অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।


খেলার দুনিয়া

জুন ৩০, ২০১৭

 

ভাড়াটিয়ার গেরস্থালি

আবেশ কুমার দাস

That slow motion replay doesn’t show how fast the ball was travelling.

উইজডেনের আগাপাশতলা হাতড়েও হদিশ মিলবে না উইলিয়াম ন্যুয়িং-এর প্রোফাইলের। কোন হাতে ব্যাট ধরতেন, বলই বা করতেন কোন—জানার কোনও উপায়ই নেই আজ আর। হারিয়ে গিয়েছে মানুষটার জন্মমৃত্যুর ঠিকুজিও। অনেক সন্ধান করেও আমি অন্তত খুঁজে পাইনি তাঁর কোনও আলোকচিত্র। অস্ট্রেলীয় টেস্ট ক্রিকেটের একশো চল্লিশ বসন্তের উজ্জ্বল পরিক্রমার যাবতীয় হাল হদিশ তুলে রাখা কেন পিসের ‘A Pictorial History of Australlian Test Cricket’ গ্রন্থেও (যার মুখবন্ধকারের নাম ক্রিস রজার্স) পাদটীকার মাত্র দু’টি বাক্যের বাইরে কোথাও আর জায়গা হয়নি এই প্রায় অনস্তিত্বশীল মানুষটির।

১৮৭৬-৭৭। মোরগের ডাকে ঘুম ভেঙে এল ১৫ মার্চ। মেলবোর্নের ঐতিহাসিক ক্রিকেট ময়দানে জেমস লিলিহোয়াইট জুনিয়রের নেতৃত্বাধীন সফরকারী ইংরেজ একাদশের মুখোমুখি হল ডেভ গ্রেগরির অস্ট্রেলিয়া। টসে জিতে সাড়ে চার হাজার দর্শকের চোখের সামনে চার বলের ওভারের প্রস্তাবিত সেই টাইমলেস ম্যাচের (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১) শুরুতে ব্যাট করতে নামল অস্ট্রেলিয়া। পা বাড়িয়ে নটিংহ্যামশায়ারের অ্যালফ্রেড শ’র প্রথম ডেলিভারিটির মোকাবিলা করলেন চার্লস ব্যানারম্যান। শুরু হয়ে গেল এক নতুন ইতিহাসের।

১৬ মার্চ। ব্যক্তিগত ১৬৫ রানের (এবং দলগত ২৪০/৭) মাথায় অবসৃত হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে আসতে বাধ্য হলেন আহত ব্যানারম্যান সাহেব। ডানহাতি ইংরেজ রাউন্ডআর্ম ফাস্ট বোলার জর্জ উলেটের একটি বিষাক্ত ডেলিভারি আছড়ে পড়েছিল তাঁর ডানহাতের তর্জনীতে। এবং প্রতিরক্ষার বন্দোবস্ত যে কত উন্নত ছিল তৎকালীন ক্রিকেটে তার বিশদ বিবরণ দিয়ে নিবন্ধের কলেবর বৃদ্ধি আপাতত নিষ্প্রয়োজন। ঘটনা এটাই—ব্যানারম্যানের প্রস্থানের পর আর বেশিক্ষণ টেকেনি অস্ট্রেলীয় ইনিংস।

অচিরেই ফিল্ডিং-এ নামার পরিস্থিতি ছিল না ব্যানারম্যানের। পরিণামে সেদিন টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম পরিবর্ত ফিল্ডসম্যান হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের জনৈক পেশাদার উইলিয়াম ন্যুয়িং। ভবিষ্যতে অস্ট্রেলীয় টেস্ট ক্যাপ অর্জন দূরস্থান, আজীবনে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটও খেলা হয়নি ন্যুয়িং-এর। সঙ্গত কারণেই উইজডেনের কোথাও মিলবে না তাঁর প্রোফাইলের হদিশ। যাঁকে মনে রাখার আর কোনও কারণই ছিল না—খুটিনাটি বিষয়ে সদা সচেতন খেলা ক্রিকেটের কল্যাণে কখনও টেস্ট না খেলা সেই মানুষটিরই নামটুকু অন্তত নথিবদ্ধ রয়ে গেল সেই প্রথম টেস্টের স্কোরকার্ডের ফুটনোটে। কেন পিসের উপর্যুক্ত গ্রন্থটিরও প্রথম অধ্যায়ের (The 1870s: A New Formidable Edge) পাদটীকায় উল্লিখিত আছে,

William Newing, the Melbourne Cricket Club’s professional, becomes Test cricket’s first substitute fieldsman, relieving for the injured Charles Bannerman during the very first Test match in Melbourne in 1876-77. Two weeks later he also ‘subs’ for Jack Blackham who is indisposed by sunstroke.

