বিশেষ গোয়েন্দা সংখ্যা
বিশেষ গোয়েন্দা সংখ্যা - জানুয়ারি, ১৫, ২০১৭
ইংরেজি গোয়েন্দা কাহিনির আদি থেকে স্বর্ণযুগ
এবং...
সুজন দাশগুপ্ত
গোড়ার কথা
অপরাধ (ক্রাইম) কাহিনির উৎস সন্ধান করতে গিয়ে শ্রদ্ধেয় সুকুমার
সেন মন্তব্য করেছিলেন,
“ক্রাইম কাহিনি অর্থাৎ ডিটেকটিভ গল্প-উপন্যাস
আধুনিক কালে, ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে সৃষ্টি, সে ধারণা বোধকরি
অনেকেরই আছে। এ ধারণা যথার্থ বলব যদি সে গল্পকাহিনি পুলিশি ব্যবস্থার
প্রতিষ্ঠার পরে রচিত হয়ে থাকে, নইলে নয়।”
সুকুমার সেন বৈদিক যুগেও ক্রাইম কাহিনির উদাহরণ পেয়েছেন এবং বইয়ে
তার উল্লেখ করেছেন। গোয়েন্দা কাহিনির সূচনা খুঁজতে গিয়ে কেউ কেউ
ঈশপের গল্প বা চসারের ক্যান্টারবেরি টেলস-এর প্রসঙ্গ এনেছেন। একাধিক
দেশের প্রাচীন সাহিত্যে কিছু কিছু অপরাধ কাহিনি পাওয়া যায় যেখানে
পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এবং সেই সব পর্যবেক্ষণ থেকে যুক্তি সংগত সিদ্ধান্তে
আসার উদাহরণ আছে। কিন্তু এগুলোর কোনওটিই গোয়েন্দা গল্প নয়, কারণ
এই সব গল্পে কোনও গোয়েন্দা বা পুলিশের ভূমিকা নেই – যেটা গোয়েন্দা
কাহিনিতে আবশ্যিক।
অপরাধ অনুসন্ধানের জন্যে পুলিশি ব্যবস্থা এসেছে অনেক পরে। ১৮৪২
সালে লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ ফোর্সে অপরাধ অনুসন্ধান করার জন্যে
একটা নতুন বিভাগ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে স্থাপিত হয়। তারও এক বছর
পরে ১৮৪৩ সালে গোয়েন্দা বা ডিটেকটিভ কথাটি প্রথম অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে
স্থান পায়। প্রসঙ্গত, তথ্য উদ্ঘাটনের ক্ষেত্রে ফ্রান্স কিন্তু
ইংল্যান্ডের থেকে এগিয়ে ছিল। ১৮৩৩ সালে, ফ্রাঁসোয়া ইউজেন ভিদোচ
(যিনি এক সময়ে নানা রকম দুষ্কর্ম করে জেল খেটেছিলেন) প্যারিসে
একটি তথ্য (Le bureau de renseignements) সংস্থা খোলেন, যেটিকে
বলা যেতে পারে প্রাইভেট ডিটেকটিভ এজেন্সি। ভিদোচ তাঁর আত্মজীবনীতে
অপরাধীদের নানান ছলচাতুরি নিয়ে লিখেছিলেন। ভিদোচেরও অনেক আগে ১৭৪৭
সালে ফ্রান্সের বিখ্যাত দার্শনিক ভলটেয়ার 'জাদিগ উ লা দেস্টিনি '
নামে একটি বই লিখেছিলেন যাতে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ ক্ষমতার কিছু
উদাহরণ ছিল। বইয়ের একটি কাহিনি মনে হয় ভলটেয়ার পারস্যের লোকগাথা
থেকে সংগ্রহ করেছিলেন, যদিও ভিন্ন ভিন্ন রূপে কাহিনিটি ভারতীয়
ও অন্যান্য দেশের লোকগাথাতেও রয়েছে --
এক রাজার উট হারিয়ে গেছে। রাজা তাঁর অশ্বারোহীদের সেটা খুঁজতে
পাঠালেন। অশ্বারোহীরা এক মেষপালককে জিজ্ঞেস করল, উটটা দেখেছে কিনা।
মেষপালক জিজ্ঞেস করল, "উটটা কি ডানচোখে দেখতে পায় না?"
"হ্যাঁ, পায় না।"
"ওর সামনের বাঁ পাটা কি খোঁড়া?"
"ঠিক তাই।"
"আর সামনের দাঁতগুলির মধ্যে একটা কি নেই?"
