বিশেষ গোয়েন্দা সংখ্যা

বিশেষ গোয়েন্দা সংখ্যা - জানুয়ারি, ১৫, ২০১৭
রহস্যের ঘনঘটা
ঈশানী রায়চৌধুরী
'ছোটবেলায়' বললে বেবাক মিছে কথা বলা হবে, এই বুড়োবেলাতেও ইনজেকশনে
বেদম ভয় আমার। মুরগি বা মাছ কাটার সময়ে সামনে থাকি না..রক্ত দেখলে
গা গুলিয়ে ওঠে। কিন্তু কোনো অজ্ঞাত কারণে খুনখারাপির গল্পে আমার
টানটান উত্তেজনা জাগে। প্রথম স্মৃতিতে দস্যু মোহন। আমার বাবার
ছেলেবেলার নায়ক। সে কিন্তু পড়িনি তখন। টুকিটাকি ছেঁড়া ছেঁড়া গল্প
বাবার কাছে শোনা। একবার বাবা কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাথ থেকে একটা
শতছিন্ন বই আমার ঘ্যানঘ্যানানিতে অতিষ্ঠ হয়ে কিনে এনেছিলেন। পড়লাম
বটে, কিন্তু কেমন আজগুবি আর জোলো মনে হল। আসলে হয়তো আমার আশা ছিল
আকাশছোঁয়া, তাই স্বপ্নভঙ্গের হতাশা বুকে বেজেও ছিল অনেক বেশি।
এর পরে বড়মাসি কিনে দিল একটা বই। ওপরে কালো কুচকুচে মলাটে জ্যাবড়া
জ্যাবড়া রক্তের ছোপ। প্রচ্ছদে একটা মুখোশ পরা লোকের ছবি, হাতে
পিস্তল। বইয়ের নাম 'রক্ত ফোঁটা ফোঁটা'। লেখক স্বপনকুমার।ওই কচি
বয়সে অমন ‘গল্পের গরু গাছে চড়েছে’ মার্কা বই পড়তে দিব্যি লাগে।
যুক্তিবুদ্ধির বালাই থাকে না তো ! আমিও ব্যতিক্রম ছিলাম না। অমন
গা ছমছমে প্রচ্ছদ, হৃদয়-বৃত্তান্তে মৃদু উঁকিঝুঁকি, এখনকার হিন্দি
সিনেমার মতো অবাস্তব পরিস্থিতি , দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন
…একেবারে হরিদাসের বুলবুলভাজা টাইপ। গোগ্রাসে গিলছি একদিন দুপুরে,কিন্তু
দেখলাম বাবা বেজায় চটে গেলেন। আমাকে বললেন, "এ সব গাঁজাখুরি"
! আশ্চর্য ! দস্যু মোহন গাঁজাখুরি নয়, রবার্ট ব্লেক গাঁজাখুরি
নয় ( সে বই ছিল বসুমতী সাহিত্য মন্দিরের, সাহেব গোয়েন্দা, 'সাইক্ল'
চড়েন ) ..যত দোষ দীপক গোয়েন্দার ? যেভাবে দস্যু প্রেমলালের মোকাবিলা
করে দীপক, সে তো আর ছেলেখেলা নয় ! কিন্তু বাবা মানলেন না। ফলে
স্বপনকুমারের রোমাঞ্চকর জগৎটি আমার কাছে অধরাই রয়ে গেল। তবে স্বপনকুমারের
বই ছিল চটি পেপারব্যাক, ছাপার মানও তথৈবচ।
তখন অবশ্য 'সন্দেশ' পত্রিকায় চার জন কিশোরী-গোয়েন্দা দাপিয়ে বেড়াত।
কালু-মালু-বুলু-টুলু। এক গণ্ডা 'লু'। গোয়েন্দা
গণ্ডালু।
লেখিকা নলিনী দাশ। সত্যজিতের পিসিমা। আমার ভালোই লাগত পড়তে। নিজে
খুব ঘেরাটোপের মধ্যে জীবন কাটাতাম তো, তাই ওদের সঙ্গে মানসভ্রমণে
বড় লোভ ছিল আমার। প্রভাবতী দেবী সরস্বতীও লিখতেন কৃষ্ণা নামের
একটি কিশোরীর গোয়েন্দাগিরির গল্প ...সঙ্গে তার ভাই। তবে কেন কে
জানে, আমার খুব একটা স্মৃতিতে নেই।
বোধকরি আমার বিমর্ষ ভাব কাটাতে এর পরেই ঝাঁক বেঁধে আনাগোনা শুরু
হল হেমেন রায় আর নীহাররঞ্জন গুপ্তর গোয়েন্দাদের। এর সঙ্গে টুকটাক
পা ফেলে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যর গোয়েন্দা হুকাকাশি। হুকাকাশি আমি
মূলত পড়তাম 'আনন্দ' বলে একটা চমৎকার পুজোবার্ষিকী বেরোতো ..তাতে।
সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন সম্ভবত ধীরেন্দ্রলাল ধর। কিন্তু সে তো
ছাই বছরে একটা ! আমার তো আবার রাবণের খিদে ! তাই অনেক বেশি মন
