সঞ্চারীর একাল ও সেকাল
অনিন্দ্য রায়চৌধুরী
‘যেদিন আমি সলিলবাবুর "না যেওনা" মতো সঞ্চারী রচনা করতে পারবো সেইদিনই করবো, তার আগে নয়।’
“যে কথা বলিতে বাধে
যে ব্যথা মরমে কাঁদে
সে কথা বলিতে ওগো দাও”
গত ৬০-৭০ বছরে যাদের জন্ম, তাদের মধ্যে বোধ হয় এমন একজন বাঙালিও নেই যে এই কথাগুলির সঙ্গে পরিচিত নয়। তাঁর সহকারী ভানু গুপ্তর কথায় জানা যায় – একবার রাহুল দেব বর্মণ অর্থাৎ আমাদের পঞ্চমকে কেউ জিজ্ঞেস করেছিলেন যে সে তার গানে সঞ্চারী রাখে না কেন। স্বভাবসুলভ নম্রতার সঙ্গে তাঁর উত্তর –
রবীন্দ্রনাথের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাঙালী সুরকাররা আমাদের বহু অসাধারণ সঞ্চারী দিয়ে গেছেন। বহু অবিস্মরণীয় গান এই সঞ্চারী গুলোর জন্যই আরো পূর্ণতা পেয়েছে। যেমন, উপরোক্ত "না যেওনা, রজনী এখনো বাকি"। এই গানটির থেকে সঞ্চারীটা বাদ গেলেও সেটা সুন্দর গান হতো না কি? নিশ্চয় হতো! কিন্তু অন্তরাতে যে তারসপ্তকে আর্তিটা তৈরী করা হলো, সেতারের মূর্ছনার সঙ্গে- হঠাৎ, একটু অপ্রত্যাশিত ভাবেই, যখন সঞ্চারীতে এসে সেটাই পরিণত হলো কেমন একটা নৈরাশ্যতে, তার জন্য সৃষ্ট হল এক অনন্য অভিঘাত। মানে “The lowest point in the song (in terms of notes) becomes the highest point (in terms of impact)", সঞ্চারী এবং তাঁর স্রষ্টা সুরকারের সাফল্যও সেখানেই।
সঞ্চারীর শুরু কবে, কী ভাবে?
বিশদ জানা নেই, কিন্তু বাংলা গানে সর্বপ্রথম রবীন্দ্রনাথই সঞ্চারীর ব্যবহার শুধু প্রচলনই করেন নি, তাঁর গানের একটা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ করে তুলেছিলেন। এখানে তিনি তাঁর ধ্রুপদী শিক্ষার যথাযথ প্রয়োগ করে বাংলা গানে এক নতুন মাত্রা এনেছিলেন।
ধ্রুপদী গানের চার ভাগ - স্থায়ী (বা মুখড়া), অন্তরা, সঞ্চারী আর আভোগ। চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী - স্থায়ীতে অক্টেভ-এর মাঝের পর্দাগুলির প্রয়োগ বেশী। অন্তরায় গিয়ে সেটা তুঙ্গে ওঠে। তারসপ্তক এবং গানের সর্বোচ্চ উঁচু পর্দার প্রাধান্য অন্তরাতেই। সঞ্চারীতে এসে কিছুটা ভাব আর অনুভূতিকে অন্য দিকে মোড় ঘোরানোর জন্য নীচু পর্দাতে আগমন। কিছু গানে মন্দ্রসপ্তকের খেলাও এই সঞ্চারীতেই। প্রথাগতভাবে সঞ্চারী থেকে সোজা আভোগে চলন এবং আভোগের সুরটা অন্তরার সুরের চেয়ে কিছুটা আলাদা হবার কথা। রবীন্দ্রনাথ এটিকে কিছুটা সরলীকরণ করে স্থায়ী-প্রথম অন্তরা-সঞ্চারী- দ্বিতীয় অন্তরা, এই আঙ্গিকটিই বেশি ব্যবহার করেছেন। অবশ্য আভোগও ওনার বহু গানে আছে (যেমন: তোমার প্রেমে আঘাত আছে, নাইকো অবহেলা / নয় নয় এ মধুর খেলা)।
রবীন্দ্রনাথের সঞ্চারী নিয়ে লিখতে গেলে তো মহাভারত হয়ে যাবে। কী অসাধারণ ও মৌলিক প্রয়োগ, গানগুলিকে সম্পূর্ণ স্বর্গীয় স্তরে নিয়ে যায়। অতলস্পর্শী সেই প্রশান্ত মহাসাগরের থেকে মাত্র কয়েকটা উদাহরণ:
“স্বপন দেখি, যেন তারা কার আশে
ফেরে আমার ভাঙা খাঁচার চারপাশে
সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি”
পুরো গানটাই ইমন রাগাশ্রিত, এতে কোমল স্বরের কোনো স্থান নেই। কিন্তু সঞ্চারীতে ‘যেন তারা কার আশে’-তে হঠাৎ কোমল ধৈবতের প্রয়োগ।একটি আপাত-বিচ্যুতি, কিন্তু গানটির আবেদন বহুগুণ বাড়িয়ে দিলো না কি?
