অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।


খেলার দুনিয়া

মে ১৫, ২০১৭

 

এই করেছ ভাল নিঠুর হে

প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য্য ও অনীশ মুখোপাধ্যায়

প্রবাদপ্রতিম ক্রিকেট ভাষ্যকার জন আরলট সায়েব একদা ক্রিকেটকে নিষ্ঠুর খেলা বলে অভিহিত করেন। আরলট প্রয়াত হ’ন ১৯৯১র ডিসেম্বরে, ফলে ভাগ্যিস, আরলট হালের টি-টোয়েন্টি তো দূরস্থান, তুলনামূলক সাবেক ষাট বা তারও পরে পঞ্চাশ ওভারের একদিবসীয় লীলাও মনোযোগ সহকারে দেখেছেন ও তারপর প্রণিধানযোগ্য কিছু বলে গিয়েছেন বলে জানা যায়নি।

টিটোয়েন্টির জন্মলগ্ন নিয়ে কিছু কথা খরচ এই ইন্টারনেটের যুগে অহেতূক এবং অধিকন্তু হয়ে যাবে। গুগল সার্চ করে যে কেউ দেখে নিতেই পারেন সেটা ২০০৩এর ফেব্রুয়ারি। জন্মস্থান ইংলন্ড। ইংলন্ড-ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড আন্তঃ-কাউন্টি স্তরে এই খেলা চালু করেন। প্রথম আন্তর্জাতিক টিটোয়েন্টি আরো প্রায় দুই বচ্ছর পরে ১৭ই ফেব্রুয়ারি ২০০৫, অকল্যান্ডের ইডেন পার্ক মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড লড়ালড়ি করে। প্রথম টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০০৭এ, দক্ষিণ আফ্রিকায়। চ্যাম্পিয়ন ‘ইয়ঙ্গিস্তান হিন্দুস্তান’। বিশদে না গিয়ে শুধু তিনটে কথা ধরিয়ে দিয়ে আলোচনায় ঢুকতে চাইব – ১) খেলাটা তখনো অবধি ক্রিকেট, অন্তত প্রায় ক্রিকেট। নিয়মকানুনে পঞ্চাশ ওভার ক্রিকেটের প্রাদুর্ভাব প্রকট। ২) দুনিয়া জুড়ে সাবেক টেস্ট ম্যাচ ক্রিকেটে ও তদ্দিনে প্রায় তিন দশক পুরোনো (শুরুয়াৎ ১৯৭৫ ধরে) পঞ্চাশ ওভারের খেলায় ক্রমক্ষীয়মান দর্শকসংখ্যা এই অর্বাচীনতম ফর্মের গর্ভসঞ্চার করে। ৩) ফর্মটিকে শুরুতে সিরিয়াস ক্রিকেটের গা-ঘামানো হিসেবে ধরা হলেও দ্রুত ধূর্ত ব্যবসায়ীর মত আইসিসি এর বাণিজ্যিক দিকটার গুরুত্ব বুঝে ফেলেন ও বিশ্বকাপের আয়োজন করে ফেলেন। অবিসংবাদিতভাবে বিশ্ব ক্রিকেটের বৃহত্তম বাজারের নিয়ন্তা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড তখনো এই ফর্মের তীব্র বিরোধী ছিলেন, ফলে প্রতিবাদ স্বরূপ দক্ষিণ আফ্রিকায় আইসিসি আয়োজিত টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম সারির দল না পাঠিয়ে ঈষৎ হেলাফেলা করেই যেন ওই জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনের ‘ইয়ঙ্গিস্তান’ দল যারা কিনা নীলরক্তপাত করে (ব্লিড ব্লু), তরুণ তুর্কি মহেন ধোনির নেতৃত্বে দায়সারা ভাবে তাই পাঠিয়ে মুখ গোমড়া করে বসেছিলেন। প্রথম দলের কীর্তিমানেরা যথা, শচীন, দ্রাবিড়, লক্ষণ, কুম্বলে ও সৌরভ (চ্যাপেলের চাপে প্রায় কক্ষচ্যূত, তাই শেষে নাম নিলাম) কেউ সে দলে ছিলেন না। একমাত্র প্রথম দলের উইকেটরক্ষক মহেন তখন এক উদীয়মান তরুণতারকা যিনি তখন অবধি পাকিস্তানে একটি বীরত্বব্যঞ্জক টেস্ট শতরান ও শ্রীলঙ্কার বিরূদ্ধে পঞ্চাশ ওভারের খেলায় গুরুগ্রেগের টিমে ওয়ান-ডাউনে নেমে একটি ধুন্ধুমার ১৮২ রানের ইনিংস খেলেছেন।



প্রথম টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী 'ইয়ঙ্গিস্তান হিন্দুস্তান' !

