প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

নারী

অগাস্ট ৩০, ২০১৫

 

হিন্দু ধর্ম ও নারী নির্যাতন

শমীতা দাশ দাশগুপ্ত


বিদেশে অভিবাসী জীবনে প্রবেশ করার পর থেকে শুনে আসছি হিন্দু সংস্কৃতির ধারে কাছে আমেরিকানরা কোনওদিন পৌঁছোতে পারবে না। আমাদের পুরনো সভ্যতা, প্রাচীন সংস্কৃতি, উদার মনোভাব, সহনশীল ধর্ম, এর কোন তুলনা নেই। এদেশে অভিবাসী সমাজে স্থিতু হবার পর থেকে দেখছি পরের প্রজন্মের সনাতন ধর্ম শিক্ষার জন্যে ছোট বড় বৈদিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আমেরিকার প্রায় প্রতিটি জনবহুল শহরে। সেই সঙ্গে মন্দির স্থাপনেরও কোন শেষ নেই। প্রচুর ডলার খরচা করে নানান হিন্দু গোষ্ঠী আজকের দিনেও মন্দির প্রতিষ্ঠা করেই চলেছে।

আমার আজকের বক্তব্য ধর্ম বা মন্দির প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে নয়। আমি ব্যক্তিগত ধর্ম বিশ্বাসের বিপক্ষে নই। এদেশে ভারতীয় অভিবাসী সমাজ সঙ্ঘবদ্ধ করার ব্যাপারে ধর্ম এবং মন্দির দুইয়েরই অবদান যথেষ্ট। তবে একদিক থেকে সমাজ গঠনের ব্যাপারে সাহায্য করলেও হিন্দু ধর্মের নীতি ও বিশ্বাস মানুষের, বিশেষত: মহিলাদের বেশ কিছু ক্ষতিও করেছে। তাই নিয়েই আজকের আলোচনা। দেখা যাক কি সেই ক্ষতি।

দুটি বিশেষ ক্ষতির কথাই আমি এখনে উল্লেখ করব। প্রথমত, হিন্দু ধর্মের দোহাই দিয়ে আমাদের সমাজ সমকামী ছেলেমেয়েদের সম্পূর্ণভাবে অবজ্ঞা করেছে। তাদের উপস্থিতি অস্বীকার করেছে। ইদানীং সে পরিস্থিতির সামান্য রদবদল হলেও মূল অবিচারের সমাপ্তি এখনও হয় নি। এই উপেক্ষার পক্ষে যুক্তি হিসেবে অনেকেই হিন্দু ধর্মের নজীর দেখিয়েছেন। হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতিতে নাকি সমকামের কোন স্থান নেই। আসলে প্রাচীন হিন্দু সংস্কৃতিতে সমকামের প্রকট স্বীকৃতি ছিল। এখনও অনেক ঐতিহাসিক ও সমাজ বিজ্ঞানীরা প্রাচীন স্থাপত্য, পুঁথিপত্র, ও সামাজিক আচার ব্যবস্থায় সেই সূত্র ও প্রমাণ আবিষ্কার করে চলেছেন।

হিন্দু ধর্ম দ্বিতীয় আঘাত হেনেছে নারী সমাজের প্রতি। "নারী নরকের দ্বার" কথার মধ্যেই হিন্দু ধর্মের মনোভাব পরিষ্কার ফুটে ওঠে। তার ওপর বিবাহকে নারীর জীবনে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে হিন্দু ধর্ম নারী নির্যাতনকে প্রকারান্তরে প্রশ্রয়ই দিয়েছে। মেয়েদের পালাবার পথ রাখে নি। (মনে রাখতে হবে হিন্দু ধর্মে বিবাহ বিচ্ছেদের স্বীকৃতি নেই।) রাষ্ট্র সংঘের রিপোর্ট অনুসারে দক্ষিণ এশিয়ায় শতকরা প্রায় ৪০ জন মহিলাই পারিবারিক অত্যাচারের শিকার হন। আমেরিকার অভিবাসী সমাজের সমীক্ষায় দেখা গেছে, একশো জন মহিলার মধ্যে প্রায় ৩৫ জনই বাড়িতে শারীরিক ও যৌন অত্যাচার সহ্য করছেন। কিন্তু পৃথিবীর সব সমাজেই তো মেয়েদের প্রতি অত্যাচারের দৃষ্টান্ত রয়েছে। তবে শুধু শুধু হিন্দু ধর্মকে আলাদা করে তিরস্কার করার দরকার আছে কি? এ ব্যাপারে একটু ভাবা যাক। আরম্ভ করি মনু সংহিতা থেকে।

