৬৮ নট আউট
অনীশ মুখোপাধ্যায়
(১)
আবারো প্রায় সেই ৩৪ বছর!
একটা দল ডেড রাবার সিচুয়েশনে সিরিজের শেষ টেস্টে আগে ব্যাট করে তিনশোর বেশি রান তুলে দিয়েছে। আরেকটা দল তার জবাবে ধুঁকছে।
০/২ !
নতুন ব্যাটসম্যানকে স্বাগত জানানোর জন্য রাখা হয়েছে গোটা তিনেক স্লিপ,দুটো গালি,কভার,আর অন্যদিকে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ,লং লেগ,আর ওয়াইড মিড অন। অর্থাৎ ব্যাটসম্যানের সামনে সোজা উন্মুক্ত প্রান্তর। এক্সট্রা কভার থেকে মিড অন কেউ নেই।আবার মিড অন থেকে লং লেগ-কেউ নেই।
এসো।
পারো তো মারো।
দুজন বিশ্বত্রাস ফাস্ট বোলার বিচ্ছিরি রকমের হাসি হাসতে হাসতে একে অপরের গায়ে গড়িয়ে পড়েন আর কী! ওদিকে সামান্য অস্বস্তিকর পদক্ষেপে বগলে ব্যাট নিয়ে এলবো গার্ডটা কোনমতে আটকে গ্লাভস পড়তে পড়তে ভদ্রলোক মাথা নিচু করে নামলেন। দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে একেবারেই অপ্রস্তুত অবস্থায় তাঁকে নামতে হচ্ছে।
কী আশ্চর্য!
একটা টেস্ট ওপেন করবেন না বলেছিলেন। অথচ আজ কিনা এক রকমের ওপেনই—
পরের কয়েক মিনিটে সেই পরিচিত ছবি। গার্ড নেওয়া,পিচের মাঝে গিয়ে কয়েকবার ব্যাট ঠোকা,তারপর স্টান্স নেওয়া এবং তারপরে দলের প্রথম রানটি করা। যেমন এত বছর যাবৎ করে এসেছেন।
আশা করি সবাই ঘটনাটি স্পষ্ট মনে করতে পারছেন।
চেন্নাইতে (তখন মাদ্রাজ) এরপরে এক অন্য ইতিহাস লেখা হয়েছিল। সুনীল গাভাসকারের ২৩৬ নট আউট নিয়ে আমার একটা ব্যক্তিগত আক্ষেপ আজো থেকে গেছে। প্রথম থেকে শেষ অবধি সবটা দেখে উঠতে পারিনি।নিজেদের বাড়িতে তখন টিভি ছিল না। পাড়ায় একজনের বাড়িতে শুরুটা দেখি। দিনের শেষে ৬৯/৪ অবধি। পরের দুদিন এবাড়ি আর ওবাড়ি পালা করে ছুটি। ওবাড়ি মানে আরেক পরিচিতর বাড়ি। যখন যেখানে সুবিধা। আরেক বাড়ি একটু দূরে। ফলে সকালে,লাঞ্চের পরে, টি-এর পরে সব মিলিয়ে কিছু ওভার দেখা হয়নি। যাওয়া আসার জন্য সময় নষ্ট হয়েছিল। ৬৯/৪ থেকে ৯২/৫ হয়ে যাওয়ার কিয়দংশ যেমন বাদ হয়ে যায় ।
সেদিন এক বন্ধুর সঙ্গে লয়েডের দল আর স্টিভ ওয়ার দলের তুলনা নিয়ে কথা হচ্ছিল। লয়েডের সেই দলের শক্তি নিয়ে বলতে গিয়ে তাকে বলছিলাম যে গাভাসকারকে সেই ভারতীয় দল থেকে যদি বাইরে রাখেন তবে স্যার ক্লাইভ সেবারে ৩-০ নয় ৬-০ এ হাসতে হাসতে জিতে ফিরতেন। কানপুরে হাত থেকে ব্যাট ছিটকে যাওয়ার পরে। বম্বেতে ১২ আর ৩ করার পরে। এবং ইডেনে মার্শালের প্রথম বলে আউট হওয়ার পরে। অতুলনীয় ভঙ্গিমায় ফিরে এসেছেন বারেবারে।
ছবি-১: ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১৯৮৩-৮৪ সিরিজে শতরানের পথে |