কাড়ল হেমেন রায়ের দু-জোড়া টিকটিকি। বিমল-কুমার, জয়ন্ত-মানিক। বিমল-কুমার
ডাকাবুকো ধরনের। তারা অ্যাডভেঞ্চার করতে বেশি উৎসাহী। তাদের সংসার
পোষা কুকুর বাঘা আর অনুগত ভৃত্য রামহরিকে নিয়ে। রামহরি আবার এই
দু-জনের গার্জেনিও করে দরকার বুঝলে। আমার আবার খুন জখম বেশি পছন্দের।
সেদিক থেকে জয়ন্ত -মানিক শখের টিকটিকি। কলকাতায় আর তার আশেপাশে
ঘুরঘুর করে। তাদের অলিখিত স্বঘোষিত অভিভাবক পুলিশকর্তা সুন্দরবাবু।
এই তিনে ত্র্যহস্পর্শ ! সুন্দরবাবু আবার ডবল ডিমের 'মামলেট' ছাড়া
খান না। সে না জানি কী দেবভোগ্য বস্তু ! কারণ তখনও আমি জানি যে
দিনে একটার বেশি ডিম খেলে পেটে বেজায় ব্যথা হয়। তাই বাড়িতে কোনো
কারণে ডিমের ডালনা হলে আর নিরামিষ আমার দু-চোখের বিষ বলে মা সুতো
দিয়ে নিপুণ করে একটা ডিম লম্বালম্বি দু-আধখানা করে কাটতেন। কুসুমটাও..তাজ্জব
ব্যাপার, ঠিক মাপে মাপে আধখানা হত ! মনে আছে, আমি একদিন ঝুলে পড়েছিলাম
ডবল ডিমের মামলেট খাব বলে। সে আর্জি যেদিন মঞ্জুর হল..সে যা ফুর্তি
আমার ! হলফ করে বলতে পারি, লোকের পাঁচতারা হোটেলে খেয়েও এত উল্লাস
হয় না।
নীহারবাবুর প্রথম বই পড়েছিলাম 'কালো ভ্রমর'। তখন কিন্তু দারুণ
লেগেছিল। একটুও নাটুকে মনে হয়নি। তারপর একে একে সব কিরীটি রায়।
কিরীটি তখন স্বপ্নের পুরুষ। কী হ্যান্ডসাম ! তখন আমি স্কুলে পড়ি।
পথেঘাটে দেখতে শুনতে স্মার্ট সুন্দর ছেলে দেখলেই ভাবতাম ..কিরীটি
ঠিক এমনটি দেখতে। আমার স্বপ্নে জাগরণে তখন শুধুই রহস্যভেদীরা আসা
যাওয়া করে। সকলেই বঙ্গসন্তান।
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
|
আনন্দবাজার রবিবাসর। সম্ভবত সেই প্রথম শুরু হল ধারাবাহিক রহস্য
উপন্যাস। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'বেণীসংহার’ দিয়ে। আমার বয়স
তখনও দুই অঙ্কে পৌঁছয়নি। আমার বাড়িতে প্রধান সুবিধে ছিল যে বইয়ের
ঘরে চৌকিদার বসানোর কথা বড় একটা ভাবতেন না কেউ। আর দ্বিতীয় সুবিধে
হল, বাড়িতে আমি একাই ছোট। আর চার জন গার্জেন যে যার কাজে এত ব্যস্ত,
যে আমাকে চোখে চোখে রাখতে হলে নিজেদের রুটিন চৌপাট হয়ে যাবে। ফলে
পড়ার ব্যাপারে আমার বাছবিচার ছিল না। পিঁপড়ের সারি কালো কালো অক্ষর
হলেই হল। 'বেণীসংহার' আমাকে বিশ্ব-সংসার ভুলিয়ে দিল। সারা সপ্তাহ
চাতকের মতো অপেক্ষায় থাকি। কখন রবিবারের সকাল হবে আর রোল করা খবরের
কাগজ ঠক করে আছড়ে পড়বে বারান্দায়। সব ভুলে গেলাম। এতদিনের যত গোয়েন্দা
, সবাই ব্যাকবেঞ্চে চলে গেল। সেই যে শরদিন্দুতে মজে গেলাম, সেই
আকর্ষণ আজও অটুট। অন্য কোনো 'সত্যান্বেষী'র সত্যানুসন্ধানের কাহিনি
আমি একবার বই দু-বার পড়িনি। ব্যতিক্রম শুধু ব্যোমকেশ। যা পড়ে পড়ে
মুখস্থ হয়ে গেছে। ব্যোমকেশ আমাকে শিখিয়েছিল, কী করে রহস্যের জাল
বুনতে হয় আর কী করেই বা সেই জট ছাড়াতে হয় লেখকের আশ্চর্য লেখনীর
জাদুতে। সেই প্রথম বুঝলাম নিপুণ ঠাসবুনোট বাংলা গোয়েন্দা কাহিনি
কাকে বলে। আর তাই যখন শরদিন্দু 'বিশুপাল বধ' শেষ না করেই প্রয়াত
হলেন আর অতি অপটুভাবে নারায়ণ সান্যাল তা শেষ করার চেষ্টা করলেন
, আমার মনে হয়েছিল..এইবার সত্যি সত্যিই বিশুপাল দ্বিতীয়বার খুন
