প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

পুরানো সাময়িকী ও সংবাদপত্র: জ্ঞানান্বেষণ(সূচী)

      সাপ্তাহিক ‘জ্ঞানান্বেষণ’ সে যুগের একটি উল্লেখযোগ্য পত্রিকা। ব্রজেন্দ্রনাথ জানিয়েছেন যে পত্রিকাটি “ইয়ং বেঙ্গল”দের মুখপত্র ছিল। পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৩১ সালের ১৮ই জুন দক্ষিণানন্দন (দক্ষিণারঞ্জন ?) মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়। তবে পত্রিকা পরিচালনার যাবতীয় কাজ করতেন গৌরীশঙ্কর তর্কবাগীশ। এদের দু’জনকেই কটাক্ষ ক’রে সে সময়ের ‘সম্বাদ তিমিরনাশক’ একটি মন্তব্য ছাপিয়েছিল। সেটি১৮৩২ খৃষ্টাব্দের ২১শে জানুয়ারি ‘সমাচার দর্পণ’ উদ্ধৃত করে। মন্তব্যটি ছিল –

“সন ১২৩৮ সালের ৫ আষাঢ়ে জ্ঞানাণ্বেষণ কাগজ প্রকাশ হয় তাহার প্রকাশক শ্রীযুত দক্ষিণানন্দন ইনি বাবু সূর্য্যকুমার ঠাকুরের দৌহিত্র বাঙ্গালা লেখাপড়া কিছুই জানেন না এবং বাঙ্গালা কথা কহিতে ভাল পারেন না তাহাতে রুচিও নাই তথাচ বাঙ্গালা সমাচার কাগজের এডিটর না হইলেই নয় মাতামহদত্ত কিঞ্চিৎ সঞ্চিত আছেতাহা তাবৎকে বঞ্চিত করিয়া ঐ কাগজের জন্য কথঞ্চিৎ কিছু ব্যয় করেন এক জন নাটুরে ভাট মদ্যপায়িকে পণ্ডিত জানিয়া চাকর রাখিয়াছেন সে নাস্তিক হিন্দুদ্বেষী কাগজ আরম্ভাবধি কেবল ধার্ম্মিকবর শ্রীযুত চন্দ্রিকাকর মহাশয়কে কটু কহে আর হিন্দুশাস্ত্র ভাল নহে তাহারি দোষ আপন বুদ্ধিতে যাহা আইসে তাহাই লেখে এজন্য ভদ্রলোকমাত্র কেহ ঐ কাগজ পাঠ করেন না তথাপি কাগজ ছাপা করিয়া জন কএক লোকের বাটিতে পাঠাইয়া দেন।”

      সে সময়ে কিছু পত্রিকা পরস্পর সম্বন্ধে কেমন মনোভাব পোষণ করত সেটাও এ উদ্ধৃতি থেকে স্পষ্ট হবে।

      যাই হোক, প্রথম সংখ্যার ‘অনুষ্ঠান’ শীর্ষক রচনায় পত্রিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলা হয়েছে –

“জ্ঞানাণ্বেষণ। শনিবার ইং ১৮ জুন। - সম্প্রতি এতন্মহানগরে নানাবিধ সমাচারপত্র দ্বারা নানা দেশীয় সমাচার প্রচারিত হইতেছে তাহাতে এই পত্র প্রস্তুত করা কেবল নানা দেশীয় গুহ্যাগুহ্য বৃত্তান্ত প্রকাশ করিবার নিমিত্ত এমত নহে পরন্তু অন্য২ প্রয়োজন অনেক আছে।
এক প্রয়োজন এই যে এতদ্দেশীয় বিশিষ্ট বংশোদ্ভব অনেক মহাশয়েরা লোকের প্রপঞ্চ বাক্যেতে প্রতারিত হইতেছেন তাহাতে তাঁহারদিগের কোনরূপেরই ভাল হইবার সম্ভাবনা না দেখিয়া খেদিত হইয়া বিবেচনা করিলাম যে নানা দেশ প্রচলিত বেদবেদান্ত মনুমিতাক্ষরা প্রভৃতি গ্রন্থের আলোচনাদ্বারা তাঁহারদিগের ভ্রান্তি দূর করিতে চেষ্টা করিব।
দ্বিতীয়তঃ এই যে এতদ্দেশনিবাসি অনেকেই আপন২ জাতিবিহিত ধর্ম্মের প্রতি জিজ্ঞাসা করিলে যথাশাস্ত্রানুসারে কহিয়া থাকেন কিন্তু সেই মহাশয়েরা এমত কর্ম্ম করেন যে তাহা কোন বিশিষ্টলোকেরই কর্ত্তব্য নহে ইহার কারণ কি তাহাও বিবেচনা করিতে হইবেক।
তৃতীয়তঃ এই যে ভূগোল প্রভৃতি গ্রন্থ যদ্যপি এতদ্দেশে দেশান্তরীয় ও বঙ্গদেশীয় ভাষায় নানাপ্রকারে প্রকাশ হইয়াছে তথাপি সে অতিবিস্তারিত প্রকাশ হয় নাই অতএব সকলের আশু বোধের নিমিত্ত সেই সকল গ্রন্থ আমরা বঙ্গদেশীয় ভাষায় ক্রমে২ প্রকাশ করিব। এবং অন্য২ বিষয়ে যাহা প্রকাশ করা আবশ্যক তাহাও উপস্থিতানুসারে প্রকাশ করিতে ত্রুটি করিব না ইতি।”