আবার ধরা যাক-
“তোমায় নিয়ে খেলেছিলেম খেলার ঘরেতে
খেলার পুতুল ভেঙে গেছে প্রলয় ঝড়েতে”
এখানে সঞ্চারীর প্রথম লাইনটি একেবারে প্রথা অনুযায়ী, মন্দ্র সপ্তকের নিষাদকেও ছুঁয়ে গেল। কিন্তু তার পরের পংক্তি?
সঞ্চারীর সব নিয়ম ভেঙে একেবারে তারসপ্তকে প্রবল আর্তি। Shock treatment! ‘পুতুল ভেঙে’ যাওয়ার হাহাকার। এই গানের সর্বোচ্চ পর্দাগুলি তাহলে অন্তরাতে লাগলোনা, লাগলো সঞ্চারীতেই। সত্যি, যেন শ্রোতাদের নিয়েই খেলছেন খেলার ঘরেতে!
অন্য আর একটি গান- “হিমের রাতে ঐ গগনের দীপগুলিরে” এই গানে আবার অন্যভাবে ফর্ম ভেঙেছেন। এখানে স্থায়ী অন্তরা সঞ্চারীর বিভাজনটা একটু আলাদা। "শূন্য এখন ফুলের বাগান", নিয়ম মেনে এটাকেই সঞ্চারী ধরতে হলে তাহলে দ্বিতীয় অন্তরা হবে "যাক অবসর বিষাদ কালো" কিন্তু তাহলে "দেবতারা আজ আছে চেয়ে"? এটা কি তাহলে দ্বিতীয় সঞ্চারী?
অনেক গানেই উনি এরকম নিজের বানানো রীতি থেকেই সরে গেছেন। কখনো অর্ধেক সঞ্চারী ভেঙে আভোগের সাথে জুড়ে দিয়েছেন (যেমন "আকাশ ভরা সূর্য তারা"), যেটাকে "অন্যসুরের অন্তরা”ও বলা যায়। হিন্দি গানে এরকম প্রচুর উদাহরণ আছে। অনেক সময় তিনি সঞ্চারী রাখেনও নি ("যখন পড়বে না মোর পায়ে চিহ্ন" অথবা "সখি ভাবনা কাহারে বলে"), এই নিয়েও আরেকটা পৃথক আলোচনা হয়ে যেতে পারে।
রবীন্দ্রসঙ্গীতে আরো বহু অসাধারণ সঞ্চারীর কথা মনে আসছে –
“ধীরে বও সমীরণ / সবেদন পরশন” – মাত্র পাঁচটি শব্দ, কিন্তু বিস্ফোরক!
অথবা
“তারি লাগি যত ফেলেছি অশ্রুজল
বীণাবাদিনীর শতদলদলে করিছে সে টলমল!”
– মর্মস্পর্শী!