তা হলে এইবার টিটোয়েন্টির উৎপত্তি ও বুৎপত্তি ঈষৎ তলিয়ে দেখা যেতে পারে। পাঠক নির্ঘাত খেয়াল করেছেন, টিটোয়েন্টি খেলাটাকে যে আমরা স্রেফ আরেকটা খেলা বলে ডাকছি যার সঙ্গে ক্রিকেট বলতে যা বুঝে এসেছি তার বেশ মিল আছে। আমরা চেষ্টা করব এই দৃষ্টিভঙ্গী ব্যাখ্যা করতে, ধাপে ধাপে। সাবেক ক্রিকেটে কমে-আসা দর্শক এবং ফলে খেলাটির নিয়ন্তা সংস্থাগুলির (দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে) কমতে-থাকা আয় যে ক্রিকেটের এই নবীনতম ফর্মের জন্মদাতা তা আগেই বলেছি। এখন কেন সাবেক ক্রিকেটে দর্শক কমে আসছিল তা খুঁজতে বসে প্রথমতঃ ইংলন্ড-ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড। আবার প্রশ্ন, কেন? সর্বাগ্রে ইংলন্ড-ওয়েলসই বা কেন? চ্যানেল নাইন আর তথাকথিত প্যাকার-সার্কাসের অস্ট্রেলিয়া নয় কেন? ক্রিকেটের ‘বড়বাজার’ ভারতের বিসিসিআই নয় কেন? তাহলে কি সেই সময় শুধু ইংলন্ডেই টেস্টম্যাচে ভীড় কমে আসছিল, আর বাকি সর্বত্র সে ক্ষয় দেখা যায়নি? বোধহয় ঘটনাটা উলটো। ইংলন্ড-অস্ট্রেলিয়ায় বরং সে ক্ষয় অপেক্ষাকৃত কম দৃষ্ট হতো, টেস্টম্যাচের রসগ্রাহী দর্শক ওখানে তখনো যথেষ্ট, অন্তত পাঁচদিনের ম্যাচ সাধারণ ভাবে তৃতীয়দিন থেকে জমে উঠলে ইংলন্ড-অস্ট্রেলিয়ায় দর্শক উপচেই পড়তো (এখনো তা দেখা যায়)। সঙ্কটটা মূলতঃ দানা বাঁধে উপমহাদেশের অধিকাংশ নিস্পৃহ পিচে খেলা টেস্টম্যাচে পরের পর উত্তেজনাহীন নিষ্প্রাণ ড্র দেখতে দেখতে। ‘ডাটা’ (Data)ব্যবহারে লেখা চচ্চড়ি হয়ে যেতে পারে তাই শুধু একটুকু বলেই ক্ষান্ত দেওয়া যাক যে, ১৯৯০-২০০৩ সময়ের মধ্যে সারা বিশ্বে খেলা টেস্টম্যাচের মধ্যে নিস্ফলা টেস্টম্যাচগুলোর বেশিরভাগ উপমহাদেশেই খেলা হয়েছিল। তাই যদি হয়, তাহলে টিটোয়েন্টির জন্মকথাটা ‘ঠান্ডা-লাগলো-আমার আর সর্দিজ্বর-হল-তোমার’ গোছের হয়ে যাচ্ছে না? ফলে প্রশ্নটা নেড়েচেড়ে দেখতেই হচ্ছে। পাকা চিকিৎসক বলেন, জ্বর কোনো রোগ নয়, রোগের লক্ষণ মাত্র। লক্ষণটা তাহলে খোঁজার চেষ্টা করা যাক।