হল।
সত্যজিৎ রায়
ফটোগ্রাফার – দিনু আলাম
|
এরপর এক দুপুরে পিসেমশাই হাতে করে নিয়ে এলেন এক নতুন বই। 'বাদশাহী
আংটি'। এন্ট্রি নিল প্রদোষ সি মিটার ওরফে প্রদোষ মিত্তির ওরফে
ফেলুদা। সঙ্গে মগজাস্ত্র। খুব তাড়াতাড়ি আট থেকে আশি বছর ...সকলের
প্রিয় হয়ে উঠল সে। সারা দেশ চষে বেড়ায়, এমনকি বিদেশও। শরদিন্দুর
ব্যোমকেশের ভাষা যদি বহুমূল্য জড়োয়ার গয়না হয়, সত্যজিতের ফেলুদার
কথাবার্তায় চেনা নকশার কানপাশা , সাধারণ মকরমুখো বালা আর আটপৌরে
বিছেহারের ঝিলিক। রোজের ভাষা, রোজের কথা। কমিক রিলিফ হিসেবে লালমোহন
গাঙ্গুলি ওরফে জটায়ু। ব্যোমকেশ মাথা খাটাত বেশি, ফেলুদা সেই সঙ্গে
প্যাঁচ পয়জারও জানে। যুগ এগোচ্ছে। তাই সত্যজিতের গোয়েন্দা কাহিনিতে
মগজাস্ত্রর সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র এবং প্যাঁচ পয়জারের কেরামতি হাতে
হাত মিলিয়ে চলে আর ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি অ্যাডভেঞ্চারের দিকেই
অনেকটা বেশি ঝুঁকে পড়ে।
কিছুদিন পরে সমরেশ বসু নিয়ে এলেন গোগোলকে। প্রতি বছর দেব সাহিত্য
কুটিরের ঝকমকে লোভনীয় পুজোবার্ষিকীর হাত ধরে গোগোল আসত আমাদের
বাড়ি। তার ঝকঝকে বুদ্ধিদীপ্ত চোখ খুব সাধারণ দৃশ্যের মধ্যে ঠিক
খুঁজে বের করত লুকিয়ে থাকা অস্বাভাবিকতা, রহস্য। সে পুরীর বালিয়াড়িতে
জেগে থাকা সোনালি শাড়ির পাড়ের ঝলকেই হোক বা রাতের অন্ধকার পেরিয়ে
দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা রাজধানী এক্সপ্রেসের করিডোরে।
ছোটদের মন ভোলাতে এসেছিল ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়ের পাণ্ডব গোয়েন্দা
তাদের পোষা কুকুর সমেত। তবে আমার ভালো লাগত না। হয়তো ততদিনে ওই
সরল যুক্তিহীন মুগ্ধতার বয়স পেরিয়ে এসেছি বলে, অথবা একই ধরণের
লেখা হিসেবে ইংরিজিতে ফেমাস ফাইভ, সিক্রেট সেভেন , ন্যান্সি ড্রু
বা হার্ডি বয়েজ অনেক বেশি টানটান বলে।
আনন্দমেলায় এসেছিল মিতিনমাসি। সুচিত্রা ভট্টাচার্যর হাত ধরে।
মিতিনমাসির পোশাকি নাম প্রজ্ঞাপারমিতা। তার সহকারিণী ছিল বোনঝি
টুপুর। সেও ওই বছরে একটি করে। শারদীয়া আনন্দমেলায়। আনন্দমেলা তখন
হৈ হৈ করে আসত বাজারে। একেবারে ''এলাম, দেখলাম, জয় করলাম"
স্টাইলে। কারণ মিতিনমাসির সঙ্গে কিংবা তার কাছাকাছি সময়ে কী সামান্য
আগে দল পাকিয়ে পুজো স্পেশাল ট্রেনে চেপে আসত সন্তু-কাকাবাবু (সুনীল
গঙ্গোপাধ্যায়ের কলমে ), অর্জুন (সমরেশ মজুমদারের দৌলতে )। ম্যাজিশিয়ান
কিঙ্করকিশোর রায় ওরফে কিকিরাও আসতেন চাঁদু- তারাপদ ...দুই সাগরেদ
নিয়ে। গোগোলও এসেছে বার কয়েক।
অল্প সময়ের জন্য শ্রীমতী মীরা বালাসুব্রাহ্মানিয়াম নিয়ে এসেছিলেন
দক্ষিণ ভারতীয় রহস্যভেদী "প্রব্লেম সলভার পুল্লা রেড্ডি"কে।
আমার মোটেই মিস্টার রেড্ডির মুখে বাংলা ভাষা শুনে অবাক লাগেনি
কারণ দক্ষিণ কলকাতায় 'দক্ষিণী' লোকজন যাঁরা থাকেন, তাঁরা নির্ভুল
বাংলা বলতে অনেকেই পটু, বাংলা সাহিত্য পড়েন সানন্দে,এমনকী রবি
ঠাকুরের গানের সঙ্গে দিব্যি গলাও মেলান। প্রব্লেম সলভার পুল্লা
রেড্ডির দু-চারটে বই -ই ছিল...সব ক'টিই পেপারব্যাক, এখনও আমার