প্রসঙ্গত একই ময়দানে ৩১ মার্চ-৪ এপ্রিলব্যাপী চলা পরবর্তী টেস্টের (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ২) স্কোরকার্ডে অস্ট্রেলীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে নাম নথিবদ্ধ রয়েছে জ্যাক ব্ল্যাকহ্যামের। কিন্তু চতুর্থ ইনিংসে জন হজেসের বলে উইকেটের পেছনে ইংরেজ ব্যাটসম্যান অ্যান্ড্রু গ্রিনউডের ক্যাচটি দস্তানাবন্দি করতে দেখা যাচ্ছে বিলি মুরডককে। নিশ্চিতভাবেই সেই মুহূর্তে মাঠে উপস্থিত ছিলেন না ব্ল্যাকহ্যাম। পরিবর্ত উইকেটরক্ষকের দায়িত্বটি সামলাচ্ছিলেন মুরডক। এবং একাদশতম ফিল্ডসম্যানের ভূমিকায় আবারও ডাক পড়েছিল সেই প্রথম টেস্টের ভাড়াটিয়ারই।

ন্যুয়িং-এর তুলনায় কপাল চওড়াই ছিল নটিংহ্যামশায়ার ক্রিকেট ময়দানের সামান্য ইংরেজ কর্মী সিডনি কোপলের। ১৯৩০ মরসুমের অ্যাসেজের প্রথম খেলাটির (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১৯৪) অকুস্থল ছিল নটিংহ্যামের ট্রেন্ট ব্রিজ ময়দান। চতুর্থ ইনিংসে ৪২৯ রান তাড়া করতে নেমে নেহাত মন্দ এগোচ্ছিল না অস্ট্রেলিয়া। উপরন্তু অসুস্থ হয়ে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয়েছিল ইংরেজ আক্রমণের অন্যতম স্তম্ভ হ্যারল্ড লারউডকে। ৪ উইকেটে দলীয় সংগ্রহ যখন ২৬৭ অবধি পৌঁছে গিয়েছে তখনই মরিস টেটের বলে মিড অনের উপর দিয়ে হাওয়ায় খেলার দুর্বুদ্ধি চাপল উক্ত টেস্টেই ১৩৪তম অস্ট্রেলীয় টেস্ট ক্যাপটি হাতে পাওয়া স্ট্যানলি ম্যাকক্যাবের মাথায়। ওই অঞ্চলে তখন ফিল্ডিং করছেন জীবনে প্রথমবার টেস্টের ময়দানে নেমে পড়া লারউডের পরিবর্ত কোপলে—মাটিতে ডিগবাজি খেয়েও যিনি হাতছাড়া করেননি ম্যাকক্যাবের প্রাণভোমরাটিকে। ব্র্যাডম্যান ফিরে গিয়েছিলেন আগেই। ম্যাকক্যাবে আউট হতেই ক্যাঙারুদের ইনিংসে নামে ধস। ৯৩ রানে সেই টেস্ট জিতে যায় ইংল্যান্ড। এবং টেস্টের আঙিনায় এই ‘মহাকীর্তি’ ঘটিয়ে ফেলার ঠিক পরের সপ্তাহেই নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে জীবনের একমাত্র প্রথম শ্রেণির ম্যাচটিতে মাঠে নেমেছিলেন কোপলে (১টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচের ২ ইনিংসে সংগৃহীত রান ৭, সর্বোচ্চ ৪, গড় ৩.৫০, ৩০টি ডেলিভারিতে ৫.৬০ ইকনমি রেটে খরচ করা রান ২৮)। নিঃসংশয়েই ন্যুয়িং-এর তুলনায় তাঁর কপাল ছিল চওড়া।

২০০৫ মরসুম। আবারও সেই ঐতিহ্যবাহী অ্যাসেজ। আবারও সেই ট্রেন্ট ব্রিজ। এবং আবারও এক ভাড়াটিয়ার ‘মহাকীর্তি’। ১-১ অবস্থায় ঝুলে থাকা সিরিজের চতুর্থ টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১৭৬২) ফলো অন খেয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। এবং অতিথিদের দ্বিতীয় ইনিংসে অবিলম্বেই মাঠ ছাড়তে হল প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট দখল করা ইংরেজ সিমার সাইমন জোনসকেও। পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নেমে সরাসরি থ্রোতে রিকি পন্টিংকে রান আউট করেন সাড়ে তেইশের গ্যারি প্র্যাট। শেষ পর্যন্ত তিন উইকেটে উক্ত টেস্ট এবং ২-১ ফলাফলে উক্ত অ্যাসেজ জিতেছিল ইংল্যান্ড। সিরিজ শেষে হুডখোলা বাসে চড়িয়ে লন্ডনের রাজপথে ঘোরানো হয়েছিল ১৯৮৬-৮৭ মরসুমের পর আবার অ্যাসেজ জেতা ইংরেজদের। এবং প্র্যাটও আমন্ত্রিত হয়েছিলেন সেই বিজয়যাত্রায়।