"সৃষ্টির সময়, [বিধাতা] নারীকে দিয়েছেন বিছানা [অর্থাৎ আলস্য] ও অলঙ্কারের প্রেম, অশুদ্ধ কামনা, ক্রোধ, অসাধুতা, অসূয়া, এবং অসদবৃত্তি।" (মনু সংহিতা, পরিচ্ছেদ ৯, শ্লোক ১৭)

"নারীকে দিবারাত্র পুরুষের অধীনে রাখা প্রয়োজন। নারী যদি ইন্দ্রিয়গত কামনার বশীভূত হয়, [পুরুষের] তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।" (মনু সংহিতা, পরিচ্ছেদ ৯, শ্লোক ২)

হিন্দু সমাজনীতিবিদ মনু এই ভাবেই নারীর চরিত্রচিত্রণ করেছেন। নীতিবাগীশ মনুর বয়ান প্রায় তিন হাজার বছরের পুরনো বলে উপেক্ষা করলে ভুল হবে। এই সব নীতির প্রভাব হিন্দু সমাজে এখনও স্তিমিত হয় নি। অনেক সমাজতাত্ত্বিকের মতে হিন্দু সমাজে নারীর গৌণ ভূমিকার মূলে রয়েছে মনুর নির্দেশ। সত্যি-ই কি তাই? মনুর উপদেশ তো সোজা সাপটা নারীর বিপক্ষে নয়। কারণ অন্যত্র মনু বলেছেন,

"যখন নারী সম্মানিত, ঈশ্বর প্রীত হন; নারীর অসম্মান হলে সকল পূত আচারই বিফল হয়।" (মনু সংহিতা, পরিচ্ছেদ ৩, শ্লোক ৫৬)

তবে ব্যাপারটা কি? হিন্দু ধর্মের পরিপ্রেক্ষিতে নারী নির্যাতনের স্বরূপ বিশ্লেষণ করতে হলে আর একটু তলিয়ে ভাবা দরকার।

প্রথমেই বলি হিন্দু ধর্মের প্রকাশ বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন। ইসলাম, ইহুদী, বা খৃস্ট ধর্মের মত নথিবদ্ধ নয় বলে হিন্দু ধর্ম মানুষের জীবন যাত্রার মধ্যেই বাঁধা রয়েছে। তবে যে কোন সমাজে, যে কোন রূপান্তরেই হিন্দু ধর্মের প্রধান লক্ষ্য মোক্ষ প্রাপ্তি। এ মোক্ষ মানব জীবনের বহির্ভূত নয়, মানুষের নিজের মধ্যেই এই মুক্তি খুঁজে পাওয়া সম্ভব। ধর্ম বিশ্বাসের কতগুলি বিশেষ গুণগত বৈশিষ্ট্য হিন্দু সমাজ ব্যবস্থায় জড়িয়ে গিয়েছে। মহিলাদের জীবনযাত্রায় এই বৈশিষ্ট্য গুলির প্রভাব এতই প্রবল যে মহিলারা, বিশেষত নির্যাতিত মহিলারা, সেগুলি উপেক্ষা করতে দ্বিধা বোধ করেন। এই ধর্মীয় অনুশাসন বস্তুত: তাঁদের পায়ের বেড়ি হয়ে দাঁড়ায়। নির্যতিতা নারীর জীবনে এই বৈশিষ্ট্য-সৃষ্ট ছ'টি সর্বজনীন অসুবিধা আলোচনা করছি।

১) সমষ্টিগত পরিচয়:

