের প্রত্যুত্তরে তিনি এত জ্বালাময়ী ভাষায় অনর্গল বক্তৃতা করেন যে সেই দলের প্রতিষ্ঠাতা অত্যন্ত খুসি হয়ে হিটলারকে তার দলে যোগদান করতে আহ্বান করেন| বক্তৃতায় হিটলারের আক্রমণাত্মক ভাষায় মুগ্ধ হয়ে অনেকেই তার দিকে আকৃষ্ট হন|
১৯১৬ সালে তিনি একবার তলপেটে বা বাম ঊরুতে আঘাত পান| ১৯২০ সালের ১০ই এপ্রিল তার দলের নাম পরিবর্তন হয়ে National Sociolist German Worker's Party(Nazi)হয়| এর পর তাকেই প্রধান বক্তা হিসাবে দল বেছে নেয়| ১৯২০ সালে হিটলার 'স্বস্তিকা' চিহ্ণকে তার দলের প্রতীক হিসাবে বেছে নেন| ১৯২১ সালে Nazi দলের ওপর হিটলারের প্রায় সর্বময় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়| ১৯২৩ সালের ৮ই নভেম্বর হিটলার মিউনিখের স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতা চ্যুত করতে সচেষ্ট হয়ে আক্রমণ চালান কিন্তু সফল হন নি| পরে সশস্ত্র বাহিনীর হাতে ধরা পরে ১৯২৪ সালের ১লা এপ্রিল তিনি কারাগারে বন্দী হন|
১৯৩২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে প্রেসিডেন্ট পদের
জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করে তিনি হেরে যান| ১৯৩৩ সালের ৩০শে জানুয়ারী তিনি
জোট সরকারের Chancellor নির্বাচিত হন এবং প্রেসিডেণ্ট হন Hindenberg. ১৯৩৪ সালের
২রা অগাষ্ট Hindenberg-এর মৃতুর পর তিনি তার শেষ ইচ্ছাকে মর্যাদা না দিয়ে Chancellor
এবং প্রেসিডেণ্ট পদ দুটিকে যুক্ত করে দেন এবং নিজে সেই পদ গ্রহণ করেন| তিনি Fuehrer
( নেতা ) নামে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন| এর পর অনেক ইতিহাস, কিন্তু আপাততঃ জ্যোতিষের
আলোচনায় তার কোন প্রাসঙ্গিকতা নেই| পরিশেষে ১৯৪৫ সালের ২৮শে এপ্রিল মৃত্যুর কয়েক
ঘণ্টা আগে Eva Braun কে তিনি বিয়ে করেন এবং ৩০শে এপ্রিল বন্দুকের গুলিতে তিনি আত্মহত্যা
করেন|
বহু Jew কে তিনি হত্যা করেছেন এবং তাদের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার চালিয়েছেন| তার
বহু কষ্ট স্বীকার এবং অতুলনীয় সাহস ও নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতা থাকলেও তিনি সম্পূর্ণ
বিপথগামী হয়েছেন এবং ইতিহাসে তার স্থান হয়েছে এক অত্যাচারী, নরঘাতক ও স্বেচ্ছাচারী
ব্যক্তি হিসাবে|
জন্ম কুণ্ডলীর বিশ্লেষণ
হিটলারের
রাশি চক্রটি ১৫(৫)ক এবং নবাংশটি ১৫(৫)খ চিত্রে দেখান হয়েছে|
(১) হিটলারের জন্মকুণ্ডলীর বৈশিষ্ট্য হল তার ছোট বেলায় অত্যন্ত দুঃখ কষ্টের মধ্যে
মানুষ হওয়া, পরবর্তী কালে সৈন্য বাহিনীতে যোগদান, তার দলের নেতৃত্ব দান, উচ্চাভিলাষ
মেটাতে গিয়ে তার বর্বরোচিত অত্যাচার, উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন এবং পরিশেষে অস্বাভাবিক
মৃত্যু| লগ্ন তুলা, লগ্নপতি ( ও ৮ম পতি ) শুক্র ৭মে মেষ রাশিতে রয়েছে| লগ্ন পতি
হিসাবে শুক্র শুভ হলেও তার ৮ম পতিত্ব হেতু কিছুটা অশুভ, বিশেষ করে ৮ম পতির ( ৮ম
স্থান থেকে আয়ু বিচার হয় ) ৭মে অবস্থান আয়ুর দিক থেকে শুভ নয়|
২য় ও ৭ম ( উভয়েই মারক স্থান ) পতি মঙ্গল মূলত্রিকোণ মেষ রাশিতে বক্রী শুক্রের সঙ্গে
প্রায় একই ডিগ্রিতে অবস্থিত| ১১শ পতি রবি তুঙ্গী হয়ে ৯ম ও ১২শ পতি বুধের সঙ্গে
৭মে মেষ রাশিতে অবস্থিত| রাজযোগকারী গ্রহ ( ৪র্থ ও ৫ম পতি ) শনি ১০মে কর্কটে অবস্থিত
হয়ে ১০ম দৃষ্টিতে মেষ রাশিতে অবস্থিত ৪টি গ্রহকেই দৃষ্টি দিচ্ছে| ৩য় ও ৬ষ্ঠ পতি
বৃহস্পতি ১০ম পতি চন্দ্রের সঙ্গে অবস্থিত হয়ে রাহু-কেতু অক্ষের সঙ্গে যুক্ত| হিটলারের
ছকের সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল এর ৭ম স্থান, প্রায় সব গ্রহের প্রভাব সেখানে কেন্দ্রীভূত|
জ্যোতিষ শাস্ত্রে সুপণ্ডিত বিপিন বিহারীর মতে, রবি অশ্বিনী নক্ষত্রের ৩য় পাদে (
অনুচ্ছেদ - ৯ ) অবস্থিত হলে জাতক ঐশ্বর্যশালী
লোক হতে পারে কিন্তু তার মতি গতি নিম্ন মানের, স্বাস্থ্য ভাল নয় এবং মাঝে মাঝে
উগ্র ভাব প্রকাশ করতে পারে|
(২) শুক্রের দশা দিয়ে হিটলারের জীবন শুরু| লগ্ন পতির দশা সাধারণতঃ ভাল হবার কথা কিন্তু লগ্ন পতি অনেক অশুভ গ্রহের প্রভাব যুক্ত| এ ছাড়া লগ্নপতি শুক্র বক্রী| বক্রী গ্রহ সম্বন্ধে শাস্ত্রে বিশদ ভাবে কিছু বলা না থাকলেও ফলদানের ক্ষেত্রে বক্রী গ্রহের সাধারণতঃ কোন স্থিরতা থাকে না| রাজযোগকারী গ্রহ শনি ১০মে ( কর্মক্ষেত্র ; house of action ) থেকে শুক্রকে দৃষ্টি দেওয়ায় হিটলারের শুক্রের দশায় শিল্পী হবার বাসনা হয়েছিল| Academy of Fine Arts-এ ভর্তি হতে গিয়েও তিনি সফল হন নি| অত্যন্ত শক্তিশালী ২য় ও ৭ম পতি মঙ্গল ( মঙ্গল নবাংশেও শুক্রের সঙ্গে লগ্নের ৮মে অবস্থিত ) তার এই বাসনা পূরণের পথে অন্তরায় হয়েছে| শুক্রের সঙ্গে মঙ্গলের যোগ শুক্রের সূক্ষ্ম ও সৃষ্টিধর্মী বৈশিষ্ট্যকে প্রকাশ হতে দেয় না, কারণ মঙ্গল হল স্থূল স্তরের গ্রহ ( down to earth planet ); পক্ষান্তরে মঙ্গলের সঙ্গে শুক্রের ৭মে অবস্থান শুক্রের স্থূল ভাবগুলিকে ( যৌন বিকৃতি, ব্যভিচার ইত্যাদি ) ফুটিয়ে তুলতে অনুঘটকের কাজ করেছে| ৪র্থ ( ও ৫ম ) স্থান থেকে প্রথাগত পড়াশোনার বিচার হয়| ৪র্থ পতি শনির ৪র্থে দৃষ্টি রয়েছে ঠিকই কিন্তু শনি শক্তিশালী মঙ্গল দ্বারা দৃষ্ট, কারক গ্রহ বুধও মঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত; অতএব হিটলারের লেখাপড়া বেশী দূর হয় নি|
(৩) ১১শ স্থান থেকে অগ্রজ বা বড় ভাই-বোনের বিচার হয়| হিটলারের ১১শে কোন গ্রহের দৃষ্টি নেই কিন্তু ১১শ পতি রবি মঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত, শনির দ্বারা দৃষ্ট এবং ১নং অশ্বিনি নক্ষত্রে ( অধিপতি কেতু ) অবস্থিত হওয়ায় হিটলারের দুই অগ্রজের মৃত্যু হয়েছে| চন্দ্র লগ্ন থেকেও ১১শ স্থান ( তুলা রাশি ) ও ১১শ পতি শুক্র নানা ভাবে ক্লীষ্ট| ৩য় স্থান থেকে অনুজ বা ছোট ভাই-বোন বিচার্য| ৩য় পতি বৃহস্পতি ৩য়ে ধনু রাশিতে ১০ম পতি চন্দ্রের ( শুক্ল পক্ষের চন্দ্র, কারণ চন্দ্রের থেকে রবির দূরত্ব ৭২ ডিগ্রির বেশী ) সঙ্গে অবস্থিত হওয়ায় খুবই শুভ, কিন্তু ৩য়ে কেতুর অবস্থান কিছুটা অশুভত্ব নিয়ে এসেছে| অনুজের কারক গ্রহ মঙ্গল| মঙ্গল রবির সঙ্গে যুক্ত এবং শনির দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় যথেষ্ট অশুভ| ফল হিসাবে ছোট ভাই মারা যায় কিন্তু এক বোন বেঁচে ছিল|
(৪) শুক্র-শনির দশা-অন্তর্দশায় ১৯০৩ সালের
৩রা জানুয়ারী হিটলারের পিতৃবিয়োগ হয়| লগ্ন থেকে ৯ম ( পিতৃস্থান ) মিথুন রাশি; তার
১২শের অধিপতি শুক্র এবং শনির অবস্থান ২য়ে ( মারক স্থান )| পিতৃকারক গ্রহ রবি থেকে
২য় ও ৭মের ( দুই মারক স্থান ) অধিপতি শুক্র ; মারক শনি রবি ও শুক্রকে দৃষ্টি দিচ্ছে|
অতএব পিতার মৃত্যু শুক্র-শনির দশা-অন্তর্দশায় হওয়া অসম্ভব নয়|
১৯০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে হিটলারের রবির দশা শুরু হয় এবং শুরুতেই রবির দশা এবং
রবির অন্তর্দশায় ২১শে ডিসেম্বর তারিখে মা মারা যান | রবি কেন মায়ের মৃত্যুর কারণ
হল ? লগ্ন থেকে ৪র্থ ( মকর রাশি ) মাতৃস্থান ( অনুচ্ছেদ - ৮ ) ; রবি ৪র্থ স্থান
থেকে ৮ম ( নিধন স্থান ) স্থানের অধিপতি, পাপ গ্রহ মঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত, কেতুর নক্ষত্রে
স্থিত এবং শনির দ্বারা দৃষ্ট| আবার চন্দ্র থেকে বিচার করলে ৪র্থ স্থান মীন রাশি
এবং সেখান থেকে রবি ২য়ে ( মারক স্থান ) মেষ রাশিতে রয়েছে এবং শনি ও মঙ্গলের দ্বারা
পীড়িত| অতএব রবি-রবিতে মায়ের মৃত্যু| রবির নির্দিষ্ট ৬ বছরের দশা সময়ে খুব সামান্য
হলেও কিছু আয় হয়েছে একজন স্থপতির (architect ) সঙ্গে যুক্ত হয়ে তার কিছু আঁকার
কাজ করার মাধ্যমে| রবি ১১শ পতি ( আয় স্থানের অধিপতি ); অতএব নানা অশুভ প্রভাব সত্বেও
কিছু আয় হয়েছে|
সব কিছুই জন্ম সময়ে নির্দিষ্ট হয়ে প্রতীক আকারে জন্মকুণ্ডলীতে সন্নিবিষ্ট রয়েছে|
ঠিক ঠিক দশা-অন্তর্দশার সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু ঘটনা ঘটে চলেছে| এর কি কোন প্রতিকার
বা ব্যতিক্রম আছে ? সে অন্য প্রসঙ্গ, সময় ও সুযোগ হলে পরে আলোচনা করা যাবে|
(৫) ১৯১৪ সালে চন্দ্রের দশায় হিটলার সৈন্য বাহিনীতে যোগদান করেন| চন্দ্র ১০ম ( কর্মক্ষেত্র ) স্থানের অধিপতি, অবস্থিত লগ্ন থেকে ৩য়ে ধনু রাশিতে| ধনু অগ্নি রাশি এবং ৩য় স্থান থেকে সাহস, পরাক্রম ইত্যাদি বিচার্য| সেখানে কেতুর ( কুজবৎ কেতু - অনুচ্ছেদ ৫ ) অবস্থান মঙ্গলের মতই কাজ করেছে| মঙ্গল খেলাধূলা, সাহস, পরাক্রম, সৈন্য, পুলিশ ইত্যাদির কারক গ্রহ; অতএব চন্দ্রের দশায় হিটলারের সৈন্য বাহিনীতে যোগদানের ব্যাখ্যা কঠিন নয়| এর পরের দশা মঙ্গলের - ৭ বছরের| মঙ্গলের দশার শুরুতেই, মঙ্গল-মঙ্গল দশা-অন্তর্দশায় হিটলার সরকারকে গদিচ্যুত করতে গিয়ে ব্যর্থ হন এবং ধৃত হয়ে কারাগারে বন্দী হন| শক্তিশালী মঙ্গল ১১শ পতি রবির সঙ্গে যুক্ত হয়ে এবং ১০মে স্থিত শনির দ্বারা দৃষ্ট হয়ে অসম্ভব উচ্চাকাঙ্খা তৈরী করেছে| লক্ষ্য করার বিষয় হল লগ্নও ১৪নং চিত্রা নক্ষত্রে ( অধিপতি মঙ্গল ) অবস্থিত| বহির্জগতের বা দেশ বিদেশের ঘটনা (mundane astrology) ব্যাখ্যার সময়ে ৭ম স্থানকে বিদেশ, ব্যবসা বাণিজ্য, যুদ্ধ ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত বলে ভাবা হয়| মঙ্গল ও রবি দুটি গ্রহই খুব জোরাল এবং দুটিই মেষ রাশিতে ( অগ্নি রাশি ) অবস্থিত হওয়ায় তার আক্রমনাত্মক অভিযান| কিন্তু শনি তাকে সফলতা দেয় নি| মঙ্গল ৮ম পতি শুক্রের সঙ্গে যুক্ত এবং ৬ষ্ঠ পতি বৃহস্পতির দ্বারা দৃষ্ট| শুক্র নিজেই লগ্ন পতি| লগ্ন পতির সঙ্গে ৬ষ্ঠ ও ৮ম পতির যোগ জাতককে কারাগারে রুদ্ধ করে - অনেক ক্ষেত্রেই এটা দেখা গেছে|
(৬) রাহুর দশার গোড়াতেই ১৯৩৩ সালের ৩০ শে জানুয়ারী হিটলার জার্মানীর Chancellor নির্বাচিত হন| তখন রাহুর দশায় রাহুর অন্তর্দশা চলছিল| রাহু মিথুন রাশিতে অবস্থিত হওয়ায় ঐ রাশির অধিপতি অর্থাৎ বুধের ফল দেবে| এ ছাড়াও রাহু ১০ম পতি চন্দ্র ও বৃহস্পতির ( ৩য় ও ৬ষ্ঠ - দুই উপচয়ের অধিপতি ) দ্বারা দৃষ্ট| বুধ ৯ম ( ও ১২শ ) পতি হয়ে লগ্ন পতি শুক্রের সঙ্গে অব্স্থান করায় রাজযোগ হয়েছে| বুধের অবস্থান ৯ম থেকে ১১শে হওয়ায় শুভ| শনিবৎ রাহু হিসাবে রাহু রাজযোগকারী গ্রহ শনিরও ফল দেবে| অতএব রাহু - রাহুর সময়ে তার এই প্রাপ্তি|
(৭) মৃত্যুর অব্যবহিত পূর্বে হিটলার Eva Braun
কে বিয়ে করেন ২৯/৩০ এপ্রিল ১৯৪৫ সালে| আত্মহত্যার মাধ্যমে তার নিজের মৃত্যুও ৩০শে
এপ্রিলেই| তার তখন রাহু-শুক্রের দশা-অন্তর্দশা চলছিল| রাহু চন্দ্রের ৭মে ( জায়াস্থান
) এবং শুক্র লগ্নের ৭মে অবস্থিত| বিয়ের জন্য এর থেকে সঠিক সময় আর কি হতে পারে ?
এখানে আর একটি বিষয় আলোচনা করা যেতে পারে| লগ্ন পতি ( এবং ৮ম পতি ) বক্রী শুক্র
( স্ত্রী বা মহিলার কারক গ্রহ ) ৭ম ( জায়া স্থান, কামজ বিষয় ইত্যাদি ) পতি মঙ্গলের
( যৌন শক্তির কারক ) সঙ্গে যুক্ত হয়ে ৫ম ( আবেগ, প্রবৃত্তি প্রভৃতি ) পতি শনির
দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় হিটলারের যৌন বিকৃতি অবশ্যম্ভাবী| বিভিন্ন জীবনীকারেরা এর সত্যতা
অস্বীকার করেন নি|
৮ম ( নিধন ) স্থানের অধিপতি শুক্র ২য় ও ৭ম ( মারক ) পতি মঙ্গল ও ১২শ পতি বুধের
সঙ্গে ৭মে ( মারক স্থান ) স্থিত| অহং ও আত্মাভিমানের কারক গ্রহ রবিও সেখানে বর্তমান|
সবকটিই শনির দ্বারা দৃষ্ট| ৩য় পতি ( হাত - arms ) বৃহস্পতি সব কটি গ্রহকেই দৃষ্টি
দিচ্ছে এবং ১০ম ( কর্মে পরিণত করা - house of action ) পতি চন্দ্রও বৃহস্পতির সঙ্গে
যুক্ত| আবার চন্দ্রের ৭মে রাহু অবস্থিত| রাহু রয়েছে ৭নং পুনর্বসু নক্ষত্রে - অধিপতি
বৃহস্পতি| চন্দ্র থেকে দেখলেও চন্দ্রের ২য় ও ৩য় পতি শনি চন্দ্র লগ্নের ৮মে অবস্থিত|
অতএব নিজের হাত ব্যবহার করে মৃত্যু - পরিণতি আত্মহত্যা| ৮ম পতি ( আয়ু স্থানের অধিপতি
) শুক্র ৮ম থেকে ১২শে অর্থাৎ ৭ম স্থানে থাকায় এবং নানা অশুভ শক্তির দ্বারা পীড়িত
হওযায় আয়ু বেশী হয় নি| নবাংশেও রাহু লগ্নে অবস্থিত এবং ২য় ও ৭ম ( মারক স্থান )
স্থানের অধিপতি শুক্র ৮ম পতি মঙ্গলের সঙ্গে ৮মে ( মৃত্যু স্থান ) যুক্ত|
(৮) হিটলারের স্বাস্থ্য কেমন ছিল ? তার শৌর্য বীর্যের কথা ভেবে মনে হতে পারে, তার শরীর খুব সবল ছিল; মোটেই তা নয়| তার স্বাস্থ্য সম্বন্ধে অনেক মতামত লিপিবদ্ধ হয়েছে| শোনা যায় তিনি পেটের এক বিশেষ অসুখে (irritable bowel syndrome), অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনে (irregular heart beat), সিফিলিস, স্নায়ুরোগ (Pariksons disease), tinnitus, Asperger syndrome ইত্যাদি রোগে ভুগতেন| এর অনেক গুলিই স্নায়ুর উপর অত্যধিক চাপের ফলে সৃষ্ট| ৬ষ্ঠ পতি ( রোগ স্থানাধিপতি ) বৃহস্পতি ৭মে অবস্থিত ৪টি গ্রহকেই দৃষ্টি দিচ্ছে| রোগের কারক গ্রহ শনিরও ( অনেকে মঙ্গলকে ধরেন ) ১০ম দৃষ্টি সব কটির উপরে রয়েছে| বহু রোগের দ্বারাই তিনি আক্রান্ত হতে পারেন| বুধ কেন্দ্রীয় স্নায়ু মণ্ডলীর (central nervous system) কারক গ্রহ| বুধ ১২শ পতিও বটে| হিটলারের স্নায়ু অসম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত; আত্মহত্যা না করলে তিনি হয় ত পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হতেন|
(৯) হিটলারের নবাংশ চক্রটিও পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, লগ্ন বর্গোত্তম| লগ্ন ও ৮ম পতি শুক্র ( জায়া কারক ) ২য় ও ৭ম পতি ( মারক ) মঙ্গলের সঙ্গে ২য়ে ( পরিবার ) যুক্ত থাকায় পত্নীর সঙ্গে বিবাহ ও মৃত্যু বরণের কৌতূহলদ্দীপক ঘটনাটিকে তুলে ধরেছে|
(১০) হিটলারের ছকে কি কি যোগ ছিল ? (ক) প্রথমেই
বলতে হয় তার মঙ্গল মূলত্রিকোণে মেষ রাশিতে ৭ম কেন্দ্রে থাকায় অসাধারণ শক্তিশালী
রুচক যোগ তৈরী হয়েছে ( অনুচ্ছেদ -১৪ )| তার আক্রমনাত্মক মনোভাব, সৈন্যাধক্ষ হওয়া
সবই এই যোগের জন্য| (খ) চন্দ্র ও বৃহস্পতি কেন্দ্রের ৩য়ে অবস্থিত হওযায় কেশরী যোগ
হয়েছে; ফল - পরাক্রমী শাসক| হিটলার পরাক্রমী শাসক ছিলেন ঠিকই কিন্তু চন্দ্র ও বৃহস্পতি
কেতুর সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় ( এবং রাহুর দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় ) অত্যাচারী শাসক হিসাবে
তিনি বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত হয়েছেন| (গ) লগ্ন পতি শুক্র ও ৯ম পতি বুধ ৭ম কেন্দ্রে
অবস্থিত হওয়া লক্ষ্মীযোগ হয়েছে| প্রথম জীবনে যার দু বেলা খাবার সংস্থান ছিল না,
পরে তিনি অতুল ঐশ্বর্যের অধিকারী হয়েছেন| (ঘ) হিটলারের জন্ম বিকেল ৬-৩০ মিনিটে|
যদি এটা দিন হিসাবে ধরা যায় তবে তার মহাভাগ্য যোগ হয়েছে| কোন পুরুষের ক্ষেত্রে
জন্ম দিনের বেলা হলে এবং লগ্ন, রবি ও চন্দ্র বিজোড় বা পুরুষ রাশিতে থাকলে এই যোগ
হয়| এখানে লগ্ন, রবি ও চন্দ্র যথাক্রমে তুলা, মেষ ও ধনু রাশিতে রয়েছে, সব কটিই
বিজোড় রাশি| (ঙ) চন্দ্রের ৮মে পাপ গ্রহ শনির অবস্থান অনেকের মতে পাপাধি যোগ তৈরী
করে; ফল - বহু বাধার সম্মুখীন হওয়া এবং নিন্দনীয় কাজ করা|
২য় ( বাক স্থান ) পতি শুক্র বুধের ( কারক গ্রহ ) সঙ্গে যুক্ত থেকে বৃহস্পতির দ্বারা
দৃষ্ট হওয়ায় হিটলারের বক্তৃতায় একটা জনমোহিনী শক্তি ছিল; কিন্তু মঙ্গল ও রবির সংস্পর্শে
কথা বলার মধ্যে একটা আগ্রাসী মনোভাব এবং আক্রমনাত্মক ভাব ছিল|
একটা প্রশ্ন হতে পারে| হিটলারের তীব্র Jew বিদ্বেষের কারন কি ? ৯ম ( ধর্ম স্থান
) পতি বুধ মঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শনির দ্বারা দৃষ্ট| আবার ধর্মের কারক গ্রহ বৃহস্পতি
রাহুর দ্বারা দৃষ্ট ( এবং কেতুর সঙ্গে যুক্ত ) হওয়ায় এক ধরণের গুরু-চণ্ডাল যোগ
হয়েছে| লগ্নের ৯মে রাহুর অবস্থান নিজের ধর্ম মতের কোন দল গঠনে প্ররোচনা দেয়| রাহুর
রাশিপতি (sign dispositor - অনুচ্ছেদ ১৩) বুধ লগ্নের ৭মে মঙ্গল ও রবির সঙ্গে থাকায়
ধর্ম-বিকৃতি তৈরী করতে পারে| ভ-চক্রের (zodiac - অনুচ্ছেদ ৮ ) ৯ম স্থান ধনু রাশির
অধিপতি বৃহস্পতিও একই ভাবে পীড়িত| হিটলারের একটা ধারনা ছিল, তিনি যেন ধর্ম সংস্থাপনের
জন্যই জগতে আবির্ভূত হয়েছেন এবং এই কাজ করতে গেলে শুধু জার্মান জাতিই থাকবে Jew
দের কোন স্থান নেই| এটা দেখা গেছে যে ১০মে শনির অবস্থান এবং মঙ্গলের দৃষ্টি প্রথমে
সফলতা দিলেও নিশ্চিত ভাবে পতন ডেকে আনে|
৬. আলবার্ট আইনস্টাইন
জন্ম
বিবরণ : ১৪ই মার্চ, ১৮৭৯; সময় : সকাল ১১ - ৩০ মিঃ; স্থান : Ulm, Germany; 10 E 0;
48 N 24; Time zone : 0-40-0 East; Day light saving-nil। লাহিড়ী অয়নাংশ। ভোগ্য দশা
(balance of dasha) : বুধ ৯ বছর ৮ মাস ২৮ দিন।
জীবনের কিছু ঘটনা
বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ পদার্থবিদ আলবার্ট
আইনস্টাইন জার্মানীতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম Herman Einstein এবং মা Paulin
Einstein। আইনস্টাইনের জন্মের পরের বছরই তার বাবা মা মিউনিখে চলে যান। আট বছর বয়সে
আইনস্টাইন Luitpold Gymnasium-এ ভর্তি হন। বাবার ইচ্ছে ছিল তার ছেলে electrical
engineering নিয়ে পড়াশোনা করে, কিন্তু আইনস্টাইন স্কুলের শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে ক্ষোভ
প্রকাশ করে বলেন যে এতে শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ হয় না। ১৯৮৫ সালে
তিনি বাবা-মার কাছে Pavlia-তে ( বর্তমান ইতালী ) চলে যান। এই সময়েই তিনি প্রথম
বিজ্ঞান বিষয়ে প্রবন্ধ লেখেন। অনেকের মতে ছেলেবেলায় আইনস্টাইনের কথা বলার ক্ষেত্রে
উচ্চারণে কিছু আড়ষ্টতা ছিল, কিন্তু অনেকে আবার এটা মানতে চান না। Zurich-এ পড়াশোনা
করার বাসনায় তিনি একটি প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেন কিন্তু গণিত ও পদার্থ বিদ্যা বিষয়ে
খুব ভাল নম্বর পেলেও সব মিলিয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেন নি। এরপর তার বাবা মা তাকে উত্তর
সুইজারল্যাণ্ডে Aarau-তে পাঠিয়ে দেন মাধ্যমিকের পাঠ শেষ করার জন্য। ১৭ বছর বয়সে
সৈন্য বাহিনীতে আবশ্যিক ভাবে যোগদানের ফতোয়া এড়াতে তিনি জার্মান নাগরিকত্ব ত্যাগ
করেন। ১৮৯৬ সালে তিনি Zurich Polytechnic-এ গণিত ও পদার্থবিদ্যা নিয়ে চার বছরের
পাঠক্রমে ভর্তি হন। Mileva Maric নামে একটি মাত্র মেয়ে সেই পাঠক্রমে ভর্তি হয়েছিল।
এই সহপাঠিনীর সঙ্গে তিনি ভালবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। পাঠক্রমের শেষে ১৯০০ সালে
তিনি ডিপ্লোমা পান কিন্তু Mileva পাশ করতে পারেন নি।
১৯০২ সালের জানুয়ারী মাসে আইনস্টাইন ও Mileva Maric-এর একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। ১৯০৩ সালের ১লা জানুয়ারী আইনস্টাইন আইনগত ভাবে Mileva-কে বিয়ে করেন। কিন্তু ১৯০৩ সালের পরেই তাদের সেই কন্যাটির সম্বন্ধে আর কিছু জানা যায় না। ১৯০৪ সালের মে মাসে এবং ১৯১০ সালের জুলাই মাসে প্রথম ও দ্বিতীয় পুত্রের জন্ম হয় । ৫ বছর আলাদা বাস করার পর ১৯১৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী আইনস্টাইন ও Mileva-র বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এর পর ঐ বছরই ২রা জুন আইনস্টাইন Elsa Lowenthal-কে বিয়ে করেন। ১৯৩৩ সালে হিটলারের নেতৃত্বে Nazi পার্টির ক্ষমতা দখলের সময়ে আইন করে জার্মানীর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে Jew দের কোন পদ গ্রহণ নিষিদ্ধ হলে আইনস্টাইন ও তার স্ত্রী স্থায়ী ভাবে আমেরিকায় চলে যান। ১৯৩৫ সালে Elasa Einsteinএর হৃৎযন্ত্র ও মূত্রাশয়ের পীড়া ধরা পড়ে এবং ১৯৩৬ সালের ২০শে ডিসেম্বর মাসে Elsa মারা যান।
