প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

সমাজ ও সংস্কৃতি

ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬

 

দোলের মেলায় সুরের ধারা

অদিতি ভট্টাচার্য্য

 

সামনেই দোলযাত্রা, আমাদের অন্যতম প্রধান উৎসব। প্রাচীন কাল থেকেই এই উৎসবের, এই পার্বণের খ্যাতি। গানে, কবিতায়, সাহিত্যে বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে এই রঙের উৎসবের কথা। আবির, গুলালে যেন বসন্তের হাওয়াও সেদিন রঙিন হয়ে ওঠে। উৎসবের আনন্দ নিতে আমরাও রাঙিয়ে তুলি নিজেদের। বাড়তি আরো কিছু আনন্দ, কিছু নতুনত্বের স্বাদ পেতে যদি ঘুরে আসা যায় ঘরের কাছেই চারশোরও বেশী বছরের পুরনো এক মেলায় তো মন্দ কি?

সতীমার মূর্তি

কল্যাণীর ঘোষপাড়ায় সতীমার দোল মেলা। ঐতিহ্যে, প্রাচীনত্বে সুমহান এক মেলা, বিশ্বাস আর ইচ্ছাপূরণের মেলবন্ধন। এর ইতিহাস জানতে হলে ফিরে যেতে হবে অনেক পেছনে। অষ্টাদশ শতকে আউলচাঁদ ভগবৎ সাধনার এক ভাবাদর্শ প্রচার করতে শুরু করেন। অচিরেই তা যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তাঁর অনুগামীদের সংখ্যাও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এইভাবেই সৃষ্টি হয় কর্তাভজা নামে এক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের। আউলচাঁদের এক শিষ্য ছিলেন রামশরণ পাল। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী সরস্বতী দেবী আউলচাঁদের ভাবাদর্শ প্রচারে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাঁরা থাকতেন কল্যাণীর ঘোষপাড়া অঞ্চলে। এখানেই একটি ডালিম গাছের তলায় বসে সরস্বতী দেবী সাধনা করেছিলেন এবং সে সাধনায় তিনি সিদ্ধিলাভও করেন। এরপর থেকেই তিনি সতীমা নামে বিখ্যাত হন। রামশরণের মৃত্যুর পর সতীমাই কর্তাভজা সম্প্রদায়ের প্রধান হিসেবে মান্য হন। ভক্তদের বিশ্বাস তিনি বাকসিদ্ধা ছিলেন, নানা অলৌকিক কাহিনি প্রচলিত আছে এই সাধিকাকে ঘিরে।

সতীমার বাড়ি

ঘোষপাড়ায় দোলের সময় একটা মেলা অনেক বছর আগে থেকেই হত, কিন্তু সতীমার সময় থেকেই এই মেলা আরো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ক্রমে তা সতীমার মেলা নামেই পরিচিতি লাভ করে। সতীমার জন্মতিথি দোলপূর্ণিমা বলে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এর আলাদা গুরুত্ব যদিও কালের গতিতে তা আর বিশেষ কোনো সম্প্রদায়ের মেলা থাকেনি, সব মানুষেরই মিলনস্থল হয়ে উঠেছে। চারশো বছর পরেও তাই এর গুরুত্ব, মহিমা, বহর – কোনোটাই কমেনি। আজও তাই কল্যাণী এবং তার আশপাশের অঞ্চল থেকে তো বটেই, দূরদূরান্ত থেকেও মানুষ আসেন মেলা দেখতে। তিলধারণের স্থান থাকে সতীমার মন্দির চত্বরে এ সময়।

ডালিম গাছ

মন্দির চত্বরে ঢুকতেই প্রথমেই আছে ডালিম গাছ, সেই ডালিম গাছ যার তলায় বসে সতীমা সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। গাছটিও সুপ্রাচীন, জনশ্রুতি এর বয়সও তিনশো-চারশো বছর। গাছের গুঁড়ি ঘিরে মাটির বেদী করা আছে। পুণ্যার্থীরা এখানেই পুজো দেন। ডালিম গাছের ডালে মাটির ঘোড়া বেঁধে নিজেদের মনস্কামনা জানান।

ভেতরে আছে সতীমার সমাধি মন্দির। মাঝারি একটি ঘর। একপাশে সতীমার শয্যা, তার ওপর তাঁর একটি ছবি, অন্যপাশে শ্বেত পাথরে বাঁধানো সমাধি। সমাধির ওপরে মাথার দিকে কাপড়, ফুল ইত্যাদি দিয়ে মুকুটের মতো করা রয়েছে। ঘরের বাইরে থেকে গ্রিলের ভেতর দিয়ে দেখতে হয়। তবে কোনো জায়গায়েই ফটো তোলার কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। কাছেই রয়েছে রামশরণ এবং তাঁর ছেলে দুলালচাঁদ পালের ঘর। সতীমার মৃত্যুর পর ইনি সম্প্রদায়ের প্রধান হয়েছিলেন। মন্দির চত্বরে রয়েছে কিছু যাত্রী নিবাস, দোলের সময় এসবই থাকে ভর্তি।

সতীমার সমাধি মন্দির

রয়েছে হিমসাগর পুকুর। জনশ্রুতি স্বয়ং সতীমা এই পুকুরে স্নান করতেন। ভক্তদের কাছে তাই এই পুকুরের জল অতি পবিত্র। অনেকেই এখানে স্নান করে ডালিম গাছের তলায় পুজো দেন। রয়েছে ভোগ রান্নার ঘর। প্রতিদিন সতীমাকে অন্নভোগ দেওয়া হয়।

মেলা বসে যায় দোলের আগের দিন থেকেই। মেলার আয়তন কিছু কম নয়। এ মেলার প্রধান আকর্ষণ বাউল ও কীর্তন গান। অনেক বাউল সম্প্রদায়েরই আখড়া বসে এখানে এই সময়। দোলের আগের দিন থেকে পরপর তিন দিন ধরে চলে বাউল, কীর্তন গানের আসর। সঙ্গীত রসের আস্বাদন করতে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ ভিড় করেন।

সতীমার সমাধি মন্দির (২)

এছাড়া অন্যান্য মেলায় যা থাকে সেসব তো আছেই। ঘড়ঘড় শব্দে ঘুরে চলা বিরাট নাগরদোলা, গোল করে ঘুরতে থাকা বাচ্চাদের ছোটো ছোটো গাড়ি, থাকে মরণ কূপ, কুয়োর গায়ে মোটরবাইক আর গাড়ির রোমহর্ষক খেলা। মণিহারী জিনিসপত্র, ঘর সাজানোর টুকিটাকি, বাচ্চাদের খেলনা, পুতুল, হাঁড়িকুঁড়ি, হাতা, খুন্তি থেকে হরেক মাল দশ টাকা – সবই। দু পা অন্তর জিলিপি আর বাদামভাজার দোকান। না, শুধু এ দুটোই নয়, পেট পুজো করার জন্যে আরো নানা রকম খাবারদাবারও পাওয়া যাবে। কোনো কোনো বছর সার্কাসের তাঁবুও পড়ে। সব মিলিয়ে এক পরিপূর্ণ মেলা।

লেখক পরিচিতিঃ লেখক সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। কর্মসূত্রে আরব দুনিয়াতেও থেকেছেন। ভ্রমণ, ছবি তোলা, এমব্রয়ডারির পাশাপাশি লেখালিখিতেও সমান উৎসাহী। নানান ওয়েব ম্যাগাজিন এবং পত্র পত্রিকায় নিয়মিত লেখেন। প্রকাশিত গল্প সংকলন ‘গল্পের খোঁজে।’ 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।