হিন্দু সমাজে মানুষের ব্যক্তিগত পরিচয় নস্যাৎ করে সমষ্টিগত পরিচিতিই বড় করে দেখা হয়। সাধারণ ভাবে প্রতি ব্যক্তির পরিচয় নির্ধারিত হয় তার পরিবার, বংশ, ও সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে। এর বিপরীত হল পাশ্চাত্য সমাজ প্রথা, যেখানে ব্যক্তি পরিচয়ই শেষ কথা। নির্যাতিতা মহিলার জীবনে এই রীতি এক বিশাল প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়। নির্যাতন থেকে বাঁচতে কোন মহিলা যদি বিচ্ছেদ চান, তাঁর শুধু স্বামী পরিত্যাগের সাহস থাকলেই চলবে না, সমস্ত পূর্ব পরিচয় মুছে ফেলার সাহসও থাকতে হবে। অর্থাৎ বিয়ে ভাঙ্গা শুধু স্বামী সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করাই নয়, আরও একটি বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন হওয়া। যে মেয়ে তার বাবা, স্বামী, বাপের ও শ্বশুর গোষ্ঠীর নামে পরিচিত, তার পক্ষে সব চেনা পরিচয় পলকে ছেড়ে দেওয়া কঠিন বৈকি। বিশেষত তাকে যদি তার বাপের বাড়ি সমর্থন না করে। বিবাহ বিচ্ছেদের মুহূর্ত থেকে তাকে নিজের 'ব্যক্তিগত' পরিচয় গড়ে তুলতে হয়। সে ব্যাপারে অভিজ্ঞতা না থাকার ফলে কাজটা হয় যথেষ্ট কঠিন।

২) ব্যক্তিগত বিনয়:

হিন্দু সমাজে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিনয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। ধরে নেওয়া হয় নিরহঙ্কার ও নম্রতা মানব চরিত্রের বিশেষ গুণ। এর বৈপরীত্য দেখা যায় পাশ্চাত্যে লালিত চরিত্রে। আমেরিকাতে নিজের গুণগান করা বা নিজের ঢাক নিজে পেটানো কোন দোষের নয়, বরং তাই সমীচীন বলে ধরা হয়। "সেলিং ওয়ানসেল্ফ" একটি বড় গুণ। কিন্তু নির্যাতিত হিন্দু মহিলার জীবনে ব্যক্তিগত বিনয় সময়াসময়ে বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়ায়। বিনয় ও নিজের স্বার্থ ত্যাগে দিক্ষিত মহিলারা প্রিয়জনের নির্যাতন সহ্য করেও সব অত্যাচার অবিচার লঘু করে দেখেন, অকিঞ্চিৎকর মনে করেন। পুলিশের কাছে বা আদালতে বিচারপতির সামনে দাঁড়িয়ে বলেন তাঁর আঘাত বেশি কিছু নয়, সামান্যই। বা তাঁর স্বামী মারধোর করলেও আসলে ভাল মানুষ। ফলে এই মহিলাদের বক্তব্য আমেরিকার আদালতে অনেক সময়েই বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করা হয় না।

৩) পারিবারিক কর্তৃত্ব:

হিন্দু সমাজে পরিবারের গঠন হল পিরামিডের মত। সবচেয়ে তুঙ্গে বসেন পারিবারের কর্তাব্যক্তি এবং তাঁর নিচে থাকেন অন্যান্যরা, বিশেষত: মেয়েরা। সামাজিক নিয়ম অনুসারে ছোট বড় সব সিদ্ধান্তের ব্যাপারেই পরিবারের সদস্যদের এই শীর্ষ ব্যক্তির ওপর নির্ভর করতে হয়। "কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম।" এই ব্যবস্থার বিপরীত মেরুতে রয়েছে পাশ্চাত্য সমাজ, যেখানে প্রাপ্তবয়স্ক পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মিত্রবৎ আচরণ করাই চলতি রীতি। কিন্তু আমাদের সমাজে পারিবারের কর্তার আদেশ মেনে বড় হওয়ার ফলে হিন্দু মহিলারা নিজের দায়িত্বে সিদ্ধান্তগ্রহণ করতে অসুবিধে বোধ করেন। তাঁরা অপেক্ষা করেন বাড়ির গুরুজনেরা সমস্যার ব্যাখ্যা শুনে সমাধান করে দেবেন, অর্থাৎ বিবাহ বিচ্ছেদের অনুমতি দেবেন। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দশ হাজার মাইল দূরে অবস্থিত পরিবার থেকে সেই অনুমতি আসে না। আমাদের সংস্থা, মানবীর কাছে পরামর্শ নিতে এসে অনেক মহিলাদেরই এমন ন যযৌ ন তস্থৌ অবস্থা হয়। যৌথ পরিবার প্রথায় অভ্যস্ত মহিলারা বলেন, দাদু, কাকা, জ্যাঠা, মা-বাবা, বা গুরুর মতামত ছাড়া তিনি এক পাও এগোতে পরবেন না, সে যতো জরুরী পরিস্থিতিই হোক না কেন। গুরুজন না থাকলে বা দেশে যোগাযোগে বিভ্রান্তি ঘটলে হয় তাঁরা অচল হয়ে পরেন অথবা আমাদেরই বলেন তাঁদের জন্যে সিদ্ধান্ত করে দিতে।