এইখানে আমরা ফিরে যেতে চাইব ১৯৮৭-র ১৯ অক্টোবর সেই কৃষ্ণ-সোমবারে। ১৯৩০র মহামন্দার পরে, বরং বলা ভাল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বিশ্বব্যাপী এতাদৃশ আর্থিক মন্দা আর দেখা যায়নি। বিশ্বজুড়ে স্টকমার্কেটে ধ্বস নামে, স্টকমার্কেট সমূহের মক্কা ওয়াল স্ট্রিট মুখ থুবড়ে পড়ে। হংকং থেকে শুরু হয়ে পশ্চিম ইউরোপ ও ক্রমে ক্রমে আমেরিকায় এই মন্দালহরী আতঙ্কজনক দ্রুততায় সম্প্রসারিত হয়। ডাউ জোনস গড় শিল্পসূচক (Dow Jones Industrial Average, DJIA) এই একদিনে পড়ে সাড়ে ২২ শতাংশের বেশি অর্থাৎ প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি, এবং অক্টোবর মাসের গোড়ার দিকের তুলনায় প্রায় ৩৪ শতাংশ সেই পতন। লন্ডন স্টক মার্কেট তিনদিন আগেই ১৬ তারিখ শুক্রবারে অপ্রত্যাশিত পতনজনিত কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়, সেই সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার - তিনদিনের মধ্যে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক (FTSE) পড়ে প্রায় ২৯ শতাংশ। ভিন্ন সময়-অঞ্চল হওয়ায় অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে এ অবশ্য এক অমাঙ্গলিক মঙ্গলবারের কেচ্ছা। আরো সঠিক ভাবে বলতে গেলে বলতে হয় ইংলন্ডে ১৯৮০ থেকেই এই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সুত্রপাত, এবং তার প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে দেখা যায় যে ১৯৮৭ থেকে ইংলন্ডের স্থূল দেশজ আয় (GDP) এবং কর্মীনিয়োগ দু’টি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সূচকেরই পতন শুরু হয় এবং ১৯৯১ নাগাদ দু’টিই নিম্নতম অবস্থানে এসে দাঁড়ায়, যে নিম্নাবস্থা ১৯৩০এর মহামন্দার পরে ইংলন্ডবাসীর অভিজ্ঞতার বাইরে। সমষ্টিগত অর্থশাস্ত্রের (Macroeconomics) নব্যতম ধারা প্রকৃত বাণিজ্যচক্র তত্ত্বের (Real Business Cycle Theories) বাড়বাড়ন্তও প্রায় এই একই সময়ে। গূঢ় তাত্ত্বিক কূটকাচালি বাদ রেখেও এটুকু বলতেই হয়, এই তত্ত্বে অর্থনীতির চক্রাকারে আবর্তনের অনিবার্যতা স্বীকার করে তার কার্যকারণ ব্যাখ্যা করবার প্রয়াস করা হয়ে থাকে। অর্থনীতির ওঠাপড়ার অদ্ভুত এক স্বাভাবিক ছন্দ আছে, মোটামুটি আট-দশ-বারো বছর অন্তর মন্দার ঝঞ্ঝা এবং তারপরে অর্থনীতির উদ্দীপক অবস্থার (boom) সুপবন ফিরে ফিরে আসে; যেন রাতের পরে দিন, আবার দিনের পরে রাত আসবার মত। কিন্তু এই ওঠাপড়া আর কিছু করুক চাই না করুক, মানবমনে গভীর অনিশ্চয়তার আতঙ্কের শিহরণ চারিয়ে দেয়। মানব তো প্রকৃতিগতভাবে থিতু হতে চেয়ে এসেছে, স্থিতাবস্থাতেই সে সাধারণভাবে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে বেশি। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎভাবনা তার চিন্তনপ্রণালী ও ব্যবহারিক ধাঁচটিকেই বদলে দিতে পারে। ব্রিটেনে আশির দশক থেকেই এই অবস্থা বেশ কয়েকবার ঘুরে ঘুরে এসেছে বলে অর্থনৈতিক রিপোর্টসমূহে আমরা দেখতে পাচ্ছি।

