অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।


খেলা‘ঘর’ বাঁধতে লেগেছি

অবসর বিশেষ সংখ্যা সেপ্টেম্বর ১, ২০১৭

 

অনিশ্চয়তায়, রোমাঞ্চে এগিয়ে ক্রিকেট!!

উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়

এক বছর আগের কথা। তেসরা এপ্রিল, ২০১৬, রবিবার। হাতে T20 বিশ্বকাপ ফাইনালের টিকিট। ভারত আগেই সেমিফাইনালে হেরে গেছে। তবে কি মাঠে যাওয়া উচিত? হাতে রয়েছে টিকিট, ইডেনে ফাইনাল, মাঠে না গেলে তো ক্রিকেটের অপমান। কাজেই চললাম মাঠে। ইংল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দুই দলেই মারকুটে ব্যাটসম্যান রয়েছে। জমাটি খেলা হবার সম্ভাবনা।

যখন খেলা শেষে মাঠ থেকে বেরলাম তখন মনে হল আহা কি খেলা দেখলাম। এরকম খেলা একমাত্র ক্রিকেটেই সম্ভব।

আপনি যদি ফুটবল প্রেমিক হন তাহলে নিশ্চয় বলছেন – “ননসেন্স”। ফুটবলে এরকম খেলা হয়েছে।

হ্যাঁ, হয়ত হয়েছে, কিন্তু তার নজির খুব বেশী নেই। খেলায় এরকম উত্থানপতন আধুনিক ফুটবলে, বিশেষ করে বিশ্বকাপে, খুব কমই দেখা যায়।

খেলায় উত্থানপতন তখনই হয় যখন এক দল এগিয়ে যায় আবার একটু পরে পিছিয়ে পড়ে। ক্রিকেটের যেমন পরপর উইকেট পড়লে বা পরপর কয়েকটি চার ছয় হলে খেলার মোড় ঘোরে, তেমনি ফুটবলে মোড় ঘোরে গোল হলে।

এই ফাইনালের উত্থানপতন যদি আমরা ফুটবলের গোলের হিসাবে ধরি তাহলে ক’টা গোল হত এই খেলায়? আমার তো হিসেব করে মনে হচ্ছে অন্ততঃ সাতটা।

কি করে?

এই খেলার উত্থানপতন গোল হওয়া হিসাবে ধরলে কি রকম হবে, তারই একটা ধারাবাহিক নিচে দিলাম। আপনারাই মিলিয়ে নিন।

ধারাবাহিক দিতে সুবিধা হবে বলে T20 ক্রিকেটের মোট ৪০ ওভারকে ফুটবলের ৯০ মিনিটে “ম্যাপ” করেছি। সেই হিসেবে ক্রিকেটের এক ওভার ফুটবলের ২ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের সমান আর এক বল ২৫ সেকেন্ডের সমান। আমি আর ধরে নিয়েছি যে ক্রিকেটে যখন একসঙ্গে কয়েকটি উইকেট পড়ে যায় তখন ফুটবলের হিসেবে গোল হয়েছে। আবার খুব দ্রুত গতিতে রান হয়ে যখন খেলার মোড় ঘুরে যায় তখনো ধরেছি যে ফুটবলের হিসেবে গোল হয়েছে।

খেলা শুরু। ওয়েস্ট ইন্ডিজ টসে জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাট করতে পাঠাল।

৪.৪ ওভার পরে ইংল্যান্ড ২৩ রানে ৩ উইকেট।

দুই মারকুটে ওপনার আর দলের ক্যাপ্টেন আউট। দ্বিতীয় বলে জেসন রয় আউট। অ্যালেক্স হেলস আউট দ্বিতীয় ওভারে। ক্যাপ্টেন ইয়ন মরগ্যান পঞ্চম ওভারে প্যাভেলিয়নে ফিরে গেলেন। নিঃসন্দেহে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিকে খেলা ঘুরে গেছে। ফুটবলের হিসাবে ইংল্যান্ড একটি গোল খেয়ে গেছে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ - ১, ইংল্যান্ড - ০ … ১১ মিনিটের মাথায়।

প্রথম ইনিংসের শেষে ইংল্যান্ড ১৫৫ রান, ৯ উইকেটে। জো রুট ৬২ বলে ৫৪ করে ইনিংসটি ধরে রেখেছিলেন। জস বাটলার ২৯ বলে ৩৬ আর ডেভিড উইলি ১৬ বলা ২১ করার ফলে খেলা এখন সমান সমান। তার মানে ইংল্যান্ড গোল শোধ করে দিয়েছে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ -১, ইংল্যান্ড - ১ … বিরতির সময় স্কোর।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস শুরু। ২.৩ ওভার পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৩ রানে ৩ উইকেট। দ্বিতীয় ওভারে জো রুট দেখালেন ভেল্কি। দ্বিতীয় বলে জনসন চার্লস আউট … চতুর্থ বলে ক্রিস গেল ফিরে গেলেন প্যাভেলিয়নে। পরের ওভারে লেন্ডেল সিমন্স আউট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস এখন নড়বড়ে। ফুটবলের ভাষায় ইংল্যান্ড এগিয়ে গেছে গোল করে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ - ১, ইংল্যান্ড - ২ … দ্বিতীয়ার্ধের ৬ মিনিটের মাথায়।

১৫ ওভারের মাথায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ উইকেটে ১০৪। ৩০ বলে ৫২ রান চাই। মারলন স্যামুয়েলস আর আন্দ্রে রাসেল রয়েছেন ক্রিজে। খেলার পাল্লা এখন মাঝামাঝি, কোন দিকে ঝুঁকে নেই, যা কিছু হতে পারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ গোল শোধ করে দিয়েছে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ - ২, ইংল্যান্ড - ২ … ১২ মিনিট বাকি।

১৯ ওভারের শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৬ উইকেটে ১৩৭। শেষ ওভারে চাই ১৯ রান। বেন স্টোক্স বল করছেন, ব্যাট হাতে কারলস ব্রেথওয়েট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জেতার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। নিঃসন্দেহে ইংল্যান্ড এক গোলে এগিয়ে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ - ২, ইংল্যান্ড - ৩ … আড়াই মিনিট স্টপেজ টাইমের খেলা বাকি।

দু’ বল বাকি থাকতে খেলা শেষ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৬ উইকেটে ১৬১। দড়াম … দড়াম … দড়াম … দড়াম … চার বলে চারটি ছয় বিশাল চেহারার কারলস ব্রেথওয়েটের ব্যাট থেকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম দেশ যারা দুটি T20 বিশ্বকাপ জিতল। এ তো স্টপেজ টাইমে দুটি গোল করার সমান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ - ৪, ইংল্যান্ড - ৩ … খেলা শেষ।

বিধ্বংসী ব্রেথওয়েট (বাঁদিকে) ; হতোদ্যম বেন স্টোকস (ডানদিকে)

আহা, কি খেলাই না হল। এরকম খেলা কি আর কোনদিন দেখতে পাবো?