এক একটা ব্যর্থতার পরে এক-একটা মারকাটারি কাম ব্যাক। দিল্লির ১২১? না আমেদাবাদের ৯০? না চেন্নাইয়ের ২৩৬? কাকে ছেড়ে কাকে দেখবেন? রবার্টস সেবার প্রথম চার টেস্টে আহত থাকায় খেলতেই পারলেন না। কিন্ত চেন্নাইতে ছিলেন যে! সঙ্গে মার্শাল, হোল্ডিং,ডেভিস। আমার কেন যেন মনে হয় চেন্নাই-এর ২৩৬ বেশ কয়েক মাইল এগিয়ে থাকবে। দিল্লিতে বেঙ্গসরকার ছিলেন। আমেদাবাদে ছিল প্রথম ইনিংস। সানির মারকুটে মেজাজে বানানো ৯০ রানের ইনিংস ক্যারিবিয়ানদের ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলতে চেয়েছিল। হয়ত দিল্লির হ্যাংওভার। অথবা কানপুরের আরেক বদলা। সেখানে চেন্নাই অনেক কঠিন যুদ্ধ। ০/২ থেকে হঠাৎ করে হাজির হয়ে যাওয়া ফলো অন থ্রেট বাঁচানো। তারপর ম্যাচ বাঁচানো। আসলে ০-৪ আটকে দেওয়া। উল্টোদিকে পার্টনারশিপ করার লোক বলতে সেদিন ছিলেন আজকের স্কাইপ ইন্টারভিউ দিতে বসা প্রাক্তন টিডি রবি শাস্ত্রী (৭২) এবং ম্যান ইন ক্রাইসিস, সৈয়দ কিরমানি (৬৩)। কিন্ত উল্টোদিকে তো নোঙর ফেলে রেখেছেন একজনই। বাকি দুনিয়ায় যা খুশি হয় হোক। আমার উইকেট দেব না। পারো তো নিয়ে যাও। এবং নেওয়া যায়ওনি। আর এই অনমনীয় জেদই ইনিংসটাকে অন্য মাত্রায় তুলে দিয়েছিল।
(২)
চাঁদের গায়েও কলঙ্ক থাকে। সানির কেরিয়ারও সবটাই রৌদ্রোজ্জ্বল নয়। কারণ খুব ব্যতিক্রম ছাড়া একজন খেলোয়াড়ের জীবন সবটাই সাফল্যে ভরা- এমন সাধারণত হয় না। সানির ক্ষেত্রেও তাই এর অন্যথা ঘটেনি। ব্যাটসম্যান গাভাসকারের গোটা কেরিয়ারে এরকমই শুধু দুটি ব্যাপারের কোন ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি। এর একটিকে সেই অর্থে ব্যর্থতা বলতেও আমার আপত্তি আছে।
এর ব্যাখ্যা কে দেবেন আর কী-ই বা দেবেন আমার জানা নেই। আমি নিজে খুব অবাক হয়েছি। ঘাতক কে বা কারা? গতি না বাউন্স না দুটিই? সানির কেরিয়ারের এই অংশের রান খরার ব্যাখ্যা কী হবে? নাকি স্রেফ ব্যাড প্যাচ বলে ধরে নেবেন? আমার জানা নেই। পাঠক ভেবে দেখতে পারেন।
অন্য যে কেউ হলে লেখা যেত এই লোকটা শুধুমাত্র ভাল পিচের ব্যাটসম্যান। যেখানে শক্ত প্রশ্নপত্র নিয়ে বোলার হাজির হবে তার কাছাকাছি একে উঁচু মুখ করে ঘুরতে দেখা যাবে না। কিন্ত সানির কেরিয়ারে এর ঠিক উলটো উদাহরণ এতগুলো আছে(যার অনেককটা বলেওছি)যে এই আপাত বিপ্রতীপ চিত্রের ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা পাচ্ছি না। আসলে এগুলো একেকটা চেক বক্স যেখানে আপনি টিক দিতে দিতে যাবেন এবং আপনার সাফল্যের বৃত্তটি নিখুঁতভাবে আঁকা হয়ে যাবে। সানি তাই সবকটি বক্সে টিক দিতে দিতে গেছেন। কেবল এই দুটি ছাড়া। কিন্ত দশের মধ্যে তাহলেও তো আট। সাফল্যের সহজ স্বাভাবিক নিয়মে এই দুটি ঘটনা তাই আমার কাছে ব্যতিক্রম হিসেবেই থেকে যাবে।
ছবি-২:অন সাইডে সেই বিখ্যাত ফ্লিক |