প্রসঙ্গত এই গ্যারি প্র্যাট অধ্যায়ই কিন্তু সেদিন নতুন করে উসকে দিয়েছিল কিছু অপ্রিয় অথচ সঙ্গত প্রশ্ন। সমসাময়িক সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইংরেজ ফিল্ডার হিসেবে গণ্য প্র্যাট সামগ্রিক ক্রিকেটীয় দক্ষতার বিচারে কোনওদিনই বিবেচিত হননি জাতীয় টেস্ট দলে। উপরন্তু ব্যাটে রানের খরা চলায় উক্ত গ্রীষ্মে এমনকি নিজের কাউন্টি দলেও জায়গা হচ্ছিল না তাঁর। ক্রিকেটের নিয়মে কোনও স্পষ্টাস্পষ্টি নিষেধাজ্ঞা বলবৎ নেই ঠিকই, কিন্তু হোম সিরিজের সুযোগ নিয়ে এভাবে একেবারে স্কোয়াডের বাইরে থেকে কাউকে ভাড়া করে আনাটা কি সমীচীন? প্রশ্নটা আইনের না হলেও অতি অবশ্যই ন্যায়নীতির।

সামান্য প্রসঙ্গান্তরে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করব ফিল্ডিং-এর কিছু কারিগরি খুঁটিনাটি। আপাতত ধরা যাক পয়েন্ট ফিল্ডিং-এর প্রসঙ্গই। স্বাভাবিক ক্ষিপ্রতা ছাড়াও বিশেষত পয়েন্ট ফিল্ডসম্যানের পক্ষে যা একান্ত প্রয়োজনীয় তা হল একজাতের আগাম বোধ (intution)। মনে রাখা দরকার, স্কোয়ার কাট থেকে বল পৌঁছয় মাঠের এই এলাকায়। এই শটের মুহূর্তে কবজির মোচড়ে ব্যাটের মুখ ত্যারচা করে নিতে হয় ব্যাটসম্যানকে। এবং পলকেই সেই ত্যারচা ব্যাটের কৌণিক সরণের আন্দাজটুকুর ভিত্তিতে পয়েন্ট ফিল্ডারকে আগাম বুঝে নিতে হয় বলের সম্ভাব্য গতিপথ। আগাম এই আন্দাজের চকিতের ভুলে বলের নিশ্চিত গন্তব্য হবে সীমানার দড়ি। ব্যাট থেকে সেকেন্ডের ভগ্নাংশে ছিটকে আসা বলের এক্সপ্রেস গতির অনুষঙ্গটিকে মাথায় রাখলেই এই গোত্রের প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের নেপথ্যে একজন মানুষের কতখানি নিবিষ্টতা জরুরি তার আঁচ করা যায়। ক্রিকেটারমাত্রেরই স্বভাবগত হতে পারে না এমন আগাম বোধ। স্লিপ অঞ্চলে দুরন্ত ক্যাচিং দক্ষতা দেখানো ফিল্ডারও স্রেফ এই বিশেষ বোধটির অভাবেই পয়েন্টে ব্যর্থ হতে পারেন। প্রসঙ্গত, টাইগার পাতৌদির দুর্ঘটনা পরবর্তী জীবনের ব্যাটিং কৌশলেও ছিল অন্যতর এক আগাম বোধের বোঝাপড়া। স্বভাবতই একজন মানুষের পক্ষে ক্রিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি আগাম বোধকে আত্মস্থ করা সম্ভব নয়। হতেই পারে, ব্যাটিং দক্ষতার দৈন্যতার দরুণ দেশের সেরা গালি ফিল্ডারকে কোনওদিনই রাখা গেল না টেস্ট দলে। কিন্তু সেক্ষেত্রে ঘরোয়া সিরিজের সুযোগ নিয়ে স্কোয়াড সদস্যদের বসিয়ে রেখে খিড়কি দিয়ে উক্ত ক্রিকেটারের ফিল্ডিং নৈপুণ্যের সহায়তাগ্রহণও নিশ্চিত একপ্রকার তঞ্চকতা।