১৯৩৩ সালে আইনস্টাইন আমেরিকায় প্রিন্সটনে
Institute for Advanced Study তে অধ্যাপকের পদ গ্রহণ করেন এবং আমৃত্যু তিনি সেখানেই
ছিলেন। আপেক্ষিকতত্বের প্রবক্তা হিসাবে আইনস্টাইন জগদ্বিখ্যাত হলেও ১৯২১ সালে তিনি
যখন নোবেল পুরষ্কার পান তখন তত্বটি নিয়ে বিতর্ক চলছিল; তিনি নোবেল পুরষ্কার পান
photoelectric effect-এর কিছু নিয়মের আবিষ্কারক হিসাবে। নিয়মের জটিলতার জন্য ১৯২১
সালের নোবেল পুরষ্কার তিনি অবশ্য পান ১৯২২ সালে। ১৯৫৫ সালের ১৮ই এপ্রিল abdominal
aortic aneurysm রোগে আক্রান্ত হয়ে ৭৬ বছর বয়সে আইনস্টাইন পরলোক গমন করেন।
বিশ্ববিখ্যাত এই বিজ্ঞানীর জীবন ও তার গবেষণার খুঁটিনাটি বিষয় আলোচনা করা এখানে
প্রাসঙ্গিক নয়। তার জন্মকুণ্ডলীর বিশ্লেষণের জন্য যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই তুলে
ধরা হয়েছে।
জন্ম কুণ্ডলীর বিশ্লেষণ
আইনস্টাইনের
রাশি চক্রটি ১৫(৬)ক এবং নবাংশটি ১৫(৬)খ চিত্রে দেখান হয়েছে।
বিঃ দ্রঃ : এ যাবৎ কোন নিয়ম ব্যবহার করবার সময়ে প্রাসঙ্গিক অনুচ্ছেদের উল্লেখ করা
হয়েছে। এখন থেকে বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া সেটা আর করা হবে না। আশা করা যায় ইতিমধ্যে
পাঠকবর্গের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে উল্লেখিত বিষয় বা জ্ঞাতব্য তথ্য যথাযথ ভাবে অধিগত
হয়েছে।
আগেও উল্লেখ করা হয়েছে যে কোন জাতকের সঠিক জন্ম সময় পাওয়া খুবই শক্ত এবং সেই কারণেই
নির্ভুল জন্ম কুণ্ডলী তৈরী করতে গিয়ে খুব অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়। জন্মের যে সময়
পাওয়া যায় সেই অনুযায়ী কুণ্ডলী তৈরী করে অতীতের কিছু নির্দিষ্ট ঘটনার সময় নির্ভুল
ভাবে জেনে নিয়ে সেই অনুযায়ী জন্ম সময় সংশোধন (rectification of birth time) করটাই
সঠিক পদক্ষেপ বলে মনে হয়। কিন্তু জন্ম সময় এবং জন্ম স্থান জানা থাকলেও অনেক জ্যোতিষী
তাদের বইতে লগ্ন গণনা করে কি করে বিভিন্ন লগ্নস্ফূট ( বিভিন্ন ডিগ্রি-মিনিট ) প্রকাশ
করেন সেটা বোঝা কষ্টকর। আইনস্টাইনের জন্ম কুণ্ডলী সে রকম
একটা দৃষ্টান্ত।
(১) অসাধারণ বুদ্ধি, উদ্ভাবনী শক্তি, লিখন,
পঠন-পাঠন, চঞ্চলতা ইত্যাদি মিথুন লগ্নের জাতকের বৈশিষ্ট্য। লগ্নে অশুভ গ্রহের প্রভাব
থাকলে ঠগ, প্রতারক ইত্যাদিও হতে পারে।
আইনস্টাইনের
জন্ম কুণ্ডলীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল তার অসাধারণ মনন শক্তি। শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ
পদার্থবিদের সম্মান লাভ করা সাধারণ গ্রহ সন্নিবেশের ফলে সম্ভব নয়। লগ্ন মিথুন;
লগ্ন ও ৪র্থ পতি বুধ ১০ম কেন্দ্র মীন রাশিতে নীচস্থ। কিন্তু যেহেতু মীনে তুঙ্গী
শুক্র লগ্নের কেন্দ্রে অবস্থিত, অতএব বুধের নীচভঙ্গ হয়েছে। চন্দ্র থেকে দেখলেও
মীন রাশির অধিপতি বৃহস্পতি চন্দ্র থেকে ৪র্থ কেন্দ্রে থাকাতেও এই যোগ হয়েছে। বুধ
গ্রহের বৈশিষ্ট্য হল লেখাপড়া, বুদ্ধি, গণিতে পারদর্শিতা, দার্শনিক মনোভাব, লেখা
প্রকাশ করা, ছেলেমানুষী ইত্যাদি। বুধকে বালক গ্রহ বলা হয়। বুধ সহজেই অন্য গ্রহ
দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে বলে, যে সব গ্রহ বুধের সঙ্গে সম্পর্কিত তাদের প্রকৃতি
ও বল নির্ণয় করা প্রয়োজন। আলোচ্য ক্ষেত্রে বুধ মীন রাশিতে রবি, শুক্র ও শনির সঙ্গে
অবস্থিত। শুক্র ৫ম ও ১২শ পতি, মূলত্রিকোণ তুলা রাশিতে। মিথুন লগ্নের ক্ষেত্রে শুক্র
খুবই শুভ গ্রহ। শনি ৮ম ও ৯ম পতি শুভাশুভ মিশ্রিত। রবি ৩য় পতি; পরাক্রম, লেখা প্রকাশন,
মর্যাদা, আত্মসম্মান ইত্যাদির কর্তা। ৪টি গ্রহ সবচেয়ে শক্তিশালী কেন্দ্র ১০মে অবস্থিত।
১০মে রবি দিকবলে বলী।
(২) মঙ্গল মিথুন লগ্নের ক্ষেত্রে ৬ষ্ঠ ও ১১শ পতি, খুবই অশুভ গ্রহ। মঙ্গল ৮মে ( নিকৃষ্টতম দুঃস্থান ) তুঙ্গী এবং রাহুর সঙ্গে যুক্ত। রাহুর সংযোগ মঙ্গলকে আরও জোরাল করে তুলেছে। তবে ১১শ স্থানকে অশুভ বলে চিহ্ণিত করা হলেও, ১১শ পতি শক্তিশালী মঙ্গলের ১১শে দৃষ্টি রয়েছে। সাধারণ ভাবে এরা জীবনে কৃতকার্য হয়, যদি অন্য গ্রহের বিরূপ প্রভাব না থাকে। ২য় স্থান থেকে পরিবার, কথাবার্তা, ধন সঞ্চয় ইত্যাদি বিচার্য। ২য়ে কেতু অবস্থিত এবং ২য় পতি চন্দ্র ৬ষ্ঠে বৃশ্চিক রাশিতে নীচস্থ। ৬ষ্ঠে চন্দ্র এমনিতেই শুভ বলে ধরা হয় না, নীচস্থ হলে ত কথাই নেই। তবে চন্দ্র কোন গ্রহের দ্বারা দৃষ্ট নয় ( কেতুর ৫ম দৃষ্টি না ধরলে )। বৃহস্পতি ৭ম ও ১০ম পতি, ৯ম কোণে অবস্থান করছে। বৃহস্পতির কেন্দ্রাধিপত্য দোষ রয়েছে। তবে বৃহস্পতির লগ্নে দৃষ্টি থাকায় লগ্নটি শক্তিশালী হয়েছে।
(৩) ১০ম কেন্দ্রে ৪টি শক্তিশালী গ্রহের অবস্থানের জন্য ১০ম ভাব অত্যন্ত জোরাল হয়েছে। ১০ম শুধু শক্তিশালী কেন্দ্র নয়, উপচয় স্থানও বটে; এখানে সব গ্রহই কিছু না কিছু শুভ ফল দেয়। ১০ম স্থান থেকে কর্ম, জীবিকা, নাম যশ, মান সম্মান ইত্যাদি বিচার্য। শুক্র তুঙ্গী। রবি মেষ রাশিতে তুঙ্গী হয়, রয়েছে ঠিক আগের রাশি মীনে, এ ধরণের গ্রহকে তুঙ্গাভিলাষী গ্রহ বলা হয়; তুঙ্গাভিলাষী রবি মিত্র ক্ষেত্র বৃহস্পতির ঘরে থাকায় যথেষ্ট বলবান। শনি বৃহস্পতির ঘরে সাধারণতঃ শুভ ফল দেয়। বুধের নীচভঙ্গ হওয়ায় বুধও বল সঞ্চয় করেছে। চন্দ্র বৃশ্চিক রাশিতে নীচস্থ, কিন্তু বৃশ্চিকের অধিপতি অর্থাৎ চন্দ্রের রাশিপতি (sign dispositor) মঙ্গল ৩য়ে ( উপচয় ) মকর রাশিতে তুঙ্গী হওয়ায় চন্দ্রের নীচভঙ্গ হয় নি ঠিকই, কিন্তু তার দুর্বলতা অনেকটাই কেটেছে।
(৪) আইনস্টাইনের কুণ্ডলীতে কি কি যোগ রয়েছে দেখা যাক ( অনুচ্ছেদ ১৪ ) । (ক) সবচেয়ে শক্তিশালী যোগ হল ৯ম ( ও ৮ম ) পতি শনির সঙ্গে ১০ম পতি বৃহস্পতির ক্ষেত্র বিনিময় সম্পর্ক। এটাকে ধর্মকর্মাধিপতি যোগও বলে। ৮ম স্থান থেকে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে গোপন বিষয়ও নির্দেশ করে। যে কারণে ৮ম থেকে অজানা জিনিষ আবিষ্কার বা গবেষণাও বিচার করা হয়। ৮ম পতি শনির ১০মে অবস্থান এবং ১০ম পতি বৃহস্পতির সঙ্গে ক্ষেত্র বিনিময় এবং বুদ্ধি ও গণিতের কারক গ্রহ নীচভঙ্গ বুধের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় গবেষণার মাধ্যমে পরিচিতি ও সম্মান লাভ বোঝায়। অপর একটি ক্ষেত্র বিনিময় সম্পর্ক হয়েছে চন্দ্র লগ্নের সাপেক্ষে; ৪র্থ পতি শনির সঙ্গে ৫ম পতি বৃহস্পতির ক্ষেত্র বিনিময়। (খ) লগ্ন পতি ও ৪র্থ পতি বুধের সঙ্গে ৫ম পতি তুঙ্গী শুক্রের ১০ম কেন্দ্রে অবস্থানও একটি শক্তিশালী রাজযোগ। (গ) তুঙ্গাভিলাষী রবির সঙ্গে নীচভঙ্গ বুধের ১০মে অবস্থানের জন্য শক্তিশালী বুধাদিত্য যোগ হয়েছে। এই যোগটিও এই বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীর বুদ্ধির উৎকর্ষ বিকাশে কম সহায়ক হয় নি। (ঘ) লগ্নপতি ও ৪র্থ পতি বুধের সঙ্গে ৯ম পতি শনির যোগ - সেই ১০ম কেন্দ্রেই। এটাও একটা রাজযোগ। (ঙ) তুঙ্গী শুক্র লগ্ন থেকে ১০ম কেন্দ্রে থাকায় পঞ্চ মহাপুরুষ যোগের একটি - মালব্য যোগ হয়েছে। এর ফল - বিদ্বান, ঐশ্বর্যশালী, সুশ্রী ইত্যাদি গুণের অধিকারী হওয়া। (চ) বৃহস্পতি ও চন্দ্র পরস্পরের কেন্দ্রে থাকায় গজকেশরী যোগ হয়েছে; এর ফল ১৪ নং অনুচ্ছেদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। (ছ) বৃহস্পতি ৯ম কেন্দ্রে এবং বুধ ও শুক্র ১০ম কেন্দ্রে থাকায় সরস্বতী যোগ হয়েছে; ফল - লেখক, বহু বিষয়ে জ্ঞান, সম্মান লাভ ইত্যাদি। (জ) লগ্নপতি তুঙ্গে এবং বৃহস্পতির দ্বারা দৃষ্ট হলে চামর যোগ হয়। চামর যোগের অন্য একটা সংজ্ঞা হল দুটি শুভ গ্রহ যদি লগ্ন, ৭ম, ৯ম বা ১০মে থাকে তা হলেও চামর যোগ হয়। এখানে বৃহস্পতি ৯মে এবং বুধ ও শুক্র ১০মে অবস্থিত, কাজেই চামর যোগ হয়েছে। ফল - ভাল বক্তা, দার্শনিক ইত্যাদি। ৫ম স্থান থেকে উদ্ভাবনী শক্তি বিচার্য। এখানে ৫ম পতি শুক্র গ্রহ হওয়ায় আইনস্টাইনের উদ্ভাবনী শক্তির (creative faculty) মধ্যে কল্পনার যথেষ্ট উপাদান রয়েছে। বস্তুতঃ আইনস্টাইন কখনই খুব ভাল গণিতজ্ঞ হিসাবে খ্যাত হন নি; তার উপলব্ধি জাত জ্ঞানই (intuition) গণিতের আকারে প্রাকাশিত হয়েছে - এরই ফলে আপেক্ষিকতাবাদ (theory of relativity) উদ্ভাবন। কল্পনা ও গণিত ( শুক্র এবং বুধ ), বুদ্ধি ( বুধ ও রবির বুধাদিত্য যোগ ), দার্শনিক দৃষ্টি ( বৃহস্পতি ও শনির ক্ষেত্র পরিবর্তন ) - এই গুণ গুলিই আইনস্টাইনের সৃজনী শক্তির চালক। তিনি বলতেন 'জ্ঞানের চেয়ে কল্পনা বেশী গুরুত্বপূর্ণ ' (imagination is more important than knowledge)। অনেক জ্যোতিষীর মতে ৬ষ্ঠ পতি ( একটি দুঃস্থানের অধিপতি ) যদি ৮মে ( অপর একটি দুঃস্থান ) অবস্থিত হয়, তা হলে বিপরীত রাজযোগ বা হর্ষ যোগ হয়। একটি দুঃস্থানের কর্তা অপর একটি দুঃস্থানে থাকলে দুঃস্থানের অশুভত্ব কেটে গিয়ে শুভ হয় এই হল মূল কারণ। ফল কিছুটা শুভ হতে পারে হয় ত; কিন্তু বাস্তবে অনেক সময়ে খুব অশুভ ফলও লক্ষ্য করা যায়।
(৫) চন্দ্র নীচস্থ ঠিকই কিন্তু শুক্ল পক্ষের চন্দ্র। লগ্ন থেকে ১০ম কেন্দ্রে যে ৪টি গ্রহ কুণ্ডলীটিকে বলিষ্ঠ করেছে, সেই ৪টি গ্রহ চন্দ্র লগ্ন থেকে ৫ম কোণে অবস্থিত হওয়ায় গ্রহ গুলির কাযকারিতা ও শুভত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। শনি মকর রাশির অধিপতি; মকর রাশিতে তুঙ্গী মঙ্গল ( ৬ষ্ঠ ও ১১শ পতি ) রাহুর সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় মঙ্গলের কারকত্বের ( যুদ্ধ, সৈন্য, সাহসিকতা ইত্যাদি ) তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই দুই গ্রহের রাশিপতি শনি ১০ম কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় শনি, বৃহস্পতি ও শুক্রের মানবিক গুণ ও বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মঙ্গল ও রাহুর ধ্বংসাত্মক ও আগ্রাসি দিকটাও সমন্বিত হয়েছে। ফলে যিনি ভর (mass) থেকে শক্তির(energy) রূপান্তরের সূত্রের প্রবক্তা তিনিই আবার যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়েও সোচ্চার। এবার কুণ্ডলীতে বিভিন্ন গ্রহের অবস্থান জীবনের কিছু বিশেষ ঘটনার সঙ্গে কিভাবে সম্পর্কিত সেটা দেখা যাক।
(৬) লগ্নের ২য়ে ( বাকস্থান ) কেতু অবস্থিত এবং ২য় পতি চন্দ্র নীচস্থ। ৬ষ্ঠ পতি ( রোগ, বাধা ইত্যাদি ) মঙ্গল ২য় স্থানকে দৃষ্টি দিচ্ছে; কারক গ্রহ বুধও ( নীচভঙ্গ হলেও সম্পূর্ণ দোষমুক্ত হয় না ) শনি ও রবির সঙ্গে যুক্ত। অতএব ছোটবেলায় আইনস্টাইনের কথা বলার সময় উচ্চারণগত কিছু সমস্যা থাকা অসম্ভব নয়। শোনা যায় ৯ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি একটি বাক্য সম্পূর্ণ বলতে পারতেন না। বুধ তথ্য, সংবাদ (communication and information) ইত্যাদির আদান প্রদানের কারক গ্রহ। স্কুলে তাকে অনেকে নির্বোধ বলেও অভিহিত করেছে। আইনস্টাইনের বুধের দশায় জন্ম এবং বুধের দশা স্থায়ী হয়েছে প্রায় ৯ বছর ৯ মাস অবধি। বুধ ৪র্থ পতি হিসাবে বাসস্থানেরও অধিপতি। স্কুলের পড়াশোনার সময় তিনি একাধিকবার স্থান পরিবর্তন করেছেন। বুধের পরে কেতুর দশাতেও এটা হয়েছে। নবাংশেও বুধ ৪র্থ পতি এবং শনি ও কেতুর সঙ্গে ৮ম স্থানে যুক্ত।
(৭) ১৮৯৬ সাল থেকে আইনস্টাইনের শুক্রের দশা শুরু। ১৮৯৬ সালেই তিনি ৪ বছরের পাঠক্রমে ভর্তি হন এবং ১৯০০ সালে ডিপ্লোমা পান। শোনা যায় ১৯০২ সালে আইনস্টাইন ও Milevaa-র একটি কন্যা জন্ম গ্রহণ করেছিল; কিন্তু বছর খানেক পরেই তার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায় না। হয় তাকে কেউ দত্তক নিয়েছে অথবা সে আর বেঁচে ছিল না। আইনস্টাইনের তখন শুক্র-মঙ্গলের দশা-অন্তর্দশা চলছিল। শুক্র ৫ম পতি অবস্থিত ১০মে এবং চন্দ্র থেকে ৫মে। শুক্রের দশায় সন্তান হতেই পারে কিন্তু মঙ্গলের অন্তর্দশায় সেটা কি করে সম্ভব আপাত দৃষ্টিতে সেটা বোঝা কঠিন। বৃহস্পতি সন্তান কারক গ্রহ হয়ে ২৩নং ধনিষ্ঠা নক্ষত্রে ( অধিপতি মঙ্গল ) অবস্থিত হয়ে মঙ্গলকে প্রভাবিত করেছে এবং বৃহস্পতির ৫মে দৃষ্টিও রয়েছে। অনেক সময় শুধু রাশিচক্র বা নবাংশ থেকে সব কিছু পরিষ্কার হয় না; তার জন্য বর্গ বিভাগ (divisional chart) দরকার। তবে সন্তানের জন্ম হলেও তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম; লগ্ন থেকে ৫ম স্থান তুলা রাশি। তুলা রাশির ২য় ও ৭ম স্থানের অধিপতি মঙ্গল ৫মের ( সন্তান স্থান ) পক্ষে মারক। অতএব মঙ্গলের অন্তর্দশাতেই তার মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া অসম্ভব নয়। অপর দুই সন্তানের জন্ম হয় ১৯০৪ সালের মে মাসে এবং ১৯১০ সালের জুলাই মাসে যথাক্রমে শুক্র-রাহু ও শুক্র-রবির দশা-অন্তর্দশায়। শুক্র পুত্রকারক বৃহস্পতির সঙ্গে ক্ষেত্র বিনিময় সম্পর্কে আবদ্ধ এবং চন্দ্রের ৫মে অবস্থিত। রাহুর বৈশিষ্ট্য শনির মতই ( শনিবৎ রাহু ); রাহু অবস্থিত শনির ঘরে, মকরে। অতএব শুক্র-রাহু, শুক্র-শনির দশা-অন্তর্দশায় সন্তানের জন্ম সম্ভব। তবে তৃতীয় সন্তান Eduard মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিল। এটা অসম্ভব নয়; কারণ পুত্র কারক গ্রহ বৃহস্পতি শক্তিশালী পাপকর্তরী যোগে আক্রান্ত - একদিকে মঙ্গল, রাহু অপর দিকে শনি, রবির মধ্যে পিষ্ট।
(৮) ১৯০৩ সালের ৬ই জানুয়ারী শুক্র-রাহুর দশা-অন্তর্দশায়
আইনস্টাইন তার একদা সহপাঠিনী Mileva কে বিয়ে করেন। শুক্র জায়াকারক গ্রহ; চন্দ্রলগ্ন
থেকে ৭ম স্থানেরও অধিপতি। ৫ম স্থান থেকে আবেগ, অনুভূতি ইত্যাদি বিচার্য, এ কথা
আগে বলা হয়েছে। এখানে ৫ম পতি শুক্র নিজেই জায়াকারক গ্রহ। আবার লগ্ন থেকে ৭ম পতি
( জায়া স্থানের অধিপতি ) বৃহস্পতি লগ্নের ৫মে দৃষ্টি দিচ্ছে। চন্দ্র লগ্ন থেকেও
৭ম পতি শুক্র চন্দ্রের ৫মে মীন রাশিতে তুঙ্গী। এই যোগ প্রণয় ঘটিত বিবাহ নির্দেশ
করে।
১৯০৫ সালে শুক্র-রাহুর দশা-অন্তর্দশাতেই আইনস্টাইন তার সাড়া জাগান ৪ খানি গবেষণা
মূলক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন; special theory of relativity এরই অন্তর্গত। রাহু শনির
ক্ষেত্রে অবস্থিত এবং মঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত। রাহুর নিজের বৈশিষ্ট্যও শনির মত; অতএব
রাহু মঙ্গল ও শনির ফল দেবে। শনি চন্দ্র থেকে ৩য় স্থানের ( লেখালেখি, ছাপার অক্ষরে
প্রকাশ ইত্যাদি ) অধিপতি, বুধের ( লিখন ও প্রকাশনার কারক গ্রহ ) সঙ্গে ৫ম ঘরে যুক্ত।
লগ্ন থেকেও ৩য় পতি রবি বুধের সঙ্গে বুধাদিত্য যোগ তৈরী করে ১০মে অবস্থান করছে।
মঙ্গল ১১শ পতি ( লাভ পতি ) ১১শ স্থানের ১০মে তুঙ্গী এবং মঙ্গলের ১১শে দৃষ্টিও রয়েছে,
এটা বিশেষ কোন প্রাপ্তি যোগ নির্দেশ করে। ১০মে শক্তিশালী রবি পরিচিতি ও সম্মান
প্রদান করে। বুধ ও শনি ১০মে শুক্রের সঙ্গে যুক্ত এবং শুক্র ২৭নং রেবতী নক্ষত্রে
( অধিপতি বুধ ) অবস্থিত।
(৯) ২য় ( পরিবার ) স্থানের অধিপতি চন্দ্র ৬ষ্ঠে ( শত্রু স্থান ) নীচস্থ এবং ৬ষ্ঠ পতি মঙ্গল রাহুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ৬ষ্ঠে দৃষ্টি দিছে। ৮মে মঙ্গলের অবস্থান সাধারণতঃ বিবাহ বিচ্ছেদ বা স্বামী ( বা স্ত্রীর ) মৃত্যু নির্দেশ করে। তবে মিথুন লগ্নের ক্ষেত্রে মঙ্গল ৮মে তুঙ্গী হওয়ায় এই দোষ কেটে যায় বলে জ্যোতিষীরা মনে করেন। কিন্তু এখানে মঙ্গল রাহুর সঙ্গে যুক্ত এবং মঙ্গলের উপর কোন শুভ গ্রহের দৃষ্টিও নেই। মনের দিক থেকে অনেক আগেই দূরত্ব তৈরী হলেও আইনগত ভাবে Mileva-র সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় ১৯১৯ সালের ২রা জুন, রবি-শনির দশা-অন্তর্দশায়। ৮মে অবস্থিত মঙ্গল ২১নং উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে ( অধিপতি রবি ) অবস্থিত এবং রাহুর সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় শনির অন্তর্দশায় ( শনিিবৎ রাহু ) ঘটনাটি ঘটেছে। আইনস্টাইন Mileva র সঙ্গে খুব ভাল ব্যবহার করেন নি। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ৭ম ( জায়া স্থান ) পতি বৃহস্পতি একদিকে রাহু-মঙ্গল এবং অন্য দিকে শনি-রবি এই অশুভ গ্রহদের দ্বারা পাপ কর্তরী যোগে আক্রান্ত। বৃহস্পতি নিজেও রয়েছে ২৩নং ধনিষ্ঠা নক্ষত্রে ( অধিপতি মঙ্গল )। Mileva বহু চেষ্টা করেও আইনস্টাইনকে তার দিকে ফেরাতে পারেন নি।
এই একই দশা অন্তর্দশাতেই ১৯১৯ সালের ২রা জুন
আইনস্টাইনের সঙ্গে Elsa Lowenthal এর বিয়ে হয়। এটা আশ্চর্য জনক মনে হতে পারে যে
একই দশা অন্তর্দশায় কি করে বিবাহ বিচ্ছেদ এবং দ্বিতীয় বিবাহের ঘটনা ঘটতে পারে।
এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হল অনেক গ্রহেরই দুটি দিক আছে। শনি ৮ম পতি হিসাবে অশুভ
কিন্তু ৯ম পতি হিসাবে শুভ। রবি লগ্ন থেকে ৩য় পতি হিসাবে ১০মে শুক্রের সঙ্গে থাকায়
বিয়ের ব্যাপারে শুভ নয় কিন্তু চন্দ্র লগ্নের সাপেক্ষে রবি ১০ম পতি হয়ে চন্দ্রের
৫মে শুক্রের সঙ্গে থাকায় ততটা অশুভ নয়। শনির সঙ্গে ৭ম পতি বৃহস্পতির ক্ষেত্র বিনিময়
হওয়ায় শনি পরোক্ষে বিবাহের কারক হয়েছে। অনেক সময়েই দেখা যায় ৮মে পাপ গ্রহ এবং কারক
গ্রহ শুক্র দ্যত্মক রাশিতে ( অনুচ্ছেদ - ৩ ) বা দ্বিস্বভাব রাশিতে অবস্থিত হলে
দ্বিতীয় বিবাহ হয়েছে।
একই দশা-অন্তর্দশায় বিবাহ বিচ্ছেদ এবং দ্বিতীয় বিবাহ সম্বন্ধে একটা কথা বলা যায়।
অনেক সময়ে দেখা যায় কোন বিশেষ দশা-অন্তর্দশায় জাতক হয় ত প্রচুর ধন সম্পত্তির মালিক
হয়েছে বা অন্য ভাবে সম্পদ লাভ করেছে এবং সেই একই দশা-মন্তর্দশায় সে মৃত্যু মুখে
পতিত হয়েছে। অনেক জ্যোতিষী এটাকে যোগমারক নামে অভিহিত করেছেন। প্রাপ্তি এবং মৃত্যু
একই গ্রহদের দ্বারা হচ্ছে।
(১০) ১৯১৬ সালের রবি-রবির দশা-অন্তর্দশায় আইনস্টাইন তার general theory of relativity প্রকাশ করেন। রবি ৩য় পতি ( লেখা প্রকাশ ) হয়ে বুধের ( প্রকাশনার কারক গ্রহ ) ৫ম পতি শুক্র ( উদ্ভাবনা শক্তি ) ও ৯ম পতি ( ভাগ্য স্থানাধিপতি ) শনির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ১০ম কেন্দ্রে দিকবল যুক্ত রবির সঙ্গে ( রবি ১০মে দিকবলে বলী হয় - অনুচ্ছেদ ৭ ) অবস্থিত হওয়ায় বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশনার মাধ্যমে সম্মান ও পরিচিতি লাভ ঘটেছে।