"একদম ঠিক।"
"না, আমি ওটাকে দেখি নি", মেষপালক বলল।
"তবে রে মিথ্যুক!" রাজার অশ্বারোহীরা মেষপালককে বেঁধে
রাজার কাছে নিয়ে গিয়ে বলল, " মহারাজ, লোকটা বলছে উটটাকে দেখে
নি, কিন্তু উটের হুবহু বর্ণনা আমাদের দিয়েছে।"
"কী ব্যাপার !" রাজা অসন্তুষ্ট হয়ে মেষপালকের উদ্দেশ্যে
বললেন।
মেষপালক বলল, "মহারাজ, আমি জানি যে উটটার বাঁ চোখটা খারাপ,
তার কারণ দুদিকেই চমৎকার ঘাস, কিন্তু উটটা শুধু ডান দিকের ঘাস
খেয়েছে। ওর সামনে বাঁ-পাটা খোঁড়া, সেটা আমি মাটিতে ওর পায়ের ছাপ
দেখেই বুঝতে পেরেছি। আর ফোকলা দাঁতের ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছি ওর
ঘাস খাওয়ার ধরণ দেখে। দুপাশে ঘাস ঘাস চিবানো হয়েছে, কিন্তু মাঝে
একটুখানি জায়গায় কামড় পড়ে নি। আমি মহারাজ, আপনার লোকদের দেখাতে
যাচ্ছিলাম কোন দিকে উটটা গিয়েছে, তার আগেই ওরা আমাকে ধরে নিয়ে
এসেছে।"
গোয়েন্দা কাহিনির বীজ এ ধরনের গল্পের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল।
গোয়েন্দা কাহিনি
গল্প অনেক হল, এবার ফিরে আসা যাক গোয়েন্দা কাহিনি প্রসঙ্গে যেটি
অবসর-এর এই বিশেষ সংখ্যার উপজীব্য। অপরাধ কাহিনি বা রহস্য কাহিনিতে
গোয়েন্দা নাও থাকতে পারে; কিন্তু গোয়েন্দা কাহিনিতে অন্তত একটি
গোয়েন্দা-চরিত্র থাকতেই হবে – পেশাদার বা অপেশাদার, সে যে গোত্রেরই
হোক না কেন। সাধারণভাবে গোয়েন্দা গল্পের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হল :
• আপাতদৃষ্টিতে একটি নিখুঁত অপরাধকাণ্ড ঘটেছে;
• পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলী না তলিয়ে দেখার ফলে নির্দোষ ব্যক্তিকে
অপরাধী সন্দেহ করা হচ্ছে;
• রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ অপদার্থ ভোঁতাবুদ্ধি পুলিশ (বা অন্য কেউ)
নির্দোষ ব্যক্তিকে আটক/গ্রেপ্তার করেছে;
• গোয়েন্দা তার ক্ষুরধার বুদ্ধি এবং বিশ্লেষণীশক্তি প্রয়োগ করে
রহস্যের মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন। এই বিশ্লেষণে মনস্তাত্ত্বিক,
বৈজ্ঞানিক, সামাজিক, আইনী, ইত্যাদি নানান দিকের চিন্তা জড়িয়ে থাকতে
পারে; এবং
• নানান তথ্য ও যুক্তি পর পর সাজিয়ে পাঠককে হতচকিত করে গোয়েন্দা
সন্দেহের তালিকায় যে ছিল না, তাকেই দোষী বলে ধরতে পেরেছেন।
রহস্য কাহিনির ব্যাপ্তি অনেক বিস্তৃত, ইতিহাসও সুদীর্ঘ। কিন্তু
ইংরেজি গোয়েন্দা কাহিনির উৎস খোঁজার জন্য বহু বছর পিছিয়ে যাবার
কোন প্রয়োজন নেই। ভাবতে একটু অবাকই লাগে, আধুনিক গোয়েন্দা কাহিনির
বয়স একশো আশি বছরও নয়।
প্রথম গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস
এডগার অ্যালান পো
|
১৮৪১ সালে এডগার অ্যালেন পো-র লেখা ‘দ্য মার্ডারস ইন দ্য রু
মর্গ ' (উচ্চারণ, 'মঘ') গল্পকেই প্রথম আধুনিক গোয়েন্দা গল্প হিসেবে
স্বীকৃতি দেওয়া হয়। অবশ্য প্রথম গল্প হিসেবে কেউ কেউ ১৮১৯ সালে
ই. টি. এ হফম্যান-এর জার্মান ভাষায় লেখা ‘ম্যাদামোজেল দ্য স্কাডারি’
(Mlle. de Scudery) কথাও উল্লেখ করেছেন। এই গল্পটি পড়েই নাকি পো
অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। এগুলি সবই কথার কথা। পো জার্মান জানতেন কি
না আমার জানা নেই, কিন্তু ফ্রেঞ্চ জানতেন, ভলটেয়ারের 'জাদিগ উ লা দেস্টিনি '-ও সম্ভবত
পড়েছিলেন। সুতরাং বলতেই পারা যায়, সেটিও পো-কে অনুপ্রাণিত করেছিল;
কে আপত্তি তুলবে? আবার এই বিশেষ সংখ্যাতেই শমীতা দাশ দাশগুপ্ত
আরও দুজন মার্কিন মহিলা লেখিকার কথা উল্লেখ করেছেন যাঁরা পো-র
আগে যে কাহিনি লিখেছিলেন সেগুলো পরিপূর্ণভাবে গোয়েন্দা কাহিনি
বলা চলে না, তবে নিঃসন্দেহে এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য।
পো-র ‘দ্য মার্ডারস ইন দ্য রু মর্গ ' গল্পটির প্রধান চরিত্র 'ড্যুপাঁ'
নামে একজন উৎকেন্দ্রিক লোক। কী করে সুসংবদ্ধভাবে ধাপে ধাপে চিন্তা
করে একটা দুরূহ রহস্য সে উদ্ঘাটন করেছিল, তাই নিয়েই গল্প। এই গল্পটি
ছাড়াও পো এই ধরণের বেশ কয়েকটি কাহিনি বিভিন্ন আঙ্গিকে লিখেছেন
– 'পর্লয়েন্ড লেটার্স,' ‘দ্য মিস্ট্রি অফ মারি রজে,’ ইত্যাদি।
‘দ্য মার্ডারস ইন দ্য রু মর্গ ' শুধু প্রথম পূর্ণাঙ্গ গোয়েন্দা কাহিনি
নয়, বন্ধ-দরজা (ক্লোজড ডোর বা লকড ডোর মিস্ট্রি) নিয়ে যে সব উৎকৃষ্ট
কাহিনি রচিত হয়েছে, এটি তাদের অন্যতম। পো অবশ্য ড্যুপাঁকে গোয়েন্দা
বলেননি। বলবেন কী করে, কথাটা তো তখন ডিকশনারিতেই ছিল না।
পো-র গল্পগুলো দীর্ঘ হলেও উপন্যাস নয়। গোয়েন্দা কাহিনি নিয়ে পুরো
মাপের উপন্যাস সম্ভবত চার্লস ফিলিক্সের ‘দ্য নটিং হিল মিস্ট্রি’।
এটি প্রকাশিত হয় ১৮৬৩ সালে। তার কিছুদিন বাদে ১৮৬৮ সালে বেরোয়
উইল্কি কলিন্সের বিখ্যাত গোয়েন্দা উপন্যাস 'দ্য মুন্সটোন'। কলিন্স
কিন্তু গল্পে শখের গোয়েন্দা আনেননি। তাঁর ডিটেকটিভ সার্জেণ্ট কাফ্
ছিলেন পুলিশ বিভাগেরই লোক। কিন্তু বুদ্ধিতে তিনি ড্যুপাঁ-র থেকে
কিছুমাত্র কম দড় ছিলেন না। কাফ্-কে নিয়ে কলিন্স শুধু গোয়েন্দাগিরিই
করাননি, তাঁকে একটা নেশাও দিয়েছিলেন - বাগান করার নেশা, বিশেষতঃ
গোলাপ ফুলের। গোয়েন্দারাও যে মানুষ, তাদেরও যে কিছু নেশা বা খ্যাপামি
থাকতে পারে - সেটাই বোধহয় কলিন্স দেখাতে চেয়েছিলেন। পরবর্তী যুগের
অনেক লেখকরা এ ব্যাপারে কলিন্সের পথ অনুসরণ করেছেন। নিরো উল্ফের
অর্কিড-প্রিয়তা ও ভোজনবিলাসিতা, হারকিউল পয়রোর (বলা উচিত এ্যরকুল
পোয়ারো - আগাথা ক্রিস্টির বেলজিয়ান গোয়েন্দা বারবার চেষ্টা করেও
নামের শুদ্ধ উচ্চারণটা আমাদের রপ্ত করাতে পারেননি!) পোষাক-পরিচ্ছদ
নিয়ে অতি-সচেতনতা এবং গোঁফের দৈনন্দিন পরিচর্যা, শার্লক হোমসের
পাইপ টানা এবং বেহালা বাজাবার নেশা, ইত্যাদি।
উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধ থেকে গোয়েন্দা উপন্যাস ইংল্যাণ্ডে জনপ্রিয়
হতে শুরু করে। সম্ভবতঃ তার একটা কারণ এর আগে যে সব বই ছাপা হত
সেগুলি কিনতেন ও পড়তেন অভিজাত সম্প্রদায়ের লোকেরা। সাধারণ লোকের
না ছিল তেমন শিক্ষা, না ছিল ক্রয়ক্ষমতা কিংবা অবসর। কিন্তু সাক্ষরতা
বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নতির ফলে অবসর বিনোদনের জন্যে সাধারণ