৪) ভেতরের লোক বনাম বহিরাগত:

হিন্দু সমাজে 'প্রাইভেসি' একটি প্রায় অজানা শব্দ। প্রাইভেসির কোন সঠিক প্রতিশব্দ বাংলায় নেই। কিন্তু কে বাইরের আর কে ভেতরের লোক সে বিচার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ; তা নিয়ে হিন্দু সমাজে ভাল রকম সতর্কীকরণ রয়েছে। ভেতরের লোক বলতে বোঝায় আত্মীয় স্বজন। অবশ্য অনেক সময় প্রতিবেশী বন্ধু, যারা আত্মীয়ের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, তারাও স্বজন হিসেবে গণ্য হয়। প্রচলিত প্রথা অনুসারে মনের দুঃখ, ঝগড়া বিদ্বেষ, বা কোন ঘটনা যা লজ্জাকর মনে করা হয়, অর্থাৎ পরিবারের ভেতরকার কথা, তা কেবল ভেতরের লোকদেরই বলা চলে। অন্য কারোর কাছে এসব প্রকাশ করা নিষিদ্ধ। আমাদের সংস্কৃতিগত অনুশাসনে ভেতরের ও বাইরের লোকের পার্থক্য নির্যাতিত মহিলাদের জীবনে এক বিশেষ অসুবিধার সৃষ্টি করে। আত্মীয় স্বজনের অভাবে অভিবাসী সমাজে এই সমস্যা আরও জোরদার হয়ে দাঁড়ায়। বহু অত্যাচার সহ্য করেও মহিলারা আত্মীয়ের বাইরে কারোর কাছে সাহায্য চাইতে পারেন না। পুলিশ, নারী সংগঠনের কর্মী, মনস্তাত্ত্বিক, সকলে বাইরের লোক বলে এঁদের কাছে মহিলারা মন খুলে তাঁদের সমস্যার কথা বলতে অসুবিধে বোধ করেন। ফলে অনেক সময়ই মুখ বুজে সব অত্যাচার তাঁদের সহ্য করতে হয়।

৫) নারী-পুরুষের ভূমিকা:

হিন্দু সমাজে নারী-পুরুষের ভূমিকা একেবারেই বিপরীতধর্মী। ধরে নেওয়া হয় নারী সংসারের ভেতরের কাজ সারবে আর পুরুষ করবে বাইরের কাজ। স্বভূমিতে দুজনকেই ক্ষমতাশীল মনে করা হলেও প্রকৃতক্ষেত্রে মেয়েদের স্থান হয় পুরুষের নিচে। মনে করা হয় তারা চরিত্র ও গুণগত ভাবে পুরুষের নিকৃষ্ট। হিন্দু ধর্মের নির্দেশ অনুসারে স্বামীর অবস্থান স্ত্রীর ঊর্ধ্বে। স্ত্রীর পরম গুরু হল স্বামী। এমনকি স্ত্রীকে শাসন করা বা শারীরিক শাস্তি দেওয়ার অধিকারও স্বামীর আছে। বেশীর ভাগ মহিলারাই পুরুষের এই সুউচ্চ ভূমিকা স্বীকার করে নেন। ফলে নেহাতই অপারগ না হলে স্বামীর বিরুদ্ধে কোন গুরুতর অভিযোগ তাঁরা করেন না। এমনকি অনেকেই স্বামীর কর্তৃত্ব ও অত্যাচার স্বাভাবিক বলেই মনে করেন।

৬) কর্ম:

হিন্দু ধর্মে কর্ম একটি বিশেষ বোধ। হিন্দু দর্শন যে ব্যাখ্যাই দিক না কেন, সাধারণ মানুষ কর্ম বলতে বোঝে নিজের কৃত কর্মের ফল পাওয়া। কর্মফল শুধু বর্তমান জীবনেই আবদ্ধ থাকে না, মানুষ পূর্ব জন্মের কৃত কর্মের ফলও বর্তমান জীবনে ভোগ করে। জন্ম মৃত্যুর চক্রে এই ফল এড়ানোর কোন উপায় নেই। কখনও না কখনও কর্মফল ভোগ করতেই হবে। ধর্মজনিত বহু রকমের প্রতিবন্ধক অত্যাচারিত মহিলাদের জীবনে বাধা সৃষ্টি করলেও সবচেয়ে বড় বাধা হয় কর্ম সম্পর্কে মহিলাদের এই ধারনা। বহু মহিলা অত্যাচারের মুখে হাল ছেড়ে দিয়ে বলেন, এ হল পূর্বজন্মের কর্মফল। তাঁদের মতে এই কর্মফল তাঁদের যখন ভোগ করতেই হবে, আপত্তি করে লাভ কি! মেনে নেওয়াই ভাল। বহুক্ষেত্রেই কর্ম সম্বন্ধে এই ধর্মবিশ্বাস মহিলাদের অসহায় করে ফেলে। ফলে নিজের জীবনে পরিবর্তন আনতে তাঁরা উদ্যোগী হন না।