এ সব তথ্যের কচকচি যেটুকু না হলে একান্ত নয় তার বেশি আর বাড়ানো উচিত হবে না, অর্থশাস্ত্রীয় ব্যাখ্যাট্যাখ্যা তো একেবারেই নয়। অস্যার্থ যা বোঝা দরকার তার মূল কথা হল, অর্থনীতির উপরে মন্দার যা যা মূল সমষ্টিগত প্রভাব, সঞ্চয়-বিনিয়োগের বুদ্বুদ ফটাস করে ফেটে গিয়ে উৎপাদন ও কর্মীনিয়োগে তাৎক্ষণিক মারণ-ঝটকা, তার সবই পরিলক্ষিত হয়েছিল সেই সময়ে যা ব্রিটেনে (ও সমগ্র ইউরোপ, আমেরিকা ও কিয়দংশে অস্ট্রেলিয়াতেও) ১৯৩০-এর মহামন্দার ভয়ঙ্করতার স্মৃতি ভীষণভাবে ফিরিয়ে আনে। এবং সাধারণ্যে সে স্মৃতি ভয়াবহ আর্থিক অনিশ্চিতির, প্রাত্যহিক জীবনাচরণে উথালপাথাল সমুদ্রপাড়ির। ব্রিটেনের এই আর্থিক টালমাটালত্বের প্রেক্ষিতে টিটোয়েন্টির জন্মকে ফেলতে চাইছি আমরা। স্মরণ করা যাক, সেই সময় ব্রিটেনে এক শ্রেণীর ক্রিকেটারের উদ্ভব হয়, যাদের চালু নাম ছিল – ব্রেড অ্যান্ড বাটার ক্রিকেটার, যার অক্ষম বঙ্গানুবাদ হতে পারে ‘দিন-আনি-দিন-খাই’ ক্রিকেটার। এরা খেলাটির কোনো বিশেষ প্রকরণে দড় বলে কখনো শোনা যায়নি, এরা খানিক ব্যাট ধরতে পারে, আবার দৌড়ে এসে নিয়ম মেনে বলটাও করতে পারে, আর ফিল্ডিং তো ঘোলাজলে কইমাছ খাবলে ধরবার মত শক্ত কিছু নয়, ও সবাই অল্পবিস্তর পারে। বিশেষ কারুর নাম নিতে চাই না, তবু ধরা যাক, নেহাতই কথার পিঠে কথা হিসেবে, বেন হোলিওকির নাম পড়ে? ভদ্রলোকের ভাই অ্যাডাম হোলিওকি কালে কালে খুব সামান্য সময়ের জন্য ইংলন্ড একদিনের ক্রিকেটদলের অধিনায়কও হয়েছিলেন। বেন পথ দুর্ঘটনায় অকালপ্রয়াত, তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই বলি, ইংলন্ডে ওঁর পরিবার (বোধহয় তাঁরা এখন অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী, কি জানি। ওঁরা অস্ট্রেলিয়া থেকেই ইংলন্ডে এসেছিলেন বলেই জানতাম) ছাড়া শুধু ক্রিকেট খেলাটা খেলবার জন্য সমসাময়িককালে ওঁকে কেউ মনে রাখেননি, ইতিহাস তো দূরস্থান। বেন নাকি বোলিং অলরাউন্ডার ছিলেন, তা ২টি টেস্টে ৪টে উইকেট নিয়ে ওঁর বোলিং গড় ৫০ আর ২০টি একদিনের খেলায় ৮টি উইকেট নিতে তিনি সাড়ে ছেষট্টি রান উইকেট-পিছু ব্যয় করেন, যথেষ্ট উদারপ্রকৃতির বোলার ছিলেন, মানতেই হবে। ব্যাটিং-এর পরিসংখ্যান আর না-ই বা পেশ করলাম। তস্য ভ্রাতা অ্যাডাম, ২০০৩এ উইজডেন ক্রিকেটার অফ দ্য ইয়ার হয়েছিলেন (ইংরেজের সুবিখ্যাত লঘুক্রিয়াসঞ্জাত বহ্বারম্ভ, জাতীয়দলে উত্থান মাত্র ওঁকে নতুন বথাম বলাটলাও হয়েছিল। আদপেই টেঁকেনি, তাই হয়তো পরে অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের কপালেও একই অভিধা জুটেছিল) ৪টি টেস্টে ব্যাটিং-এ সর্বোচ্চ ৪৫ সহ ১১ গড় রাখেন, বোলিং-এ ২টি উইকেট ৩৩.৫ গড়ে; আর ৩৫টি একদিবসীয় আন্তর্জাতিকে ২৫ ব্যাটিং গড়ে সর্বোচ্চ ৮৩ সহ বোলিংএ ৩২টি উইকেট নিয়েই উনি সমগ্র উইজডেন মাতিয়ে দিয়েছিলেন! এঁরা ওই দিন-আনি-দিন-খাইদের দলে অপেক্ষাকৃত নামীদের মধ্যে পড়েন।