লোকের বইয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মাল। সৃষ্টি হল নতুন পাঠকশ্রেণী -
যাঁদের অনেকে ইংরেজি ক্লাসিক্স-এর থেকে রহস্য-রোমাঞ্চর প্রতি বেশি
আকৃষ্ট হলেন। হয়তো এইসব পাঠকদের কথা ভেবেই বিখ্যাত সাহিত্যিক চার্লস
ডিকেন্স রহস্য ও রোমাঞ্চর কয়েকটা ছোট গল্প লিখেছিলেন, তার একটি
হল 'ক্লিক হাউস' (১৮৫৩)। ১৮৭০ সালে চার্লস ডিকেন্স 'দ্য মিস্ট্রি
অফ এডউইন ড্রুড' লিখতে শুরু করেন। অসাধারণ এই রহস্য উপন্যাসটি
শেষ পর্যন্ত রহস্যই থেকে যায়, কারণ ডিকেন্স এটিকে শেষ করে যেতে
পারেননি।
১৮৭৮ সালে অ্যানা ক্যাথারিন গ্রীন লিখলেন দ্য লেভেনওয়ার্থ কেস।
মেয়েদের মধ্যে তিনিই হলেন প্রথম রহস্যোপন্যাস-লেখিকা। ইংল্যান্ডের
কাণ্ট্রিহাউসের এক রহস্যকে উনি যে ভাবে উদ্ঘাটিত করেছিলেন তা পরবর্তী
বেশ কিছু লেখককে প্রভাবিত করছে।
আর্থার কনান ডয়েল
|
এর পরে যিনি গোয়েন্দাসাহিত্যে এলেন তিনি হলেন আর্থার কোনান ডয়েল।
তাঁর সৃষ্ট শার্লক হোমস নিঃসন্দেহে গোয়েন্দা হিসেবে সাহিত্যজগতে
সবচেয়ে বেশি পরিচিত। ১৮৮৭ সালে প্রকাশিত শার্লক হোমসের প্রথম কাহিনি
' এ স্টাডি ইন স্কার্লেট'। প্রমাণসূত্র আবিষ্কারে অসামান্য দক্ষতা,
সুতীক্ষ্ণ বিশ্লেষণী শক্তি ও সুগভীর অন্তর্দৃষ্টির জন্যে হোমস
আজ গোয়েন্দা জগতে কিংবদন্তি পুরুষ। শার্লক হোমসের কীর্তিকলাপ কোনান
ডয়েল লিপিবদ্ধ করালেন হোমসের গুণমুগ্ধ বন্ধু ওয়াটসনকে দিয়ে। কোনান
ডয়েলের পরে একই স্টাইল বহু লেখকই অনুসরণ করেছেন (নিরো উল্ফের আর্চি
গুডউইন, এ্যরকুল পোয়ারোর ক্যাপ্টেন হেস্টিংস প্রমুখ)। অবশ্য এই
ধারাটা শুরু করেছিলেন এডগার অ্যালেন পো। তাঁর প্রথম রহস্যকাহিনি
‘মার্ডার ইন দ্য রু মর্গ’-এ 'গোয়েন্দা' ড্যুপাঁর একজন মোটামাথা
ভক্ত বন্ধুকে (সেই লেখকের নাম অবশ্য আমরা কেউ জানি না) দিয়ে তার
কীর্তিকাহিনি লিখিয়েছিলেন।
কেন সবাই এই ফর্মুলা ব্যবহার করেছেন? কারণ এক্ষেত্রে ‘আসল লেখক’
গল্পের পেছনে লুকিয়ে থেকে চমৎকারভাবে এই চরিত্রগুলিকে পরিচালনা
করার সুযোগ পান। অপেক্ষাকৃত স্বল্পবুদ্ধি কাহিনিকারদের দিয়ে এদিক
ওদিক থেকে কিছু কিছু সূত্র পাঠকদের ধরিয়ে দিয়ে তিনি পাঠকদের
আস্থা অর্জন করেন। কিন্তু সূত্রগুলি জোড়া লাগানোর পদ্ধতিটা সযত্নে
গোপন রাখেন শেষে গোয়েন্দার মুখ দিয়ে বলানোর জন্যে। আরেকটা বাড়তি
সুবিধাও এই format-এ আছে। রহস্য উদঘাটনের পরে গোয়েন্দাদের এই
গুণমুগ্ধ কাহিনিকারদের দিয়ে গোয়েন্দার বুদ্ধিমত্তার ভুরি ভুরি
প্রশংসা সহজেই করানো যায়, লেখক নিজে সেই কাহিনিকার হলে প্রকারান্তরে
নিজের বুদ্ধিরই প্রশংসা করা হবে! মন্তব্যটি লেখিকা ডরোথি সেয়ার্সের
– হুবহু ঠিক এইভাবেই অবশ্য বলেননি।
গোয়েন্দা কাহিনির দুই মূল ধারা
গোয়েন্দা কাহিনি নানান রকমের হতে পারে। কিন্তু মোটামুটি ভাবে দুটো ধারার মধ্যে সেগুলোকে ফেলা যায়।
(১) প্লট-চালিত "whodunit" (অর্থাৎ
“অপরাধ কে করেছে?” Who has done it? অথবা Who did it?)।
এই ধারার লেখাগুলিতে রহস্য সমাধানের সূত্রগুলি গল্পের মধ্যে ছড়িয়ে