হিন্দু সমাজে এই সব ধরনা শুধু পুঁথির পাতায় লিপিবদ্ধ থাকে না, মানুষের দৈনন্দিন জীবনাবর্তে বাস্তবায়িত হয়। পুরুষ এবং নারী দুজনেই এ বিশ্বাসে সামাজিক শিক্ষা লাভ করলেও মহিলাদের জীবনেই তা প্রবাহিত হয় বেশী। পুরুষ ভুল করলে সে ব্যাপারে সমাজে খেদোক্তি ওঠে নিশ্চয়ই, কিন্তু নারী গণ্ডীর বাইরে পা রাখলে তার শাস্তি হয় শুধু নিন্দায় নয়, সমাজচ্যুত করে, এমনকি শারীরিক প্রহারের মাধ্যমে।

আসলে হিন্দু পারিবারিক কাঠামোর মধ্যেই লুকিয়ে থাকে নারী নির্যাতনের বীজ। যৌথ পরিবারে নববিবাহিতা স্ত্রীর সামাজিক পদ হয় সবচেয়ে নিচে। তার চলাফেরা, আসা যাওয়া, খাওয়া দাওয়া, ব্যবহার, নিয়ম নীতি সবই নির্ধারণ করে শ্বশুরবাড়ির গুরুজনেরা। এত বিধিনিষেধের ফলে নারীর জীবনে বাড়ে সীমাবদ্ধতা।

অনেকেই বলেন নারীই নারীর শত্রু। শাশুড়িই তো বাড়ির বৌদের জীবন অতিষ্ঠ করে তোলেন, তাদের পদে পদে বাধা দেন, আর পারিবারিক নিয়ম না মানলে শাস্তির ব্যবস্থা করেন। একটু ভেবে দেখলে বোঝ যায় মহিলারা সামনা সামনি নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও তাদের পেছনে কাজ করছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। সমাজে নারীর শক্তির উৎস পুরুষ। বাড়ির পুরুষেরা না চাইলে শাশুড়ির সাধ্য কি বৌয়ের ওপর খবরদারি করেন! বাড়ির নিয়মাবলী তৈরি হয় বাড়ির পুরুষদের ফায়দা ও মতামত মাথায় রেখে। এই ব্যবস্থার তুলনা পাওয়া যায় ঔপনিবেশিক ইংরেজ রাজত্বে। বিদেশী রাজার নির্দেশ আমাদের দেশে কার্যকরী করত দেশী পুলিশ এবং অন্যান্য কর্মচারীরা। এরাই ছিল সেই ঔপনিবেশিক রাজার হাতিয়ার। সামনাসামনি নিজের দেশবাসী অত্যাচারীর ভূমিকা নিলেও ঔপনিবেশিক সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ আদেশ ছাড়া সেই তল্পিবাহকদের নিজের মতামত খাটানো ছিল অসম্ভব।

মানবী সংস্থায় কাজ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার বহু মহিলাদের কাছে শুনেছি "আমার স্বামী অত্যন্ত ভাল। যত দোষ ঐ শাশুড়ির। সেই আমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে, জোর খাটাচ্ছে। কোনরকমে ওদের বাড়ী থেকে বের করে দিন তাহলেই আমার দাম্পত্য জীবন সুখের হবে।" এর উত্তরে যখন জিজ্ঞেস করেছি "তা তোমার স্বামী যদি এত ভালো, তিনি তোমার এতো কষ্ট দেখেও চুপ করে থাকছেন কেন? তিনি নিজের মাকে কিছু বললেই পারেন!" এ কথায় মহিলারা কিছু জবাব দেন না।