(১১) ১৯২২ সালের ডিসেম্বর মাসে চন্দ্র-মঙ্গলের দশা-অন্তর্দশায় আইনস্টাইন নোবেল পুরষ্কার অর্জন করেন। দশা-অন্তর্দশা পতিদ্বয় পরস্পরের ৩য়-১১শে অবস্থিত - এটা শুভ। চন্দ্র নীচস্থ হলেও ১৮নং জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রে ( অধিপতি বুধ ) অবস্থিত হওয়ায় বুধের ফল দিতে পারে। চন্দ্র লগ্নের ১১শ পতি নীচভঙ্গ বুধের এবং লগ্নের ১১শ পতি তুঙ্গী মঙ্গলের ( চন্দ্রের রাশিপতিও মঙ্গল ) ১১শে দৃষ্টি থাকায় কোন একটা বিরাট প্রাপ্তির ঘটনা নির্দেশ করে। সর্বোপরি শনি ও বৃহস্পতির ক্ষেত্র বিনিময় হয়েছে এবং বুধ ও রবির শনির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ১০মে বৃহস্পতির ক্ষেত্রে মীন রাশিতে অবস্থিত হওয়ায় ঘটনাটি ঘটতে সাহায্য করেছে। শোনা যায় আইনস্টাইনকে তার নোবেল পুরষ্কারের সম্পূর্ণ টাকাটাই প্রথম পত্নীকে দিতে হয়েছে তাকে পরিত্যাগ করার ক্ষতি পূরণ হিসাবে। লগ্নের ২য় ( ধন স্থান ) পতি চন্দ্র ৭ম স্থানের ( জায়া স্থান ) ১২শে ( ব্যয় স্থান ) অবস্থিত। অতএব সঞ্চয় করা অর্থ স্ত্রীর জন্য ব্যয় বোঝায়। চন্দ্র লগ্ন থেকেও ২য় পতি বৃহস্পতি স্ত্রী কারক গ্রহ শুক্রের ১২শে রয়েছে।
(১২) শুক্র শিল্প, সঙ্গীত, চারুকলা বিষযের কারক গ্রহ; শুক্র ১০ম কেন্দ্রে তুঙ্গী হয়ে লগ্নপতি বুধের সঙ্গে অবস্থিত হওয়ায় আইনস্টাইনের সঙ্গীতের প্রতি গভীর অনুরাগ ছিল। তিনি নিজেও যে ভাল বেহালা বাজাতেন সেটা সুবিদিত।
(১৩) ১৯৩৩ সালে মঙ্গল-রাহুর দশা-অন্তর্দশা চলছিল। এই সময়ে জার্মানীতে হিটলারের উত্থান এবং তার Jew বিরোধী কার্য কলাপের জন্য আইনস্টাইন চিরদিনের জন্য দেশ ত্যাগ করেন এবং নিউ জার্সিতে Institute of Advanced Study in Princeton -এ অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন। ৬ষ্ঠ পতি মঙ্গল রাহুর সঙ্গে ৮মে রয়েছে। মঙ্গল ও রাহুর রাশি অধিপতি (sign dispositor) শনি শুক্র ও বুধের সঙ্গে যুক্ত। বুধ ৪র্থ ( বাসস্থান ) স্থানের অধিপতি ; শনি বিচ্ছেদ কারক গ্রহ। এবং রাহুর বৈশিষ্ট্য শনির মত। অতএব মঙ্গল-রাহুর দশা-অন্তর্দশায় তার দেশত্যাগ। ৮ম নিধন স্থান; ৮মে অবস্থিত মঙ্গল-রাহুর দশা-অন্তর্দশায় আইনস্টাইনকে প্রায় মৃত্যু তুল্য যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে। তার মাতৃ ভূমি জার্মানীতেই একজন Jew হবার অপরাধে তার নাম হত্যা তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয় এবং তার মাথার দাম ধার্য হয় ৫ হাজার ডলার।
(১৪) ১৯৩৬ সালের ২০শে ডিসেম্বর আইনস্টাইনের দ্বিতীয় পত্নী Elsa মারা যান। আইনস্টাইনের তখন মঙ্গল-শুক্রের দশা। মঙ্গল লগ্নের ৮ম অর্থাৎ ২য় ( পরিবার ) স্থানের ৭মে ( মারক স্থান ) এবং ৭ম ( জায়া স্থান ) স্থানের ২য়ে ( মারক স্থান ) অবস্থিত। শুক্র স্ত্রীর কারক গ্রহ। অতএব পত্নী বিয়োগ। ৮মে মঙ্গল বহু কুণ্ডলীতেই স্ত্রী বা স্বামীর বিবাহ বিচ্ছেদ বা মৃত্যুর কারণ হয়েছে। সময় ও সুযোগ হলে এ সম্বন্ধে পরে বিস্তৃত আলোচনার ইচ্ছা রইল।
(১৫) আইনস্টাইনের নিজের মৃত্যু হয় ১৯৫৫ সালের ১৮ই এপ্রিল রাহু-চন্দ্রের দশা-অন্তর্দশায়। চন্দ্র ২য় পতি ( মারক ) ৬ষ্ঠে নীচস্থ; রাহু ৮মে ( নিধন স্থান ) ২২নং শ্রবনা নক্ষত্রে ( অধিপতি চন্দ্র ) অবস্থিত। ৮মে ২ টি শক্তিশালী পাপগ্রহ মঙ্গল ও রাহুর অবস্থিত হওয়ায় আইনস্টাইন মৃত্যুর সময়ে খুবই যন্ত্রণা পেয়েছেন ধরে নেওয়া যায়।
(১৬) আইনস্টাইন এত অসাধারণ প্রতিভা সম্পন্ন বৈজ্ঞানিক ছিলেন যে তার চরিত্রের অন্যান্য দিক সহজেই দৃষ্টির বাইরে থেকে যায়। আইনস্টাইনের চরিত্রে অনেক পরস্পর বিপরীত ধর্মী গুণের সমাবেশ ঘটেছিল। ৫ম ও ১২শ পতি তুঙ্গী শুক্রের ১০মে অবস্থান তাকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে, চারুকলার দিকে তার আকর্ষণও তৈরী করেছে ঠিকই কিন্তু একাধিক মহিলার সঙ্গে তার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কও তৈরী হয়েছে একই কারণে। ২য় পতি চন্দ্র নীচস্থ হওয়াটাকে বিখ্যাত জ্যোতিষী বি. ভি. রমন তার Notable Horoscopes বইতে ব্যাখ্যা করেছেন অর্থের প্রতি তার নিরাসক্তি হিসাবে। কিন্তু চন্দ্র ত মনেরও কারক; নীচস্থ চন্দ্রের রাশি অধিপতি মঙ্গল ৩য়ে ( পরাক্রম স্থান ) তুঙ্গী এবং রাহুর সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় তার অসাধারণ জেদ এবং প্রভুত্ব করার প্রবৃত্তি থাকাটাও সম্ভব। আবার একই সঙ্গে কুম্ভ রাশিতে ( philosophic sign) বৃহস্পতির অবস্থান এবং লগ্নকে দৃষ্টিদান অবশ্যই তার অন্তর্নিহিত দার্শনিক মনোভাবের প্রকাশক। ৯ম পতি ( ধর্ম স্থান ) শনির সঙ্গে বৃহস্পতির স্থান বিনিময় এই দার্শনিক মনোভাবকে আরও সুসংহত করেছে। যাই হোক, এই জন্ম কুণ্ডলীটির মূল দিকটা হল ১০ম স্থানে গ্রহদের কেন্দ্রীভূত শক্তি এবং তার সঙ্গে বেশ কয়েকটি রাজযোগের সম্মিলন। অসামান্য মনীষা ও প্রতিভার অধিকারী এই বৈজ্ঞানিক ইতিহাসে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
৭. উত্তম কুমার ( অরুণ কুমার
চট্টোপাধ্যায় )
জন্ম
বিবরণ : ৩রা সেপ্টেম্বর , ১৯২৬; সময় : সকাল ১০ - ২০ মিঃ; স্থান : কোলকাতা, ভারতবর্ষ;
অক্ষাংশ : ২২ ডিঃ ৩৫ মিঃ উত্তর; দ্রাঘিমাংশ : ৮৮ ডিঃ ২৩ মিঃ পূর্ব। লাহিড়ী অয়নাংশ।
ভোগ্য দশা ( balance of dasha ) : বৃহস্পতি ৩ মাস ১৬ দিন।
বিঃ দ্রঃ : উত্তম কুমারের জন্ম সময় যেটা পাওয়া গিয়েছে, সেটা কতটা নির্ভুল তা বলা কঠিন। তবে এই সময় অনুযায়ী কুণ্ডলী প্রস্তুত করলে যেটা পাওয়া যায় সেটা যে অত্যন্ত খ্যাতি সম্পন্ন কোন ব্যক্তির তাতে কোন সন্দেহ নেই। অসুবিধা হল, উত্তম কুমারের জীবনের বিভিন্ন ঘটনার সময় এবং তারিখ সহজ লভ্য নয়; যে কারণে ঘটনার সঙ্গে কুণ্ডলী বিশদ ভাবে মিলিয়ে দেখা সম্ভব হয় নি। তবে সাল তারিখ জানা না থাকলেও উত্তম কুমারের জীবনে কয়েকটি ঘটনা যা ঘটেছিল বলে জানা যায় তার সমর্থন অবশ্যই কুণ্ডলী থেকে পাওয়া যায়। এই প্রবাদ প্রতিম অভিনেতার মৃত্যুর ৩০ বছর পরেও তার নামে যে উন্মাদনা লক্ষ্য করা যায়, জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে সেটা কতটা সমর্থিত সেটা পরীক্ষা করার জন্যই এই ছকটি বেছে নেওয়া হয়েছে।
জীবনের কিছু ঘটনা
১৯২৬ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর উত্তর কোলকাতার আহিরিটোলায় জন্ম। তার ছোটবেলায় নাম ছিল
অরুণ; শোনা যায় তার দিদিমা তাকে উত্তম নামে ডাকতেন এবং পরে সেই নামেই তিনি পরিচিতি
লাভ করেন। শৈশবেই তিনি ভবানীপুরে গিরিশ মুখার্জী রোডের পৈতৃক বাড়িতে চলে আসেন।
South Subarban School-এ পড়াশুনা শেষ করে বাণিজ্য নিয়ে পড়তে Goenka College-এ ভর্তি
হন। কিন্তু আর্থিক অসুবিধার জন্য কলেজের পাঠ শেষ না করেই তিনি Calcutta Port-এ
কেরাণীর চাকরী নিয়ে কর্ম জীবনে প্রবেশ করেন। বিশাল যৌথ পরিবারে 'সুহৃদ সমাজ' নামে
একটি থিয়েটার গ্রুপ ছিল, সেখানে তিনি ছেলে বেলা থেকেই অভিনয় করতেন। অভিনয় ছাড়াও
শরীর চর্চাতেও তার খুব ঝোঁক ছিল। কুস্তি, সাঁতার, লাঠি খেলা, টেনিস ইত্যাদিতে তার
উৎসাহ ছিল সমধিক। পর পর তিন বছর তিনি সাঁতারে Bhowanipur Swimming Association-এ
সেরা বলে বিবেচিত হন।
১৯৪৭ সালে অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়ের চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ। ঐ বছরেই 'মায়াডোর' নামক চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করলেও ছবিটি কখনও মুক্তি পায় নি। প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি নীতিন বোস পরিচালিত 'দৃষ্টিদান' মুক্তি পায় ১৯৪৮ সালে। তবে এই ছবিতে তিনি নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন নি। তার সঙ্গে প্রথম অভিনেত্রী ছবি রায়। পরিচালক নবেন্দুসুন্দর বললেন অরুণ নাম চলবেনা, পাল্টাতে হবে। অরুণ কুমার নিজেই প্রস্তাব করেন উত্তম নামের। কিন্তু ছবি রায়ের শুধু উত্তম পছন্দ নয়, তিনি বলেন নাম হোক উত্তমকুমার। 'কামনা' ছবিতে উত্তমকুমার নাম হলেও পরের ছবি 'মর্যাদা' ছবিতে একবার অরূপকুমার নামে অভিনয় করেন, কিন্তু পরের ছবি 'ওরে যাত্রী' থেকেই অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায় বাকি জীবনের জন্য উত্তমকুমার হয়ে গেলেন। ১৮৫১ সালে পোর্ট কমিশনার্সের চাকরি ছেড়ে তিনি পুরোপুরি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৪ সালের মধ্যে 'অগ্নি পরীক্ষা' ছবির আগে তার ১৯ টি ছবি মুক্তি পায় ( 'মায়াডোর', 'দৃষ্টিদান', 'কামনা', 'মর্যাদা', 'ওরে যাত্রী', 'সহযাত্রী', 'নষ্টনীড়', 'সঞ্জীবনী', 'বসু পরিবার', 'কার পাপে', 'সাড়ে চুয়াত্তর', 'লাখ টাকা', 'নবীন যাত্রা', 'বউঠাকুরাণীর হাট', 'ওরা থাকে ওধারে', 'চাপাডাঙার বউ', 'কল্যাণী', 'সদানন্দের মেলা' ও 'অন্নপূর্ণার মন্দির' ) । এর মধ্যে 'সাড়ে চুয়াত্তর', 'কার পাপে' ইত্যাদি ছবি বাণিজ্যিক সাফল্য লাভ করলেও তার কারণ উত্তমকুমার ঠিক নন। 'সাড়ে চুয়াত্তর' ছবিতে তার সঙ্গে অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন অভিনয় করেন; কিন্তু অসম্ভব জনপ্রিয় এই ছবিটিরও সাফল্যের কারণ উত্তমকুমার বা সুচিত্রা সেন নন। তুলসী চক্রবর্তীর অসাধারণ অভিনয় ও অন্যান্যদের ভূমিকাই এর সাফল্যের কারণ। তার প্রথম হিট ছবি ১৯৫৪ সালে মুক্তি প্রাপ্ত 'অগ্নি পরীক্ষা', সঙ্গে সুচিত্রা সেন। এর পরে আর তাকে কখনও ফিরে তাকাতে হয় নি। উত্তম কুমার প্রথম নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন ১৯৫০ সালের ১৫ই ডিসেম্বর মুক্তিপ্রাপ্ত 'মর্যাদা' ছবিতে; নাযিকা ছিলেন স্মৃতিরেখা বিশ্বাস। এই ছবিতেই প্রথম উত্তম কুমারের ( তখন নাম ছিল অরূপ কুমার ) ওষ্ঠে গান ব্যবহার করা হয়েছিল; শিল্পী ছিলেন তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসাবে BFJA(Bengal
Film Journalists' Association ) পুরষ্কার পান ১৯৫৫ সালে। এর পর দুই একটি ক্ষেত্র
ছাড়া মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তার জয় যাত্রা অক্ষুন্ন ছিল।
উত্তম কুমারের বরুণ ও তরুণ নামে আরও দুই ভাই ছিল। বরুণ আয়ু খুব বেশী পান নি। সর্বকনিষ্ঠ
তরুণকুমার বাংলা চলচ্চিত্রে একটি পরিচিত নাম। শোনা যায় বিখ্যাত গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়
ছিলেন সম্পর্কে উত্তম কুমারের কাকা।
উত্তমের প্রযোজিত ঐহারানো সুরঐ ছবিটি ভারত
সরকারের সার্টিফিকেট অফ মেরিট পায়। ঐচিড়িয়াখানাঐ ও ঐ্যান্টনি ফিরিঙ্গিঐ ছবি দুটিতে
শ্রেষ্ঠ অভিনয়ের জন্য ভারত সরকার তাঁকে ভরত পুরষ্কার দেন।
১৯৪৮ সালে উত্তম কুমার বিয়ে করেছিলেন তার ছেলেবেলার বন্ধু ও প্রণয়িনী গৌরী দেবীকে।
অনেক দিন সুখে সংসার করেছিলেন। তাদের এক পুত্র গৌতমের জন্ম হয় ৬ই সেপ্টেম্বর ১৯৫০
সালে। কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্কে দূরত্ব তৈরী হয়। সুপ্রিয়া দেবীকে উত্তম
চিনতেন বহু দিন ধরে; কিন্তু ১৯৫৯ সালে ঐশুন বরনারীঐ ছবিতে অভিনয় করার সময় থেকেই
নায়িকা সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে তিনি ভালবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৩ সালে গৌরী
দেবীর সঙ্গে উত্তম কুমারের মনোমালিন্য চরম আকার নেয় এবং ঐ বছরেই ২৭শে সেপ্টেম্বর
উত্তম গৃহত্যাগ করেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে তার ময়রা
স্ট্রীটের বাড়িতেই ছিলেন।
১৯৮০ সালের ২৪শে জুলাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে উত্তম কুমারের মৃত্যু হয়। তার মরদেহ নিয়ে যখন যাত্রা শুরু হয় তখন কোলকাতার পথে জনজোয়ার; পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। মৃত্যুর পর ৩০ বছর পেরিয়ে গেছে; এখনও তার নামে মানুষের উন্মাদনার ঘাটতি নেই। বহু ছবিতে উত্তম-সুচিত্রার নায়ক-নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় এবং হেমন্ত ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের স্বর্ণকণ্ঠে পরিবেশিত সঙ্গীতের সঙ্গে তাদের ওষ্ঠ মেলান বছরের পর বছর ধরে মানুষকে মোহময় রোম্যান্টিসিজ্মে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।
কোন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির সফলতার দিকটা এতটাই সামনে চলে আসে যে খ্যাতি লাভ করবার আগে হতাশা ও দুঃসময়ের দিনগুলি তখন আর মনে আসে না। উত্তম কুমারের খ্যাতি খুব সহজে আসে নি। অনেক জায়গা থেকে তিনি প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন এবং অনেকের রূঢ় ব্যবহার তাকে আঘাত দিয়েছে যথেষ্ট। কিন্তু তার ছিল অসামান্য নিষ্ঠা ও ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টা। অধ্যাবসায়, আত্মবিশ্বাস ও একনিষ্ঠ সঙ্কল্প মানুষকে যে সাফল্যের কোন সীমায় পৌঁছে দেয় উত্তম কুমারের জীবন তার একটা জ্বলন্ত উদাহরণ।
কুন্ডলীর বিশ্লেষণ
উত্তম
কুমারের রাশিচক্রটি ১৫(৭)ক চিত্রে এবং নবাংশ ১৫(৭)খ চিত্রে দেখান হয়েছে।
(১) লগ্ন তুলা, রাশি কর্কট। শনি, বৃহস্পতি, মঙ্গল ও শুক্র লগ্নের মত কাছাকাছি ডিগ্রিতে অবস্থানের জন্য এই গ্রহ গুলি ফল দেবার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী হবার সম্ভাবনা বলে অনেক জ্যোতিষী মনে করেন। তুলা লগ্নের অধিপতি এবং ৮ম পতি শুক্র ১০ম কেন্দ্র কর্কটে ১০ম পতি বর্গোত্তম চন্দ্রের সঙ্গে অবস্থিত হওয়ায় ১০ম স্থান ও লগ্ন দুইই শক্তিশালী হয়েছে। চন্দ্র এবং শুক্র, শনি ( ৪র্থ ও ৫ম পতি ), বক্রী বৃহস্পতি ( ৩য় ও ৬ষ্ঠ পতি ), এবং মঙ্গল ( ২য় ও ৭ম পতি ) দ্বারা দৃষ্ট। অতএব লগ্নপতি, চন্দ্র লগ্ন ও ১০ম পতির উপর ৪টি মূল গ্রহের প্রভাব থাকায় ব্যক্তিত্বে, চরিত্রে এবং কর্মক্ষেত্রে নানা বৈচিত্রময় গুণের প্রকাশ ঘটেছে। লগ্নপতি শুক্র ( শুক্র নবাংশ লগ্ন বৃষেরও অধিপতি ) চন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত এবং নবাংশে তুঙ্গী। এতে উত্তম কুমারের সুশ্রী গঠন হয়েছে এবং তিনি অসামান্য শারীরিক সৌন্দর্যের অধিকারী হয়েছেন।
(২) উত্তম কুমারের কুণ্ডলীতে উল্লেখযোগ্য
কি কি গ্রহের অবস্থান ও যোগ রয়েছে সেটা দেখে নেওয়া যাক।
(ক)
১০ম পতি চন্দ্র স্বক্ষেত্রস্থ ও বর্গোত্তম।
(খ) ৪র্থ ও ৫ম পতি রাজযোগকারী গ্রহ শনি লগ্নে তুঙ্গ ক্ষেত্রে অবস্থিত হয়ে লগ্নপতি
শুক্র ও ১০ম পতি চন্দ্রকে দৃষ্টি দিচ্ছে।
(গ) চন্দ্র লগ্ন থেকে ৫ম ও ১০ম পতি মঙ্গল রাজযোগকারী গ্রহ হয়ে ১০মে মূলত্রিকোণে
অবস্থিত।
(ঘ) চন্দ্র লগ্নের ৫ম পতি মঙ্গল ৪র্থ পতি শুক্রকে দৃষ্টি দিচ্ছে এবং পরস্পরের কেন্দ্রে
অবস্থিত।
(ঙ) বৃহস্পতি চন্দ্র থেকে কেন্দ্রে থাকায় গজকেশরী যোগ হয়েছে।
(চ) রাজযোগকারী গ্রহ শনি লগ্ন কেন্দ্রে তুঙ্গী হওয়ায় শশ যোগ হয়েছে ( পঞ্চ মহাপুরুষ
যোগের একটি )।
(ছ) চন্দ্র লগ্ন থেকে রাজযোগকারী গ্রহ মঙ্গল চন্দ্রের লগ্নের ১০মে এবং লগ্নের ৭মে
মূলত্রিকোণে থাকায় রুচক যোগ হয়েছে ( এটিও পঞ্চ মহাপুরুষ যোগের অন্যতম )।
(জ) ৩য় ও ৬ষ্ঠ পতি বৃহস্পতি নীচস্থ হয়ে লগ্নপতি শুক্রকে দৃষ্টি দিচ্ছে। এটিও একটি
রাজযোগ। তবে বৃহস্পতির দুভাবে নীচভঙ্গ হয়েছে। প্রথমতঃ রাশিপতি (sign dispositor)
শনি লগ্ন কেন্দ্রে এবং চন্দ্রের ৪র্থে থাকায় এবং দ্বিতীয়তঃ মকর রাশি ( যেখানে বৃহস্পতির
অবস্থান ) মঙ্গলের তুঙ্গী ক্ষেত্র হওয়ায় এবং মঙ্গল লগ্ন ( ও চন্দ্র ) থেকে কেন্দ্রে
স্বক্ষেত্রস্থ হওয়ায় বৃহস্পতির নীচভঙ্গ হয়েছে।
(ঝ) রবি ও বুধ রবির ক্ষেত্র সিংহ রাশিতে ১১শে অবস্থিত হয়ে বুধাদিত্য যোগ তৈরী করেছে।
(ঞ) লগ্নপতি, শুক্র এবং বৃহস্পতি পরস্পরের কেন্দ্রে অবস্থিত হলে ভেরী যোগ হয়। এখানে
শুক্র নিজেই লগ্নপতি। শুক্র ও বৃহস্পতি পরস্পরের কেন্দ্রে অবস্থিত; অতএব ভেরী যোগ
হয়েছে।
(ট) ৬ষ্ঠ পতি বৃহস্পতি নীচস্থ হওয়ায় ( নীচভঙ্গ না ধরলে ) এবং ১০ম পতি চন্দ্র বর্গোত্তম
হয়ে স্বক্ষেত্রস্থ হওয়ায় ( যদিও তুঙ্গী নয় ) জয় যোগ হয়েছে ধরে নেওয়া যায়।
(ঠ) লগ্ন থেকে ১০মে শুভ গ্রহ শুক্র থাকায় অমলা যোগও হয়েছে।
এতগুলি গ্রহের বিশেষ শুভ অবস্থান ও পারস্পরিক সম্পর্কের জন্য বিভিন্ন যোগ তৈরী
হওয়ায় কুণ্ডলীটি একটি বিশিষ্টতা দাবী করতে পারে অবশ্যই।
(৩) লগ্নপতি শুক্রের মতই মনের কারক গ্রহ চন্দ্রও বিভিন্ন গ্রহের দ্বারা দৃষ্ট ও প্রভাবিত। মনও বিভিন্ন সময়ে ( দশা, অন্তর্দশা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে ) বিভিন্ন চিন্তায় আলোড়িত হয়েছে। লগ্নপতি ও ১০ম পতি ( এখানে মনের কারক চন্দ্রই ১০ম পতি ) যুক্ত ভাবে ১০মে থাকায় উত্তম কুমারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কাজের মধ্যে অস্থিরতা ( শনি ও মঙ্গলের প্রভাব ) এবং সময়ে সময়ে বিপরীত ধর্মী মনোভাবের প্রকাশ থাকা সম্ভব।
(৪) মঙ্গল ২য় ও ৭ম পতি; অতএব সাধারণভাবে মারক হবার কথা। তবে ভাবার্থ রত্নাকর গ্রন্থে তুলা লগ্নের মঙ্গলকে মারক বলা হয় নি; কিন্তু পরাশর মারক বলেছেন। যেখানে এই ধরণের বিভ্রান্তি হয় সেখানে পরাশরের মতই গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়। তবে নৈসর্গিক অশুভ গ্রহ হয়ে ৭ম কেন্দ্রের অধিপতি হওয়ায় মঙ্গলের কিছুটা শুভত্ব থাকলেও ২য় পতি হিসাবে মারক নিশ্চয়ই। ৪র্থ স্থান থেকে পড়াশোনার বিচার হয়। ৪র্থে ৩য় ও ৬ষ্ঠ পতি বক্রী বৃহস্পতি ২৩নং ধনিষ্ঠা নক্ষত্রে ( অধিপতি মঙ্গল ) অবস্থিত। আবার চন্দ্র থেকে বিচারেও ৪র্থে ৭ম ও ৮ম পতি শনি রয়েছে এবং ৪র্থ পতি শুক্রও শনির দ্বারা দৃষ্ট। উত্তম কুমারের জন্মের ৩/৪ মাস পরেই শনির দশা শুরু হয়। শনির দশা ১৯ বছরের। অতএব তার লেখাপড়া খুব বেশী এগোয় নি। শনির দশার শেষেই তার লেখাপড়ায় ছেদ পড়ে বলে মনে হয়।
(৫) শরীর চর্চা এবং খেলাধূলার ( sports ) কারক গ্রহ মঙ্গল। মঙ্গল লগ্ন, লগ্নপতি শুক্র, চন্দ্র লগ্ন ও ১০ম পতিকে ( চন্দ্রই ১০ম পতি ) দৃষ্টি দেওয়ায় উত্তম কুমারের খেলাধূলা ও শরীর চর্চায় ঝোঁক ছিল। শক্তিশালী রুচক যোগও ( পূর্বে বর্ণিত ) এটাকে ফলপ্রসূ করতে সাহায্য করেছে। তবে মঙ্গল ২নং ভরণী নক্ষত্রে ( অধিপতি শুক্র ) অবস্থান করায়, উত্তম কুমারের খেলাধূলা ও অঙ্গ সঞ্চালনে নিছক দক্ষতার প্রকাশ ছাড়াও একটা শৈল্পিক দিক ছিল বলে মনে হয়।
(৬) ৫ম স্থান থেকে বুদ্ধি, আবেগ, অনুভূতি, সূক্ষ্ম বাসনা ইত্যাদি বিবেচিত হয়। উত্তম কুমারের লগ্ন থেকে ৫ম পতি শনি, ৭মে ( জায়া, প্রেমজ বিষয় নির্দেশ করে ) অবস্থিত ৭ম পতি মঙ্গলকে এবং শুক্রকে ( প্রেম, ভালবাসা ইত্যাদির কারক গ্রহ ) দৃষ্টি দিচ্ছে। একই যোগ হয়েছে চন্দ্র লগ্ন থেকেও। চন্দ্র থেকে ৫ম পতি মঙ্গল, ৭ম পতি শনিকে এবং কারক গ্রহ শুক্রকেও দৃষ্টি দিচ্ছে। শুক্র নিজেই লগ্নপতি হয়ে চন্দ্রের ( মনের কারক গ্রহ ) সঙ্গে যুক্ত। এই অভিনেতার সমস্ত জীবন, মন ও কর্মকাণ্ড আবর্তিত হয়েছে আবেগ ও কল্পনা প্রসূত রোম্যান্টিসিজ্মকে কেন্দ্র করে। প্রেম, প্রীতি, ভালবাসা, স্নেহই এই মহানায়কের মুখ্য চালক শক্তি। এমন কি নবাংশেও ৫ম পতি বুধ ও ৭ম পতি মঙ্গল পরস্পরকে দৃষ্টি দিচ্ছে। এই যোগেরই ফল হিসাবে তিনি ১৯৪৮ সালের ১লা জুন বুধ-কেতুর দশা-অন্তর্দশায় প্রণয়িনী গৌরী গাঙ্গুলিকে ভালবেসে বিয়ে করেন। কেতু বৃহস্পতির ক্ষেত্রে এবং ২০ নং পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্রে ( অধিপতি শুক্র ) অবস্থিত। অতএব কেতু বৃহস্পতি ও শুক্রের ফল দেবে। বৃহস্পতি চন্দ্রের ৭মে ( জায়াস্থান ) অবস্থান করছে এবং শুক্র জায়া কারক গ্রহ। বুধ ১১শ পতি রবির সঙ্গে ১১শে ( ইচ্ছা পূরণ ) কেতুর মঘা নক্ষত্রে অবস্থিত। রবি ১১নং পূর্বফাল্গুনী ( অধিপতি শুক্র ) নক্ষত্রে অবস্থিত। বুধ সহজেই অন্য গ্রহের দ্বারা প্রভাবিত হয়; অতএব শক্তিশালী রবির দ্বারা বুধ প্রভাবিত হতেই পারে এবং রবির আংশিক ফল দিতে পারে। এ ছাড়াও বুধ চন্দ্র লগ্নের ২য়ে ( পরিবার ) অবস্থিত হওয়ায় বিয়ের অনুকূল হয়েছে।