সমকালীন ও তৎপরবর্তী – তিন ও চারের দশক
সেই সময়ের অন্যান্য স্রষ্টারা, যাঁরা রবীন্দ্রনাথের মোটামুটি সমসাময়িক তাঁরা কেউই সঞ্চারীর পথে বিশেষ পা বাড়াননি। এঁরা হলেন দ্বিজেন্দ্রলাল, অতুলপ্রসাদ (উনি পাঞ্জাবি টপ্পা র দিকেই বেশি ঝুঁকেছিলেন), রজনীকান্ত ও নজরুল।
ত্রিশের দশক থেকে বাংলা চলচ্চিত্রে সঙ্গীতের পুরোপুরি আবির্ভাব। বাংলা আধুনিক গানে একটু একটু করে আবির্ভূত হতে থাকলো নতুন আঙ্গিক। রাগপ্রধান বা পল্লীগীতির থেকে বেরিয়ে এক নতুন genre এর সূত্রপাত, -পঙ্কজ মল্লিক, রাইচাঁদ বড়াল ও শচীনদেব এর মতো কিংবদন্তি সুরকারদের একে একে আত্মপ্রকাশ। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তাঁরাও খুব একটা সঞ্চারীর প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন নি। বিশেষ করে পঙ্কজ বাবু, যিনি একদিকে রবীন্দ্রসংগীতের বটবৃক্ষ, আবার অন্যদিকে নিজগুণে এক অসাধারণ সুরকার।
একই সিনেমায় যখন রবীন্দ্রসংগীত পরিচালনা করছেন তখন সঞ্চারী (“কে সে মোর কেই বা জানে”), আবার নিজের সুরগুলো সঞ্চারীবর্জিত! কিন্তু কেন? আত্মপ্রত্যয়ের অভাব নিশ্চয় নয়। তবে কি তাঁরা সচেতনভাবেই রবীন্দ্রনাথের ছায়া থেকে বেরিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা করছিলেন?পঙ্কজ বাবু অবশ্য অনেক যুগান্তকারী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। Balladic ফর্মে "চৈত্রদিনের ঝরাপাতার পথে" বা হিন্দিতে "জগ মে চলে পবন কী চাল", বোধ হয় প্রথম ঘোড়াগাড়ির ছন্দে গান। ও পি নায়ারের অন্তত ২৫ বছর আগে। এই গানটিতে আবার প্রতিটা অন্তরারই আলাদা সুর!
শচীন কর্তা পরে হিন্দিতে অনেক কালজয়ী সৃষ্টি অবশ্যই করেছিলেন, কিন্তু প্রবাসী হবার পথে সঞ্চারীটাকে কোলকাতাতেই ফেলে রেখে গেছিলেন। তার আগে বাংলাতে বেশি না হলেও কখনোসখনো অসাধারণ কিছু সঞ্চারী উনি করেছিলেন, যেমন
খেলাঘরে কবে ধুলিরও খেলায়
দুটি হিয়া ছিলো বাঁধা
আমার বীণাটি তোমার বাঁশিটি
এক সুরে ছিলো সাধা।
এই সঞ্চারীটা এমনই স্বয়ংসম্পূর্ণ যে এটা নিয়েই একটা পুরো গান হতে পারতো হয়তো!
পাঁচের দশক - সঞ্চারীর পুনঃপ্রবেশ
কিন্তু সঞ্চারীর প্রতি বাঙালি সুরকারদের এই অনীহা পাল্টে গেলো পাঁচের দশক থেকে। হেমন্ত, নচিকেতা, মানবেন্দ্র, সুধীন, শ্যামল সবাই আবার সঞ্চারীকে আপন করে নিলেন। ফলস্বরূপ আমরা পেলাম কিছু অতুলনীয় সৃষ্টি।
৫০ আর ৬০ এর দশকে যারাই এসেছেন সবাই সঞ্চারীকে আপন করে নিয়েছেন আর নিজস্ব মাত্রা দিয়েছেন। সিনেমাতেও এমন সিচুয়েশন যেখানে হঠাৎ করে দেখলে সঞ্চারী হয়তো বেমানান লাগবে সেখানেও!