স্কট এলস্টন

ফিরে আসি পূর্বতন প্রসঙ্গে। ২০১১ মরসুমে আবার এবং আবারও সেই ট্রেন্ট ব্রিজেই ঘটল স্কট এলস্টোনের ঘটনা। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ২০০১) চতুর্থ ইনিংসে ৪৭৮ রান তাড়া করতে নামা বিধ্বস্ত ভারতের দুই ব্যাটসম্যান সুরেশ রায়না ও হরভজন সিংকে তালুবন্দি করলেন তখনও অবধি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট না খেলা বছর একুশের স্কট এলস্টোন। ফিল্ডিং-এর সময় আবার তাঁকে মাথায় পরে থাকতে দেখা গেল ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের ঐতিহ্যবাহী টুপিও (ক্যাপ)। সিরিজের শুরু থেকেই নাকানিচোবানি খেতে থাকা ভারত যদিও মাথা ঘামাল না এসব ছুটকো বিষয়ে, কিন্তু ৮ অগাস্টের ‘The Telegraph’-এর পাতায় ঘটনাটির নিন্দায় কলম ধরলেন খোদ প্রাক্তন ইংরেজ টেস্ট ক্রিকেটার স্টিভ জেমসই,

Last week at Trent Bridge against India Elstone was wearing an England cap. An England cap!... I said ‘day in the sun’ about Elstone, and it was sunny on the final day in Nottingham. So Elstone did need some headgear, but it should have been an England sun-hat, as Andrew Strauss and Stuart Broad choose to wear, not a cap... sometimes the little things matter most.

১৯৯৮ মরসুমে লর্ডসে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১৪১৯) ৫৮৯তম ইংলিশ টেস্ট ক্যাপটি হাতে পাওয়া স্টিভ জেমস (২ টেস্টের ৪ ইনিংসে ব্যাট করে সংগৃহীত রান ৭১, সর্বোচ্চ ৩৬, গড় ১৭.৭৫) টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে সফল না-ই হতে পারেন। কিন্তু বর্তমান পর্যবেক্ষণে কোথাও একফোঁটাও ভুল নেই কেমব্রিজের পরপর দু’ বছরের ‘ক্রিকেট ব্লু’ এবং উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর এই প্রাক্তন ইংরেজ ওপেনারের।

তবে খিড়কি দিয়ে ভাড়াটেদের এভাবে অন্দরমহলে কেবল ইংরেজরাই নিয়ে আসেনি। দ্বাদশ ব্যক্তি কার্ল রেকম্যানকে টপকে ভোরবেলা নাইটক্লাব থেকে ফেরা পিটার ক্যানট্রেলকে মাঠে নামিয়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াও। এবং তৎকালীন অস্ট্রেলিয়ার শ্রেষ্ঠতম গালি ফিল্ডার ক্যানট্রেল ১৯৯০-৯১ অ্যাসেজের উক্ত ব্রিসবেন টেস্টের (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১১৫৫) তৃতীয় ইনিংসে মুঠোতেও পুরেছিলেন অ্যালেক স্টুয়ার্ট ও অ্যাঙ্গাস ফ্রেজারকে। দশ উইকেটে সেই যাত্রায় পরাজিত হয়ে খুচরো বিতর্কও তুলেছিল ইংরেজরা। প্রসঙ্গত, পরবর্তীকালে নেদারল্যান্ডসে চলে যাওয়া ক্যানট্রেল সাহেব ১৯৯৬ বিশ্বকাপে খেলেছিলেন ডাচদের হয়ে।

বিতর্কিত অধ্যায়গুলিকে মুলতুবি রাখলে কিন্তু সেই প্রথম দিন থেকেই বাইশ গজের এই ভাড়াটেদের গেরস্থালির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহুতর বিচিত্র ইতিবৃত্ত। এবং অতীতের হলদে দস্তাবেজ ঘাঁটলে দেখা যাবে কখনও টেস্ট না খেলা ভাড়াটে ফিল্ডার হিসেবে টেস্ট ইতিহাসের প্রথম ক্যাচটি তালুবন্দি করেছিলেন ট্রান্সভালের হারবার্ট মসেনথাল। ঘটনাটি ঘটেছিল সুদূর ১৮৯৫-৯৬ মরসুমে জোহানেসবার্গের অধুনালুপ্ত ওল্ড ওয়ান্ডারার্স ময়দানে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড তিন টেস্টের সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৪৮)। ফলো অন করা প্রোটিয়াদের দ্বিতীয় ইনিংসের গোড়াতেই ইংরেজ ফাস্ট বোলার ক্রিস্টোফার হেসেলটাইনের (উক্ত টেস্টেই যিনি হাতে পেয়েছিলেন দেশের ১০২তম টেস্ট ক্যাপ) বলে মসেনথাল তালুবন্দি করেছিলেন ওপেনার টমাস রটেলেজকে। পরে স্যামি উডসের বলে অপর ওপেনার জেমস সিনক্লেয়ারও ধরা পড়েন তাঁর মুঠোয়।

