কিছু অবিস্মরণীয় ক্রিকেটীয় মুহূর্ত.....
অনির্বাণ দত্ত
১৯৮৬ সালের এপ্রিল মাস...। তখনও ক্রিকেটে বেটিং, বুকি - এইসব শব্দ খুব একটা বাজারে আসেনি (তবে দুর্জনেরা বলে থাকে বেটিং এর বীজ তখনি পোঁতা হয়ে গেছে, শারজার মরুদ্যানে 'ভাই' নামক মালীর হাতে)। তবে বছরে একবার বুখাতির সাহেবের উদ্যোগে বসতো সেই ক্রিকেটাসর। নানা রকম কম্বিনেশনে - কখনো শুধু এশিয়ার দেশগুলো নিয়ে, কখনো তার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া, কখনো বা ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
হ্যাটট্রিকের পরে চেতন কে অভিনন্দন সতীর্থদের |
মজার ব্যাপার হল এই যে টুর্নামেন্টগুলোর নাম কখনো হতো এশিয়া কাপ, কখনো বা অস্ট্রেলেশিয়া কাপ, আবার কখনো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। তবে এশিয়া কাপ নামটা বাদ দিলে যত দূর মনে পড়ে আর কোন নামের টুর্নামেন্ট রিপিট হয় নি। তবে নাম যাই হোক না কেন এই সব মরূদ্যান ক্রিকেট এর বক্স অফিস ছিল ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফাইনাল। তা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সারা ক্রিকেট দুনিয়ার জানা যে ৮৬র এপ্রিল এ ফাইনাল এর শেষ ওভার এর শেষ বল বেরিয়েছিল কোন এক চেতন শর্মার হাত থেকে - একটি অমার্জনীয় ফুলটস - নির্দয় মিয়াঁদাদ এর সপাট প্রহারে যার জায়গা হয়েছিল গ্যালারিতে। সত্যিই চোখ টোখ কচলে দেখার মতো !!! শেষ বলে চার রান দরকার ছিল পাক টিমের, হয়ে গেলো কিনা ছক্কা!!! পাকিস্তান জিতে গেলো - এটা তো একটা ছোট্ট স্টেটমেন্ট। বেচারা চেতনের চিরকালীন পরিচিতি হয়ে গেলো লাস্ট বলে ছয় খাওয়া বোলার হিসেবে। তা সে যতই তিনি এর চার মাস পরে ইংল্যান্ড এ ম্যাচে দশ উইকেট নিয়ে সিরিজ জেতান না কেন। আজকের যুগ হলে তামাম দুনিয়ার ক্রিকেট ‘বোদ্ধা’রা কিন্তু চেতন-বুকি যোগসাজশ খুঁজে বার করতই। তবে লাইফ ইজ এ গ্রেট ব্যাল্যান্স। তার জন্যই চেতনের ব্যাল্যান্স শিট কিন্তু একদম ব্যাল্যান্সড। এর দেড় বছর পরেই কিন্তু ৮৭র বিশ্বকাপ। যেখানে চেতনই হবেন প্রথম ভারতীয় বোলার যিনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটে হ্যাট্রিক করবেন, পর পর তিন বলে রাদারফোর্ড, ইয়ান স্মিথ আর চ্যাটফিল্ডের স্টাম্প উড়িয়ে দিয়ে। আজ্ঞে হ্যাঁ। তিন জনেই বোল্ড!!! এটাও কিন্তু ক্লাস সেভেনের একটা ছেলে চোখ টোখ কচলেই দেখেছিলো।
'ক্যাপস' এর হেমিংস সংহার |
তবে চেতনের ট্র্যাজেডি এটাই যে তাঁর কীর্তির দিনটা পুরোপুরি তাঁর হল না, এক এবং একমাত্র সানিভাই এর জন্য। কেরিয়ারের একমাত্র একদিবসীয় শতরানই শুধু নয়, আরো বেশি করে মনে গেঁথে আছে চ্যাটফিল্ডের এক ওভারে ২১ রান। বেচারা চ্যাটফিল্ড। দিনটা একেবারেই তাঁর ছিল না। দু’জনের কীর্তির সঙ্গেই তাঁর নাম জড়িয়ে গেলো।
একটু ফাস্ট ফরওয়ার্ড করা যাক। ৮৯ এর অক্টোবর। এম আর এফ পেস ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে বসেছে এক সিঙ্গল উইকেট টুর্নামেন্ট - পেস ভার্সেস পাওয়ার - যেখানে শ্রীকান্ত, মিয়াঁদাদ, কপিল, সেলিম মালিক, মুদাসসারকে বল করবেন প্যাটারসন, ওয়ালশ, বিশপ, বেঞ্জামিনরা। বেশ চলছিল। হঠাৎ ওয়ালশের পর পর তিন বলে মিয়াঁদাদের অফস্টাম্প উড়ে গেলো - মনে হল যেন একই বল তিন বার রিপ্লে হল। সেই ঘোর কাটার আগেই পরের ওভার। এবার ব্যাটসম্যান মুদাসসার। বিশপের বলে পর পর তিন বলে উড়ে গেলো তাঁর মিডলস্টাম্প!!!
এর কয়েকমাস আগে....। নিউজিল্যান্ড এ রিচার্ড হ্যাডলির বিশ্বরেকর্ডের টেস্ট। কিন্তু কোন এক ড্যানি মরিসন ও পাঁচ উইকেট নিয়ে ফেলেছিলেন যে। এই অধমের সৌভাগ্য হয়নি শেন ওয়ার্নের 'শতাব্দীর বল' সেই সময়ে লাইভ কভারেজে দেখার। কিন্তু মরিসনের সেই ডেলিভারি আজও চোখে লেগে আছে। পঞ্চম কি ষষ্ঠ স্টাম্পের বল - ব্যাট তুলে নিয়ে জাজমেন্ট দিলেন সঞ্জয় মঞ্জরেকর - যিনি কিনা সানি এবং শচীনের মধ্যবর্তী সময়ে ভারতের টেকনিক্যালি সবচেয়ে নিখুঁত ব্যাটসম্যান বলে স্বীকৃত - বল ঘুরলো, এবং মিডলস্টাম্প উড়িয়ে নিয়ে চলে গেলো। হয়তো এই মুহূর্ত গুলির মধ্যে কোন কোন টি খুব বেশি প্রসিদ্ধ নয়। তবে এই অধমের স্মৃতিতে এরা থেকে যাবে চিরকাল।
লেখক পরিচিতি: পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। নেশা অনেক কিছুই - ক্রিকেট, মার্শাল আর্ট, ফটোগ্রাফি, বই, চলচ্চিত্র, ইন্টারনেট, ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে বিশেষ ব্যুৎপত্তি এগুলির কোনটিতেই নেই। লেখক হিসেবে কোন অতীত নেই। ভবিষ্যৎ থাকবে কিনা সেটা সম্পূর্ণভাবে পাঠকদের হাতে।
(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।
Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.