বইয়ের আলমারি ঘাঁটলে খুঁজে পাওয়া যাবে। এখন অবশ্য আনন্দমেলার ধাঁচ
অন্য। সে রামও নেই, সে অযোধ্যাও নেই। থাকার কথাও নয় , কারণ বাল্মিকীর
মতো কথাকাররা সবাই পরপারে।
মিতিনমাসি আর টুপুর মোটামুটি সাফল্য পাওয়ার পর সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়ের
কলমে আমরা পেয়েছি দীপকাকু আর কারাটে জানা কিশোরী ঝিনুককে। তার
ভালো নাম আঁখি। ওই আর কী ! সুচিত্রা , সুকান্ত মোটামুটি দক্ষ কথাকার,
তবে এঁরা কেউ আর ফেলু মিত্তিরের বিকল্প তৈরী করতে সক্ষম হননি।
ফেলুদার কোনো কাহিনিই "ফেল" করেনি। বাদশাহী আংটি , রবার্টসনের
রুবি আর শকুন্তলার কণ্ঠহারের রত্নদ্যুতি সত্যজিতের সঙ্গে সঙ্গেই
বিদায় নিয়েছে।
এখন ছোটদের পূজাবার্ষিকী ছেয়ে গেছে কল্পবিজ্ঞানের গল্পে। আমি
ব্যক্তিগতভাবে কল্পবিজ্ঞানের ভক্ত নই। মাঝে মাঝেই ভাবি, শিশুরা,
কিশোররা এখন আর গোয়েন্দা খোঁজে না ? রূপকথা চায় না ? শুধুই বিজ্ঞান
আর যন্ত্র ? তার জন্য কল্পবিজ্ঞানের দরকার কী ? বিজ্ঞানের সব খুঁটিনাটি
এবং অভ্রান্ত তথ্য ও তত্ত্ব তো বইয়ে আর নেট ঘাঁটলেই মেলে ! আমরা
পড়ার বইয়ের বাইরে গল্পের বই পড়তাম যখন ...একটা আরাম করে শ্বাস
নেওয়ার জায়গা খুঁজতাম। তাতে রহস্য ছিল, রোমাঞ্চ ছিল, রূপকথা ছিল
, স্বপ্ন ছিল। গোয়েন্দা গল্প আমাদের ঘুম-ভাঙানিয়া সোনার কাঠি ছিল।
বুদ্ধির গোড়ায় আমরাও ধোঁয়া দিতাম তেড়েফুঁড়ে। রহস্যভেদীর সঙ্গে
সঙ্গে আমরাও পথ চলতাম সমান্তরালে। কখনও দেখতাম দুটি পথ মিলেমিশে
গেছে, কখনও বা আলাদা। সেইমতো সাফল্য বা ব্যর্থতা আমাদের কখনও তৃপ্ত
করত, কখনও ভাবতাম, "দূর, ধরতেই পারিনি আসল ব্যাপারটা।"
আমার রহস্যকাহিনির ভুবনে যখন 'বড়দের জন্য' লেখা পাকাপোক্তভাবে
প্রবেশ করল, তখন শরদিন্দুর পরে এসেছিলেন নারায়ণ সান্যাল। নারায়ণ
সান্যাল নিয়ে এসেছিলেন ব্যারিস্টার বাসুকে। বাসুমামুর সঙ্গে কৌশিক
-সুজাতা। এরা দু-জন স্বামী স্ত্রী। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও বাসুমামুর
সঙ্গে এরা থাকে, তাঁর হুইলচেয়ার-বন্দী স্ত্রীকে “মামিমা” সম্বোধন
করে , বেশ এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলি কনসেপ্ট এবং মিলেমিশে রহস্যভেদ
করে। সিরিজ রহস্যোপন্যাস। 'কাঁটা সিরিজ'। তবে আমার মতে এ লেখায়
অরিজিন্যালিটি কম। নেপথ্যে থেকে স্ট্যানলি গার্ডনার আর আগাথা ক্রিস্টি
লেখককে প্লটের রসদ জুগিয়ে গেছেন অবিরাম। প্রথম দিকে তো ঋণস্বীকারটুকুও
করতে দেখিনি। তবে এও অস্বীকার করি না যে সাজিয়ে গুছিয়ে বাংলা ভাষায়
আমাদের চেনা পারিপার্শ্বিকতার প্রেক্ষাপটে তা ট্রান্সক্রিয়েট করে
পরিবেশন করতেও কিছুটা এলেম তো লাগেই ! সান্যাল মশাইয়ের সেটি ছিল।
প্রেমেন্দ্র মিত্র নিয়ে এসেছিলেন পরাশর বর্মাকে। পরাশর খুব আনঅ্যাজিউমিং
চেহারার রহস্যভেদী। সে আবার কবিতাও লিখত। কিছু কিছু কাহিনি কিন্তু
আমার ভালোই লেগেছিল।
অদ্রীশ বর্ধনের ইন্দ্রনাথ রুদ্র সুপুরুষ, ভাবালু চরিত্রের , ভাসা
ভাসা চোখ। তার আবার কবিতা বৌদির (লেখকের স্ত্রী , লেখক যথারীতি
গোয়েন্দার বন্ধু ) প্রতি কিঞ্চিৎ নিরামিষ অনুরাগ !