কিন্ত কথা হল এই জাতীয় ব্যর্থতা কার নেই? ব্রায়ান লারা ভারতে বড় রান পাননি। শেন ওয়ার্ন ভারতে এসে সফল নন। ডাগ ওয়াল্টার্স ইংল্যান্ডে ভয়াবহ ভাবে ব্যর্থ। ডেনিস লিলিকে নিজের ঘরের মাঠেই বেদম পিটিয়েছেন রয় ফ্রেডরিক্স, ক্লাইভ লয়েড,আলভিন কালীচরণ আর ভিভ রিচার্ডস। এমন অনেক উদাহরণ খুঁজলে পাওয়াই যাবে। তাই লিলি-হ্যাডলির বিরুদ্ধে ব্যর্থতা, ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে বিশ্বত্রাস চার ফাস্ট বোলারের বিপক্ষে মাত্র একবার বড় রান(১৯৮২-৮৩),বা ইংল্যান্ডের মাঠে মাত্র দুটো সেঞ্চুরি (আরেকটি ১৯৭৪-এর ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ১০১)-এগুলো নিয়ে চায়ের কাপে বড়জোর ঝড়ই তোলা যেতে পারে। যদিও সেই ঝড়টা তোলা বেকার হবে। ব্যাটসম্যান গাভাসকারের গুরুত্ব তাতে এক মিলিমিটারও কমবে না। একটু ব্যাখ্যা করা যাক। সে যুগে লয়েডের পেস ব্যাটারি যে কোন মাঠে আগুন ঝরাতে পারতেন। নিয়মিত ঝরিয়েও থাকতেন। তাই ১৯৭১ বা কতকটা ১৯৭৫-এর আধা ভোঁতা বোলিং ডিপার্টমেন্ট নয়,বরং ১৯৮৩-৮৪ এর ধারালো ক্যারিবিয়ান আক্রমণের বিপক্ষেই সানির সাফল্য দিয়ে লেখা শুরু করেছি। সে যতই দেশের মাঠে হোক না কেন।
ছবি-৩- কেরিয়ারের প্রথমদিকে; |
ডেনিস লিলিকে এক ইনিংস ছাড়া (১৯৮০-৮১-এর মেলবোর্নের সেই কুখ্যাত এলবিডবলু,সানি তখন ৭০ ব্যাটিং)খেলতে পারেননি। কিন্তু জেফ টমসনকে ওয়াকায় খেলেছেন। গাব্বায়(ব্রিসবেন) খেলেছেন। থম্মো(টমসন)সেই সময়ে ক্রিকেট দুনিয়ার বোধহয় দ্রুততম ফাস্ট বোলার। লিলির হাতের অত কাজ হয়ত নেই কিন্ত স্রেফ গতি দিয়ে বিপক্ষকে ধুয়েমুছে সাফ করে দিতেন।
ছবি-৪ ইংল্যান্ডের সবুজ পিচে আর প্রবল ঠান্ডায় বড় রানের খোঁজে কেরিয়ারের শুরুতে |
সানি ১৯৭৭-৭৮এর সেই সিরিজে প্রথম নয়, দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছেন পরপর তিনবার যেটা আরো বেশি কঠিন কাজ ছিল। আর সেগুলোর মধ্যে গাব্বা আর ওয়াকাও আছে। ইংল্যান্ডে সেঞ্চুরি করেছেন দুটি। কিন্তু একটি ৫৭ রানের ইনিংস খেলে সাহেবদের নড়িয়ে দিয়েছেন সেই '৭১-এই। ইমরানকে খেলেছেন এমন সময়ে যখন ইমরান জীবনের সেরা ফর্মে। পাকিস্তানে গিয়ে এক টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি করেছেন তখনকার করাচীর সবুজ পিচে। আর সেটাও একই দিনে। ১৪ই নভেম্বর,১৯৭৮। ফয়সলাবাদে পরেরবার গিয়ে ইনিংস ক্যারি করেছেন ১২৭ রান করে। এর বাইরে লাহোরে তিন রানের জন্য সেঞ্চুরি পাননি (১৯৭৮)। সবটাই শুধু একা ইমরান নয়,সরফরাজ নওয়াজ,সিকান্দার ওয়াক্তকেও সামলে। সবথেকে বড় কথা নতুন বলের বিষ নীলকণ্ঠ হয়ে গিলেছেন ষোলোটা বছর। তিনজন ছাড়া দীর্ঘকালীন ওপেনিং পার্টনার পাননি। ঘরের মাঠে কপিল আসার আগে পাটা পিচে সবথেকে বেশি জোরে বল করেন এমন লোক বলতে পেয়েছেন কেবল সুব্রত গুহ আর বরুণ বর্মণকে। এক আধবার হয়ত পেয়েছেন পান্ডুরাগ সালগাওকারকে। কপিলকে খেলতে পেরেছেন কেবল তখনি যখন রঞ্জি বা দলীপ ট্রফিতে নিজেদের দল একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে। আর সেটাও ১৯৭৮-এর পরে। ততদিনে সানির সাত বছর খেলা হয়ে গেছে। তাহলে টেস্টের জন্য দরকারি নেট ও ম্যাচ প্র্যাকটিশ তিনি পেলেন কোথায়? দিলই বা কে? না পেয়েছেন সিমিং পিচ,না বোলিং মেশিন না তেমন শক্ত পরীক্ষা নিতে জানা কোন দেশজ বোলার। এই প্রেক্ষাপটে হেলমেট ছাড়া নতুন বলের মুখে অচঞ্চলভাবে দিনের পর দিন দলকে বাঁচিয়েছেন। জেতা নয়। নিশ্চিত হারকে ড্র-এ রূপান্তরিত করে দিয়েছেন বহুবার। আর যেটা জিতিয়ে দিতে পারতেন সেটা অপরের নির্বুদ্ধিতায় ড্র হচ্ছে এটা দাঁড়িয়ে দেখেও রা কাড়েন নি। অমন ২২১-এর ইনিংস খেলেও। ভারতীয় টেস্ট ব্যাটসম্যানদের নিয়ে কথা উঠলে রাহুল দ্রাবিড় আর শচীন তেন্ডুলকার সানির সঙ্গে একই ব্র্যাকেটে হয়ত থাকবেন। কিন্ত উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা খুব স্পষ্ট যে দুজনের কাউকেই এই সীমাবদ্ধতা নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে যেতে হয়নি। সানির কেরিয়ারকে যদি তিনটে ভাগে ভাগ করেন (১৯৭১-১৯৭৬, ১৯৭৭-১৯৮২, ১৯৮৩-১৯৮৭) তবে এই শেষ চারটে বছর বোধহয় অন্য স্তরে থেকে যাবে। কাছাকাছি পাচ্ছি শচীনকে(২০০৭-২০১১)। কিন্ত সানির সঙ্গে শচীনের পার্থক্য এইক্ষেত্রে এটাই যে শচীন স্রেফ একজন “humble number cruncher” হয়েই থেকে গেলেন। তাই ২০১১ -এর পরেও আরো দুটি বছর অসহনীয় শচীনকে দেখতে হয়েছে।
ছবি-৫:শুধু রক্ষণ নয় কেরিয়ারের দ্বিতীয় অধ্যায়ে সানি ছিলেন সমান আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান |
আর নিজের খেলা নিয়ে ভাঙ্গাগড়া? অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। এক জীবনে যে মানুষ ৬০ ওভার ব্যাট করে একদিনের খেলায় ৩৬ রান করেছেন তিনিই তার এক যুগ বাদে জীবনের একমাত্র একদিনের শতরান করেছেন ৮৭ বলে। তাও গায়ে জ্বর নিয়ে,পেইন কিলার খেয়ে।
আবার সেই একই লোক একই বছরে বেঙ্গালুরুতে জীবনের শেষ টেস্ট ইনিংসে ভেঙ্গে যাওয়া পিচে স্পিনারদের ছোবল সামলে অতিমানবিক ৯৬ এর ইনিংস খেলে দেন। বেঙ্গালুরুর কথা বলতে গিয়ে মনে হল সেটা ছিল ম্যাচের চতুর্থ ইনিংস। ব্যাটসম্যানের আসল ক্ষমতা বোঝার জন্য অনেকদিন ধরেই একটা সূচক হিসেবে এই চতুর্থ ইনিংসের পারফরমেন্সকে মাপকাঠি ধরা হয়। তুমি যদি সত্যিই বড় ব্যাটসম্যান হয়ে থাকো তবে এই নির্দিষ্ট ইনিংসে তোমার কেরিয়ার নিশ্চয় তেমনই দেখাবে। গাভাসকারের ক্ষেত্রে এটা এত বেশি সত্যি যে যারা জানেন না তাদের অবিলম্বে জেনে নেওয়া জরুরী। গোটা টেস্ট কেরিয়ারের গড় যেখানে ৫১ সেখানে ৩৪টা টেস্টে(৩৩ ইনিংস) সানির চতুর্থ ইনিংসের গড় ৫৮। এর ধারে কাছে যারা নেই সেই তালিকায় একটা নাম শচীন। বাকিদের নামগুলো আর বললাম না। ব্যাটসম্যানশিপের শেষ কথা যদি এই উদাহরণগুলো থেকে প্রতিষ্ঠা না হয় তবে কোথা থেকে হবে?