পাব নিশ্চয়ই কারণ এই তো আগেরবার যখন ইডেনে এসেছিলাম IPLএর KKR আর CSK খেলা দেখতে, সেই খেলাতে তো ডোয়েন ব্রাভো শেষ বলে ছয় মেরে জেতা খেলা ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন KKRএর হাত থেকে।

হয়তো ইংল্যান্ডের সমর্থকের কাছে এই হার হৃদয়বিদারক। বেন স্টোকসের মত বোলার যে ব্যর্থ হবেন ভাবতে পারেননি কেউ। এই খেলার নায়ক ব্যাটসম্যান। কিন্তু এর ঠিক উল্টোটাও হয়েছে।

এই তো কদিন আগের কথা।

২৩শে জুলাই ২০১৭, রবিবার। মেয়েদের বিশ্বকাপের ফাইন্যালে আমরা ভারতবাসীরা উত্তাল, জয় একেবারে হাতের মুঠোয়, বাদ সাধলেন ইংল্যান্ডের মিডিয়াম পেসার স্রাবসোলে। ভারত যখন ২২৯ রানের লক্ষ্যে ৪২ ওভারে মাত্র তিন উইকেট হারিয়ে ১৯১ তে পৌঁছেছিল। আর মাত্র ৩৮ রান, ওভার পিছু পাঁচ রানের কম। এই সময় মাত্র ২৮ রানে শেষ সাত উইকেট হারালো ভারত। একার হাতে ছ’ ছটি উইকেট নেন স্রাবসোলে। ইংল্যান্ড জয়ী হয় মাত্র ৯ রানে। এবারে নায়িকা বোলার।

জয়ের নায়িকা - স্রাবসোলে

ফুটবলে এরকম খেলা সচরাচর হয়না। ১৯৭০ সালে ইতালি আর পশ্চিম জার্মানির বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল ছাড়া অন্য কোন বিশ্বকাপের কোন খেলা ৪-৩ গোলে শেষ হয়েছে বলে তো আমার মনে পড়ছে না।

খেলার ৮ মিনিটের মাথায় ইতালি এগিয়ে যায় ১-০ গোলে। খেলা শেষ হবার কয়েক মুহূর্ত আগে পশ্চিম জার্মানি গোল শোধ দেয় এবং ১-১ স্কোরে অতিরিক্ত সময়ের খেলা শুরু হয়। অতিরিক্ত সময়ের ৪ মিনিটের মাথায় পশ্চিম জার্মানি এগিয়ে যায় ২-১ গোলে আর তার ৪ মিনিট পরে স্কোর হয় ২-২। তার ১০ মিনিট পরে ইতালি এগিয়ে যায় ৩-২ গোলে। যদিও আবার ৬ মিনিট পরে পশ্চিম জার্মানি গোল শোধ করে (৩-৩) কিন্তু পর মুহূর্তেই ইতালি এগিয়ে যায় ৪-৩ গোলে। অনেক বিশেষজ্ঞর মতে এটাই হল ফুটবলের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলা।

আপনি হয়ত বলছেন যে গোল করাই কি সব? বিনা গোলেও তো খেলায় উত্তেজনা হয়। এই আলোচনাটায় পরে আসছি, এখন একটু মুলতুবি থাক।

ক্রিকেটের রোমহর্ষক ফাইনাল?... কতই তো রয়েছে

মনে পড়ে ২০০৭ সালের প্রথম T20 বিশ্বকাপ ফাইনাল, ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে? পাকিস্তানের ইনিংসের মাঝামাঝি মনে হয়েছিল যে আমরা তো জিতেই গেছি বিশ্বকাপ। ১৬ ওভারের শেষে পাকিস্তান ৭ উইকেটে ১০৪ - ২৪ বলে ৫৪ রান করতে হবে - প্রায় অসম্ভব। তার পর মিসবা-উল-হক আর সোহেল তনভির খেলা শুরু করলেন - পরের দু’ ওভারে পাঁচটি ছক্কা। যখন ৪ বল বাকি তখন দরকার মাত্র একটি ছক্কা - মিসবা-উল-হক ব্যাট করছেন। যদিও আগের ২০ বলে কিন্তু হয়েছিল ছ’টি ছক্কা কিন্তু পাকিস্তানের জন্যে শেষরক্ষা আর হল না। “দিলস্কুপ” করতে গিয়ে মিসবা ক্যাচ আউট হলেন শ্রীসন্থের হাতে।

তার পরে লর্ডসের মাঠে সৌরভের জার্সি খুলে মাথার ওপর ঘোরানোর কথা কার না মনে আছে? ২০০৩ সালের ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি ফাইনাল ভারত আর ইংল্যান্ডের মধ্যে। ইংল্যান্ডের ৩২৫ এর জবাবে ভারত ৫ উইকেটে ১৪৬ - ২৬ ওভার বাকি। খেলছেন দুই যুবা খেলোয়াড়, যুবরাজ সিং আর মুহাম্মদ কাইফ। সেই অবস্থায় কে ভেবেছিল ভারত ম্যাচ জিতবে?

আমি খালি ভারতের জেতার কথাই বলছি, একটা হারার কথা বলা যাক। ২০০০ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনাল ভারত আর নিউজিল্যান্ডের মধ্যে। ভারতের ২৬৪ এর জবাবে নিউজিল্যান্ড ৫ উইকেটে মাত্র ১৩২। খেলা ভারতের হাতে। কিন্তু না, ক্রিস কেন্স সে কথা জানতেন না। তিনি অনায়াসে করলেন একটি সেঞ্চুরি, নিউজিল্যান্ড ম্যাচ জিতল দু’ বল বাকি থাকতে।

আর হ্যাঁ, ১৯৮৩র বিশ্বকাপের কথা না বললে তো রোমহর্ষক ফাইনালের গল্প কি পূর্ণ হয়? ভারত যখন ১৮৩ করে অল আউট হয়ে গিয়েছিল তখন সবচেয়ে বড় আশাবাদীও কল্পনা করতে পারেনি যে ভারত বিশ্বকাপ জিতবে। সেই যে ক্রিকেটের প্রবাদবাক্য যাকে স্যার নেভিল কার্ডাস তাঁর লেখাতে জনপ্রিয় করেছেন… glorious uncertainties of cricket … সেটাই বেশী করে প্রমাণ হল।

অবশ্যই আমার বেশী মনে পড়ে ভারত যে ফাইনালে খেলেছে সেই খেলা কিন্তু তার মানে এই নয় যে রোমহর্ষক ফাইনালে শুধু ভারতের একছত্র অধিকার রয়েছে। অন্য ফাইনালেও এরকম গল্প অনেক পাওয়া যাবে।

কিন্তু ফুটবলে কি এরকম রোমহর্ষক ফাইনাল হয়?