আর্থিক মন্দার স্মৃতি ও অভিঘাতপরবর্তী ইংলন্ড ক্রিকেট খেলাটার মধ্যে দু'টি জিনিস খুঁজতে চাইল। প্রথমতঃ, ততদিনে পাঁচ-পাঁচটা কর্মদিবস নষ্ট করে খেলা দেখা অতিরিক্ত বিলাসের স্তরে উন্নীত হয়েছে যা ইংলন্ডেও কেবল অতি স্বচ্ছলদেরই মানায়। এমনকি সারাটাদিন ধরে একদিবসীয় পঞ্চাশ-পঞ্চাশ ওভারের খেলা দেখাও উইকএন্ড ভিন্ন শক্ত হয়ে উঠলো। তাই খেলাটাকে আরো সংকুচিত করে সন্ধ্যের মুখে তিন-সাড়ে তিন ঘন্টার ক্যাপসুলে পুরে উপরে টুকটাক বিনোদনের মোড়ক দিয়ে বিক্কিরি করা যায় কিনা সে তল্লাশ শুরু হল; এবং দুই, খেলাটার পরিধি আরো বাড়িয়ে আরো বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায় কিনা তার চেষ্টা শুরু হল - শুধু মাঠকর্মী, নিরাপত্তাকর্মী, বা সাধারণ ক্রীড়াকর্মী নয়, মাইনে-করা ক্রীড়কের সংখ্যাও বাড়িয়ে তোলা কিভাবে সম্ভব, চিন্তাভাবনা শুরু হল। খেলাটার দর্শক হিসেবে স্রেফ ঐতিহ্যগতভাবে স্টেডিয়ামগামী ক্রিকেটপ্রেমী নয়, যাঁদের সঙ্গে কোনোকালে ক্রিকেটের কোনোরকম সম্পর্ক ছিল না, বা থাকবার কোনো কারণ নেই, তাঁদেরও টিভির সামনে ক্রিকেট দেখতে টেনে আনা কিভাবে সম্ভব, তার উপায় খোঁজা শুরু হল। এই নতুন দর্শকদের নিয়ে একটা বড় সুবিধে হচ্ছে, ক্রিকেট নিয়ে সাবেক কোনো রোমান্টিকতার ভূত তাঁদের ঘাড়ে চেপে নেই, ক্রিকেটকে তাঁরা আরো একটা নতুন টেলি-সোপ-অপেরা হিসেবেই দেখতে চান। ফলে ক্রিকেটকে মেনে এঁরা রুচি বদলাবেন না, সে দায় তাঁদের মোটেও নেই; বরং ওঁদের মন ধরতে ক্রিকেটকেই যদ্দুর সম্ভব বদলে নিতে হবে নিজেকে। আর বর্ধিত টেলি-ভিউয়ারশিপ ক্রিকেট থেকে আয়ের নতুন ও প্রশস্ততম সিংদরজা যে দরাজ করে খুলে দিতে পারে তা তদ্দিনে মন্দার হাত থেকে রক্ষার পাওয়ার পথ হিসেবে চিনে নেওয়াটা হয়ে গিয়েছে। রইল বাকি খেলোয়াড়। এখন দক্ষ ক্রীড়ক তো হুট বলতেই পয়দা হয় না, সে তো একটি দীর্ঘমেয়াদী নিবিড় প্রক্রিয়ার ফসল। এইখানে টিটোয়েন্টিকে আরেকটি ক্যারিয়ার-অপশান হিসেবে তুলে ধরবার প্রয়াস শুরু হল, যেখানে ওই দীর্ঘমেয়াদী নিবিড় অনুশীলন-প্রশিক্ষণের চাপ নেই, পারঙ্গমতায় মোটামুটি যাকে বলে অ্যাবাভ-অ্যাভারেজ হলেই চলবে, মামলা তো আট বলে আঠেরো বা খুব বেশি তো আঠেরো বলে তেত্রিশের; সঙ্গে চার ওভারে আঠাশ রান ভাল বোলিং, আর যদি সঙ্গে একটা উইকেট জুটে যায় তো সে একান্ত অপরিহার্য ক্রিকেটার এই ফর্মে। আশির দশকের সেই মন্দার ধাক্কায় নড়বড়ে ব্রিটেন চুড়ান্ত ও প্রায় অদৃষ্টপূর্ব (১৯৩০ এর মহামন্দার স্মৃতি তখন জনমানসে স্বাভাবিকভাবেই ফিকে হয়ে এসেছে) অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হয়ে এক জাতের মায়োপিয়ায় ভুগেছিল বলে আমাদের ধারণা। যে মায়োপিয়া জীবনজীবিকার ক্ষেত্রে পাঁচ-দশ বছরের ভবিষ্যৎও ধোয়াঁটে করে তোলে আগামীকাল-পরশু-তরশুর আশু সঙ্কটমোচনের দুর্ভাবনার কুয়াশায়। টিটোয়েন্টি ক্রিকেটফর্মের গঠনগত বুনোট ও ব্রেড অ্যান্ড বাটার ক্রিকেটারদের উদ্ভব খানিকটা যেন সেই আর্থিক অনিশ্চয়তাসঞ্জাত মায়োপিয়া থেকে।

এবার ক্রিকেটের সাবেক অভিভাবকের বিবর্তনের দিকেও নজর ফেরাবার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ১৯০৯এ ব্রিটিশ কমনওয়েলথের মাত্র তিন সদস্য নিয়ে জন্মের পর ইন্টারন্যাশান্যাল ক্রিকেট কাউন্সিল (জন্মকালে অবশ্য নাম ছিল ইম্পিরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স, বর্তমান নামটি ১৯৮৯ সনে গৃহীত হয়) স্বাভাবিক কালের নিয়মেই বহু পথ পেরিয়ে এসে পূর্ণ সদস্য (১০টি), অ্যাসোসিয়েট সদস্য (৩৯টি) আর অ্যাফিলিয়েট সদস্য (৫৬টি) নিয়ে আজ তার ১০৫টি দেশের ভরা সংসার।


টেস্ট ক্রিকেটের এক বর্ণাঢ্য প্রেক্ষাপট - ধরমশালা (ভারত)