উইজডেনের প্রোফাইল কিন্তু মসেনথাল সাহেবের পরিচয় দিচ্ছে জনৈক প্রোটিয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার হিসেবে। অথচ উক্ত ওল্ড ওয়ান্ডারার্স টেস্টে তিনি ফিল্ডিং করেছিলেন ইংরেজদের হয়ে। তবে কি বিদেশ বিভুঁই থেকে সৈন্য ভাড়া করতে হয়েছিল সেদিন লর্ড হকের ইংল্যান্ডকে? নিজেদের রিজার্ভ বেঞ্চে কি সেই মুহূর্তে পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নামার মতো আর কেউ অবশিষ্ট ছিলেন না? স্বল্পায়ু হারবার্ট মসেনথালের উক্ত উইজডেন প্রোফাইলই আবার জানাচ্ছে তাঁর জন্ম ১৮৬৬-র ৮ জুন লন্ডনের সিডেনহ্যামে এবং মৃত্যু ১৯০৪-এর ১২ অক্টোবর ডেভনের সিডমাউথে। যাঁর জন্মমৃত্যুর উভয়ই ইংল্যান্ডে তাঁর নাগরিকত্ব কি তবে যুক্তরাজ্যেই ছিল? সন্তোষজনক জবাব পাইনি একাধিক সূত্র ঘেঁটেও। হারবার্ট মসেনথালের ব্যবসায়ী পিতার নিবাস দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিল বলে যেমন আভাস পাচ্ছি একটি সূত্রে, আবার ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ন্যাশনাল প্রোবেট ক্যালেন্ডারেও মসেনথাল বংশের অনেক সদস্যেরই (হারবার্ট মসেনথালসহ) মৃত্যু নথিবদ্ধ রয়েছে।

ইয়ান গোল্ড

ইয়ান গোল্ড এবং রডনি টাকার নাম দু’টি বেশ পরিচিত সাম্প্রতিক ক্রিকেট দুনিয়ায়। পঞ্চাশের বেশি টেস্ট পরিচালনা করে ফেলা এই উভয় আম্পায়ারই ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ক্যাপের অধিপতি না হয়েও একটি করে টেস্ট ক্যাচের অধিকারী। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে ইংরেজদের হয়ে উইকেটরক্ষার দায়িত্ব সামলানো গোল্ড ১৯৮২-৮৩ অ্যাসেজের মেলবোর্ন টেস্টের (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৯৪৩) চতুর্থ ইনিংসে নর্মান কাওয়ান্সের বলে ব্যক্তিগত ২ রানের মাথায় তালুবন্দি করেছিলেন গ্রেগ চ্যাপেলকে (এবং উক্ত টেস্ট ইংরেজরা জিতেছিল মাত্র ৩ রানে)। অন্যদিকে ১৯৮৯-৯০ মরসুমে হোবার্ট টেস্টের (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১১৩৩) চতুর্থ ইনিংসে মার্ভ হিউজের বলে অস্ট্রেলীয় টাকার মুঠোয় পুরেছিলেন শ্রীলঙ্কার অশাঙ্ক গুরুসিংহেকে।