শেষ কবে বিশ্বকাপ ফাইনালে কোন দেশ খেলায় পিছিয়ে পড়ে তার পরে জিতেছে? ২০০৬ সালে ইতালি আর ফ্রান্সের খেলায় ফ্রান্স ৭ মিনিটের মাথায় এক গোলে এগিয়ে যায় এবং ১৯ মিনিটের মাথায় ইতালি গোল শোধ করে। ১-১ গোলে শেষ হয়েছিল খেলা। তার পরে ইতালি খেলা জেতে পেনাল্টিতে, মাঠে গোল করে জিততে পারে নি। এ যেন গল্প পড়তে পড়তে একটা শেষ চমকের আশায় বসে থেকে নিরাশ হওয়া।

১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনা ২-০ তে এগিয়ে যাওয়ার পর জার্মানি দু’ গোল শোধ করে দিয়ে স্কোর হয় ২-২। শেষ পর্যন্ত কিন্তু আর্জেন্টিনাই আর একটি গোল করে খেলা যেতে ৩-২এ। এ খেলা পেছিয়ে থেকে জেতা খেলা নয়।

সত্যিকারের পিছিয়ে থেকে জেতার নজির দেখতে গেলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে ১৯৭৪ সালে। সেই ফাইনালে, দু মিনিটের মাথায় নেসকেন্সের গোল করেন এবং নেদারল্যান্ড এগিয়ে যায় ১-০ গোলে। ২৫ মিনিটের মাথায় জার্মানির গোল শোধ এবং ১-১ হয়ে যায় স্কোর। বিরতির দু মিনিট আগে জার্ড মুলারের করা গোলে জার্মানি এগিয়ে যায় ২-১ গোলে। দ্বিতীয়ার্ধে আর কোন গোল হয়নি।

গত ৪০ বছরের দশটি বিশ্বকাপ ফাইনালে নাটকীয়তার আর চমকের অভাব খুবই অনুভব করেছি।

এরকম নাটকীয়তা আর চমক কিন্তু ফুটবলে আগে ছিল

১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপ হল দশম বিশ্বকাপ। আমরা যদি প্রথম দশটি বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখি তাহলে আমরা দেখতে পাই যে এই দশটি ফাইনালের মধ্যে আটটিতে বিজয়ী দল খেলার কোন না কোন সময় অন্তত এক গোলে পিছিয়ে ছিল। এমনকি সাতটি ফাইনালে পরাজিত দল প্রথম গোল করে।

এর পরে আর দশটি বিশ্বকাপ হয়েছে। ২০০৬ সালের ফাইনাল বাদ দিলে পিছিয়ে থেকে জেতার নজির নেই একটিও। এটা একটু আশ্চর্য নয় কি?

প্রথম দশটি ফাইনালে সব মিলিয়ে গোল হয়েছিল ৪৮ টি। কিন্তু তার পরের দশটি ফাইনালে গোল হয়েছে মাত্র ২৩ টি। তার মানে গোল হওয়ার সংখ্যা অর্ধেকের চেয়েও কমে গেছে। এর একটাই মানে হয়। ফুটবল ১৯৭৪ সালের পর থেকে অতি মাত্রায় রক্ষণাত্মক খেলা হয়ে গেছে। সব চেয়ে জরুরি হয়ে উঠেছে শৃঙ্খলাবদ্ধ ডিফেন্স। Maverick এর জায়গা কমে গেছে অনেকটাই। ১৯৮৬ সাল আগে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মারাদোনার সেই গোল আর কি দেখা যায়?

২০১০ ফুটবল বিশ্বকাপে স্পেন তাদের “টিকি-টাকা” সিস্টেমে খেলে সাতটি খেলায় গোল করে সব মিলিয়ে আটটি এবং এই আটটি গোলই হয় বিশ্বকাপে জেতার জন্যে যথেষ্ট। এটা বলা যেতে পারে, জেতাটাই আসল, আসল তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ক’টা গোল হল তাতে কি আসে যায়? কিন্তু, চিত্তাকর্ষক খেলার সঙ্গে গোলের সম্পর্ক আছে কি না, সেই কথায় আমরা একটু পরে আসছি।

১৯৭৪ সালের পর ক্রিকেটের চেহারাও কিন্তু পালটে গেছে

এককালে টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে সবাই হাসাহাসি করতো। পাঁচ দিন ধরে ধীরেসুস্থে লাঞ্চ - টি খেয়ে খেলা, কার এত সময়?

১৯৭৪ সালের পরে কিন্তু আস্তে আস্তে পালটে গেল ক্রিকেটের ছবি। ১৯৭৫ সালে শুরু হল একদিনের ক্রিকেটের বিশ্বকাপ। তখন ছিল ষাট ওভারের ইনিংস - এক দিনে খেলা শেষ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ফাইনাল। রোমহর্ষক খেলা হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার ডেনিস লিলি আর জেফ থমসন শেষ উইকেটের জুড়ি যখন খেলতে শুরু করেন তখন ৫৯ বাকি। সেই অবস্থা থেকে ম্যাচ প্রায় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন এই জুটি। শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ জেতে ১৭ রানে।

এর পর কিন্তু ক্রিকেট আর ফিরে তাকায়নি। প্রথম দিকে একদিনের ম্যাচ টেস্টের মত খেলা হত। যত দিন গেল তত দেখা গেল যে টেস্ট ক্রিকেট একদিনের ম্যাচের মত খেলা হচ্ছে। তারপর ২০০৭ সালে শুরু হল T20 বিশ্বকাপ। ক্রিকেট হয়ে গেল তিন ঘণ্টার খেলা - একটা সিনেমা দেখার সমান। ২০০৭ সালের ফাইনালের মত অনেক খেলাই এখন শেষ ওভারেই মীমাংসা হয়।

একদিনের খেলার ছায়া যেমন টেস্টে পড়েছিল, তেমনি T20র ছায়া পড়তে লাগল একদিনের খেলায়। একসময় ছিল যখন ৩০০ রান হলে ধরে নিতে হত ম্যাচ শেষ। এখন কিন্তু ৩৫০ করেও হেরে যাওয়ার নজির অনেক দেখা যায়। টেস্ট খেলায় এখন ড্র বড় একটা দেখা যায়না। বৃষ্টি না হলে অধিকাংশ খেলায় হার-জিত হয়।

T20 ক্রিকেটে তো প্রতিটি বলেই কিছু না কিছু হয়। উইকেট পড়া আর চার-ছয় তো আছেই, কয়েকটি বলে পর পর রান না হলেও খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।

আমরা শেষ দশটি ফুটবল বিশ্বকাপ ফাইনালে মূল ৯০ মিনিটের খেলায় দেখতে পাই মাত্র ঊনিশটি গোল হয়েছে। তার মানে হল যে খেলার প্রতি অর্ধে একটির বেশী গোল হবার সম্ভাবনা কম। ১০ মিনিট না দেখলেও খেলার স্কোর যা ছিল তাই থাকার সম্ভাবনা শতকরা ৭৫ ভাগের বেশী। টেস্ট ক্রিকেট এক কালে এইরকমই ছিল। দু’-এক ঘণ্টা খেলার খবর না রাখলেও খুব কিছু তফাত হত না।