সৈয়দ মুজতবা সিরাজ। দাড়িওয়ালা পক্ষীবিশারদ রহস্যসন্ধানী নীলাদ্রিশেখর
বসু। অনেকের খুব পছন্দের হলেও আমাকে খুব টানেনি কোনোদিনই। সৈয়দ
মুজতবা সিরাজের আর একজন অল্পখ্যাত গোয়েন্দা ছিলেন অবশ্য। ইন্সপেক্টর
ব্রহ্ম।
এর পরে পড়েছি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর রহস্য কাহিনি। ভাদুড়ীমশাইয়ের
নানান কান্ডকারখানা। প্রথম পড়েছিলাম 'বরফ যখন গলে'। ভাদুড়ীমশাইয়ের
গল্প নীরেন চক্রবর্তী বলেছেন খুব আটপৌরে বিশ্বাসযোগ্য স্টাইলে।
যেন আমাদের বৈঠকখানায়, খাবার টেবিলে বসে আড্ডা দিতে দিতে গল্প
বলার মতো। আতিশয্যবর্জিত। আড়ালে আছে কালীচরণ, শান্তিলতার অশান্তি,
মুকুন্দপুরের মনসা, কামিনীর কণ্ঠহার ইত্যাদি ...প্রতিটি কাহিনি
বোনা হয়েছে খুব চেনা প্রেক্ষাপটে, আমাদের খুব চেনা মানুষজন নিয়ে।
তাই হয়তো আমার পড়তে ভালো লেগেছে, ক্লান্তি অনুভব করিনি। তবে নীরেনবাবুও
লিখতেন বছরে একটি। এবং সেই কারণে শারদ 'বর্তমান' পত্রিকার কাটতি
ছিল ভালোই। আমার মতো কিছু ভাদুড়িমশাইপ্রেমীর আনুকূল্যে।
শরদিন্দু বাবুর ভাইপো কৃশানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'রহস্যভেদী বাসব'।
খণ্ডে খণ্ডে বেরিয়েছে। ভালোই, তবে শরদিন্দুর পর অনেকটা ‘মধ্বাভাবে
গুড়ং দদাৎ’। এসেছে খুব অল্প সময়ের জন্য সমরেশ বসুর হাত ধরে গোয়েন্দা
অশোক ঠাকুর আর তার চেলা অয়স্কান্ত। সেই গোয়েন্দা কাহিনীতে আবার
একটু চারুলতা-অমল টাচও আছে। তবে পুরোপুরি প্লেটোনিক নয়। কারণ অশোক
ঠাকুর আর তার পঙ্গু জ্ঞাতি দাদার নি:সন্তান বৌ কাঞ্চন আড়ালে আবডালে
একটু আধটু ছোঁয়াছুঁয়ির খেলাও খেলে। বড়দের গল্প তো ! ইয়ে সব চলতা
হ্যায় ! গৌতম রায় এনেছেন গোয়েন্দা নীল ব্যানার্জীকে। আমার অনেকটা
একে ওই বাসব টাইপেরই লাগে। বাসব বরং সামান্য উন্নতমানের চরিত্রচিত্রণ
আর কাহিনিবর্ণন।
শেখর বসু ধারাবাহিক কিশোর গোয়েন্দা উপন্যাস লিখেছিলেন আনন্দমেলায়।
আমরা গোগ্রাসে গিলেছি। সোনার বিস্কুট। তারপর বেশ কিছু বড়দের রহস্যকাহিনি
লেখেন তিনি। সেগুলিও সুখপাঠ্য।
তপন বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ে এলেন আর এক বুদ্ধিমতী গোয়েন্দা গার্গীকে।
তার সহকারিণীও দেখছি এখন কালে কালে দিব্যি সমস্যার হালহকিকত খুঁটিয়ে
দেখতে শিখে গেছে। নাম তার সোনালিচাঁপা। পড়তে আমার মন্দ লাগে না।
তবে এ সবই কিন্তু ওয়ান টাইম রীড !