কস্তুরীরঙ্গন

টেস্ট না খেলা পরিবর্ত ফিল্ডার হিসেবে টেস্ট ইতিহাসে অন্তত একটি ক্যাচের অধিকারীর তালিকায় প্রথম ভারতীয় নাম মদ্রসন্তান গোপালস্বামী কস্তুরীরঙ্গনের। ১৯৫২-৫৩ মরসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্য জাতীয় দলে নির্বাচিত হয়েও নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া তৎকালীন মাইসোরের এই মিডিয়াম পেসার ১৯৬১-৬২ মরসুমে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কলকাতা টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৫১৮) চান্দু বোরডের বলে তালুবন্দি করেছিলেন ৪১০তম ইংলিশ টেস্ট ক্যাপ হিসেবে অভিষেককারী পিটার পারফিটকে। চারটি টেস্টে দ্বাদশ ব্যক্তির ভূমিকায় থেকে যাওয়া বঙ্গসন্তান প্রকাশচন্দ্র পোদ্দারের নামটিকেও খুঁজে পাওয়া যাবে এই দুর্ভাগাদের (নাকি সৌভাগ্যবান?) তালিকায়। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৬৩-৬৪ মরসুমের দিল্লি টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৫৫৬) ভগবৎ চন্দ্রশেখরের বলে উইকেটরক্ষক জেমস পার্কসকে তালুবন্দি করেছিলেন এই ধ্রুপদী ব্যাটসম্যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ইংল্যান্ড থেকে পরপর রাবার জিতে আনা অজিত ওয়াড়েকরের ভারতীয় দলের জনৈক সদস্য ছিলেন হায়দ্রাবাদি পেসার দেবরাজ গোবিন্দরাজ। কেনিয়া জয়ন্তীলাল, পোচিয়া কৃষ্ণমূর্তি বা সুনীল গাভাসকারের মতো অন্যান্য নবাগতদের অনুসরণে টেস্ট অভিষেকের কপাল ছিল না এই হতভাগ্যের। তবে কিংস্টোনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১৯৭০-৭১ সিরিজের সেই প্রথম টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৬৮০) পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নেমে শ্রীনিবাস বেঙ্কটরাঘবনের বলে রোহন কানহাইকে মুঠোয় পুরেছিলেন তিনি। উল্লেখ্য, চতুর্থ উইকেট হিসেবে কানহাই-এর পতন হতেই দ্রুত ভেঙে পড়েছিল দোর্দণ্ডপ্রতাপ ক্যারিবিয়ানরা এবং পরিণামে ফলো অনও করতে হয়েছিল তাদের।

মজার কথা, সিরিজের ঠিক পরবর্তী টেস্টেই (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৬৮৩, ১২৮তম ইন্ডিয়া টেস্ট ক্যাপ হিসেবে গাভাসকারের অভিষেক টেস্ট) পোর্ট অফ স্পেনে পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নেমে ভারতের উভয় ইনিংসে যথাক্রমে জ্যাক নরিজার বলে পোচিয়া কৃষ্ণমূর্তি এবং আর্থার ব্যারেটের বলে অশোক মানকড়কে মুঠোয় পুরেছিলেন কখনও টেস্ট না খেলা প্রথম শ্রেণির ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান শেলডন গোমেজ। কখনও টেস্ট না খেলেও টেস্ট ইতিহাসের পাতায় এভাবে নিজের নামটিকে সংশ্লিষ্ট রেখে যাওয়া ক্রিকেটারদের ভিড়ে আরও একটি বিশেষ নাম বিংশ শতকের পাঁচের দশকের প্রোটিয়া অলরাউন্ডার আর্থার টেফিল্ডের। নামটি ‘বিশেষ’ কেননা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৫৬-৫৭ মরসুমের সেই জোহানেসবার্গ টেস্টের (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৪৩৭) চতুর্থ ইনিংসে ইংরেজ ফাস্ট বোলার পিটার লোডারের ক্যাচটি আর্থার তালুবন্দি করেছিলেন তাঁরই অফস্পিনার বড়দা হিউ টেফিল্ডের বলে। উল্লেখ্য, উক্ত ইনিংসে ১১৩ রানে ৯ উইকেট দখল করে জীবনের সেরা বোলিং খতিয়ানের নজির গড়েছিলেন হিউ টেফিল্ড। এবং চতুর্থ ইনিংসে ২৩২ রান তাড়া করতে নেমে লোডারের উইকেটটির পতনের সঙ্গে সঙ্গে উক্ত টেস্ট ১৭ রানে হেরে গিয়েছিল ইংরেজরা।