যেমন রাজেন সরকার (যিনি ‘ঢুলী’ সিনেমাতে রাগাশ্রয়ী সুরে অসাধারণ কিছু সৃষ্টি করেছিলেন) এর সুরে "লজ্জায় থরথর দৃষ্টি মিষ্টি গো মিষ্টি গো"। সিনেমার নাম অশান্ত ঘূর্ণি, সম্পূর্ণ পাশ্চাত্য সুরে। মজার ব্যাপার, এই সুরটা উনি নিয়েছিলেন লর্ড ব্যাডেনপাওয়েল রচিত একটা স্কাউটদের গান থেকে। এই সুরে পরে লক্ষ্মীকান্ত প্যারেলাল রচনা করেছেন "মেরা দিল লেকে লেকে লেকে লেকে চল দিয়ে")। একটা নাইট ক্লাবে জীবেন বোস গাইছেন, সেখানে হঠাৎ এই সঞ্চারীর আবির্ভাব গানটাকে আরো কত শ্রুতিমধুর করে দিয়েছে:
স্বপ্নের কিছু কথা কিছু কিছু কাব্য
ভাববো কি ভাববো কি
বা সলিলের যোগ্য উত্তরসূরী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এর এই অসাধারণ গানটি - এমন একটা ঝড় উঠুক। এই গানের সঞ্চারীটাই বোধহয় গানটির শ্রেষ্ঠ অংশ:
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
তবু দুনিয়াটা কিছু পাল্টানো গেলে পরে
হয়তো বা কিছু হয়,
ভালোবাসা মনে নাও হতে পারে
বেহিসেবী পরিচয়
শেষের দুটো শব্দতে হঠাৎ তিলং রাগের আলতো ছোঁয়া। কথা ও সুরের বৈপরীত্যের এক অপূর্ব শ্রুতিমাধুর্য গানটাকে আরো সমৃদ্ধ করে।বাংলা গানে এরকমই অপরূপ সঞ্চারীর ছড়াছড়ি। মাত্র একটা দুটোর কথা যদি বলতে হয় –
হেমন্ত ও নচিকেতা
নচিকেতা - বহু সঞ্চারীর মধ্যে প্রথমেই মনে আসে,-
তারপরে সারারাত দুজনে বসে বসে ভাববো
হৃদয়ের লিপিকাতে কে যেন লিখেছে এক কাব্য
সুধীন –
সুধীন দাশগুপ্ত
আমি যে দুরন্ত
দুচোখে অনন্ত
ঝড়ের দিগন্ত জুড়ে স্বপ্ন ছড়াই
সলিল -
কিশোর কুমার
চেনাশোনা জানার মাঝে কিছুই চিনি নি যে
অচেনায় হারায় তাই আবার খুঁজি নিজে
বা (ক্রিটিকদের কাছে যিনি) সংগীত -অজ্ঞ সেই গায়ক-সুরকারের এই অনবদ্য সৃষ্টি:
জনম সফল হবে বঁধুয়ার ঘরে আজ
শরমের আড়ালেতে দেখা যাবে ফুলসাজ
হিন্দি গানে সঞ্চারী
দুঃখজনক ভাবে, এই বাঙালি সুরকাররাই যখন হিন্দি সিনেমাতে সুর দিয়েছেন, নিজের করা বাংলা সুরগুলির রূপান্তর করেছেন তখন সঞ্চারীগুলোকে ছেঁটে বাদ দিয়ে দিয়েছেন যেমনঃ
চার বিখ্যাত বাঙ্গালী সঙ্গীত পরিচালক – বলিউডেও সফল
হেমন্ত - প্রেম একবারই এসেছিলো নীরবে
[সঞ্চারী] যে আলো হয়ে এসেছিলো কাছে মোর
হিন্দিতে (আজ রোনা পড়ে তো সমঝো) বাদ
সলিল -কেন কিছু কথা বলো না
না বলে যা যাও বলে
(হিন্দি - মৌজও কী ডোলি চলি রে)
শ্যামল -তারি সুরে আজ যেন গাহিছে পাখি (সারাবেলা আজ কে ডাকে)
হিন্দি - নীলে অম্বরকে তলে (এখানে অবশ্য সঞ্চারী বাদ দেয়ার সাথে সাথে অন্তরাটাও বদলে দিয়েছিলেন )
কিন্তু কেন?
এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে তিন চার যুগ ধরে এঁরা সবাই এই ধারণা পোষণ করে এসেছেন যে সঞ্চারীর ব্যাপারটা সর্বভারতীয় শ্রোতারা হয়তো ঠিক রিলেট করতে পারবে না বা সিনেমার গানে সঞ্চারী হয়তো খাপছাড়া লাগবে। এরকম ভাবার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ দেখি না।
সলিল নিজেই দুবার তাঁর দুটি যুগান্তকারী গানের রূপান্তরের সময় সঞ্চারী দুটিকে অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন–
না যেও না, রজনী এখনো বাকি (ও সজনা, বরখা বাহার আয়ি)
না মন লাগে না (না জিয়া লাগে না)
দুটোর হিন্দি রূপান্তরই সারা দেশে অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছিল। এখনো সে জনপ্রিয়তা কমেনি।
রবীন্দ্র জৈন
আবার এক অবাঙালি সুরকার - অবশ্য একেবারে অবাঙালিও না, বিশ্বকবির নামে তার নামকরণ। কৈশোর ও সংগীতশিক্ষার অনেকটাই কলকাতাতে - তার সুরে "হর হাসিন চীজ কা"(সওদাগর) এ সেই অপূর্ব সঞ্চারী - কোই কহে ভাঁওরা মুঝে, অবাঙালি শ্রোতাদের তো খুবই ভালো লেগেছিলো। তাহলে?