থাকে, আর তেমন ভাবেই ছড়ানো থাকে red herring (ভুল সূত্র) - আসল
সূত্র থেকে মনোযোগ সরিয়ে পাঠককে বিপথে চালিত করার নানান ফন্দিফিকির
- হেঁয়ালি, সঙ্কেত, ভুল পথ, অদ্ভুত রস, বীভৎস রস – যে কোনও অস্ত্র।
গল্প শেষ হবার আগে পর্যন্ত পাঠক সূত্র সাজিয়ে দোষী ধরতে না পারলেই
লেখক সফল। মজা হল, এই গোয়েন্দা হয়ে লড়ে যাবার খেলায় পাঠক হারলেও
খেলার উত্তেজনা নেশার মত কাজ করে। পরের গল্প পড়ার জন্যে মন উদগ্রীব
হয়ে থাকে।
প্লট-চালিত "whodunit"ধারার কয়েকটি উপধারা আছে। যেমন,
(ক) আদালত-নাটক (courtroom drama)। কোর্টে উকিলের ক্ষুরধার সওয়ালে
ধীরে ধীরে প্রমাণিত হবে যে, অভিযুক্ত লোকটি নির্দোষ। সেই সঙ্গে
প্রকাশ পাবে কে এই অপরাধটি আসলে করেছে। বাংলা বা হিন্দি সিনেমায়
এই ধরনের কোর্ট সিন মাঝেমধ্যে দেখা যায় ।
(খ) পুলিশি তদন্ত -- যাঁরা অপরাধী ধরার ব্যাপারে পুলিশি-পদ্ধতি জানতে আগ্রহী, তাঁদের
তৃপ্তির জন্য যেসব গোয়েন্দা-কাহিনি সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলি পুলিশি
পদ্ধতি বা পুলিশি তদন্ত বলে চিহ্নিত। এখানে পুলিশের বিভিন্ন অনুসন্ধান
পদ্ধতিকে তুলে ধরে রহস্যের কিনারা করা হয়।
(গ) মেডিকো লিগ্যাল বা ফরেন্সিক গোয়েন্দা কাহিনি । আধুনিক ফরেন্সিক
বিজ্ঞানের নানান প্রয়োগে এই ধারাটি সম্প্রতি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
গোয়েন্দা কাহিনির স্বর্ণযুগে এর কিছুটা পরিচয় পাওয়া যায় আর রিচার্ড
অস্টিন ফ্রিম্যান-এর লেখায়। ইত্যাদি ।
(২) ‘howcatchem’ – ‘কেমনে ধরি তারে।’
গোয়েন্দা গল্পের এই ধারাটি বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে শুরু হয়েছিল
- এগুলোকে বলা হয় Inverted Detective Stories বা উলটো গোয়েন্দা-গল্প।
এই রকম গল্পে খুন বা প্রধান অপরাধ প্রথমেই দেখিয়ে দেওয়া হয়, এমনকী
অপরাধীকেও চিহ্নিত করা হয়। গোয়েন্দা কী ভাবে বিভিন্ন সূত্র থেকে
শেষ পর্যন্ত তাকে পাকড়াও করছে সেটিই গল্পের উপজীব্য। সম্ভবত আর
অস্টিন ফ্রিম্যান ১৯১২ সালে ধরনের কাহিনি শুরু করেছিলেন ‘দ্য সিংগিং
বোন’ কাহিনি দিয়ে। এ ধাঁচের গল্প খুব বেশি লেখা না হলেও সিনেমা
বা টেলিভিশন শো'তে উলটো গোয়েন্দা গল্পের একটা তীব্র আকর্ষণ আছে। যাঁরা
পঞ্চাশ দশকে আলফ্রেড হিচককের সিনেমা 'ডায়াল এম ফর মার্ডার' বা
'রিয়ার উইন্ডো' দেখেছেন বা সত্তর আশি দশকের টিভি সিরিজ 'কলাম্বো'
দেখেছেন - তাঁরা বিষয়টি ধরতে পারবেন।
গোয়েন্দা কাহিনির স্বর্ণযুগ
ইংল্যান্ডে গোয়েন্দা-গল্পের স্বর্ণযুগ ছিল "whodunit গল্পের
যুগ। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক থেকে পঞ্চাশ দশক পর্যন্ত এই স্বর্ণযুগে
আমরা পাই অ্যান হকিং, আগাথা ক্রিস্টি, অ্যান্টনি বার্কলে, ফ্রিম্যান
উইলস ক্রফ্ট, ডরোথি সেয়ার্স, প্রমুখ লেখকদের। এঁদের গোয়েন্দারা
কেউ ছিল সখের, কেউ বা পেশাদার। পটভূমিতে প্রাধান্য ছিল ইংল্যান্ডের
কান্ট্রি হাউস; মূল চরিত্ররা ছিল অভিজাত শ্রেণীর লোক। তাই অনেক