১৯৭৪ সাল থেকে শুরু হয়েছে পরিবর্তন। তার আগে ফুটবল খেলায় উত্তেজনার পরিমাণ ছিল অনেক বেশী। ১৯৭০ সালে বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড জার্মানির বিরুদ্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জার্মানিই জেতে ৩-২ গোলে। সেই বছরের ইতালি বনাম পশ্চিম জার্মানির খেলার কথা তো আগেই বলেছি।

তার আগের বার, ১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে, খেলার ২৪ মিনিটের মাথায় উত্তর কোরিয়া এগিয়ে ছিল ৩-০ গোলে পর্তুগালের বিরুদ্ধে। খেলার শেষে কিন্তু দেখা গেল পর্তুগাল জিতেছে ৫-৩ গোলে। এবং সেই জয়ে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন ‘ব্ল্যাক পার্ল’ ইউসোবিও।

১৯৬৬র অবিশ্বাস্য জয়ের স্থপতি ইউসোবিও

ব্যাপারটা অনেকটা ১৯৮৩র বিশ্বকাপে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে কপিলের ইনিংসের মত। ১৭ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর কপিল অনবদ্য, রোমহর্ষক ক্রিকেট খেলেছিলেন অপরাজিত ১৭৫ রান করে এবং খেলা ঘুরিয়ে দেন ভারতের পক্ষে। ঠিক সেভাবেই ঐ কোয়ার্টার ফাইনালের খেলাতে পরপর চার গোল করে জয়ের ভিত গড়েন ইউসোবিও।

একেবারে রূপকথা আর এডভেঞ্চারের সঠিক সমন্বয়। এখন কি আর এইরকম ফুটবল দেখা যায়?

ক্রিকেটে এরকম রূপকথার গল্পের ছড়াছড়ি

এই তো সেদিন পাকিস্তান ভারতকে হারিয়ে জেতে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। ভারতের সমর্থক হিসেবে মন খারাপ হয়েছিল খুবই। কিন্তু এই খেলাটি ছিল একদম রূপকথার গল্পর মত। একদিকে ফেভারিট ভারত যে পাকিস্তানকে প্রথম খেলায় গোহারান হারিয়েছিল, আর অন্যদিকে পাকিস্তান যে পরের বিশ্বকাপে সরাসরি পৌঁছতে পারবে কিনা তাই নিয়ে সন্দেহ। তার ওপর পাকিস্তানের মিসবা-উল-হক আর ইউনুস খানের মত নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় অবসর নিয়েছেন খেলা থেকে। এই অবস্থায় কে ভেবেছিল পাকিস্তান জিতবে?

প্রথম খেলায় ভারতের কাছে হারার পর, পাকিস্তান হারায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে যে কিনা একদিনের খেলাতে বিশ্বের এক নম্বর দল। তার পরে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সেমি ফাইনাল খেলা ইংল্যান্ডের সঙ্গে। ইংল্যান্ড দল হিসেবে খুবই পাকাপোক্ত, আবার নিজেদের মাটিতে খেলা। কিন্তু পাকিস্তান সেমি ফাইনাল জিতল অনায়াসে। ফাইনালের কথা তো আগেই বলেছি।

কিন্তু কারা জেতাল পাকিস্তানকে? ২৭ বছরের ফাকর জমানের নাম কে শুনেছিল? তিনি করলেন দুটি অর্ধশতক এবং ফাইনালে একটি সেঞ্চুরি। তারপর নাম আসে হাসান আলির। পাকিস্তানের প্রথম শ্রেণীর বোলারদের মধ্যে কিন্তু তাঁর নাম ছিল না। সেই হাসান আলি পেলেন টুর্নামেন্টে সর্বাধিক উইকেট। আর ফাস্ট বোলার আমির, যিনি একদিন দেশে ছিলেন চরম ‘নিন্দিত’ আজ তিনিই সর্বাধিক ‘নন্দিত’! একে রূপকথা ছাড়া আর কি বলা যায়?

২০০৭ সালের একদিনের বিশ্বকাপে ভারত এবং পাকিস্তান দুই দলই সুপার এইট পর্যন্ত এগোতে পারেনি। ভারত হেরেছিল বাংলাদেশের কাছে এবং পাকিস্তান হেরেছিল আয়ারল্যান্ডের কাছে। কিন্তু তার সাড়ে চারমাস পরে T20 বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলা হল ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে।

একদিনের বিশ্বকাপ খেলাতেই তো তিনটে এরকম নজির রয়েছে। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের আগে কে ভেবেছিল যে শ্রীলঙ্কা কোনদিন বিশ্বকাপ জিততে পারবে? ১৯৯২ সালে পাকিস্তান প্রথম পাঁচটি খেলায় তিনটি হারে এবং একটি খেলায় বৃষ্টির কল্যাণে হারতে হারতে বেঁচে যাওয়ার পর কেউ কি ভেবেছিল যে পাকিস্তানই বিশ্বকাপ জিতবে? আর ১৯৮৩ সালে ভারতের জেতার কথা আর নতুন করে কি বলব?

ফুটবলে এরকম নজির খুঁজতে গেলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে ১৯৯২ সালের ইউরো কাপে। ডেনমার্কের খেলার কথাই ছিল না ইউরো কাপে। শেষ মুহূর্তে যুগোশ্লাভিয়াতে গৃহযুদ্ধের ফলে তারা যোগ দিতে পারল না এবং পরবর্তী দল হিসাবে খেলার সুযোগ পেল ডেনমার্ক। প্রথম খেলায় ইংল্যান্ডের সঙ্গে ড্র, দ্বিতীয় খেলায় সুইডেনের কাছে পরাজয়। শেষ খেলায় ফ্রান্সকে হারিয়ে তারা কোনরকমে উঠল সেমিফাইনালে। নেদারল্যান্ডকে সেমিফাইনালে পেনাল্টিতে হারিয়ে উঠল ফাইনালে। অন্য দিক থেকে ফাইনালে উঠল বিশ্ববিজেতা জার্মানি। সেই জার্মানিকেই ডেনমার্ক হারাল ২-০ গোলে। ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, জার্মানি ... এদের কারুর সঙ্গেই জেতার কথা ছিলনা ডেনমার্কের, কিন্তু রূপকথার গল্পতে এরকম ঘটনাই ঘটে।

তারপর গত পঁচিশ বছরে আমরা কি আর এর পুনরাবৃত্তি দেখতে পেয়েছি? আমার তো মনে পড়ছে না। অন্ততঃ বিশ্বকাপে তো নয়ই।

হ্যাঁ, একটি উদাহরণের উল্লেখ করাই যেতে পারে, একেবারে সাম্প্রতিক বিশ্বকাপ থেকে। ব্রাজিল বনাম জার্মানি। সেবারের বিশ্বকাপ ব্রাজিলেই হয়েছিল। খেলা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই অবিশ্বাস্য ভাবে ৫ গোল দিয়ে এগিয়ে গেল জার্মানি! ব্রাজিল সমর্থকরাও নিশ্চয় দেশের মাটিতে এই বিপর্যয় আশা করেননি। তাঁরাও ভেবেছিলেন অবিশ্বাস্য ভাবে ম্যাচে ফিরে আসবে ব্রাজিল। কিন্তু না, চূড়ান্ত হতাশাতেই খেলা শেষ হল। জার্মানি জিতল ৭–১ গোলে!