যেখানে শাশুড়ির অত্যাচারে বৌ অস্থির হচ্ছে সেখানে ছেলে যদি একবার মাকে বলে এমন না করতে, নিজের স্ত্রীর প্রতি এ ধরনের ব্যবহার সে সহ্য করতে নারাজ, তাহলেই বোঝা যাবে শাশুড়ির ক্ষমতা কত! প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই শাশুড়ির অত্যাচার চলে পরিবারের ছেলেদের, বিশেষত নিজের পুত্রসন্তানের সুবিধার্থে। এছাড়াও বৌ ও মায়ের মধ্যে চলে একজন পুরুষকে নিয়ন্ত্রণের লড়াই। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে অপরিচিত পরিস্থিতিতে নতুন বৌয়ের সহায় একমাত্র তার স্বামী। অতএব তার ইচ্ছে স্বামী তার দিকে মনোযোগ দেবে। আর নিজের ছেলেকে আদেশবদ্ধ রাখতে তৎপর হন মা। বৌয়ের কাছে ছেলের অধিকার হারাতে তিনি নারাজ। সুদূর আমেরিকার অভিবাসেও এই প্রথার পরিবর্তন খুব বেশি ঘটে নি। স্বামী স্ত্রী একা বাস করলেও দশ হাজার মাইল দূর থেকে শাশুড়ির উপদেশ বা হস্তক্ষেপের কোন কমতি হয় না।

হিন্দু পারিবারিক কাঠামোর জন্যে মহিলারা অসুবিধেয় পড়েন ঠিকই, কিন্তু সেই সঙ্গে ধর্ম সংক্রান্ত সামাজিক নীতিও নারীকে বিশেষ অসুবিধেয় ফেলে। এ সমস্ত সমস্যাই প্রকট হয় নির্যাতিত নারীর জীবনে। বিবাহকে অতিরিক্ত প্রাধান্য দিয়ে নারীকে বস্তুত: হাত পা বেঁধে দিয়েছে হিন্দু ধর্ম। যেন তেন প্রকারেণ বিয়ে বাঁচিয়ে রাখাই হয়ে দাঁড়ায় নারী জীবনের মূল লক্ষ্য। বিয়ে টিকিয়ে রাখার সম্পূর্ণ দায়িত্ব মেয়েদের এবং সেই লক্ষ্য সাধন করতে গিয়ে মেয়েরা বহু অবমাননা ও নির্যাতন সহ্য করে মুখ বুজে।

মেয়েদের প্রতি পারিবারিক অত্যাচারে ছেলেদের ভূমিকা তাহলে কেমন করে বুঝব? সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে পরিবারে নারী নির্যাতনের মূলে রয়েছে নারী পুরুষের অসম ভূমিকা ও পৌরুষের অধিকার, যে পৌরুষ প্রকাশিত হয় নারীর উপর আধিপত্য স্থাপন করে। দাম্পত্য সম্পর্কে নারী শক্তিশালী হলে, নিজের মতামত সোচ্চারে প্রকাশ করলে, সমাজে পুরুষের নিন্দে হয়। তার উপাধি হয় 'মেনীমুখো।' এছাড়া তার কপালে জোটে 'ভীতু,' 'বৌয়ের আঁচল ধরা,' ইত্যাদি আখ্যা। আত্মীয় স্বজন বাড়ীর ছেলেদের উপদেশ দেন বৌকে বুড়ো আঙুলের চাপে রাখতে, 'বিয়ের পয়লা রাতে বেড়াল মারতে।' অতএব হিন্দু পরিবারে নারী নির্যাতনের স্বরূপ বুঝতে হলে হিন্দু পৌরুষ বিশ্লেষণ না করে উপায় নেই।

হিন্দু সমাজে পুরুষের ভূমিকা ও পদমর্যাদা যে অতি উঁচু সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। হিন্দু পরিবারে পুরুষ হয়ে জন্মানো মানে বিশেষ সুযোগ সুবিধের অধিকারী হওয়া। সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই অসম পক্ষপাত কমছে তো না-ই বরং বেড়েই চলেছে। পুরুষের আদর এবং তার বিপ্রতীপ, নারীর প্রতি বিরাগের বাস্তব প্রকাশ হল আজকের সমাজে কন্যা ভ্রূণ ও কন্যা শিশু হত্যার প্রসার। তবে মনে রাখতে হবে হিন্দু পৌরুষ সর্বত্র এক রকম নয়; অঞ্চল, বর্ণ, শ্রেণী, ও জাতিগত প্রভাবে তা ভিন্নধর্মী।