সময়ে এগুলোকে ‘ম্যানর’ মিস্ট্রি (বড় বাড়ির রহস্য) বলা হত। অনেক
সময়ে চুরি বা হত্যাকাণ্ড ঘটত একটা বন্ধ ঘরে, যেখানে আপাতদৃষ্টিতে
ঢোকা বা বেরোনোর কোন পথ নেই। সেই বিশেষ গল্পের ধারাকে আবার ‘ক্লোজড’
বা ‘লকড’ ডোর’ মিস্ট্রি বলা হত – বাংলায় বলা যেতে পারে ‘বন্ধ-ঘর’
রহস্য।
স্বর্ণযুগের অভিজাত শ্রেণীর ব্রিটিশ গোয়েন্দারা ছিলেন অপেক্ষাকৃত
শান্ত স্বভাবের। তদন্তের জন্য খোঁজখবর করতে তাঁরা ঘটনাস্থলে যেতেন,
অনেক সময় আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষাও হয়ত করতেন, কিন্তু আগ বাড়িয়ে
প্রতিপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধে নামতেন না। আবার অনেক ডিটেক্টিভ ছিলেন,
যাঁরা ঘটনাস্থলেও পৌঁছতেন না। কারো মুখ থেকে ঘটনা ও ঘটনাস্থলের
বিবরণ শুনে ঘরে বসেই দোষী ধরে ফেলতেন। এমন 'আলস্যপরায়ণ' বসে থাকা
গোয়েন্দাদের বলা হত 'আর্ম-চেয়ার ডিটেক্টিভ'|
স্বর্ণযুগের গল্পগুলিতে মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, আধুনিক বিজ্ঞান
ও প্রযুক্তি, অশ্লীল শব্দ (যদিও মার্কিন কিছু কাহিনিকারকে বাদ
দিতে হবে), যৌনতা, হত্যাকাণ্ডের বীভৎস বর্ণনা, নারী, সমকামী বা
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের গোয়েন্দা, হাস্যরস, রাজনৈতিক ও সামাজিক
পরিপ্রেক্ষিত, নিম্নবর্গের বা অন্য সমাজের মানুষ, এ সব প্রায় অনুপস্থিত
ছিল। সে তুলনায় গোয়েন্দা গল্পের জগত এখন নিঃসন্দেহে অনেক বেশি
বিস্তৃত। তবে এখনও গল্পের স্বর্ণযুগের যাদুর মোহ আমরা কাটাতে পারিনি।
‘কোজি মিস্ট্রি’ (স্বাচ্ছন্দ্যময় রহস্য) অর্থাৎ যেখানে অপরাধ এবং
তদন্ত প্রক্রিয়া দুটিই পরিচিত সামাজিক গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ এবং
যৌনতা ও খুনোখুনি বিষয়টি গৌণ, তার পাঠক ও লেখকের অভাব এখনো নেই।
১৯৩৫ সালে বইয়ের জগতে একটি পরিবর্তন আসে যার ফলে রহস্যগল্পের
জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পায়। লন্ডনের পাবলিশার অ্যালেন লেন ও তাঁর
দুই ভাই শুরু করলেন পেপারব্যাক বইয়ের প্রচলন। শক্ত কভারে বাঁধাই
করা দামি বইয়ের সস্তা সংস্করণ প্রকাশ শুরু হল পেপার কভারে। জন্ম
হল পেঙ্গুইন প্রকাশনার। অপেক্ষাকৃত কম দামের এই বইগুলি কেনা লোকের
পক্ষে আরও সহজ হল।
বিংশ শতাব্দীর তিরিশ চল্লিশ দশকে গোয়েন্দা কাহিনির জনপ্রিয়তার
ঢেউ ইংল্যান্ড থেকে গিয়ে পৌঁছল আমেরিকায়। সেই ঢেউ পৌঁছবার ঠিক
একটু আগে আমেরিকার দুই লেখক ঠিক করলেন একা নয়, তাঁরা দু-জন একসঙ্গে
রহস্যকাহিনি লিখবেন নতুন আঙ্গিকে। ফ্রেডারিক ড্যানে ও ম্যানফিল্ড
বি.লি সৃষ্টি করলেন তাঁদের গোয়েন্দা এলারি কুইনকে। ১৯২৯ সালে দ্য
রোম্যান হ্যাট মিস্ট্রি-তে এলারি কুইন আর তাঁর বাবা রহস্য-উদঘাটনে
নামেন। দুই লেখক মিলে ৩৩ টি এলারি কুইনের বই লিখেছিলেন, যা এখনও
বহু পাঠককে আনন্দ দেয়।
মার্কিন মুলুকের
ঝানু গোয়েন্দা
এই স্বর্ণযুগের মাঝামাঝি সময়ে, মার্কিন মুলুক থেকে আগমন হয় আরেক
দল গোয়েন্দার। এঁদের নাম দিই ‘ঝানু গোয়েন্দা।’ এঁদের আভিজাত্য