ক্রিকেটে কর্ণধার ক্যাপ্টেন থাকে সবার সামনে – ফুটবলে কর্ণধার কোচ থাকে সবার পিছনে মাঠের বাইরে

ধরুন আপনি একটা যুদ্ধের সিনেমা দেখতে গেছেন। যদি দেখেন যে সেই সিনেমার নায়ক হেড অফিসে বসে সৈন্যদের নির্দেশ দিচ্ছেন আর সৈন্যরা যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করছে, সেই সিনেমা কি আপনার ভাল লাগবে? নাকি আপনি পছন্দ করবেন সেই সিনেমা যেখানে নায়ক যুদ্ধক্ষেত্রে রয়েছেন সবার আগে, তাঁর দলকে উদ্বুদ্ধ করছেন শত্রু সংহার করতে এবং নিজে থাকছেন উদাহরণ হয়ে?

২০১১ সালের একদিনের বিশ্বকাপ ফাইনালে মহেন্দ্র সিং ধোনি ব্যাট করতে নামলেন যুবরাজ সিং আগে। ধোনিকে মাঠে নামতে দেখে অনেকেই একটু ভুরু ওপরে উঠিয়ে ছিলেন কারণ সেই বিশ্বকাপে যুবরাজ ছিলেন অনবদ্য ফর্মে। ধোনি ৯১ রানের সেই ইনিংস এবং শেষে ছক্কা মেরে ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানো তো গল্প-কথা হয়ে রয়েছে।

২০১১র জয়ের পথে ধোনির ছয়

যুবরাজের আগে ব্যাট করতে নামার এই সিদ্ধান্ত কিন্তু ক্যাপ্টেন হিসেবে ধোনির নিজের, কোচ হিসাবে গ্যার6 কার্সটিনের কোন ভূমিকা ছিল না।

ক্রিকেট টিমে কোচ বা ম্যানেজার থাকলেও ক্যাপ্টেনই আসল। যদিও খেলার স্ট্র্যাটেজি হয় ক্যাপ্টেন আর কোচের যুগ্ম প্রচেষ্টায়, কিন্তু খেলার মাঠে নেমে অনেক সময় স্ট্র্যাটেজি কাজ করে না। তখন খেলা পরিচালনার সব দায়িত্ব কিন্তু ক্যাপ্টেনেরই। কিভাবে ফিল্ডিং সাজাতে হবে, কখন তা পরিবর্তন করতে হবে, কে কখন বল করবে, ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন করতে হবে কি না, এসবই ক্যাপ্টেনকেই ঠিক করতে হয়। তাছাড়া ক্যাপ্টেনকে নিজের খেলার সঙ্গে সঙ্গে দলের বাকি খেলোয়াড়দের উদ্বুদ্ধ করতে হবে আরও ভাল খেলার জন্য, বুঝতে হয় তাদের মনস্তত্ত্ব।

ইংল্যান্ডের মাইক ব্রেয়ারলিকে অনেক বিশেষজ্ঞ সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেনদের মধ্যে মনে করেন। আবার ইয়ান বথাম সর্বকালের শ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডারের মধ্যে গণ্য হন। মজা হল ইয়ান বথাম যখন নিজে ক্যাপ্টেন হন তখন তাঁর খেলা একদম পড়ে যায়। কিন্তু যখন মাইক ব্রেয়ারলি ক্যাপ্টেন তখন তিনি হয়ে ওঠেন মারাত্মক খেলোয়াড়। বব উইলিস ছিলেন বথামের সমসাময়িক ইংল্যান্ডের ফাস্ট বোলার। তাঁর মুখে এই গল্পটি শোনা যায়। ব্রেয়ারলি তখন ক্যাপ্টেন, বথাম বল করছেন এবং খুব খারাপ বল করছেন।

ব্রেয়ারলি কিন্তু সোজাসুজি বথামকে বলেন না যে তুমি খারাপ বল করছ। তিনি উইলিসকে বলতে বলেন যে ক্যাপ্টেন বলছে যে তুমি বাচ্চা মেয়ের মত বল করছ। তাই শুনে বথাম রেগে আগুন এবং দারুণ বল করতে শুরু করলেন। উইলিস ব্যাখ্যা করেন যে ব্রেয়ারলি কথাটা সরাসরি বথামকে বললে তাঁর আত্মবিশ্বাস ভেঙ্গে যেত এবং ফল হত উল্টো।

আর এক কিংবদন্তী অধিনায়ক ফ্রাংক ওরেল আবার সেই বিখ্যাত টাই টেস্টে অন্যভাবে বলেছিলেন বোলার ওয়েস হলকে। স্কোর তখন সমান – ওরেলকে এগিয়ে আসতে দেখে হল একটু নার্ভাস – কিন্তু না! স্মিত মুখে তিনি হলকে একটিই পরামর্শ দিলেন, “ওয়েস, যাই কর বাপু, নো বল কদাচ নয়। তাহলে আমিও তোমাকে আর বার্বাডোসে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবো না”। অধিনায়ককে সুস্থির দেখে ভরসা পান হল, আর পরের ইতিহাস সকলের জানা।

টাই টেস্টের সেই স্মরণীয় মুহূর্ত

সুরজিত ভাল্লা যদিও অর্থনীতিবিদ, কিন্তু তিনি ক্রিকেটে স্ট্যাটিস্টিকস প্রয়োগ করে তার ফলাফলের ভিত্তিতে দু’টি বই লিখে ফেলেছেন - “Between the Wickets: The Who and The Why of the Best in Cricket” and “Criconomics: Everything You Wanted To Know About ODI Cricket And More”। তাঁর মতে ব্রেয়ারলি বা ওরেলের মত অধিনায়ক দলের ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়িয়ে দেবার ক্ষমতা রাখেন।

ফুটবলে একজন ক্যাপ্টেন থাকে বটে কিন্তু তাঁর পক্ষে বেশী সিদ্ধান্ত নেওয়া অসম্ভব। কোচ বা ম্যানেজার হলেন সর্বেসর্বা। আমরা মাঝেই দেখতে পাই কোচকে হাত পা ছুঁড়তে এবং চেঁচাতে। কে কখন মাঠে নামবে এবং বেরোবে সে সিদ্ধান্ত কোচেরই হাতে। মোটকথা, ফুটবল খেলায় কোচই কলকাঠি নাড়েন মাঠের বাইরে থেকে।