হিন্দু পৌরুষ বিবর্তনের ব্যাপারে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের প্রভাব যথেষ্ট। ভারতে রাজত্ব বিস্তারের সময়ে ইংরেজ হিন্দু পুরুষকে 'মেয়েলী' বলে অভিহিত করেছিল। পশ্চিমী পুরুষের সঙ্গে তুলনা করে হিন্দু পুরুষকে তারা 'নারী সুলভ' আখ্যা দেয়। ফলে ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ গড়ে তোলার সময়ে হিন্দু পৌরুষকে নতুনভাবে সাজানোও জাতীয়তাবাদের অন্যতম উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে। অত্যন্ত সুচিন্তিত ভাবে হিন্দু পুরুষের গুণাবলীর তালিকা তৈরি ও প্রচার করা হয়। পুরুষ হয় দাঁড়ায় নিয়ন্ত্রিত শক্তি, জাতীয়তাবাদ, আধ্যাত্মিকতা, এবং সমাজের প্রতি গভীর অনুরক্তির প্রতীক। সেই সঙ্গে যোগ করা হয় নারীর রক্ষকের ভূমিকা। অর্থাৎ হিন্দু পুরুষ চরিত্রের প্রধান উপাদান হয়ে দাঁড়ায় প্রতিরক্ষামূলক আগ্রাস ও সুশীল দক্ষতা। সেই সময়ের পুরুষের ভাবমূর্তি দেখতে পাই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'আনন্দমঠ' উপন্যাসে। এই আগ্রাসী হিন্দু পৌরুষকে নিন্দা করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী; কিন্তু তাঁর সেই অহিংসার বাণী খুব কম মানুষই তখন আত্মগত করেছিল। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত হিন্দু পুরুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রচারে কোন ছেদ পরে নি। গত শতকের শেষে 'হিন্দুত্বের' পুনঃপ্রকাশ পুরুষের এই রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠারই প্রতিফলন। বহু সমাজতাত্ত্বিকই মনে করেন হিন্দু 'পৌরুষের' এই পুনরুত্থানের ফলে ভারতে পণপ্রথা, কন্যা ভ্রূণ হত্যা, মেয়েদের সংকীর্ণ গণ্ডীতে আবদ্ধ করার প্রচেষ্টা আবার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

বিংশ ও একবিংশ শতকের বেশ কিছু সামাজিক পরিবর্তন হিন্দু পুরুষের, বিশেষত: উচ্চ বর্ণের হিন্দু পুরুষের রক্ষক ও পালক চরিত্র চিত্রণে আঘাত হেনেছে। এই পরিবর্তনগুলির মধ্যে প্রধান হল তিনটি: নিম্ন বর্ণের মানুষের অধিকার লাভের আন্দোলন, বিশ্বায়ন, আর নারীবাদী আন্দোলন। এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দু পৌরুষের ওপর নারী আন্দোলনের প্রভাব আবিষ্কার করাই আমার মুখ্য উদ্দেশ্য। অনেক সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন নারীর সমান অধিকারের দাবীর উত্তরে হিন্দু পৌরুষ হয়ে উঠেছে আরও হামলাত্মক। পুরুষ শাসন কায়েমি করতে নারীর ওপর আধিপত্য বিস্তারই পুরুষ মোক্ষম উপায় স্থির করেছে। সেই উদ্দেশ্য সফল করতেই দরকার মত নির্যাতন করতে তারা পিছপা হয় না।

কিন্তু নারীর ওপর পুরুষের অত্যাচার হিন্দু সমাজে নতুন কিছু নয়। সেই চিরন্তন কাল থেকেই ধরে নেওয়া হয়েছে নারীকে নিয়ন্ত্রণ করবে পুরুষ, বিশেষত নারীর যৌন জীবনকে। হিন্দু নারীর কৌমার্য ও সতীত্ব রক্ষার সঙ্গে পুরুষের সম্মানকে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িয়ে রেখেছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। নারীর কুমারীত্ব রক্ষায় অকৃতকার্য হলে পরিবারের সব পুরুষের ওপর নেমে আসে গভীর লজ্জা ও অপমান বোধ। এমন কি অনেক সময়ে এই লজ্জার ছায়া সারা বংশ ও গ্রামের ওপর ছড়িয়ে পড়ে। ফলে পুরুষকে তার পরিবারের সব মহিলার সুরক্ষার্থে সব সময় সচেতন ও উদ্বিগ্ন থাকতে হয়। এই উদ্বেগ পুরুষের সর্বকালীন উদ্বেগ। এই দায়িত্বের বিনিময়ে পুরুষ দাবী করে বহু সামাজিক সুযোগ সুবিধা। সেই সঙ্গে পুরুষের কর্তৃত্ব ও নারীর অধীনতার সঙ্গে রোমান্টিকতা মিশিয়ে সমাজ পুরুষপ্রাধান্যকে গ্রহণযোগ্য ও বৈধ করে তুলেছে।