(৩)
সেটা বোধহয় ১৯৭৬ সাল। রোহণ গাভাসকার সবে জন্মেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর নিউজিল্যান্ড সফরের মাঝে সামান্য অবকাশ। ছেলেকে দেখতে যেতে চান- এই অনুমতি সানি চাওয়ায় বোর্ড সেটি দেয়নি। বিষেন বেদীকে সরিয়ে সানিকে ক্যাপ্টেন করা হল। কিন্ত বেদীকে কে জানাবেন? কেন সানি নিজে! বোর্ড তাই-ই চেয়েছিল। আজকের দিনে বিরাট কোহলিকে এভাবে বিসিসিআই নির্দেশ দিতে পারতো?
ওভালে ওই অতিমানবিক ২২১ এর ইনিংস খেলছেন। আপাত হারা ম্যাচ ড্র নয়,হুট করে জেতার জায়গায় এনে দিয়েছেন। সেদিনের ক্যাপ্টেন বেংকটরাঘবন কথা নেই, বার্তা নেই, কয়েক মাস খেলা অনভিজ্ঞ কপিলকে পাঠালেন। ম্যাচ জেতার স্বপ্নের সেখানেই ইতি। সানির সঙ্গে একবারো কথা বলা দরকারই মনে করেননি। অথচ সেই মুহুর্তে ওভাল টেস্ট ভারতের হাতে। এর অনেক বছর বাদে চতুর্থ ইনিংসে ভারতের ৪০৬ এর রেকর্ড ভেঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪১৮ করে জিতে যায়। কিন্ত ওভালের টার্গেট ছিল আরো বেশি, ৪৩৮।
শুধু রান বা গড় বা শতরান নয়। গাভাসকার ভারতীয় ক্রিকেটে সম্ভবত প্রথম খেলোয়াড় যিনি দেখিয়েছেন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মেও বাইশ গজে ও তার বাইরেও দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে, নিজ শর্তে, কেমন ভাবে বিত্তবান থেকে যাওয়া যায়- রানে,সম্মানে ও অর্থে। আমার টার্মস-অফ-ট্রেড আমিই ঠিক করবো- এই বার্তা চার দশক আগে তিনিই বোর্ডকে সেভাবে বুঝিয়ে ছাড়েন। টাইগার পটৌডি ছিলেন নবাব। মেজাজ তাঁরও ছিল। কিন্ত তাঁর সঙ্গে সানির মেজাজ তুলনীয় নয়। একজন জন্মেই রাজা। আরেকজন শ্রমিক শ্রেণীর নেতা হিসেবে যেন সিংহাসনে বসার অধিকার আদায় করে নিয়েছেন। তাই এদেশে উচ্চস্তরীয় ব্যাটসম্যানশিপের যদি কর্পোরেট কোচিং সেন্টার খোলা হয় তবে আজো হেড কোচ সানিই।
৬৮ নট আউট যে কোন ধরনের ক্রিকেটেই বেশ ভাল স্কোর। কিন্ত যে ৩৫টি আন্তর্জাতিক শতরানের মালিক, বারেবারে বলেন "এ টন ইজ এ টন", তিনি নিশ্চয় বাকি ৩২ রানের জন্য ফ্রেশ গার্ড আজই নেবেন। যেমন খেলোয়াড় জীবনে সেঞ্চুরি করে উঠেই নতুন ভাবে নিতেন।
বিলেটেড হ্যাপি বার্থ ডে, মিস্টার সুনীল গাভাসকার।
প্লিজ ক্যারি অন ফর এনাদার থার্টি টু রানস।
লেখক পরিচিতি: পেশায় অর্থনীতির অধ্যাপক। ন'হাটা কলেজে কর্মরত। লেখালেখি নিয়ে চিন্তাভাবনার শুরু ২০১০-এ। প্রথম উপন্যাস 'জগতরত্ন রক্তনীল' আনন্দমেলায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় ২০১৪-২০১৫ সালে। ক্রিকেট নিয়ে লেখালেখিতে আগ্রহী। ফেসবুকে এ ব্যাপারে নিজস্ব পেজ 'বাইশ গজের ডাইরি'তে নিয়মিত লিখে থাকেন।
(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।
Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.