হয়ত এতে কিছু যায় আসে না, কিন্তু আমার এই মাঠের বাইরে থেকে এতখানি প্রভাব বিস্তার ব্যাপারটা ঠিক সহ্য হয় না। কেমন মনে হয় খেলার আকর্ষণ এবং রোমাঞ্চ বেশ কিছুটা কমে গেল। কেমন যেন মনে হয়, দুই কোচের মধ্যে দাবা খেলা চলছে, মাঠের মধ্যে খেলোয়াড়রা যেন দাবার ঘুঁটি।

জীবনের মত ক্রিকেটে রয়েছে প্রকৃতি এবং পরিবেশের প্রভাব

রজার ফেডেরার বড় খেলোয়াড় না রাফায়েল নাদাল? টেনিস যদি নানারকম মাঠে খেলা না হত তবে কি এই বিতর্ক থাকত? আর এই বিতর্ক না থাকলে টেনিস খেলার আকর্ষণ ও রোমাঞ্চ কি একটু কমে যেত না? ইভান লেন্ডল যে রেগেমেগে ঘাসের টেনিসকে কুকথা বলেছিলেন তাও তো এই ঘাসের কোর্টে ব্যর্থতা থেকেই।

অনিশ্চয়তা তো মানুষের জীবনে রোমাঞ্চ আনে। মানতে দ্বিধা নেই – এই অনিশ্চয়তার ভাগ নিঃসন্দেহে ক্রিকেটে বেশী। আবার এই পরিবেশকে ঠিকমতো কাজে লাগিয়ে সাফল্য আনার নজিরও কম নেই ক্রিকেটে।

১৯৩৭ সালে মেলবোর্নে টেস্ট খেলা হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের মধ্যে। তখন ক্রিকেট পিচ ঢাকা হত না। বৃষ্টি পড়লে পিচ যেত ভিজে এবং তাতে ব্যাট করা হত খুব কঠিন। অস্ট্রেলিয়ার ২০০ রানের জবাবে ভিজে মাঠে ইংল্যান্ডের অবস্থা কাহিল। ৯ উইকেটে ৭৯ এর মাথায় ইংল্যান্ডের ক্যাপ্টেন গাব্বি অ্যালেনের মাথায় একটা বুদ্ধি এল। এই অবস্থায় ইনিংস ডিক্লেয়ার করে অস্ট্রেলিয়াকে এই ভিজে পিচে খেলতে দিলে কেমন হয়? এই অবস্থায় অস্ট্রেলিয়াকে চটপট আউট করে দেওয়া যেতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপ্টেন ব্র্যাডম্যান এই ফন্দিটা বুঝতে পেরে দলের শেষের দিকের ব্যাটসম্যানদের আগে ব্যাট করতে পাঠালেন। তাদের কাজ হল যতক্ষণ আউট না হয়ে থাকা যায়। যখন ব্র্যাডম্যান ৭ নম্বরে ব্যাট করতে নামলেন তখন পিচ গেছে শুকিয়ে। তিনি একাই করলেন ২৭০ রান এবং অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটি জিতল ৩৬৫ রানে।

ডন ব্র্যাডম্যান

“বল হাওয়ায় ঘুরছে … ব্যাটসম্যানকে দেখে খেলতে হবে”, “অফ স্ট্যাম্পের ঠিক বাইরে একটা প্যাচ রয়েছে … স্পিনাররা কি তার ফায়দা ওঠাতে পারবে?”, “খেলার শেষের দিকে পিচে অসম বাউন্স হতে পারে… ব্যাটিং করা শক্ত হয়ে উঠবে”, “সন্ধ্যা হলে মাঠ শিশিরে ভিজে যাবে … স্পিনারদের বল করতে অসুবিধা হবে”, “পিচটা একটু খরখরে, বল ঘসে যাবে … রিভার্স সুইং করতে সুবিধা হবে”, “নতুন বল – পুরনো বল”- ক্রিকেটে এরকম কথাবার্তা আমরা হামেশাই শুনে থাকি।

পিচ কিরকম তার সঙ্গে তো ক্রিকেটের যোগ আছেই, আবহাওয়ার সঙ্গেও ক্রিকেটের যোগ আছে। তার ফলে ক্রিকেটারদের অনেক কিছু মাথায় রাখতে হয়। এক এক সময় ভিন্ন ভিন্ন ধরনের স্কিল লাগে। খেলা মানিয়ে নিতে হয় আবহাওয়া এবং পিচের পরিস্থিতির সঙ্গে। তার ফলে খেলার অনিশ্চয়তা বেড়ে যায়। সেটাই এই খেলার মজা।

ফুটবলে পরিবেশ বা আবহাওয়ার ভূমিকা প্রায় নগণ্য। এই বিষয়ে আমরা ফুটবলের সঙ্গে দাবা খেলার তুলনা করতে পারি। আপনি হয়ত বলবেন যে খেলা দাবার মতই হওয়া উচিত। দুই দলের সরাসরি শক্তি পরীক্ষার মধ্যে পরিবেশ বা আবহাওয়ার ভূমিকা না থাকাই বাঞ্ছনীয়।

আমার মত ভিন্ন। ক্ষতি কি, খেলার গতি-প্রকৃতি পালটালে আবহাওয়ার সঙ্গে? একই খাবারের স্বাদ যদি আবহাওয়াতে বদলে যায়, বর্ষার খিচুড়ি বা শীতের নলেনগুড়!! অথবা নতুন মরশুমে নতুন ফল, অন্যরকম সবজি – সে তো এক আলাদা আনন্দ। খেলার ক্ষেত্রেই বা অন্যথা হবে কেন?

ক্রিকেট বদলাচ্ছে দ্রুত গতিতে, কিন্তু ফুটবলে তেমন কোন বদল কি আমাদের চোখে পড়ে?