(৭) ৪র্থ স্থান থেকে গৃহসুখের বিচার হয়। লগ্নের ৪র্থে ৩য় ও ৬ষ্ঠ পতি নীচস্থ বক্রী বৃহস্পতির অবস্থান। ৪র্থ পতি শনি ২য় ও ৭ম পতি মঙ্গলের দ্বারা দৃষ্ট। চন্দ্র থেকে ৪র্থে ৭ম ও ৮ম পতি শনির অবস্থান এবং পাপগ্রহ মঙ্গল দ্বারা দৃষ্ট। এমন কি ভ-চক্রের ( natural zodiac - অনুচ্ছেদ ৩ ) ৪র্থ স্থান কর্কট রাশি ও তার অধিপতি চন্দ্র শনি ও মঙ্গলের দ্বারা পীড়িত। এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, গৃহসুখ (domestic peace ) বলতে যা বোঝায়, উত্তম কুমারের কাছে তা চিরকাল অধরাই ছিল। চন্দ্র শনি ও মঙ্গলের দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় তিনি নিরন্তর মানসিক যন্ত্রণা ও অস্থিরতায় কষ্ট পেয়েছেন।
(৮) শোনা যায় উত্তমকুমারের ভাই বরুণকুমার স্বল্পায়ু ছিলেন। লগ্নের ৩য়ে ( অনুজ ) কেতুর অবস্থান এবং শনির দৃষ্টি এই ঘটনা ঘটাতে পারে।
(৯) শুক্র কলা, শিল্প, সঙ্গীত ইত্যাদির কারক গ্রহ। শুক্র লগ্নপতি হয়ে ১০মে ১০ম পতি বর্গোত্তম চন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় অভিনয় প্রতিভা ছিল তার সহজাত। উত্তম কুমারের শনির দশা শেষ হয় তার ১৯ বছর বয়সে। এর পর ১৭ বছরের বুধের দশা। ১৯৫৩ সালে বুধ-চন্দ্রের দশা-অন্তর্দশায় সাড়ে চুয়াত্তর ছায়াছবিটি মুক্তি পায় এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। বুধ ৯ম পতি ও ১১শে অবস্থিত। চন্দ্র ১০ম পতি ও শুক্রের সঙ্গে যুক্ত। বুধের ১২শ পতিত্ব দোষও রয়েছে। সফলতা লাভের আগে উত্তম কুমারকে নানান ব্যর্থতা ও প্রত্যাখ্যানের শিকার হতে হয়। বুধ ১২শ পতি হলেও ১১শে ( ১২শের ১২শে ) অবস্থিত হওয়ায় ১২শ পতিত্ব দোষ কিছুটা লঘু হয়ে গেছে। বুধের বাকী দশায় তার জয়যাত্রা ছিল অব্যাহত। বুধের পর কেতুর দশাতেও তার সাফল্যের খুব ঘাটতি ছিল না। কেতু ৩য়ে শুক্রের নক্ষত্রে অবস্থিত এবং রাজযোগকারী গ্রহ শনির দ্বারাদৃষ্ট। কিন্তু কেতুর দশাতে অভিনেতা হিসাবে তার খ্যাতি অক্ষুণ্ণ থাকলেও তার দুর্ভাগ্যের সূচনা হয় অন্য ভাবে।
(১০) গৌরী দেবীর সঙ্গে তার মনোমালিন্য চূড়ান্ত আকার ধারণ করে ১৯৬৩ সালে। অবশেষে ঐ বছরেই ২৭শে সেপ্টেম্বর তিনি স্ত্রী গৌরী দেবীকে ত্যাগ করে সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে বাস করতে শুরু করেন। ঘটনাটি ঘটে কেতু-শুক্রর দশা-অন্তর্দশায়। কেতু মঙ্গলের মতই ফল দেয় ( কুজবৎ কেতু )। কেতু স্ত্রী কারক গ্রহ শুক্রের নক্ষত্রে অবস্থিত। মঙ্গল লগ্নের ৭মে অবস্থিত হয়ে শনিদৃষ্ট হওয়ায় স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে। দশা পতি কেতু থেকে অন্তর্দশা পতি শুক্রের অবস্থান ৮মে; এটা শুভ নয়। চন্দ্র লগ্ন থেকেও ৭ম পতি শনি মঙ্গলের দ্বারা দৃষ্ট। শুক্র রয়েছে ৯নং অশ্লেষা নক্ষত্রে; অধিপতি ৩য় ও ১২শ পতি বুধ। শুক্র রবি ও রাহুর মধ্যবর্তী হয়ে পাপ কর্তরী যোগেও আক্রান্ত। আগেও বলা হয়েছে একই গ্রহ জীবনে শুভ ও অশুভ দু রকম ফলই দিতে পারে। যে সব গ্রহ উত্তম কুমারের খ্যাতি, নাম যশ পেতে সাহায্য করেছে, তারাই তাকে গৃহসুখ থেকেও বঞ্চিত করেছে।
(১১) উত্তম কুমারের ছেলে গৌতমের ক্যান্সারে মৃত্যু হয়। লগ্ন থেকে ৫ম পতি শনি মঙ্গলের দ্বারা দৃষ্ট। কারক গ্রহ বৃহস্পতি ২৩ নং ধনিষ্ঠা নক্ষত্রে ( অধিপতি মঙ্গল ) শনির ঘরে অবস্থিত। চন্দ্র লগ্ন থেকেও ৫ম স্থান বৃশ্চিক রাশি পাপকর্তরী যোগে দুষ্ট এবং ৫ম পতি মঙ্গল শনির দ্বারা দৃষ্ট।
(১২) উত্তম কুমারের নিজের মৃত্যু হয় ২৪শে
জুলাই ১৯৮০ সালে, শুক্র-বৃহস্পতি-বৃহস্পতি দশা-অন্তর্দশা-প্রত্যন্তর্দশায়। লগ্ন
দুটি অশুভ গ্রহ শনি ও মঙ্গলের দ্বারা ক্লীষ্ট; কোন শুভ গ্রহের দৃষ্টি লগ্নে নেই।
লগ্নপতি শুক্র শনি এবং মঙ্গলের দ্বারা দৃষ্ট হয়ে অশুভত্ব প্রাপ্ত হয়েছে। ৮ম স্থান
থেকে আয়ু বিচার হয়। ৮ম রাশি বৃষ রাহু ও মঙ্গলের দ্বারা পাপ কর্তরী যোগে আক্রান্ত।
৮ম পতি শুক্রও শনি এবং মঙ্গলের দ্বারা দৃষ্ট। এ সব কারণে পরমায়ু বেশী হয় নি। বৃহস্পতি
৩য় ও ৬ষ্ঠ পতি হয়ে চন্দ্রের ৭মে ( মারক স্থান ), শনির ক্ষেত্রে এবং মঙ্গলের ( লগ্ন
থেকে ৭ম পতি ) নক্ষত্রে থাকায় মারক হয়েছে। অতএব উপরোক্ত সময়ে উত্তম কুমারের জীবনাবসান।
উত্তম কুমারের ছকে শনি ও মঙ্গলের প্রভাব স্পষ্ট। লগ্ন, চন্দ্রলগ্ন ও লগ্নধিপতি
শুক্র প্রত্যেকটিই শনি ও মঙ্গলের দ্বারা হয় দৃষ্ট না হয় তাদের সঙ্গে যুক্ত। শনি
তুলা লগ্নের রাজযোগকারী গ্রহ কিন্তু চন্দ্র থেকে ৭ম ও ৮ম পতি। মঙ্গল তুলা লগ্নের
রাজযোগকারী গ্রহ কিন্তু লগ্ন থেকে ২য় ও ৭ম পতি। শনি ও মঙ্গলের অবস্থান পরস্পরের
মুখোমুখি। শুভ এবং অশুভের বিচিত্র সহাবস্থান। জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে শুভ এবং অশুভ
ফল কাটাকাটি হয়ে অবশিষ্ট কিছু শুভ বা কিছু অশুভ ফল ফলবে এ রকম হয় না। শুভ এবং অশুভ
ফল দুইই আলাদা ভাবে ভোগ করতে হবে। " অবশ্যমেব ভোক্তব্যং কৃতকর্মং শুভাশুভং।
"
৮. স্বামী বিবেকানন্দ
জন্ম
বিবরণ : ১২ই জানুয়ারী, ১৮৬৩ খৃষ্টাব্দ; সময় : সকাল ৬ - ৩৩ মিঃ ( স্থানীয় সময় )
; স্থান : কোলকাতা, অক্ষাংশ : ২২ ডিঃ ৩৫ মিঃ উত্তর; দ্রাঘিমাংশ : ৮৮ ডিঃ ২৩ মিঃ
পূর্ব, ভারতবর্ষ; Time Zone : 5-53-30 East. লাহিড়ী অয়নাংশ. ভোগ্য দশা (balance
of dasha) : চন্দ্র ৪ বছর ৪ মাস ২৭ দিন।
( বিঃ দ্রঃ এখানে time zone 5-53-30 East-এর অর্থ হল, স্থানীয় সময় ৬-৩৩ মিঃ থেকে ৫ ঘণ্টা ৫৩ মিনিট ৩০ সেকেণ্ড বিয়োগ করলে GMT পাওয়া যায় এবং GMT-এর সঙ্গে ৫ ঘণ্টা ৩০ মিনিট যোগ করলে IST পাওয়া যায় অর্থাৎ ৬-৩৩ মিনিটের থেকে ২৩ মিঃ ৩০ সেঃ বিয়োগ করলে IST পাওয়া যায়। ৪র্থ অনুচ্ছেদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, IST থেকে সব গ্রহের স্ফূট এবং স্থানীয় সময় থেকে লগ্ন নির্ণয় করতে হবে)।
জীবনের কিছু ঘটনা
ছোটবেলার নরেন্দ্রনাথ দত্ত ( পরে বিশ্ব বিজয়ী
বিবেকানন্দ ) জন্ম গ্রহণ করেন উত্তর কোলকাতার একটি স্বচ্ছল পরিবারে। পিতা বিশ্বনাথ
দত্ত ছিলেন একজন লব্ধপ্রতিষ্ঠ আইনজীবী, যথেষ্ট উপার্জন ছিল তার। ভগবৎ প্রেম ও ঈশ্বরে
বিশ্বাস নরেন্দ্রনাথের ছিল সহজাত। এ ব্যাপারে তিনি তার মা ভুবনেশ্বরী দেবীর কাছে
ঋণী - একথা নরেন্দ্রনাথ স্বীকার করেছেন। অল্প বয়সেই তিনি শিবের ধ্যানে বাহ্য জ্ঞান
শূন্য হয়ে পড়তেন।
১৮৭১ সালে নরেন্দ্রনাথ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের Metropolitan Institution-এ ভর্তি
হন। স্কুলের পাঠ শেষ করে ১৮৭৯ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রবেশ করেন কিন্তু এক বছর
পরে তিনি General Assemblys Institution-এ ( পরবর্তী কালে Scottish Church College)
চলে যান এবং ১৮৮৪ সালে B.A ডিগ্রী লাভ করেন। ১৮৮৪ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারী আকস্মিক
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নরেন্দ্রনাথের পিতার মৃত্যু হয়। সংসারে দুর্যোগ ঘনিয়ে আসে
এর পরেই। যে সব পরিচিত জন এবং আত্মীয়রা পরম হিতৈষীর মত ব্যবহার করত, তারা হঠাৎ
মুখ ঘুরিয়ে নিল এবং অনেকে সম্পত্তির দাবী নিয়ে নরেন্দ্রনাথ ও তার মাকে আইনের জালে
জড়িয়ে ফেলল। মামলা সংক্রান্ত নানা বিষয় স্বামীজীকে তার মৃত্যুর অব্যবহিত পূর্বেও
রেহাই দেয় নি। পিতার মৃত্যুর পর উপার্জন না থাকায় এবং মামলা লড়তে গিয়ে নরেন্দ্রনাথের
বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হওয়ায় দারিদ্র তাকে ক্রমশঃ গ্রাস করে ফেলে। মা এবং ছোট ভাইদের
দুঃখ দূর করার জন্য একটা সামান্য চাকরীও তিনি জোটাতে পারেন নি। কিছু দিনের জন্য
শিক্ষকতার কাজ পেলেও তাকে সেটা ছাড়তে হয়। এত অসহনীয় অবস্থার মধ্যেও তার অবিচল ঈশ্বর
অনুসন্ধিৎসা জাগ্রত ছিল। রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাৎকার হয়
১৮৮১ সালের নভেম্বর মাসে; তিনি তখন কলেজের ছাত্র এবং ব্রাহ্ম সমাজে যাতায়াত করছেন।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের অসামান্য ভালবাসা, অকৃত্রিম ভগবৎ প্রেম, ঐশ্বরিক সারল্য ও
ঈশ্বর দর্শনের সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতা তাকে সংসার বিমুখ করে তোলে। তিনি বুঝতে পারেন যে
প্রশ্নের উত্তর তিনি খুঁজে বেড়াচ্ছেন এখানেই তিনি তা পাবেন। এর পরেই ঠাকুরের কাছে
তার ঘন ঘন যাতায়াত শুরু হয়। তার সঙ্গীতের কণ্ঠ ছিল অতি মধুর। শ্রীরামকৃষ্ণ ত বটেই,
অন্যেরাও তার গান শোনার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে থাকতেন।
পরমহংস দেবের মৃত্যু হয় ১৮৮৬ সালের ১৬ই আগষ্ট। এর পর নরেন্দ্রনাথ পাগলের মত আশ্রয়হীন
অবস্থায় ঘুরে বেড়ান। একদিকে বাড়ীতে মা অর্থকষ্টে জর্জড়িত আবার অন্যদিকে বৈরাগ্যের
নির্মম হাতছানি। কতিপয় সম মনোভাবাপন্ন ও ঠাকুরের আদর্শে উদ্বুদ্ধ যুবককে সঙ্গে
নিয়ে ঠাকুরের অনুসৃত ভাবধারাকে সম্বল করে এগিয়ে চলেন তিনি।
১৮৯৩ সালের মে মাসে তিনি আমেরিকা যান এবং ঐ বছরেই সেপ্টেম্বরে শিকাগোয় তার সেই
সাড়া জাগান বক্তৃতা তাকে খ্যাতির আলোয় নিয়ে আসে। এর পর তার নিরন্তর এগিয়ে চলা।
সময় খুব কম; যে উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি পৃথিবীতে এসেছেন তাকে রূপদান করে যেতে হবে।
তার জীবনে আয়াস বা অযথা কালক্ষেপের কোন স্থান ছিল না। পরিব্রাজক অবস্থায় বহু তীর্থে
তিনি ঘুরেছেন, নির্জনে তপস্যা করেছেন, সংসারে সবার মধ্যে থেকে কাজ করলেও মায়ার
আবর্তে তিনি কখনও পড়েন নি। শ্রীরামকৃষ্ণের ভাবধারাকে অক্ষুন্ন রাখতে এবং সংসার
জ্বালায় ক্লীষ্ট মানুষকে শান্তির পথ দেখাতে তিনি বেলুড় মঠ নির্মানের পরিকল্পনা
করেন। বর্তমান মঠের নির্মান কার্য ১৯৩৮ সালের ১৪ই জানুয়ারী শেষ হয়। স্বামীজী বর্তমান
মঠ দেখে যেতে পারেন নি। ১৯০২ সালের ৪ঠা জুলাই তিনি মরদেহ ত্যাগ করেন।
কুণ্ডলীর বিশ্লেষণ
(১)
লগ্ন ধনু, অগ্নিরাশি; লগ্নপতি ( এবং ৪র্থ পতি ) বৃহস্পতি ১১শে তুলায় ১৪নং চিত্রা
নক্ষত্রে ( অধিপতি মঙ্গল ) অবস্থিত এবং স্বক্ষেত্রস্থ মঙ্গল দ্বারা দৃষ্ট। মঙ্গল
( ৫ম ও ১২শ পতি ) ১নং অশ্বিনী নক্ষত্রে ( অধিপতি কেতু ) রয়েছে। ৯ম পতি রবি ( সিংহ
রাশির অধিপতি ) লগ্নে ২১নং পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্রে ( অধিপতি রবি ) অবস্থিত। লগ্ন ও
রবি বর্গোত্তম হওয়ায় অত্যন্ত শক্তিশালী। এ থেকেই একটি বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে। লগ্ন
একটি অগ্নি রাশি ধনুতে, রবি অগ্নিরাশি সিংহের অধিপতি হয়ে বর্গোত্তম এবং ৫ম পতি
মঙ্গল ( ক্ষিপ্রতা, কর্মক্ষমতা, দৃপ্তভাব ইত্যাদির কারক গ্রহ ) অপর একটি অগ্নিরাশি
মেষে মূলত্রিকোণে অবস্থিত হয়ে স্বনক্ষত্রে স্থিত লগ্নপতি বৃহস্পতিকে দৃষ্টি দিচ্ছে।
এ থেকে বোঝা যায়, জাতকের অসাধারণ রজগুণ, তেজ, কর্মক্ষমতা ও সাহস ছিল।
(২) স্কুলে এবং কলেজে শিক্ষকেরা স্বামীজীকে অত্যন্ত প্রতিভাবান বলে মনে করলেও পরীক্ষায়
নম্বর কিন্তু তিনি আশানুরূপ পান নি। ৪র্থ স্থান থেকে লেখাপড়ায় সফলতা বিচার্য। এখানে
৪র্থ পতি বৃহস্পতি ১১শে অবস্থিত হলেও
মঙ্গল দ্বারা দৃষ্ট এবং শনি ও রাহু দ্বারা শক্তিশালী পাপ কর্তরী যোগে পীড়িত। চন্দ্র
থেকেও ৪র্থ পতি বৃহস্পতি একই কারণে অশুভ ভাবে আক্রান্ত এবং ৪র্থে ১২শ পতি রবি অবস্থিত।
অতএব পরীক্ষায় ফল ভাল হয় নি।
৪র্থ স্থান থেকে যেহেতু গৃহসুখ ও মা-এর অবস্থারও বিচার করা হয় ; একই কারণে গৃহসুখ
বলতে স্বামীজীর কিছু ছিল না। তিনি প্রায় গৃহত্যাগীই ছিলেন; নিরন্তর ঘুরে বেড়িয়েছেন।
৪র্থ পতি
তুলা রাশিতে ( চর রাশি ) অবস্থিত হওয়ায় এটা আরও জোরালো হয়েছে। স্বামী বিশ্বনাথ
দত্তের মৃত্যুর পর স্বামীজীর মা ভুবনেশ্বরী দেবী আর সুখের মুখ দেখেন নি। মাতৃকারক
গ্রহ চন্দ্র দুঃখের কারক গ্রহ শনির সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় এটা আরও নিশ্চিত ভাবে বোঝা
যায়। চন্দ্র লগ্ন থেকে ১২শ পতি রবি ( পিতৃকারক গ্রহ ) ৪র্থে অবস্থনের জন্য পিতার
মৃত্যুর পরে সাংসারিক অবস্থার অবনতি এবং আত্মীয় স্বজনের বিরূপ মনোভাব নির্দেশ করে।
(৩) স্বামীজীর ছকের তিনটি মূল বিষয় হল তার নিরবচ্ছিন্ন সাংসারিক কষ্ট, আপোষহীন
সংগ্রাম এবং জ্বলন্ত আধ্যাত্মিকতা। প্রথম দু'টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তার আধ্যাত্মিক
মনোভাবের কারণ বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
(ক) ৫ম স্থান থেকে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে ভক্তি, মন্ত্রদীক্ষাও বিবেচ্য। ১২শ স্থান
মোক্ষ নির্দেশ করে। ৫ম ও ১২শ পতি মঙ্গল মেষ রাশিতে মূলত্রিকোণে এবং কেতুর নক্ষত্রে
অবস্থিত। কেতু কৈবল্য কারক গ্রহ। মঙ্গল আবার লগ্নপতিকে দৃষ্টি দিচ্ছে। বৃহস্পতি
( ধর্মের কারক গ্রহ ) মঙ্গলের নক্ষত্রে অবস্থিত। অতএব গ্রহ ও নক্ষত্রের প্রতিটি
অবস্থান আধ্যাত্মিকতা বিকাশে সাহায্য করেছে।
(খ) শনিকে বৈরাগ্যের (detachment) কারক গ্রহ বলা হয়। চন্দ্র মনের কারক গ্রহ। শনি
চন্দ্রের সঙ্গে ১০মে (house of action) যুক্ত হওয়ায় স্বামীজের মন জন্ম থেকেই বৈরাগ্যময়
ছিল। সাংসারিক বিষয়ে তিনি কখনও আকৃষ্ট হন নি। চন্দ্র ও শনির এই অবস্থান একটি সন্ন্যাস
যোগ।
(গ) ৯ম ভাব ধর্মকে নির্দেশ করে। ৯ম পতি রবি বর্গোত্তম হয়ে লগ্নে অবস্থিত। রবি আত্মা
(soul), আত্মসম্মান ইত্যাদির কারক গ্রহ। অতএব স্বামীজীর শুধু ধর্মভাব নয়, সেই সঙ্গে
আত্মসম্মান (dignity) বোধ পূর্ণ মাত্রায় তার চরিত্রে বর্তমান ছিল। নীচতা, ক্ষুদ্রতার
সঙ্গে তিনি কখনও আপোষ করেন নি। স্বনক্ষত্রস্থ বর্গোত্তম রবি লগ্নে ( লগ্নও বর্গোত্তম
) থাকায় ধর্মভাব ছিল তার অস্তিত্বের সঙ্গে যুক্ত। তিনি কখনও আদর্শচ্যুত হন নি।
(ঘ) মঙ্গল যুক্তি ও তর্কের কারক গ্রহ। ৫ম স্থান সূক্ষবুদ্ধি, ভালমন্দ সত্যাসত্য
বিচার (discrimination) করার ক্ষমতা ইত্যাদি নির্দেশ করে। ৫ম পতি মঙ্গল ৫মে অবস্থিত
হওয়ায় ধর্ম ও ভক্তির বিষয়ে তিনি কোথাও নিঃশর্ত আত্মসমর্পন করেন নি, যতক্ষণ না তিনি
বিচার্য বিষয়ের সত্যতা সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হয়েছেন। শ্রীরামকৃষ্ণকেও তিনি নানা ভাবে
পরীক্ষা করে নিয়েছেন।
(ঙ) চন্দ্র লগ্ন থেকে দেখলেও ৫ম পতি ( ভক্তি ) শনি ( বৈরাগ্যের কারক ) লগ্নে চন্দ্রের
সঙ্গে ১৩নং হস্তা নক্ষত্রে ( অধিপতি চন্দ্র নিজেই ) অবস্থিত। আবার ৯ম ( ধর্ম )
স্থানের অধিপতি শুক্র ৫মে ( মকর রাশিতে ) লগ্ন ও ১০ম পতি বুধের সঙ্গে যুক্ত। চন্দ্রের
৯মে কৈবল্য কারক কেতুর অবস্থান।
(চ) রাহু ১২শে ( মোক্ষ স্থান ) অবস্থিত হয়ে শনি দ্বারা দৃষ্ট। ৫ম পতি মঙ্গলও রাহুকে
দৃষ্টি দিচ্ছে; অতএব রাহু পূর্ণ মাত্রায় ভক্তি, বৈরাগ্য ও মোক্ষভাব প্রাপ্ত হয়েছে।
(ছ) অপর একটি গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় দৃষ্টি এড়িয়ে গেলে চলবে না। শুক্র ( কাম ও পার্থিব
বাসনা বিষয়ক গ্রহ ) সম্পূর্ণ অশুভ দৃষ্টি বা সঙ্গ বর্জিত; অবস্থিত ২১নং উত্তরাষাঢ়া
নক্ষত্রে ( অধিপতি ৯ম পতি রবি )। এই বৈশিষ্ট্য নবাংশেও দেখা যায়। নবাংশে শুক্র
তুঙ্গী এবং লগ্ন পতি বৃহস্পতি দ্বারা দৃষ্ট; কিন্তু শুক্র কোন ভাবেই অশুভত্ব প্রাপ্ত
হয় নি। এই গ্রহটি সম্পূর্ণ মালিন্য বর্জিত হওয়ায় স্বামীজীর অটুট ব্রহ্মচর্য বজায়
ছিল। তিনি ছিলেন পবিত্রতার প্রতিমূর্তি। এদেশে এবং বিদেশে অনেক প্রলোভন ও প্ররোচনা
সত্বেও কোন বিষয় বাসনা বা মোহ তাকে আকৃষ্ট করতে পারে নি। এই কুণ্ডলীটির প্রতিটি
গ্রহই কোন না কোনো ভাবে আধ্যাত্মিকতা ফুটিয়ে তুলেছে। এ ধরণের জন্ম কুণ্ডলী অতি
বিরল।
(৪) দুঃখকারক গ্রহ শনি মনের কারক গ্রহ চন্দ্রের সঙ্গে ১০মে যুক্ত থাকায় স্বামীজী তীব্র মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয়েছেন এবং তিনি যা কিছুই অর্জন করেছেন সেটা পেতে তাকে কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে প্রতি পদে। এর একটি মূল কারণ হ'ল চন্দ্র ৮ম পতি হয়ে ১০মে অবস্থিত হয়েছে। শনির এক একটি রাশি অতিক্রম করতে আড়াই বছর সময় লাগে। চন্দ্র যে রাশিতে রয়েছে তার আগের রাশি, চন্দ্রের রাশি এবং তার পরবর্তী রাশি - এই তিন রাশি অতিক্রম করতে শনির লাগে সাড়ে সাত বছর। এই সময়টাকে শনির 'সাড়ে সাতি' বলা হয়। অনেকের মতে এই সময়টা খুবই খারাপ ( এ সম্বন্ধে পরে আলোচনার ইচ্ছা রইল )। এ ভাবে দেখলে স্বামীজীর জন্মের সময়েই শনি চন্দ্রের সঙ্গে রয়েছে, অতএব সাড়ে সাতিতেই জন্ম বলা চলে; হয় ত সেই জন্যই দুঃখ ও বঞ্চনা যেন জন্ম থেকেই তার সঙ্গ নিয়েছে।
(৫) লগ্নপতি ও ৪র্থ পতি বৃহস্পতি, ৫ম পতি মঙ্গলের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় করছে - এটা একটা রাজযোগ। শনি ও বুধের স্থান বিনিময়ও হয়েছে। চন্দ্র লগ্ন থেকে দেখলে লগ্নপতি ও ১০ম পতি বুধের সঙ্গে ৫ম পতি শনির স্থান বিনিময় অপর একটি রাজযোগ।
(৬) চন্দ্রের ৭মে এবং লগ্নের ৭মে শনির দৃষ্টি
থাকায় বিয়ের ব্যাপারে তিনি ছিলেন নিরাসক্ত।
লগ্নের ১০মে ( কর্ম ক্ষেত্র ) শনির অবস্থান এবং ১০ম পতি বুধের সঙ্গে শনির ক্ষেত্র
বিনিময় হয়েছে। আবার চন্দ্র থেকে দেখলেও ১০মে ( মিথুন রাশিতে ) শনির দৃষ্টি এবং
১০ম পতি বুধের সঙ্গে শনির স্থান বিনিময় হয়েছে। তিনি ছিলেন প্রকৃতপক্ষে গীতায় উক্ত
কর্মযোগী। কর্মফলের আকাঙ্খা তার ছিলনা; আসক্তিহীন ভাবে কাজ করে গেছেন।
(৭) স্বামীজীর চন্দ্রের দশায় জন্ম। সাড়ে চার বছর বয়স থেকে মঙ্গলের দশা পেয়েছেন ৭ বছরের জন্য। মঙ্গল খেলাধূলা ও শরীর চর্চার কারক গ্রহ। মঙ্গল লগ্নপতি বৃহস্পতিকে দৃষ্টি দেওয়ায় তার শরীর ছিল বলিষ্ঠ; ছেলেবেলায় খেলাধূলা, ব্যায়াম ও কুস্তি তিনি নিয়মিত করেছেন। তার রাহুর দশা শুরু হয় ১৮৭৪/১৯৭৫ সালে, ১৮ বছরের দশা। আলোচ্য কুণ্ডলীতে রাহুর আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্য আগেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ১৮৮১ সালের নভেম্বর মাসে রাহু-শনির দশায় তার সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণের প্রথম সাক্ষাৎ; সঠিক দশা-অন্তর্দশায় তার প্রকৃত আধ্যাত্মিক জীবনের শুরু।
(৮) ১৮৮৪ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারী রাহু-বুধের
দশা-অন্তর্দশায় নরেন্দ্রনাথের পিতৃ বিয়োগ হয়। রাহু পিতৃ কারক গ্রহ রবির ১২শে (
ব্যয় স্থান ) অবস্থিত। রাহু ১৮নং বুধের নক্ষত্রে থাকায় বুধের ফলও দেবে। বুধ রবির
২য়ে ( মারক স্থান ) অবস্থিত এবং লগ্নের ৯ম থেকে ( পিতৃ স্থান ) ২য় স্থানের অধিপতি।
আবার চন্দ্র লগ্নের ৯ম থেকে ২য় স্থানের অধিপতিও বুধ; অতএব রাহু-বুধে পিতৃবিয়োগ।
পরমহংস দেবের মৃত্যু হয় ১৮৮৬ সালের ১৬ই আগষ্ট, স্বামীজীর রাহু-শুক্রের দশা-অন্তর্দশায়।
৯ম পতি ( ৯ম স্থান গুরুকে বোঝায় ) রবির ২য়ে ( মারক স্থান ) শুক্র এবং ৯ম পতি রবির
১২শে রাহু অবস্থিত। চন্দ্র লগ্ন থেকে ৯ম স্থানের ৭মে ( মারক স্থান ) রাহুর অবস্থান।
(৯) লগ্নে বর্গোত্তম রবি ( নেত্র কারক - ৫ম অনুচ্ছেদ ) এবং ২য়ে ( চোখ, মুখ ইত্যাদি