শেখর মুখোপাধ্যায় 'দেশ' পত্রিকায় যখন ধারাবাহিক লিখছিলেন 'গজপতি
নিবাস রহস্য'..তখন পড়িনি। পড়েছি বই হয়ে বেরোনোর পর। শেখরবাবু অত্যন্ত
দক্ষ কলমচি। রহস্য উপন্যাসটি আকারেও সুবৃহৎ। অপরাধী কে, তা কিছুটা
আঁচ করতে পারলেও সব মিলিয়ে এই লেখাটি আমাকে পাঠিকার ভূমিকায় বেশ
কয়েকদিন এক নাগাড়ে ব্যস্ত রেখেছিল।
বুদ্ধদেব গুহ যে দুটি গোয়েন্দা উপন্যাস লেখেন ... ঋজুদার রোমহর্ষক
অভিযান বাদ দিলে..একটি অ্যালবিনো আর অন্যটি ওয়াইকিকি ...দুটিই
দিব্যি সুখপাঠ্য লেগেছিল আমার।
হঠাৎ একদিন দেখি শীর্ষেন্দু নিয়ে এসেছেন 'শবর'কে। খুব অবাক হয়েছিলাম
দেখে। শীর্ষেন্দুর গদ্য এমন মায়াময় , এমন সহজ অথচ গভীর মনস্তত্ত্বমূলক
...ভাবছিলাম...বেশ তো ছিলেন ! আবার গোয়েন্দা গল্প কেন ! শবরকে
চিনলাম। কিন্তু সেভাবে একাত্ম হতে পারলাম না। শবর যে বড় শীতল,
কঠিন , ভাবলেশহীন ! আমি ঠিক রক্তমাংসের ছোঁয়া পাই না। হয়তো শীর্ষেন্দুর
অন্য সব মাটির কাছাকাছি চরিত্ররা এতদিন ধরে বড় বেশি নিজের হয়ে
উঠেছে বলেই।
অনীশ দেব অনেক রহস্যকাহিনি লিখেছেন। আমার যথেষ্ট প্রিয়ও বটে।
কিন্তু আমি এই আলোচনায় তাঁকে আনতে চাই না কারণ কোনো একটি 'বিশেষ'
গোয়েন্দা চরিত্র তাঁর লেখায় অনুপস্থিত। একজন লেখক যেমন তাঁর বিশেষ
গোয়েন্দাটিকে নিয়ে স্বতন্ত্র অবস্থান করেন, অনীশ দেবের ক্ষেত্রে
সে কথাটি খাটে না। আর সেই একই কারণে আমি সরিয়ে রাখছি শমীতা দাশ
দাশগুপ্ত , ঋতা বসু এবং অসীমপদ চক্রবর্তীকে। এবং সেই সঙ্গে অনেক
অন্য কলমচিকেও, যাঁরা এদিক ওদিক হয়তো অনেক খুচরো গোয়েন্দা কাহিনি
লিখেছেন, কিন্তু কোনো বিশেষ গোয়েন্দাকে আলাদা করে চিহ্নিত করতে
ইচ্ছুক নন।
গোয়েন্দা বললেই বেশ কেমন একটা স্মার্ট ঝকঝকে চেহারা , ছ'ফুট লম্বা,
এক মাথা কেয়ারফুলি কোম্বড চুল উইথ মাইল্ডলি কেয়ারলেস লুক, গায়ের
রং না-ফর্সা না-কালো , কাটা কাটা নাক মুখ , বুদ্ধিদীপ্ত চাউনি
, টিপটপ পোশাকের লোক আমার চোখে ভেসে ওঠে। মানে কল্পনায়। তা সে
ধুতি-পাঞ্জাবি পরুক, বা সাহেবী পোশাক। ব্যোমকেশ, কিরীটি রায় থেকে
ফেলুদা। আমি বাংলা সাহিত্যের গোয়েন্দাদের কথাই বলছি। সেখানে একেনবাবু
এক মূর্তিমান তালভঙ্গ।
একেন্দ্র সেন ওরফে একেনবাবু। উস্কোখুস্কো চুল , যশুরে কৈ মার্কা
চেহারা ( ক্যাংলা শরীর , হেঁড়ে মাথা ) , পোশাকআশাকও ভক্তি জাগায়
না। ঘ্যানঘেনে সুরে কথা বলেন , আবার ‘অতিভক্তি চোরের লক্ষণ’ টাইপ।
কথায় কথায় "স্যার স্যার” , “ম্যাডাম ম্যাডাম"। কলকাতা
গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্তাব্যক্তি , নিউ ইয়র্কে ক্রিমিনোলজি
নিয়ে পড়াশুনো করতে এসেছেন , ফুলব্রাইট ফেলোশিপ বাগিয়ে। বুঝুন !