LBW বা নো-বলের নিয়মের বদলের কথা ছেড়েই দিলাম, গত কয়েক দশকে ক্রিকেটে আসে একদিনের খেলা এবং তার পরে দেখতে পাই T20। এ তো শুধু খেলার নিয়মের আমূল পরিবর্তন নয়, খেলার ধরনেরও প্রায় খোল নলচে পালটে গেছে। হয়তো বাধ্য হয়েই। তবে প্রথমে একদিনের ক্রিকেটের প্রভাব পড়ে টেস্টে। তার পরে T20 খেলার প্রভাব পড়ে একদিনের খেলায়। ফলে খেলা হয়ে উঠেছে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক এবং চিত্তাকর্ষক।

২০১২ সালের অস্ট্রেলিয়া সিবি সিরিজ প্রতিযোগিতায় দেখা গেল যে ভারতকে ফাইনালে উঠতে হলে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৪০ ওভারে করতে হবে ৩২১ রান। এক সময় ৫০ ওভারে ঐ রান করা ছিল বিশাল কৃতিত্বের কাজ, কিন্তু ভারত অনায়াসে ৩৭ ওভারে করে ফেলল ঐ রান। বিরাট কোহলি করলেন ৮৬ বলে ১৩৩ রান। ম্যাচের শেষে, কি করে এটা সম্ভব হল প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন যে আমরা খেলাটা দুটো T20 খেলায় ভাগ করে নিয়েছিলাম। T20তে ১৬১ রান করা তো খুব একটা সমস্যার নয়। ২০ ওভারের মাথায় ভারত ছিল ২ উইকেটে ১৬০। খেলা যে শুধু আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে তাই নয়, অনেক রকম নতুন ব্যাটিং এবং বোলিং পদ্ধতির উদ্ভাবনা হয়েছে। “দুসরা”, “রিভার্স সুইং”, “স্লো বাউন্সার”, “নাক্ল বল”, “রিভার্স সুইপ”, “সুইচ হিট”, “দিলস্কুপ” … এসবই তো হয়েছে হালে।

তাছাড়া, প্রযুক্তির প্রয়োগ ক্রিকেট মাঠে যেভাবে হয়েছে আর কোন খেলায় বোধহয় তা হয়না। রান আউটের জন্যে “স্লো মোশন একশন রিপ্লে” তো অনেকদিনই হয়েছে। এখন “ডিসিশন রিভিউ সিস্টেমে” (DRS) আমরা দেখতে পাই “স্নিকোমিটার”, “হটস্পট ডিটেকশন” আর “বল ট্র্যাকিংয়ের” প্রয়োগ।

ফুটবল খেলায় অফসাইড আর ফাউল করার নিয়মের যা পরিবর্তন হয়েছে তা তো ক্রিকেটের LBW বা নো-বলের নিয়মের বদলের সমান। ক্রিকেটে এরকম সামান্য নিয়ম বদলের আমাদের চোখেই পড়ে না। সত্তর দশকের টোটাল ফুটবলের পরে আর তো সেরকম নতুনত্ব চোখে পড়ে না। হাঁ, টিকি-টাকা নিয়ে একটু মাতামাতি হয়েছিল বটে কিন্তু সে তো ক্ষণস্থায়ী। আর খেলা চলাকালীন প্রযুক্তির এরকম ব্যবহার তো ফুটবলে নেই বললেই চলে। কিছু বিশেষজ্ঞ বলে থাকেন যে ফুটবলের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন খেলোয়াড়দের ফিটনেস, কিন্তু সেটা তো ক্রিকেটের বেলায় সমান ভাবে প্রযোজ্য।

ফুটবলে পরিবর্তন যা হয়েছে তা হল খেলা অনেক বেশী রক্ষণাত্মক হয়ে উঠেছে। সেই জায়গায় ক্রিকেট হয়ে উঠেছে অনেক বেশী আক্রমণাত্মক।

আপনার কি রক্ষণাত্মক খেলা বেশী ভাল লাগে?

এবার সেই প্রশ্নে আসা যাক যা আগে মুলতুবি ছিল। চিত্তাকর্ষক খেলার জন্য কি গোল হওয়া প্রয়োজন?

এই কথার মীমাংসা করতে গেলে আমাদের বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিতে হয়। আমরা যদি বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী শ্রেষ্ঠ ফুটবল খেলার একটা তালিকা করি তাহলেই বোঝা যাবে চিত্তাকর্ষক খেলার জন্য গোলের প্রয়োজন আছে কি না। তাই নেট থেকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ খেলার ওপর লেখা প্রথম চারটে পোস্ট (see reference) থেকে এই খেলার তালিকা বানিয়েছি যাতে সতেরটি আন্তর্জাতিক খেলার উল্লেখ আছে।

• ইতালি-জার্মানি ২-০ - বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল, ২০০৬
• ফ্রান্স-পর্তুগাল ২-১ - ইউরো কাপ সেমিফাইনাল, ২০০০
• ব্রাজিল-ইতালি ৩-৩ - ফ্রেন্ডলি, ১৯৯৭
• পশ্চিম জার্মানি-হল্যান্ড ২-১–বিশ্বকাপ দ্বিতীয় রাউন্ড, ১৯৯০
• ফ্রান্স-ব্রাজিল ১-১ (ফ্রান্স জেতে পেনাল্টিতে) –বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল, ১৯৮৬
• আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ড ২-১–বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল, ১৯৮৬
• ফ্রান্স-পর্তুগাল ৩-২ - ইউরো কাপ সেমিফাইনাল, ১৯৮৪
• ইতালি-ব্রাজিল ৩-২ - বিশ্বকাপ গ্রুপ খেলা, ১৯৮২
• পশ্চিম জার্মানি-ফ্রান্স ৩-৩ (পশ্চিম জার্মানি জেতে পেনাল্টিতে) –বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল, ১৯৮২
• ব্রাজিল-ইতালি ৪-১–বিশ্বকাপ ফাইনাল, ১৯৭০
• ইতালি-পশ্চিম জার্মানি৪-৩–বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল, ১৯৭০
• ব্রাজিল-ইংল্যান্ড ১-০–বিশ্বকাপ গ্রুপ খেলা, ১৯৭০
• ইংল্যান্ড-পশ্চিম জার্মানি৪-২–বিশ্বকাপ ফাইনাল, ১৯৬৬
• পশ্চিম জার্মানি-হাঙ্গেরি ৩-২–বিশ্বকাপ ফাইনাল, ১৯৫৪
• হাঙ্গেরি-উরুগুয়ে ৪-২–বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল, ১৯৫৪
• হাঙ্গেরি-ইংল্যান্ড ৬-৩ - ফ্রেন্ডলি, ১৯৫৩
• উরুগুয়ে-ব্রাজিল ২-১–বিশ্বকাপ ফাইনাল, ১৯৫০

এই ১৭টি খেলার মধ্যে ৫টি গোল হয়েছে ১০ বা তার বেশী। এতে কোন খেলা নেই যাতে ০-০ ড্র হয়েছে। একটিমাত্র খেলায় ১-০ ফলাফল দেখতে পাই। মাত্র দুটি খেলার নির্ণয় হয়েছে পেনাল্টিতে।

গোল যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝাতে আরো একটি পরিসংখ্যান পেশ করা যেতে পারে। বিশ্বের সবচেয়ে নামী ও দামী (আক্ষরিক অর্থে) প্রথম ২০ জন খেলোয়াড় নিলে দেখা যাবে তাদের মধ্যে ১২ জন স্ট্রাইকার বা ফরওয়ার্ড, বাকি আটজন মিডফিল্ডার। একজনও ডিফেন্ডার বা গোলকিপার নেই। এত টাকা যাঁদের পেছনে ঢালা হচ্ছে তাঁদের কাজ তো একটাই – বেশী পরিমাণে গোল করা।

এই তো কিছুদিন আগেই শুরু হল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ – চমকপ্রদ ভাবে প্রথম খেলাতেই আর্সেনাল লিসেস্টারকে হারালো সেই ৪-৩ গোলে। ঠিক সেই রকম রোমাঞ্চকর ফলাফল যা চেয়েছিলাম শুরুতেই।

তাহলে আপনার কি পছন্দ - ক্রিকেট না ফুটবল?