গুরশরণ সিং

যে কোনও পর্যায়ের ক্রিকেটেই পরিবর্ত হিসেবে ফিল্ডিং করতে নেমে তালুবন্দি করা ক্যাচের হিসেব অন্তর্ভুক্ত হয় না সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের মূল প্রোফাইলে (উক্ত পর্যায়ে সরকারি ভাবে তাঁর অভিষেক ঘটুক বা না ঘটুক)। পরিবর্ত হিসেবে একটি টেস্টে সর্বাধিক ক্যাচ ধরার নজিরটি এখনও অবধি দখলে রয়েছে ভারতের গুরশরণ সিং-এর। ১৯৮৩-৮৪ মরসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে আমেদাবাদ টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৯৬৭) পেশির আঘাতে পর্যুদস্ত রজার বিনির পরিবর্তে মাঠে নেমে প্রথম ইনিংসে মনিন্দর সিং-এর বলে ক্লাইভ লয়েড এবং দ্বিতীয় ইনিংসে কপিল দেবের বলে ভিভ রিচার্ডস, জেফ দুঁজো ও ম্যালকম মার্শালকে মুঠোয় পুরেছিলেন এই পাঞ্জাবি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। যদিও গুরশরণের প্রোফাইলে চোখ রাখলে দেখা যায় ১ টেস্টের ১ ইনিংসে করা ১৮ রানের (গড় ১৮.০০) পাশাপাশি মাত্রই ২টি ক্যাচের হিসেব রয়েছে তাঁর নামের পাশে। উল্লেখ্য, ১৯৮৯-৯০ মরসুমে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে অকল্যান্ড টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১১৩৯) ১৯১তম ইন্ডিয়া টেস্ট ক্যাপ হিসেবে অভিষেক হয়েছিল গুরশরণের। এবং উক্ত খেলায় কিউয়িদের প্রথম ইনিংসে কপিল দেবের বলে অধিনায়ক জন রাইট ও দ্বিতীয় ইনিংসে অতুল ওয়াসনের বলে মার্ক গ্রেটব্যাচকে তালুবন্দি করেছিলেন তিনি।

ডেভ গ্রেগরির পর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় টেস্ট অধিনায়ক বিলি মুরডক ক্রিকেট জীবনে ১৯ টেস্টের ৩৪ ইনিংসে ৫ বার অপরাজিত থেকে ৩১.৩১ গড়ে ৯০৮ রান (সর্বোচ্চ ২১১, শতরান ২টি ও অর্ধশত ১টি) করার পাশাপাশি ১টি স্ট্যাম্পিং ও ১৪টি ক্যাচও তালুবন্দি করেছিলেন। কিন্তু তাঁর এই খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত নেই ১৮৮৪ অ্যাসেজের দ্বিতীয় টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১৫) লর্ডসে তালুবন্দি করা সেই ‘বিশেষ’ ক্যাচটির হিসেব। এই অবধি পড়েই পাঠক নিশ্চিত বুঝে ফেলেছেন জনৈক পরিবর্ত ফিল্ডসম্যান হিসেবেই আলোচ্য ক্যাচটিকে তালুবন্দি করেছিলেন মুরডক। ঘটনাচক্রে উক্ত ক্যাচটি ছিল টেস্ট ইতিহাসের প্রথম পরিবর্ত ক্যাচ। এবং মুরডকও অস্ট্রেলীয় রিজার্ভ বেঞ্চে ছিলেন না সেই টেস্টে। রীতিমতো নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়াকে। এবং জনৈক পরিবর্ত ইংরেজ ফিল্ডসম্যান হিসেবে মাঠে নেমে সেই সুদূর ২১ জুলাই ইংরেজ অলরাউন্ডার অ্যালান স্টিলের বলে নিজেরই দলের ব্যাটসম্যান হেনরি স্কটকে মুঠোয় পুরেছিলেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক! আজ্ঞে হ্যাঁ, আঙুলের চোটে অবসৃত ডব্লু জি গ্রেসের শূন্যস্থান পূরণে সেদিন অস্ট্রেলীয় ইনিংসের শেষপর্বে ময়দানে আবির্ভূত হয়েছিলেন খোদ বিলি মুরডক। এবং ১৬০ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা ক্যাঙারুদের ইনিংসকে টেনে তোলার চেষ্টা করা স্কটের মূল্যবান ক্যাচটিকে তালুবন্দি করে মাত্র ২২৯ রানেই নিজের দেশকে আটকে রাখতেও সহায়তা করেছিলেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংরেজদের।