) বুধ ও শুক্রের অবস্থানের জন্য স্বামীজীর চোখ দুটি ছিল অপূর্ব সুন্দর, উজ্জ্বল
ও বুদ্ধিদীপ্ত। বুধ লিখন এবং প্রকাশনার কারক গ্রহ। বুধ ও শুক্রের যুক্তভাবে অবস্থানের
জন্য তার লেখার মধ্যে যুক্তি, বুদ্ধি ও কাব্যিক ভাব সমান ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। ২য়
বাকস্থান হওয়ায় তার বাঙ্মীতা ছিল অসাধারণ। চন্দ্র লগ্ন থেকে ২য় পতি শুক্র রবির
নক্ষত্রে রয়েছে এবং ২য়ে বৃহস্পতির অবস্থান। তার কথার মধ্যে দৃঢ়তা, আত্মপ্রত্যয়,
দার্শনিকতা, বুদ্ধি ও সরসতা ( বুধ ) সমভাবে বর্তমান ছিল। বুধ ও শুক্রের অবস্থান
শনির ক্ষেত্রে এবং রাশিপতি শনি (sign dispositor) চন্দ্রের ( জন সাধারণের কারক
গ্রহ ) সঙ্গে ১০মে যুক্ত হওয়ায় তার বক্তৃতায় জনমোহিনী শক্তি ছিল অসাধারণ। কিন্তু
শুক্র ৬ষ্ঠ পতি ( শত্রু স্থান ) এবং চন্দ্র ৮ম পতি হওয়ায় তাকে প্রবল বাধার সম্মুখীন
হতে হয়েছে। কিন্তু ৪র্থ পতি ( ৪র্থ জনসাধারণকেও বোঝায় ) ও লগ্নপতি বৃহস্পতি ১১শে
শুক্রের ক্ষেত্রে অবস্থিত হওয়ায় তিনি সম্মানের সঙ্গে সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে
পেরেছেন।
শুক্র শিল্প, সঙ্গীত ও চারুকলার কারক গ্রহ। ছোটবেলায় খেলাধূলার সঙ্গে তিনি নিয়মিত
সঙ্গীত চর্চাও করেছেন। শুক্র লগ্নের ২য়ে ( কণ্ঠ ) বুধের সঙ্গে অবস্থিত হওয়ায় তার
গানের গলা ছিল খুবই সুন্দর। পরমহংস দেবের কাছে গেলে প্রায়শই তাকে গান গাইতে অনুরোধ
করা হত এবং তার ভক্তি মূলক গান শুনে শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে যেতেন।
(১০) স্বামীজের রাহুর দশা শেষ হয়ে বৃহস্পতির দশা শুরু হয় ১৮৯২ সালের জুন মাসে। শুরু হয় তার ধর্ম প্রচারাভিযান। ১৮৮৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বৃহস্পতি-বৃহস্পতি দশা-অন্তর্দশাতে Parliament of Religion-এ তার সেই বিখ্যাত বক্তৃতা। বৃহস্পতি ধর্ম ও দর্শনের কারক গ্রহ; চন্দ্রের ২য়ে ( বাক স্থান ) এবং লগ্নের ১১শে ( লাভ, ইচ্ছাপূরণ ইত্যাদি ) অবস্থান। বৃহস্পতি ৫ম পতি মঙ্গলের নক্ষত্রে রয়েছে এবং মঙ্গল দ্বারা দৃষ্ট। বৃহস্পতির অবস্থান শুক্রের ক্ষেত্রে; শুক্র লগ্নের ২য়ে বুধের সঙ্গে এবং চন্দ্রের ৫মে শনির ক্ষেত্রে বর্তমান। ধর্ম বিষয়ে তার বক্তৃতা ও প্রচারের গ্রহণযোগ্যতা অবশ্যম্ভাবী। তবে শুক্রের ৬ষ্ঠ পতিত্ব দোষের জন্য তার বক্তৃতায় এক দল লোক ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে তাকে নিন্দা ও অবজ্ঞা করার চেষ্টা করে। ৬ষ্ঠে রাহুর দৃষ্টি থাকায় এবং চন্দ্রের ৯মে কেতু অবস্থিত হওয়ায় তিনি সব বাধা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন।
(১১) বৃহস্পতির দশাতে তার জয়যাত্রা অক্ষুণ্ণ
ছিল। তবে তিনি বেঁচেছিলেন মাত্র ৩৯ বছর। ১৯০২ সালের ৪ঠা জুলাই বৃহস্পতি-শুক্রের
দশা-অন্তর্দশায় তার জীবনাবসান হয়। ইচ্ছামৃত্যুর কোন যোগ জ্যোতিষ শাস্ত্রে আছে কি
না জানা নেই। তবে ৮ম স্থান থেকে মৃত্যু বিচার করা হয় এবং শনি হল আয়ুষ্কারক ( পক্ষান্তরে
মৃত্যুর ) গ্রহ। এখানে ৮ম পতি চন্দ্র আবার ইচ্ছা ও মনের কারক গ্রহ। শনি চন্দ্রের
সঙ্গে চন্দ্রের নক্ষত্রে ১০মে (house of action) অবস্থিত। আবার চন্দ্র লগ্ন থেকে
৮ম পতি মঙ্গল ৮মে থেকে ৪র্থ পতি ( মন ) বৃহস্পতিকে দৃষ্টি দিচ্ছে, বৃহস্পতির অবস্থান
লগ্নের ১১শে। এর থেকে কি কিছু বোধগম্য হয় ?
যাই হোক, স্মামীজীর মৃত্যু হয় বৃহস্পতি-শুক্রের দশা-অন্তর্দশায় । বৃহস্পতি চন্দ্র
লগ্ন থেকে ৭মের ( মারক স্থান ) এবং শুক্র ২য়ের ( অপর একটি মারক স্থান ) অধিপতি।
বৃহস্পতি চন্দ্রের ২য়ে এবং শুক্র লগ্নের ২য়ে অবস্থিত। মৃত্যু যোগ স্পষ্ট। তবে একটা
প্রশ্ন উঠতে পারে। মৃত্যু যদি কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ঠিক হয়েই থাকে তবে ইচ্ছা মৃত্যুর
প্রশ্ন আসে কি করে ? এ ধরণের কার্য-কারণ সম্পর্কের গভীরতা ও ব্যাপ্তি এতটাই সুদূর
প্রসারী যে কোন খণ্ডিত নিয়ম বা অনুমানের উপর ভিত্তি করে এটাকে গণ্ডিবদ্ধ করে বুদ্ধির
সীমায় নিয়ে আসর চেষ্টা বাতুলতা মাত্র। তবে "ইচ্ছা মৃত্যুর" অন্য ব্যাখ্যাও
করা যায়। স্বামীজী তার নিজের মৃত্যুর সময় আগেই অবগত ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি এর
ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা বর্তমান ধারাবাহিক রচনার ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক
নয়।
বিঃ দ্রঃ : কিছু জ্যোতিষী মনে করেন স্বামীজীর যে মানসিক বৈশিষ্ট্য ও কর্মকাণ্ড সেটা ধনু লগ্ন ধরে ঠিক ব্যাখ্যা করা যায় না; তাদের মতে স্বামীজীর লগ্ন হবে মকর। কিন্তু জন্ম সময় যেটা ধরা হয়েছে, সেটা নির্ভুল বলেই মনে হয় এবং তা হলে লগ্ন ধনুই হবে মকর নয়।
জন্ম
বিবরণ :
১৮৬১ খৃষ্টাব্দ, ৭ই মে; সময় : রাত্রি ২ - ৫১ মিঃ ; স্থান : কোলকাতা, ভারতবর্ষ;
অক্ষাংশ ২২ ডিঃ ৪০ মিঃ উত্তর; দ্রাঘিমাংশ ৮৮ ডিঃ ৩০ মিঃ পূর্ব। লাহিড়ী অয়নাংশ।
ভোগ্য দশা (balance of dasha) : বুধ ১২ বছর ১ মাস ২৮ দিন।
জীবনের কিছু ঘটনা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ খৃষ্টাব্দের ৭ই মে মঙ্গলবার কলকাতায় ৬নং দ্বারকানাথ ঠাকুর লেনে জোড়াসাঁকোর এক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্ম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মা সারদা দেবীর তিনি ছিলেন চতুর্দশ সন্তান। ঠাকুরদা দ্বারকানাথ ঠাকুর ছিলেন ধনী জমিদার ও সমাজ সংস্কারক। রবীন্দ্রনাথ প্রথমে Oriental Seminary School-এ ভর্তি হন, কিন্তু গতানুগতিক ধারায় শিক্ষা লাভের পদ্ধতি তাকে আকৃষ্ট করতে পারে নি। বিদ্যালয় ছেড়ে তিনি বাড়িতেই শিক্ষকদের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানার্জনে ব্রতী হন। পরে তিনি Normal School, Bengal Academy এবং St Xaviers School-এ প্রবেশ করলেও বেশীদিন তা স্থায়ী হয় নি।
১৩ বছর বয়সে তত্ববোধিনী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ছদ্মনামে। ১৪ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের মাতৃবিয়োগ হয়। মৃত্যুর সঙ্গে চিরতরে বিচ্ছেদের বেদনাময় দিকটি যে জড়িত সেটা তখনও রবীন্দ্রনাথের অজানা। তার হঠাৎ মনে হল, মা আর কোনদিন ফিরে এসে তার আসনে বসবেন না। সমস্ত জীবন ধরে মৃত্যু মিছিল যেন তাকে তাড়া করে ফিরেছে; কিন্তু তিনি ছিলেন স্থৈর্যের প্রতিমূর্তি। আঘাত পেয়েছেন কিন্তু অসামান্য দার্শনিকতার সঙ্গে মৃত্যুকে গ্রহণ করেছেন।
১৮৮৩ সালের ডিসেম্বর মাসে যশোর নিবাসী বেণীমাধব রায়চৌধুরীর কন্যা ভবতারিনী দেবীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বিবাহ হয়। ভবতারিনী নামটিতে একটু প্রাচীনত্বের ছোঁয়া থাকায় বড়দা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রস্তাবনায় স্ত্রীর নাম হয় মৃণালিনী দেবী। দিদি সৌদামিনী দেবীর স্বামী সারদাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথের বিয়ের দিনই পরলোক গমন করেন। রবীন্দ্রনাথ ও মৃণালিনী দেবীর তিন কন্যা ও দুই পুত্র জন্মগ্রহণ করে। বড় মেয়ে মাধুরীলতার ( বেলা ) জন্ম ১৮৮৬ সালে। ১৮৮৮ সালে রথীন্দ্রনাথ ( রথী ), ১৯৮১ সালে রেণুকা দেবী ( রাণী ), ১৮৯৪ সালে মীরাদেবী ( অতসী )এবং ১৮৯৬ সালে ছোট ছেলে শমীন্দ্রনাথ ( শমী ) জন্মগ্রহণ করে।
রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সৃষ্টি কোন নির্দিষ্ট কালের মধ্যে সীমবদ্ধ নয় । ছোট বয়স থেকে শুরু করে মৃত্যুর কয়েক দিন আগে পর্যন্ত তিনি লিখেছেন। তার প্রথম কবিতার বই 'কবি কাহিনী' প্রকাশিত হয় ১৮৭৮ খৃষ্টাব্দে ১৭ বছর বয়সে। ঐ বছরেই তিনি দাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ইংল্যাণ্ডে যান এবং সেখানে University College-এ ভর্তি হন। তিনি একবার আইন নিয়ে পড়ার চেষ্টা করেন কিন্তু সেটা বেশীদূর এগোয় নি।
রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর মৃত্যু হয় ১৯০২ সালের ২৩শে নভেম্বর মাত্র ২৯ বছর বয়সে । তার মৃত্যুর কারণ ঠিক জানা যায় নি ; অনেকের সন্দেহ তিনি এপেণ্ডিসাইটিসে ভুগছিলেন । যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে দ্বিতীয় কন্যা রেনুকা দেবীর ( রাণী ) মৃত্যু হয় ১৯০৩ সালে । ১৯০৫ সালে পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ১৯০৭ সালে অত্যন্ত আদরের ছোট ছেলে শমীন্দ্রনাথ ( শমী ) পরলোক গমন করেন। রবীন্দ্রনাথের স্থৈর্যের অসাধারণ পরিচয় পাওয়া যায় শমীর মৃত্যুর প্রসঙ্গে যখন ছোট মেয়ে মীরাকে তিনি লেখেন " শমী যে রাত্রে গেল তার পরের রাত্রে রেলে আসতে আসতে দেখলুম জ্যোৎস্নায় আকাশ ভেসে যাচ্ছে, কিছু কম পড়েছে তার লক্ষণ নেই। মন বললে কম পড়েনি - সমস্তর মধ্যেই সব রয়ে গেছে, আমিও তারই মধ্যে ....... "।
১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ ২য় বারের জন্য ইউরোপ
যাত্রা করেন। যাত্রা পথেই তিনি গীতাঞ্জলীর বেশ কিছু কবিতা ইংরাজিতে অনুবাদ করেন।
লণ্ডনে তিনি বিখ্যাত চিত্রশিল্পী Rothenstein-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। Rothenstein
রবীন্দ্রনাথের অনুবাদ করা কবিতা পড়ে মুগ্ধ হন এবং তিনি বিখ্যাত কবি Yeats এবং অন্যান্যদের
রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়তে বলেন। Rothesntein তার নিজের বাস ভবনে Yeats, Ezra Pound
প্রভৃতি বিখ্যাত কবি ও বিদগ্ধ জনদের আমন্ত্রণ করে রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়ে শোনানোর
ব্যবস্থা করেন। রবীন্দ্রনাথ ইউরোপ থেকে আমেরিকায় পাড়ি দেন। ইতিমধ্যে India Society
of London রবীন্দ্রনাথের ১০৩ টি অনুবাদ করা কবিতা নিয়ে একটি পুস্তক প্রকাশ করেন।
বইটির ভূমিকা লিখেছিলেন Yeats এবং প্রচ্ছদ চিত্র অঙ্কন করেন Rothenstein. ১৯১৩
সালের ১৩ই নভেম্বর ভারতবাসী রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্তির কথা জানতে
পারে।
১৯১৬ সালে রবীন্দ্রনাথ জাপান যাত্রা করেন। পথে রেঙুন, সিঙ্গাপুর, হংকং ইত্যাদি
স্থানে আমন্ত্রিত বক্তৃতা দান করেন। আমেরিকার বিভিন্ন সংস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
থেকে তাঁর আমন্ত্রণ আসতে শুরু করে।
১৯১৫ সালে তিনি Knighthood পান। বড় মেয়ে মাধুরিলতার (বেলা) যক্ষা রোগে মৃত্যু হয় ১৯১৮ সালে। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগের পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে Knighthood ত্যাগ করেন। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহ থেকে ফিরে এসে শান্তিনিকেতনে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের মেল বন্ধন ঘটাতে এবং প্রকৃতির কোলে মুক্ত পরিবেশে শিক্ষা দানের উদ্দেশ্যে একটি বিদ্যালয় গড়ে তোলেন। ১৯২১ সালে সেটাই বিশ্বভারতীর রূপ নেয়। নোবেল পুরষ্কারের এবং পুস্তক বিক্রির টাকা সবটাই তিনি বিশ্বভারতী গড়ে তুলতে কাজে লাগান। ১৯৪০ সালে Oxford University শান্তিনিকেতনে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রবীন্দ্রনাথকে Doctor of Literature উপাধি প্রদান করে। মৃত্যুর কিছু আগে রবীন্দ্রনাথকে শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। তাঁর শরীরে অস্ত্রপ্রচার করা হয় কিন্তু তাঁকে বাঁচান যায় নি।
পরমহংস যোগানন্দের 'যোগীকথামৃত' গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথকে
ভারতের 'ঋষি কবি' নামে উল্লেখ করা হয়েছে। বাস্তবিকিই তিনি সংসারের সবার মধ্যে থেকেও
যেন নিরলস ও নিরাসক্ত ভাবে কর্তব্য করে গেছেন। বহু আঘাতে, বাধা বিপত্তিতে এবং একের
পর এক শোকে তিনি ছিলেন ভগবদ্গীতার 'দুঃখেষু অনুদ্বিগ্নমনাঃ', স্থিতধী। শুধু উপনিষদ
পাঠে এটা হয় না; উপনিষদের চিন্তাধারা ও ভাবাদর্শ তাঁর ছিল জন্মগত ভাবেই আত্মস্থ।
উত্তারাধিকার সূত্রেই যেন তিনি এটা লাভ করেছিলেন। বহু রবীন্দ্রসঙ্গীতের এটাই মূল
সুর। এর ভাবের গভীরতা, কথা ও সুরের একাত্মতা এবং আত্মনিবেদনের নতি তাই শ্রোতার
মনে অসীমের স্পর্শ বয়ে আনে। এ প্রসঙ্গে ১৮৭৫ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের
মাতৃবিয়োগের সময়ে একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে।
“ প্রভাতে উঠিয়া যখন মার মৃত্যু সংবাদ শুনিলাম তখনো সে-কথাটার অর্থ সম্পূর্ণ গ্রহণ
করিতে পারিলাম না। বাহিরের বারান্দায় আসিয়া দেখিলাম, তাঁহার সুসজ্জিত দেহ প্রাঙ্গণে
খাটের উপর শয়ান। কিন্তু, মৃত্যু যে ভয়ঙ্কর সে-দেহে তার কোনো প্রমাণ ছিল না; সেদিন
প্রভাতের আলোকে মৃত্যুর যে-রূপ দেখিলাম তাহা সুখসুপ্তির মতোই প্রশান্ত ও মনোহর।
জীবন হইতে জীবনান্তের বিচ্ছেদ স্পষ্ট করিয়া চোখে পড়িল না। কেবল যখন তাঁহার দেহ
বহন করিয়া বাড়ির সদর-দরজার বাহিরে লইয়া গেল এবং আমরা তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ শ্মশানে
চলিলাম তখনই শোকের সমস্ত ঝড় যেন একেবারে এক দমকায় আসিয়া মনের ভিতরটাতে এই একটা
হাহাকার তুলিয়া দিল যে, এই বাড়ির দরজা দিয়া মা আর-একদিনও তাঁহার নিজের এই চিরজীবনের
ঘরকরনার মধ্যে আপনার আসনটিতে আসিয়া বসিবেন না। বেলা হইল, শ্মশান হইতে ফিরিয়া আসিলাম;
গলির মোড়ে আসিয়া তেতালায় পিতার ঘরের দিকে চাহিয়া দেখিলাম - তিনি তখনও তাঁহার ঘরের
সম্মুখের বারান্দায় স্তব্ধ হইয়া উপাসনায় বসিয়া আছেন।”
অধুনালুপ্ত প্রবাসী পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ । ১৯১৭ সাল থেকে ১৯১৯ সালের মধ্যে অনেকটা সময় তিনি শান্তিনিকেতনে কাটান । এ সময়ের কথায় তিনি প্রবাসী পত্রিকার ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ভাদ্র সংখ্যায় লিখেছেন ,-"প্রায় ২৩ বৎসর পূর্ব্বে আমি শান্তিনিকেতনে অনেক সময় থাকতাম - তাঁর বাড়ির সামনেই একটা বাড়িতে থাকতাম মধ্যখানে ছিল একটা মাঠ । তিনি তখন এমন পরিশ্রমী ছিলেন যে একদিনও রাত্রে তাঁর লিখবার পড়বার ঘরের আলো আমরা শুতে যাবার আগে নিবতে দেখিনি । প্রত্যুষে বেড়াতে গিয়ে দেখেছি হয় তিনি বারান্দায় উপাসনায় বসেছেন নতুবা উপাসনা সেরে লেখা বা পড়ার কাজে গেছেন । সেকালে দুপুরে খাবার পরও তাঁকে কখনও শুতে বা হেলান দিতে দেখিনি ; গ্রীষ্মে কাউকে তাঁকে পাখার বাতাস দিতে বা তাঁকে নিজে হাতপাখা চালাতে দেখিনি । তখন শান্তিনিকেতনে বৈদ্যুতিক আলো বা পাখা ছিল না ।"
কুণ্ডলীর বিশ্লেষণ
(১) মীন লগ্ন, মীন রাশি। লগ্নপতি ও ১০ম পতি বৃহস্পতি ৫মে কর্কটে তুঙ্গী। লগ্নপতি লগ্নকে দৃষ্টি দেওয়ায় এবং লগ্ন কোন অশুভ গ্রহের সঙ্গ বা দৃষ্টি বর্জিত হওয়ায় লগ্ন যথেষ্ট শক্তিশালী। চন্দ্র যদিও শুক্ল পক্ষের চন্দ্র নয় তা হলেও মীন রাশিতে মিত্র ক্ষেত্রে এবং স্বক্ষেত্র কর্কট রাশি থেকে ৯মে অবস্থিত হওয়ায় শুভত্ব প্রাপ্ত হয়েছে। লগ্ন পতি বৃহস্পতি শক্তিশালী পাপ কর্তরী যোগে আক্রান্ত হওয়ায়, ৫ম স্থান এবং বৃহস্পতি দুইই পীড়িত। মনের কারক গ্রহ ও ৫ম পতি চন্দ্রকে এই বৃহস্পতি দৃষ্টি দেওয়ায় রবীন্দ্রনাথকে যথেষ্ট মানসিক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। চন্দ্র উত্তরভাদ্রপদ ( অধিপতি দুঃখ কারক গ্রহ শনি ) নক্ষত্রে অবস্থিত হওয়ায় এটা আরও জোরাল হয়েছে।
(২) লিখন (writing) ও বুদ্ধির কারক গ্রহ বুধ ২য়ে এবং নবাংশে মিথুন রাশিতে স্বক্ষেত্রে অবস্থিত। ২য় বাকস্থান। অনেক জ্যোতিষী ২য় স্থানকে উদ্ভাবনী শক্তির পরিচায়ক বলেও চিহ্ণিত করেছেন। রবি মেষে তুঙ্গী হয়ে বুধের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় শক্তিশালী বুধাদিত্য যোগ হয়েছে। রবি আত্মার প্রকাশক ও আত্নসম্মান, প্রতিষ্ঠা ও যশ ইত্যাদির কারক গ্রহ। শুক্র সঙ্গীত, শিল্প, চারুকলা ইত্যাদির কারক। রবি ও শুক্র উভয়েই শুক্রের ভরণী নক্ষত্রে অবস্থিত। রবি, বুধ ও শুক্রের ২য়ে অবস্থান এবং অন্য কোন অশুভ গ্রহের দ্বারা প্রভাবিত না হওয়ায় বুদ্ধি ও চারুকলার অপূর্ব প্রকাশ ঘটেছে লেখনীর মাধ্যমে। এই তিনটি গ্রহের কেন্দ্রে বৃহস্পতি অবস্থিত। রবীন্দ্রনাথের রচনা যিনিই পড়েছেন, তিনি এই সব গ্রহের কারকত্বের প্রকাশ তার রচনার মধ্যে অনুভব করতে পারবেন। ২য় বাকস্থান হওয়ায় রবীন্দ্রনাথের বক্তৃতা এবং কণ্ঠ মাধুর্য ছিল আকর্ষণীয়।
(৩) ৪র্থ স্থান থেকে গৃহ, গৃহসুখ, মাতা, বিদ্যালাভ ইত্যাদি বিবেচ্য। রবীন্দ্রনাথের কুণ্ডলীতে ৪র্থ স্থান নিঃসন্দেহে অশুভ। দুটি নৈসর্গিক অশুভ গ্রহ মঙ্গল এবং কেতু ( রাহুর দ্বারা দৃষ্ট ) অবস্থিত; ৪র্থ পতি বুধ ৬ষ্ঠ পতি রবি এবং ৩য় ও ৮ম পতি শুক্রের সঙ্গে যুক্ত। কোন শুভ গ্রহের দৃষ্টিও বুধের উপর না থাকায় ৪র্থ স্থান সম্বন্ধীয় বহু বিষয় থেকেই রবীন্দ্রনাথ বঞ্চিত। পড়াশোনা ( প্রথাগত বিদ্যা ) হয় নি, খুব অল্প বয়সেই মাতৃ বিয়োগ হয়েছে, গৃহসুখ (domestic peace) তিনি সে ভাবে কখনই পান নি এবং তিনি অধিকাংশ সময়ে গৃহের বাইরেই ছিলেন। বিদ্যার বিচার ৪র্থ না ৫ম স্থান থেকে হবে এ নিয়ে জ্যোতিষীদের মধ্যে বিতর্ক এখনও বর্তমান। রবীন্দ্রনাথের জন্মকুণ্ডলী এ বিষয়ে কিছুটা আলোকপাত করতে পারে বলে মনে হয়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথাগত ডিগ্রী লাভ ৪র্থ স্থান থেকে বিচার্য কিন্তু জ্ঞান, প্রজ্ঞা বা সূক্ষবুদ্ধির জন্য ৫ম স্থানই বিবেচ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধিধারী হলেই তিনি প্রকৃত জ্ঞানী না হতেই পারেন, এ রকম উদাহরন অজস্র রয়েছে ( সম্ভতঃ এ যুগে আরও বেশী )। প্রকৃত জ্ঞান ও শিক্ষালাভের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি অত্যাবশ্যক নয় রবীন্দ্রনাথের অসাধারণ মনীষা ও প্রজ্ঞা সেটাই প্রমাণ করে।
(৪) বৃহস্পতি জ্ঞান ও প্রজ্ঞার কারক গ্রহ। ৫ম স্থান থেকে সূক্ষবুদ্ধি, ভক্তি, উপলব্ধি ইত্যাদি বিচার্য। বৃহস্পতি লগ্ন ও ১০ম পতি হয়ে ৫ম কোণে তুঙ্গী হয়ে অবস্থানের জন্য উচ্চ আদর্শ ও সৃষ্টির প্রেরণা রবীন্দ্রনাথের সহজাত। তবে সন্তানের কারক গ্রহ বৃহস্পতি ৫মে ( সন্তান স্থানে ) অবস্থিত হওয়ায় ' কারকো ভাবনাশকঃ ' সূত্র অনুযায়ী ( অনুচ্ছেদ ১৪, ২৩ ক ) সন্তানের পক্ষে অশুভ। রবীন্দ্রনাথের ৫ জন সন্তানের ৩ জনই অল্প বয়সে মারা যান। অবশ্য ৫ম স্থান পাপকর্তরী যোগে পীড়িত হওয়াটাও এর একটা কারণ।
(৫) ৬ষ্ঠে শনির অবস্থানের জন্য তার শত্রু সৃষ্টি হয়েছে যথেষ্ট, কিন্তু তারা তার সে রকম কোনও ক্ষতি করতে পারে নি। ৬ষ্ঠ পতি এবং নৈসর্গিক অশুভ গ্রহ রবি ২য়ে ( পরিবার ) অবস্থিত বলে পারিবারিক ক্ষেত্রে রাবীন্দ্রনাথ অসুখী ছিলেন।
(৬) ১০মে ( উপচয় ) রাহুর অবস্থান শুভ। সাধারণতঃ এতা সৃষ্টিধর্মী (innovative) কোন কাজে প্রেরণা জোগায়। এখানে রাহু বৃহস্পতির ক্ষেত্রে এবং শুক্রের নক্ষত্রে অবস্থানের জন্য রাহুর দশায় রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সৃষ্টি অক্ষুণ্ণ ছিল। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ৮০ বছরের জীবনে যে কয়টি গ্রহের দশা পেয়েছিলেন সেগুলি হল বুধ, কেতু, শুক্র, রবি, চন্দ্র, মঙ্গল, রাহু এবং বৃহস্পতির শুরুটা। এদের মধ্যে কেতু বৃহস্পতির পুনর্বসু নক্ষত্রে এবং বুধের ক্ষেত্রে অবস্থিত হওয়ায় সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে কোন বাধা হয় নি এবং অন্য সব গ্রহ গুলি সাহিত্য সৃষ্টির পক্ষে স্পষ্টতই শুভ। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়। ৯ম পতি মঙ্গল ১০মে দৃষ্টি দিচ্ছে এবং ১০ম পতি বৃহস্পতির ৯মে দৃষ্টি রয়েছে। উভয় গ্রহই আবার ১১শে ( আয়, লাভ, ইচ্ছা পূরণ ইত্যাদি ) দৃষ্টি দিচ্ছে।
