প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

পুরানো সাময়িকী ও সংবাদপত্র

সেপ্টেম্বর ১৫ , ২০১৫

 

আর্য্যদর্শন

দীপক সেনগুপ্ত


     ‘আর্য্যদর্শন’ মাসিক পত্রিকাটি প্রকাশিত হয় ১৮৭৪ সালে (১২৮১ বঙ্গাব্দের বৈশাখ) যোগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বিদ্যাভূষণের সম্পাদনায়। প্রথম সংখ্যার ‘অবতরণিকা’-য় পত্রিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তার কিছু অংশ দেখে নেওয়া যাক :

   
  “আামরা একখানি মাসিক পত্রিকা প্রচার করিতে উদ্যোগ করিতেছি। ইহার নাম ‘আার্য্যদর্শন’ রাখিলাম। জ্ঞান ও নীতির চর্চ্চা এবং প্রচার ইহার প্রধান উদ্দেশ্য। যাহাতে উপদেশ আমোদ-সহকৃত হইয়া সকলের উপাদেয় হয়, তদ্বিষয়ে আমরা সর্ব্বতোভাবে যত্নবান হইব। তন্নিমিত্ত লঘু ও গুরু বিষয়ের সমাবেশ করতে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি থাকিবে। কিন্তু আমোদ ও কৌতুকের নিতান্ত ছড়াছড়ি হইলে, জ্ঞান ও নীতির সজীবতা নষ্ট হয়, একথা আমরা কখনও বিস্মৃত হইব না। ইতিহাস দর্শন ও বিজ্ঞানের অধিক পরিমাণে আলোচনা হইবে, এবং কাব্য ও কলা উপাখ্যানের জন্যও যথোচিত স্থান প্রদত্ত হইবেক। .... ব্যক্তি-বিশেষের বা সম্প্রদায়-বিশেষের পক্ষ সমর্থন বা খণ্ডন করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু যখন ব্যক্তি-বিশেষের বা সম্প্রদায়-বিশেষের কার্য্য সমাজকে স্পর্শ করিবে তখন মূকভাব অবলম্বন করিব না।
     “.... ১৮৩১ খ্রীষ্টাব্দে আদালত হইতে পারস্য ভাষা উঠিয়া গেল, এবং ইহার চারি বৎসর পরে মুদ্রাযন্ত্র স্বাধীন হইল। এই উভয় ঘটনাই আমাদের মাতৃভাষার উন্নতির পক্ষে অনুকূল। এই সুযোগে অনেকানক পত্রিকা সমুত্থিত হইল। কিন্তু তখনও সমাজের তাদৃশ সংস্কার হয় নাই, ও তাদৃশ রুচী পরিবর্ত্তন ঘটে নাই। সুতরাং কয়েক বৎসরের মধ্যে ‘প্রভাকর’ ‘ভাস্কর’ ‘রসরাজ’ ‘পথ্যপ্রদান’ ‘পাষণ্ডপীড়ন’ ‘আক্কেলগড়ুম’ প্রভৃতি পত্রিকার ছড়াছড়ি হইতে লাগিল; বঙ্গসমাজ কিছুকাল অশ্লীল রসিকতায় খুব হাসিলেন খুব মাতিলেন। এই রূপে কয়েক বৎসর অতীত হইলে ১৮৪৩ খ্রীষ্টাব্দে অক্ষয়কুমার দত্ত ‘তত্ত্ববোধিনীর’ সম্পাদকতা গ্রহন করিলেন এবং ১৮৫১ খ্রীষ্টাব্দে রাজেন্দ্রলাল মিত্র ‘বিবিধার্থ সংগ্রহ’ প্রচারে ব্রতী হইলেন। এই দুই পত্র ভুরি ভুরি সারগর্ভ প্রবন্ধে পরিপূর্ণ। রচনা-পরিপাট্য বিষয়ে পরস্পর যত কেন বিসদৃশ হউক না, উভয়েই বিশুদ্ধ প্রণালীতে লিখিত এবং উভয়েই উপর্য্যুপরি নূতন নূতন তত্ত্বপ্রচার ও সাধারণের ভ্রমনিরাস-পূর্ব্বক সমাজের প্রকৃত হিতসাধন করিয়াছে। ....  পরিশেষে ১৮৫৯ খ্রীষ্টাব্দে ‘সোমপ্রকাশ’ মুদ্রিত হইল। সোমপ্রকাশ ও তৎসহযোগীগণ, কতদূর কৃতকার্য হইয়াছেন, উহা সকলেই অবগত আছেন।
     “... আমরা বিদেশীয় ভাষা হইতে অমূল্য তত্ত্ব সংগ্রহ করতে পারি; কিন্তু তৎসমস্ত সম্যকরূপে প্রচার করিতে হইলে, মাতৃ-ভাষার সাহায্য লইতে হইবেক।”  
    