গ্রেস ও মুরডক

বেনারসের ঘাটে সেই মূঢ় ধর্মীয় আচারে মাতোয়ারা ভারতসন্তানদের জমায়েত প্রত্যক্ষ করে হাক্সলের উপলব্ধি ঘটেছিল কোথায় ভেসে যেত অত্যাচারী ইংরেজ রাজশক্তি যদি সেই বৃহৎ গণশক্তি নিবেদিত হত দেশের স্বাধীনতাযজ্ঞে। এই চূড়ান্ত সত্যভাষণের প্রতিক্রিয়ায় তদানীন্তন ভারতভাগ্যবিধাতাদের তরফে ঠিক কোন বিশেষণে বিশেষিত করা উচিত ছিল প্রখ্যাত ব্রিটিশ কথাসাহিত্যিক অ্যালডাস লিওনার্ড হাক্সলেকে? দেশদ্রোহী? মিরজাফর? ঘরের শত্রু বিভীষণ? ‘West is west’ মন্তব্যের সুবাদে এই যবনদেশীয় ভদ্রলোকের উপর খড়্গহস্ত না হয়ে বরং সাম্প্রতিক ভারতবর্ষের ঘোরতর রাষ্ট্রবাদী বাস্তবতায় অনুভবের প্রয়াস করা যায় হাক্সলের সৎ শিল্পীমানসকে। দেশকালের ভিত্তি থেকেই প্রকৃত প্রস্তাবে উদ্‌গত হয়ে উঠতে হলেও কালোত্তীর্ণ শিল্পের অন্তঃসার বরাবরই দেশকাল নিরপেক্ষ। সৎ শিল্পী যে মুহূর্তে নিয়োজিত হন আপন শিল্পকর্মে, সেই মুহূর্তেই বিশ্বপিতা ঈশ্বরের আদলে অবলুপ্ত হয়ে যায় দেশ-জাতি-ধর্ম-বর্ণের প্রতি তাঁর যাবতীয় পক্ষপাত। যেটুকু দায় অতঃপর অবশিষ্ট থাকে তাঁর তা নেহাতই বিশুদ্ধ শিল্পের প্রতি জনক শিল্পীর নিখাদ আন্তরিক দায়। সেই প্রেক্ষিতেই মনে হয় পেশাদারিত্বের বাইরে যেদিন ক্রিকেট ছিল এক নিখাদ শিল্প (ইন্ড্রাস্টি নয়, আর্ট অর্থে), সাদা পোশাকের সেই সাবেকি যুগেই হয়তো সম্ভব ছিল গ্রেস-মুরডক অধ্যায়ের বাস্তবতা।

বাইশ গজে জাত্যভিমানের রেষারেষি কিছু কম নেই অস্ট্রেলিয়ায়-ইংল্যান্ডে। বডিলাইন অধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া শৈত্য এনে দিয়েছিল দু’ দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কে। কুখ্যাত ইয়ান চ্যাপেল-ইয়ান বোথাম কাণ্ডের স্মৃতিও এত সহজে মুছে যাওয়ার নয় ক্রিকেট রসিকদের মন থেকে। উপরন্তু খেলার মাঠের যে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতাই আখেরে সমৃদ্ধ হতে পারে কোনও না কোনও রেষারেষির ইন্ধনকে সম্বল করেই। এই রেষারেষিটুকুর বিহনে নিঃসংশয়েই পানসে হয়ে যেত ক্রীড়াঙ্গনের মাদকতা। কিন্তু জাতীয়তাবাদকে ব্যতিরেকে যেমন কিছুতেই উত্তরণ ঘটতে পারে না সামাজিক জীবনের, অন্ধ জাতীয়তাবাদের আবর্তেও শেষ অবধি অধরাই রয়ে যায় বৃহত্তর জীবনের চূড়ান্ত মোক্ষ। বৃহত্তর এই সামাজিক গেরস্থালিরই অংশ বাইশ গজেও তাই সমাজবিজ্ঞানের সূত্রগুলি প্রতিনিয়ত প্রযোজ্য হয়ে চলে একইভাবে।

মহৎ শিল্পের বৈশিষ্ট্যগত বহুতর সূক্ষ্মতার প্রকরণে ঋদ্ধ খেলা বনেদি ক্রিকেটের ময়দানে তাই সেদিন কিছু সময়ের জন্য দেশ-জাতি-ধর্ম-বর্ণের প্রতি আর যাবতীয় আনুগত্য মুছে গিয়েছিল মুরডকের। দৃশ্যতই সন্তুষ্ট ক্রিকেট দেবতা হয়তো তাই সেই ধর্মযুদ্ধের অন্তিমে টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম পরিবর্ত ক্যাচটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রেখেছিলেন ইতিহাসের এত গভীরতর পাঠ।


লেখক পরিচিতি: জন্ম নৈহাটিতে। মোবাইল কম্যুনিকেশন ও নেটওয়ার্ক টেকনোলজির স্নাতকোত্তর। তবে পছন্দের বিষয় সাহিত্য। মূলত ছোটগল্পকার। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা চার— তিনটি ছোটগল্প ও একটি নিবন্ধ-সংকলন। ভালবাসেন সিনেমা ও ক্রিকেট। সাহিত্য, সিনেমা ও ক্রিকেট— এই তিনটি বিষয়েই রচনা করেছেন বেশ কিছু নিবন্ধ।।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.