ক্রিকেটকে শুধু ব্রিটিশ কমনওয়েলথের দেশগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে যে চলবে না তা বোঝা গেছিল ওই আশির দশকের শুরুতেই। আর্থিক বিশ্বায়ন (Globalization)নামক বহুশ্রুত যোজনাটির প্রায় চার দশক ধরে পাকানো সলতেয় অগ্নিসংযোগও প্রায় একই সময়ে, যে সর্বগ্রাসী প্রক্রিয়ায় দুনিয়ার সমস্ত দেশকে অর্থনৈতিকভাবে জুড়ে ফেলা শুরু হবে আশির দশকের মধ্যভাগ থেকেই, (সেপ্টেম্বর ১৯৮৬ – GATTএর তৎকালীন ডিরেক্টর-জেনারেল আর্থার ডাঙ্কেলের প্রস্তাবনা ‘ডাঙ্কেল ড্রাফট’এর ভিত্তিতে উরুগুয়ের পুন্তা-দেল-এস্তেতে গ্যাটের অষ্টম রাউন্ড আলোচনার সুত্রপাত, যা ১৯৯৪এ মরোক্কোর ম্যারাকেশে ১২৩টি দেশের যৌথ স্বাক্ষরিত চুক্তিতে পরিণতি পাবে) ‘দেশ’ বলতে পড়ে থাকবে কেবল রাজনৈতিক সীমানা, আর্থিক সংযুক্তিকরণের ফলে দুনিয়াজুড়ে স্থাপিত হতে শুরু করবে এক ও অভিন্ন ‘ভুবনডাঙা’ গ্রাম, পরিভাষায় যাকে আদর করে বলা হবে গ্লোবাল ভিলেজ। ইওরোপ-আমেরিকা সহ দুনিয়া-ব্যাপী মন্দার বাজারে ক্রিকেট তো কোনো জন্মলব্ধ কবচকুন্ডলে সুরক্ষিত নয়, তাই চুড়ান্ত আর্থিক অনিশ্চয়তার বাতাবরণ ও দর্শকসংখ্যার ক্রমহ্রাসজনিত আয়ের অধোগতি খেলাটির “বিশ্বায়নে” আগ্রাসী পদক্ষেপ গ্রহণে আইসিসিকে একরকম বাধ্য করলো। এই প্রেক্ষাপটে অ্যাসোসিয়েট ও অ্যাফিলিয়েট সদস্য দেশগুলিতে আইসিসি ক্রিকেটকে যে চেহারায় প্রচারিত ও প্রসারিত করতে উদ্যোগী হল, তা অনুমান করা একেবারেই কঠিন নয়। আইসিসি-র ১০৫ সদস্য দেশের মধ্যে ১০টি পুর্ণ সদস্য দেশ ছাড়া বাকি কেউই পাঁচ (বা, চার বা তিন)দিনের ক্রিকেট খেলে না; সব্বাইকেই ক্রিকেট বলতে কুড়ি-বিশের ক্রিকেটই শেখানো হয়েছে, যদিও অ্যাসোসিয়েট সদস্যদের কয়েকজন পঞ্চাশ ওভারের খেলাও মাঝেসাঝে খেলে থাকে। মানুষের হাতে যদি কাজ না থাকে বা যদি কাজের বাজার অনিশ্চিত হয় তবে মানুষের হাতে উপার্জন কম, মাথায় ভবিষ্যৎ-দুর্ভাবনা থাকে বেশী। তখন স্বাভাবিকভাবেই অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ সময়ব্যাপী গভীর অভিনিবেশ বা চিন্তা-উদ্রেককারী বিনোদন সাধারণভাবে মানুষ চাইবে না। বরং স্বল্পসময়ের অগভীর, পয়সা-উশুল ধরনের চটুল বিনোদনই সে খুঁজতে চাইবে। সপ্তাহান্তে শুক্রবার সন্ধ্যাবেলা বা শনি-রবিবার তিন ঘন্টার কুড়ি-বিশের ম্যাচ তাকে সেই তাৎক্ষণিক আনন্দ ও উত্তেজনাই যোগান দিতে পারে, যা এই সাধারণভাবে ক্রিকেটরুচিহীন দর্শকমন্ডলীকে সনাতনী টেস্ট ম্যাচ দিতে পারে না। ঠিক সেইটে যোগান দিতে আইসিসি সবচেয়ে প্রত্যাশিত পথটিই বেছে নিল আর সেটি হচ্ছে বাজারি জনপ্রিয়তার চাহিদা শিরোধার্য করে খেলার মূল খাঁচাটা উপর-উপর অক্ষুন্ন রেখে খেলার নিয়মাবলী যথাসম্ভব বদলে নাও, তাতে খেলাটির বিশুদ্ধতা বিনষ্ট হলেও কিচ্ছু আসে যায় না; খেলার সময়সীমা কমাও যাতে খেলার ফলাফল (স্রেফ জয় বা পরাজয়; অমীমাংসা এই নব্য জনগণেশের কাছে অনুত্তেজক, ফলে অনাকর্ষণীয়) দ্রুত জানা যাবে। পরিবর্তিত নিয়মের গুঁতোয় খেলাটার মূল ভারসাম্যটাই যে দুলে গেছে; বোলার নামক জীবটির জীবন থেকে যাবতীয় রক্ষাকবচ অপহৃত হয়েছে, কুড়ি-বিশে পূজ্য অবতার কেবল ব্যাটসম্যান। স্টেডিয়ামভর্তি জনতা স্রেফ চার-ছয় দেখতে চায় (এক কালে শোনা যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্রুত-বল-ছোটা মাঠে দর্শককুল দৈত্যকুলোদ্ভব ফাস্টবোলারদের বলে ব্যাটসম্যানের রক্ত দেখতে চাইত! প্রায় রোমের কলোসিয়াম আর কি!), তাই তাদের শুধুই চার ও ছয় দেখাবার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। নেহাত অন্যদিক থেকে বলটা ছুঁড়ে না দিলে ব্যাটসম্যান ঠেঙাবেটা কি, তাই আজও কুড়ি-বিশের খেলায় বোলার পপিং ক্রিজ অবধি এসে হাত ঘুরিয়ে বল করে। বোলারদের মিউজিয়াম আইটেমে পর্যবসিত হতে আর বেশি দেরী আছে বলে মনে হচ্ছে না; সেদিন বোধকরি দূরে নয় যখন বাউরাল, অ্যান্টিগা বা লর্ডসের ক্রিকেট মিউজিয়ামে ডেলিভারি দেওয়ার ভঙ্গিতে কারুর ছবি বা মূর্তি দেখিয়ে গাইড বলবে – এই ভদ্রলোক বাইশ পা দৌড়ে এসে এমনি করে হাত ঘুরিয়ে ঘন্টায় নব্বই মাইল বেগে বল করতে পারতেন, নাম ফ্রেডি ট্রুম্যান, বা জেফ টমসন, বা ম্যালকম মার্শাল, বা...; ইডেনের মিউজিয়ামে ঝুঁটি বাঁধা শিখের ছবি দেখিয়ে বলবে – এই লোকটা লর্ডসে প্রথম ঘন্টায় ইংলন্ডের চার উইকেট ফেলে দিয়েছিল একবার, এ আর এর সাঙ্গোপাঙ্গরা কাঁচের উপরেও ক্রিকেটবল স্পিন করাতে পারত! শুনেটুনে দর্শক অবিশ্বাসে চোখ কপালে তুলে বলবে – মাই গড! হোয়াট দ্য রেচেড ব্যাটসমেন ইউজড টু ডু আগেনস্ট দিজ নটোরিয়াস গাইজ? আফটার অল, দ্য গেম ইজ অল অ্যাবাউট ফোরস অ্যান্ড সিক্সেস, ইজন্ট ইট? পরিহাসের কথা এই যে, আইসিসির নতুন লোগোয় একটি ক্রিকেট বলের আভাস (নাকি, প্রত্নচিহ্ন বলা উচিত?) অতীব স্পষ্ট, ক্রিকেট ব্যাটের কোন চিহ্ন সেখানে নেই!