(৭) রবীন্দ্রনাথের কুণ্ডলীতে বুধ ও শুক্র ২য়ে এবং বৃহস্পতি ৫মে থাকার জন্য সরস্বতী যোগ হয়েছে। অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগ হল লগ্নপতি ( এবং ১০ম পতি ) বৃহস্পতির সঙ্গে ৫ম পতি চন্দ্রের ক্ষেত্র বিনিময় এবং বৃহস্পতির দৃষ্টি চন্দ্রের উপর থাকা। এটি অত্যন্ত শক্তিশালী যোগ এবং এটাই বিশ্বকবির অসামান্য সাফল্যকে বহুলাংশে সম্ভব করেছে।
(৮) ১৮৭৫ সালের ১১ই মার্চ রবীন্দ্রনাথের মাতৃবিয়োগ হয় কেতু-রবির দশা-অন্তর্দশায় | কেতু লগ্নের ৪র্থে , মাতৃস্থানে অবস্থিত | মাতৃকারক গ্রহ চন্দ্র থেকে কেতু এবং রবি ২য়ে মারক স্থানে অবস্থিত | শুক্র চন্দ্র লগ্ন থেকে ৩য় ও ৮ম পতি - দুইই অশুভ | রবি এবং শুক্র প্রায় একই ডিগ্রিতে অবস্থিত থাকায় রবির মারকত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে | নবাংশেও লগ্নের ৪র্থে রবি অবস্থিত এবং চন্দ্র থেকে রবি ৮ম পতি |
(৯) রবীন্দ্রনাথের বিয়ে হয় ১৮৮৩ সালের ৯ই ডিসেম্বর শুক্র-রবির দশা অন্তর্দশায়। ৭ম ( জায়া স্থান ) পতি বুধ ২য়ে ( পরিবার - house of family ) রবি ও শুক্রের সঙ্গে অবস্থিত। রবি ও শুক্র দুটি গ্রহই শুক্রের ( জায়া কারক ) নক্ষত্রে অবস্থিত।
(১০) রবীন্দ্রনাথের ৫ সন্তানই জন্ম গ্রহণ করে শুক্রের দশায়। শুক্র-মঙ্গল, শুক্র-রাহু, শুক্র-বৃহস্পতি, শুক্র-শনি ও শুক্র-বুধের দশা অন্তর্দশায়। রাশিচক্র থেকে শুক্রের দশায় কেন সন্তানের জন্ম হবে সেটা স্পষ্ট নয়। বস্তুতঃ কেবল রাশিচক্র থেকে সব কিছু পরিষ্কার করে বোঝা যায় না, এ জন্য বিভিন্ন বর্গ ও অন্যান্য পদ্ধতির সাহায্য নিতে হয়। তবে ৫ম স্থান থেকে সন্তান বিচার্য এবং কুণ্ডলীতে চন্দ্র ( ৫ম পতি ) ও বৃহস্পতি ( ৫মে অবস্থিত ) খুবই শক্তিশালী হওয়ায় এদের দশা অন্তর্দশায় সন্তানের জন্ম সম্ভব। অবশ্য নবাংশ থেকে কিন্তু ছবিটা অনেক পরিষ্কার। বৃহস্পতি পুত্রকারক হয়ে মঙ্গল, রাহু ও শুক্রকে দৃষ্টি দিচ্ছে । আবার রাশিচক্রের ৫ম পতি চন্দ্রের সঙ্গে নবাংশে শনির ক্ষেত্র বিনিময় সম্পর্কে আবদ্ধ। নবাংশে শুক্র তুলা রাশিতে মূলত্রিকোণে অবস্থিত হওয়ায় শক্তিশালী। অতএব উপরি উক্ত দশা অন্তর্দশায় সন্তানের জন্ম অসম্ভব নয়।
(১১) রবীন্দ্রনাথের পিতৃবিয়োগ হয় ১৯০৫ সালের ১৯শে জানুয়ারী রবি-কেতুর দশা-অন্তর্দশায়। রাশিচক্রের ৯ম ( পিতৃস্থান ) থেকে ৮মে ( নিধন স্থান ) কেতুর অবস্থান এবং ৯ম পতি মঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত। শুক্র ৯ম স্থান থেকে ৭ম ( মারক ) স্থানের অধিপতি হয়ে পিতৃকারক রবির সঙ্গে যুক্ত থাকায় রবির দশা মারক হয়েছে।
(১২) রবীন্দ্রনাথের ৫ সন্তানের অনেকেই রবীন্দ্রনাথের জীবিত কালেই মৃত্যুমুখে পতিত হয়। যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে বড় মেয়ে মাধুরিলতার মৃত্যু হয় ১৯১৮ সালের ১৬ই মে, মঙ্গল-বৃহস্পতির দশা-অন্তর্দশায়। পুত্র রথীন্দ্রনাথ প্রায় ৭৩ বছর বেঁচেছিলেন। কিন্তু রেণুকার মৃত্যু হয় মাত্র ১২ বছর বয়সে ১৯০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে , রবি-শনির দশা-অন্তর্দশায়। ছোট মেয়ে মীরা প্রায় ৭৫ বছর বেঁচেছিলেন কিন্তু রবীন্দ্রনাথের আদরের ছোট ছেলে শমীর মৃত্যু হয় মাত্র ১১ বছর বয়সে ১৯০৭ সালের ২৩ শে নভেম্বর, চন্দ্র-মঙ্গলের দশা-অন্তর্দশায়। শুধু বড় মেয়ে মাধুরীলতার মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে বাকীটা পাঠকের উপর ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। মাধুরীলতার মৃত্যু মঙ্গল-বৃহস্পতিতে। লগ্নের ৫ম স্থান কর্কট রাশি, এই রাশির ক্ষেত্রে মঙ্গল রাজযোগকারী গ্রহ। তা হলে মঙ্গল কি করে মৃত্যুর কারণ হয় ? তবে এখানে মঙ্গল ৫ম স্থানের ১২শে ( ব্যয়, ক্ষতি ) কেতুর সঙ্গে একই রাশিতে যুক্ত। ৫মে বৃহস্পতি শক্তিশালী পাপ কর্তরী যোগে আক্রান্ত। অতএব বৃহস্পতি পরোক্ষে মারক হয়েছে। বৃহস্পতি রবীন্দ্রনাথকে যেমন সৃষ্টির প্রেরণা দিয়েছে ঠিক একই সঙ্গে বহু দুঃখ ও কষ্টের কারণ হয়েছে।
(১৩) ১৮৭৮ সালের অক্টোবর মাসে কেতু-শনির দশা-অন্তর্দশায় রবীন্দ্রনাথ ইংল্যাণ্ড যাত্রা করেন। বিদেশ যাত্রা কোন স্থান থেকে বিচার্য সেটা নিয়ে জ্যোতিষীদের মধ্যে মত পার্থক্য দেখা যায়। তবে ৭ম, ৯ম ও ১২শ স্থান দূর ভ্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে বেশীর ভাগ জ্যোতিষীর মত। কেতু বুধের ক্ষেত্রে অবস্থিত বলে বুধের ফল দেবে , বুধ ৭ম পতি। কেতু বৃহস্পতির নক্ষত্রে অবস্থিত বৃহস্পতি লগ্ন ও রাশিপতি এবং মীন রাশির ( জল রাশি ) অধিপতি। রবীন্দ্রনাথের সময়ে বিদেশ যাত্রার সঙ্গে জল রাশির সম্পর্ক থাকাটা স্বাভাবিক। শনি কেতুর নক্ষত্রে অবস্থিত এবং ১২শ স্থানের অধিপতি।
(১৪) ১৯১৩ সালের ১৪ই নভেম্বর ভারতবাসী জানতে পারে যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। তখন রবীন্দ্রনাথের শনি-কেতুর দশা-অন্তর্দশা। আগেই বলা হয়েছে কেতু বুধের ক্ষেত্রে এবং বৃহস্পতির নক্ষত্রে মূলতঃ বুধ ও বৃহস্পতির ফল দেবে। বৃহস্পতি লগ্নপতি ও ১০ম পতি হয়ে তুঙ্গী ও বুধের নক্ষত্রে অবস্থিত এবং ১১শে ( আয়, লাভ, ইচ্ছা পূরণ ইত্যাদি ) দৃষ্টি রয়েছে। ১১শ পতি শনি কেতুর নক্ষত্রে থাকার জন্য শনি-কেতু সম্মিলিত ভাবে এই ফল দিয়েছে।
(১৫) রবীন্দ্রনাথের নিজের মৃত্যু হয় ১৯৪১ খৃষ্টাব্দের ৭ই আগষ্ট বৃহস্পতি-বৃহস্পতির দশা-অন্তর্দশায়। বৃহস্পতি লগ্ন ও রাশি পতি তুঙ্গী হয়ে ৫ম কোণে অবস্থিত হওয়ায় এবং ৫ম পতি চন্দ্রের সঙ্গে ক্ষেত্র বিনিময় হওয়ায় যথেষ্ট শুভ। লগ্নপতি বৃহস্পতি লগ্নকেও দৃষ্টি দিচ্ছে। এই বৃহস্পতির দশা-অন্তর্দশায় মৃত্যু হওয়া একটু অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। বুধ ৭ম-এর ( মারক স্থান ) অধিপতি হয়ে ২য়ে ( মারক স্থান ) অবস্থানের জন্য শক্তিশালী মারক হিসাবে পরিণত হয়েছে। বৃহস্পতি বুধের অশ্লেষা নক্ষত্রে অবস্থানের জন্যও মারকত্ব লাভ করেছে। নবাংশেও বৃহস্পতি লগ্নের ৭মে ( মারক স্থান ) এবং চন্দ্র থেকে ২য়ে ( অপর একটি মারক স্থান ) অবস্থিত। এ ছাড়াও বৃহস্পতি শক্তিশালী পাপকর্তরী যোগে আক্রান্ত। এ জন্যই বৃহস্পতির দশা-অন্তর্দশা রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু ডেকে এনেছে। ৬ষ্ঠ ( রোগ স্থান ) পতি রবি ৮ম ( প্রস্ট্রেট গ্ল্যাণ্ড ) পতি শুক্রের সঙ্গে প্রায় একই ডিগ্রীতে অবস্থিত হওয়ায় এবং ১২শ পতি শনি ৬ষ্ঠে অবস্থিত হয়ে ৮মে দৃষ্টি দেওয়ায় তিনি প্রস্ট্রেট গ্ল্যাণ্ড সংক্রান্ত জটিলতার জন্য মৃত্যু মুখে পতিত হন।
(১৬) রবীন্দ্রনাথের অসামান্য সাফল্য ও তাঁর
বহুমুখী প্রতিভা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সরস্বতী যোগ, বুধাদিত্য যোগ এবং লগ্ন ও ১০ম
পতি বৃহস্পতির সঙ্গে ৫ম পতি চন্দ্রের ক্ষেত্র বিনিময় - মূলতঃ এই কারণ গুলিকেই তুলে
ধরতে হয়। বুধাদিত্য যোগ এ ক্ষেত্রে খুব শক্তিশালী হলেও এই যোগ এবং সরস্বতী যোগ
খুব বিরল নয়। তুঙ্গী লগ্নপতি ও ১০ম পতির সঙ্গে ৫ম পতি চন্দ্রের ক্ষেত্র বিনিময়
সেই সঙ্গে বৃহস্পতির লগ্ন ও চন্দ্রকে দৃষ্টি দেওয়া অবশ্যই একটি অতি শক্তিশালী যোগ।
এ সত্বেও শুধু এই কয়টি গ্রহের অবস্থান ও যোগ রবীন্দ্রনাথের মত অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন
ও উচ্চ মানসিকতার অধিকারী কোন মহাপুরুষের সমস্ত জীবনের সৃষ্টিকে ব্যাখ্যা করার
জন্য যেন যথেষ্ট নয়।
এ সব ছাড়াও একটি বিষয় লক্ষণীয়। ২য় ও ৯ম পতি মঙ্গল রাশি, দ্রেক্কোণ, চতুর্থাংশ,
সপ্তাংশ, দশাংশ ও দ্বাদশাংশ বর্গ বিভাগের এই ছয় ক্ষেত্রে ( অনুচ্ছেদ ৬ ) মিথুন
রাশিতে বুধের ক্ষেত্রে অবস্থিত। এই ক্ষেত্রবলের জন্য ২য় ও ৯ম পতি মঙ্গল যথেষ্ট
জোরাল হয়েছে এবং বুধের ( লিখন, বুদ্ধি ও প্রকাশনার কারক গ্রহ ) বৈশিষ্ট্য প্রকাশের
ক্ষেত্রে অনেক বেশী সহায়ক হয়েছে। মঙ্গলের এই বর্গবলের জন্য ২য় স্থানে মঙ্গলের ক্ষেত্রে
অবস্থিত তিনটি গ্রহই অনেক শক্তিশালী হয়েছে এবং ৯ম স্থানের কারকত্ব অনেক সুপ্সষ্ট
ভাবে প্রকাশ করেছে। তবে নবাংশ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বর্গ ; নবাংশতেও মঙ্গল
মিথুন রাশিতে থাকলে এটা আরও শক্তিশালী হত এতে কোনও সন্দেহ নেই । মঙ্গল রাশিচক্রেও
স্বনক্ষত্রে ( মৃগশিরা ) অবস্থিত। এই সূক্ষ বর্গ বিভাগ না করলে শুধু রাশিচক্রে
মঙ্গলের এই বৈশিষ্ট্য কিন্তু চোখে পড়ে না। মঙ্গল ও তুঙ্গী রবি রবীন্দ্রনাথকে অসাধারণ
কর্মক্ষমতা ও সৃজনী শক্তি দিয়েছে। তিনি মঙ্গলের কর্মক্ষমতা পেয়েছেন কিন্তু উগ্রতা
পান নি। মঙ্গল ৯ম পতি ( ভাগ্য, ধর্ম ইত্যাদি ) ও বর্গবলে বলী হওয়াতে মঙ্গলের ধনাত্মক
দিকটির প্রকাশ ঘটেছে বিশেষ ভাবে। রবীন্দ্রনাথ সংসারে সবার মধ্যে থেকেই কাজ করে
গেছেন কিন্তু তাঁর চিন্তা ও কাজের মধ্যে একটা আদর্শ বোধ ও ধর্মভাব প্রচ্ছন্ন ছিল।
তার ধর্মবোধ তাঁকে সংসার ত্যাগে উৎসাহিত করে নি ( শনির আনুকূল্য ছাড়া এটা হয় না
) , সংসারে বহু কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণ করেও তিনি সবার থেকে আলাদা ছিলেন।
স্বামী বিবেকানন্দের জন্মকুণ্ডলীতে মঙ্গল ৫মে মেষ রাশিতে মূলত্রিকোণে অবস্থিত এবং
রবি, বুধ ও শুক্র রবীন্দ্রনাথের মতই লগ্নের ২য়ে যুক্ত। বিবেকানন্দ মাত্র ১৬ বছরের
কর্মজীবনে যা কাজ করে গিয়েছেন তা আমাদের বিস্ময়ের উদ্রেক করে; তাঁর কবিত্ব শক্তিও
সুবিদিত। রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দের কুণ্ডলী দুটি বিশ্লেষণ করলে কতগুলি লক্ষণীয়
বিষয় চোখে পড়ে। দু জনেরই মঙ্গল শক্তিশালী। রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে মঙ্গল প্রচ্ছন্ন
ভাবে তাঁর লেখনীকে গতিময় রেখেছে, নিরলস ভাবে সৃষ্টির ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখতে
সহায়ক হয়েছে। বিবেকানন্দের মঙ্গল স্বয়ং ৫ম পতি ৫মে মেষ রাশিতে মূলত্রোকোণে অবস্থিত।
এখানে মঙ্গল অত্যন্ত কর্মচঞ্চল, মাঝে মাঝে ধৈর্যহীন; সীমিত সময়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে
পৌঁছোনর মানসিকতায় সে দৃঢ়। একই গ্রহ স্ব-বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেও বিভিন্ন জনের ক্ষেত্রে
অবস্থানের তারতম্য অনুসারে প্রকাশময়তায় বিভিন্ন।
জন্ম
বিবরণ : তারিখ ২১ শে এপ্রিল, ১৯৭৩ ; সময় : বিকাল ৬ - ০১ মিঃ। স্থান : মুম্বই (
মহারাষ্ট্র ) , ভারতবর্ষ। অক্ষাংশ : ১৮ ডিঃ ৫৮ মিঃ উত্তর; দ্রাঘিমাংশ : ৭২ ডিঃ
৫০ মিঃ পূর্ব। লাহিড়ী অয়নাংশ। ভোগ্য দশা ( balance of dasha ) : বুধ : ১০ বছর ৮
মাস ১২ দিন।
[ শচীনের জন্ম তারিখ ও সময় নিয়ে মতভেদ আছে। অনেকেই তার জন্ম তারিখ ২৪ শে এপ্রিল ধরেছেন। এটার একটা কারণও আছে, শচীনের জন্মদিনের অনুষ্ঠান পারিবারিক ভাবে ২৪ তারিখেই উদযাপিত হয়। কিন্তু প্রখ্যাত জ্যোতিষী কে. এন. রাও নিম্নলিখিত ঘটনাটি জানিয়েছেন।
শচীনের খুব অল্প বয়সে তার পিতা শচীন এবং বড় ছেলে অজিতকে সঙ্গে নিয়ে যোগী S. E. Karve -এর সঙ্গে দেখা করেন এবং প্রশ্ন করেন অজিত ক্রিকেটে সুনাম অর্জন করবে কি না। অজিত তখন পুরো দমে ক্রিকেট খেলছে। কিন্তু যোগী কার্ভে শচীনকে দেখিয়ে বলেন অজিত নয়, শচীনই ক্রিকেটে বিশ্বখ্যাত হবে। যোগী কার্ভের মেয়ে Pinky Karve -এর ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা ছিল কোন ব্যক্তির সঠিক জন্ম সময় নির্ধারণ করার। তারই প্রদত্ত জন্ম তারিখ ও সময় এখানে ব্যবহার করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে যে অনেক সময়েই দেখা গিয়েছে যে কোন খ্যাতনামা ব্যক্তির ( বিশেষতঃ রাজনৈতিক নেতাদের ) পরিবার থেকেই সঠিক জন্ম সময় সঙ্গত কারণেই সব জ্যোতিষীকে দেওয়া হয় না। শোনা যায় এই জন্ম সময়টিই শচীনের বাবা-মার কাছে ছিল। ]
জীবনের কিছু ঘটনা :
শচীনের খেলোয়াড় জীবনের কৃতিত্বের সম্পূর্ণ তালিকা তুলে ধরা এখানে উদ্দেশ্য নয় ।
বর্তমান প্রসঙ্গে যেটুকু দরকার শুধু সেটুকুই তুলে ধরা হয়েছে ।
মা রজনী বিমা কোম্পানিতে কাজ করতেন এবং বাবা রমেশ তেণ্ডুলকর ছিলেন মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ের
মারাঠি সাহিত্যের অধ্যাপক। অত্যন্ত প্রিয় সঙ্গীত পরিচালক শচীন দেব বর্মনের নামানুসারে
বাবা ছেলের নাম রাখেন শচীন, একদিন ছেলে বিখ্যাত গায়ক হবে এই সুপ্ত ইচ্ছায়। দাদা
অজিত ক্রিকেট খেলতে শচীনকে উৎসাহ দিত। শচীনের ছোট ভাই নীতিন ও বোন সবিতা।
ছোট বয়স থেকেই শচীন রোজ কয়েক ঘণ্টা ধরে net
practice করতেন। শচীনের ১৫ বছর বয়সে বিখ্যাত ক্রিকেট খেলোয়াড় সুনীল গাভাস্কর তাকে
এক জোড়া light pad উপহার দেন। কে জানতো শচীন এক দিন গাভাস্করের ৩৪ টি সেঞ্চুরীর
রেকর্ড ভঙ্গ করবেন। ১৯৮৮ সালে যখন তার বয়স ১৬ বছরেরও কম, তখন তিনি গুজরাটের বিরুদ্ধে
বম্বে দলে খেলতে নেমে আউট না হয়ে শত রান করেন। Deodhar ও Duleep ট্রফিতে প্রথম
আবির্ভাবেই শত রান ছিনিয়ে নেন। সেই সীজ্নে তিনিই মুম্বইতে সব চেয়ে বেশী রান সংগ্রহ
করেন। প্রথমে খেলতে নেমেই Irani ও Ranji ট্রফিতে শত রানে অপরাজিত থাকেন। তার প্রতিশ্রুতিপূর্ণ
দক্ষতা দেখে তাকে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৯৮৯ সালে করাচীতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে
টেস্ট ম্যাচে খেলার জন্য মনোনীত করা হয়। কিন্তু এই খেলায় pace bowler ইউনুসের বলে
খেলতে গিয়ে শরীরে আঘাত পান এবং মাত্র ১৫ রান তুলতে পারেন। শিয়ালকোটের টেস্ট ম্যাচ
খেলার সময় তিনি নাকে আঘাত পান এবং রক্তক্ষরণ হয় কিন্তু তিনি খেলা ছেড়ে যান নি।
শচীনের দীর্ঘ খেলোয়াড় জীবনের মধ্যে অনেক বার তাকে শারীরিক আঘাত পেতে হয়েছে। এর
পর ১৯৯০ সালে ইংল্যাণ্ডে Old Stafford-এ খেলতে গিয়ে শত রান করেন এবং তার শৃঙ্খলা
বোধ ও বল মারার ভঙ্গী খেলোয়াড়দের প্রশংসা অর্জন করে।
১৯৯১ - ৯২ সালে ১৮ বছর বয়সে সিডনীতে অষ্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলায় শচীন ১৪৮ রানে
অপরাজিত থাকেন এবং পার্থ-এ আবার শতরান করেন। খেলোয়াড় হিসাবে শচীনের সব চেয়ে কৃতিত্বপূর্ণ
সময় ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল। ১৯৯৬ সালের world cup-এ তিনি দুই শত রান করেন। ১৯৯৮ সালে
অস্ট্রেলিয়ার টিম খেলতে ভারতে এলে শচীন পর পর তিনটি সেঞ্চুরী করেন। সে বছরেই অষ্ট্রেলিয়া
যখন ৩১ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে ২০৩ রান করে মোট ৩২০ রানের পর জেতার স্বপ্ন দেখছে;
সেই সময়ে শচীন বল করতে নেমে ১০ ওভারে ৩২ রানের পরিবর্তে Michael Bevan, Steve Waugh,
Danen Lehmann, Tom Moody এবং Damien Martyn-কে পর পর পরাজিত করে খেলার মোড় ভারতের
পক্ষে ফিরিয়ে আনেন।
১৯৯৫ সালে শচীন গুজরাটের শিল্পপতি আনন্দ মেহেতার মেয়ে অঞ্জলিকে বিয়ে করেন। সারা
ও অর্জুন তাদের দুই সন্তান।
১৯৯৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ICC কোয়ার্টার ফাইনালে ১২৮ বলে ১৪১ রান তুলে এবং অস্ট্রেলিয়ার
৪টি উইকেট ফেলে দিয়ে সেমি ফাইনালে ভারতের প্রবেশ সুনিশ্চিত করেন।
১৯৯৯ সালে চীপকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলায় শচীন শত রান করা সত্বেও ভারতকে হার
স্বীকার করতে হয়। সে বছরেই world cup-এ খেলার সময়ে শচীনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত
হয়ে মারা যান এবং শেষকৃত্যে যোগদান করতে শচীনকে ভারতে চলে আসতে হয়। কিন্তু ফিরে
এসে ব্রিস্টলে কেনিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে নেমে ১০১ বলে অপরাজিত ১৪০ রান করেন এবং এই
সেঞ্চুরীটি বাবার নামে উৎসর্গ করেন।
Captain হিসাবেও শচীন দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
২০০০ সালে তিনি captaincy ছেড়ে দিলে সৌরভ গাঙ্গুলী captain হিসাবে মনোনীত হন। ২০০৭
সালে BCCI প্রেসিডেন্ট শারদ পাওয়ার তাকে আবার দলকে নেতৃত্ব দেবার অনুরোধ করলে শচীন
মহেন্দ্র সিং ধোনির নাম প্রস্তাব করেন।
২০১১ সালের ফেব্রুয়ারীতে অনুষ্ঠিত world cup-এ শচীনের খেলার মান নিশ্চয়ই খারাপ
নয় তবে তার কাছে দর্শকদের প্রত্যাশা অনেক বেশী। তিনি এই খেলায় দ্বিতীয় বৃহত্তম
রান করেন - ৯টি ম্যাচে ৫২ টি ৪ এবং ৮ টি ছয় মেরে মোট ৪৮২ রান। কিন্তু দুর্ভাগ্যের
বিষয় তিনি সেমি ফাইনালে ৮৫ রানে আউট হন। সেঞ্চুরী করতে পারলে তিনি ১০০ টি শত রান
করতে পারতেন এবং ১০৩ রান করলে এই world cup-এ সব চেয়ে বেশী রানের কৃতিত্ব অর্জন
করতে পারতেন। ফাইনালে তার খেলা খুব উল্লেখযোগ্য নয় তবে world cup-এর ইতিহাসে তিনিই
প্রথম ২০০০ রানের অধিকারী হন। এ ছাড়া শচীনের কৃতিত্বের মধ্যে রয়েছে , একদিনের আন্তর্জাতিক
খেলায় (ODI) প্রথম ২০০ রানের অধিকারী হওয়া , টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ১৫০০০ রান তোলা
, সর্বাধিক সংখ্যক ম্যাচ খেলা , ২০১১ সালে IPL-এ ৬৬ বলে ১০০ রানে অপরাজিত থাকা
ইত্যাদি ।
খেলাধুলা সম্বন্ধে আমার জ্ঞান সীমিত । যদিও শচীনের খেলোয়াড় জীবনের সম্পূর্ণ তথ্য তুলে ধরা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়, তা হলেও পরিবেশিত তথ্যে যদি কোন ভুল থাকে তবে কোন পাঠক সেটা জানালে অবশ্যই সংশোধনের ব্যবস্থা করা হবে ।
ক্রিকেটে চোখ ধাঁধানো সাফল্যের পাশে জনকল্যাণ মূলক কাজে শচীনের প্রয়াস অনায়াসেই সবার অজানা থেকে যায়। মুম্বইতে NGO-এর ( শচীনের শাশুড়ি এর সঙ্গে যুক্ত ) সাহায্যে প্রতি বছর শচীন ২০০ জন গরীব ছাত্র ছাত্রীর ভার গ্রহণ করে থাকেন। টুইটারে শচীনের একটি আবেদনের ভিত্তিতে ১ কোটিরও বেশী টাকা সংগৃহীত হয় ; এটা তিনি ক্যান্সার রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যয় করেন।
কুণ্ডলীর বিশ্লেষণ
(১) শচীনের কুণ্ডলীটি পরীক্ষা করলে কতগুলি
বিভ্রান্তিকর গ্রহ অবস্থানের বিষয় চোখে পড়ে। সেগুলি হল -
(ক) লগ্নপতি ও ১০ম পতি বুধ নীচস্থ ( যদিও কেন্দ্রে অবস্থিত )। এক্ষেত্রে কুণ্ডলীটি
দুর্বল হয়ে যাবার কথা।
(খ) ১১শ পতি চন্দ্র নীচস্থ। লাভপতি ও আয়পতি নীচস্থ হলে জাতকের আয় বা অন্য যে কোন
প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অসুবিধা হবার কথা।
(গ) ৪র্থ ও ৭ম পতি বৃহস্পতি নীচস্থ ( যদিও ৫ম কোণে অবস্থিত )। এতে ৪র্থ ও ৭ম ভাব
সম্বন্ধীয় বিষয়ে ফল লাভের আশা সাধারণ ভাবে কম হবার কথা।
(ঘ) ২য় ও ৯ম পতি শুক্র ৮মে ( নিকৃষ্টতম দুঃস্থান ) অবস্থিত। এতে ধন লাভের ক্ষেত্রে
ও সামগ্রিক ভাবে দুর্ভাগ্যের শিকার হবার কথা।
প্রশ্ন হল এতগুলি প্রতিকূল গ্রহ অবস্থান সত্বেও শচীন সফল হলেন কি ভাবে ? দুর্ভাগ্যের
বার্তা সহ জন্ম গ্রহণ করে নিশ্চয়ই পৃথিবী বিখ্যাত ক্রিকেট খেলোয়াড়ের পরিচিতি পাওয়া
সম্ভব নয়। তা হলে ?