প্রথম সংখ্যায় যে লেখা গুলি পরিবেশিত হয়েছিল সেগুলি হল – ‘অবতরণিকা’, ‘আর্য্য-দর্শন’, ‘আর্য্যবংশ’, ‘জন ষ্টুয়ার্ট মিলের জীবনবৃত্ত’, ‘সভ্যতার ইতিহাস’, ‘কাব্য, কবি ও কবিত্ব’, ‘আত্মারাম পড়!!’, ‘শত্রুসিংহ’, ‘অগস্ত্য কমত (সুমত)ও তাঁহার উদ্ভাবিত প্রত্যক্ষবাদ’, এবং ‘সঙ্গীত পথিক’। একমাত্র ‘সঙ্গীত পথিক’ রচনাটির শেষে লেখকের নাম রয়েছে ‘শ্রীশৌ:-’, অন্য কোন লেখকের নাম দেওয়া হয় নি। ‘শত্রু সিংহ’, ‘জন ষ্টুয়ার্ট মিলের জীবনবৃত্ত’ এবং ‘সঙ্গীত পথিক’ ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। পত্রিকাটির ১ম বর্ষের ৩য় অর্থাৎ আষাঢ় সংখ্যা থেকে ‘প্রাপ্ত গ্রন্থের সংক্ষিপ্ত সমালোচনা’ বিভাগটি সংযোজিত হয়। প্রথম তিনটি গ্রন্থের সমালোচনা করা হয়েছে। এগুলি হল - (১)’বঙ্গভূষণ’ বাবু রামকৃষ্ণ রায় রচিত; মূল্য আট আনা। (২) ‘ভারতমাতা’ বাবু কিরণচন্দ্র রায় রচিত; মূল্য দু’আনা এবং (৩) ‘ললিতা-সুন্দরী’ শ্রীযুক্ত অধরলাল সেন রচিত; মূল্য ছ’আনা। ‘আর্য্যদর্শন’-এর মূল্য ধার্য হয়েছিল বার্ষিক সাড়ে তিনটাকা, সডাক চার টাকা। “৪৩নং মলঙ্গা লেন বহুবাজার নূতন ভারতযন্ত্রে, শ্রীরামনৃসিংহ বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বারা মুদ্রিত ও প্রকাশিত।”

প্রথম দিকের সংখ্যায় রচনার শেষে লেখকের নাম রয়েছে ‘শ্রীঃ’, ‘শ্রীপূর্ণ’, ‘শ্রীশৌ:-’ ইত্যাদি। এটাই ছিল তখন প্রচলিত রীতি। তবে পরের দিকে অনেক রচনার শেষে লেখকের নাম দেখা যায়; এদের মধ্যে রয়েছেন – যজ্ঞেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামলাল গোস্বামী, প্যারীলাল মুখোপাধ্যায়, নবীনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, প্রাণকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, দুর্গাচরণ গুপ্ত, রামনাথ বিদ্যানিধি, নরেন্দ্রনাথ বসু, রামকৃষ্ণ বিদ্যাভূষণ, ভুবনেশ্বর মিত্র প্রমুখ লেখকেরা।

পত্রিকাটির ছাপা ও বাঁধাই সমসাময়িক অন্যান্য পত্রিকার থেকে অনেক উন্নতমানের ছিল। সম্পাদনার গুণে এটি চলেছিল সুদীর্ঘ ১১ বছর, ১৮৮৬ সাল (১২৯২ বঙ্গাব্দ) পর্যন্ত। পত্রিকাটি সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের একটি ছোট মন্তব্য “এই সময়ে বিহারীলাল চক্রবর্তীর সারদামঙ্গল-সঙ্গীত আর্যদর্শন পত্রে বাহির হইতে আরম্ভ করিয়াছিল। বউঠাকুরাণী এই কাব্যের মাধুর্যে অত্যন্ত মুগ্ধ ছিলেন।”  প্রসঙ্গত ‘সারদামঙ্গল সঙ্গীত’ ১২৮১ বঙ্গাব্দের ভাদ্র সংখ্যা থেকে প্রকাশিত হতে থাকে।
এখানে পত্রিকার প্রথম সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠার একটি প্রতিলিপি দেওয়া হল| 

সংযোজিত প্রতিলিপি পরিচয় –  


চিত্র ১ – পত্রিকার আখ্যাপত্রের একটি প্রতিলিপি।

বিঃ দ্রঃ  কোন প্রতিলিপি  বড় করে দেখতে হলে  ctrl  টিপে রেখে  +  টিপুন।    


লেখক পরিচিতি : বহু বছর বি.ই. কলেজে (এখন ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, শিবপুর (IIEST, Shibpur )) অধ্যাপনা করেছেন। কিছুদিন হল অবসর নিয়েএখন সেখানে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে আছেন। অ্যাপ্লায়েড মেকানিক্স নিয়ে গবেষণা করলেও একাধিক বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে - জ্যোতিষশাস্ত্র, পুরনো কলকাতার সংস্কৃতি, ইত্যাদি। অবসর সময়ে 'অবসরে'র সঙ্গে সময় কাটান।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।