তার মানে হেঁড়ে মাথায় "বুদ্ধি হ্যাজ" ! এই বুদ্ধি দিয়ে
রহস্যভেদের কাহিনি শুনিয়েছেন সুজন দাশগুপ্ত। সম্ভবত একমাত্র বাঙালি
রহস্যভেদী, যিনি আমেরিকান পুলিশের কান কেটে নিতে পারেন অক্লেশে...তাঁর
ক্ষুরধার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে।
এই বিপুল তালিকায় দু-চারজন গোয়েন্দা সাহসে ভর করে বিয়ে করেছেন।
বেশিরভাগই অকৃতদার। কেন কে জানে ! বিয়ে করলে পুরুষমানুষের কি তাহলে
সত্যি সত্যি বুদ্ধিশুদ্ধি লোপ পায়, নাকি বিয়ের পরে পুরুষমানুষ
এমনই ন্যাতাজোবরা চাল ডাল তেল নুন বেবিফুডের জীবন কাটায়, যে গোয়েন্দা
হিসেবে মাথা খাটানোয় আলস্য আসে ?
এই সব পড়ছি...ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। হঠাৎ দেখি বিজ্ঞাপন। প্রকাশিত হয়েছে
পাঁচকড়ি দে'র রচনাবলী। আমি ছুটতে ছুটতে কলেজ স্ট্রীট পৌঁছে গেছি।
নীলবসনা সুন্দরী...কোন ছোটবেলায় বাবার কাছে নাম শুনেছি আর ভেবেছি
..রহস্য এত রোম্যান্টিক নামের হয় ? কিংবা অন্য একটি নাম.."হত্যাকারী
কে ?" উত্তর.."পাঁচকড়ি দে"। এটি অবশ্য বহু পুরোনো
চালু রসিকতা। বই আর লেখকের নাম নিয়ে। কিনে আনলাম। পড়লামও। কাটা
ছেঁড়ার মধ্যে যাব না কোনো রকম, কারণ , বাংলা ভাষায় লেখা রহস্য
উপন্যাসের একেবারে গোড়ার দিকে এই বই সোরগোল তুলতে সক্ষম হয়েছিল।
বাকি যাঁদের কথা লিখলাম, সকলেই এসেছেন এর পরে, অনুসরণকারী হিসেবে।
যিনি প্রথম পথ দেখান, প্রায় অজানা অচেনা কোনো পথ, তাঁকে দু-পাশের
ঝোপ ঝাড় সরিয়ে পথ করে নিতে হয়, এমনকী জানাও থাকে না আদপেই, সে
পথ কোথাও সেভাবে পৌঁছে দেবে কিনা। অনুসরণকারীদের কাজ বরং…. অনেকটাই
সহজ !
এতক্ষণ ধরে নিজের যাত্রাপথ নিয়ে অনেক কথা বলেছি। নিজের অর্থাৎ
গোয়েন্দা সাহিত্যের একজন অনুরাগিণী পাঠিকার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে যতটুকু
স্মৃতিচারণ। এখন নৈর্ব্যক্তিকভাবে দেখি যখন, চিন্তা করি একটি সফল
গোয়েন্দা কাহিনিতে আমি পাঠিকা হিসেবে ঠিক কী কী বৈশিষ্ট্য আশা
করি।
প্রথমেই চাই গল্পের বুনোট এবং গতি হোক এমন, যে আমিও যেন রহস্যভেদীর
সঙ্গে একইভাবে সমান্তরালে কাহিনির সঙ্গে এগোতে পারি। ঠিক যেটি
আগেই উল্লেখ করেছি। এর অর্থ, সব ক'টি সূত্র থাকুক এমনভাবে সুচতুর
বুদ্ধিমত্তায় ছড়ানো ছিটানো..যাতে আমার চোখের সামনে তা আছে...কিন্তু
খুব তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণক্ষমতা না থাকলে আমি তা ধরতেই পারব না।
লেখক এমনভাবে কাহিনি বিন্যাস করবেন, যাতে অপরাধী যতটুকু বুদ্ধির
খেলা খেলছে অনুসরণকারী গোয়েন্দার সঙ্গে, ততটুকুই লেখক পাঠক/পাঠিকার
কাছে লেখার মাধ্যমে জানাবেন। কোনো বাড়তি বিভ্রম ছড়াবেন না।
গোয়েন্দা কাহিনি হবে নিটোল, নিপাট। তাতে রহস্যের জালটুকুই বোনা
হবে শুধু এবং কাহিনির শেষে সে জট ছাড়ানো হবে। শাখা প্রশাখায় তাতে
ইনিয়েবিনিয়ে অন্য গল্প ঢুকবে না।
অপরাধ ও অপরাধীর বিশ্লেষণমূলক উন্মোচন আবশ্যিক। কাকতালীয়ভাবে
রহস্যভেদ হয়ে গেল বা অপরাধী এমন মূর্খের মতো কিছু জবানবন্দী দিল
যে রহস্যভেদের তীক্ষ্ণতা নিতান্ত জোলো হয়ে গেল..তা কখনোই কাম্য
নয়।