ছক্কাই মোক্ষ - আধুনিক টিটোয়েন্টি দর্শক

তাহলে দেখা যাচ্ছে, ক্রিকেট বদলেছে এবং যেভাবে বদলেছে সেই বদলটা অনিবার্য ছিল। খেলাটির বিশ্বনিয়ামক সংস্থার অভিভাবকত্বের দোষ ধরে লাভ কি, যখন বিশ্বায়নের বাজারে সমস্ত কিছুর মত ক্রিকেটটাও স্রেফ আরেকটি পণ্য? বাজারের রুক্ষ চাহিদা-যোগান সম্পর্ক আর ক্রেতার পণ্যমোহগ্রস্ততার অঙ্গুলিহেলনেই ক্রিকেট নিজেকে বদলেছে। ক্রিকেটের এই বদলটা আরো কর্কশভাবে চোখে পড়ে তাকে ফুটবলের পাশে দাঁড় করালে। ফুটবলও অনেক বদলেছে সময়ের সঙ্গে, কিন্তু অস্তিত্ব রক্ষার্থে তাকে নিজেকে মূলগতভাবে এত বদলাতে হয়নি, কৃত্রিম প্রসাধনে ক্রেতার চোখে নিজেকে মনোলোভা করে তুলবার তার কোনো দায় এসে উপস্থিত হয়নি। অন্যদিকে ক্রিকেট বদলেছে নিজেকে বেচার জন্য। আর বেচা মানেই তো খদ্দের-ধরা। ঠিক এই বাঁকে এসে আবার একটি নতুন জিনিস স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, আইসিসির ক্রিকেট বিশ্বায়ন সেই সব জায়গাতেই গতি পেয়েছে যেখানকার জনগোষ্ঠীতে ভারত-উপমহাদেশীয় দর্শক সংখ্যাগুরু। উদাহরণ, সিঙ্গাপুর, হংকং থেকে শুরু করে কুয়েত-সৌদি আরব হয়ে আফ্রিকার কেনিয়া-নামিবিয়া ও উত্তর অ্যামেরিকায় ক্যানাডা (টরন্টো)। উল্লেখ থাকে যে, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-ইতালি-ফ্রান্স-জার্মানিও আইসিসির সদস্য। কিন্তু সে সব দেশে আজও ক্রিকেটের চল ভারতে রাগবির চেয়েও ঢের কম। ক্রিকেটের এই বদলের সঙ্গে সঙ্গে তার বৃহত্তম বাজার হিসেবে উঠে এসেছে ভারত ও ভারতীয় উপমহাদেশের আর তিনটে দেশ পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। সাম্প্রতিক নানান সামাজিক-রাজনৈতিক পাকেচক্রে পাকিস্তানে ক্রিকেট বাজার আজ অবরুদ্ধ, তাকে নিজেকেই দুবাই-টুবাই গিয়ে নিউট্রাল ভেন্যুতে খেলে আসতে হচ্ছে (সেখানেও সেই উপমহাদেশীয় দর্শক) আর ভারতের বিরুদ্ধে সরাসরি ক্রিকেট তো দীর্ঘকাল বন্ধ। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা শুধু বাজারের আয়তনের দিক থেকেই ভারতের তুলনায় নস্যি। তাহলে রইল পড়ে কে? মূলতঃ কার দর্শকসংখ্যার শক্তিতে, কার দর্শকের অভিরুচিতে, কার দর্শকের আশির্বাদে আজকের ‘বিশ্বায়িত’ ক্রিকেট চলবে? আজকের ক্রিকেটদুনিয়ায় ‘সকল দেশের রাণী সে যে আমার’ অয়ি ভুবনমনোমোহিনী ভারত। অধুনা আইসিসির সঙ্গে ভারতের বিসিসিআই-এর সংঘাত বেঁধেছে আয়বন্টন (revenue sharing) নিয়ে। আইসিসির নীট আয়ের সিংহভাগ চেয়ে ভারতের দাবীকে যতই সোজাসাপটা গা-জোয়ারি মনে হোক না কেন, তাতে অন্তত অর্থশাস্ত্রগত ভাবে আপত্তির কোনো কারণ উঠতে পারেনা কারণ একবার বাজারে এসে দাঁড়ালে বাজারের নিয়ম সকলকেই মানতে হয়, তা সে যত তেতোই হোক। যে গরু দুধ দেয়, তার চাঁট তো খেতেই হবে, এ প্রবচন বিলেতের ক্রিকেট নিয়ামকেরা যত সত্ত্বর বুঝে নেবেন ততই মঙ্গল। কারণ দাবী মানা না হলে ভারত আসন্ন আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বয়কট করতে পারে। আর শেষমেশ ভারত বয়কট করলে সে টুর্নামেন্ট পন্ড হওয়া একেবারেই আশ্চর্য নয়, টুর্নামেন্টের মুখ্য টিভি সম্প্রচারক স্টার স্পোর্টস আইসিসির কাছে ভারতের যোগদানের পাকা খবর জানতে চেয়েছে বলে সংবাদে প্রকাশ।