      দক্ষিণারঞ্জনের পর পত্রিকাটির পরিচালনা করেন রসিককৃষ্ণ মল্লিক ও মাধবচন্দ্র মল্লিক। তারা সরকারের অনুমোদন নিয়ে পত্রিকাটি ইংরাজি ও বাংলা দুটি ভাষাতেই প্রকাশ করেন।

      পত্রিকাটির সম্পাদনা সম্বন্ধে কেদারনাথ মজুমদার জানিয়েছেন –

“জ্ঞানান্বেষণের সম্পাদক ছিলেন প্রথম পাঁচ বৎসর - ১৮৩১ অব্দ হইতে ১৮৩৫ অব্দের ২১শে সেপ্টেম্বর পর্য্যন্ত - বাবু তারকনাথ বসু। তারকবাবু হুগলির ডেপুটি কালেক্টর হইয়া গেলে, বাবু রসিককৃষ্ণ মল্লিক ১৮৩৫ অব্দের শেষভাগ হইতে ১৮৩৭ অব্দের ৯ই জুলাই পর্য্যন্ত সম্পাদকের কার্য্য করেন। অতঃপর রসিকবাবুও ডেপুটি কালেক্টরের পদ লইয়া স্থানান্তরে চলিয়া গেলে জমিদারবাবু দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় জ্ঞানান্বেষণের সম্পাদক হন। ১৮৩৭ অব্দের জুলাই হইতে ১৮৩৯ অব্দের ২৪শে নভেম্বর পর্য্যন্ত দক্ষিণারঞ্জন প্যারীচাঁদ মিত্রের সহকারিতায় জ্ঞানান্বেষণ পরিচালন করিয়া তাহা ত্যাগ করিলে রামগোপাল ঘোষ নিজে ‘জ্ঞানান্বেষণ’-এর সম্পাদক হন।”

      ‘জন্মভূমি’ পত্রিকার ১৩০৪ বঙ্গাব্দের বৈশাখ সংখ্যায় মহেন্দ্রনাথ বিদ্যানিধি “বাঙ্গালা সংবাদপত্রের-ইতিহাস” নামে একটি প্রবন্ধ লেখেন। সেখানে তিনি সম্পাদকদের যে তালিকা দিয়েছেন তাতে কেদারনাথের প্রদত্ত তথ্যই সমর্থিত হয়। তবে মনে হয় এক্ষেত্রে কেদারনাথ নিজেই মহেন্দ্রনাথের রচনা থেকে তথ্য আহরণ করেছেন।

      ‘জ্ঞানাণ্বেষণ’-এর সূত্রপাত সম্বন্ধে কেদারনাথ মজুমদার জানিয়েছেন, হিন্দু কলেজের কিছু কৃতবিদ্য ছাত্র পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশীয় ভাষা ব্যবহারে উৎসাহী ছিলেন না, কিন্তু পরবর্তী কালে তারা বাংলা ভাষার প্রতি আকৃষ্ট হন এবং মাতৃভাষায় সাহিত্য রচনার সঙ্কল্পে রসিককৃষ্ণ ঘোষের বাগান বাটিতে ‘সাহিত্য সমালোচনী সভা’ নামে একটি সভা সংগঠিত করেন। এর ফলেই ‘জ্ঞানাণ্বেষণ’ পত্রিকাটি প্রকাশিত হতে থাকে। এই সভায় যে সব প্রবন্ধ পাঠ বা বক্তৃতা হত তা ঐ পত্রিকাতে প্রকাশিত হত। এই দলে ছিলেন প্যারীচাঁদ মিত্র, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, গোবিন্দচন্দ্র বসাক, তারাচাঁদ চক্রবর্তী, রসিককৃষ্ণ মল্লিক, রামগোপাল ঘোষ, কিশোরীচাঁদ মিত্র প্রমুখ ব্যক্তিগণ।
‘জ্ঞানাণ্বেষণ’ ছিল সাপ্তাহিক পত্রিকা। এর মূল্য ছিল মাসিক এক টাকা ও বার্ষিক বার টাকা। গ্রাহক ছিল মোট ৪৯ জন, কলকাতায় ৪৫ ও মফঃস্বলে ৪। সম্ভবতঃ এত দাম দিয়ে পত্রিকা ক্রয় করতে লোকে উৎসাহী ছিল না।

      প্রায় দশ বছর চলার পর ১৮৪০ সালের নভেম্বর মাসে ‘জ্ঞানান্বেষণ’-এর প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়।


দীপক সেনগুপ্ত

 

 

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।



Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।