খেলাতে স্ট্র্যাটেজি আর গেম-প্ল্যান নিশ্চয়ই জরুরি, কিন্তু সেটা উপভোগ করতে হলে তো দাবা খেলা কিম্বা “ফরমুলা ওয়ান রেসিং” দেখা ভাল। ফুটবল মাঠে দেখতে যেটা ভাল লাগে সেটা হল অপূর্ব গোল কিম্বা মনমাতানো সেভ। গোল হতে হতে হচ্ছে না ভাল লাগে খানিকক্ষণ, কিন্তু তা বেশিক্ষণ চললে আর ভাল লাগে না। আর শুধু যদি মাঝমাঠে খেলা চলতে থাকে সে খেলা দেখা হয়ে যায় কষ্টকর।

ফুটবলে আজকালকার খেলায় সত্যিকারের একশনের মুহূর্ত থাকে খুবই কম। বেশিরভাগ সময় বল নিজেদের কাছে রাখাই হয়ে ওঠে সবচেয়ে প্রয়োজনীয়। একশনের প্রত্যাশায় বসে থাকতে থাকতে খেলা শেষ হয়ে যায়। বিশ্বকাপ ফাইনালের ব্যাপারে এটা মনে হয় বেশী প্রযোজ্য। তুলনাতে ক্লাব ফুটবল যেন অনেক বেশী রোমাঞ্চকর।

ক্রিকেটে যেন ঘটনার ঘনঘটা। আমরা ব্যাটসম্যানের কাছে দেখতে পাই অপূর্ব, মনমাতানো শট। বোলারের কাছ থেকে দেখতে পাই এমন বল যা ব্যাটসম্যানকে বোকা বানিয়ে দেয়। দেখতে পাই চমৎকৃত করা ফিল্ডিং, একটা ক্যাচ, একটা রান-আউট, যা খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তা ছাড়া ব্যাটসম্যান এবং বোলারের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব চলতে থাকে সব সময়। ব্যাটসম্যান সব সময় চেষ্টা করছেন পরের বলটা কিরকম হবে তা আন্দাজ করতে। তেমনি বোলার চেষ্টা করছে ব্যাটসম্যানকে বোকা বানাতে।

এর ওপরে আছে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা। কোন মুহূর্তে খেলা কিভাবে ঘুরে যাবে কেউ বুঝতে পারে না।

প্রত্যেকের পছন্দের বা ভালোলাগার পেছনে থাকে তার নিজস্ব জীবনবোধ।

আমার পছন্দ অনিশ্চয়তাতে ভরা ক্রিকেট, যেখানে প্রতি বলে কিছু না কিছু হচ্ছে এবং প্রতি ওভারে খেলার চেহারা বদলাচ্ছে। ৮ রানে ৮ উইকেট পড়া, শেষ ওভারে ১৯ রান করে ম্যাচ জেতা, সবই হতে পারে ক্রিকেটে। অবশ্য এটাও মানি যে ডাকওয়ার্থ লুইসের হস্তক্ষেপের ফলে সেই অনিশ্চয়তা মাঝে মধ্যে একটু বিরক্তিকর হয়।

২০১৬ T20 বিশ্বকাপ ফাইনালের মত খেলা যে আবার দেখতে পাব সে বিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ। কিন্তু ১৯৭০ সালের ইতালি আর পশ্চিম জার্মানির বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের মত খেলা গত ৪৭ বছরে হয়নি। ভবিষ্যতে যদি এরকম খেলা আবার দেখতে হয়, বিশ্বকাপের ফাইন্যাল খেলাকেও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের উদ্বোধনী খেলার মতই রোমাঞ্চকর হয়ে উঠতে হবে।

References:
• Captaincy records and probabilities of winning:Between the Wickets: The Who and The Why of the Best in Cricket - Surjit S. Bhalla
• Story about Mike Brearley, Ian Botham and Bob Willis: Criconomics: Everything You Wanted To Know About ODI Cricket And More - by Surjit S. Bhalla, Ankur Choudhary

• Cricket matches and tournaments referred to:

o World T20, Final: England v West Indies at Kolkata, Apr 3, 2016
o IPL match between CSK and KKR, 2012: Last-ball six keeps Chennai alive
o ICC World Twenty20, Final: India v Pakistan at Johannesburg, Sep 24, 2007
o NatWest Series, Final: England v India at Lord's, Jul 13, 2002
o ICC KnockOut, Final: India v New Zealand at Nairobi (Gym), Oct 15, 2000
o Prudential World Cup, Final: India v West Indies at Lord's, Jun 25, 1983
o Prudential World Cup, Final: Australia v West Indies at Lord's, Jun 21, 1975
o 2017 ICC Champions Trophy
o 1975 Cricket World Cup
o 1992 Cricket World Cup
o 1983 Cricket World Cup
o 2011 Cricket World Cup Final
o England tour of Australia, 3rd Test: Australia v England at Melbourne, Jan 1-7, 1937
o Commonwealth Bank Series, 11th Match: India v Sri Lanka at Hobart, Feb 28, 2012

• Football matches and tournaments referred to:

o 2006 FIFA World Cup Final
o 1986 FIFA World Cup Final
o 1974 FIFA World Cup Final
o List of FIFA World Cup finals
o World Cup - 1970 - Semifinal - Italy vs West Germany
o World Cup - 1970 - Quarterfinal - West Germany vs England
o World Cup - 1966 - Quarterfinal - Portugal vs North Korea
o Brazil v Germany (2014 FIFA World Cup)
o UEFA Euro 1992

• Greatest football matches of all time (four popular article)

o The greatest matches of all time - The Telegraph
o 10 of the greatest football matches ever played – Eurosport Football
o 10 of the greatest football matches ever played – Independenr.ie
o Soccer: 10 Greatest Matches Ever - Bleacher Report

• World football transfer record and costliest footballers:

https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_most_expensive_association_football_transfers
https://www.theguardian.com/football/gallery/2016/aug/09/top-10-most-expensive-players-in-the-world-paul-pogba



লেখক পরিচিতি: কানপুর আই আই টি-র প্রাক্তন ছাত্র ও তথ্যপ্রযুক্তির আদিকাল থেকেই তার সাথে যুক্ত। বর্তমানে ব্যাঙ্গালোর নিবাসী। সংগীতপ্রেমী। সময় পেলেই প্রাচীন ভারতের ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করেন ও নিজের ব্লগে ইতিহাস, তথ্যপ্রযুক্তি ও অন্যান্য বিষয়ে আলোকপাত করতে ভালোবাসেন।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.