কারণ অজানা, কিন্তু ঘটনা একটাই। ভারতবর্ষের শ্রোতারা একটি শ্রুতিমধুর অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিতই থেকে গেলো!
পঞ্চমে শুরু, পঞ্চমেই শেষ! হ্যাঁ, পঞ্চমেই ফিরে আসা যাক!
সঞ্চারী রচনার প্রতি অক্ষমতা প্রকাশ করলেও অন্তত একবার সে আমাদের একটা অনবদ্য সঞ্চারী যুক্ত গান দিয়ে গেছে –
কাঁচেরই ঝাড়বাতি নেভে সময় হলে
প্রেম যে মোমের আলো, জ্বালায় শুধু জ্বলে
হ্যাঁ, আমি বলছি "যেতে দাও আমায় ডেকো না" র কথা। রচনাকাল ১৯৬৯, যখন হিন্দি সিনেমার জগতে ততটা প্রতিষ্ঠা লাভ ঘটেনি।
গুণগত মানের দিক দিয়ে দেখতে গেলে এটা হয়তো সলিল নচিকেতার শ্রেষ্ঠ সঞ্চারীগুলোর নিচেই স্থান পাবে, কিন্তু তবুও খুবই সুন্দর একটা প্রচেষ্টা। ওই একবার আমাদের "ঝলক দিখা কর কর গয়া দিওয়ানা", তারপর আর ও পথে পা মাড়ালেন না! শুনেই দেখা যাক –
বহু বছর পর যখন দিল পাডোসি হায় বেরোলো, তখন দেখলাম এই সুরটা সেখানে স্থান পেয়েছে (জানে দো মুঝে জানে দো)। কিন্তু দেখি এখানে পঞ্চম শিশুসুলভ ভাবে সঞ্চারীটাকে অটুট না রেখে কেটে কেটে অন্তরাগুলো আগে বসিয়ে দিয়েছে! ফলে আমরা পেলাম লম্বা লম্বা দুটো অন্তরা, বা সঞ্চারী-অন্তরার সংমিশ্রণ। যাক গে, পুরো অ্যালবামটাই যখন এক্সপেরিমেন্টাল, তখন!
না, এই সুরের এবং পঞ্চম-সঞ্চারী কাহিনীর এখানেই শেষ না!
এর ও বহু বছর পর. ২০০৮ সালে মুক্তি পেল প্রায় চল্লিশ বছর ধরে বাক্সবন্দী হয়ে থাকা একটা সিনেমা। ইয়ার মেরি জিন্দগী। বেরনোর কথা ছিলো ১৯৭১-৭২ সালে। সেখানে দেখি "যেতে দাও আমায়" র পুরো নোট-ফর-নোট রূপান্তর, সঞ্চারী সমেত রয়ে গেছে।
এই সিনেমাটা যদি তখন রিলিজ করতো, আর সিনেমাটা (শত্রুঘ্ন - অমিতাভ) আর গানটা যদি সুপারহিট হত? পঞ্চম কি তাহলে হিন্দি গানে সঞ্চারী নিয়ে আরেকটা ছোটো ঝড় তুলতো? ওর দেখাদেখি অন্যরাও কি তাই করতো? এবং বাংলা র মতো হিন্দি গানেও সঞ্চারীর আসন আর শূন্য থাকতো না?
সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য অজানাই থেকে যাবে!
লেখক পরিচিতি – প্রেসিডেন্সী থেকে অর্থনীতির স্নাতক। ছোটবেলা থেকেই গানের শখ। বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত, বর্তমানে কুয়ায়েত নিবাসী।
Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.