সাবেক টেস্ট ক্রিকেট

নিজেকে মেকী আর শস্তা প্রসাধনে সাজিয়ে বাজারে এনে দাঁড় করাতে ক্রিকেটের চোখে জল এসেছিল কিনা জানা যাবে না। জানা যাবে না আজকের কুড়ি-বিশের আইপিএল ম্যাচে স্টেডিয়ামভর্তি ক্রিকেটমদমত্ত জনতা ক্রিকেট বলতে আদতে কি বোঝে। শোনা যাবে কেবল সনাতনী ক্রিকেটের রূপসাগরে ডুব-দেওয়া ক্রিকেট-রোমান্টিকের হাহাকার। আর তাতে পরমশান্তিতে শায়িত আরলট সায়েব বিরক্ত হয়ে বলে ফেলতেই পারেন, আই প্রোপোজ টু চেঞ্জ মাই ওয়ার্ডস ওনলি আ বিট, ক্রিকেট নিষ্ঠুর ঠিকই, কিন্তু এই ‘বিশ’এর ধোঁয়া নিষ্ঠুরতম, সিকি শতাব্দী পরেও একটু শান্তিতে ঘুমোতে পর্যন্ত দেবে না! বলে হয়তো কবরের মধ্যেই পাশ ফিরে শোবেন অর্ডার অফ ব্রিটিশ এম্পায়ার (OBE) লেসলি থমাস জন আরলট।


লেখক পরিচিতি: প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য্য - পেশা - কলকাতার উপকন্ঠে একটি কলেজে অর্থনীতির অধ্যাপনা, নেশা - হিমালয় আর থিয়েটার। বাংলায় লেখালেখির অভিজ্ঞতা - না-থাকার মত, ইদানীং দু'চারটি পত্রপত্রিকায় অনিয়মিত কিছু লেখা ছাপা হয় বলে উত্তরোত্তর স্পর্ধা বাড়ছে। তবে সময়ের দাম সম্পর্কে ধারণা না থাকায় উত্তরণ হ'বার নয়। একটা পাহাড়-জঙ্গল জায়গায় হলুদ পাতায় ছাওয়া বনে মরবার ইচ্ছে। 

অনীশ মুখোপাধ্যায় - পেশায় অর্থনীতির অধ্যাপক। ন'হাটা কলেজে কর্মরত। লেখালেখি নিয়ে চিন্তাভাবনার শুরু ২০১০-এ। প্রথম উপন্যাস 'জগতরত্ন রক্তনীল' আনন্দমেলায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় ২০১৪-২০১৫ সালে। ক্রিকেট নিয়ে লেখালেখিতে আগ্রহী। ফেসবুকে এ ব্যাপারে নিজস্ব পেজ 'বাইশ গজের ডাইরি'তে নিয়মিত লিখে থাকেন।           

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.