নেই, সাধারণ খেটে খাওয়া লোক। এঁরা রিভলভার নিয়ে ঘোরেন, গালাগাল
দিতে লজ্জা পান না, আগ বাড়িয়ে মারামারি করেন, আবার মারও খান। কাউকেই
প্রায় এঁরা তোয়াক্কা করেন না। এই গল্পগুলিকে বলা হয় ‘হার্ড বয়েলড’
(কঠিন সেদ্ধ) গোয়েন্দা গল্প। ১৯২২ সালে ‘ব্ল্যাক মাস্ক ম্যাগাজিন’-এ
মার্কিন লেখক ক্যারল জন ডেলি’র ‘দ্য ফলস বার্টন কম্বস’ গল্পটি
দিয়ে ধারাটি শুরু হয়। ধারাটিকে পুষ্ট করেন ড্যাশিয়েল হ্যামেট,
জেমস কেন, রে চ্যাণ্ডলার, মিকি স্পিলেন, প্রমুখ আরও অনেকে। সময়ের
হিসেবে গোয়েন্দা গল্পের স্বর্ণযুগে এঁদের আবির্ভাব হলেও এই ধারা
স্বতন্ত্র। ইংরেজি গোয়েন্দা গল্পের স্বর্ণযুগের ধারার সঙ্গে এঁদের
অনেক সময়েই যোগ করা হয় না । এঁদের অনেকেই অত্যন্ত প্রতিভাধর জনপ্রিয়
লেখক। শোনা যায় ১৯৪৭ সালে মিকি স্পিলেন-এর যৌনতা ও রক্তারক্তিতে
ভরা বই 'আই দ্য জুরি' - ষাট লক্ষ কপি বিক্রী হয়েছিল। তবে সেটা সত্যি
কিনা বলা শক্ত।
গোয়েন্দা আর গোয়েন্দা কাহিনির শেষ নেই...
আগাথা ক্রিস্টি
|
ইংরেজি সাহিত্যে গোয়েন্দা কাহিনি সংখ্যায় অজস্র ; ভালো কাহিনিকারও
বহু। জি.কে. চেস্টারটন (গোয়েন্দা: ফাদার ব্রাউন), ই.ডি. বিগার্স
(গোয়েন্দা: চার্লি চ্যান), এস.এস. ভ্যানডাইন্স (গোয়েন্দা: ফিলো
ভান্স), রেমণ্ড চ্যাণ্ডলার (গোয়েন্দা: ফিলিপ মার্লো), রেক্স স্টাউট
(গোয়েন্দা: নিরো উল্ফ), মিকি স্পিলেন (গোয়েন্দা: মাইক হ্যামার),
ডরোথি সেয়ার্স (গোয়েন্দা: লর্ড পিটার উইমসি), জর্জ সিমেনোঁ (গোয়েন্দা:
ইনস্পেক্টর মেগ্রে - মূল রচনা ফরাসী ভাষায়), ড্যাশিয়েল হ্যামেট
(গোয়েন্দা: স্যাম স্পেড), পি.ডি. জেমস (গোয়েন্দা: ইনস্পেক্টর অ্যাডাম
ডগলিশ), স্যু গ্র্যাফ্টন (গোয়েন্দা: কিন্সি মেলহোন), প্যাট্র্শিয়া
কর্নওয়েল (ডাক্তার স্কারপেটা), রুথ রেণ্ডেল (গোয়েন্দা: চিফ ইনস্পেক্টর
ওয়েক্সফোর্ড), আর্ল স্টানলি গার্ডনার (উকিল পেরী মেসন) প্রমুখ
লেখকরা গোয়েন্দা ও রহস্যসাহিত্যে অসামান্য সাফল্য লাভ করেছেন।
এঁদের বিক্রিত বইয়ের সংখ্যা লক্ষ লক্ষ। গোয়েন্দা কাহিনির স্বর্ণযুগেই কলম
ধরেন এক অসামান্য প্রতিভাময়ী লেখিকা আগাথা ক্রিস্টি। ৫০ বছরের
লেখিকা-জীবনে তিনি দু-জন গোয়েন্দাকে নিয়ে ৮০-টিরও বেশি রহস্যোপন্যাস
লিখেছেন। তাঁর গোয়েন্দা একজন পেশাদার - চেহারায় বেঁটেখাটো আত্মম্ভরী
হারকিউল পয়রো (এ্যরকুল পোয়ারো)। অন্য জন প্রায় আশি বছরের বৃদ্ধা
মিস জেন মার্পল, যিনি আজীবন কুমারী - নেশা বাগান করা আর চেয়ারে
বসে সোয়েটার বোনা। ১৯২০ সালে 'দ্য মিস্টিরিয়াস অ্যাফেয়ার্স অ্যাট
স্টাইলস'-এ আগাথা ক্রিস্টি তাঁর বেলজিয়ান গোয়েন্দা এ্যরকুল পোয়ারোর
সঙ্গে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেন। আজও রহস্যোপন্যাসের শ্রেষ্ঠ লেখক
বা লেখিকার নাম করতে গেলে প্রথমেই আগাথা ক্রিস্টির নাম মনে আসে।
ওঁর বই বিক্রি হয়েছে সম্ভবত সবেচেয়ে বেশি। বিক্রয় সংখ্যার নির্ভরযোগ্য
হিসেব পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তবে শোনা যায় দুই থেকে চার বিলিয়ন!