সত্যি কথা বলতে কি, হিন্দু ধর্মে নারী নির্যাতনের সপক্ষে বা বিপক্ষে প্রকট কোন মতাদর্শ নেই। কিন্তু নারী ও পুরুষের সামাজিক ভূমিকা বেঁধে দিয়ে, তাকে অসম মূল্য দিয়ে, নারী উপেক্ষা, অধীনতা, ও অত্যাচারের পথ প্রশস্ত করেছে হিন্দু ধর্ম। প্রাচীন ধর্মের অসঙ্গতির সঙ্গে আধুনিক ঔপনিবেশিক শক্তির অশুভ মিলন নারীর সামাজিক অবস্থানকে ক্রমশ: নিম্নগামী করেছে।

সমাজে নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলনে শামিল হলে বোঝা যায় মেয়েদের ধর্ম ও সংস্কৃতি বাদ দিয়ে কাজ করা অসম্ভব। এ ব্যাপারে হিন্দু মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি শুধু হিন্দু ধর্ম জানলেই চলবে না, সমাজে এর বাস্তব রূপটিও জানতে হবে। পৃথিবীর সব ধর্মের মত হিন্দু ধর্মেও নারীর অবদমন ও ক্ষমতায়ন, দুয়েরই স্থান রয়েছে। দুঃখের বিষয় নারী দমনের মতাদর্শগুলোই হিন্দু সমাজে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, হারিয়ে গেছে নারী ক্ষমতায়নের অংশগুলি। তবু মনে হয় সমাজে নারীর শক্তি বৃদ্ধির জন্যে হিন্দু ধর্মের সমর্থন খুঁজতে খুব বেশী কষ্ট করতে হবে না।

পৃথিবীর সবকটি ধর্মের মধ্যে হিন্দু ধর্মেই এখনও দেবী শক্তি রয়েছে কেন্দ্রবিন্দুতে। অসংখ্য দয়াময়ী দেবী ছাড়াও রয়েছেন শক্তির প্রকাশ হিসেবে যোদ্ধারূপিনী চণ্ডী, দুর্গা, কালী। ধার্মিক হিন্দুর জীবনে অহল্যা, কুন্তি, দ্রৌপদী, তারা, ও মন্দোদরী - এই পঞ্চকন্যার নামে সব পাপ ধুয়ে যায়। এঁরা সকলেই মানুষী, নিজের গুণে দেবী পদে উত্তীর্ণ হয়েছেন। অর্থাৎ হিন্দু সমাজে নারী বন্দনার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। হিন্দু পুরাণে অহিংস, সুশীল, ও প্রেমিক পুরুষও কম নেই। বিষ্ণু, কৃষ্ণ, শিব, ভীম, জয়দেব, এঁরা সকলে দায়িত্বশীল স্নেহশীল স্বামী। এছাড়াও বাস্তব সমাজে বহু প্রখ্যাত ওর স্বল্পখ্যাত দম্পতি রয়েছেন যাঁরা একসঙ্গে নিরলস অন্যায়ের বিরুদ্ধে, শান্তির জন্যে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। এঁদের উদাহরণ সামনে এনে হিন্দু সমাজে পুরুষ প্রাধান্যের অবসান ঘটানো অবশ্যই সম্ভব। হিন্দু সংস্কৃতিতে আগ্রাসী পৌরুষের বদলে সদয়, স্নিগ্ধ, ও ন্যায়পরায়ণ পৌরুষের আগমন ঘটানো আজ অত্যন্ত জরুরী।


লেখক পরিচিতি - লেখক একজন শিক্ষক, গবেষক ও সমাজকর্মী। তিন দশকের অধিককাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ এশিয় সমাজে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা ও তাঁদের ক্ষমতায়নের প্রচেষ্টায় নিযুক্ত। উত্তর আমেরিকার প্রথম দক্ষিণ এশিয়পারিবারিক নির্যাতন বিরোধী সংস্থা মানবী-র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অবসর-এর জন্মলগ্ন থেকে উপদেষ্টা মণ্ডলীতে যুক্ত।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।