(২) কিছু গ্রহের অবস্থান জনিত উল্লিখিত দুর্বলতা
রয়েছে ঠিকই কিন্তু পাশাপাশি শুভ দিক গুলিও দেখে নেওয়া যাক।
(ক) ৩য় ও ৮ম পতি মঙ্গল ৫ম কোণে প্রায় সুতুঙ্গী ( মঙ্গল সুতুঙ্গী হয় মকর রাশির ২৮
ডিগ্রিতে ) অবস্থায় স্বনক্ষত্রে ( ২৩ নং ধনিষ্ঠা নক্ষত্র - অধিপতি মঙ্গল ) অবস্থিত
হওয়ায় অত্যন্ত বলবান।
(খ) বলবান মঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় বৃহস্পতির নীচভঙ্গ হয়েছে। অতএব বৃহস্পতির
দুর্বল ভাব বেশ কিছুটা কেটে গিয়েছে।
(গ) রবি ( যদিও ১২ শ পতি ) মেষ রাশিতে সুতুঙ্গী অবস্থানের ( রবি মেষে ১০ ডিগ্রিতে
সুতুঙ্গী হয় ) খুব কাছে থাকায় খুবই বলশালী। তুঙ্গী মঙ্গল তুঙ্গী রবিকে দৃষ্টি দিচ্ছে।
(ঘ) ২য় ও ৯ম পতি শুক্র ৮মে তুঙ্গী রবির সঙ্গে যুক্ত এবং তুঙ্গী মঙ্গলের দ্বারাও
দৃষ্ট। রবি ও মঙ্গলের বলে শুক্র যথেষ্ট বল লাভ করেছে।
(ঙ) রবি শুক্র এবং মঙ্গল বৃহস্পতি পরস্পরের কেন্দ্রে রয়েছে। মঙ্গল ছাড়া অন্য কোন
গ্রহ রবি ও শুক্রকে দৃষ্টি দিচ্ছে না ঠিকই; কিন্তু কেন্দ্রে অবস্থিত সব গ্রহই একে
অন্যকে প্রভাবিত করে।
(৩) ৩য় স্থান থেকে উদ্যম, কোন কাজে লেগে থাকার ক্ষমতা ( tenacity ) ইত্যাদি বোঝা যায়। ৫ম উদ্ভাবনা শক্তির স্থান এবং ৮ম থেকে গুপ্ত বিষয়, অন্তর্নিহিত শক্তি ( latent energy ) ইত্যাদি বিচার্য। আলোচ্য কুণ্ডলীতে ৩য় পতি মঙ্গল তুঙ্গী অবস্থায় ৫মে বৃহস্পতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ৮মে তুঙ্গী রবি যুক্ত ৯ম পতি শুক্রকে দৃষ্টি দিচ্ছে। মঙ্গল খেলাধুলার ( sports ) কারক গ্রহ। শচীনের উদ্যম ও চেষ্টা তাকে ক্রীড়া জগতে বিশিষ্ট স্থান দিয়েছে এবং তার খেলার কিছু বিশেষ ধরন ও বল মারার ভঙ্গী নতুনত্বের দাবী করে বলে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
(৪) ২য় ও ৯ম পতির ৮মে অবস্থান জ্যোতিষ শাস্ত্রের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী খুব শুভ নয়। কিন্তু আগেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে, এখানে দুটি তুঙ্গী গ্রহের প্রভাব যুক্ত হওয়ায় ( একটির সঙ্গে যুক্ত ও অপরটির দ্বারা দৃষ্ট ) শুক্র পূর্ণ মাত্রায় ফল দান করেছে। ২য় পতি শুক্রের ২য়ে দৃষ্টিও রয়েছে। ১২শ ( বিদেশ ) পতি রবি ও ৯ম ( দূর দেশ ভ্রমণ ) পতি শুক্রকে ক্রীড়ার কারক গ্রহ তুঙ্গী মঙ্গল দৃষ্টি দেওয়ায় খেলার মাধ্যমে বিদেশ যাত্রা, ভাগ্যোন্নতি ও অর্থ লাভ সূচিত করে।
(৫) ১৫শ শতকে পণ্ডিত ঢুঁণ্ডিরাজ রচিত জাতকভরনম গ্রন্থ অনুযায়ী বৃহস্পতি বৃষ রাশিস্থিত শনিকে দৃষ্টি দিলে ঐশ্বর্য লাভ হয়। ভ-চক্রের (zodiac) ১০ম ও ১১শ পতি শনি ২য়ে বৃষে অবস্থান করে ৯ম পতি ( ভাগ্য ) বৃহস্পতি দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় হয় তো এটা বলা হয়েছে। এই যোগ আলোচ্য কুণ্ডলীতে রয়েছে।
(৬) ৩য় একটি উপচয় স্থান ; এখান থেকে চেষ্টা, উদ্যম , কোন কাজে লেগে থাকার ক্ষমতা (tenacity) ইত্যাদি নির্দেশ করে। এখানে নীচস্থ চন্দ্র ধারাবাহিক চেষ্টা ও বীরত্ব (heroism) নির্দেশ করে। ৩য় পতি মঙ্গল তুঙ্গী হয়ে শক্তিশালী রবিকে দৃষ্টি দেওয়া শচীনের অসাধারণ পরাক্রমের সূচক। চন্দ্র লগ্ন থেকে বিচার করলে লগ্নপতি মঙ্গল ২য় ও ৫ম পতি বৃহস্পতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ৩য়ে তুঙ্গী। চন্দ্র লগ্ন নীচস্থ হবার দুর্বলতা কিছুটা এতে কেটে গিয়েছে। ৩য় বা ৬ষ্ঠ পতি নীচস্থ হওয়া বা এই সব স্থানে কোন নীচস্থ গ্রহের অবস্থান সম্বন্ধে ১৩নং অনুচ্ছেদের ২১ নং নিয়মে বলা হয়েছে।
(৭) চন্দ্র লগ্নের ৬ষ্ঠে ( উপচয় ) রবি থাকায় তার শত্রুর উপর ( প্রতিপক্ষ বা প্রতিযোগী খেলোয়াড় ) প্রভাব বিস্তার ও যুদ্ধে জয়লাভ নির্দেশ করে। কোন খেলোয়াড়ের পক্ষে ৩য় ও ৬ষ্ঠ স্থান এবং মঙ্গল শক্তিশালী হওয়া খুবই শুভ। আলোচ্য কুণ্ডলীতে এটা যথাযথ ভাবে রয়েছে।
(৮) কুণ্ডলীতে যত ভাল গ্রহ বা অন্যান্য যোগ থাকুক না কেন, সঠিক সময়ে সঠিক দশা না পেলে কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ সম্ভব নয়, এ কথা আগেও বলা হয়েছে। শচীনের জন্ম বুধের দশায় , চলেছিল ১০ / ১১ বছর বয়স পর্যন্ত। এর পর ৭ বছরের কেতুর দশা - ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত। কেতু মঙ্গলের মত বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে ( 'কুজবৎ কেতু' ) । বুধের রাশিতে ( মিথুনে ) কেতু বুধের ফলও আংশিক দেবে। বুধ লগ্নের সাপেক্ষে উল্লেখযোগ্য না হলেও চন্দ্র থেকে বিচার করলে বুধ ১১শ পতি। কেতুর দশাতেই শচীনের উত্থান শুরু। এর পর ২০ বছরের শুক্রের দশা - চলবে ২০১০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। শচীনের ধারাবাহিক খ্যাতি ও নৈপুণ্য এই দশাতেই। তার সব চেয়ে ভাল সময় ১৯৯৮ সাল ধরা যেতে পারে। এই সময় তার শুক্র-মঙ্গল ও শুক্র-রাহুর দশা-অন্তর্দশা চলছিল। উপরে যা যা বিশ্লেষণ করা হয়েছে তাতে শুক্র-মঙ্গল যে অত্যন্ত শুভ সেটা খুবই স্পষ্ট। রাহু ২০ নং পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্রে ( অধিপতি শুক্র ) এবং বৃহস্পতির ক্ষেত্রে ( ধনু রাশিতে ) অবস্থানের জন্য রাহু বৃহস্পতি ও শুক্রের ফল দেবে। বৃহস্পতি ( নীচ ভঙ্গ হয়েছে ) তুঙ্গী মঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত থাকায় এবং মঙ্গল শুক্রকে দৃষ্টি দেওয়ায় শুক্র-মঙ্গল শচীনের পক্ষে শুভ হয়েছে।
(৯) ১৯৯৫ সালের ২৫ শে মে শচীন গুজরাটের শিল্পপতি আনন্দ মেহেতার মেয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অঞ্জলি মেহেতাকে বিয়ে করেন। অঞ্জলি শচীনের চেয়ে ৫ বছরের বড়। বিয়ের সময়ে শচীনের শুক্র-চন্দ্র-চন্দ্র দশা-অন্তর্দশা-প্রত্যন্তর্দশা চলছিল। শুক্র স্বাভাবিক জায়াকারক এবং কুণ্ডলীতে ২য় পতি ( পরিবার )। ৭ম পতি বৃহস্পতি চন্দ্রের নক্ষত্রে অবস্থিত এবং নবাংশেও শুক্র ও চন্দ্র পরস্পরের বিপরীতে অবস্থিত। ৭ম পতি ( জায়া স্থান ) বৃহস্পতি ও ৫ম পতি ( আবেগ, অনুভূতি ইত্যাদি ) শনিকে দৃষ্টি দেওয়ায় বিয়েটা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী হয়েছে। অপর একটি বিষয় লক্ষণীয়। চন্দ্রের বিপরীতে শনির অবস্থান সাধারণতঃ বয়সে বড় পাত্রী বা নিম্ন বর্ণের সঙ্গে বিবাহ নির্দেশ করে। এক্ষেত্রে অঞ্জলি শচীনের চেয়ে ৫ বছরের বড়।
(১০) শচীনের বাবা রমেশ তেণ্ডুলকর হৃদরোগে
আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১৯৯৯ সালের ১৯শে মে - শচীনের শুক্র-রাহু-শনি-তে। সব বিষয়েরই
ভল মন্দ দুটি দিক আছে। যে শুক্র শচীনকে অর্থ ও জয় এনে দিয়েছে, সেই শুক্রের দশাতেই
তার পিতৃবিয়োগ। শুক্র ৯ম ( পিতৃস্থান ) পতি হয়ে ৮মে অবস্থান করে ১২শ পতি রবি ও
৩য় / ৮ম পতি মঙ্গলের দ্বারা দৃষ্ট হওয়ায় শুক্রের দশাতে পিতার মৃত্যু হয়েছে। পিতৃ
কারক গ্রহ রবি থেকে ৭ম ও ২য় পতিও ( মারক ) শুক্র। শনি ৯মে এবং রবির ২য়ে অবস্থিত।
রাহুর অবস্থান ৯ম স্থানের ৮মে ( নিধন স্থান )।
বিয়ে ও পিতার মৃত্যুর সময় নির্ভুল ভাবে মিলে যাওয়ায় জন্ম সময় সঠিক বলেই মনে হয়।
(১১) (ক) ১২শ পতি রবি ৮মে অবস্থিত। একটি দুঃস্থানের
অধিপতি অপর একটি দুঃস্থানে থাকায় বিপরীত রাজযোগ হয়েছে। এর ফল শুভ।
(খ) চন্দ্র থেকে শুক্র ৬ষ্ঠে থাকায় অধিযোগ ( অনুচ্ছেদ ১৪ ) হয়েছে, এর ফল শুক্রের
দশায় ভালই ফলেছে।
(গ) লগ্ন থেকে দেখলে ৪র্থ পতি বৃহস্পতি ৫ম পতি শনিকে দৃষ্টি দিচ্ছে। চন্দ্র থেকেও
৪র্থ পতি শনি ৫ম পতি বৃহস্পতির দ্বারা দৃষ্ট। কেন্দ্র ও কোণ পতির এই সম্বন্ধ শুভ।
(১২) অনেক শুভ ফল সত্বেও ৮মে শুক্রের অবস্থান ( ১২শ পতি রবির সঙ্গে ) ও ৮ম পতি মঙ্গলের দৃষ্টির জন্য শচীনের শরীরে খেলতে গিয়ে আঘাত লেগেছে কয়েক বার।
(১৩) শুক্রের দশা ২০১০ সালের সঙ্গেই শেষ। এর পর ৬ বছরের রবির দশা। রবি ৯ম পতি শুক্রের সঙ্গে যুক্ত ঠিকই কিন্তু রবি নিজে ১২শ পতি হওয়ায় রবির দশা একেবারে নিরাশ না করলেও তেমন প্রাপ্তি যোগ ঘটাবে বলে মনে হয় না।
বিভিন্ন অনুচ্ছেদের বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করার সময় অনেক ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে কিছু বিষয় পরে বিশদ ভাবে আলোচিত হবে । বস্তুতঃ জ্যোতিষশাস্ত্র এত বৃহৎ এবং এর শাখা প্রশাখা এতদূর বিস্তৃত যে বহু আলোচনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব । কিন্তু আমাদের মূল ধারাবাহিকের নাম ছিল " জ্যোতিষশাস্ত্র প্রবেশিকা " অর্থাৎ মূল প্রবেশ দ্বারে পৌঁছতে সাহায্য করা ; মনে হয় সেটা হয়েছে । ইচ্ছুক এবং কৌতূহলী পাঠকেরা বিভিন্ন অনুচ্ছেদে আলোচিত প্রাথমিক বিষয়গুলি জেনে নিয়ে পরবর্তী পর্যায়ের জ্ঞাতব্য বিষয়গুলি নিজেরাই অনুধাবন করতে পারবেন । Number of hits দেখে মনে হয়েছে বহু লোক বিষয়টি সম্বন্ধে কৌতূহলী হয়েছেন এবং এটা পড়েছেন । এই অনুচ্ছেদের শেষে বেশ কিছু বই-এর নাম দেওয়া হয়েছে যেগুলির সাহায্যে অযথা বিভ্রান্তির মধ্যে না পড়ে পাঠকেরা সহজে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি জেনে নিতে পারবেন । বলা বাহুল্য এই বই গুলিই সব নয়, অবশ্যই আরও ভাল বই রয়েছে ; পড়তে শুরু করলে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাঠকেরা সেগুলির উল্লেখ পেয়ে যাবেন ।
এ পর্যন্ত যা কিছু আলোচনা করা হয়েছে তাতে কোন ব্যক্তির জন্ম কুণ্ডলী থেকে কিছু প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বিশ্লেষণ করা মোটামুটি সহজ হবে বলে মনে হয়। ১৫ নং অনুচ্ছেদে ১০ জন খ্যাতনামা ব্যক্তির কুণ্ডলী বিচার করে নির্দিষ্ট গ্রহের দশায় তাদের জীবনের বিশেষ কিছু ঘটনা ঘটার কারণ নির্ণয়ের চেষ্টা করা হয়েছে। যে সব নিয়ম কাজে লাগিয়ে এই বিশ্লেষণ করা হয়েছে তা সবই বিভিন্ন অনুচ্ছেদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
একটা কথা মনে রাখা দরকার। ভবিষ্যতের ঘটনা সম্বন্ধে পূর্বাভাষ দেওয়া কিন্তু অতীতের কোন ঘটনার কারণ খুঁজে বের করার থেকে অনেক কঠিন। কারণ, বিভিন্ন গ্রহের অবস্থান এবং পারস্পরিক প্রভাব থেকে অনেক সম্ভাব্য ঘটনার চিত্র ফুটে ওঠে; প্রতিটির জন্যই যুক্তি দেওয়া যায়; কিন্তু সব গুলিই ত ঘটেনা। ঘটে কেবল একটি নির্দিষ্ট ঘটনা। অতীতে যেটি ঘটে গিয়েছে সেটার স্বপক্ষে ( অবশ্যই নিয়ম মেনে ) যুক্তি প্রতিষ্ঠিত করে বাকি গুলি বাদ দেওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ। কিন্তু যে ঘটনা গুলি ঘটতে পারতো অথচ ঘটল না, সে গুলি কেন ঘটল না সেটা ব্যাখ্যা করার কোনো প্রয়োজনীয়তা থাকে না। কিন্তু ভবিষ্যত সম্বন্ধে বলতে গেলে কোনো একটি ঘটনাকে নির্দিষ্ট করে বের করে নিয়ে আসতে হবে। সেটার জন্য যে নিয়ম গুলি আগে ব্যাখ্যা করা হয়েছে সেগুলি অবশ্যই প্রয়োজনীয় তবে সব সময়ে শুধু সেগুলিই যথেষ্ট নয়। বহু সম্ভাবনার মধ্যে বেশ কিছু ছেঁটে ফেলে কয়েকটিকে চিহ্ণিত করে পরবর্তী স্তরে পরিসর আরও ছোট করে সর্বাধিক সম্ভাবনাময় একটিকে নির্দিষ্ট করতে হলে শুধু নিয়ম ছাড়াও ব্যক্তির অভিজ্ঞতা, বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও সহজাত জ্ঞান (intuition) যথেষ্ট সহায়ক হয়। দেশ কাল ও পাত্রের বিবেচনা ত আছেই।
ফলিত জ্যোতিষের মূল কথা হল , ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ঘটনা সম্বন্ধে আলোকপাত করা । এটা না হলে শুধু তত্ব আলোচনা করলে বা বিভিন্ন প্রামাণ্য গ্রন্থ থেকে সূত্র উদ্ধৃত করে কোন লাভ নেই ; এতে বড় জোর কোথাও বক্তৃতা করার বা প্রবন্ধ লেখার সুবিধা হতে পারে মাত্র। প্রাথমিক ভাবে যা আলোচনা করা হয়েছে সেটা ছাড়া পরবর্তী পর্যায়ে যে বিষয়গুলি অবশ্যই জানা বা করা দরকার সেগুলি হল -
(ক) গোচর ফল (effect
of transit)
(খ) বর্গ বিভাগ ও তার বিশ্লেষণ ( use of Divisional Charts
)
(গ) অষ্টকবর্গ পদ্ধতি
(ঘ) জৈমিনী পদ্ধতিতে কুণ্ডলী বিশ্লেষণ
(ঙ) পূর্বে বর্ণিত এবং উপরে উল্লেখ করা বিষয় সব গুলি একত্রে
বিচার করে একটি নির্দ্দিষ্ট ফলে উপনীত হওয়া । এতে হয়ত ভবিষ্যতের
একটি সম্ভাব্য ঘটনার আভাষ পাওয়া যেতে পারে ।
(চ) প্রতিকারের উপায়
খুব সংক্ষেপে কয়েকটি কথা বলে বর্তমান আলোচনার উপসংহারে পৌঁছন যাক ।
(১) জন্ম কুণ্ডলীতে অর্থাৎ একটি ন্র্দিষ্ট কাঠামোয় সন্নিবেশিত লগ্ন এবং নয়টি গ্রহের ( রাহু ও কেতু সহ ) অবস্থান দেখেই কোন ব্যক্তির শারীরীক গঠন , তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য , মানসিক গঠন , তার ব্যবহার , জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে যা যা ঘটবে এবং তজ্জনিত ঐ ব্যক্তির মানসিক প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি সম্বন্ধে কুণ্ডলীটি দেখে গড় গড় করে বলে যাওয়া যে সহজ কাজ নয় সেটা সহজেই বোঝা যায় । এর মধ্যে আবার রয়েছে কিছু বিষয় সম্বন্ধে বিভিন্ন মত - এদের মধ্যে কোনটি গ্রহণীয় সেটাও অভিজ্ঞতা দিয়ে ঠিক করতে হবে । জ্যোতিষশাস্ত্রে বহু কিছু লিপিবদ্ধ হয় নি ; বেশ কিছু বিষয় চিরকালের জন্য লুপ্ত হয়ে গিয়েছে । বিতর্কিত বিষয় গুলি নিয়ে কোন একটি সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে গেলে এ নিয়ে গবেষণার যথেষ্ট প্রয়োজন ও সুযোগ রয়েছে ।
(২) একটি বিভ্রান্তিকর বিষয় হচ্ছে অযনাংশ । অনেকে লাহিড়ী অয়নাংশ ব্যবহার করেন , অনেকে আবার রমনের অয়নাংশ মেনে চলার পক্ষপাতী । এ ছাড়া অন্যান্য অয়নাংশও রয়েছে । লাহিড়ী ও রমন অয়নাংশের মধ্যে তফাৎ মোটামুটি ১ ডিগ্রি ২৭ মিনিট ; অর্থাৎ লহিড়ীর অয়নাংশ ধরে গ্রহস্ফুট বের করলে সেটা রমনের গ্রহস্ফুট থেকে ১ ডিগ্রি ২৭ মিনিট কম হবে ; এর প্রভাব বর্গ বিভাগেও ( নবাংশ সহ ) পড়তে পারে । মনে হয় এখন অধিকাংশ জ্যোতিষী , অন্তত উত্তর ভারতে , চিত্র পক্ষ অয়নাংশ বা লাহিড়ী অয়নাংশ ব্যবহারের পক্ষপাতী । এ রকম ভিন্ন মত আরও অনেক বিষয় সম্বন্ধে রয়েছে ; তার মধ্যে একটি হল - শিক্ষা লাভের বিষয়টি । সন্তানের পড়াশোনা কেমন হবে , উচ্চশিক্ষা হবে কি না ইত্যাদি খুবই সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। অনেকেই এটা জানতে চান , সেটাই স্বাভাবিক । যেটা নিয়ে মতভেদ সেটা হল , শিক্ষা কোন ভাব থেকে বিচার্য - ৪র্থ না ৫ম ? এর কারক গ্রহই বা কি ? বুধ না বৃহস্পতি , না কি দুটিই ? অনেকে আবার ২য় ভাবটিকেও বিদ্যালাভের সঙ্গে যুক্ত করেন । এ সম্বন্ধে কিছু আলোচনা করা হয়েছে , বাকিটা পাঠকেরা আরও পড়াশোনা করে নিজেদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন বলে আশা করা যায় ।
(৩) অপর একটি বহু জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন হল বিবাহ কখন হবে , বিবাহিত জীবন সুখের হবে কি না , আয়ুর পরিমাণ কত ইত্যাদি । আয়ু নির্ণয় অত্যন্ত কঠিন, হয় ত সেই জন্যই বলা হয় জন্ম , মৃত্যু , বিবাহ ভগবানের হাতে । আয়ু নির্ণয়ের বহু নিয়ম আছে , কোন একটি নিয়ম সঠিক ফল দেয় না । আমার মনে হয় শাস্ত্রোক্ত নিয়ম গুলি ছাড়াও লগ্ন ও লগ্ন পতির বল , অন্যান্য গ্রহের অবস্থান ও তাদের বল থেকে সামগ্রিক ভাবে বিচার করলে একট মোটামুটি সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে ।
(৪) বর্গবিভাগ সম্বন্ধে ৬ষ্ঠ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে। রাশিচক্র প্রস্তুত করার সময়ে ৩৬০ ডিগ্রিকে ১২ টি সমান ভাগে ভাগ করে প্রত্যেকটি রাশির জন্য ৩০ ডিগ্রি নির্দিষ্ট করা হয়। কিন্তু এই ৩০ ডিগ্রির মধ্যে কোন গ্রহ সব অবস্থানের জন্যই সমান ফল দান করে না। সেটার জন্য একটি রাশিকে আরও ভাগ করার প্রয়োজন হয়। কোন রাশিকে ৯ ভাগ করে প্রতিটি অংশ ৩ ডিগ্রি ২০ মিনিট ধরে নবাংশ প্রস্তুত করার পদ্ধতি ৬ষ্ঠ অনুচ্ছেদেই আলোচনা করা হয়েছে। নবাংশ বর্গের গুরুত্ব সব জ্যোতিষীই স্বীকার করেছেন। জন্ম কুণ্ডলী বিশ্লেষণে নবাংশকে রাশি চক্রের পরেই সর্বাধিক প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরা হয়। নবাংশের ব্যবহার ১৫ নং অনুচ্ছেদে বিভিন্ন কুণ্ডলী বিশ্লেষণের সময় বিশদ ভাবে করা হয়েছে।
শুধু রাশিচক্র এবং নবাংশ থেকে অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্তে আসা খুব সহজ নয় - এ কথা আগেও বলা হয়েছে ; রাশিচক্রে সন্নিবিষ্ট গ্রহ গুলি থেকে তাদের পারস্পরিক সম্বন্ধ বা প্রভাব বিষয়ে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছোন কঠিন ; এর জন্য বিভিন্ন বর্গ বিভাগের প্রয়োজন । এ সম্বন্ধে একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে ; এটি গায়ত্রী দেবী বাসুদেবের ( প্রয়াত জ্যোতিষী বি. ভি. রমনের সুযোগ্যা কন্যা ) 'Modern Astrology' থেকে নেওয়া , তবে বর্তমান আলোচনায় রমন অয়নাংশের পরিবর্তে লাহিড়ী অয়নাংশ ব্যবহার করা হয়েছে । ছকটি বিখ্যাত শিল্পপতি ধিরুভাই আম্বানির ।