একটি মূল গোয়েন্দা চরিত্র থাকবে। প্রয়োজনে তার সহকারী/সহকারিণী
থাকতে পারে। কিন্তু আসল বুদ্ধির খেলা খেলবেন গোয়েন্দা নিজে। একই
কথা অপরাধীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। একাধিক অপরাধী থাকলেও থাকতে পারে,
মাস্টারমাইন্ড কিন্তু একটিই।
অপরাধ সংঘটিত হবে নিপুণ দক্ষতায়। তাতে তত্ত্বগতভাবে কোনো ফাঁকফোকর
থাকবে না। অপরাধ আর তার বিশ্লেষণ হবে যুক্তিসম্মত ও বৈজ্ঞানিক,
গল্পের গরু যেন গাছে না চড়ে বা তথ্যে ও তত্ত্বে যেন কোনো ভুল না
থাকে।
কাহিনিবিন্যাসে বর্ণনার ছটা আর প্রয়োজনাতিরিক্ত ঘটনা আর ভাষার
ঘনঘটা অবান্তর। গল্প দশ পৃষ্ঠারই হোক বা তিনশ' পৃষ্ঠার ..পাঠক/পাঠিকার
যেন টানটান উত্তেজনা বজায় থাকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত। পড়তে শুরু
করাটি আমার ( পাঠক/পাঠিকার ) ইচ্ছেমতো, কিন্তু তারপর লাগাম লেখকের
কলমে। তিনি যেন আমাদের কাউকেই দম ফেলার ফুরসৎ না দেন।
আমি আমার লেখায় খুব একটা বিশ্লেষণের মধ্যে সমালোচনার মধ্যে যাইনি।
কিছু লেখক ও লেখার উল্লেখ করেছি মাত্র। কে কেমন লিখেছেন বা লেখেন
..তা প্রত্যেক পাঠকের বিচারে আলাদা আলাদা। আমার লেখা থেকে ইচ্ছুক
পাঠক নতুন করে হয়তো অনেক লেখাই ফিরে আবার পড়ে দেখবেন। যে কোনো
উচ্চমানের গোয়েন্দা গল্প দু-বার অন্তত পড়া উচিত। কারণ নিপুণ কলমচি
হলে প্রথমবার আমরা ধরতেই পারব না ..কে অপরাধী। তারপর গোয়েন্দার
বিশ্লেষণে মুগ্ধ হব। তখন আবার একবার প্রথম থেকে পড়ে দেখলে বুঝতে
পারব কোথায় আমাদের মাথা খাটানোয় ঘাটতি ছিল।
আমার আরও একটা কথা মনে হয়। গোয়েন্দা সাহিত্য রচনা ইজ নট এভরিওয়ান'স
কাপ অফ টি। এখানে 'প্রত্যেক' বলতে প্রত্যেক কলমচির। অনেকে হয়তো
দক্ষ সাহিত্যিক, গল্পকার বা ঔপন্যাসিক ..কিন্তু তার মানেই কিন্তু
তিনি সিদ্ধ গোয়েন্দাকাহিনি রচনাকার নন। আবার অনেকে হয়তো ক্ষুরধার
যুক্তিবুদ্ধিসম্পন্ন, তাঁদের বিশ্লেষণী ক্ষমতাও অসীম...কিন্তু
তাঁদের সাহিত্যনির্মাণে যথাযথ দক্ষতা নেই। এই দুইয়ের অর্থাৎ কলমের
জোর আর যুক্তি-বুদ্ধি-বিশ্লেষণের ক্ষমতা যখন ঠিকঠাক সুষম অনুপাতে
মেলে , তখনই সর্বতোভাবে সফল গোয়েন্দা সাহিত্য সৃষ্টি করা সম্ভব।
আর তাই হয়তো আমি আজও শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় আর সত্যজিৎকে ...ব্যোমকেশ
আর ফেলুদাকে আমার পাঠিকাসত্তার নিরিখে এখনও সর্বাগ্রে রাখি।
লেখক পরিচিতি - কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওফিজিক্স অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের ছাত্রী | প্রথম ভালোবাসা সাহিত্য | তিন দশক ধরে ভাষান্তরের কাজে যুক্ত | বেশ কিছু অনূদিত বই প্রকাশিত হয়েছে সাহিত্য অকাদেমি , ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট , প্রতিভাস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা সংস্থা থেকে | ভাষান্তরের পাশাপাশি নিজস্ব অনিয়মিত লেখালেখির ফসল হিসেবে টুকরো গদ্য, ছোট গল্প , কবিতায় এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত বই ন'টি |
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।