পরিশিষ্ট
পাঠক কি গোয়েন্দা গল্প লিখতে চান?... তাহলে পড়ুন...
ভালো গোয়েন্দা গল্পের ফর্মুলা
স্বর্ণযুগের বিশিষ্ট লেখক, ফাদার রনাল্ড নক্স, ভালো গোয়েন্দা
গল্প প্রসঙ্গে যা লিখেছিলেন, তার অনেক কিছুই এখনও প্রযোজ্য। ওঁর
মতে গোয়েন্দা গল্পে মূল উদ্দেশ্য হবে রহস্য উন্মোচন। রহস্যের সমস্ত
উপাদান শুরুতেই পাঠকদের সামনে আনতে হবে, আর সেই উপাদানগুলি স্বভাবতই
পাঠকের কৌতূহল-তৃষা জাগাবে, যে তৃষ্ণা গল্পের শেষে গিয়ে তৃপ্ত
হবে। একটু মজার করেই ভালো গোয়েন্দা গল্পের দশটি আবশ্যিক বৈশিষ্ট্যের
কথা ফাদার নক্স লিখে গেছেনঃ
(১) আসল অপরাধীর চরিত্র গল্পের প্রথম থেকেই থাকবে, যদিও লোকটির
মাথায় কী ঘুরছে, তা পাঠকদের জানানো হবে না;
(২) সমস্ত রকম ভৌতিক বা আধি-ভৌতিক ব্যাপার গল্পে কোন স্থান পাবে
না;
(৩) একটির বেশি গোপন কামরা বা পথ গল্পে থাকবে না;
(৪) কোন অজানা বিষ বা অস্ত্র, যা বোঝার জন্যে গল্পের শেষে দীর্ঘ
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার প্রয়োজন হবে তা গল্পে থাকবে না;
(৫) কোন চায়নাম্যান (বলতে চান, গোলমেলে বিদেশি) থাকবে না;
(৬) কোন আকস্মিক দুর্ঘটনা গোয়েন্দাকে সাহায্য করবে না;
(৭) গোয়েন্দা নিজে অপরাধ করবে না;
(৮) ডিটেকটিভ নিজে যে সূত্র আবিষ্কার করেছে, তা পাঠককে জানাতে
হবে;
(৯) ডিটেকটিভের সঙ্গী (যেমন, শার্লক হোমসের বন্ধু ওয়াটসন) নিজের
কোন চিন্তা পাঠকের কাছে লুকোবে না এবং তার বুদ্ধি সাধারণ পাঠকের
বুদ্ধি থেকে অল্প একটু ভোঁতা হবে; এবং
(১০) যমজ ভাই বা একই রকম দেখতে দু-জন লোক হঠাৎ উদয় হবে না – যদি
না পাঠককে আগেই তা জানানো হয়।
সূত্রঃ
(১)
ক্রাইম কাহিনীর কালক্রান্তি (দ্বিতীয় সংস্করণ ২০০৮), সুকুমার সেন,
আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা।
(২)
গোয়েন্দা হাজির – স্বর্ণযুগের বিদেশি গোয়েন্দারা (প্রথম সংস্করণ,
২০১৬), সম্পাদক – শমীতা দাশ দাশগুপ্ত, ঈশানী রায়চৌধুরী, কেয়া মুখোপাধ্যায়,
সুজন দাশগুপ্ত, লালমাটি প্রকাশন।
লেখক পরিচিতি - পাঁচ দশক ধরে আমেরিকা প্রবাসী।
এক সময়ে পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন - এখন মাঝে মধ্যে। ধাঁধা
ও রহস্যকাহিনীর ওপর গোটা বারো বই আছে। গোয়েন্দা একেনবাবু-র মানসপিতা;
অবসর.নেট ও বাংলা মিস্ট্রি.কম-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।