ধিরুভাই আম্বানির জন্ম তারিখ ২৮শে ডিসেম্বর , ১৯৩২ খৃষ্টাব্দ । সময় সকাল ৬ - ৩৭ মিনিট ; স্থান : Chorwad, GujraT; 21 N 30, 70 E 30 ; ভোগ্য দশা : শুক্র ৮ বছর ৪ মাস ১ দিন । ছকটির রাশিচক্র (Natal Chart) এবং নবাংশ বর্গটি (D9) যথাক্রমে ১৬(১)ক ও ১৬(১)খ চিত্রে দেখান হয়েছে । অত্যন্ত সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম ধিরুভাই-এর , পড়াশোনা ম্যাট্রিক পর্যন্ত । প্রথম জীবনে তীর্থযাত্রীদের খাবার বিক্রি করে এবং পরে একটি পেট্রোল পাম্পে কাজ করে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করতেন । ১৯৫৮ সালে মশলার ব্যবসা এবং পরে ৭০-এর দশকে Reliance Textile তাকে চূড়ান্ত সাফল্য এনে দেয় । সফল শিল্পপতি হিসাবে তার নাম এখন সবারই জানা । কিন্তু কুণ্ডলীটি পরীক্ষা করলে এই সাফল্য বোঝা যায় কি ? কুণ্ডলীতে সফলতার কারণ হিসাবে যেটা পাওয়া যায় সেটি হল লগ্নপতি বৃহস্পতির ১০মে ( সেটাও মিত্র ক্ষেত্রে নয় ) এবং ৯ম পতি রবির লগ্নে অবস্থান । অপর দিকে অশুভ দিকটাও যথেষ্ট প্রকট । ১১শ পতি শুক্র ও ১০ম পতি বুধের ১২শে অবস্থান কর্মক্ষেত্র ও অর্থলাভের পক্ষে মোটেই অনুকূল নয় । নবাংশ চক্রেও ১০ম ও ১১শ পতি শনি এবং ৯ম পতি বৃহস্পতি নীচস্থ , ২য় পতি শুক্রের লগ্নপতির সঙ্গে যুক্ত ভাবে ৮মে অবস্থানও মোটেই শুভ নয় । অতএব রাশিচক্র ও নবাংশ থেকে সাফল্যের সম্পূর্ণ চিত্রটি একেবারেই ফুটে ওঠে না । অর্থাৎ রাশি ও নবাংশের উপর নির্ভর করে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বললে সেটা না মিলবার সম্ভাবনা যথেষ্ট রয়েছে । আগে উল্লেখ করা হয়েছে জীবিকা সম্বন্ধে জানার জন্য দশাংশ বর্গ বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন । দশাংশ বর্গটি (D10) ১৬(১)গ চিত্রে দেখান হয়েছে । দশাংশটি পরীক্ষা করলে দেখা যাবে লগ্ন ও ৪র্থ পতি বৃহস্পতির সঙ্গে ১১শ ( ও ৬ষ্ঠ ) পতির স্থান বিনিময় হয়েছে, যেটা ধন লাভের সহায়ক । ২য় পতি শনি ও ১১শ পতি শুক্র লগ্নে যুক্ত , এটিও খুব কার্যকরী । ৯ম পতি রবি তুঙ্গী এবং ৫ম পতি মূলত্রিকোণস্থ মঙ্গলের সঙ্গে ৫মে যুক্ত । অর্থোপার্জন ও ভাগ্যোন্নতির পক্ষে বিশেষ সহায়ক । চন্দ্রও স্বক্ষেত্রে অবস্থিত । চন্দ্র লগ্ন থেকেও রাজযোগকারী মঙ্গল ২য় পতি রবির সঙ্গে ১০মে অবস্থিত । উভয় গ্রহই শক্তিশালী । চিত্রটি এখন যথেষ্ট পরিষ্কার । অতএব বোঝা গেল , শুধু রাশিচক্র ও নবাংশ থেকে বিচার করলে সৌভাগ্য ত দূরের কথা বিপরীত ফল নির্দেশের সম্ভাবনা ছিল । অবশ্য সব কুণ্ডলীতেই এত অস্পষ্টতা থাকবে তা নয় , তবে রাশিচক্র এবং নবাংশ থেকে যদি জোরাল ভাবে ফল লাভের সম্ভাবনা দেখা যায়, তবে সেটা প্রায় নিশ্চিত হয়ে বলা যেতে পারে ।
এবার ধিরুভাই-এর অপর একটি বর্গ নেওয়া যাক । আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে ধন লাভের সম্ভাবনা পরীক্ষা করর জন্য হোরা (D2) বর্গ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । হোরা বর্গ তৈরী করার বিভিন্ন নিয়ম আছে , এখানে কেরল হোরা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে । এটি ১৬(১)ঘ চিত্রে দেখান হয়েছে । কেরল হোরায় ২য় পতি ২য়ে স্বক্ষেত্রে , ৯ম পতি রবি লগ্নে ৫ম পতি মঙ্গল দৃষ্ট ; তুঙ্গী ১০ম পতি বুধ , লগ্ন ও ৪র্থ পতি বৃহস্পতি এবং নীচভঙ্গ ১১শ পতি শুক্রের সঙ্গে ১০মে যুক্ত এবং ৫ম পতি মঙ্গল দ্বারা দৃষ্ট - ধনলাভের অত্যন্ত সহায়ক । বর্গ বিভাগের প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব এবার নিশ্চয়ই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে । অপর একটি লক্ষণীয় বিষয় হ'ল , বর্গ-বিভাগ করলে দেখা যাবে , ধিরুভাই-এর লগ্নটি রশিচক্র সহ দ্রেক্কন , চতুর্থাংশ , সপ্তাংশ , দশাংশ , দ্বাদশাংশ ও ষোড়শাংশতে ধনু রাশিতে পড়েছে ; এর ফলে লগ্নটি অত্যন্ত বলবান হওয়ায় সফলতার সহায়ক হয়েছে ।
কৌতূহলী পাঠকের সুবিধার্থে ১৬(১)ঙ চিত্রে বিল গেট্সের কেরল হোরাটি দেখান হয়েছে , পর পর কয়েক বছর বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তির সমর্থনে যথেষ্ট তথ্য আছে কি না দেখার জন্য। এটা জানা আছে যে ধনযোগের জন্য ২য় , ৫ম , ৯ম এবং ১১শ পতির বল গুরুত্বপূর্ণ । বিল গেট্সের হোরা বর্গে ২য় পতি শুক্র , ৯ম পতি বৃহস্পতি এবং ১১শ পতি শনির সঙ্গে ৫মে সিংহ রাশিতে অবস্থিত । এটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে ধিরুভাই-এর চেয়ে বিল গেট্সের হোরা লগ্ন অনেক শক্তিশালী ; যেটা প্রত্যাশিত । বর্গ বিভাগ ও তার গুরুত্ব সম্বন্ধে মোটামুটি একটা ধারণা করা গেল ।
(৫) এবার একটি উদাহরণের মাধ্যমে অপর একটি বিষয় সম্বন্ধে কিছুটা আলোকপাত করা হবে । অনেক সময় দেখা যায় কোন ব্যক্তির লগ্ন কোন রাশির একেবারে প্রথমে বা শেষে গিয়ে পড়েছে ; যেমন কারো লগ্ন মিথুন রাশির ২৯ ডিগ্রি ২০ মিনিট বা ধনু রাশির শূণ্য ডিগ্রি ৪০ মিনিট । এখানে একটা প্রশ্ন মনে আসতেই পারে যে , লগ্নটি কর্কট বা বৃশ্চিক নয় তো ? কারণ , ৪ মিনিটের হেরফের হলেই লগ্ন ১ ডিগ্রি সরে যেতে পারে এবং চার পাঁচ মিনিটের তফাৎ হওয়াটা আশ্চর্যজনক কিছু নয় ; ঘড়িটি হয় ত ঠিক সময় দিচ্ছিল না বা জন্ম মুহূর্তের ঠিক সময়টি দেখে লিখে রাখা হয় নি । এই ধরণের লগ্ন হলে , সঠিক উপায় হল জীবনের কিছু অতীত ঘটনার সঙ্গে কুণ্ডলীটি মিলিয়ে দেখা । এ রকম একটি ছক এখানে আলোচনা করা হচ্ছে ( কৃতজ্ঞতা স্বীকার - Vaughn Paul Manley এবং Marc Boney )। ছকটি হল Tiger Woods-এর । জন্ম তারিখ ও সময় : ৩০শে ডিসেম্বর , ১৯৭৫ সাল ; রাত্রি ১০টা ৫০ মিনিট । স্থান : Long Beach, California; 118 W 11, 33 N 46; Time Zone : 8-0-0 west; No day light saving। লাহিড়ী অয়নাংশ । ভোগ্য দশা : বুধ ১ বছর ৫ মাস ১৬ দিন । রাশিচক্র , নবাংশ ও দশাংশ বর্গ যথাক্রমে ১৬(২)ক , ১৬(২)খ এবং ১৬(২)গ চিত্রে দেখান হয়েছে । লগ্ন কন্যা রাশির শূণ্য ডিগ্রি ৪৭ মিনিট । সন্দেহ হতেই পারে লগ্নটি সিংহ রাশির শেষে নয় তো ?
Tiger Woods একজন বিখ্যাত গল্ফ খেলোয়াড় এবং প্রচুর অর্থের মালিক । অতএব কুণ্ডলীটিতে ধন যোগ থাকা খুবই স্বাভাবিক । ১৯৯৭ সালে শুক্র-শনির দশাতে তার ৬০ মিলিয়ান ডলারের একটি চুক্তি সই হয় ; শুক্র শনির অনুরাধা নক্ষত্রে অবস্থিত ; শনি ৫ম পতি এবং ১১শে অবস্থিত । কিন্তু যদি সিংহ লগ্ন ধরা যায় তবে অবশ্য রাজযোগকারী মঙ্গলের সঙ্গে ১০ম পতি শুক্রের স্থান বিনিময় হয় , এটা খুবই ভাল ; কিন্তু সে ক্ষেত্রে শনির অবস্থান লগ্নের ১২শে হয় এবং ১২শ পতি চন্দ্রের সঙ্গে শুক্র যুক্ত হয় - ধন যোগের অনুকূল হিসাবে এটাকে মেনে নেওয়া যায় না । Woods-এর পিতৃবিয়োগ হয় ১০৯৬ সালের ৩রা মে , রবি-রাহুর দশায় । কন্যা লগ্ন ধরলে পিতৃকারক গ্রহ রবি ৯মের ৮মে অবস্থিত হয় ; রাহুর শুক্রের ঘরে শুক্রের ফল দেবে এবং শুক্র ৯মের ৭মে অবস্থিত । অপর পক্ষে লগ্ন সিংহ হলে রবি ৯ম স্থান থেকে ৯মে অবস্থিত হয় এবং রবির মহাদশাতে পিতৃ বিয়োগের সম্ভাবনা সমর্থিত হয় না । দশাংশ বর্গে লগ্ন বৃষ রাশি হয় ( রাশি চক্রে লগ্ন কন্যা ধরলে ) ; শনি ৯ম ও ১০ম পতি হিসাবে রাজযোগকারী গ্রহ এবং লগ্নে শুক্রের ঘরে অবস্থিত এবং শুক্র লগ্নের ৪র্থে অবস্থিত হওয়ায় শুক্র-শনির দশা অর্থ সংক্রান্ত ব্যাপারে খুবই অনুকুল হয় । যদি রশিচক্রে লগ্ন সিংহ হয় তবে দশাংশ বর্গে লগ্ন হয় মেষ । তখন শনি ১০ম ও ১১শ পতি হয়ে লগ্নের ২য়ে অবস্থিত হবে এবং শুক্রের অবস্থান হবে লগ্নের ৫মে ; এটাও ধনযোগের পক্ষে যথেষ্ট শুভ । তবে কন্যা লগ্নের ক্ষেত্রে শুক্র ও শনি পরস্পরের কেন্দ্রে থাকায় , কন্যা লগ্নের সম্ভাবনাই বেশী । তবে এখনও কিন্তু কিছুটা সন্দেহ থেকেই যায় - লগ্ন কন্যা না সিংহ ।
অন্য ঘটনা বিশ্লেষণ করা যাক । Tiger Woods-এর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক সারা পৃথিবীতে সোরগোল ফেলে দিয়েছিল । ৮ম স্থান থেকে গোপনীয় বিষয় , বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক বোঝাতে পারে । বৃশ্চিক রাশির বৈশিষ্ট্য হ'ল গোপনীয়তা , একগুঁয়ে ভাব ইত্যাদি । এটা যে সব সময় অশুভ হবে তা নয় , অনেক সাধকের , বিশেষ করে যারা গুপ্তভাবে সাধনা করেন , তাদেরও এই রাশির প্রভাব থাকতে পারে । কিন্তু Tiger Woods-এর ক্ষেত্রে যৌন শক্তির কারক গ্রহ মঙ্গল ৩য় ও ৮ম স্থানের অধিপতি ( বৃশ্চিক ও মেষ রাশির ) এবং বক্রী হয়ে শুক্রের ( যৌন সংক্রান্ত বিষয়ক গ্রহ ) ৭মে অবস্থিত । তাদের স্থান বিনিময়ও হয়েছে । অতএব কুণ্ডলীটিতে এই বৈশিষ্ট্য পুর মাত্রায় বিদ্যমান । ২০০৯ সালে রবি শুক্রের দশায় তিনি নতুন করে আবার যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন । রবি লগ্নের ৪র্থে অবস্থিত এবং মঙ্গলের ৮ম দৃষ্টির দ্বারা দৃষ্ট । এ ছাড়া নীচস্থ চন্দ্র ( মনের কারক গ্রহ ) ও শুক্রকে ত মঙ্গল দৃষ্টি দিচ্ছেই । অতএব Woods-এর লগ্ন সন্দেহাতীত ভাবে কন্যা ।
অপর একটি ঘটনাও মিলিয়ে
নেওয়া যেতে পারে । এটা থেকে গোচর ফল সম্বন্ধেও কিছুটা ধারণা
করা যাবে । ২০০৭ সালের ২৭শে নভেম্বর Tiger Woods একটি গাড়ী
দুর্ঘটনায় পড়েন । তখন তার রবি-শুক্র-রাহু দশা-অন্তর্দশা-প্রত্যন্তর্দশা
চলছিল । উক্ত তারিখে বিভিন্ন গ্রহের অবস্থান ( গোচর ) ১৬(২)ঘ
চিত্রে দেখান হয়েছে । ৪র্থ স্থান বাহন স্থান হিসাবে কথিত
এবং শুক্র বাহনের কারক গ্রহ । গোচর ছকটিতে দেখা যাবে ঐ দিন
রাহু ৪র্থে অবস্থান করছে এবং রবি ও শুক্র শনির দ্বারা দৃষ্ট
। যেহেতু ৪র্থ থেকে গৃহ এবং গৃহসুখেরও বিচার হয় , ঐ দশা-অন্তর্দশাতেই
Woods-এর স্ত্রী Elin Nordegren গৃহত্যাগ করেন । গোচর (transit)
বিচার ব্যাখ্যা করার জন্য এটি একটি সুন্দর উদাহরণ ।
বিভিন্ন ঘটনা বিশ্লেষন ও পর্যালোচনা করে Tiger Woods-এর
কন্যা লগ্নের পক্ষেই মত দেওয়া যায় ।
(৬) অষ্টকবর্গ ও জৈমিনি দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিচার পদ্ধতি ; এক কথায় এটা বলা সম্ভব নয় । বই-এর নাম দেওয়া হচ্ছে , ইচ্ছুক পাঠকেরা পড়ে দেখতে পারেন ।
(৭) সবার শেষের প্রশ্ন বিরূপ গ্রহের কি কোন প্রতিকার আছে ? একটা কথা প্রথম পরিচ্ছেদেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে , মানুষ পৃথীবিতে এসে তারই সঞ্চিত কর্মফল ভোগ করে । এমন কোন ব্যবস্থা হতে পারে না যার দ্বারা বিরূপ কর্মফলকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়ে সুখে শান্তিতে বাস করা যায় - এটা সৃষ্টির নিয়ম বিরুদ্ধ । মানুষ যতই পাণ্ডিত্য দেখাক আর হাত পা নেড়ে বক্তৃতা দিক , পরিশেষে তাকে সেই প্রকৃতির অধীনেই থাকতে হয় । গ্রহ রত্ন ধারণে হয় ত কিছুটা কাজ হয় , হতেও দেখেছি , কিন্তু একটা সীমা পর্যন্ত । এই তত্ত্বে বিশ্বাস করলে মানুষের অসুখও ভোগ করে কর্মফলের জন্য , তা বলে কি ওষুধে কাজ হয় না ? কিন্তু সব অসুখ কি ওষুধে সম্পূর্ণ নির্ম্মূল হয় ? এরও একটা সীমা আছে - ঠিক একই নিয়ম রত্ন ধারণ বা অন্যান্য প্রতিকার সম্বন্ধে খাটে । তবে আপত্তিটা অন্যখানে । বিপদে পড়লে বহু লোকই অসহায় বোধ করেন এবং তখন তারা প্রতিকারের জন্য জ্যোতিষীর শরণাপন্ন হন এবং তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কিছু অজ্ঞ বা স্বল্পজ্ঞানী ব্যক্তি নিজেকে অভিজ্ঞ বলে জাহির করে প্রতিকারের নামে লোককে ঠকান । এটা সমর্থনযোগ্য ত নয়ই বরং অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ । এর জন্য এই শাস্ত্র সম্বন্ধেও মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় ।
যারা ঈশ্বরে বিশ্বাসী
, তারা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে পারেন । এতে কাজও হয়
। হয় ত অল্পের উপর দিয়ে ভোগ হয়ে যায় , বাকীটা ত ভোগ করতেই
হবে ।
যারা ঈশ্বর বিশ্বাসী নন , তারা স্বাভাবিক ভাবেই জ্যোতিষ
শাস্ত্রকেও বিশ্বাস করবেন না - কারণ এ দুটির কোনটিই কোন
গবেষণাগারের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে
অথবা গণিতের সাহায্যে প্রমাণ করা যায় না । অতএব তাদের জন্য
এসব কিছুরই প্রয়োজন নেই । যারা প্রতিকার ও রত্ন ধারণ সম্বন্ধে
জানতে চান , বই পড়ে নিতে পারেন ।
পরিশেষে বিখ্যাত যোগী স্বামী যোগানন্দের কথা দিয়ে শেষ করি । তাঁর এই কথাগুলি যারা জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশ্বাস করেন বা করেন না , উভয় পক্ষের সমর্থনেই কিছুটা রসদ যোগাবে । 'ছোটবেলা থেকেই জ্যোতিষশাস্ত্রের ওপর আমার একটা অশ্রদ্ধা আর অবিশ্বাসের ভাব ছিল খানিকটা এই কারণে যে , যাদের কোন যুক্তি বিচার নেই , এমন অনেকেই এর প্রতি অন্ধ আনুগত্য প্রদর্শন করে আর খানিকটা এই কারণে যে , আমাদের বাড়ীর জ্যোতিষী মহাশয় বলেছিলেন যে, তোমার তিন তিনটে বিয়ে হবে , আর দু-দু'বার পত্নীবিযোগ হবে ।' আমি ব্যাপারটা নিয়ে খুবই ভাবতাম - নিজেকে মনে হত ত্রয়ী বিবাহ মন্দিরের সামনে আমি যেন যূপকাষ্ঠে সমর্পিত ছাগ । ....... কিন্তু একরাত্রে সুস্পষ্ট অনুভব করলাম যে এই ভবিষ্যদ্বাণী একেবারেই মিথ্যা । কোষ্ঠিটা আগুনে পুড়িয়ে একটা খামে তার ছাইগুলো পুরে তার উপরে লিখে দিলাম : জ্ঞানের আগুনে পুড়লে প্রাক্তন কর্মের বীজ আর কখনও অঙ্কুরিত হতে পারে না ।'........ তবে একথা সত্য যে , সাবালক হবার আগেই বাস্তবিকই তিন তিনবার আমার বিবাহের সম্বন্ধ করার চেষ্টা হয়েছিল ; কিন্তু প্রতিবারই আমি সে ফাঁদ এড়াতে পেরেছিলাম এই ভেবে যে , কোষ্ঠিতে লেখার ফল ঘটতে দেওয়ার চেয়ে ঈশ্বরের প্রতি আমার ভালবাসা ছিল ঢের ঢের বেশী আন্তরিক । ......... আমার যা বিশ্বাস ছিল , তা শেষ অবধি একেবারে খাঁটি বলেই প্রতিপন্ন হয়েছে । সেটা হচ্ছে এই যে , ভগবানই একমাত্র রক্ষাকর্তা এই বিশ্বাস ; আর মানুষের ঈশ্বরদত্ত ইচ্ছার উপযুক্ত সদ্ব্যবহার - এ দুটোর এতই শক্তি যে , সারা সৌরজগতের এমন ক্ষমতা নেই যা তাকে উল্টাতে পারে ।' বাস্তবিক পক্ষে প্রকৃত সাধক জ্যোতিষ শাস্ত্র নিয়ে মাথা ঘামান না , ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই সব কিছু হচ্ছে এই তাদের দৃঢ় বিশ্বাস এবং তাদের মন অনেক উচ্চ স্তরে বিরাজ করে । সাংসারিক সুখ দুঃখ তাদের মনে কোন আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে না । তবে এ তো হল প্রকৃত সাধক ও যোগী পুরুষদের কথা । সাধারণ মানুষকে কৃতকর্মের ফল ভোগ করতেই হয় ।
এই ধারাবাহিকে বিল গেটসের কুণ্ডলীটি বের হবার পর জনৈক পাঠক প্রশ্ন তুলেছিলেন যে, বিল গেটসের জন্ম মুহূর্তে আরও যারা জন্মেছেন তাদের কি হবে ? একই বা কাছাকাছি জায়গায় বিভিন্ন মানুষের জন্মের কোনো পরিসংখ্যান অভিজ্ঞ জ্যোতিষীদের কাছে আছে কি না জানি না ; যমজ সন্তানদের বেলাতেও একই জিনিস খাটে । এদের রাশিচক্রে গ্রহের অবস্থান এমন কি লগ্নও একই হতে পারে ; অনেক বিষয়ে মিল থাকলেও বহু ঘটনার আলাদা ফল হয় । এ থেকেই বোঝা যায় শুধু রাশিচক্র থেকে সব ঘটনা বলা সম্ভব নয় । এ সম্বন্ধে নীচের তালিকার ১০ নম্বর বইটি কাজে আসতে পারে । তবে এর বিষয়বস্তু একটু জটিল , এটা ভাল ভাবে আয়ত্ব করতে হলে প্রাথমিক বিষয়গুলি সম্বন্ধে খুব স্বচ্ছ ধারণা থাকা দরকার । এই ধারাবাহিক সম্বন্ধে একটা কথা বলা দরকার । জ্যোতিষশাস্ত্র বহু বিষয়ের মত একটি বিষয় মাত্র । যারা এটার সম্বন্ধে আগ্রহী এবং কিছুটা জানতে চান তাদের জন্যই এই আলোচনা করা হল ।
কৌতূহলী পাঠকদের সুবিধার জন্য অল্প কয়েকটি বই এর নাম নীচে দেওয়া হল ; পড়ে দেখতে পারেন । প্রাপ্তিস্থান ও দাম জানতে ইন্টারনেটের সাহায্যে Vani Publication, Delhi এবং Agrany Publications, Bangalore -র ওয়েব সাইট দেখতে পারেন । শুভেচ্ছা রইল ।
১. How to judge a horoscope vol I -B. V.
Raman
২. How to judge a horoscope vol II-Gayatri Devi Vasudev
৩. Advanced priciples of prediction- Gayatri Devi Vasudev
৪. The art of prediction in astrology-Gayatri Devi Vasudev
৫. My experiences in astrology-B. V. Raman
৬. Ashtakavarga system of prediction-B. V. Raman
৭. Studies in Jaimini astrology-B. V. Raman
৮. Astrology,destiny and wheel of time-K. N. Rao
৯. Predict comprehensively through divisional charts-K. N. Rao
১০. Interpreting divisional horoscopes (Innovative approach through the destinies
of twins)-K. N. Rao
১১. Timing of events through vimshottari dasha-K. N. Rao
১২. Predicting through Jaiminis chara dasha-K. N. Rao
১৩. Planets and education-K. N. Rao
১৪. Astrology and timing of marriage-K. N. Rao
১৫. How to identify significant events (through transit)-V. K. Choudhry
১৬. জাতক কৌমুদী - কালীপদ ভট্টাচার্য্য
শেষ